#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_২৫
#ইশরাত_জাহান
🦋
হাসপাতাল থেকে ফোন এসেছে মিসেস নাজনীন এর কাছে।নীরবকে কিছু লোকজন মিলে খুব মারধর করেছে।এখন সে সেন্সলেস হয়ে হসপিটালে ভর্তি।মিসেস নাজনীন ও মিস্টার রবিন এসে পৌঁছায় সেখানে।ভিতরে নীরবের চিকিৎসা চলছে। আর বাইরে বসে কান্না করছেন মিসেস নাজনীন।নীরাকে খবর দেওয়া হয়েছে।নীরবের অবস্থা খারাপ শুনে আতকে উঠে দীপান্বিতাও।নীরা ও দ্বীপের সাথে সেও যায় হসপিটালে।
হবু জামাই হসপিটালে ভর্তি হয়েছে এই খবর কানে আসতেই হসপিটালে হাজির হন লিমার বাবা মা ও লিমা।মিসেস নাজনীনকে শান্তনা দিচ্ছেন লিমার মা।নীরা ও দীপান্বিতা তাকিয়ে আছে লিমার দিকে।মেয়েটা বেশ সুন্দর।কিছুক্ষণ পর অপারেশন রুম থেকে বের হলো ডাক্তার।
ডাক্তারকে দেখে মিসেস নাজনীন ও মিস্টার রবিন দৌড়ে যান ডাক্তারের কাছে।মিসেস নাজনীন বলেন,”আমার ছেলের কি হয়েছে?ওর অপারেশন চলছে কেনো?সামান্য মারে কি কাউকে অপারেশন করতে হয়?”
ডাক্তার বলেন,”আসলে ওনাকে গভীরভাবে আহত করা হয়েছে।প্রচুর রক্তপাত হয়েছে।ইনফ্যাক্ট মেইন পয়েন্টে আঘাত করা হয়েছে ওনাকে।স্যরি টু সে উনি বাবা হওয়ার দিক থেকে অক্ষম।”
ডাক্তারের কথা শুনে ভেঙ্গে পড়েন মিসেস নাজনীন।ছেলের তার কি হাল হলো।কান্না করতে থাকেন সাথে সাথে।বলেন,”আমরা ওর সাথে দেখা করতে চাই।”
“এখন উনি ঘুমিয়ে আছেন।জ্ঞান ফিরলে দেখা করতে পারবেন।”
সবাই রাজি হয়।লিমার বাবা মা একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে বলেন,”আলহামদুলিল্লাহ নীরব বাবা সুস্থ আছেন।”
মিসেস নাজনীন খুশি হন।কিন্তু লিমার বাবা মায়ের পরবর্তী কথাতে তার খারাপ লাগে।লিমার বাবা বলেন,”যেহেতু নীরব বাবার এত বড় একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে আমরা তো আর আমাদের মেয়েকে…”
কিছু বলার আগেই মিসেস নাজনীন বলেন,”হ্যাঁ।খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি।আমাদের কোনো আপত্তি নেই।এমনিতেও আমরাই না করে দিতাম।বিবেকবোধ কিছুটা হলেও আমাদের আছে।”
“ধন্যবাদ।”বলেই চলে যায় তারা।
লিমারা চলে যাওয়ার পর নার্স এসে বলে,”আপনারা ভিতরে যেতে পারেন।”
কেউ কিছু করার আগে দৌড় দিয়ে ভিতরে ঢোকে দীপান্বিতা।এসেই শুয়ে থাকা নীরবের একপাশের কাধ জড়িয়ে ধরে বলে,”আপনার এ কি অবস্থা হলো।”
বলেই কান্না করতে থাকে।নীরব ফিসফিস করে বলে,”আরে এগুলো নাটক ছিলো।তুমি কান্না করোনা।কিছুই হয়নি আমার।”
নীরবের এমন কথা শুনে কান্না থামিয়ে হা হয়ে যায় দীপান্বিতা।সাথে সাথে শোয়া থেকে উঠে বসে নীরব।জোরে জোরে বলে,”মা বাবাকে নিয়ে ভিতরে আয় বোন।”
সাথে সাথে হা হা করে হেসে ক্যাবিন এর ভিতরে ঢোকে নীরা।সবাই আহাম্মকের মত তাকিয়ে আছে।নীরব শোয়া থেকে উঠে বসে।মিসেস নাজনীন বলেন,”নীরব তো একদম সুস্থ!”
নীরা বলে,”হ্যাঁ।বিয়ে ভাঙার জন্য আমি আর ভাই মিলে এই প্লান করি।”
মিসেস নাজনীন কিছু বলতে যাবেন তাকে আটকিয়ে মিস্টার রবিন বলেন,”আহা বাদ দেও।বাচ্চারা তাদের সুখের জন্য করেছে এসব।”
“তাই বলে এভাবে মিথ্যা সাজিয়ে।লোকজন এখন বলবে আমাদের ছেলের খুত আছে।”
“তুমি চিন্তা কর না।দুদিন পর যখন আমাদের নাতি নাতনির মুখ দেখবে তখন দুর হবে ওদের খুত।”
শ্বশুরের মুখে এমন কথা শুনে দ্বীপ ফোন বেড় করে টিপতে থাকে।দীপান্বিতা মাথা নিচু করে বসে আছে লজ্জাতে।নীরা ও নীরব মিটমিট হাসতে থাকে।মিসেস নাজনীন বলেন,”ঠোঁটকাটা বাবার ঠোঁটকাটা সন্তান।জামাইকে তো দেখো।”
নীরা দ্বীপকে খেপাতে বলে,”আরে আম্মু চিন্তা করার কিছু নেই।আমার ক্যাডার সাহেব দেখতে যেমন,আসলে সে মোটেই তেমন নয়।সে হলো আড়ালে আবডালের গভীরতর ঠোঁটকাটা।”
মিসেস নাজনীন সাথে সাথে মিস্টার রবিনকে নিয়ে চলে যায়।এরা বাবা মেয়ে মিলে মানুষের সামনে মান সম্মান ধরে রাখবে না।
নীরার বাবা মা চলে যাওয়ার পর সবাই চুপচাপ থাকে।নীরা তাকায় দ্বীপ দীপান্বিতা ও নীরবের দিকে।বিরক্ত হয়ে নীরা বলে,”কি ব্যাপার ভাইয়া?আমার বর্তমান ননদ হবু ভাবীকে তো এনে দিলাম।এখন প্রোপজ কর।”
দীপান্বিতা বলে,”এগুলো কি নীরা?ভয় দেখানোর কোনো মানে ছিলো?”
“অবশ্যই ছিলো।মানুষকে বেশি তেল মাখলে সে পিছলে সরে যায়।আমি অত অপেক্ষা করতে পারবো না।এমন কাজ করি ডিরেক্ট কাজে লেগে যাবে।”
দ্বীপ বলে,”কিন্তু এগুলো হলো কিভাবে?”
“কিভাবে আবার নান্টুকে টাকা দিয়ে ভাইকে মার খাইয়েছি।”
চশমা ঠিক করে দ্বীপ বলে,”আবার নান্টু!এই বখাটে কে তো আমি এলাকা ছাড়া করাবো।”
“আরে আরে এবার আমি নান্টুর সাথে কথা বলিনি।ভাই বলেছিলো ওর সাথে কথা।”
“সে না হয় বুঝলাম।কিন্তু এতবড় একজন ডাক্তার হয়ে কিভাবে তোমাদের সাথে যুক্ত হতে পারে?ডাক্তার হয়ে এটা একটা ক্রাইম ছিলো।”
“ঘোড়ার ডিমের ক্রাইম।ক্রাইম এর ক বুঝেন?আমার ভাই একজন নিউট্রিশন।তার হাতে এসব ডাক্তার তো থাকেই।ফ্যামিলি ডাক্তার আবার ভাইয়ের সাথেও ফ্রেন্ডলি তাই আংকেল রাজি হয়েছে অভিনয় করতে।”
দীপান্বিতা বলে,”এসব করার কোনো দরকার ছিলো না নীরা।তোমার ভাই অন্য কাউকে বিয়ে করলে সুখে থাকবে।আমি তো সম্পর্ক ধরে রাখতে পারি না।আমার সম্পর্কগুলো নড়বড়ে।”
“আমি স্ক্রু গুলো টাইট করে নিবো।”(নীরব বলে)
নীরা হেসে দেয়।দ্বীপ বিড়বিড় করে বলে,”যেমন বাবা তার তেমন ছেলে আবার মেয়েও।”
রেগে যেয়ে দীপান্বিতা বলে,”ইয়ার্কি করছেন আপনি?কথা বলব না আমি আপনার সাথে।গেলাম আমি।”
বলেই বেড় হয়ে যায় দীপান্বিতা।নীরব বলে,”এবার কি হবে? মায়াবন বিহারিনী তো রাগ করেছে।”
নীরা তাড়াহুড়ো দিয়ে বলে,”আরে ভাই আমার।ভাবীর পিছনে দৌড়াও।এখানে বসে থেকে লাভ নেই।”
সাথে সাথে নীরব যায় দীপান্বিতার পিছনে।দ্বীপ নীরার কাছে এসে বলে,”চলো,ওদের ব্যাপার ওরা বুঝুক।কিছু সম্পর্কের গভীরতা বুঝতে খুনসুটির দরকার হয়।”
“কি ব্যাপার ক্যাডার সাহেব!আপনিও দেখছি আমার মত হয়ে যাচ্ছেন।”
“চন্দ্রপাখির ছোঁয়া লেগেছে তাই।”
বলেই দ্বীপ ও নীরা একসাথে বের হয়।শীতের দিনেও বৃষ্টি হচ্ছে।দ্বীপ ও নীরা হসপিটাল থেকে বের হয়ে দেখে নীরব ও দীপান্বিতা একটি ছাউনির নিচে দাড়িয়ে আছে।দীপান্বিতা মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে ফিরে আছে।নীরব বলে,”ওহে মায়াবন বনবিহারিনী,করে না আমার সাথে আড়ি।তোমার প্রেমেই তো জ্বলছে আমার হৃদয়খানি।”
দীপান্বিতা তাও চুপ।এতদিনের অভিমান এত তাড়াতাড়ি কি শেষ হয়?কখনই না।গার্লস ইগো বলেও তো কিছু আছে।নীরব আবার বলে,”করেছিলাম আমি এক মিথ্যা অভিমান। যার কারণে বেড়েছে আমাদের দূরত্বের পরিমাণ।যদি থাকো তুমি এখন নিজ থেকে দূরে।সত্যি বলছি জাপ দিবো আমি এখন এই শীতের বৃষ্টিতে।”
জোরে জোরে হেসে দেয় দীপান্বিতা।নীরব এই সন্ধায় সোডিয়ামের আলোতে দেখতে থাকে তার মায়াবন বিহারিনীর হাসি।কতগুলো বছর পর প্রিয়তমার হাসি দেখছে।মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে নীরব।
নীরা দ্বীপকে বলে,”সন্ধ্যা তো হয়েই গেছে।চলুন আমরা শীতের এই বৃষ্টিসন্ধাতে চা উপভোগ করি।”
দ্বীপ বলে,”প্রস্তাব মন্দ না।এক কাপ চায়ে আমি আর আমার চন্দ্রপাখি।সাথে সাক্ষী থাকবে সন্ধার আকাশে হাসি দেওয়া মিষ্টি চাঁদ।”
নীরা খুশি হয়ে নীরব ও দীপান্বিতাকে বলে,”শোনো,তোমাদের মান অভিমান রাখো এক সাইডে।এখন চলো আমরা যাই শীতল হওয়ার বিলাসে।”
দীপান্বিতা বলে,”শীতের বৃষ্টিতে ভিজলে তো ঠান্ডা লাগবে।”
“আরে ক্যাডার সাহেব এত বড় গাড়ি নিয়ে এসেছে কেনো?গাড়িতে করে আমরা চায়ের দোকানে যাবো।এই শীতের রাতে ঝুম বৃষ্টির সাথে মালাই চা। উফ আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না।”
“আচ্ছা চলো।”
বলেই সবাই চলে যায় চায়ের ছোট দোকানে।ঝিরঝির বৃষ্টি থেমে এখন ঘন কুয়াশার মেলা বসতে শুরু করেছে।আকাশে শুধু একটি চাঁদের দেখা মিলছে।বৃষ্টির কারণে আজ দেখা দিচ্ছে না তারাদের মেলা।দ্বীপ নীরা ও নীরব দীপান্বিতা আলাদা বেঞ্চে বসেছে।দোকানদার চারটি মটকায় করে মালাই চা নিয়ে আসে। নীরব ও দীপান্বিতা অন্যদিকে ফেরা। দ্বীপ ও নীরা তাদের পিছনের বেঞ্চে বসেছে।দ্বীপ প্রথমে নিজের চায়ের মটকা নিয়ে নীরার সাথে শেয়ার করে চায়ের উপভোগ করে।এক চুমুক চা দ্বীপ নেওয়ার পর সেই মটকা থেকে নীরা আরেক চুমুক নেয়।এভাবে এক মটকা শেষ করার পর নীরার মটকা চা ঠিক একইভাবে উপভোগ করে দুজনে মিলে।দুজনের মুখে মিষ্টি চায়ের সাথে এক মিষ্টি হাসি বিরাজ করছে।
চলবে…?
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/