শুধু_তোমাকেই_চাই #শারমিন_হোসেন #পর্ব১৮

0
492

#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব১৮

“ঘড়ির কাঁটা বিকেল পাঁচটার ঘর ছুঁই ছুঁই। কলিং বেলের শব্দ হওয়ার সাথে সাথেই লিয়ার অস্থিরতা মূহূর্তেই পৌঁছে গেলো সর্বোচ্চ স্তরে। বলাবাহুল্য সাথে প্রচন্ড রাগ।রাগে সারা শরীর রি রি করতে থাকে।লিয়ার বুঝতে বাকি থাকে না,এই সময়কার বেল চাপা ব্যক্তি অভ্র ছাড়া কেউ নয়। লিয়া রা’গে দাঁত কটমট করে মনে মনে আওড়ায়,,উজবুক টাকে আসতেই হলো।ইশ ওই উজবুকটার সামনে এখন আমাকে যেতে হবে? উঁহু!কখনোই না,আমি কিছুতেই আমার রুম থেকে আজ আর বের হবো না। কাঁথা গাঁয়ে চেপে শুয়ে পড়ি। অসুস্থতার বাহানা দিয়ে দেখি শেষ রক্ষা হয় কিনা।তবুও আমি ঐ অভ্র নামক প্যারা টার সামনে যেতে পারবো না।

লিয়ার এতসব ভাবনার মাঝে রাজিয়া সুলতানা লিয়ার রুমে এসে।মেয়ের পানে স্থির চাহনি নিক্ষেপ করে হালকা কেশে লিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন,,”লিয়া অভ্র এসেছে।ড্রয়িংরুমে আছে।সৌজন্যতার খ্যাতিরে একবার তোকে তো যেতে হবে।”

এরকম কথা হবে,লিয়া সেটা আন্দাজ করেনি বা জানতো নয় তা নয়।তবুও লিয়া কথাটাকে সহজ ভাবে নিতে পারছে না।লিয়ার কাছে এই ছোট্ট কথাটা বড্ড জটিল আর কঠিন মনে হচ্ছে সাথে কষ্টদায়ক ও।লিয়া বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো ফেস করে ক্ষীন স্বরে বলে,,”আম্মু তুমি বিষয়টা ম্যানেজ করো প্লিজ।আমি দেখা করতে যেতে পারবো না।”

রাজিয়া সুলতানা শান্ত দৃষ্টিতে মেয়েকে পরখ করে নিয়ে মুখে গম্ভীরতার ছাপ টেনে ভরাট গলায় বলেন,,”দেখ লিয়া,একজন মেহমান আসলে তার সাথে দেখা করা ভালো বিহেভ করা একটা কার্টেসি।তো আমি তোকে বলবো তুই আমার মেয়ে হয়ে এই কার্টেসিটা মেইনটেইন করবি।”

মায়ের কথা শুনে লিয়া আর কোনো বাক্য ব্যয় করে না।মাথা টা নিচু করে রাখে।রাজিয়া সুলতানা নিজেও আর কথা না বাড়িয়ে রুম থেকে প্রস্থান করেন।রাজিয়া সুলতানা বেশ বিচক্ষণ মহিলা।উনি ভালো করেই জানেন তার মেয়ে সবার সাথে নরমাল কার্টেসি মেইনটেইন করে থাকে।আর পরিবারের অসম্মান হোক এরকম কাজ লিয়া জেনে শুনে কখনোই করবে না, এতটুকু বিশ্বাস নিজের মেয়ের উপর আছে।তার দেওয়া রং – রাইট শিক্ষা থেকে কখনো বিচ্যুত হবে না।ছেলে মেয়েকে যথেষ্ট আদব-কায়দার শিক্ষা দিয়ে বড় করছেন।

লিয়ার মন কিছুতেই ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়াতে চাচ্ছে না।আবার মস্তিষ্ক বলছে অন্য কথা,যতই হোক আম্মু নিজে যাওয়ার কথা বলেছে।আবার একজন মেহমান বাসায় আসছেন।আমি যতই তাকে অপছন্দ করি না কেনো, সৌজন্যতা রক্ষার জন্য হলেও একবার দেখা করতে হবে। অনিচ্ছা সত্ত্বেও লিয়া গুটি গুটি পা ফেলে ড্রয়িং রুমের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে,মুখটা মলিন করেই।চোখে মুখে স্পষ্ট থাকে বিরক্তির ছাপ।

অভ্র অনেক কিছু কেনাকাটা করে হাজির হয়েছে লিয়াদের বাসায়। ড্রাইভার গাড়ি থেকে এক এক করে সব কিছু আনতে থাকে। কয়েক রকমের মিষ্টি,দই, ফলমূল। রাহবারের জন্য কয়টা চকলেট বক্স, আইসক্রিম বক্স।

লিয়া ড্রয়িং রুমে গিয়ে দেখে,চার আসন বিশিষ্ট সোফার মাঝখানের আসনে পিংক কালারের বস শার্ট আর এ্যশ কালারের ডেনিম প্যান্ট পড়নে ইন করে পড়া।হাতে ব্যান্ডেড ঘড়ি, সানগ্লাস টা শার্টের গলার সাথে ঝুলিয়ে রাখা,সাথে ক্লিন সেভ বেশ এটিটিউট নিয়ে বসে আছে।আর একপাশে বসা রাহবারের সাথে গল্প করছে।রাহবারের হাতে চকলেট বক্স।

লিয়া এসব দেখে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে আওড়ায়,,ভালই তো ঘুষ টুষ নিয়ে আসছে দেখছি।”

লিয়ার ভাবনার মাঝেই লিয়া কে দেখে অভ্র হালকা কেশে এহেম এহেম বলায়।লিয়া ভাবনা থেকে বের হয়ে বিরক্তিকর ফেস নিয়েই মৃদু কন্ঠে সালাম দেয়।

সালামের উত্তর দিয়ে অভ্র ইশারায় লিয়াকে বসতে বলে। অভ্র এর মুখে হাসি লেগে আছে।লিয়াকে দেখে অভ্র এর ভালো লাগা কয়েকগুণ বেড়ে গেলো। অভ্র মনে মনে কল্পনা করেছিলো,লিয়া হয়তো গর্জিয়াস সাজে তার সামনে আসবে।লিয়াকে গর্জিয়াস লুকে কেমন লাগবে অভ্র সেইটা এতসময় কল্পনা করছিলো। বাট অভ্র এর সেই কল্পনায় এক বালতি পানি ঢেলে দিয়ে লিয়া সাধারণ ভাবেই অভ্র এর সামনে আসে।যে পোশাকে ছিলো,সেই পোশাকেই।পরনে ব্লাক কালারের থ্রি পিচ চুলগুলো খোলা।মুখে কোনো সাজ গোজের চিহ্ন টুকু নেই।তবে এই লুকেই যেনো লিয়াকে বেশি সুন্দর লাগছে। অভ্র মনে মনে বলে,,”সত্যি আপনাকে সাধারণ ভাবেই অসাধারণ লাগছে।কোনো কৃত্রিমতার ছোঁয়া নেই আপনার রুপে। অভ্র ভেবেছিলো লিয়া হয়তো ওর পাশের আসনে বসবে। অভ্র এর এই ভাবনাকেও ভুল প্রমাণিত করে লিয়া সিঙ্গেল সোফায় বসে পড়ে।লিয়া মাথাটা নিচু করে রাখে।লিয়া বসতেই রাহবার ওখান থেকে চলে যায়।

অভ্র আড়চোখে লিয়া কে পরখ করছে।মেয়েটা কেমন যেনো অস্বস্তি ফিল করছে।আর থেকে থেকেই ঢোক গিলছে।চোখ মুখও কেমন জানি ম্লান হয়ে আছে। লিয়াকে হাঁসফাঁস করতে দেখে অভ্র শান্ত চাহনিতে চেয়ে হালকা কেশে বেশ নম্র স্বরে বলে,,”মিস লিয়া আর ইউ ওকে?আপনাকে দেখে কেমন জানি ঠিক লাগছে না।”

লিয়া ঘাড় নাড়িয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,,”আমি ঠিক আছি।”

অভ্র গমগমে কন্ঠে বলে,,”মিস লিয়া আমি আপনাকে রিকুয়েস্ট করবো,আপনি আমার কাছে হেজিটেশন ফিল করবেন না প্লিজ। আপনার কোনো সমস্যা হলে, নির্দ্বিধায় আমাকে বলতে পারেন। আপনার শরীর খারাপ হলে চলুন আপনাকে ডক্টর এর কাছে নিয়ে যাই।”

লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে অস্ফুট গলায় বলে,,”আমি ঠিক আছি।”

অভ্র কপাল কুঁচকে লিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,”আপনাকে দেখে কেমন জানি ঠিক মনে হচ্ছে না আমার।আপনি মনে হয় অসুস্থ। আচ্ছা আপনাকে ডক্টর এর কাছে যেতে হবে না।আমি ফোন করলে ময়মনসিংহ এর সব থেকে বড় বড় ডক্টররা এখানে এসে আপনার চেক-আপ করে যাবে।আমি যদি একটা কল করি তাহলে নামকরা ডক্টররা শত শত সিরিয়াল ব্রেক করে এখানে চলে আসবে। অভ্র চৌধুরীর এতটুকু পাওয়ার আছে। আচ্ছা আমি এখনই কল করছি বলে পকেট থেকে ফোন বের করতে থাকে।”

লিয়া মনে মনে বলে,, বাহবা পাগলের পারদ তো দেখছি আকাশে উঠে গেছে।ওহ্ গড।এ তো দেখছি পুরাই ইরিটেটিং পার্সন।আমাকে ডক্টর দিয়ে চেক-আপ করাবে,নিজেই আস্ত একটা ভাইরাস হয়ে আসছে আমার লাইফে।সেই ভাইরাস কিনা আমাকে সুস্থ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে,যতসব।লিয়া গলা ঝেড়ে দ্রুত বলতে থাকে,,”আমি ঠিক আছি তো।কোনো প্রবলেম নেই।”

লিয়ার কথা শুনে অভ্র একটু নড়েচড়ে বসে কিয়ৎক্ষন নিশ্চুপ থেকে,আবার বলতে শুরু করে,,”মিস লিয়া আপনার ফেবরিট কালার কি?”

লিয়া ছোট করে শ্বাস নিয়ে মৃদু আওয়াজে এক শব্দে বলে,,”ব্লু”

অভ্র এক হাত আলতোভাবে মুঠো করে আবার মুঠ ছেড়ে দিয়ে বলে উঠে,,”ওহ্ শিট!নীল রঙ আপনার ফেবরিট।”

অভ্র এর বলার ভঙ্গি দেখে লিয়ার নিটোল কপাল বেশ খানিকটা কুঞ্চিত হয়।লিয়া দৃষ্টি সরু করে মনে মনে আওড়ায়, নীল রঙ আমার ফেবরিট,এটা শুনে এর আবার কি হলো? আশ্চর্য!”

লিয়ার ভাবনার মাঝেই একনাগাড়ে গড়গড় করে অভ্র বলতে থাকে,,”আকাশের রং নীল,সমুদ্রের রং নীল।নীল রং তো বিশালতার প্রতিক।আবার মানুষ মা’রা গেলে গায়ের রং আস্তে আস্তে নীল হয়ে যায়।আসলে নীল রং টা আবার বেদনাদায়ক ও বোঝায়,বেদনার প্রতিক।তাই বলছি আমি পাশে থাকতে আপনার কিসের এতো বেদনা।আমি সারাজীবন ছায়ার মত আপনার পাশে থাকবো।ঢাল হয়ে থাকবো,সো আপনাকে কোনো কষ্ট,বেদনাকে স্পর্শ করতে দেবনা।আর আমার ফেবরিট কালার হলো পিংক কালার।দেখুন পিংক কালার হলো ভালোবাসার কালার, ভালোবাসার প্রতীক।তাই আমি আপনার পাশে থাকলে আপনার আর কোনো বেদনা থাকবে না, আশাকরি।”

লিয়া বিড়বিড় করে বলে,,”আপনি আমার আশে পাশে থাকলেই সারা পৃথিবীর বেদনা আমাকে ঘিরে ধরবে।

অভ্র একহাত দিয়ে চুল গুলো ব্যাক ব্রাশ করে শান্ত কন্ঠে বলে,,”মিস লিয়া আজকের ডিনার টা আপনি আমার সাথে করবেন। ময়মনসিংহ এর কোন রেস্টুরেন্ট আপনি পছন্দ করেন।কোন জায়গায় আপনি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।গ্রিন চিলিতে,রেড চিলিতে, প্রেস ক্লাবে,চাইনিজ রেস্টুরেন্টে কোথায়?যেখানে বলবেন সেই খানেই নিয়ে যাবো।”

লিয়া শুকনো ঢোক গিলে নিয়ে দাঁত কটমট করে ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,,”না আসলে এসব ফাস্ট ফুড এর উপর আমার তেমন আগ্রহ নেই।আমি নরমালি ফাস্ট ফুড,বাইরের খাবার এভয়েড করে চলি।”

“ওহ্ বুঝতে পারছি,আপনি ডায়েট কন্ট্রোল করেন,তবে মাঝে মাঝে খেলে কিছু হবে না।”

লিয়া বিরক্তিকর গলায় বলে,,”সরি!পসিবেল নয়,আমার পক্ষে রেস্টুরেন্টে যাওয়া।”

লিয়ার এই নেগেটিভ উত্তর অভ্র কে হার্ট করে। অভ্র মনে মনে ভাবে,,এই অভ্র এর সাথে রেস্টুরেন্টে যাওয়ার জন্য হাজারো মেয়ে পা’গল।কত মেয়ে আমাকে অফার করে, অভ্র চৌধুরী সবাইকে ডিনাই করে। সেখানে আমি নিজে থেকে আপনাকে অফার করলাম,অথচ আপনি সরাসরি ইগনোর করলেন।এসব ভেবে অভ্র দীর্ঘ শ্বাস টেনে নিয়ে আবার শান্ত গলায় বলতে থাকে,,”
“আচ্ছা ধরলাম আমাকে আপনি পছন্দ করলেন না,বা করেন না।আজকের জন্য সাপোস আপনার প্রিয় মানুষ টাকে আমাকে ভেবে নিয়েও তো ডিনারে যেতে পারেন। আপনার মুড টা অন করার জন্য আপাতত কিছু সময়ের জন্য।আমি ধরে নিবো,আমি আপনার প্রিয় মানুষ না।তারপরেও আমি আপনাকে বলছি কজ,
আপনার প্রিয় মানুষ হওয়ার জন্য এটা আমার সামান্য প্রচেষ্টা।

অভ্র এর ভালোবাসার গভীরতা এতো বেশি যে,ও প্রতি কথায় বোঝাতে চায় লিয়াকে কতটা ভালোবাসে।লিয়াকে বোঝানোর চেষ্টা করে অভ্র। কিন্তু লিয়ার কাছে এসব কথা এলার্জি মনে হচ্ছে।

লিয়া সরাসরি স্পষ্ট গলায় বলে,,”সরি আপনাকে হার্ট করানোর জন্য।বাট এটা সম্ভব নয়।”

“কেনো সম্ভব নয়।আপনি আমার কাছে ইনসিকিউর মনে করেন।যদি কখনো এই অভ্র সম্পর্কে ইনকোয়ারি করেন,তাহলে সিকিউরিটির ব্যাপারে অভ্র কে একশতে একশ দিতে বাধ্য হবেন।এখন পর্যন্ত আমার লাইফে কোনো স্ক্যান্ডেল নেই।তা না হলে,এই বয়সে আব্বু দুইটা গার্মেন্টসের টোটাল দেখা শোনার দায়িত্ব আমার উপর ছেড়ে দিয়েছে।নাউ আ’ম আ স্টাবলিশ বিজনেস ম্যান।সে যাই হোক,নিজের ঢোল আর আমি পেটাতে চাচ্ছি না। ভবিষ্যতে দেখে নিবেন। ”

লিয়া মনে মনে বলে,এতো দেখছি জিএমটিটি (জাতে মাতাল তালে ঠিক)কারন সিকিউর বিষয়ে বেশ সিরিয়াস।লিয়া হালকা কেশে বলে,,”না না আপনি এইভাবে মনে করছেন কেনো।এখন যাওয়াটা উচিত নয়,আর আম্মু যেতেও দিবে না।”

“আচ্ছা,আচ্ছা ঠিক আছে।আপনি যেভাবে বলবেন।সেইভাবেই হবে।”

লিয়া পায়ের নখ দিয়ে ফ্লোর খোঁচাচ্ছে আর হাঁসফাঁস করছে,কখন এখান থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। অভ্র ধীর সুস্থে বলতে থাকে,,”মিস লিয়া আপনার প্রিয় ফ্রেন্ড আছে।আছে তো নিশ্চয়?কোন বৈশিষ্ট্যর জন্য সে আপনার প্রিয় হয়েছে?”

লিয়া দৃষ্টি নিচু করেই মৃদু কন্ঠে উত্তর দেয়,,”আসলে আমি ওরকম ফ্রেন্ড কালচারে বিশ্বাসী নই।কারন যে বয়স টুকু হয়েছে তাতে বুঝেছি, পারফেক্ট নিজের হওয়া এবং পারফেক্ট কাউকে খুঁজে পাওয়া খুবই কঠিন।

(লিয়া মনে মনে ভাবে,তবে পারফেক্ট একজন কে পেয়েছি আমি।সে থাকলে আমার অন্য কাউকে আর প্রয়োজন নেই)
কিছু সময় থেমে,
তবে এই পর্যায়ে এসে এক রুমে আমরা তিনজন থাকি।আমরা একে অপরকে জানি,শুনি,বুঝি, কিন্তু আমি নিজের সীমার মধ্যে থেকে ওদের সাথে মিশি। ওদের দুজনের সাথে আমার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে।দুইজনেরই প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য আলাদা।তারপরেও ওদের দুজনকেই আমি সমান ভাবেই টিট করি।”

“ওহ্।এই ব্যাপারে তো দেখছি আমি আপনার একদম বিপরীত মুখী।কজ আমার অনেক ফ্রেন্ড আছে।আমি সবার সাথে সহজেই মিশে যাই।আমি সবার সাথে হেসে খেলে চলতে পছন্দ করি।এটা আমার দোষও বলতে পারেন আবার গুনও।অবশ্য এর পেছনে একটা কারন আছে। কারন টা হলো আমি ব্যবসা করি,আমাকে অনেকের সাথে মিশতে হয়,এটাই আমার পেশা,তবে অন্য আরো পাঁচ জন বিজনেস ম্যাগনেট এর মত আমি না।আমারো এতো ভালো লাগে না, তবে ব্যবসার খ্যাতিরে যতটুকু।ব্যবসা তো নিজের পছন্দ মত হয়না ক্লাইন্ট এর ডিমান্ড অনুযায়ি। এই যদি আমি কোনো সম্মান জনক ফাস্ট ক্লাস অফিসার হতাম,তাহলে নিজের মতো করে পছন্দ মত, ইচ্ছে হলে কারো সাথে মিশতাম না হলে মিশতাম না।আমার ফুল স্বাধীনতা থাকতো।বাট ব্যবসায় স্বাধীনতাটা একটু কম থাকে।”

কথাটা শুনে লিয়া বলে,, “মানুষের সাথে মেশা তো ভালো।”

“আমি মনে হয় অনেক বেশি কথা বলে ফেললাম।আসলে আমি সব সময় শক্ত কথাগুলো এবং নরম কথাগুলো সব কথাই মজা করেই বলি।তবে আপনার কাছে এসে মনে হয় আমার সব কথা গুলোই বেশি করেই বলে ফেললাম।এটা মনে হয় আপনাকে ভালো লাগার দূর্বলতায়। আচ্ছা এখন আসি আপনার লেখাপড়ার কথায়। আপনার লেখাপড়ার কি খবর? সেদিনকার ফোন কলে যদি আপনার মন খা’রাপ হয়ে থাকে আ’ম রিয়েলি সরি।যদি আমার ফোন কলে আপনার পড়ায় ব্যাঘাত ঘটে থাকে রিয়েলি সরি।”

লিয়া সৌজন্যতার খ্যাতিরে বলে,,”নাহ্ ঠিক আছে।”

রাজিয়া সুলতানা কিচেনে রান্না করছিলেন,আর মাঝে মাঝে লক্ষ্য করছিলেন যে,লিয়া আবার কোনো বে’য়াদবি আচরণ করে বসবে নাতো।তবে উনি পর্যবেক্ষণ করে বুঝলেন যে,লিয়া স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলেছে। কিন্তু একটা জিনিস উনার দৃষ্টির আড়াল হয় না।লিয়ার ফেস দেখে বুঝতে পারেন,লিয়া স্বাভাবিক ভাবে কথা বললেও,লিয়া কেমন জানি অভ্র কে এলার্জি ফিল করছিলো।

রাজিয়া সুলতানা গিয়ে কুশলাদি বিনিময় করে। অভ্র এর বাবা মায়ের কথা জিগ্গেস করতেই, অভ্র এক নাগাড়ে গড়গড় করে বলতে থাকে,,”বাবা তো ময়মনসিংহ এর চেম্বার অফ কমার্স এর চেয়ারম্যান।আমাদের ঢাকা টু ময়মনসিংহ রোডে অভ্র ট্রাভেল আছে।বাবা ময়মনসিংহ পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি।তো বুঝতেই পারছেন আন্টি বাবা সব সময় ব্যস্ত সময় পার করেন। তো আন্টি আপনারা সময় করে একদিন আমাদের বাসায় বেড়াতে যাবেন।আর মম তো লিয়াকে দেখার কথা বলছে।তো আপনাদের সবাইকে ইনভাইট করছি।”

রাতে ডিনার করে অভ্র চলে যায়। অভ্র চলে যাওয়ার পর লিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।রুমে গিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বুক ভরে শ্বাস নিতে থাকে।

ডিনার করে রুমে এসে ফোনটা চেক করে লিয়ার কোনো মেসেজ বা কল দেখতে না পেয়ে জারিফ কিছুটা চিন্তিত হয়।জারিফ ভাবে,লিয়া তো রোজ বিকেলে বা সন্ধ্যায় মেসেজ দেয়,আবার এই সময় কল করে।আজকে একটাও মেসেজ দেয়নি, আবার কলও দেয়নি।কোনো সমস্যা হয়নি তো ওর?জারিফ ফোনটা নিয়ে ব্যালকনিতে গিয়ে লিয়ার কাছে কল দেয়।

লিয়া জারিফের কল দেখে স্মিত হেসে রিসিভ করে বলে,,”তা জনাব কি আমাকে মিস করছিলেন না-কি?”

জারিফ লিয়ার ভয়েজ শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।বাম হাত টাউজারের পকেটে গুঁজে ডান হাতে ফোন কানে ধরে সটান দাঁড়িয়ে শান্ত গলায় বলে,,”সে তো সার্বক্ষণিকই তোমাকে মিস করি।তা আজকে যে তোমার কোনো খবর নেই,ব্যস্ত ছিলে?”

লিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”আর বলেন না এক পা’গলের পাল্লায় পড়েছিলাম।”

লিয়ার কথা শুনে জারিফ অবাক গলায় শুধায়,,”মানে”

লিয়া নির্বিকার কন্ঠে বলে,,”বাদ দেন এসব।তেমন কিছু নয়।খাওয়া দাওয়া করেছেন?”
“হুম।তুমি খেয়েছো?”
“হ্যা। আন্টি আঙ্কেল কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে। আম্মুই একটু অসুস্থ সুগার টা কিছুটা বেড়েছে।”

লিয়া চিন্তিত গলায় বলে,,”ওহ্।আমার দাদিমনির ও প্রায় সময় সুগার বেশি থাকে।সেই জন্য দাদিমনি তেল চর্বি, মিষ্টি জাতীয় খাবার এভয়েড করে চলে দেখি, পাশাপাশি মেডিসিন নেয়।”
জারিফ ছোট করে বলে,,”হুম।”
কিছু সময় থেমে জারিফ মজা করে বলে,,”তুমি থাকলে ভালো হতো।সবার দেখাশোনা করতে।বিশেষ করে আমার কেয়ার নিতে।”

লিয়া ভাবলেশহীন ভাবে জবাব দেয়,,”কেনো?আপনি কি ছোট যে আপনার আবার কেয়ার নিতে হতো।”

“বরের নেওয়া কেয়ার শব্দটা একটু আলাদা।”
“কিরকম আলাদা শুনি।”
“বউয়ের মিষ্টি আদর।”
“নিয়ে যান বউ করে।”
“তুমি তাড়াতাড়ি আরেকটু বড় হয়ে নাও।আর এদিকে আমারও চাকরিটা হোক।”
“তাহলে এই সকল আদর খাওয়ার শখ টাকেও আপাতত সাইডে রেখে দিন।”

এরমধ্যে রাহবার দরজার ওপাশ থেকে হাঁক ছেড়ে লিয়াকে আপু আপু করে ডাকতে থাকে।লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মৃদু কন্ঠে বলে,, আপনার গুনধর ছাত্র ডাকছে আমাকে।পরে কথা বলছি।”
“ওকে।”

লিয়া বিছানা থেকে নেমে গিয়ে দরজা খুলে মুখে গম্ভীরভাব টেনে নিয়ে বলে,,”কি হয়েছে?এভাবে ডাকছিস কেনো?”

হাতে থাকা একটা চকলেট বক্স লিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,”অভ্র ভাইয়া যে চকলেট এনেছিলো,তারমধ্যে থেকে তোকে একটা দিলাম।বাকি গুলো আমার কেমন।”

লিয়া নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট গলায় বলে,,”আমার লাগবে না,এটাও তুই নে ভাই।”

রাহবার কপাল কুঁচকে বলে,,”তুই কি আমার উপর রা’গ করে বলছিস।না মানে আমি আসলে বুঝতে পারছি না। এমনি সময় তো কাড়াকাড়ি করিস তাই বলছি।”

লিয়া নির্বিকার গলায় বলে,,”ভাই সত্যি মন থেকেই বলছি। রা’গ করে নয় তুই রাখ চকলেট বক্সটা।”

রাহবার ওকে বলে চলে যায়।লিয়া রুমে যেতে যেতে বলে,,”যদিও চকলেট আমার প্রিয়। বাট ঐ অভ্র এর দেওয়া আমার প্রিয় জিনিস টাও কেমন জানি অপ্রিয় হয়ে গেলো।

কয়েকদিন পর,,

দুপুরে লাঞ্চ করে লিয়া ওর রুমে ছিলো।সেই সময় রাজিয়া সুলতানা এসে লিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”লিয়া রেডি হয়ে নিস।একটু পর শপিং এ যাবো।আমার কিছু কেনাকাটা করতে হবে।রাহবার এর জন্য কালার পেন্সিল ও আনতে হবে।আর তোর ও তো কিছু কেনাকাটা করা দরকার। কয়েকদিন পরেই তো তোর ক্লাস শুরু হবে,চলে যাবি।সেদিন শপিং এ গিয়ে কি করলি অত সময়। মাত্র একটা ড্রেস নিয়ে ফিরলি। বুঝলাম না একটা ড্রেস কিনতে অতটা সময় ব্যয় করলি কি করে?”

রাজিয়া সুলতানার শেষের কথা শুনে লিয়া কয়েকবার শুকনো ঢোক গিলে নেয়।তারপর কিছুটা জড়তা নিয়ে বলে,,”আচ্ছা আমি তৈরি হয়ে নিচ্ছি কেমন।”

রাজিয়া সুলতানা আর কিছু না বলে ওখান থেকে প্রস্থান করেন।

লিয়া আর ওর আম্মু প্রথমে কাপড়-চোপড় কিনে তারপর কসমেটিক্স এর দোকানে ঢুকে।সেখানে লিয়া পায়েল দেখতে থাকে। কিন্তু লিয়ার পছন্দ হয় না।

আজকে বিকেলে কোচিং এ জারিফের ক্লাস ছিলো।ক্লাস নিয়ে ফিরছিলো।সেই সময় শব্দ করে ফোন বেজে উঠে, রিসিভ করে বলে,,
“হ্যা জেরিন বল।”
“ভাইয়া কোথায় তুই?”
“কেনো?কি হয়েছে?আমি বাসায় আসছি।”
“আমার জন্য একটা মেহেদী আনিস।”

জারিফ ফাইভ সেকেন্ড ভেবে নির্বিকার ভাবে বলে,,”আমি টাকা দিয়ে দেবো।তুই কিনে নিস কেমন।”

জেরিন আবদারের সুরে বলে,,”নাহ্।আমার আজকেই লাগবে।”

জারিফ কথা না বাড়িয়ে বলে,,”আচ্ছা ঠিক আছে।”

“আ্যই ভাইয়া ওয়েট ওয়েট,লিজান কোণ মেহেদী কিন্তু।নাম যেনো মনে থাকে,হু।”

জারিফ নিঃশব্দে হেসে বলে,,”ঠিক আছে।”

নিউমার্কেট এর সামনে একটা কসমেটিক্স এর দোকানে গিয়ে জারিফ দোকানদার কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”ভাই মেহেদী দেন তো।লিজান কোণ মেহেদী।আর ট্রুথ পেস্ট দিন,পেপসোডেন্ট।”

লিয়া আর রাজিয়া সুলতানা নিউমার্কেট থেকে বের হয়ে আসছিলো।সেই সময় রাজিয়া সুলতানা লিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”লিয়া চল তো এইখানে দেখি তোর পায়েল পছন্দ হয় কিনা।”

লিয়া মুখটা মলিন করে ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”থাক আম্মু,লাগবে না।চলো তো বাসায় যাই।আমার আর ঘোরাঘুরি করতে ইচ্ছে করছে না।”

রাজিয়া সুলতানা কিয়ৎক্ষন ভেবে নিয়ে শান্ত গলায় বলে,,”আরে পারফিউম ও তো কেনা বাকি আছে।চল পারফিউম নেওয়ার সময় পায়েল দেখিস। পছন্দ হলে নিস না হলে না।”

অগত্যা মায়ের কথা রাখতে লিয়া হ্যা সম্মতি দেয়।লিয়া আর রাজিয়া সুলতানা কসমেটিক্স এর দোকানে ঢুকে একসাইডে দাঁড়ায়।লিয়া ঘাড় ঘুরিয়ে বাম সাইডে তাকাতেই দেখতে পায় জারিফ কে।জারিফ কে দেখে লিয়া অবাক হয়। বিস্ময়কর চাহনিতে একদৃষ্টে জারিফের দিকে তাকিয়ে আছে।জারিফের দৃষ্টি সামনের দিকে থাকায় লিয়াকে এখনো খেয়াল করেনি।রাজিয়া সুলতানা মৃদু আওয়াজে লিয়াকে ডাকে।লিয়ার কান পর্যন্ত ডাকটা পৌঁছায় না।লিয়ার ধ্যান আঁটকে আছে জারিফের দিকে।লিয়ার কোনো সাড়া না পেয়ে লিয়ার দিকে তাকিয়ে একটু জোড়ে লিয়া বলে ডাকে।মায়ের ডাকে লিয়া নিজেকে তটস্থ করে বলে,,”হ্যা।”

রাজিয়া সুলতানার লিয়া বলে ডাকটা জারিফ শুনতে পেয়ে ডান সাইডে তাকাতেই লিয়া আর রাজিয়া সুলতানা কে দেখে অনেকটা অবাক হয়।জারিফ দেখে,লিয়া ওর দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসছে।জারিফ নম্র স্বরে রাজিয়া সুলতানা কে সালাম দিয়ে বলে,,”কেমন আছেন আন্টি?”

রাজিয়া সুলতানা জারিফ কে দেখে কিছুটা অবাক হন। মিষ্টি হেসে বলেন,”ভালো আছি।তা জারিফ বাবা কেমন আছো?”
জারিফ এক শব্দে বলে,,”ভালো।”
“এখানে কিছু কেনাকাটা করতে আসছো নিশ্চয়।”

জারিফ হ্যা সূচক বলে।লিয়া আড়চোখে জারিফের দিকে বারবার তাকাচ্ছে,আর মুচকে মুচকে হাসছে।লিয়ার হাবভাব দেখে জারিফ কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে।জারিফ মনে মনে ভাবে,,”লিয়া তো দেখছি আন্টির সামনে আমাকে ফাঁসিয়ে দেবে। নির্ঘাত আন্টি আজকে সন্দেহ করে বসবে।যে আমার আর লিয়ার মাঝে কিছু চলছে।

[চলবে…ইন শা আল্লাহ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here