#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৩৬
“বিয়ে শাদী একবারই জীবনে। তাই ভাবছি একটু দেরি হলেও সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করবো।সব রিচুয়াল মেনেই তোমাকে আমার ঘরে তুলবো। জানিনা কতটা জাঁকজমকপূর্ণ হবে। তবে আমার দিক হতে তোমাকে বেস্ট টাই দেওয়ার চেষ্টা করবো।তোমার অনুভূতির কথা কিছু বলো।আমি তো এক নাগাড়ে অনেক কথাই বলে ফেললাম।”
লিয়া কফির মগে ঠোঁট ছুঁইয়ে জারিফের দিকে শীতল চাহুনিতে চেয়ে রসিকতার ছলে বলে,,”বিয়ে শাদী একবারই জীবনে।তা আপনার কথা শুনে জানতে ইচ্ছে হলো, আপনার কি একের অধিক বিয়ে করার শখ-টখ আছে না-কি?”
লিয়ার কথা নিউরনে সাড়া জাগাতেই জারিফ খুকখুক করে কেশে উঠে। জারিফ নিজেকে স্বাভাবিক করে হালকা কেশে গলা পরিষ্কার করে দুষ্টুমির স্বরে বলে,,”ছেলেদের জন্য তো চারটা বিয়ের অনুমতি আছে।চারটা বিয়ে তো করাই যায়।কি বলো?”
শেষের কথাটা জারিফ ভ্রু নাচিয়ে বলে।জারিফের কথা কর্ণপাত হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছাতেই লিয়া বড়বড় চোখ করে জারিফের দিকে তাকায়।লিয়া মোটেও এমন একটা কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলো না। মুর্হূতেই লিয়ার ফর্সা গালে আঁধার নেমে আসে।না চাইতেও মনটা খা’রাপ হয়ে আসে।লিয়া কর্কশ গলায় বলে,,”হোয়াট?”
জারিফ শুকনো ঢুক গিলে নিয়ে বলে,,”রিলেক্স রিলেক্স।এতো হাইপার হওয়ার কিছু নেই।তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে ঠিক চোখ দিয়েই আমাকে ভস্ম করে দিবে ।আরে আগে আমার পুরো কথাটা কমপ্লিট করতে দিবে তো।চারবার কেনো হাজার বারও আমি বিয়ে করতে রাজি।তবে প্রত্যেক বার পাত্রী হিসেবে আমার শুধু তোমাকেই চাই। প্রত্যেক বার শুধু তোমাকেই আমার বউ বানাতে চাই।”
লিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দুইহাত টেবিলের উপর ভাঁজ করে রেখে নিঃশব্দে ঠোঁট মেলে হাসে।জারিফ একটু নড়েচড়ে বসে মৃদু কন্ঠে বলে,,”সেদিন তোমাদের কলেজের প্রোগ্রামে আমি এসেছিলাম। তুমি আমি এত কাছিকাছি ছিলাম।বাট দুঃখের বিষয় তোমার ফেসটাই আমি দেখতে পায়নি। আমি খুব এক্সাইটেড ছিলাম ফেসটা দেখার জন্য। কিন্তু পোড়া কপাল তুমি একবারো ঘুরে তাকালে না।তারপরেও আমি ভেবেছিলাম শেষ অব্দি থেকে হলেও ঐ মেয়েটার ফেস দেখবই।সরাসরি উঠে গিয়ে দেখার পরিকল্পনাও করে ফেলেছিলাম। কিন্তু আনফরচুনেটলি পরে আর মেয়েটিকে দেখতে পায়নি।তবে এখন আমি শিওর ঐ মেয়েটা তুমিই ছিলে।তুমি কি কোনো কারনে সেদিন প্রোগ্রাম শেষ না করে চলে গিয়েছিলে?”
লিয়া মাথাটা নিচু করে কিছুটা জড়তা নিয়ে বলে,,”হুম। সেদিন অসুস্থ থাকায়।প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার মিনিট পাঁচেক পরেই আমি বাসায় চলে যাই।”
জারিফ ছোট করে বলে,,”ওহ্।”
লিয়া মোবাইলে সময় দেখে নিয়ে তাড়া দিয়ে বলে,,
“অনেক লেইট হয়ে যাচ্ছে তো।বাসায় ফিরতে হবে এবার।নাহলে আপনার শ্বাশুড়ি মা টেনশন করবে।”
জারিফ ভাবলেশহীন ভাবে শান্ত গলায় বলে,,
“আমার শ্বাশুড়ি মা খুব ইন্টিলিজেন্ট। উনি নিশ্চয় এতক্ষণে ধারণা করেছেন মেয়ে উনার জামাইয়ের সাথে আছে।সো চিন্তা করার প্রশ্নই আসে না।”
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে জারিফ একটা রিকশা ডেকে নেয়।লিয়াকে ইশারায় উঠতে বলে।লিয়া কপাল কুঁচকে জারিফকে বলে,,”রিকশায় যেতে তো অনেক টাইম লাগবে।এখান থেকে ক্যান্টনমেন্ট অনেক দূর হয় তো।”
জারিফ নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে,,”আই নো।রিকশাতে যেতে থার্টি ফাইভ থেকে ফর্টি মিনিটসের মতো লাগবে । ইচ্ছে করেই সিএনজিতে যেতে চাচ্ছি না। রিকশা ভ্রমণ করবো।”
লিয়া আকাশের দিকে দৃষ্টি দিয়ে সূর্যের প্রখরতা দেখে, ছোট করে শ্বাস টেনে নিয়ে ঠোঁট মেলে বলে,,”মাথার উপর সূর্য।এই রোদ মাথায় নিয়ে ভরদুপুরে কারো রিকশা ভ্রমণ করতে ইচ্ছে করে।আপনাকে না দেখলে জানতাম না।রোদের তাপে পুড়ে ভেজে একদম ফ্রেন্চ ফ্রাই হবেন ।”
“তোমার সাথে কাটানো মুহূর্তগুলোর থেকে বেশি দামী আমার কাছে কিছু নেই।তুমি পাশে থাকলে আমি এক আকাশ সমান শান্তি খুঁজে পাই।আর তুমি পাশে থাকলে গ্রীষ্ম বর্ষা সব ঋতুতেই আমার মনে শীতলতা বয়ে যায়। এই রোদ্দুর কোনো বিষয়ই না আমার কাছে।আর ইউ ক্লিয়ার?”
লিয়া বিনাবাক্য ব্যয়ে রিকশাতে উঠে বসে। জারিফও বসে। বিভিন্ন গল্প করতে থাকে।রিকশা গন্তব্যে এসে থামতেই জারিফ লিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”কিহলো এখন তো আমাকে রেখে নামতেই চাইছো না।নাকি আমার সাথে ব্যাক করার প্লান করেছো?”
লিয়া রিকশা থেকে নামতে নামতে বলে,,”মোটেও না।”
কিয়ৎক্ষন থেমে লিয়া মিষ্টি হেসে বলে,,”ভেতরে চলুন। আম্মুর সাথে দেখা করে যাবেন।”
জারিফ মুচকি হেসে শান্ত স্বরে বলে,,”আজ নয়, প্লিজ।”
“ওকে।বাই”
ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে রাত নয়টা বাজে।বিছানায় বসে ফোন স্ক্রল করছে লিয়া।মাথার উপর ফ্যানটা ঘুরছে। কাঁধের একপাশে দিয়ে সামনে রাখা চুলগুলো বাতাসে উড়ছে।এমন সময় হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আন্নাউন নম্বর থেকে কল আসে। নম্বর টির দিকে তাকিয়ে কয়েকবার পলক ঝাপটায় লিয়া।লিয়ার মস্তিষ্ক বলছে নম্বরটা এর আগেও হয়তো দেখেছে। কিয়ৎক্ষন ভেবে নম্বর টা কার মনে করতে পারলো না লিয়া। অবশেষে দ্বিতীয় বারের মাথায় রিসিভ করে সালাম দিয়ে বলে,,”কে বলছেন?কাইন্ডলি পরিচয়টা দিন।”
ফোনের ওপাশ থেকে তপ্ত নিঃশ্বাস ছেড়ে ম্লান গলায় বলে,,”মিস লিয়া কেমন আছেন?”
পুরুষালি কন্ঠে বলা কথাটা কর্ণগোচর হতেই লিয়ার দুই সেকেন্ড লাগে চিনতে।লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বিরক্তিকর ফেস করে নিরস গলায় বলে,,”ভালো।”
অভ্র দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত স্বরে বলে,,”মিস লিয়া ইতিমধ্যে আমি শুনতে পেয়েছি আপনি আপনার কাংখিত ভালোবাসার মানুষ কে পেয়ে গিয়েছেন।আই উইশ ইউর গুড লাক এন্ড ইউ উইল বি হ্যাপি।”
“থেংকিউ।”
অভ্র হতাশ গলায় বলতে থাকে,,”আসলে আমি বুঝতে পেরেছি যে, আপনার সঙ্গে আমার কখনো সংসার হবে না।তা বুঝেও আমি আপনাকে ভালোবেসে ছিলাম।জীবনটা জ্যামেতির উপপাদ্যের চিত্রের ন্যায় কঠিন।দেখতে দেখা যায় সহজ কিন্তু প্রমাণ করতে গেলে বোঝা যায় আসলে কতটা কঠিন আর জটিল।জানেন মিস লিয়া,আমি অনেক প্রোপোজাল পেয়েছি। কিন্তু গ্রহণ করিনি।আমি একজন কে পাবো না জেনেও ভালোবাসি।পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যুদ্ধ টা মানুষে মানুষে নয়।নিজের সাথে নিজের।মি বনাম মি।হেড বনাম হার্ট।আমি নিজের সাথে অনেক যুদ্ধ করেছি আপনাকে ভুলতে বাট আ’ম ফেইলুর।আমি ভুলতে পারিনি আপনাকে।তবে আপনি টেনশন নিয়েন না।আমি আপনাকে আর বিরক্ত করবো না।জীবনে সব কিছু পেতেই হবে এমন নয়।আমার জীবনের গল্পে আপনি নেই।আপনাকে পাওয়ার স্বপ্ন আমার ছিলো মরীচিকা ময়।আজ থেকে আমি হারিয়ে যাবো কালো আঁধারে।আপনি নাহয় ভালো থাকবেন অন্যকারো শহরে।”
ফোনের ওপাশে লিয়া নিশ্চুপ রয়। অভ্র একটু থেমে আবার বলতে থাকে,,”মিস লিয়া আপনি ভাববেন না আমি আপনাকে দোষারোপ করছি।বা আপনার উপর আমার কোনো ক্ষোভ আছে।এমনটা নয়।আমি আমার ভাগ্যকে মেনে নিয়েছি। আপনি আমার ভাগ্যে কখনো ছিলেনই না।মাঝখানে হুট করে আমি এসে আপনাকে বিরক্ত করে ফেলেছি। বিশ্বাস করেন মিস লিয়া,আমি মন থেকে চাই।আপনি খুব ভালো থাকেন।আপনাকে আমার থেকে কেউ বেশি ভালোবাসুক।আপনাকে আগলে রাখুক।আমার মনে হয় এমন একটা মানুষ কেই আপনি পেতে যাচ্ছেন।আপনি আমাকে ভালো না বাসলেও। পছন্দ না করলেও। একটা কথা জেনে রাখেন,আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আপনাকে ভালোবেসে যাবো।আমি তো আর আপনার মনের মানুষ হতে পারলাম না।তবে আপনাকে অনেক বিরক্ত করায় আমি ক্ষমা প্রার্থী।আসলে এটা আমার অবুঝ মনের চেষ্টা ছিলো।আবার ও আপনার ফিউচার লাইফ আনন্দে ভরে উঠুক সেই দোয়া করি।ভালো থাকবেন। বিদায়।”
লিয়া অস্ফুট স্বরে বলে,,”আপনিও ভালো থাকবেন।বিদায়।”
ফোনের দিকে তাকিয়ে অভ্র তাচ্ছিল্যর হাসি দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে,,”জানি না কতটা ভালো থাকবো।আদৌ ভালো থাকতে পারবো তো?তবে আকাশে থাকা চাঁদের মতো দূর থেকেই আপনাকে ভালোবেসে যাবো।”
লিয়া ফোনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে আওড়ায়, অদ্ভুত মানুষ একটা।আজকের কথাগুলো শুনে ওনাকে আমার ভিনগ্রহের প্রাণী মনে হচ্ছে। কথাগুলো খুবই প্যাথেটিক । অথচ অবলীলায় কত সহজেই বলে ফেললো।এসব ভেবে লিয়া মনে মনে মাথা ঝাড়া দিলো।
রাতে ডায়নিং টেবিল পরিষ্কার করে রুমে আসে তাসনিম।রুমে এসে দেখে আসফি আলিফের বুকের উপর বসে খেলছে। আলিফ ছেলের সাথে বিভিন্ন কথা বলায় মশগুল আছে। তাসনিম বিছানায় গিয়ে বসে আসফি কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”বাবা ছেলের গল্প করলেই চলবে।রাত এগারোটা বাজতে চললো।ঘুমাতে হবে না।”
তাসনিম দেখে আসফি খিলখিলিয়ে হেসে মা মা শব্দ করে ডাকতে থাকে।আসফির বলা আধো আধো কথা তাসনিম আলিফ দু’জনেই বেশ উপভোগ করে।আসফি তাসনিমের কোলে যায়।আলিফ একহাত বালিশের উপর রেখে হাতের উপর মাথা দিয়ে বলতে থাকে,,
“ওহ্!তোমাকে তো একটা কথা বলা হয়নি।মেজো মামা ফোন করেছিলো।লিয়া আর জারিফের এনগেজমেন্টে যেতে বলেছেন।”
তাসনিম আসফিকে হাতের উপর শুয়িয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,,”আপনি কি বলেছেন।না মানে যাওয়ার কথা বলছি।”
আলিফ এক হাত দিয়ে তাসনিমকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে,,”আমি তেমন কিছুই বলিনি।যাওয়ার কথা কিছু বলা হয়নি।ভাবলাম তোমার সাথে ডিসকাস করে যেটা ভালো হয়।তা তুমি কি বলো?তোমার বোনের এনগেজমেন্ট।”
তাসনিম কিছু ভেবে নিয়ে ভরাট গলায় বলে,,”আসলে বলছি যে, মাত্রই জার্নি করে আসলাম। একয়দিন চাচ্চুর বিয়ে নিয়ে বেশ স্ট্রেচ পড়েছে।আবার আসফিকে নিয়ে জার্নি করে অতদূর যাওয়া। জার্নি করলেই আসফির শরীর খা’রাপ হয়। সেইজন্য বলছি আমি মেজো চাচিমা আর লিয়ার সাথে ফোনে কথা বলে নিবো।ওদেরকে বুঝিয়ে বলবো। এনগেজমেন্টে থাকতে পারছি না।তবে বিয়েতে নিশ্চয় যাবো।”
আলিফ তাসনিম এর ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে বলতে থাকে,,”ওকে সুইটহার্ট।যেটা ভালো বুঝো।”
সুন্দর ঝলমলে একটি বিকেল।লিয়া সোফায় হেলান দিয়ে বসে টিভি দেখছিলো।রাজিয়া সুলতানা একপাশে বসে বাজার লিস্ট করছিলেন।এমন সময় লিয়ার ফোনটা কেঁপে উঠে। ফোনের স্ক্রিনে জারিফের নামটা দেখে লিয়া সোজা হয়ে বসে।পাশে রাজিয়া সুলতানা থাকায় লিয়া আনইজি ফিল করে।একবার উঠে আসার সিদ্ধান্ত নেয়। আবার কিছু ভেবে নিয়ে রিসিভ করে সালাম দেয়।ফোনের ওপাশ থেকে জারিফ নির্বিকার গলায় বলে,,
“আমি মেইনগেইটের সামনে ওয়েট করছি।ইউ কাম সুন।”
লিয়া কিঞ্চিত অবাক হয়।লিয়া ভ্রু কুঁচকে বলে,,”এখন।”
“হুম।”
“কিন্তু কেনো?কালকে তো আমাদের দেখা হচ্ছেই।আপনারা তো কালকে আসছেন-ই।”
জারিফ বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,”ওহ্! লিয়া।তুমি এত প্রশ্ন করো না।আমি এতটুকুই বলছি,এখন ফাস্ট আসো। আসলে পড়েই সব জানতে পারবে।সো প্লিজ আর প্রশ্ন করো না।”
লিয়া আর কথা না বাড়িয়ে ঠোঁট উল্টে বলে,,”ওকে।”
ফোনটা রেখে লিয়া ওর আম্মুর দিকে তাকায়।রাজিয়া সুলতানার ফেস দেখে বোঝা দায়।উনি আদৌ কিছু শুনেছেন কিনা।লিয়া হালকা কেশে নিভু নিভু স্বরে বলে,,”আম্মু একটু বাইরে যাবো।”
রাজিয়া সুলতানা কিছু লিখতে লিখতেই বলেন,,”ঠিক আছে যা।তবে জারিফকে বলিস সন্ধ্যার আগেই যেনো পৌঁছে দেয়।ও হ্যা একা একা যেনো না ছাড়ে।”
লিয়া লাজুক হেসে বলে,,”ওকে।”
লিয়া দ্রুত রেডি হয়ে নিয়ে বের হয়। প্রায় ফাইভ মিনিটস হেঁটে লিয়া মেইনগেইটের সামনে আসে।এসে দেখতে পায় জারিফ দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রল করছে।লিয়া কাছে আসতেই জারিফ ফোনটা পকেটে পুরে লিয়ার দিকে একপলক তাকিয়ে ইশারায় সিএনজিতে উঠতে বলে।চালক কে উদ্দেশ্য করে জারিফ বলে,,”রানার প্লাজা চলুন।”
কথাটা শুনে লিয়া বিস্ময়কর চাহনিতে জারিফের দিকে চেয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,,”এখন শপিং করতে যাবেন। কিন্তু কেনো?কি দরকার আছে?”
“দরকার আছে কি নেই।সেটা আমি বুঝবো।সো তুমি শুধু চুপচাপ গুড গার্ল হয়ে থেকো।তাই হবে।”
“আন্টি আঙ্কেল আসছেন?আজকে তো ওনাদের আসার কথা ছিলো।”
“হুম।আসছে।সকালের দিকেই আসছে।”
“ওনাদেরকে সাথে আনতে পারতেন।সবাই মিলে উপভোগ করতাম।”
জারিফ দৃষ্টি সরু করে লিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,
“আসলে তোমার সাথে একান্ত ভাবে কিছু সময় কাটাতে চাই সেইজন্য।আর আম্মু কে বললেও আসতো না। আম্মু জার্নি করে আসছে খুব ট্রায়ার্ড হয়ে পড়েছে।ছুটকিকে বললে হয়তো আসতো। ইচ্ছে করেই বলিনি।আমাদের দু’জনের স্পেশাল সময়গুলো দু’জন মিলেই কাটাতে চাই।”
সিএনজি এসে রানার প্লাজার সামনে থামে।জারিফ ভাড়া মিটিয়ে দেয়।তারপর সিড়ি বেয়ে কিছুটা উঠেই ফাস্ট ফ্লোরে বামদিকের বুথে ঢোকে ক্যাশ আউট করতে।এটিএম ভিসা কার্ড দিয়ে ক্যাশ আউট করে তারপর মলের ভেতরে ঢুকে।শাড়ির দোকানে যায়।
“শাড়ি চুজ করো।”
জারিফের মুখ নিঃসৃত কথাটা শুনে লিয়া ফাঁকা ঢুক গিলে নেয়। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে,,”শাড়ি।”
জারিফ ঘন স্লিকি স্ট্রেইট চুলের মধ্যে আঙুল চালনা করে বলে,,”হুম।কালকের জন্য।”
লিয়া আর কোনো বাক্য ব্যয় না করে শাড়ি দেখতে থাকে। অনেক গুলো শাড়ি দেখছে কিন্তু লিয়ার পছন্দ হচ্ছে না।আর লিয়া কখনো শাড়ি কেনেনি তাই অভিজ্ঞতাও নেই। সেলস বয় একটা গোল্ডেন কালারের শাড়ি মেলে ধরতেই। জারিফ ঠোঁট কামড়ে ধরে একবার লিয়ার দিকে আরেকবার শাড়িটার দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলে,,”লিয়া আমার মনে হচ্ছে এটা তোমাকে বেশ মানাবে।আই হেভ নো আইডিয়া এসব মেয়েলি শপিং এ তবুও আমার মনে হচ্ছে এটা বেটার হবে।”
লিয়া একহাতে শাড়িটা নেড়ে স্টোন গুলোতে চোখ বুলিয়ে নিয়ে বলে,,”হুম।বেশ গর্জিয়াস মনে হচ্ছে।এটাই প্যাক করতে বলুন।”
শাড়ি আরো আনুষঙ্গিক কিছু কিনে নিয়ে জারিফ পেইড করে।তারপর আড়ং এ যায়। জারিফ পাঞ্জাবি দেখতে থাকে। অবশেষে গোল্ডেন কালারের একটা চুরিদার পায়জামা পাঞ্জাবি নেয়।সব কেনাকাটা শেষে জারিফ লিয়াকে বাসায় নামিয়ে দেয়।লিয়া জারিফকে বাসার ভেতর যাওয়ার কথা বলতেই।জারিফ এড়িয়ে যেতে বলে,কালকে তো আসছি।তাই এখন যাওয়াটা ঠিক হবে না।লিয়াও আর জোর করে কিছু বলে না।
আজকে শুক্রবার। শুক্রবার দিনটাতে কেমন জানি সব কিছুতেই পবিত্র আর নির্মলতার ভাব মনে হয়। পরিষ্কার আকাশ। রৌদ্র ঝলমলে সোনালী একটা দিন। এনগেজমেন্ট যেহেতু বগুড়ায়ই হচ্ছে তাই বেশি লোকজন নেই।বেশ ঘরোয়া ভাবেই এনগেজমেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। লিয়ার বাবার ইচ্ছে বিয়েতে সবাইকে ইনভাইট করে পেট পুড়ে খাওয়াবে। আত্মীয়-স্বজন সহ সব কলিগদেরও।লিয়ার ছোট চাচ্চু আর ছোট চাচীমা এসেছে সকালে।ওনারা যেহেতু বগুড়ায়ই থাকেন। লিয়ার বাবা জান্নাত বেগমকে কালকে নিয়ে এসেছেন। জারিফের দিক হতে শুধু জারিফের বাবা মা আর বোন আসবে। পুরো ফ্লাট জুড়ে হরেক রকমের রান্নার গন্ধে ম-ম করছে। কিচেনে রাজিয়া সুলতানা লিয়ার নতুন চাচিমা আর কাজের মেয়েটা মিলে হরেক পদ রাঁধতে ব্যস্ত।মাঝে মাঝেই এনামুল খাঁন তদারকি করছেন।সব কিছু ঠিক আছে কিনা।বাসাটা হালকা করে সাজানো হয়েছে। বিশেষ করে ড্রয়িংরুমটা।
সন্ধ্যার পর জারিফ আর ওর পরিবার আসে।কয়েক রকমের মিষ্টি, ফলমূল,আরো মাছ।অনেক কিছু নিয়েই হাজির হয়।হবু শ্বশুরের বাসায় হবু জামাই পরিচয়ে প্রথম আসা তাই কোনো কিছুর কমতি যাতে না থাকে। সেইজন্য সব কিছুই একটু বেশি বেশিই এনেছে জারিফ।ড্রয়িং রুমে সোফায় বসতে দেওয়া হয়।জারিফ একপাশে বসে ফোন স্ক্রল করতে থাকে। বড়দের মাঝে জারিফের বেশ আনইজি লাগছে আর জারিফের দু’চোখ লিয়াকে খুঁজছে।জারিফের মনটা উসখুস করতে থাকে প্রেয়সীকে একনজর দেখার জন্য।এনামুল খাঁন আইনাল হোসেনের সাথে কুশলাদি বিনিময় করেন।
এনামুল খাঁন অপরাধবোধ নিয়ে নম্র স্বরে বলেন,,”আসলে বেয়াই সাহেব।আপনাদের কে ফোনে কিছু না জানানো।তারপর পরের দিন আমার অফিস থেকে আপনাকে ওভাবে ফিরিয়ে দেওয়া।আমার উচিত হয়নি।এসবের জন্য আমি সত্যি খুব লজ্জিত।”
আইনাল হোসেন অমায়িক হেসে ভদ্রভাবে বলেন,,
“আরে বেয়াই এসব কথা রাখেন।এসব কোনো বিষয় না।আর এসব কিছু তো জীবনেরই অংশ।খেলায় যেমন মাঝে মধ্যে ভুল আম্পায়ারিং হয়। তারপরেও খেলায় হার জিতটাই মেইন।সেটাও কিন্তু খেলারই একটা অংশ।জীবন চলার পথেও এরকম ভুলত্রুটি হতেই পারে।সবকিছুকেই মেনে নিতে হয়। আর আমরা চাইবো যা হওয়ার হয়েছে।আমাদের ছেলে-মেয়ে যেনো ভবিষ্যতে ভালো থাকে সেইটাই এখন মুখ্য বিষয় হওয়া উচিত।”
এনামুল খাঁন নির্দ্বিধায় সহমত পোষণ করে একবাক্যে বলেন,,”একদম ঠিক বলেছেন।”
রাজিয়া সুলতানা এসে কুশলাদি বিনিময় করে শান্ত গলায় বলেন,,”বড় মেয়ে জামাইকে আনতে পারতেন।ওদের সাথেও দেখা সাক্ষাৎ হতো।”
জাহানারা বেগম হাস্যজ্বল মুখে বলেন,,”বড় মেয়ে জামাইয়ের সাথে বাসায় আছে।জামাইয়ের পোস্টিং অন্য উপজেলাতে সেখানেই আছে।এতদূরের পথ।মেয়েটা একটু অসুস্থও আছে।তাই আর জোর করে বলিনি।বিয়ে তো ময়মনসিংহে হবে তখন বাড়িতে আসবে।”
রাজিয়া সুলতানা জারাকে দেখেন জারিফের পাশে বসে হাঁসফাঁস করছে।আর ফিসফিস করে জারিফকে কিছু বলছে। জারার হাঁসফাঁস দেখে রাজিয়া সুলতানা বিষয়টা বুঝতে পারেন।তাই আর দেরি না করে জারাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,,”তুমি লিয়া কে দেখতে চাও তাইতো ।চলো আমার সাথে ভিতরে।”
কথাটা শুনে জারার চোখ মুখ খুশিতে চকচক করতে থাকে।জারা দুই সেকেন্ডের মধ্যে উঠে দাঁড়ায়।রাজিয়া সুলতানার সাথে লিয়ার রুমের দিকে যেতে থাকে।জারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে জারিফ অস্পষ্ট স্বরে মনে মনে আওড়ায়,,ইশ!জারার মতো কেউ যদি আমার মনের অবস্থা বুঝতো। বাট আফসোস আমার মনের কষ্ট আমার হবু বউ-ই বোঝে না।আসছি টুয়েন্টি মিনিটস হয়ে যাচ্ছে।একবারও এসে হবু বরের সামনে দর্শন দিলো না।একটু আধটু খোঁজ খবরও তো নিতে আসতে পারতো।
লিয়ার ছোট চাচীমা লিয়াকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়।চোখে হালকা করে কাজল আর ঠোঁটে পিংক কালারের লিপবাম। এতটুকুই।মাথার উপর শাড়ির আঁচল দিয়ে তাতে পিন আটকিয়ে নেয় এমন সময় জারা রুমে ঢুকে হালকা কেশে সালাম দেয়।জারাকে দেখে লিয়া বিস্ময়কর চাহনিতে চেয়ে থাকে।জারাও বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে ভাবতে থাকে। প্রায় ফাইভ সেকেন্ড পরে জারা এক্সাইটেড হয়ে বলতে থাকে,,
“আমি ভাবতেও পারিনি তুমি আমার ভাবিপু হবে।তবে তুমি জানো আমি মনে মনে তোমাকে আমার ভাইয়ার বউ হিসেবে চেয়েছিলাম।”
লিয়া মিষ্টি হেসে বলে,,”ওহ্।তাই নাকি। বাহ্ তোমার ব্রেন তো দেখছি খুব সার্ভ।একবার দেখেছিলে তাও এতদিন পর ঠিক আমাকে চিনতে পারলে।”
রাজিয়া সুলতানা অবাক হয়ে লিয়াকে শুধায়।লিয়া পার্কের সেদিনের ঘটনা বলে।জারিফদের কে প্রথমে নাস্তা দেওয়া হয়।লিয়াকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে যাওয়া হয়।মাথায় ঘোমটা দেওয়া।লিয়া গিয়ে মৃদু আওয়াজে সালাম দেয়।জারিফ মাথা তুলে একজনর লিয়াকে দেখে জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস টেনে নেয়।শাড়িতে লিয়াকে খুব সুন্দর লাগছে।জারা লিয়ার হাত ধরে সোফায় জারিফের পাশে বসায়। জাহানারা বেগম লিয়ার সাথে কিছু কথাবার্তা বলেন। জাহানারা বেগম জারাকে ইশারা করতেই ব্যাগ থেকে একটা লাল বক্স বের করেন। জাহানারা বেগম বক্স খুলে বালা বের করে নিজ হাতে ভারি দুইটা স্বর্ণের বালা লিয়ার হাতে পড়িয়ে দেয়।
অবশেষে রিং পড়ানোর মূহূর্ত চলে আসে।জারা ব্যাগ থেকে আরেকটা বক্স খুলে জারিফের হাতে দেয়।বেশ কারুকার্য করা গোল্ডের একটা রিং বের করে।জারিফ লিয়াকে ইশারা করতেই লিয়া ওর বাম হাতটা মেলে ধরে।জারিফ একহাতে লিয়ার হাতটা ধরে অন্যহাতে লিয়ার অনামিকা আঙ্গুলে রিং টা পড়িয়ে দেয়। জারিফ সবার আড়ালে ফিসফিসিয়ে বলে,,”তোমাকে শাড়িতে হেব্বি লাগছে।আমি বেসামাল হয়ে যাচ্ছি। তোমার এই লুকে।””
কথাটা শুনে লিয়ার অস্বস্তি হতে থাকে।লিয়া লজ্জা পেয়ে দৃষ্টি নিচু করে নেয়।জারা ক্যাচক্যাচ করে একের পর এক ছবি তুলেই যাচ্ছে।
জান্নাত বেগম একটা বক্স জারিফের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলেন,,”আমার তরফ থেকে এটা আমার নাত জামাইয়ের জন্য।”
জারিফ মিষ্টি হেসে ধন্যবাদ দেয়। আর দোয়া চায়।এক্সপেনসিভ রোনাল্ডের রিচওয়াচ গিফট করেন জান্নাত বেগম।আরো কিছু সময় থেকে জাহানারা বেগম লিয়াকে ভেতরে যেতে বলতেই লিয়া উঠে চলে যায় রুমে।
আইনাল হোসেন এনামুল খাঁন কে উদ্দেশ্য করে বলেন,,”বেয়াই খুব দ্রুতই মেয়েটাকে আমার বাড়িতে নিতে চাচ্ছি। আপনার মতামত কি?”
এনামুল খাঁন হাসি মুখে বলেন,,”নিশ্চয়।তাহলে সামনের মাসের প্রথম সপ্তাহের শুক্রবারেই শুভ কাজ টা সাড়তে পারি।”
আইনাল হোসেনও সহমত পোষণ করেন।রাতে ডিনার করে তারপর যাওয়া এর আগে নয়।কথাটা এনামুল খাঁন বেশ জোর করেই বলেছেন। এনামুল খাঁন আর আইনাল হোসেন এশার আজান দেওয়ার সাথে সাথেই মসজিদে নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে বাইরে গিয়েছেন। জাহানারা বেগম, লিয়ার, আম্মু, চাচীমা গল্প করছেন।জারা লিয়ার সাথে বসে লিয়ার রুমে গল্প করছে। ফোনে হটস আ্যপে ভিডিওকলে জেরিনের সাথে লিয়ার আলাপ করিয়ে দিয়েছে জারা। হঠাৎ লিয়ার মোবাইলে আলো জ্বলে উঠে।লিয়া ফোনটা ওপেন করে দেখে,,
আ’ম ওয়েটিং ইন দ্যা রুফ, প্লিজ ইউ কাম ফাস্ট।
মেসেজ টা দেখে লিয়ার কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পড়ে। লিয়া ভাবে,জারা কে কি বলে রেখে যাই।আবার ওদিকে জনাব তো ওয়েট করছে।লিয়ার ভাবনার মাঝেই জারা ফোন নিয়ে কিছু একটা করতে থাকে।এইটা দেখে লিয়া বলে,,”জারা তুমি থাকো।আমি একটু আসছি কেমন।একা একা বোর হবে না তো।”
জারা হাসি মুখে বলে,,”ঠিক আছে ভাবিপু।আর আমি তো আমার ফ্রেন্ডের সাথে চ্যাট করছি। বিরক্ত হওয়ার চান্স নেই।তুমি টেনশন নিও না।”
লিয়া মিষ্টি হেসে বলে,,”থেংকিউ।”
লিয়া চুলগুলো হাত খোঁপা করে নেয়।কাঠের কাঠি দিয়ে চুলগুলো আটকিয়ে নেয়।লিয়া ভাবে দাদিমনি আছে।খোলা চুলে এই রাতে বাইরে যেতে দেখলে লঙ্কা কাণ্ড করে ফেলবে।আর এখন ছাদে যেতে দেখলে দাদিমনি হাজার টা প্রশ্ন করে বসবে।লিয়া একপা দু পা করে বাসার মেইন ডোর পেরিয়ে বুক ভরে শ্বাস নেয়।দাদিমনি হয়তো রুমে নামাজ পড়ছেন। আম্মু,চাচিমা, আন্টি গেস্ট রুমে আছেন।ভাগ্যিস কেউ দেখেনি।এসব ভাবতে ভাবতেই লিয়া শাড়ির কুচি একহাতে ধরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।
চাঁদহীন আকাশ। তবে মিটিমিটি তাঁরার মেলা বসেছে আকাশের বুকে।ছাদের রেলিং ঘেঁষে দুইহাত বুকে গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে জারিফ। লিয়া ছাদে গিয়ে জারিফের পাশে দাঁড়ায়। গোল্ডেন কালারের পাঞ্জাবি সুঠাম দেহে দারুন মানিয়েছে। পাঞ্জাবির হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা।জারিফ পলকহীন দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে লিয়ার দিকে।আশে পাশের বাসা থেকে হালকা আলোয় সবকিছু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।জারিফ সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুইহাতে লিয়ার কোমড় জড়িয়ে ধরে।তারপর এক হাত দিয়ে লিয়া চুলের কাঠি টা খুলে দেয়।লিয়া ইশারায় বোঝায়,,চুলগুলো খোলার কি দরকার ছিলো।
জারিফ লিয়াকে নিজের দিকে এনে বলে,,”খোলা চুলে তোমাকে বেশি সুন্দর লাগে।আর তোমার চুল থেকে আসা ঘ্রাণ আমার খুব ভালো লাগে।তোমার চুলের ঘ্রাণ আমার কাছে খুশবুর মতো।”
কিছুক্ষণ থেমে জারিফ শীতল কন্ঠে বলতে থাকে,,”এই প্রথম তোমাকে শাড়িতে দেখলাম।বিয়ের আগে শাড়ি পড়া মোটেও তোমার উচিত হয়নি।তোমাকে এই লুকে দেখে আমার মাথায় শুধু উল্টাপাল্টা চিন্তা আসছে।”
লিয়া কোমল গলায় বলে,,”সেইসব চিন্তা ভাবনা কে দূরে সরিয়ে রাখুন ।আপাতত আর কয়েকদিন। তারপর তো সারাজীবনের জন্য আমাকে পাচ্ছেনই।”
“সেই কয়েকদিন ই তো আর কাটতে চাচ্ছে না।শাড়িতে তোমাকে একটু বেশিই হট লাগছে।”
লিয়া চোখ রাঙিয়ে মৃদু রা’গ দেখিয়ে বলে,,”এসব কি ভাষা ইউজ করছেন আপনি।দিনদিন আপনি কিন্তু স্লেইমলেস হয়ে যাচ্ছেন।আর এসব ওয়ার্ড আপনি আমার উপর এপ্লাই করছেন।”
জারিফ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,,”তো তোমাকে ছাড়া আর অন্য কাকে বলবো।পাড়া প্রতিবেশী, বন্ধু,কলিগ ওনাদের বউদের বলবো নাকি অন্য মেয়েদের বলবো।অন্যদেরকে বলার মতো ইন্টারেস্টড আমার নেই।আর বললে তারা আমাকে গনপিটুনি দিবে। একদম ডিটারজেন্ট ছাড়াই ধুয়ে দেবে।”
লিয়া মুচকে হেসে বলে,,”তাও ভালো ফ্রিতে পরিষ্কার তো হতে পারবেন।”
[চলবে…ইন শা আল্লাহ]
(জারিফের সাথে এনগেজমেন্ট না হয়ে অভ্রর সাথে হলে,লিয়া হিরের আংটি পেতো 😐সাথে নামীদামী গাড়ি ফ্রি 🥱 বিয়ের দাওয়াত থাকলো সবাইকে।)