#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-১৩
★হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে নূর। এখনো জ্ঞান ফেরেনি। পাশেই টুলের ওপর বসে আছে আদিত্য।দুই হাতের কনুই বেডের ওপর ঠেকিয়ে, হাতের আঙুলগুলো মাথার দুইপাশে চুলের মধ্যে ঢুকিয়ে চুল টেনে ধরে মাথা নিচু করে বসে আছে।টেনশনে মাথাটা ফেটে যাচ্ছে ওর। নিজের ওপরে চরম রাগ লাগছে। নূরের জীবনে কিছু একটা সমস্যা আছে। সেটা ও বুঝতে পারলেও, এখনো পর্যন্ত সে বিষয় কিছু জানতে পারছে না। এটা ভেবেই ওর রাগ লাগছে। নূরের শরীরে যে মাঝে মধ্যেই আঘাতের চিহ্ন দেখা যায় সেটাও ওর নজর এরাই নি। নূরকে কিছু জিজ্ঞেস করলে,কখনোই ঠিকমতো বলে না।আদিত্য বুঝে গেছে নূর কখনোই নিজে থেকে কিছু বলবে না।যে করেই হোক ওকে সবকিছু জানতেই হবে। এতোদিন চুপ করে থাকলেও আর না।বিশেষ করে আজকের এই ঘটনার পরেতো কিছুতেই না।আদিত্য জেনেই ছাড়বে যে করেই হোক। কিছুক্ষণ আগের কথা মনে করছে আদিত্য। তখন যদি ও না থাকতো তাহলে নাজানি কি হয়ে যেতো।
কিছুক্ষণ আগে,,,,,,
নূর যখন অজ্ঞান হয়ে আদিত্যের গায়ে ঢলে পড়ে। আদিত্য প্রচন্ড ভয়ে পেয়ে যায়। বুকের ভেতর অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়ে যায়। আদিত্য নূরের মুখটা দুইহাতে ধরে সামনে এনে দেখে নূর অজ্ঞান হয়ে গেছে।আদিত্য নূরের গালে হাত দিয়ে বুঝতে পারে ওর শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। নূরের এমন অবস্থা দেখে আদিত্যের মস্তিষ্ক যেন কাজ করা বন্ধ দেয়। ও কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না। গলা শুকিয়ে আসছে। হাত পা কেমন কাপছে।
আদিত্য আলতো করে নূরের গালে চাপড় দিয়ে উত্তেজিত হয়ে বললো।
….নূর এই নূর কি হয়েছে তোমার? কথা বলছো না কেন? চোখ খোল প্লিজ। চোখ খুলছো না কেন?কি হয়েছে তোমার?
আদিত্য আর বসে না থেকে নূরকে কোলে তুলে নিল।নূরকে কোলে নিয়েই দৌড় দিল আদিত্য।
আবির আর তাসির আদিত্যকে এভাবে নূরকে কোলে নিয়ে আসতে দেখে দুজনেই অবাক হলো।
আদিত্য ওদের কাছে এসে উত্তেজিত হয়ে আবিরকে বললো।
…আবির গাড়ি বের কর। ফাস্ট।
তাসির চিন্তিত স্বরে বললো।
…..কি হয়েছে? আর নূর এভাবে বেহুশ হয়ে আছে কেন?
এতোকিছু বলার টাইম নেই।ওকে আগে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিতে হবে।তারপর আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…কিরে তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা তাড়াতাড়ি গাড়ি বের কর।
আবির বললো।
…ওকে ওকে রিলাক্স ভাই। আমি এখনি গাড়ি বের করছি।তুমি নূরকে নিয়ে আসো।
আবির দৌড়ে যেয়ে গাড়ি বের করলো।আদিত্য নূরকে কোলে নিয়েই গাড়ির কাছে গেল।
ভার্সিটির সবাই অবাক হয়ে হা করে আদিত্যর দিকে তাকিয়ে আছে। দা গ্রেট “সাদমান শাহরিয়ার আদিত্য” কিনা একটা মেয়েকে এভাবে কোলে নিয়ে যাচ্ছে। এটা যেন কারো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
আদিত্য নূরকে কোলে নিয়েই গাড়ির পেছনের সিটে বসলো। আবির ড্রাইভ করছে, আর তাসির ওর পাশের সিটে বসেছে।
আদিত্য এখনো নূরের গালে হাত দিয়ে বার বার ওকে ডেকে যাচ্ছে। তাসির পিছনে তাকিয়ে আদিত্যকে দেখছে। এর আগে কখনো ওকে এতো টেনশনে দেখেনি। কেমন পাগলের মতো হয়ে গেছে।
ওরা হসপিটালে এসে তাড়াতাড়ি নূরকে একটা কেবিনে নিয়ে যায়। তারপর ডাক্তার এসে নূরকে দেখে বলে।
…অতিরিক্ত জ্বরের কারণে বেহুশ হয়ে গেছে। আর ওনার শরীরটাও খুব দূর্বল। হয়তো খাওয়া দাওয়া ঠিকমতো করেনি। আমি একটা ইনজেকশন দিয়ে দিচ্ছি। একটু পরেই ওনার জ্ঞান ফিরে আসবে। তারপর ডক্টর ইনজেকশন দিয়ে চলে গেল।
বর্তমান ,,,,,,
নূর পিটপিট করে চোখ খুলে তাকলো।মাথাটা প্রচুর ভারি ভারি লাগছে। নূর মাথাটা একটু এদিক ওদিক ঘুরিয়ে দেখার চেষ্টা করলো ও কোথায় আছে। এটাতো হসপিটাল মনে হচ্ছে। আমি এখানে কি করে এলাম? নূর সামনে তাকিয়ে দেখে আদিত্য হাতের ভেতর মাথা গুজে বসে আছে। নূর আস্তে করে বললো।
….শুনছেন??
নূরের ডাকে আদিত্য চমকে তাকালো নূরের দিকে।আদিত্যকে দেখে নূর একটু অবাক হলো। ওনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? চুলগুলো এলোমেলো,শার্টটাও কুচিমুচি হয়ে আছে। চোখ দুটো কেমন লাল হয়ে গেছে।
নূরের জ্ঞান ফেরা দেখে আদিত্য একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর নূরের মুখের দিকে হালকা ঝুকে উত্তেজিত হয়ে বললো।
…এখন কেমন লাগছে তোমার? ঠিক আছো তুমি? তখন কি হয়ে গিয়েছিল? আর এতো জ্বর কিভাবে বাধালে? এতো জ্বর নিয়ে ক্যাম্পাসে আসার কি দরকার ছিল? বাসায় রেষ্ট করতে পারোনি?
নূর একটা জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
….আরে আরে থামুন।একসাথে এতো প্রশ্নের উত্তর কিভাবে দিব?আমি এখন ঠিক আছি।হঠাৎ জ্বরটা এতো বেড়ে যাবে বুঝতে পারি নি সরি।
নূরের কথার ভেতরেই তাসির আর আবির কেবিনে ঢুকলো। তাসির মুচকি হেসে নূরকে বললো।
….এখন কেমন লাগছে? ঠিক আছো তুমি?
নূরও মুচকি হেসে বললো।
….জ্বি ভাইয়া এখন ঠিক আছি।সরি, আমার জন্য আপনাদের এতো কষ্ট করতে হলো।
আবির কেবলা হাসি দিয়ে বললো।
….আরে সরি কেন বলছো নূর? আমারতো উল্টো তোমাকে থ্যাংক্স দিতে ইচ্ছে করছে। তোমার জন্য আজ এতো সুন্দর সুন্দর নার্সদের দর্শন হলো। বাহ্ এক একটা যেন কোন বলিউডের নায়িকা। আমারতো এখন রোগী হয়ে এখানে ভর্তি হতে ইচ্ছে করছে। এতো সুন্দর সুন্দর নার্সদের সেবা পেলে আর কি লাগে।
তাসির দুষ্টু হেসে বললো।
…হ্যা ঠিকই বলেছিস।এক কাজ করি। তানিকে ফোন করে এখানে ডেকে আনি।তারপর ও সুন্দর করে তোর হাত পা গুলো ভেঙে দিয়ে যাবে।তারপর তুই বসে বসে সেবা নিস, তোর সুন্দর সুন্দর নার্সদের দিয়ে কেমন?
আবির মেকি হাসি দিয়ে বললো।
…না না ভাই তার কোন দরকার নেই। আমিতো শুধু মজা করছিলাম। তুই তো সিরিয়াসলি নিয়ে নিছিস।টেক ইট চিল পিল ইয়ার।হে হে
তাসির বাঁকা হেসে বললো।
…আব আয়া না উট পাহাড় কে নিচে।
এদের কান্ড দেখে নূর হালকা হেসে দিলো। আদিত্যের মনের ভেতরও একটু ভালো লাগলো নূরের হাসি দেখে।
তাসির আদিত্যকে একটা বক্স দিয়ে বললো।
…এইযে তোর চিকেন সুপ।
আদিত্য মাথা নাড়িয়ে বক্সটা হাতে নিল।তারপর আবির আর তাসির বাইরে চলে গেলো।
আদিত্য বক্সটা পাশের ছোট টেবিলে রেখে নূরের দুই বাহু ধরে উঠে বসাতে সাহায্য করছে।নূরকে হালকা উঠিয়ে পিঠের সাথে একটা বালিশ দিয়ে বেডের মাথার সাথে হেলান দিয়ে বসালো। আদিত্যের এতো কাছে আসায় নূরের বুকের ভেতর ধুকপুক শুরু করে দেয়। লজ্জাও লাগছে কেমন।
নূরকে বসিয়ে দিয়ে আদিত্য টেবিল থেকে বক্সটা নিয়ে বক্সের ঢাকনা খুলে চিকেন সুপটা নূরের সামনে ধরে বলে।
….নেও সুপটা শেষ করো।
নূর অসহায় মুখ করে বলে।
…আমার ক্ষিধে নেই। এখন খেতে ইচ্ছে করছে না।
আদিত্য রাগী কন্ঠে বললো।
….আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি। খেতে বলেছি খাবে। এমনিতেই আমার মেজাজ খারাপ হয়ে আছে। আমাকে আর রাগিওনা। তাহলে কিন্তু তোমার জন্য ভালো হবে না।
আদিত্যের রাগের সামনে নূর আর কিছু বলার সাহস পায়না। হাত বাড়িয়ে বক্সটা নিতে গেলে হাতে ব্যাথা পায় নূর।
আদিত্য বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি করে বললো।
….দাঁড়াও তোমাকে নিতে হবে না।
আদিত্য নিজেই বক্সটা হাতে নিল।তারপর এক চামচ সুপ নিয়ে নূরের মুখের সামনে ধরে বললো।
….নেও এখন খাও।
নূর অবাক হয়ে একবার সুপের দিকে আর একবার আদিত্যের দিকে তাকিয়ে ভাবছে।উনি কি আমাকে খাইয়ে দিতে চাচ্ছে?
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…খাওয়া বাদ দিয়ে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? মুখে নেও ফাস্ট।
নূর ভালো মেয়ের মতো সুপটা খেয়ে নিল।
খাওয়ানো শেষে আদিত্য বক্সটা রেখে নূরের দিকে চেয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….এবার বলো,এসব কি করে হলো?
নূর থতমত খেয়ে গেল। আদিত্যকে এখন কি বলবে?নিজের জীবনের জঘন্য সত্যিটা কাওকে জানাতে চায়না নূর। নূর আমতা আমতা করে বললো।
…তে তেতেমন কিছুই না। আসলে কাল একটু বেশিক্ষণ শাওয়ার নিয়েছিলাম তো।তাই হয়তো একটু জ্বর এসেছে।
আদিত্য আবার বললো।
…আচ্ছা? তো হাতের এই অবস্থা কিভাবে হয়েছে?
নূরের হাতের কথা শুনে কালকের ওই ঘটনার কথা মনে পরে গেলো। মনের ভেতর খুব কষ্ট হচ্ছে নূরের। তবুও মুখে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
….এটা? এটাতো কাল বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলাম। তাই এমন হয়েছে।
আদিত্যের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। নূর যে ওকে মিথ্যা বলছে তা ও ভালোই বুঝতে পারছে। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে ঠাটিয়ে একটা চড় মারতে। সত্যিটা কেন বলছে না?
আদিত্য চোখ বন্ধ করে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে। এভাবে রেগে কাজ হবে না। কোনো না কোনো উপায়ে ওকে জানতেই হবে সবকিছু। হঠাৎ নূরের কথায় আদিত্যর ভাবনায় ছেদ পরে।
….কয়টা বাজে এখন?
আদিত্য ঘড়ি দেখে বললো।
….৩ টা বাজে।
নূর আৎকে উঠে বললো।
….কিহ্হ? এতো দেড়ি হয়ে গেছে? আমাকে এখুনি বাসায় যেতে হবে। কথাটা বলেই তাড়াহুড়ো করে নামতে নেই নূর।
বেডের নিচে পা রাখতেই মাথাটা কেমন ঘুরে উঠলো নূরের। মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো নূর।
আদিত্য একটা ধমক দিয়ে বললো।
….কি করছো? পাগল হয়ে গেছো? এমন দূর্বল শরীর নিয়ে কেউ এভাবে ওঠে?ইডিয়ট। এখনি তো পরে যেতে। বাসায় কি একটু পরে যাওয়া যাবেনা? কি এমন রাজ্য কাজ ফেলে এসেছো,যে এখুনি যেতে হবে?
নূর কি বলবে আদিত্যকে? তাকে তো আর বলা যাচ্ছে না যে, বাসায় যেতে দেরি হলে ওর সৎ মা ওকে আর বাসায় তুলবে না।বরং এটা নিয়ে আরো তুলকালাম বাধিয়ে দিবে। নূর অসহায় ভাবে বললো।
…আসলে বাসায় যেতে দেরি হলে সমস্যা হবে। আমাকে এখুনি যেতে হবে প্লিজ।
আদিত্য একটু নরম হয়ে বললো।
….ঠিক আছে চল।আমি দিয়ে আসছি তোমায়।
…না না তার কোনো দরকার নেই। আমি একাই যেতে পারবো।
…হ্যা কতো যেতে পারবে তাতো দেখতেই পাচ্ছি। আমি যখন বলেছি তখন আমিই দিয়ে আসবো। দ্যাটস ফাইনাল।
নূর আর কিছু বলে না। আস্তে আস্তে আবার উঠে দাঁড়ায় নূর। এক পা সামনে বাড়াতেই হুট করে আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিল।
আচমকা এমন হওয়ায় নূর হতভম্ব হয়ে গেলো। চোখ বড়বড় করে তাকালো আদিত্যর দিকে।সারা শরীর কেঁপে উঠল। তারপর
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
…ক ককি করছেন আ আআপনি। নামান আমাকে প্লিজ। আমি হেটেই যেতে পারবো।
নামার জন্য মোচড়ামুচড়ি করতে লাগলো নূর।
আদিত্য আবারও চোখ গরম করে বললো।
…আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করেছি? কি পারবে কি পারবেনা?বেশি কথা না বলে চুপচাপ থাকো। নাহলে কিন্তু এখুনি ফেলে দিব।
নূর করুন স্বরে বললো।
….দেখুন সবাই দেখলে খারাপ ভাববে। হাসাহাসি করবে। প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন।
আদিত্য রাগ দেখিয়ে বললো।
…টু হেল উইথ দেম।আই ডোন্ট কেয়ার এবাউট এভরিওয়ান।তুমি যদি এখুনি নড়াচড়া বন্ধ না কর, তাহলে কিন্তু সত্যিই ফেলে দিব।কথাটা বলেই আদিত্য নিজের হাত দুটো ঠিলা করে নূরকে ফেলে দিতে নেয়। পরে যাওয়ার ভয়ে নূর তাড়াতাড়ি করে নিজের হাত দিয়ে আদিত্যর গলা জড়িয়ে ধরে। তারপর করুন সুরে বলে।
….না না প্লিজ ফেলবেননা আমাকে।আমি চুপ করে থাকবো সত্যি বলছি।
আদিত্য বাকা হেসে বললো।
…হুম। গুড গার্ল। এখন চুপচাপ থাকবে। একটা কথাও বলবে না।
তারপর আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে বাইরে বের হলো।
আদিত্যকে দেখে আবির আর তাসির দুজনই মুখ টিপে হাসছে। হাসপাতালের সবাই হা করে তাকিয়ে আছে আদিত্যের দিকে। নূর লজ্জায় মনে হচ্ছে এখুনি মাটির ভেতর ঢুকে যাবে।
আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে গাড়ির কাছে এসে দাড়ালো। আবির আর তাসিরও চলে এসেছে।
আবির ওদেরকে একা ছাড়ার জন্য, তাসিরকে চোখ টিপ দিয়ে ইচ্ছাকৃত ভাবে বললো।
…ভাই আমাদের একটু কাজ আছে আমরা যাচ্ছি। তুই বরং নূরকে নামিয়ে দিয়ে আয়।
তাসিরও মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….হ্যা হ্যা ঠিকই বলেছে ও।আমাদের কাজ আছে। আমরা যাচ্ছি।
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…তোদের আবার হঠাৎ কি কাজ পড়লো?
আবির বললো।
…আরে আছে ভাই। তোমাকে পড়ে বলবো।
…আচ্ছা ঠিক আছে। এখন গাড়ির দরজাটা খোল।
আবির গাড়ির সামনের দরজাটা খুলে দিল।আদিত্য নূরকে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটে বসিয়ে দিল।তারপর নিজে যেয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো।
আবির আর তাসির ওদের বাই বলে চলে গেল।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
… সিট বেল্ট বাঁধো।
নূর দ্বিধায় পরে গেলো। ও তো জানেই না কিভাবে সিটবেল্ট বাধতে হয়।
আদিত্য ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজেই সিটবেল্ট বাঁধার জন্য নূরের দিকে এগিয়ে গেল। আদিত্যকে এভাবে এগিয়ে আসতে দেখে নূর হকচকিয়ে গেল। নিজের হাত দুটো উপরে তুলে, মাথাটা পেছন দিকে সিটের সাথে সেঁটে বসলো। আদিত্য সিটবেল্ট বাধার সময় ওর মাথাটা নূরের মুখের সামনে ঝুকে গেল।
আদিত্য এতো কাছে আসায় নূরের দম যেন বন্ধ হয়ে এলো।বুকের ভেতর ঢিপঢিপ করতে শুরু করলো। নূর চোখ বন্ধ করে ফ্রিজড হয়ে বসে রইলো।
আদিত্য সিটবেল্ট বেধে মাথাটা উপরে তুলতেই ওর চোখ আটকে গেল নূরের মায়াবী চেহারায়। আদিত্যর নাক প্রায় নূরের নাক ছুঁইছুঁই। এতো কাছ থেকে নূরকে দেখে। আদিত্যের যেন নেশা ধরে যাচ্ছে। কেমন ঘোর লেগে আসছে।নূরের শরীরের সেই মিষ্টি ঘ্রাণটা আদিত্যকে আরো বিমোহিত করছে। আদিত্যর নজর যায় নূরের মোহনীয় রসালো ঠোঁটের দিকে। আদিত্য একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওই গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁটের দিকে।গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আদিত্যের। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। বারবার শুকনো ঢোক গিলছে। আদিত্যের ইচ্ছে করছে এখুনি এই মধুর স্বাদ নিতে।
হঠাৎ পেছন থেকে আসা গাড়ির হর্ণের আওয়াজে আদিত্যর হুশ আসে। ও এক ঝটকায় সরে এসে নিজের সিটে বসে। মাথাটা একটু ঝাকিয়ে নিজেকে ঠিক করে। তারপর গাড়ি স্টার্ট দেয়।
নূর এতক্ষণ চোখ বন্ধ করেই বসে ছিল। গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার শব্দে চোখ খুলে তাকায়। পাশে তাকিয়ে দেখে আদিত্য সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে। নূর একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিয়ে ঠিক করে বসে।গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে নূর। এখন ওর একটু ভালো লাগছে।রাস্তায় ওদের ভিতরে আর তেমন কোনো কথা হয় না।
বাসার কাছাকাছি আসতেই নূর আদিত্যকে বললো।
…বাচ বাচ এখানেই থামান।আমি এখানেই নেমে যাবো।
আদিত্য বললো।
…এখানে তোমার বাসা?
…এখান থেকে আর একটু ভেতরে।ওই গলিতে আপনার গাড়ি যাবে না। তাই এখানেই নামতে হবে।
আদিত্যের মনে হচ্ছে রাস্তাটা এতো তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেলো কেন?
নূর বললো।
…তাহলে আমি এখন আসি।আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। বলেই গাড়ির দরজার খুলতে নেয় নূর।
আদিত্য নূরের হাত ধরে বলে উঠলো।
…এক মিনিট। তারপর পেছনের সিট থেকে একটা ওষুধের প্যাকেট বের করে নূরের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো।
…এখানে তোমার ওষুধ আছে। এগুলো নিয়মিত নিবে।আর অয়েন্টমেন্টা হাতে নিয়মিত লাগবে। আর হ্যা সময়মতো খাবার খাবে। বুঝতে পেরেছ?
নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে। এখন আমি আসি।
…হুম ওকে যাও।নিজের খেয়াল রেখ।
নূর মাথা ঝাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সামনে এগুলো বাসার উদ্দেশ্যে।
আদিত্য নূরের যাওয়ার পানে চেয়ে রইল। হঠাৎ কিছু একটা মনে পরতেই আদিত্য তড়িৎ গতিতে গাড়ি থেকে নেমে নূরের দিকে দৌড়ালো।
নূরের সামনে এসে ঝট করে বললো।
….তোমার নাম্বারটা দেও।
হঠাৎ এমন হওয়ায় নূর একটু থতমত খেয়ে যায়। তারপর নিজেকে সামলে বলে।
…না নানাম্বার??আমার?
আদিত্য বললো।
..হ্যা তোমার ছাড়া আর কার? নাম্বারটা দেও।
নূর আমতা আমতা করে নাম্বার দিয়ে দিল।
আদিত্য নাম্বার নিয়ে বললো।
…ওকে বাই।
তারপর নূর চলে গেল। আদিত্য আবার গাড়িতে যেয়ে বসলো। গাড়ি স্টার্ট দিতে যাবে। এমন সময় ওর নজর গেল নূর যেখানে বসেছিল সেই ছিটের নিচে। দেখলো বইয়ের মতো কিছু একটা পড়ে আছে। আদিত্য হাত বাড়িয়ে জিনিসটা উঠিয়ে দেখলো একটা ডাইরি। একটা পার্সোনাল ডাইরি। আদিত্য ভাবলো এটা নিশ্চয় নূরের। হয়তো ওর ব্যাগ থেকে পড়ে গেছে। আদিত্য নূরকে ডাইরিটা ফেরত দেওয়ার জন্য, গাড়ি থেকে বের হতে নিতেই আবার কি জেনো মনে করে থেমে গেল। আদিত্য ভাবছে নূর নিজে থেকেতো কখনো কিছু বলবে না। হয়তো এই ডাইরি থেকেই কিছু জানা যেতে পারে। কথাটা ভেবেই আদিত্য আর যায়না নূরের কাছে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়।
চলবে……
(তাড়াহুড়ো করে কি লিখেছি জানিনা।ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।
আর সামনের পর্বেই আদিত্য নূরের ব্যাপারে সব জানতে পারবে)