#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৪০
______________
” একা একা হাসছো যে! হঠাৎ কিছু মনে হলো নাকি? ”
আরুহী দৃষ্টি বাইরে থেকে সরিয়ে লুকিং মিরর দিয়ে সুলতানের দিকে তাকালো। তার মুখে তো মাস্ক লাগানো তবে সুলতান বুঝলো কি করে সে হাসছে!
” কি ভাবছো? আমি বুঝলাম কি করে তুমি হাসছো? এটাই ভাবছো তো? আমি তোমার ভাই হই আরুহী, তুমি হাসলে যে চোখ দুটো ছোট ছোট হয়ে যায় সেটা মে বি তুমিও খেয়াল করো নি! ”
আরুহী মুচকি হেসে মাস্ক টা ঠিক ঠাক করে সাইড মিরর দিয়ে পিছনে তাকালো, বাইক গুলো এখনো পিছু পিছু আসছে তবে আজব হলেও তারা আক্রমন করছে না। তবে যেকোন সময় যেকোন এঙ্গেল থেকে আক্রমন করতে পারে।
” পিছনে কিছু বাইক আমাদের গাড়ি টা ফলো করছে সুলতান ভাই, তুমি কিন্তু আমি না বলা পর্যন্ত গাড়ি থামাবে না, আর ফাস্ট ও করবে না তাহলে ওরা বুঝে যাবে ”
সুলতান চকিত নজরে সাইড মিররে তাকালো, পুনরায় ড্রাইভে মন দিলো। আসলেই পিছনে থেকে কিছু বাইক ফলো করছে, সুলতান হাসলো, আরুহী আসলেই সব কিছু তে এডভান্স, ড্রাইভ তো ও করছে তাহলে এসব খবর তো তার কাছেই থাকার কথা ছিলো কিন্তু সুলতান তো এটা খেয়াল করে নি। সুলতান খেয়াল না করলেও আরুহী ঠিক ই দেখতে পেয়েছে।
সুলতান সেদিকে ধ্যান না দিয়ে এক মনে ড্রাইভ করতে লাগলো যেন কিছু হয় ই নি। আরুহী কোমড় থেকে গোল্ডেন রঙের রিভলবার টা বের করে বুলেট চেক করে রিভলবার টা স্টার্ট করলো।
হঠাৎ পিছনে থেকে কাচ ভাঙার শব্দে আরুহী চেচিয়ে উঠে বলল,
” হেড ডাউন সুলতান ভাই ওরা আক্রমণ শুরু করেছে এন্ড রাইড ফাস্ট ”
সুলতান আরুহীর কথা মতো মাথা নুইয়ে স্পিড টা বাড়িয়ে দিলো।
আরুহী গাড়ির ভেতরের লাইট অফ করে পিছনে ঘুরলো। মাইক্রোর পিছনের কাচে বেশ অনেক গুলো ছোট ছোট ফুটো হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। আরুহীর গাড়ি স্পিড বাড়াতে ই পিছনে বাইকগুলো ও স্পিড বাড়ালো, হঠাৎ ই আরুহী খেয়াল করলো বাইক গুলোর ঠিক পিছনে তিনটা গাড়ি একই গতিতে এদিকে ই আসছে।
আরুহী র আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এরা তাকে মারার ফুল প্ল্যান করে ই এসেছে। আরুহী মুচকি হাসলো।
রিভলবার টা ডান হাতে পয়েন্ট করে বাম হাত এর তালুর উপরে রাখলো, ট্রিগাল চাপতেই পিছনে থেকে বিকট শব্দে কেঁপে উঠলো সুলতান, এটা রিভলবার এর শব্দ না এটা কোন কিছু ব্লাস্ট হবার শব্দ। সুলতান গাড়ির গতি কমালো। ধীরে ধীরে থেমে গেলো গাড়ি টা। পিছনে ঘুরে তাকালো সে, আরুহী ঠিক আগের মতো ই পায়ের উপর পা তুলে আরামছে মোবাইল ঘাটছে যেন কিছু ই হয় নি।
সুলতান ঘাড় বাঁকিয়ে পিছনে নজর দিলো, সবকটা গাড়ি রাস্তায় উল্টে পড়ে আছে তিনটে মাইক্রো থেকে একটা খুব বাজে রকম ভাবে ছিটকে পড়ায় আগুন ধরে গেছে, বাকি গুলোর অবস্থা ও শোচনীয়।
সুলতান চোখ বড়ো বড়ো করে আরুহীর দিকে তাকালো,
” বুলেট ছুড়েছো?”
আরুহী মোবাইলে দৃষ্টি রেখেই ছোট করে উত্তর দিলো,
” হুম ”
” আওয়াজ শুনলাম না যে! ”
” সাইলেন্সার লাগানো ”
সুলতান কথা বাড়ালো না, লুকিং মিররে এক পলক আরুহীর দিকে তাকিয়ে পুনরায় ড্রাইভে মন দিলো।
রাত তখন প্রায় বারোটার কাছাকাছি। সুলতান প্রায় মিনিট বিশেক আগে ই জঙ্গলের রাস্তা ছেড়ে মেইন সড়কে উঠেছে।
গাড়ি প্রথমে থামলো হসপিটালের সামনে। আরুহী গাড়ির কাঁচ নামিয়ে বাইরে দৃষ্টি পাত করতেই হসপিটালের নামটা নজর কাড়লো প্রথমেই।
পকেটে মোবাইল টা বায়োব্রেট মুডে বেজে উঠল তখনই। আরুহী এক পলক বাইরে তাকিয়ে পকেটে থেকে ফোন বের করলো।
” হ্যা আরুশ ভাই বলো ”
” জামাই কে ভাই ডাকিস লজ্জা থাকা উচিত তোর! ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকালো,
” এতো রাতে কি এটা বলার জন্য ফোন করেছো? যদি মনে করে থাকো তাহলে আমি রাখছি”
অপর দিকে আরুশ মাত্র ই অপারেশন থিয়েটার থেকে অপারেশন শেষ করে কেবিনে বসলো, রাতের সাড়ে ন’ টার দিকেই হঠাৎ ফোনেই জরুরি তলব করা হ’য়েছে তাকে। একটা বাস এক্সিডেন্টে বেশ অনেক মানুষ ই আহত হয়েছে, মাথায় আঘাত । বুকে ও আঘাত পেয়েছে তুলনামূলক বেশি। তার উপর ইমার্জেন্সি হার্ট অ্যাটাক এর রুগী। হার্ট যেহেতু সেনসিটিভ জিনিস অগত্যা ই তাকে আসতে হলো।
টানা তিন তিনটা অপারেশন সফল ভাবে শেষ করে হাত মুখ ধুয়ে কেবিনে বসেই মাথায় আরুহীর চিন্তা এসে ভর করলো। তাই আর কাল বিলম্ব না করেই ফটাফট ফোন করে বসলো।
” কি হলো কথা বলছো না যে!”
আরুশ জানালার পর্দা খুলে থাই টা সরিয়ে দিতেই মৃদু ঠান্ডা বাতাস এসে ছুয়ে দিলো তার শরীর।
আরুশ ঠান্ডা গলায় ধীরে ধীরে বলল,
” মিস করছি তোকে”
আরুহী চুপ করে গেলো, বেশ কিছু ক্ষন নিরবতা পালন করার পর আরুহী বলল,
” তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছে তিন ঘন্টা ও হয় নি আরুশ ভাই। ”
” ভালোবাসার মানুষ কে অনুভব করার জন্য যুগ যুগ সময় দরকার হয় না, এক সেকেন্ডের দুরত্বই অনেক কিছু, সে অনুযায়ী তোকে আমি লাস্ট তিন ঘন্টা আগে দেখেছি ”
আরুহী মুচকি হাসলো,
” জীবনে কোন যুক্তি দিয়ে আমি তোমার সাথে পেরে উঠেছি নাকি! এখন বলো কি করতে পারি তোমার জন্য? ”
” তোকে দেখবো, তোকে একটু খানি ছুঁয়ে দিবো এই ব্যাস”
কি নিঃসংকোচ আবদার! আরুহী ঠোঁট এলিয়ে হাসলো। কে বলবে আরুহীর অপর পাশে বাচ্চা বাচ্চা কথা গুলো বলা, বাচ্চা বাচ্চা আবদার করা মানুষ টা ঢাকার একজন নামী দামি কার্ডিওলজিস্ট।
” তা আমি যদি এখন সামনে থাকতাম কি করতে শুনি! ”
” যেটা সম্ভব না সেটা বলিস না তো আরু। তুই তোর কাজ নিয়েই থাক! ”
আরুহী ঠোঁট কামড়ে বলল,
” আহা বলো তো শুনি ”
” কি করতাম! তোকে সামনে বসিয়ে রেখে চোখের তৃষ্ণা মেটাতাম আর টুকুস করে চুমু দিয়ে শুকনো ঠোঁট টা ভেঁজাতাম ”
আরুহী হাটতে হাটতে ঠোঁট কামড়ে হাসলো,
” দিনে দিনে তুমি বড্ড পাজি হয়ে যাচ্ছো আরুশ ভাই, নির্লজ্জতার সীমা অতিক্রম করে ফেলছো সেটা কি ঘুনাক্ষরে ও বুঝতে পারছো তুমি? ”
আরুশ নিঃশব্দে হাসলো,
” হ্যা সেই। আমি তো নির্লজ্জ, আল্লাহ তো সব লজ্জা তোরেই দিসে ”
” এবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে, আমি আসলে কিন্তু খবর আছে আরুশ ভাই ”
” করবি টা কি তুই আমার। আর এখন তুই হসপিটালে আসবি! দিবা স্বপ্ন আমি দেখি না ”
” তাই নাকি ডক্টর আরুশ খান! ”
পিছনে থেকে চেনা পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে কান থেকে মোবাইল নামিয়ে পিছনে ঘুরে তাকালো আরুশ। আরুহী পকেটে হাত দিয়ে তার দিকেই ভ্রু বাকিয়ে তাকিয়ে আছে।
আরুহী তর্জনি দিয়ে ভ্রু চুলকাতে চুলকাতে ভেতরে ঢুকলো,
আরুশ অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আরুহীর দিকে।
” তুই এইসময় হসপিটালে? ”
আরুহী মুচকি হেসে এগিয়ে আসলো,
” তুমি না বললা মিস করতে ছিলে! তাই তো চলে এলাম ”
আরুশ ভ্রু কুঁচকে আরুহীর দিকে এগিয়ে গেলো,
” ঘাস কেটে ডাক্তার হই নি বুঝলি! আরুহী চৌধুরী যে বিনা রিজনে কোথাও যায় না সেটা আমি ভালো করে ই জানি, তা ফটাফট বলে ফেল। ”
আরুহী ধীরে ধীরে এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলো আরুশের দিকে।
আরুহীর এগুনো দেখে আরুশ ভ্রু কুচকে পিছাতে লাগলো,
” এই কি সমস্যা তোর! এভাবে এগুচ্ছিস কেন? ”
আরুহী মাস্ক খুলে বাঁকা হাসলো, চোখে মুখে তার দুষ্টু হাসি,
” কেন জামাই! ভয় পাচ্ছো নাকি? বউ আমি তোমার একটু আধটু রোমান্স করা লাগে না! বাসর টাও তো এখনো করা হলো না! ইসস আরুহী ইউ আর সোওও লেট! ”
বলতে বলতেই আরুহী সামনে এগুলো, মনে মনে আরুহীর যেন পেট ফেটে হাসি আসছে।
আরুশ পিছিয়ে জানালার গ্রিলের সাথে সেটে গেলো, আরুহী আরুশের কাঁধের উপর দিয়ে হাত নিয়ে গ্রিলে রাখলো। আরুহী উচ্চতায় প্রায় আরুশের থেকে ইঞ্চি দুয়েক কম। আরুশ বেচারা শক খেয়ে পাথর হয়ে গেছে। কথায় আছে না অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর। আরুশের ও ঠিক একই অবস্থা।
আরুহী আরুশের দাড়ি ভর্তি গালের উপর তর্জনি চালিয়ে কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
” ভয় নেই বাসর এখানে করবো না, বাসায় গিয়ে তারপর, আর এখানে আমি রুগী দেখতে আসছি ডাক্তার না”
আরুহী সরে এসে ভ্রু নাচিয়া আরুশের দিকে তাকালো। আরুশ কেমন যেন অদ্ভুত নজরে তাকিয়ে আছে। আরুহী আর সহ্য করতে পারলো না, হো হো করে শরীর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। হাসি যেন থাকতেই চাইছে না, পেট চেপে হেসেই যাচ্ছে।
আরুশ এক ধ্যানে সেদিকেই তাকিয়ে আছে।
_________________
অন্ধকার চারিপাশে বেরঙা আর রঙচটা চার দেয়ালের জানালা বিহীন ঘর থেকে থেমে থেমে তীব্র গোঙানির আওয়াজ আসছে। মৃত্যুর প্রহর গুনছে কেউ হয়তো….
চলবে..
[ আজকের পর্ব টা কেমন লাগলো জানাবেন কিন্তু! ]