শুধু_তোমাকেই_চাই #শারমিন_হোসেন #পর্ব১৪

0
599

#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব১৪

“ক্যাম্পাসের সবুজ ঘাসের উপর বসে আছে জারিফ আর ওর ফ্রেন্ডরা।আর মাত্র কয়দিন পরেই ওদের ফাইনাল এক্সাম। এক্সাম এর বিষয়েই কথা হচ্ছিলো। স্থির দৃষ্টিতে শান্ত গলায় তাসনিম সবাইকে উদ্দেশ্য করে শুধায়,,
“তোরা সবাই মাস্টার্স করবি কোন বিষয়ে ডিসাইড করেছিস কিছু?”

রুপক গমগমে কন্ঠে বলে উঠে,,”আমি পোল্ট্রি সায়েন্স এ মাস্টার্স করবো ঠিক করেছি।আর আমি যা করবো আমার পিছু পিছু তো জ্বালিয়ে বেড়ানোর জন্য রোজ আছেই।”

রুপকের কথা শুনে রোজ রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ঝাঁঝালো গলায় বলে,,”আমি তোকে কোথায় জ্বালাই শুনি।তুই ই তো আমাকে দিয়ে তোর প্রায় সব এসাইনমেন্ট করিয়ে নিস।”

রোহান গলা ঝেড়ে বলতে থাকে,,”জারিফ চুপ করে আছিস কিছু বলছিস না যে,তুই কিসে মাস্টার্স করবি শুনি?”

জারিফ কিয়ৎক্ষন ভেবে নিয়ে শান্ত গলায় বলে,,”আমি প্যাথোলজিতে।”

রোহান বলে,,”আমিও ভাবছি প্যাথোলজিতে-ই ।তা তাসনিম তুই?”

তাসনিম দৃষ্টি সরু করে মৃদু আওয়াজে বলে,,”আমিও তোদের দুজনের দলে।প্যাথলজি।”

রোজ ছোট ছোট চোখ করে মুখ টানটান করে গমগমে কন্ঠে বলে,,”ওরা তিনজন প্যাথলজিতে।আমরা দুজন আবার পোল্ট্রি সায়েন্স এ করবো কেনো? আমরাও না হয় ওদের সাথেই থাকি।কি বলিস রুপক?”

রুপক গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,,”আমি মাস্টার্স করবো আর কাজি গ্রুপে জব করবো। সেইজন্য পোল্ট্রি সায়েন্স ভালো হবে।আর ভালো স্যালারিও পাওয়া যাবে।আমার গভ: জবে ইন্টারেস্টেড নেই।আবার ফাইনাল এক্সাম এর পরই তো আমাদের বিয়ে।বিয়ে হলে তো তোকে পালতে হবে।হাতির মতো তোকে পালতে টাকা লাগবে না।সরকারি চাকরির মাসিক যা স্যালারি,নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এর যে হারে দাম বেড়েছে তাতে হিমশিম খেয়ে যাবো।তাই আমার ফাস্ট চয়েজ নামকরা প্রাইভেট কোম্পানীতে জব করা আর মোটা অংকের স্যালারি ড্র করা।”

রুপকের কথা শুনে রোজ ক্রুদ্ধ চাহনিতে চেয়ে কঠোরভাবে বলে,,”এই কি ভাষা ইউজ করিস তুই,হ্যা।পালা মানে কি?আর আমি হাতির মতো দেখতে কোন জায়গায়।আমার হাইট অনুযায়ী আমার ওয়েট আরো কম বুঝতে পারলি।ভালো করে দেখেছিস কখনো আমাকে যে আমাকে হাতি বললি, অদ্ভুত।”

রুপক রোজের দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বলে,,”আমার চরিত্র ভালো।তাই এখননি কিছু দেখতে চাচ্ছি না। ওয়েট কর আর দুই মাস পর সব কিছু দেখা যাবে।”

রুপকের কথা শুনে রোজ বিড়বিড় করে বলে,,”অসভ্য একটা।”

তাসনিম ফোন স্ক্রল করতে করতে বলে,,”এতো গ্রুপ থাকতে কাজী গ্রুপ কেনো তোর ফাস্ট চয়েজ হলো রুপক?”

রুপক গলা ঝেড়ে বলতে থাকে,,”কাজী ফার্ম হ্যান্ডসাম স্যালারি দেয়।যা ইউরোপ আমেরিকার মতই। বাস্তবতা মেনে নিয়েই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।সরকারী চাকুরীর অবৈধ্য বিল ভাউচার দিয়ে টাকা চু”রি করে যে লাইফ পাওয়া যায় তা আমার নিজের বিবেকের কাছে খাঁটো মনে হয়,একজন এডুকেটেড ম্যান হিসেবে।জীবনটা তো অনন্ত নয়,একদিন ফুরিয়ে যাবে।মূল জীবন যখন শুরু করলাম,শেষ অব্দি চুরি করা টাকার প্রাধান্য না দেয়াই উচিত।এতে করে জীবনে টাকা হয় বাট আপদ বিপদ মুসিবতে জীবনটা অশান্তিতে ভরা থাকে।সো হালাল উপায়ে হ্যান্ডসাম স্যালারি আমার লক্ষ্য। পরিশ্রম করবো আর সৎ ভাবে মানি আর্ন করবো।”

রুপকের কথা শুনে ওরা সবাই একসাথে বলে উঠল,, দোস্ত তোর চিন্তার কোনো জবাব নেই,লা জবাব।আমরা সবাই তোর সাথে সহমত পোষণ করছি,তবে সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে যেনো এই নীতিতে টিকে থাকার তৌফিক দান করেন।

জারিফ বলে,, দোস্ত তুই আমার মনের কথা বলেছিস।সত্যি ছোট্ট জীবনটাকে সব সময় স্বচ্ছ রাখতে হয়,সব কিছুর মধ্যেই পিওরিটি থাকা দরকার।এতে করে আর কিছু হোক বা না হোক। অন্তরে প্রশান্তি নিয়ে বেঁচে থাকা যায়।”

ওরা বন্ধুরা মিলে বিভিন্ন কথা বলছিলো,জারিফ একটু চুপচাপ ছিলো। আজকাল বডড বেশিই লিয়ার কথা মনে পড়ে।আজ দুই সপ্তাহ হতে চললো লিয়ার সাথে কোনো কথা হয়নি।সেদিনের পর আরো দুই দিন লিয়া ফোন দিয়েছিলো।যদিও পড়া লেখা নিয়েই কথা বলে।আর কেমন আছেন,হাই হ্যালো এই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলো।একমাস হয়েছে লিয়া ক্যাডেটে আছে। এরমধ্যে মোট তিন দিন কথা হয়েছে জারিফের সাথে।গত দুই সপ্তাহ ধরে জারিফ লিয়ার ফোনের অপেক্ষায় থাকে। প্রতিদিন রাত হলেই জারিফ ভাবে আজ হয়তো লিয়ার কল আসবে।হুটহাট করেই লিয়ার কথা মনে পড়ে যায়।জারিফ বেশ দোটানায় আছে,কি করবে বুঝতে পারছে না।মাঝে মাঝেই জারিফ অন্যমনস্ক হয়ে লিয়ার কথা ভাবে।
জারিফ কে অন্যমনস্ক দেখে সেই সময় রোহান বলে,,
“জারিফ তোর কি হয়েছে?তুই কি কিছু নিয়ে টেনস?”

জারিফ আসল কথা এড়িয়ে যায়। হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে,,”না তেমন কিছু না।”

জারিফের কথা শুনে কেউ আর দ্বিতীয় প্রশ্ন করে না। তাসনিম জারিফ এর দিকে তাকিয়ে লক্ষ্য করে,আসলেই আজকাল জারিফকে কিছু নিয়ে ভাবতে দেখা যায়।

আজকে প্যারেন্টস ডে থাকায় রাজিয়া সুলতানা এসেছিলেন লিয়ার সাথে দেখা করতে।রাজিয়া সুলতানা যত সময় ছিলো লিয়ার মনটা খুব ভালো ছিলো।চলে যাওয়ার পর থেকে লিয়ার মনটা বেশি খা’রাপ হয়ে যায়।রাতের খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করে লিয়া বিষন্ন মন নিয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।লিয়ার মন মস্তিষ্ক প্রায় সময়ই জারিফের কথা জানান দেয়। তবুও লিয়া কঠোরতা বজায় রাখার চেষ্টা করছে।লিয়া দেখতে চায় জারিফ লিয়াকে কতটা ফিল করে।নিজে থেকে কোনো খোঁজ খবর নেয় কিনা।লিয়া ভাবে,,”মিস্টার জারিফ আপানাকে বিরক্ত করা ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু ভুলে যায়নি আপনাকে। যোগাযোগ যদি না থাকে তাতে কি আসে যায়? প্রিয় মানুষ সে তো সব সময়ই প্রিয় মানুষ হয়েই থেকে যায়!হাজারো কল্পনার ভিড়ে আপনি আমার শ্রেষ্ঠ অনুভূতি। আপনার কথা না ভেবে এক মূহুর্তও থাকতে পারিনা আমি। আপনার কি একবারো আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না? ছোট্ট করে একটা কল দেওয়া যায় না কি?তবে কি আমার ধারণা ভুল?আমার প্রতি আপনার কোনো দুর্বলতা নেই।এসব ভেবে লিয়া দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।

অরিন লিয়ার পাশে বসে বলে,,”লিয়া তোর কি হয়েছে?সব সময় কেমন মন যেনো ম>রা হয়ে থাকিস।আগের মতো কথা বলিস না,হাসিসও না।”

লিয়া জোর করে হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে,,”কি হবে?কই কিছু না।সামনে এক্সাম তাই একটু টেনশন হচ্ছে,এই আরকি।”

জারিফ বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করতেই লিয়ার মায়াবী চোখ দুইটা ভেসে উঠে।জারিফ জোরে জোরে কয়েকবার শ্বাস নিয়ে,দুই আঙ্গুল দিয়ে কপালে স্লাইড করতে করতে লিয়াকে নিয়ে গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়।লিয়াকে নিয়ে ভাবে,,”লিয়া যথেষ্ট পলাইট একটা মেয়ে।ফ্যামলি শিক্ষা ভালো।যুগের সাথে গা ভাসিয়ে দিয়ে উচ্ছৃঙ্খলভাবে চলাচল করে না লিয়া। যথেষ্ট পার্সোনালিটি সম্পন্ন একটা মেয়ে।তুখর মেধাবী,মন টা বেশ নরম। লিয়ার সব গুণাবলী নিয়ে জারিফ ভাবতে থাকে। অবশেষে সিদ্ধান্ত নেয়, এরকম একটা মেয়েকে লাইফে যে কেউ আশা করে।আর মেয়েটা যেহেতু আমার উপর দূর্বলতা প্রকাশ করে,তাহলে আমার কি করা উচিত?আমি কি ওকে একসেপট করে নিবো?আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে নেবো কি?

জারিফ ব্যালকনিতে রাখা চেয়ারে বসে অনেক সময় ভেবে দ্বিধা দ্বন্দ্বে থেকে ডিসাইড করে লিয়ার কাছে ফোন দিবে। অস্ফুট স্বরে বলে,,”অজান্তেই আমি নিজেও লিয়া কে অনুভব করছি।দিন কে দিন অনুভব এর মাত্রা টা বেড়েই চলেছে।তোমার প্রতি আমি নিজেও আসক্ত হয়ে পড়েছি।আমার চোখ দুটো সব সময় তোমাকেই খোঁজে।তোমার প্রতি যে ফিলিংস টা আসে,আগে কখনো কাউকে দেখে সেই ফিলিংস আসেনি।আমি বাজে ভাবে তোমার মায়ায় জড়িয়ে পড়েছি।”

জারিফ লিয়ার নম্বরে কল দিয়ে বসে।রাত এগারোটা পঞ্চাশ বাজে।লিয়া মাত্রই চোখটা বন্ধ করেছিলো, হঠাৎ ভো ভো শব্দে ফোনটা কেঁপে উঠে।এক হাত দিয়ে বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে জারিফের কল দেখে লিয়ার মনে আনন্দ হয়।লিয়া নিঃশব্দে বিছানা থেকে নেমে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।অরিন ফিহা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। আনন্দিত কন্ঠে লিয়া প্রথমে সালাম দেয়।সালামের উত্তর দিয়ে জারিফ শান্ত গলায় শুধায়,,
“কেমন আছো? পড়াশোনার কি খবর? পড়াশোনাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না তো?”

লিয়া ঢুক গিলে নিয়ে ধীর গলায় বলে,,”পড়াশোনায় কোনো প্রবলেম নেই স্যার। প্রবলেম এখন অন্য যায়গায়।”

লিয়ার কথা শুনে জারিফ সটান দাঁড়িয়ে মুখ টানটান করে প্রশ্ন করে,,”মানে?”

লিয়া কিছুটা জড়তা নিয়ে বলে,,”সমস্যা আমার মানসিকতায়। আমার মনটা আর আমার কন্ট্রোলে নেই।আউট অফ কন্ট্রোল হয়েছে,আপনাকে দেখার পর থেকে। সার্বক্ষণিক আপনার কথা মনে পড়ে।”

জারিফ ফাইভ সেকেন্ড ভেবে নিয়ে স্থির ভাবে শান্ত গলায় বলে,,”সত্যি বলতে তোমার কথাও প্রায় সময়ই আমার মনে হয়।কারণ একটা কথা আছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে থাকলেও একজন যখন আরেক জন কে নিয়ে ভাবে।তখন অপর প্রান্তের মানুষ টাও সেটা উপলব্ধি করতে পারে। জানি না এই কথাটায় কতটুকু লজিক আছে।তবে আমিও তোমাকে অনুভব করছি।”

হঠাৎই লিয়ার হৃদ যন্ত্রের ক্রিয়া বেড়ে যায়।লিয়ার চোখ মুখ জুড়ে খুশি উপচে পড়ছে।লিয়ার নিজের কাছে এতটা প্রশান্তি হচ্ছে যে, মনে হচ্ছে যেনো বিশ্ব জয় করে ফেলেছে। এতদিন পর লিয়া কাংখিত মানুষটার কাছ থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই হুট করে কাংখিত কথাটা শুনতে পেলো।লিয়ার মনে হচ্ছে ও যেনো স্বপ্ন দেখছে।কোনো ঘোরের মধ্যে আছে।জারিফ নিজে থেকে ফোন দিয়েছে,আবার নিজে মুখে বলছে লিয়াকে ও ফিল করছে।লিয়া বুক ভরে শ্বাস নিয়ে জিহ্বা দিয়ে ঢুক গিলে নিয়ে কোমল গলায় বলে,,”স্যার আপনি সত্যি বলছেন তো। আপনি আমার সাথে জোকস্ করছেন নাতো?কেনো জানি আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।”

জারিফ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,,”কোনটা বললে তুমি খুশি হবে?যদি বলি ফান।আর যদি বলি মন থেকে রিয়েলি বলছি।তুমি কোনটা শুনতে চাও?”

লিয়া দ্বিতীয়বার না ভেবে এক্সাইটেড হয়ে দ্রুত বলে,,”নিশ্চয় শেষের কথা হলে খুব খুব খুবই খুশি হবো।আর প্রথম কথা মানে ফান করে বললে খুবই আহত হবো।ক্ষত বিক্ষত হবে আমার ছোট্ট হৃদয়টি।”

জারিফ নিঃশব্দে হেসে শান্ত গলায়,,”কারো মন কে ক্ষত বিক্ষত করতে আমি চাই-না।আর তোমাকে তো কখনোই না।”

জারিফের কথা শুনে লিয়া চঞ্চল গলায় বলে,,”স্যার তাহলে কি আমি ধরে নিবো,আপনি আমাকে

এতটুকু বলে লিয়া থেমে যায়।কিছু সময় দুইপাশেই নীরবতা চলে। নিরাবতা ভেঙ্গে জারিফ স্পষ্টভাবে বলে,,”থেমে গেলে কেনো?আমি তোমাকে কি?

লিয়া কিয়ৎক্ষণ ভেবে আবেগী কন্ঠে বলে,,”সেটা আমি আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।”

জারিফ গম্ভীরভাবে বলে,,”এখন মন দিয়ে পড়াশোনা করো। কিছু সময় যেতে দাও।তুমি আরো ভালো ভাবে নিজেকে বুঝে নাও। আসলেই তুমি কি চাও।এটা শুধুই তোমার আবেগ নয়তো?কারন তোমার বয়সটা কম।তাই তুমি ভালো করে ভেবে নাও।তুমি একজন ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট, সামনে তোমার ব্রাইট ফিউচার।ম্যানি ফেমাস ফ্লাওয়ার হেভ নেয়ার টু মাউন্টটেইন।সচারাচর বরফে ঢাকা পাহাড়ে ফুল ফোটে না।তবুও হঠাৎ অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই বরফ আবৃত পাহাড়ে দুই একটা ফুল ফোটে।যেগুলো কে এক কথায় বলে দুর্লভ।তুমি পাহাড়ের ফুলের মতো দুর্লভ কিছুই ডিজার্ভ করো।আমার থেকেও বেটার কাউকে পেয়ে যাবে।তাই বলছি আবেগ কে প্রাধান্য না দিয়ে বিবেক দিয়ে ভেবে দেখো।”

জারিফের কথা শুনে লিয়া ম্লান কন্ঠে বলে,,”আপনার থেকে বেটার কাউকে দিয়ে কি হবে।যেখানে আমার মন ভর্তি আপনি,আর আমার মস্তিষ্ক জুড়ে শুধুই আপনার চিন্তা।আপনার চেয়ে বেটার বা আপনার মতো কাউকে আমার চাইনা, আমার শুধু আপনাকেই চাই।”

লিয়ার কথা শুনে ফাইভ সেকেন্ড ভেবে ফোনের ওপাশ থেকে জারিফ শান্ত কন্ঠে বলে,,”লিয়া তুমি টিনএজ কিন্তু আমি তো টিনএজ নই।তাই আমি বলছি,আপাতত এসব চিন্তা কে একটু দূরে সরিয়ে রাখো।তুমি এইচএসসি টা কমপ্লিট করে নাও।এদিকে আমি বিসিএস এ উত্তীর্ণ হয়ে নিই,তারপর না হয় আমরা আগাবো।কি বলো?”

লিয়া নিঃশব্দে ঠোঁট চওড়া করে হেঁসে বলে,,”সমস্যা নেই।আমি আপনার জন্য সারাজীবনও ওয়েট করতে পারবো।তবে আশাকরি কখনো আপনি আমাকে নিরাশ করবেন না।আর মাঝে মাঝে ফোনে কথা বলতেই পারি।কি বলেন?”

জারিফ মৃদু হেসে এক কথায় বলে,,”শিয়র”
“থেংকিউ স্যার।আ’ম সো হ্যাপি।নাউ আ’ম ফিল মোস্ট অফ দ্যা হ্যাপিয়েস্ট পার্সন ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।থ্যাংকস টু আল্লাহ থ্যাংকস টু লর্ড।

“মে আল্লাহ ব্লেস ইউ।আচ্ছা লিয়া ভালো থেকো।অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো। আর রেজাল্ট যেনো আশানুরূপ ই হয়।রেজাল্ট আশানুরূপ না হলে, সেইজন্য কিন্তু আমার নিজেকে দায়ী মনে হবে।আমার নিজের কাছে গিল্টি ফিল হবে।তাই বলছি পড়াশোনাতে ফোকাস করো।”

“শিয়র”

কে’টে গিয়েছে আরো দুইটা মাস। লিয়ার সাথে জারিফের দেখা হয়নি। সপ্তাহে একবার করে ফোনে কথা হয়।কখনো লিয়া কল দেয় বা কখনো জারিফ।তবে জারিফের তুলনায় লিয়াই আগে কল দেয়।আজকে জারিফের রেজাল্ট দিয়েছে।জারিফ ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়েছে। জারিফের বাবা মা সবাই খুব খুশি। জারিফ নিজেও আজকে খুব খুশি।এই খুশি টা লিয়ার সাথে শেয়ার করতে চায়। সন্ধ্যার কিছুক্ষন পরেই জারিফ লিয়ার কাছে ফোন করে।

লিয়া পড়ছিলো সেই সময় ফোনটা কেঁপে উঠে।এই সময় ফোনের স্ক্রিনে জারিফের কল দেখে অবাক হয়।কারন জারিফ কখনো কল করলেও রাত দশটার দিকে করে,এই সময়ে নয়।লিয়া কল রিসিভ করে সালাম দেয়।জারিফ সালামের উত্তর দিয়ে বলে,,
“কেমন আছো?তোমাকে একটা খবর জানানোর ছিলো?”

কি খবর হতে পারে কিছু সময় ভেবে না পেয়ে লিয়া কোনো প্রকারের ভনিতা ছাড়াই সোজাসুজি প্রশ্ন করে বলে,,”কিসের খবর স্যার?”
“আজকে আমার রেজাল্ট দিয়েছে। ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়েছি ।”

লিয়া আনন্দিত কন্ঠে বলে,,”আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো।শুনে খুব ভালো লাগছে।”
“তুমি কেমন আছো বললে না তো?”
লিয়া মৃদু কন্ঠে বলে,,”মোটেও ভালো ছিলাম না। আপনার সাথে কথা বলার পর থেকে এখন পর্যন্ত খুব ভালো আছি।”

জারিফ শান্ত গলায় বলে,,”সামনের সানডে থেকে তো তোমার এক্সাম।এক্সাম শেষ হবে কবে?”
“শেষ হতে তো পনের দিন লাগবে।”

জারিফ ফাইভ সেকেন্ড ভেবে নিয়ে বলে,,”তাহলে তো তুমি আর প্রায় বিশ দিনের মধ্যেই আসছো।”
“হুম।”
“আচ্ছা ঠিক আছে,ভালো ভাবে এক্সাম শেষ করে আসো।দেখা হবে।”

লিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”একবারও তো মিষ্টি খাওয়ানোর কথা বললেন না।”

জারিফ শান্ত গলায় বলে,,”শুধুমাত্র বলার জন্য কোনো কথা আমি বলি না।কারন তুমি এখন ক্যাডেটে আছো।চাইলেই তো আর হবে না।তাই যখন দেখা হবে তখন না হয় মিষ্টিটা খাওয়াবো।”

“স্যার আপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে।”

“ইচ্ছে করলে উপায় নেই লিয়া।কিভাবে তোমার সাথে দেখা করবো? তুমি বাসায় এসো তারপর না হয় আমরা দেখা করবো।”

লিয়া দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে কিয়ৎক্ষন ভেবে নিয়ে বলে,,”স্যার আমি যদি বলি,তাহলে গেট পাশ দিবে।আমি আগে থেকে গেইটে বলে রাখবো আমার গার্ডিয়ান আসবে।যদি বলি আমার টিচার আসবে প্রাকটিক্যাল এইড নিয়ে তাহলে মে বি আপনাকে গেট পাশ দিয়ে দিবে ।আর কালকে তো ফ্রাইডে।সকাল দশটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত গার্ডিয়ানদের কে এলাউ করা হয়।”

কিছুক্ষণ দ্বিধা দ্বন্দ্বে থেকে অবশেষে জারিফ বলে,,”ওকে।আমি তাহলে কাল ফাস্ট আওয়ারেই যাবো।”

“থেংকিউ স্যার।আমার আবদার টা রাখার জন্য।”

তাসনিম বাড়িতে পরিবারের সবার সাথে ব্যস্ত সময় পার করছে। তাসনিম ও ফাস্ট ক্লাস পেয়েছে। সন্ধ্যার দিকে তাসনিম ওর বড় ফুপ্পির কাছে ফোন করে রেজাল্ট জানানোর জন্য। রিসিভ করে প্রথমে কুশল বিনিময় করে তাসনিম বলে,,”ফুপ্পি আজকে আমার রেজাল্ট দিয়েছে।আমি ফাস্ট ক্লাস পেয়েছি।”

আতিকা বেগম আনন্দিত গলায় বলে,,”আলহামদুলিল্লাহ,ভালো।শুনে খুব খুশি হয়েছি।দোয়া করি এইভাবেই জীবনের প্রতিটি ধাপে উত্তীর্ণ হও।”

“ফুপ্পি তুমি ফুপা আর আলিফ ভাইয়াকে বলো হ্যা।আমার এক ফ্রেন্ড কল দিয়েছে। তাই রাখছি এখন কেমন।”

আতিকা বেগম নরম কন্ঠে বলে,,”আলিফ বাসায় নেই।এখন চেম্বারে আছে।তুই নিজে না হয় আলিফ কে ফোন করে জানিয়ে দিস কেমন।”

তাসনিম কিয়ৎক্ষণ ভেবে নিয়ে বলে,,”আচ্ছা ঠিক আছে।”

তাসনিম ফোন কে’টে দিয়ে দেখে রোজ দুইবার ফোন দিয়েছে।কল ব্যাক করে।রোজ উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলে,,”তাসনিম কনগ্রাচুলেশন। ফাস্ট ক্লাস ফোর্থ হওয়ার জন্য।তোরা সবাই ফাস্ট ক্লাস পেলি আমিই কেবল সেকেন্ড ক্লাস পেলাম।জারিফের খবর শুনেছিস?জারিফ সেকেন্ড হয়েছে।”

তাসনিম ভাবে জারিফ একবারো ফোন করে ওর রেজাল্টের কথা জানালো না।আর আমাকে কনগ্রাচুলেট ও করলো না। কিছুক্ষণ আগে রুপক রোহান মেসেজ দিয়ে কনগ্রাচুলেশন জানিয়েছে।ওদের দুজনের মতো জারিফও তো একটা মেসেজ অনন্ত দিতে পারতো।এসব ভেবে তাসনিম দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। তাসনিম রোজের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে কল কে’টে দেয়। তারপর আতিকা বেগম এর কথা রাখতে আলিফের কাছে ফোন দেয়।

কাঁচের “Pull me”দরজা টা একহাত দিয়ে টান দিয়ে খুলে নিজের চেম্বারে গিয়ে বসে আলিফ।রাত আটটার পর থেকে পেশেন্ট দেখে। চেয়ারে বসে স্টেথোস্কোপ টা গলায় ঝুলিয়ে নিতেই ফোনের স্ক্রিনে আলো জ্বলে উঠে। তাসনিম এর নাম দেখে আলিফের মুখে এক চিলতে হাসি ফোটে।

[চলবে… ইন শা আল্লাহ]

(ভুলত্রুটি মার্জনীয়। টাইপিং এর সময় মাঝে মধ্যে দু একটা বানান ভুল হয়।রিচেইক দেওয়ার সময় অনেক সময় চোখে পড়ে না।কথায় আছে না নিজের ভুল নিজের কাছে ধরা পড়ে না।ঠিক সেইম অবস্থা রিচেইক করার সময় খুব কম সময়ই ভুলগুলো ধরা পড়ে। তাই ভুল গুলো মানিয়ে নিয়েন কেমন।হ্যাপি রিডিং)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here