#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব১৫
“রুমের মধ্যে নিয়ন আলোয় পরিবেশটা চমৎকার হয়েছে।হসটপিটালের একজন বয় এসে এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে করে যায়।লেবুর সুন্দর সুগন্ধে পরিবেশটা আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।আজকে অবশ্য আলিফের মনটাও বেশ ভালো।এই পরিবেশে হঠাৎ করে ফোন বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে তাসনিম এর নাম দেখে আলিফের মুখে হাসি ফোটে।ছোট করে শ্বাস নিয়ে ফোন রিসিভ করে।আর পাঁচ মিনিট পরেই আটটা বাজবে।আর আটটা বাজা-র সাথে সাথে পেশেন্ট আসতে থাকবে। এই মূহুর্তে অন্যকারো ফোন আসলে সাধারণত আলিফ রিসিভ করে না। সাইলেন্ট করে দেয়।সব পেশেন্ট দেখা শেষ করে ব্যাক করে। অথচ আজকে ডিউটিরত বয় কে ডেকে বলে দেয়।টেন মিনিটস পরে যেনো পেশেন্ট চেম্বারে ঢুকে, এর আগে নয়।আলিফের কথা শুনে বয়টি একটু অবাক হয় কারন এপর্যন্ত কখনো স্যার এমনটা বলেনি।স্যার যথেষ্ট পাংচুয়াল।
আলিফ ফোন রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশ থেকে ধীরভাবে বলা মিষ্টি কন্ঠস্বর ভেসে আসে। তাসনিম সালাম দিয়ে কুশলাদি বিনিময় করে রেজাল্ট এর কথা বলতেই,আলিফ শান্ত গলায় বলে,,”কনগ্রাচুলেশন তাসনিম।”
তাসনিম মৃদু আওয়াজে বলে,,”থেংকিউ।”
টেবিলের উপর থাকা স্বচ্ছ পেপার ওয়েট একহাতে ঘুরাতে ঘুরাতে আলিফ বলে,,”শোনো তাসনিম আমি তোমাকে খুব ফিল করি।তুমি আমার মামার মেয়ে হিসেবে না।তোমার পলাইটনেস,তোমার মেধা,তোমার অনেস্টি, সর্বোপরি তোমার পার্সোনালিটি আমাকে খুব মুগ্ধ করে।এজন্য তোমাকে আমি অনেক বেশিই ফিল করি।আমার ধারনা তুমি এটা বোঝো।আর এই ফিল করা এতো বেশি হয়,যখন তোমার ভালো টা আমি শুনতে পাই।তখন আমার মনে হয়,এই ওয়ার্ল্ডে আমার থেকে বেশি তোমাকে কেউ অনুভব করে না।অল দ্যা বেস্ট এইভাবেই এগিয়ে যাও।আর জীবনের যেকোনো মুহূর্তেই আমাকে তোমার পাশে পাবে একজন ওয়েল উইশার হিসেবে।”
তাসনিম চুপ করে সবটা শোনে তারপর বলে,, থেংকিউ ভাইয়া।”
মনের মধ্যে জমানো অনেক কথা থাকা সত্ত্বেও আলিফ আর বেশি বাক্য ব্যয় না করে নির্বিকার ভঙ্গিতে সোজাসুজি সহজভাবেই বলে,,
“আচ্ছা তাসনিম ভালো থেকো।বাই।”
তাসনিম আলিফের বলা কথাগুলো নিয়ে ভাবতে থাকে। তাসনিম নিজেও বুঝতে পারে আলিফ ওকে পছন্দ করে। তবে তাসনিম এটা নিয়ে ভাবতে চায়না।মন টা ঘুরে ফিরে জারিফকেই স্মরণ করিয়ে দেয়। মস্তিষ্ক যদিও অন্য কথা বলছে, সময়টা তাকেই দেওয়া উচিত,যে সময়ের মূল্য বোঝে।ঠিক তেমনি ভাবে সম্পর্ক তার সাথেই গড়তে হয় যে সত্যিই সম্পর্ক গড়তে চায়,আর তোমাকে নিয়েই যে ভাবে।আজকে জারিফের উপর তাসনিমের অনেক অভিমান, অভিযোগ জমে।পরক্ষণে আবার ভাবে,অন্যকারো প্রতি অভিযোগ রাখার চেয়ে, নিজেকে বদলে নেওয়াই অনেক ভালো।তবে বললেই কি আর এত সহজে নিজেকে বদলে নেওয়া যায় না-কি? তাসনিম যতই জারিফের কথা ভুলে থাকতে চায়,বেহায়া মনটা ততই স্মরণ করিয়ে দেয়।
মেঘ মুক্ত আকাশ। পরিষ্কার শান্ত সকাল।ঘুম ভেঙ্গে সব কিছু নিট এন্ড ক্লিন মনে হচ্ছে লিয়ার কাছে।আড়মোড়া ভেঙ্গে বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে নেয়।লিয়া আনন্দিত প্লাস খুব এক্সাইটেড ছিলো জারিফের সাথে দেখা হবে বলে। লিয়ার ঠোঁটের সাথে হাসি লেগে আছে। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে লিয়ার হাসি মুখটা মলিন হয়ে আসে।লিয়া ভাবে,, আব্বু তো হুটহাট করেই চলে আসে আমার সাথে দেখা করতে। আম্মু যেদিন আসে ফোনে বলেই আসে।বাট আব্বু তো না বলেই চলে আসে।আর কোনো কাজে গাড়ি করে এদিক দিয়ে যেতে গেলে নেমে আমার খোঁজ নিতে আসে।বাই এনি চান্স যদি আজ আব্বু চলে আসে।আর যদি গেইট থেকে শোনে আমার সাথে স্যার দেখা করেছে।আর যদি সরাসরি এসেই আমার সাথে স্যার কে দেখে নেয়,তখন কি হবে?এটা ভেবে লিয়ার হাত পা জমে আসে।লিয়া চিন্তিত হয়ে ভেবে নেয় যে ওর আম্মুর সাথে ফোনে কথা বলে দেখবে,যে ওর আব্বু সকালের দিকে আসতে পারে কিনা।কথা বললে কিছুটা আন্দাজ করা যাবে যে, আব্বু আসতে পারে কিনা?লিয়া রাজিয়া সুলতানার কাছে ফোন করে।
রাজিয়া সুলতানা রান্না করছিলেন।সেই সময় ফোনের শব্দ পেয়ে রুমে গিয়ে দেখেন লিয়ার কল।রিসিভ করে চিন্তিত গলায় বলে,,”লিয়া আজ হঠাৎ সকাল সকাল ফোন করলি।ঠিক আছিস তুই?কোনো সমস্যা হয়নি তো?”
“না সমস্যা নেই।আ’ম গুড।তোমরা সবাই কেমন আছো? রাহবার কি করে?”
রাজিয়া সুলতানা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলেন,,”আলহামদুলিল্লাহ,আমরা সবাই ভালো আছি।রাহবার ঘুমাচ্ছে।”
“আব্বু কি করে?”
“তোর আব্বু রুমে আছে।তুই ভালো আছিস তো।কোনো অসুবিধা নেই তো।”
“কোনো অসুবিধা নেই।আমি ভালো আছি। আচ্ছা আম্মু রাখছি কেমন।”
“আচ্ছা।ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করিস আর নিজের যত্ন নিস কেমন।”
“ওকে।”
লিয়া ফোন কে’টে দিয়ে, দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে ভাবে,, আব্বু আসলে আম্মু জানতো।আর কিছু না কিছু বলতো।আপাতত নাইনটি পার্সেন্ট আশাকরা যায় আব্বু আসতে নাও পারে।এটা ভেবে লিয়া বুক ভরে শ্বাস নেয়।
অরিন ফোন স্ক্রল করতে ব্যাস্ত আর ফিহা বিছানায় বসে ছোট ছোট চোখ করে লিয়ার কাজ কর্ম দেখছে।লিয়া ব্যাগ থেকে ড্রেস বের করছে আর ওদের সামনে ধরে বলছে কোনটা পড়বে বুঝতে পারছে না।ফিহা ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,,”তুই এমনিতেই সুন্দরী তাই যেটা পড়বি সেটাতেই তোকে সুন্দর লাগবে।তাই বলছি এতো বাছাবাছি বাদ দে।যেকোনো একটা পড়েনে।”
জলপাই কালারের একটা থ্রি পিচ পড়েছে। ব্ল্যাক ঘন লম্বা স্ট্রেইট স্লিকি চুলগুলো খোলা রাখে। ঠোঁটে হালকা পিংক কালারের লিপবাম দেয়,ব্যাস এনাফ।লিয়া ফোন হাতে নিয়ে সময় দেখতে থাকে। দশটার দিকেই জারিফের আসার কথা।
লিয়া রুম জুড়ে পায়চারি করছিলো।তখন অরিন গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,,”এই লিয়া এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো বলতো?একটু স্থির হয়ে বস।চলে আসবে তোর প্রেয়ারের মাস্টার মশাই।”
লিয়া ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”আ’ম টেনস অরিন।স্যারের সাথে কিভাবে মানে প্রথমে কি দিয়ে কথা শুরু করবো তা নিয়ে।?”
অরিন নির্বিকার ভঙ্গিতে সোজাসুজি বলে,,”কেনো?ফোনে যেভাবে বলিস সেইভাবে বলবি সিম্পেল।”
“আরে তুই বুঝতে পারছিস না,ব্যাপারটা।ফোনে তো আর ফেস টু ফেস কথা হয়না।তখন অনেক কিছুই বলা যায়।আর এখন সামনা-সামনি চোখাচোখি হতেই আমার সব সাজানো গোছানো কথা হাওয়া হয়ে যাবে মে বি।”
এরমধ্যেই জারিফের কল আসে।লিয়া অরিন আর ফিহাকে বলে,,”চল নিচে আমার সাথে,স্যার আসছে।”
অরিন ঠোঁট উল্টে বলে,,”তোদের মাঝে আমরা কাবাব মে হাড্ডি হতে চাচ্ছি না।আর তোদের কে প্রাইভেসি দিচ্ছি।যা তোরা দুজনে আগে কিছু সময় একান্ত ভাবে কাটিয়ে নে।তোদের প্রেম আলাপ শেষ হলে,ফোন করিস তখন নিচে গিয়ে,আমরা জিজুর সাথে মিট করবো।কি বলিস চশমিশ মহাজ্ঞানী।”
অরিনের এই সম্বোধনে ফিহা বিরক্ত বোধ করে। হাজার বার বলেছে চশমিশ যেনো না বলে, তবুও অরিন দাঁত কেলিয়ে অনবরত এই ডাকে ডাকবেই।ফিহা ভাবে এই ওয়ার্ডটা না ইউজ করলে অরিনের পেটের ভাত হজম হয় না মে বি।তাই ফিহা আর এখন এই নিয়ে অরিনকে কিছু বলে না। অরিনের ভাষ্যমতে,ও নাকি আদর করে ওকে চশমিশ বলে ডাকে।ফিহা সেই সময় বলে,আদরই এইরকম আর যদি বিদ্রুপ বা ক্রোধ নিয়ে বলতি তাহলে কিরকম হতো সেই সম্মোধন টা তা একমাত্র উপরওয়ালাই জানে।আর সেই ডাক শুনে আমি সোজা কোমায় চলে যেতাম শিয়র।অরিনের সাথে সহমত জানিয়ে ফিহা বলে,,
“যদিও সচারাচর অরিনের কথার সাথে আমি সহমত পোষণ করিনা তবে আজকে এই কথায় একমত।অরিন ঠিক বলেছে লিয়া।তুই যা আমরা একটু পরে যাবো।”
লিয়া আর কথা না বাড়িয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে নিচে নেইমে সোজা গেইটের কাছে চলে যায়।গিয়ে দেখে গেইটের সামনে হোয়াইটের উপর ব্ল্যাকের বর্ডার এর টিশার্ট আর এ্যশ কালারের জিন্স প্যান্ট পড়নে জারিফ দাঁড়িয়ে আছে।আগে থেকে বলে রাখার জন্য আর টিচার পরিচয় দেওয়ায় জারিফকে গেট পাশ দেয়।জারিফ ভেতরে ঢুকতেই লিয়া জারিফের দিকে এগিয়ে গিয়ে সালাম দেয় সাথে একটা মিষ্টি হাসি। সালামের উত্তর দিয়ে বিনিময় জারিফও স্মিত হাসে।
লিয়া জারিফের কাছে এগিয়ে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে,,”ওদিকটায় চলুন।”
গার্ডিয়ান দের বসার জন্য সিলেক্ট করা এরিয়ায় একটা বড় গাছের গোড়ার চারিদিকে গোল পাকা করা জায়গায় বসে ওরা।জারিফ বসে মাঝে হাতে থাকা প্যাকেটটা রাখে (প্যাকেটের ভেতর তিনটা বিরিয়ানি প্যাকেট, মিষ্টি আর তিনটা কোল্ড ড্রিংকস।অরিন আর ফিহার কথা ফোনে জানে জারিফ।ওরা লিয়ার রুমমেট প্লাস বেস্ট ফ্রেন্ড)তারপর লিয়া বসে।
জারিফ কে একটু নার্ভাস লাগছিলো। আবহাওয়া টা বেশ চমৎকার ই ছিলো।হালকা বাতাস ছিলো।পরিবেশটা বেশি গরম না থাকা স্বত্বেও জারিফ ঘামছিলো।দুজনের মাঝে পিনপতন নীরবতা চলছিলো।লিয়াও ভেবে পাচ্ছিলো না,কি বলে শুরু করবে।দুই হাতের তালু ডলতে ডলতে অবশেষে নীরবতা ভেঙ্গে
লিয়া স্থির দৃষ্টিতে জারিফের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় শুধায়,,”স্যার আর ইউ ওকে?”
জারিফ পকেট থেকে টিস্যু বের করে একহাতে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে,মুখটা একটু ঘুরিয়ে লিয়ার ফেসের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করে বলে,,”ইয়াহ।ঠিক আছি আমি, প্রবলেম নেই।কেমন আছো তুমি?
লিয়া ওড়নার কোণা আঙ্গুলে পেচাতে পেচাতে বলে,,”ভালো। আন্টি আঙ্কেল আপনার বাসার সবাই কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে।”
লিয়া আনন্দিত কন্ঠে বলে,,”স্যার আপনার ফাস্ট ক্লাস সেকেন্ড হওয়াতে আমি খুব খুশি হয়েছি।আসলে আমার জীবনের শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে আপনি জড়িয়ে গিয়েছেন।ফলে আপনার সফলতায় আমি খুব খুশি হয়েছি।এরপর আপনার লক্ষ্য কি?”
“ধন্যবাদ।এখন প্যাথোলজিতে মাস্টার্স করবো সাথে বিসিএস এর জন্য ট্রাই করবো।নরম কন্ঠে জারিফ আরো বলে,,সত্যি বলতে তুমি ধীরে ধীরে আমার হৃদয়ে এমন আসন করে নিয়েছো যে,তুমি ছাড়া দ্বিতীয় কাউকে চিন্তাও করতে পারছি না।আসলে আমার প্রকৃতি আগে এরকম ছিলো না।”
“স্যার সেটা আমি জানি।আপনাকে দেখে আমি বুঝতে পারি।স্যার আমি ছোট হলেও,আমার ফ্যামেলি গত কারনে এবং আব্বুর চাকুরির জন্য আমি অনেক ধরণের মানুষের সংস্পর্শে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে।এতটা জেনেই আপনার এই চরিত্রের কারনেই আপনি আমার কাছে স্পেশাল। এতো আকর্ষণীয় চরিত্রের মানুষ আমার মনে হয় খুব কমই আছে।”
“আসলে প্রত্যেক টা মানুষেরই এরকম হওয়া উচিত।বাট বেশির ভাগই দেখা যায়।অনেকে আবেগ কে কন্ট্রোল করতে না পেরে,আমার মনে হয় কিছুটা খা’রাপ হয়ে যায়।আর আমার মনে হয় সবারই নিয়ন্ত্রনের মধ্যে থাকা টাই উচিত।”
কথাটা শুনে লিয়ার মনে দাগ কে’টে যায়। লিয়া ভাবে স্যারের চিন্তা কতো আ্যরোসটেকেসি।লিয়া মনে মনে শপথ করে আমিও সেই রকমই হবো। আমি আপনার সঙ্গে এমনভাবে মিশব আপনি আমাকে আপনার সোল বানাতে বাধ্য হবেন।আমি আপনার দর্পণ হবো।”
জারিফের কথায় লিয়ার ভাবনা ভাঙ্গে।জারিফ নির্বিকার ভঙ্গিতে সোজাসুজি স্পষ্টভাবে বলে,,
“কি ব্যাপার তুমি চুপ হয়ে গেলে যে।কিছু বলছো না যে।”
“নাহ্ তেমন কিছু নয়।আপনাকেই ভাবছিলাম এবং অনুভব করছিলাম আমার চিন্তায় চেতনায় আপনিই শুধু।”
লিয়ার কথা শুনে জারিফের মনে প্রাণে শীতলতা বয়ে যায়।জারিফ শান্ত গলায় বলতে থাকে,,
“জানো লিয়া শম্ভুগঞ্জ ব্রিজে একদিন বিকেলে আমার ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে গিয়ে দেখি,সেখানে একটা টিয়া পাখি নিয়ে একজন গণক বসে আছে।অনেকে ভাগ্য পরীক্ষা করছিলো।আমি এসবে বিলিভ করিনা,তবে বন্ধুদের জোড়াজুড়িতে হাত দেখাই।তখন গণকের ভাষ্যমতে যে,আমার প্রিয় মানুষ টার বর্ণনা দিয়েছিলো তাতে এখন মনে হচ্ছে তোমারই ভালোবাসা আমার হাতের রেখায় আছে।”
লিয়া চঞ্চল গলায় বলে,,”বাহ্! দারুন তো স্যার।
“আসলে লিয়া আমি তোমার যে বিষয়টা সব থেকে বেশি চিন্তা করি,সেটা হচ্ছে যে বর্তমানে মেয়েদের যে ভাবে চলাফেরা সেভাবে তুমি চলাফেরা না করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে চলো। ইচ্ছে করলে তুমি এদের থেকে বেশি স্টাইলিশ হয়ে চলতে পারো,যা তোমার সব দিক দিয়েই যোগ্যতা আছে।এরকম মেকি ভাবে চলাচল না করে, তুমি নিজেকে একটি সুন্দর জীবনের জন্য তৈরি করছো,তোমার এই দিকটাই আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়। এইজন্য তুমি সবার থেকে আলাদা যা আমাকে আকর্ষণ করে।”
একথা শুনে লিয়া ভাবে,স্যার আপনাকেও আমি একইভাবে চিন্তা করছি। আমাদের চিন্তা ধারার কতো মিল। মনে হয় আমরা হ্যাপিই হবো।
কিছুক্ষণ থেমে জারিফ আবেগ ময় কন্ঠে বলে,,
“তোমার ঠোঁটের পাশের তিল টায় তোমাকে এতো আকর্ষণীয় লাগে যে আমার সারাক্ষণ ইচ্ছে করে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকতে।আকাশের সব তাঁরা যদি ঝরেও যায়,তবুও মনে হয় আমার চোখের পলক পড়বে না। অপলক দৃষ্টিতে তোমার হাসি মাখা মিষ্টি ফেস টা দেখার সাধ কোনোদিন মিটবে না।”
কথাটা শুনে লিয়া মনে মনে ভাবে স্যারকে যদি জড়িয়ে ধরতে পারতাম।তবে বলতাম,আপনাকে ছাড়া আমি ভালো নেই স্যার।আপনাকে আমি কত ভালোবাসি আপনি তা বোঝেন না।এর থেকে বেশি ভালোবাসা যায়না।আর এর থেকে কেউ বেশি ভালোবাসতে পারবেও না।
লিয়া নির্বিকার ভঙ্গিতে আগ পিছ না ভেবে সোজাসুজি স্পষ্টভাবে বলে,,”স্যার আজকে এই খোলা আকাশের নীচে বসে। প্রকৃতিকে সাক্ষী রেখে কথা দিন আপনি সারাজীবন আমার পাশে থাকবেন।হাজারো বাধা বিপত্তি,ঝড় ঝাপটা এলেও আমাকে ছাড়বেন না।”
জারিফ লিয়ার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মৃদু কন্ঠে বলে,,”আমার নিজেকে ভালো রাখার জন্য তোমাকেই প্রয়োজন।তাই প্রশ্নই উঠে না তোমাকে ছাড়ার।”
লিয়া গমগমে কন্ঠে বলে,,”ছেড়ে তো দিয়েছিলেন প্রথম দিন।আমাকে বাঁচানোর জন্য ধরে আবার ছেড়ে দিয়ে নিজের ফোন ধরেছিলেন।আমার থেকে আপনার কাছে আপনার ফোন নামক জড় বস্তু টাই বড় হয়েছিলো।”
জারিফ স্মিত হেসে মাথা চুলকিয়ে বলে,,”লজ্জা দিও না প্লিজ।সেই মুহূর্তে আসলে আমি বুঝে উঠতে পারিনি।আর সব থেকে বড় কথা,সেদিনকার তুমি আর আজকের তুমির মাঝে রাত দিন পার্থক্য আছে।সেদিন তুমি আমার কাছে আর পাঁচটা মেয়ের মতই একজন।আর আজকের তুমি আমার কাছে সব থেকে স্পেশাল একজন।আজকের তুমি জড়িয়ে আছো আমার হার্টের সাথে।আর লিয়া একটু ভেবে দেখো,সেদিন আমি তোমার হাতটা ছেড়ে দিলেও পরিস্থিতি বা পরিবেশ টা কিন্তু আমাদের আজকের সম্পর্কের বার্তা বাহক হিসেবে ইন্সপায়ার্ড করেছে।সেদিন পরিস্থিতি আমাদের দুজনকে অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবেই আরো কাছে এনে ছিলো।আমার যদিও এখন ইচ্ছে আছে, কিন্তু সেই ইচ্ছে টা কে বাস্তবে রুপ দেওয়ার পরিবেশ নেই। কিন্তু সেইদিন চিন্তাই ছিলোনা কিন্তু কো-ইন্সিডেন্সলি সেটা হয়েছিলো।”
জারিফের কথা শুনে লিয়ার ফর্সা মুখটা লালাভ বর্ণ ধারণ করে।লিয়া লজ্জায় মাথাটা নিচু করে নেয়।
কিছু সময় জারিফ থেমে আবার বলে,,”সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রে করছি। আমাদের লাইফটা যেনো প্রথম দিনের মতই হয়।আমরা দুজন কখনো দূরে থাকলেও পরিবেশ বা পরিস্থিতি আমাদের দূরত্ব কে যেনো ঘুচিয়ে দিয়ে এক করে দেয়।”
জারিফ ফোনে সময় দেখে নিয়ে বলে,,”লিয়া এবার যেতে হবে।”
“একটু ওয়েট করুন প্লিজ। আমার বান্ধবীদের সাথে মিট করে যাবেন।”
“ওকে।”
লিয়া অরিনের কাছে কল দেওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ওরা দুজন চলে আসে।অরিন এসে মুচকে হেসে বলে,,”জিজু টিচার হয়ে স্টুডেন্ট এর সাথে প্রেম করছেন।কাজটা কি ঠিক হচ্ছে।”
অরিনের কথা শুনে জারিফ লজ্জা পেয়ে যায়,মাথাটা একটু নিচু করে ফেলে।অরিন শব্দ করে হেসে বলে,,”আরে মজা করছি।আপনি কথাটা সিরিয়াসলি নিবেন না।আর আমার বান্ধবী তো আপনাকে প্রেমিক হিসেবে পাওয়ার জন্যই,টিচার বানিয়ে ছিলো।”
অরিনের কথা শুনে জারিফের অস্বস্তি হতে থাকে।এই মেয়ে যে বেশ ঠোঁট কাঁটা তা জারিফ বুঝতে পারছে কথা শুনে।
ফিহা মৃদু আওয়াজে সালাম দেয়।জারিফ ভদ্রভাবে সালামের উত্তর দিতেই,অরিন ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,,এটা কি ঠিক হচ্ছে জিজু?আপনারা দুজনেই শুধু মজা করবেন।আমরা কি মজা করবো না?”
জারিফ বলে,,”নাহ্!ঠিক আছে।তোমাদের জন্য তো ওয়েট করছি।আজকের এই সময়টুকু সবাই মিলে উপভোগ করি।”
ফিহা মৃদু কন্ঠে বলে,,”কনগ্রাচুলেশন ভাইয়া আপনার রেজাল্ট এর জন্য।পাশাপাশি আমরা এই দোয়া করি সৃষ্টিকর্তার কাছে, আপনার রেজাল্ট যেভাবে সার্থক হয়েছে ঠিক তেমনিভাবে,আপনাদের সম্পর্ক টাও যেনো সার্থক হয়।আজকের মতই যেনো সারাজীবন আপনারা এইভাবে একে অপরের পাশে থাকতে পারেন।”
জারিফ বলে,, “থেংকিউ”
অরিন বলে,,”সামনে আমাদের এক্সাম আমাদের জন্য দোয়া করবেন। ওহ্ হ্যা শুধু আপনি লিয়ার জন্য দোয়া করবেন না, আমাদের জন্যও করেন। ভাববেন না লিয়াই শুধু আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী,আমরাও আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী।”
“শিয়র”
ফিহা শান্ত গলায় বলে,,”লিয়া কিন্তু খুব ভালো মেয়ে।আজকের এই দিনে আপনার সাথে পরিচিত হতে পেরে সত্যিই ভালো লাগছে।লিয়ার মুখে আপনার অনেক কথা শুনেছি।সেই সময় আপনাকে দেখার খুব ইচ্ছে হতো।একটা মানুষ সব দিক এতো ভালো হতে পারে।এখন আপনাকে দেখে,মনে হচ্ছে সম্পূর্ণ রুপেই সত্যি। বরং লিয়া মনে হয় আরো কমই বলেছে।আমরা ছোট হলেও দোয়া করি, আপনার এই সফলতা ধারাবাহিক ভাবে আল্লাহ যেনো রক্ষা করে।”
জারিফ হাতে থাকা ঘড়িতে সময় দেখে বলে,,”ধন্যবাদ তোমাদের কে।আসলে অনেকক্ষণ হলো আসছি।টাইমওভার হয়ে আসছে। এমনিতেও আমার কাজ আছে তাই এবার যেতে হবে।আমার পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য সামান্য ট্রিট।তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে মিষ্টি মুখ করে নিও।”
অরিন দ্রুত বলে উঠে,,”এই জিজু ওয়ান মিনিট ওয়ান মিনিট।আপনাদের দুজনের কাপল পিক নেবো।”
জারিফ পারমিশন দেওয়ার আগেই অরিন ফোন দিয়ে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে নেয়।জারিফ উঠে দাঁড়িয়ে ওদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”সবাই ভালো থেকো।ভালো ভাবে পড়াশোনা করো কেমন।”
জারিফ কথাগুলো বলে লিয়ার দিকে দৃষ্টি দিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয়।লিয়াও কিউট করে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয়।
জারিফ কে বিদায় দিয়ে,লিয়ারা তিনজন সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে নিলে তখন পিছন থেকে একজন ডাক দিয়ে বলে,,”হেই লিয়া।”
[চলবে…ইন শা আল্লাহ]