#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব১৭
“আমি যাকে মিস করি সেই মানুষটি তুমি,আমি যাকে লাইক করি সে আর কেউ নয় তুমি,আমি যাকে নিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে যেতে চাই সে হলো তুমি!আর আমি যাকে আমার নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি সে হলো শুধুই তুমি!আমার শ্বাস-প্রশ্বাস এর সাথে মিশে আছো তুমি তাই যে কোনো অবস্থাতেই আমার #শুধু_তোমাকেই_চাই
আমার এই জীবন টা যতোটা প্রয়োজন তার থেকেও বেশি প্রয়োজন তোমাকে। কারন আমার হৃদয়ের হৃদম সার্বক্ষণিক তোমার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।কয়েক যুগ পরেও যদি জানতে চাও।আমি কি চাই?সেদিনও আমি বলবো আমি শুধু তোমাকেই চাই।”
জারিফের কথা শুনে লিয়ার মনে প্রাণে শীতলতা বয়ে যায়।শরীরের প্রতিটি লোমকূপ শিহরিত হয়ে উঠে।এই তো একটু আগে লিয়া জারিফ কে উদ্দেশ্য করে বলছিলো,,”আপনি কিন্তু এখনো পর্যন্ত মুখ ফুটে আমাকে ভালোবাসেন সেই কথাটি বলেননি।অনেক কথাই হয়েছে আমাদের দুজনের বাট
এতটুকু বলে লিয়া থেমে যায়।জারিফ ভ্রু নাচিয়ে ইশারায় বোঝায় থেমে গেলে কেনো? কিয়ৎক্ষন পর জারিফ স্থিরভাবে পাশে বসা সপ্তদশী কিশোরীর দিকে নিরেট দৃষ্টি নিক্ষেপ করে শান্ত গলায় বলে,,”মুখে ভালোবাসি না বলে ভালোবাসা যায়না ।আমাকে দেখে তোমার কি মনে হয়।আমার চোখের ভাষা,তোমাকে দেখে আমার মুখের হাসি এগুলো তোমাকে কিসের ইঙ্গিত দেয়?
লিয়া ওড়নার কোণা আঙ্গুলে পেচাতে পেচাতে নরম গলায় বলে,,
“আমার চোখের নজর আপনার নজরে আছে।আমি আপনার থেকে চুপিচুপি আপনার চোখের ভাষা পড়ে নিয়েছি। তবুও আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই।আপনি কাকে ভালোবাসেন?আর কি চান?”
লিয়ার কথা শুনে জারিফ স্মিত হেসে মনের অভিব্যক্তি, মনের অনুভূতি প্রকাশ করে।জারিফের লিয়ার প্রতি গভীর ভালোবাসা, অনুভূতি,আকাংক্ষা সব শুনে লিয়া নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করে।লিয়া প্রিয় মানুষটার পানে শীতল চাহনি দিয়ে অস্ফুট স্বরে বলতে থাকে,,
“আপনি আমার মনে এমনভাবে জায়গা করে নিয়েছেন যে,নিজের আগে আপনার কথা মস্তিষ্কে আসে,মনে পড়ে।আর আমার সারাক্ষণ আপনার কথা ভাবতেই ভালো লাগে।আমার পুরো পৃথিবী একদিকে আর আপনি একদিকে।সব কিছু ছাড়তে আমি রাজি শুধু আপনাকে পাওয়ার জন্য। আপনার কাছে আমি বেশি কিছু চাইনা,আপনি শুধু সারাজীবন আমার পাশে থাকবেন।কখনো আমাকে একা করে চলে যাবেন না।”
জারিফ স্মিত হেসে লিয়ার একটা হাতের উপর আলতোভাবে হাত রেখে শান্ত গলায় বলে,,”তুমি আমার ভালো থাকার মেডিসিন।তুমি আমার সেই সুখ,যে সুখ আমাকে প্রতিটা মুহূর্ত বাঁচার জন্য অনুপ্রেরণা যোগায়।বড্ড বেশিই ভালোবাসে ফেলেছি তোমায়, কখনোই হারাতে চাই না তোমায়।আমার ভাগ্যে কি আছে আমি জানিনা!তবে একটা কথা বলতে পারি তুমি আমার মনেতে রয়েছো আর সারাজীবন থাকবে।”
এরমধ্যে জারিফের ফোন বেজে উঠে।জারিফ কল রিসিভ করে বলে,,”হ্যা রোহান বল।”
“আরে কোথায় আছিস তুই?”
“কেনো?কি হয়েছে?”
“কি হয়েছে মানে?আমরা সবাই আড্ডা দিচ্ছি তুই কোথায় হাওয়া হয়ে আছিস?কালকে রাতেই তো বলে রেখেছিলাম যে,বিকেলে বোটানিক্যাল গার্ডেনে আসার কথা। শা’লা তুই বেমালুম ভুলে বসে আছিস।”
জারিফ ভাবলেশহীন ভাবে শান্ত গলায় বলে,,”সরি দোস্ত আজকে হবে না।কালকে দেখা হবে।”
রোহান কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে জারিফ কল কে’টে দেয়।টাইম দেখে তারপর লিয়ার মুখ পানে শীতল চাহনি দিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে,,”বাসায় আন্টি তো টেনশন করতে পারে, তোমাকে তো ব্যাক করতে হবে।কি খাবে বলো?”
লিয়া দু দিকে ঘাড় নাড়িয়ে না বোধক জবাব দেয় তারপরে কপাল কুঁচকে জারিফের দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,,”আজকে কিছু খাবো না। আম্মু কে শপিং এর কথা বলে আসছি।তাই অন্তত কিছু কিনে নিয়ে যেতে হবে।একা একা মলে যেতে আমি অভ্যস্ত নই।তাই আপনি আমার সাথে চলুন।”
জারিফ উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,”ওকে চলো।”
গাঙ্গিনাপাড়ে নিউ মার্কেটের দোতলায় প্রাইড এর শো রুমে যায় ওরা। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শো রুমের ভেতরে গিয়ে কাস্টমার দের জন্য রাখা আসনে পাশাপাশি জারিফ আর লিয়া বসে পড়ে।লিয়া সামনে চোখ বুলিয়ে একটা সুতি থ্রি পিচ দেখিয়ে সামনে থাকা বয় কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”আচ্ছা এটা তো একটু ডিপ কালার।সেম ডিজাইনের একটু লাইট কালার হবে কি?”
বয়টি উপর থেকে থ্রি পিচ টা নামিয়ে মেলে ধরে এক নাগাড়ে গড়গড় করে বলতে থাকে,,”ম্যাডাম এই রং টায় আপনাকে খুব ভালো মানাবে।পাশে থাকা জারিফের দিকে তাকিয়ে হেসে আরো বলতে থাকে,,ভাইজান আপনি ভালো করে দেখেন ভাবিকে কিন্তু দারুণ মানাবে কালারটায়। একদম মনে হচ্ছে ভাবীর জন্যই এই কালারটা তৈরি হয়েছে।”
ছেলেটার কথা শুনে লিয়ার রা’গ হতে থাকে। কোথায় বললো লাইট কালার আছে কিনা,সেই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে,তখন থেকে বকবক করেই চলছে।হাজারটা বাক্য ব্যয় করলো অথচ আসল কথাটাই বললো না এখন পর্যন্ত।লিয়া বিড়বিড় করে বলে,,”অদ্ভুত লোক।সাথে বিরক্তিকর।”
জারিফ লিয়ার ফেসের দিকে তাকিয়ে বিষয়টা কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে। মিটমিট করে হেঁসে বলে,,”আপনার ভাবি বললো লাইট কালারের কথা।যদি লাইট কালার থেকে থাকে তাহলে দেখান আর না থাকলে এককথায় বলেন,নাই।”
ছেলেটা বেক্কেল এর মতো বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে বলে,,”আরে আছে তো ভাইজান। দাঁড়ান দেখাচ্ছি।এই ডিজাইনের মধ্যে যতগুলা কালার আছে সব বের করছি দাঁড়ান।”
জারিফের মুখ থেকে আপনার ভাবি কথাটা লিয়াকে বেশ লজ্জা আর অস্বস্তিতে ফেলে।তবে লিয়ার কাছে শুনতে মন্দ লাগেনি বরং এক রাশ ভালোলাগার অনুভূতি হয় হৃদয় কুঠরিতে।লিয়া মাথা নিচু করে রাখে।লোকটা পরপর কয়েকটা থ্রি পিচ বের করে সামনে ধরে।জারিফ মৃদু কন্ঠে লিয়াকে ডেকে বলে,,”লিয়া কালার চুজ করো।”
লিয়া ঠোঁট কামড়ে ধরে কোমল গলায় বলে,,”আপনি চুজ করে দিন।”
জারিফ লিয়ার কথার প্রতি উত্তরে বলে,,”আসলে এসব ব্যাপারে আমার আইডিয়া নেই।এই ফাস্ট এসেছি।তাই তুমি চুজ করো।”
লিয়া জিদ ধরে থাকায় অবশেষে জারিফ একটা হালকা কালার দেখিয়ে প্যাক করে দিতে বলে।তারপর ক্যাশ কাউন্টারের কাছে গিয়ে লিয়া পার্স খুলতে গেলে জারিফ লিয়াকে নিষেধ করে পকেট থেকে টাকা বের করে বিল পে করে।লিয়া জারিফ কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”স্যার আমার কাছে টাকা আছে।আমিই দিচ্ছি।আপনি রাখুন প্লিজ।”
জারিফ বলে,,”সমস্যা নেই।”
লিয়ার নিজের কাছে কেমন জানি খা’রাপ লাগতে শুরু করে।লিয়া ভাবে আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো,স্যার আমাকে বিল দিতে দিবে না।তাই শপিং করতে না আসলেই ভালো হতো।আবার আম্মু কে বলে আসছিলাম,কিছু না নিলে ওদিকে বাসায় গিয়ে আম্মুর কাছে সন্দেহের চোখে পড়তে হতো।”
জারিফ লিয়ার দিকে তাকিয়ে লিয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”আর কিছু লাগবে?”
লিয়া সাথে সাথেই দুদিকে মাথা নাড়িয়ে বলে,,”নাহ্, নাহ্।”
সিড়ি দিয়ে নামার সময় লিয়া হালকা কেশে বলে,,”দোকানদার লোকটা আমাকে ভাবি বললো।আপনি তখন কিছু না বলে,আরো আপনার ভাবি কথাটা বললেন কেনো?”
লিয়ার কথা শুনে জারিফ সটান দাঁড়িয়ে লিয়ার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে,,”কেনো?তুমি চাওনা আমার বউ হতে?আজ বউ হওনি কিন্তু ভবিষ্যতে তো হবে তাই ফিউচারের কথা ভেবেই তখন ওরকমটা বলেছি।আমার ফিউচার পিচ্চি বউ।ওপপসস সরি ভুল হয়ে গেলো, পেসেন্ট পিচ্চি প্রেমিকা আর ফিউচার পার্ফেক্ট বউ।”
লিয়া কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকে আর মুখে থাকে এক চিলতে লাজুক হাসি।জারিফের মুখ থেকে বউ শব্দটি লিয়ার কাছে অন্যরকম লাগছে।এই দুইটা অক্ষরের শব্দের মধ্যে কি আছে তা লিয়া জানে না।তবে প্রিয় মানুষটার মুখ নিঃসৃত বউ শব্দটা তাও আবার লিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলা এর থেকে ভালো শব্দ মনে হয় না লিয়ার ডিকশনারিতে আছে।লিয়ার কপালের উপর ছোট ছোট কিছু এলোমেলো অবাধ্য চুল ছিলো।জারিফ ঠোঁট গোল করে ফু দিয়ে সরিয়ে দেয়।এতে যেনো লিয়া জমে বরফ হয়ে যায়।বুকের ভেতর থাকা হৃদপিন্ড নামক যন্ত্রটা স্পন্দনের গতি ক্রমশ বাড়িয়ে চলছে।লিয়া মনে মনে বলে,কপালে আসা অবাধ্য চুলের মতই আজকাল লিয়ার মনটাও বড্ড বেশিই লিয়ার অবাধ্য।জারিফ লিয়ার লজ্জা রাঙা মুখটা দেখে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে হালকা কেশে বলে,,
“এহেম!এহেম!কি হলো এখানেই স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি?বাসায় যাবে না?নাকি আমার সাথে সোজা আমার বাসায় যাওয়ার প্ল্যান করছো?আপাতত এক থেকে দেড় বছরের আগে তোমাকে আমার বাসায় নেওয়া মনে হয় না পসিবেল হবে।”
লিয়া দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে লাজুক স্বরে বলে,,”সমস্যা নেই ওয়েট করবো আমি।আর আমিও বউ বেশেই যেতে চাই। আপনার পরিচয়ে পরিচিত হয়ে সবাইকে জানিয়েই সম্মান নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে যাবো।লুকিয়ে চুরিয়ে নয়, জনাব।”
জারিফ স্মিত হেসে বলে,,”আমি এপরিসিয়েইট জানাই তোমার চিন্তা ধারাকে।নো ডাউট তোমার ভাবনা সত্যি অনেক হাই।”
লিয়া মিষ্টি হেসে বলে,,”থেংকিউ।”
লিয়াকে রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে জারিফ বলে,,”বাসায় পৌঁছে ছোট্ট করে একটা মেসেজ দিয়ো।”
লিয়া মিষ্টি হেসে বলে,,”ঠিক আছে।বাই”
পরের দিন,,,,
আজকে সূর্যের প্রখরতা ভীষণ।খা খা করছে মধ্য দুপুর। গাছের সবুজ পাতা গুলোও অবসাদগ্রস্থ। জ্বলন্ত উত্তাপে টিকে থাকা মুশকিল।জারিফ আর ওর ফ্রেন্ডরা ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনের দিকে যেতে থাকে। সবারই কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। অবশেষে ক্যান্টিনে ঢুকে সবাই চেয়ারে বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।মাথার উপর ঘোরা বৈদ্যুতিক পাখার বাতাসে সবারই প্রাণ টা শীতল হতে থাকে।রুপকের কাজী ফার্ম এ চাকুরী হয়েছে,সেই উপলক্ষে রুপক আজকে ওদের কে ট্রিট দিচ্ছে।
জারিফ টিশার্ট এর কলার টা একটু ফাঁকা করে ঠোঁট গোল করে ফু দিতেই।রোহান জারিফের দিকে শান্ত চাহনি নিক্ষেপ করে গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়,,”কালকে বিকেলে আসলি না কেনো?কোথায় ডেটিং এ ছিলি যে, আসতে পারলি না।”
রোহান এর কথা শুনে খালি গলায়ও জারিফের বেষম লাগে।জারিফ খুকখুক করে কাশতে থাকে।সবাই ড্যাবড্যাব করে জারিফের দিকে তাকিয়ে থাকে। তাসনিম এক গ্লাস পানি জারিফের দিকে বাড়িয়ে দেয়।জারিফ ঢকঢক করে পানি খেয়ে মনে মনে ভাবে,,রোহান কি করে জানলো?নাকি আন্দাজে ঢিল ছুড়েছে।এখনই এদেরকে বললে সব কয়টা না খেয়ে দেয়ে আমার পিছনে লেগে থাকবে।তাই না বলাই বেটার হবে।”
জারিফ নিজেকে স্বাভাবিক করে রোহানের কথার উত্তর না দিয়ে,হালকা কেশে রুপকের উদ্দেশ্যে বলতে থাকে,,”কনগ্রাচুলেশন রুপক।তুই এত দ্রুত জবটা পাওয়াতে আ’ম ভেরি হ্যাপি।তা জব তো পেয়েছিস,এবার তোদের বিয়ের দাওয়াত কবে পাবো?”
রুপক কিছু বলার আগেই রোহান ভ্রু যুগল কুঞ্চিত করে সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জারিফকে বলে,,
“শা’লা জারিফ সত্যি তোর মতি গতি আমি বুঝতে পারছি না। তোর আবার কবে থেকে এসব বিয়ে টিয়ে নিয়ে এতো ইন্টারেস্টড হলো শুনি। ইদানিং দেখছি অনলাইনেও তোকে আগের তুলনায় বেশি দেখা যায়।তা মামা ব্যাপারটা কি?”
জারিফ অবাক গলায় বলে,,”আমি রুপক আর রোজের বিয়ের কথা বললাম এতে আমার বিয়ের ইন্টারেস্টেড কোথায় দেখলি তুই আশ্চর্য।”
রুপক গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,,”রোহান আমিও কিন্তু আশ্চর্য হচ্ছি।জারিফ কে দেখে নই তোকে দেখে।”
রুপকের কথা শুনে রোহান থতমত খেয়ে নড়েচড়ে বসে অবাকের সুরে শুধায়,,”আমাকে নিয়ে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে?মাথা ঠিক আছে তোর।”
রুপক গলা ঝেড়ে এক নাগাড়ে বলতে থাকে,,”এই যে তুই প্রতি কথায় কথায় জারিফ কে শালা সম্বোধন করিস।এটা কিন্তু মোটেও আমার সুবিধার ঠেকে না।”
রুপকের কথা শুনে রোহান আর জারিফ বাদে বাকিরা ঠোঁট চেপে হাসতে থাকে।রোহান শার্টের কলারে হাত দিয়ে ভাব নিয়ে বলে,,”জারিফ রাজি থাকলে আমি ওকে শা’লা বানাতে পারি।কি বলিস জারিফ?তোর একটা বোনকে আমার সাথে বিয়ে দিলে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ফ্রি তেই তোকে মামা ডাক শোনার ব্যবস্থা করে দেবো।তা রাজি আছিস জারিফ।”
জারিফ দুম করে রোহান এর পিঠে কিল দিয়ে বলে,,”শা’লা থামবি তুই।”
রোহান অসহায় ফেস করে করুণ গলায় বলে,,”শা’লা নয় দুলাভাই বল।তাই হবে।”
তাসনিম সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে শান্ত কন্ঠে বলে,,”রোহান কিন্তু একটা কথা ঠিকই বলেছে জারিফ।আমি নিজেও একটা বিষয় লক্ষ্য করছি।তুই কিন্তু আগের থেকে অনেকটা চেন্জ হয়েছিস।আমাদের গ্রুপ চ্যাটে আসিস না তেমন।এক কথায় বলা যায় আমাদের সবাইকে ইগনোর করে চলছিস।আমরা সবাই তোকে যতটা কাছের ভাবি তুই কিন্তু আমাদের কে অতটা কাছের ভাবিস না।”
জারিফ তাসনিম এর কথাটার বিরোধিতা করে সহজভাবে সোজাসুজি স্পষ্ট গলায় বলে,,”আরে নাহ্।কি বলছিস?আসলে মানুষের অবস্থা সব সময় তো আর একই রকম থাকে না।সময়ের সাথে সাথে মানুষের নেচার কিছুটা চেন্জ হয় এর জন্য অবশ্য ইনভায়োর্নমেন্ট দায়ি থাকে।তবে আমি শিয়রলি এতটুকু বলতে পারি, তোরা সবাই আগেও আমার কাছে যতটা কাছের আর গুরুত্বপূর্ণ ছিলি,আর ভবিষ্যতেও থাকবি।এখানে কোনো হের ফের হবে না।”
তাসনিম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে আওড়ায়,,”আমি সবাইকে বললেও মন থেকে শুধু আমার কথাটাই তোকে বোঝাতে চেয়েছিলাম যে,আমি তোকে যতটা আপন ভাবি তুই সেইভাবে আমাকে মূল্য দিসনি কখনো। কখনো আমাকে বোঝার চেষ্টাই করিস নিই।আসলে ব্যর্থ টা আমারই বুঝি?আমার ভালোবাসাই হয়তো দুর্বল।তাই আজও তোর নজর আমার নজরে পড়েনি।আমার মনের আকুতি,আমার চোখের ভাষা আজও তোকে বোঝাতে আমি সক্ষম হলাম না।”
রোজ তাসনিম কে এক হাত দিয়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলে,,”তুই আবার কোথায় হারিয়ে গেলি?কিছুই বলছিস না যে।”
তাসনিম নিজেকে তটস্থ করে একটু নড়েচড়ে বসে শান্ত গলায় রোজকে শুধায়,,”তোদের বিয়ের ডেট কবে?”
রোজ ব্যাকা চোখে রুপকের দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”রুপক জানে।আমি জানি না।”
রুপক গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,,”সবে মাত্র চাকরী টা পেলাম।ভাবছি কয়েকমাস পরেই বিয়েটা করি।বিয়েতে তো রোজের জন্য আপন জুয়েলার্স এর জুয়েলারি দিতে হবে।তা স্বর্ণ এর যে দাম এর জন্য টাকা লাগবে না।এই ভেবে বিয়ের ডেট পিছিয়ে দিয়েছি।আবার রোজের তো ইচ্ছে চৌদ্দ গুষ্টি কে নেমন্তন্ন করে বিয়ে করা।তো রোজের সব ইচ্ছে,আবদার পূরণ করার জন্য আমার একটু সময় দরকার।”
এরমধ্যে ওয়েটার টেবিলে খাবার নিয়ে আসে।ওরা সবাই কাচ্চি বিরিয়ানী খায়।
।
।
।
রাতে ডায়নিং এ বসে পরিবারের সবার সাথে খাবার খাচ্ছিলো জারিফ।জারিফের বাবা আইনাল হোসেন খাবার খেতে খেতেই জারিফ কে উদ্দেশ্য করে বলেন,,”জারিফ পড়াশোনা কেমন হচ্ছে তোমার?”
জারিফ খাবার চিবুতে চিবুতেই এক বাক্যে উত্তর দেয়,,”ভালো।”
আইনাল হোসেন গলা ঝেড়ে বলতে থাকেন,,”তা বাবা এবার চাকরির এর জন্য ট্রাই করো।আমার তো বয়স হচ্ছে,এবার তুমি সংসারের হালটা ধরো।”
বাবার কথা শুনে জারিফ কিছুটা চিন্তিত হয়। মায়ের অসুস্থতা,বোন দুইটার পড়াশোনা।আবার জেরিনের জন্য ভালো ছেলে দেখে বিয়ের ব্যবস্থা করা।আসলে আমাদের সমাজে যখন একটা মেয়ে বড় হতে থাকে,তাকে নিয়ে পরিবারের মাঝে একটা চিন্তা থেকেই যায়।ঠিকঠাক ভাবে মানুষ করে সুপাত্র দেখে বিয়ে দেওয়া।যতই মেয়েটা লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকুক না কেনো বাবা মা সহ পরিবারের দায়িত্ববান ভাই থাকলে সেও এই বিষয়টা নিয়ে কিছুটা চিন্তিত থাকে।এদিকে জারিফ নিজেও নতুন একটা সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে।সব মিলিয়ে জারিফ কিছুটা দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ে।জারিফ ওর বাবার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে চেয়ে নরম গলায় বলে,,”হুম। বিসিএস এর প্রস্তুতি নিচ্ছি। সামনের বিসিএস এ এটেন্ড করবো।দোয়া করো।”
আইনুল হোসেন খাবার শেষ করে রুমে চলে যান।জারিফের খাওয়া প্রায় শেষের দিকে,জারা আর জেরিন খাচ্ছে, জাহানারা বেগম পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন।এমন সময় হঠাৎ শব্দ করে জারিফের ফোনটা বেজে উঠে জারিফ বাম হাতে ফোনটা পকেট থেকে বের করে দেখতে পায় লিয়ার কল।জারিফ কল না কে’টে সাইলেন্ট করে রাখে।আর হাত ধুতে থাকে।পাশ থেকে জাহানারা বেগম বলেন,,”কল রিসিভ করলি না যে।কার ফোন ছিলো?”
মায়ের এহেন প্রশ্নে জারিফ ভ্যাবাচেকা খায় কি উত্তর দিবে সেই ভেবে। কিয়ৎক্ষন ভেবে নিয়ে জারিফ বলে,,”সিম কম্পানির ফোন ছিলো।”
জাহানারা বেগম শান্ত গলায় এক বাক্যে বলেন,,”ওহ্।”
বিষয় টা এখানেই শেষ হওয়ার কথা ছিলো।হয়তো হতোও তাই।কিন্তু তা না হয়ে জারিফ কে পড়তে হলো কিছুটা লজ্জা আর অস্বস্তিতে মা আর ছোট বোনদের সামনে।জারিফের পাশের চেয়ারে আরামচে চিলমুডে বসেই খাবার খাচ্ছিলো জেরিন।জারিফ ফোনটা হাতে নিয়েছিলো,সেই সময় জেরিনের দৃষ্টি ফোনের উপর পড়েছিলো আচমকা।
জেরিন আড়চোখে জারিফের দিকে তাকিয়ে গমগমে স্বরে বলতে থাকে,,”তা আজকাল মানুষ সিম কোম্পানির নম্বরও বুঝি লাইফ লাইনে রাখে ভাইয়া।”
জারিফ পানি খাচ্ছিলো সেই সময় জেরিনের এমন কথায় জারিফের কাশি উঠে,আর মুখে থাকা পানিও গলায় আটকে যায়। জাহানারা বেগম আলতোভাবে জারিফের মাথায় হাত রাখেন আর চিন্তিত গলায় শুধালেন,,”জারিফ বাবা ঠিক আছিস।তারপর জেরিনের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে গম্ভীরভাবে বলে,এই মেয়ে টা আসলেই বেশি কথা বলে। বারবার বলি খাওয়ার সময় অন্তত মুখ টাকে একটু চুপ রাখ।”
হালকা কাঁশতে কাঁশতেই জারিফ চেয়ার থেকে উঠে দ্রুত ওখান থেকে প্রস্থান করে ওর রুমে চলে যায়।জারা জেরিনের দিকে তাকিয়ে রাখি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মনে মনে আওড়ায়,,”গাধী একটা। শুধু বয়সে আর হাত পায়ে বড় হয়েছে বুদ্ধিতে নয়।আমার থেকে বয়সে বড় হতে পারে বাট বুদ্ধিতে নয়।যখন দেখলি ভাইয়া মিথ্যে বলেছে,এর পিছনে হয়তো কোনো কারণ আছে।আর এইভাবে মায়ের সবার সামনে বলতে হয় নাকি? কিউরিওসিটি থাকলে কোনো এক সময় ভালো মূহূর্তে ভাইয়ার সাথে বসে জিগ্গেস করে জানা যেতো,আসলে লাইফ লাইনের মানুষ টা কে। নিশ্চয় ভাইয়ার স্পেশাল কেউ হবে।”
প্রায় এক সপ্তাহ খানেক পর,,,,
সন্ধ্যার দিকে ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসে ফোন স্ক্রল করছিলো লিয়া।এ কয়দিনে জারিফের সাথে দেখা হয়নি। শুধু ফোনেই কথা হয়। জারিফ কে দেখার প্রবল ইচ্ছে থাকে,বাট ইচ্ছে টাকে চাইলেই কি আর পূরণ করা যায়? চাইলেই লিয়া হুটহাট করে বাসা থেকে বের হতে পারে না। কারন লিয়ার রিসটেকটেড ফ্যামেলি থেকে মন মতো একা একা বাইরে যাওয়ার অনুমতি মিলে না।আর বাইরে যাওয়ার জন্য সব সময় অজুহাতও তো দেওয়া যায় না।বেশি অজুহাত তোমাকে সন্দেহের তোপে নিয়ে যেতে পারে।আর লিয়া এখনই পরিবারের কারো চোখে সন্দেহের চোখে পড়তে চায়না।তাই জারিফকে দেখার ইচ্ছে থাকলেও, ইচ্ছে টাকে দমিয়ে রাখে।আজ সারাদিন জারিফের সাথে কথা হয়নি,লিয়া একটু আগে জারিফ কে মেসেজ দিয়েছিলো।বাট জারিফ অনলাইনে নেই। লিয়া মুখটা মলিন করে এফবিতে ঘুরাঘুরি করছিলো।সেই সময় রাহবার এসে লিয়ার পাশে বসে বলে,,
“এই আপু এই অংক টা একটু বুঝিয়ে দেতো।আমি বুঝতে পারছি না।”
লিয়া ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাহবার এর দিকে তাকিয়ে বলে,,”কোনটা?”
লিয়া রাহবার কে অংক বোঝানোর মাঝে হঠাৎ কিছু একটা ভেবে কলম কামড়ে ধরে বলে,,”ভাই তোর স্যার আজকে কোচিং এ আসছিলো?”
রাহবার কপাল কুঁচকে লিয়ার দিকে সরু দৃষ্টি নিক্ষেপ করে স্পষ্ট স্বরে বলে,,”কোন স্যারের কথা বলছিস?স্যার তো অনেক আছে।নাম না বললে বুঝবো কি করে।”
লিয়া গলা ঝেড়ে বলতে থাকে,,”আরে তোর কয়টা স্যারকে চিনি আমি যে সবার কথা বলবো,জারিফ স্যারের কথা বলছি।”
রাহবারের কপাল আরো খানিকটা কুঞ্চিত হয় ব্যাকা চোখে তাকিয়ে বলে,,”হ্যা আসছিলো।আজকে স্যারের ক্লাস ছিলো তো।”
লিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”ওহ্। কিয়ৎক্ষন পরে মৃদু আওয়াজে আরো বলে,তা ভাই তুই তো আম্মু কে বলে তোর স্যারকে নাস্তার জন্য ইনভাইট করতে পারিস।”
রাহবার দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই।আমার টিচারদের বাসায় ইনভাইট করতে যাবো।আর শুধু শুধু আমি ওতো স্যারদের ইনভাইট করতে যাবো কেনো শুনি?”
লিয়া বিরক্তিকর ফেস নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”আরে ওতো স্যার দের ইনভাইট করতে যাবি কেনো। প্রিয় স্যার কে।যেমন ধর জারিফ স্যারের মত প্রিয় স্যারকে তুই ইনভাইট করতেই পারিস।ঠিক বলেছি না।”
রাহবার ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে,,”এই আপু বুঝলাম না,আজ হঠাৎ আমার সাথে এতো মিষ্টি সুরে কথা বলছিস যে,আর তোকে কখন আমি বললাম যে জারিফ স্যার আমার প্রিয় স্যার।”
লিয়া অসহায় ফেস করে করুণ গলায় বলে,,”জারিফ স্যার তোর প্রিয় টিচার নয়,ভাই।জারিফ স্যারকে তোর ভালো লাগেনা।”
রাহবার ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,”আমি তা বলছি না যে,জারিফ স্যার কে আমার পছন্দ নয়।জারিফ স্যার আমার একজন ফেবরিট টিচার।তবে এরকম ফেবরিট টিচার আমার আরো কয়জন আছে।আর তোর যদি জারিফ স্যার কে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে ইচ্ছে করে,তুই ই দাওয়াত টা দেনা,তোরও তো টিচার উনি ।আর আমার এতো ইন্টারেস্টড নেই এসবে।”
লিয়া দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে আওড়ায়,,”আমি যদি পারতাম ওনাকে ইনভাইট করতে তাহলে কি তোকে বলতাম নাকি।”
রাহবার সন্দেহের চোখে তাকিয়ে গম্ভীরভাবে বলে,,”আমি বুঝলাম না আপু তুই হঠাৎ জারিফ স্যারকে নিয়ে এসব বলছিস। জারিফ স্যারকে নিয়ে তোর এতো ইন্টারেস্টড কিসের আমি বুঝতে পারছি না।”
লিয়া রাহবারের কথা শুনে একটু নড়েচড়ে বসে হালকা হাসার চেষ্টা করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”তোকে এত কিছু বুঝতে হবে না ভাই।তুই না অংক টা বুঝতে আসছিস।এখন অংক টাই বোঝ কেমন।”
এরমধ্যে কলিং বেলের শব্দ হওয়ায় রাজিয়া সুলতানা গিয়ে দরজা খুলে দেন। এনামুল খাঁন এসে সিঙ্গেল সোফায় বসে পড়েন।তারপর হাতে থাকা দুইটা চকলেট বক্স একটা লিয়ার দিকে আরেকেটা রাহবারের দিকে বাড়িয়ে দেন। রাহবার লিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”আ্যই আপু তুই তো বড় হয়ে গিয়েছিস, এখনো যদি চকলেট খাস তাহলে তোর দাঁতে পোকা লাগবে কিন্তু।”
লিয়া ভেংচি কেটে বলে,,”আমার দাঁত নিয়ে তোকে ভাবতে হবে না।তুই তোর আকা বাকা দাঁত নিয়ে ভাব।”
এরমধ্যে এনামুল খাঁন এর ফোনটা বেজে উঠে।ফোন রিসিভ করে সালামের উত্তর দিয়ে গম্ভীরভাবে বলে,,”হ্যা অভ্র বলো।কেমন আছো বাবা?
অভ্র নামটা শুনে লিয়ার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো।সাথে রা’গ হচ্ছে প্রচন্ড। লিয়া কানটা খাড়া করে রাখলো শোনার জন্য।
ফোনের ওপাশ থেকে অভ্র ভদ্রভাবে একদম নরম কন্ঠে বলে,,
“কেমন আছেন আঙ্কেল? আন্টি কেমন আছেন?”
“হ্যা সবাই ভালো আছে।তোমার বাবা মা কেমন আছে?”
“সবাই ভালো আছে আঙ্কেল।বাবা বলছিলো আপনার আসার কথা।একদিন সময় করে বেড়াতে আসেন।”
এনামুল খাঁন নম্র গলায় বলেন,,”অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছি।তা বাবা তোমরা এসো নাহয় ঘুরতে।”
এনামুল খাঁন সৌজন্যতার খ্যাতিরে কথাটা বলেছিলেন।অথচ ফোনের ওপাশের ব্যক্তি মনে হয় এই কথাটার অপেক্ষায় ছিলো। অভ্রর মনে হচ্ছে আকাশের চাঁদ পাওয়ার মত অফার পেয়েছে। আর এই অফার টা কোনো মতেই হাত ছাড়া করা যাবে না। উঁহু কিছুতেই না। অভ্র সাথে সাথেই অফার টা লুফে নিয়ে। নির্বিকার ভঙ্গিতে সোজাসুজি সহজভাবেই বলে,,
“ঠিক আছে আঙ্কেল। আমি কালকে সময় বের করে একবার আপনাকে দেখতে যাবো।”
এনামুল খাঁন ফর্মালিটিজ মেইনটেইন করতে বলেন,,”ওকে।”
লিয়ার রাগের পারদ টা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। মনে হচ্ছে হাতের কাছে অভ্র টাকে পেলে কি করতো তা লিয়া নিজেও জানে না।ফোনের ওপাশের কথা লিয়া স্পষ্ট সবটাই শুনেছে।ফোনের স্পিকার জোরে হওয়ায়। লিয়ার আব্বুর উপরেও লিয়ার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।লিয়া রাগে হাঁসফাঁস করছে শুধু।চকলেট বক্স টা দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে, রা’গ কন্ট্রোল করার বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এনামুল খাঁন রাজিয়া সুলতানা কে ডেকে কালকে অভ্র আসতে পারে সেই কথা বলার সাথে সাথেই।রাজিয়া সুলতানা কিয়ৎক্ষন ভেবে বেশ শান্ত ভাবেই গম্ভীর কন্ঠে বলে,,”বলছিলাম যে এখনই আসা যাওয়া এটা ঠিক হবে কি?আর আসাটা কি খুব জরুরী?”
এনামুল খাঁন গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,,”আমি সৌজন্যতার খ্যাতিরেই বলেছিলাম।কারন এসব নিয়ে আমি নিজেও এখনই লিয়াকে ডিস্টার্ব করতে চাইনা।বাট ছেলেটা বললো,তাই আর না করতে পারলাম না।আর একজন মানুষ আসতেই পারে।এতে করে এখনই সব কিছু হবে এমন নয়।আসবে ঘুরে চলে যাবে। এটাকে এতো জটিল ভাবার কিছু নেই। একজন মানুষ আরেকজনের কাছে আসতেই পারে।আর ছেলেটার ব্যবহার খুবই অমায়িক।ওর কথা বার্তা সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করে। এখন কার যুগ অনুপাতে অনেকটা ইউনিক।”
লিয়া আর এসকল কথা নিতে পারছে না। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে আসছে। রা’গ ক্ষোভে চোখ বন্ধ করে নেয়।
[চলবে…ইন শা আল্লাহ]