#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব২৪
“বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে রোহান আর জেরিন এর বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে রোহান আবার এদিকে বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে তাই দুই পক্ষেই ছিলো বড়সড় আয়োজন।জারিফের বাড়ি থেকে বিয়েতে পজেটিভ মতামত দেওয়ার পর রোহান এর বাড়ি থেকে দ্রুত বিয়ের ডেট দেয়।এ কয়দিন ছোট বোনের বিয়ে নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলো জারিফ।বড় ভাই হিসেবে অনেক দায়িত্ব ছিলো।এই ব্যস্ততার মাঝে লিয়ার সাথে ঠিকমতো যোগাযোগ হয়নি।ফোনালাপ ও হয়েছে খুব কমই।আজ শুক্রবার। রবিবার থেকে জারিফকে জয়েন করতে হবে।তাই আগামীকাল শনিবারে যশোরের উদ্দেশে রওনা দিবে।
ওদিকে লিয়া গাল ফুলিয়ে আছে।কারন জারিফের যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে আর এদিকে জারিফের সাথে যোগাযোগ নেই তেমন,দেখা নেই।লিয়া বিষয়টাতে আহত হয়েছে।আজ দুপুরে জারিফ লিয়ার কাছে ফোন দিয়ে অনেকক্ষণ বোঝানোর পর অভিমানটা কিছুটা হলেও কমেছে।ছোট বোনের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত ছিলো সে সব যেনো ফোনে কয়েকবার বলার পর লিয়ার অভিমানের বরফ গলতে থাকে।সব শেষে জারিফ যখন বলে,,”তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।যাওয়ার আগে তোমার মিষ্টি মুখটা দেখে যেতে চাই।আমার ইচ্ছে টা পূরণ হবে কি?”
লিয়া সেই সময় কিছুক্ষণ নীরব থাকে।অভিমান নিয়ে প্রথমে এক্টিং করে দেখা করতে যেতে রাজি হয় না।কিছুক্ষণ পরে জারিফ কে অবাক করে দিয়ে আদেশের সুরে বলে,,”বিকেল চারটার সময় সার্কিট হাউসের পাশের পার্ক টায় যেনো গিয়ে দেখি, ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব কে।”
লিয়ার কথার প্রতি উত্তরে জারিফ ফোনের ওপাশ থেকে শব্দহীন হেসে সফট ভয়েজে বলে,,”ওকে জান।আই শ্যাল ওয়েট ফর ইউ।”
ঘড়ির কাঁটা তিনটার ঘর পেরিয়েছে।রাজিয়া সুলতানা ওনার রুমে ছিলেন।ছাদ থেকে শুকনো কাপড় চোপড় তুলে এনে ভাঁজ করে রাখছিলেন।একটা শাড়ি হাতে নিয়ে ভাঁজ করছেন।সেই সময় লিয়া এসে বিছানায় বসে বিভিন্ন কথা বলতে থাকে।রাজিয়া সুলতানা ভাঁজ করা কাপড় গুলো ওয়ারড্রোব এ রেখে বিছানায় বসতেই লিয়া পায়ের নখ দিয়ে ফ্লোর খুঁটতে খুঁটতে মৃদু আওয়াজে বলে,,”আম্মু বিকেলে ঘুরতে যাবো।”
লিয়া নিজেও জানে ওর আম্মু না করবে না।তারপরেও লিয়া পারমিশন নিয়েই যায়। রাজিয়া সুলতানা ভাবলেশহীন ভাবে স্পষ্টভাবে শুধালেন,,”জারিফ যশোর যাচ্ছে কবে?”
মায়ের এমন প্রশ্নে লিয়া কিছুটা অস্বস্তিতে পড়ে।যদিও লিয়া নিজেই জারিফের পোস্টিং এর কথা মাকে বলেছিলো।লিয়া জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে মৃদু আওয়াজে বলে,,”কালকে যাবে।পরশু দিন জয়েন করবে।”
রাজিয়া সুলতানা হালকা কেশে শান্ত গলায় বলেন,,
“এইজন্য তো বলি আমার মেয়েটা ইদানিং খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দিয়েছে। সারাক্ষণ মুখটা মলিন করে রাখে,কেনো?”
লিয়া লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে দৃষ্টি নিচু করে বলে,,”আহ্, আম্মু।আমি মাঝে মাঝে বুঝতে পারিনা তুমি আমার মা না তুমি আমার বান্ধবী?”
রাজিয়া সুলতানা লিয়ার দুই গাল টেনে দিয়ে হাস্যোজ্জ্বল মুখে নরম গলায় বলেন,,”খুব তো বড় হয়ে গিয়েছিস।বড় বড় কথা বলতে শিখেছিস। আচ্ছা ঠিক আছে যা। কিন্তু একটু দ্রুত চলে আসিস।তোর দাদিমনি আছেন। বুঝতেই তো পারছিস। নানান কথার সৃষ্টি করবেন।”
লিয়া হাসি মুখে আনন্দিত কন্ঠে বলে,,”ঠিক আছে আম্মু। থেংকিউ।”
লিয়া রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়ে ড্রয়িংরুমের সামনে দিয়ে যেতেই, হঠাৎ কর্ণগোচর হয় গম্ভীর গলায় হাঁক ছেড়ে ডাক। জান্নাত বেগম সোফায় বসে ছিলেন লিয়াকে যেতে দেখে হাঁক ছেড়ে শুধালেন,,”এই লিয়া।”
বাইরে যাওয়ার সময় পিছু ডাকে লিয়া কিঞ্চিত বিরক্ত হয়।পিছন ঘুরে জান্নাত বেগমের দিকে এগিয়ে গিয়ে। বিরক্ত ভাবটা বুঝতে না দিয়ে,জোর করে হালকা হাসি মুখে টেনে এনে ঠোঁট চেপে বলে,,”হ্যা বলো দাদিমনি।”
জান্নাত বেগম লিয়ার পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে।লিয়া পার্পেল কালারের একটা গাউন পড়েছে।চোখে চিকন করে কাজল দেওয়া ঠোঁটে পিংক কালারের লিপবাম দেওয়া, চুলগুলো খোলা।লিয়াকে পরখ করে জান্নাত বেগমের কপালে বেশ কিছু ভাঁজ পরে। মুখাবয়ব গম্ভীর করে কঠোর গলায় শুধালেন,,”তা এই বিকেল বেলা এত সাজ গুজ করে কোথায় যাচ্ছিস শুনি?”
কথাটা লিয়ার কর্ণদ্বয় ভেদ করে মস্তিষ্ক পর্যন্ত যেতেই লিয়া আশ্চর্য হয়।লিয়া মনে মনে ভাবে,,আরেহ বাবা দাদিমনি সাজ গোজের কি দেখলো?আমি বাসায় যেমন থাকি তেমনই তো আছি।হ্যা,শুধু আজকে একটু কাজল দিয়েছি। তাছাড়া তো সব সময়ের মতোই আছি।এইটুকু দেখেই বলছে,এত সাজগোজ করেছি।আর সত্যি যদি সাজগোজ করতাম।তখন দাদিমনি কি বলতো? আল্লাহ মালুম।এসব ভেবে লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ে।
এসব কিছু মনে মনে বললেও লিয়া বেশ ভদ্রভাবে শান্ত কন্ঠে উত্তর দেয়,,”আসলে দাদি মনি,একটু দরকার আছে।আর সামনে তো এডমিশন টেস্ট আছে,তাই লাইব্রেরীতেও মাঝে মাঝে যেতে হয়।”
জান্নাত বেগম কুঞ্চিত কপালটা কিছুটা সরল করে গম্ভীর গলায়ই বলেন,,”তা বাইরে যাবি ঠিক আছে। কিন্তু এইভাবে চুল ছেড়ে দিয়ে যাওয়া তো ঠিক না।”
লিয়া কিছু না বলে মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে। জান্নাত বেগম মনে মনে বলে,,জানি তো এখনকার মেয়েরা এসব ফ্যাশন না-কি কি বলে?তাই করে বেড়ায়।গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন,,”আচ্ছা ঠিক আছে,যা।তবে সন্ধ্যার আগেই চলে আসিস।”
লিয়া এতক্ষণ যাবত এই কাংখিত বাক্যটির জন্য অপেক্ষা করছিলো। জান্নাত বেগমের বলতে দেরি লিয়ার পা বাড়াতে দেরি হয়না।লিয়া দরজা খুলতে যাবে,এমন সময় রাহবার এসে ডেকে বলে,,”আ্যই আপু তুই কোথাও যাচ্ছিস?”
লিয়া বিরক্তিকর গলায় দাঁতে দাঁত পিষে বলে,,”দেখতে পাচ্ছিস না?তোর চোখ নেই,ভাই?”
রাহবার ভাবলেশহীন ভাবে বলে,,”চোখ আছে জন্যই তো বললাম।চোখ না থাকলে তো দেখতে পারতাম না,আর তখন বলা হতোই না।”
লিয়া কর্কশ গলায় বলে,,”হয়েছে তোর কথা।আর কিছু বলার হলে দ্রুত বলে ফেল।এমনি আমার লেইট হয়ে গিয়েছে।”
রাহবার ইন্নোসেন্ট ফেস করে আবদারের সুরে বলে,,”আ্যই আপু আমার বাসায় একা একা বোর লাগছে।তাই বলছি তোর সাথে বাইরে যাবো।আর আমার খুব আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে।”
লিয়া মৃদু রা’গ দেখিয়ে চোখ রাঙিয়ে বলে,,”এই শীতের দিনে কেউ আইসক্রিম খায় নাকি? আচ্ছা তোর যখন খেতে ইচ্ছে করেছে।আমি নিয়ে আসবো।ঠিক আছে।”
রাহবার ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে,,”তোর যেনো কোল্ড এলার্জি। সেইজন্য কোল্ড কিছু খেতে পারিস না। কিন্তু আমার তো প্রবলেম নেই।তাই সব ঋতুতেই আমি কোল্ড সব কিছু খেতে পারি।”
লিয়া কাঁদো কাঁদো ফেস করে ঠোঁট চেপে বলে,,”দরকার পড়লে তুই বরফে ঢাকা হিমালয় পর্বত টা খেয়ে ফেলিস।তাতে বিন্দু মাত্র আমার হেডেক থাকবে না।এখন দয়া করে পথ ছাড়,ভাই।”
“পথ ছাড়বো কি?আমি তোর সাথে বাইরে যাবো।বাসায় বসে ভিডিও গেইম এসব খেলতে আর ভালো লাগছে না।”
লিয়া কঠোরভাবে বলে,,”তুই কানের পাশে ঘ্যানঘ্যান করা বন্ধ করে যাবি?নাকি আমি আম্মু কে ডাকবো?”
রাহবার ঠোঁট উল্টে বলে,,”আম্মু কে ডাক। আম্মু কি তোর একার না-কি?যে আমি ভ’য় পাবো।”
লিয়া ঠোঁট মেলে ডাকতে যাবে।তখন রাহবার ব্যতিব্যস্ত গলায় বলে,,”আ্যই আপু থাম থাম হয়েছে। আম্মু কে ডাকতে হবে না।আমি জানি আম্মু আসলে ঠিক তোর পক্ষ নেবে।তাই শুধু শুধু তোর সাথে কথা বলাই বেকার।আমি বুঝিনা কেনো যে, আম্মু আমার থেকে তোর কথা বেশি শোনে?”
লিয়া যেতে যেতে বলে,,”কারন আমি আম্মুর মেয়ে।আর তোকে তো নদীর পাশ থেকে কুড়িয়ে পেয়েছিলো সেইজন্য।”
লিয়া পার্কে গিয়ে দেখে জারিফ বসে ফোন স্ক্রল করছে।লিয়া জারিফের পাশে বসে।জারিফ ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে লিয়ার দিকে এক নজর তাকিয়ে আবার ফোনে দৃষ্টি দেয়।লিয়া মুখটা ম্লান করে মৃদু আওয়াজে বলে,,”সরি।”
মনে হয় না কথাটা জারিফের কর্ণগোচর হয়েছে।কারন জারিফ ওরকমভাবেই ভাবলেশহীন ভাবে ফোনে কিছু একটা করছে।লিয়া ভাবে লেইট করে আসার জন্য স্যার আবার রা’গ করেনি তো?লিয়া হালকা কেশে ঠোঁট নেড়ে বলে,,”সরি বলছি তো লেইট হওয়ার জন্য।আর আপনাকে এতক্ষণ ওয়েট করানোর জন্য। প্লিজ রাগ করে থাকবেন না। আধা ঘন্টাই তো বসিয়ে রেখেছি,এটা কি মাফ করা যায় না?”
জারিফ ফোনটা পকেটে পুরে।লিয়ার দিকে নিষ্পলক চাহনিতে চেয়ে শান্ত গলায় বলে,,”ব্যাপার না।আমি একটা মেইল সেন্ট করলাম।আর কি বলছিলে যেনো,মাফ করা যায়না। সামান্য একটু দেরি হয়েছে এইতো।তোমার জন্য আমার কাছে সব কিছু মাফ।সাত খু’ন নয়, সহস্র খু’ন নয়,তোমার জন্য সব খু’ন মাফ। এবার পেয়েছো আনসার।আমার চোখে তোমার থেকে সুন্দর আর কিছু নেই।তোমার ফেসের দিকে তাকালে আমি আমার আত্মার শান্তি খুঁজে পাই।তোমার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে কখনো রা’গ করে থাকা যায়।”
জারিফের কথায় লিয়া ঠোঁট চওড়া করে হাসে।লিয়া মৃদু আওয়াজে বলে,,”আন্টি আঙ্কেল কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে।তবে আম্মুর মনটা বেশি সময় খা’রাপ থাকে।যেটা আমি আম্মু কে দেখে বুঝতে পারি।জেরিন নেই,আবার এদিকে আমার পোস্টিং এত দূরে হয়েছে সেইজন্য।”
লিয়া ম্লান গলায় বলে,,”হুম।ঠিক এইজন্য আমার নিজেরও খুব কান্না পাচ্ছে।এত দূরে আপনার পোস্টিং কেনো হলো? ময়মনসিংহে হলে খুব ভালো হতো।”
জারিফ শান্ত গলায় বলে,,”মন খা’রাপ করো না।আর সামনে তো তোমার এডমিশন টেস্ট।তাই ভালো ভাবে প্রিপারেশন নিও,সকল দুশ্চিন্তা দূর করে।তোমার ফাস্ট চয়েজ কিসে?”
লিয়া চঞ্চল গলায় এক কথায় বলে,,”মেডিকেল এ।”
জারিফ ঠোঁট মেলে বলে,,”ভালো।”
জারিফের সাথে কিছু সময় গল্প করে লিয়া বলে,, “আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে।দাদিমনি আছেন তো সেইজন্য।বেশি দেরি করলে।দাদিমনি এটা সেটা প্রশ্ন করতে থাকবে।হাজারটা জেরা করবে।”
জারিফ হাতে থাকা রিচ ওয়াচে সময় দেখে নিয়ে বলে,,”ওকে।তোমাকে খুব মিস করবো।আমি অন্য
বিভাগে শতশত কিলোমিটার দূরত্বে থাকলেও আমার মনটা পড়ে থাকবে এই শহরে।কারন এই শহরে আমার সোলটাকে রেখে যাচ্ছি।”
কথাটা বলে লিয়ার কপালে আসা এলোমেলো চুল গুলো ফু দিয়ে সরিয়ে দেয় জারিফ। লিয়ার দিকে ঝুঁকে স্লো ভয়েজে বলে,,”কাজল চোখে তোমাকে আরো বেশি মায়াবী লাগছে।যদিও অনেক আগেই আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি তোমার মায়াবী চোখের মাঝে। তবুও আজ আরো বেশি মুগ্ধ হচ্ছি তোমার রুপে। তোমাকে সদ্য ফোঁটা গোলাপের পাপড়ির ন্যায় স্নিগ্ধ লাগছে।তুমি আমার স্নিগ্ধ পরি।জানিনা তোমার মাঝে কি আছে? তুমি মিশে আছো আমার নিঃশ্বাসে।”
জারিফের কথা গুলো লিয়া কর্ণ দিয়ে শুনলেও হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে থাকে।জারিফ উৎকন্ঠিত গলায় বলে,,” তুমি আমার লাইফে আসার পরে,কেনো জানিনা আমি তোমাকে হারানোর ভ’য় পাই।সাধারণত কথার কথা, প্রিয় বস্তু নাকি কারোর হয়না,হলেও নাকি খুব কষ্ট করে পেতে হয়।আবার প্রিয় বস্তু রাখাও যায়না রাখতে হলে খুব কষ্ট করেই রাখতে হয়। শেষমেষ কপালে কি আছে?তোমার সাথে ঠিকমতো কথা না হলে,কোনো কিছুতেই আমার ভালো লাগে না।আমি জানিনা তোমার সাথে শেষ পর্যন্ত থাকতে পারবো কিনা? কিন্তু সব শেষে একটা কথাই বলতে চাই ভালো থাকার জন্য আমার শুধু তোমাকেই চাই।তুমি নামক এপ্রোপ্রেইট ওয়ার্ড টাই চাই।কোনো সিনোনেম ওয়ার্ড দিলেও হবে না।আর সেই এপ্রোপ্রেইট ওয়ার্ড হলো তুমি,শুধুই তুমি।”
লিয়া জারিফের হাতের উপর আলতোভাবে একটা হাত রেখে কোমল স্বরে বলে,,”জীবন শুরু করেছিলাম বাবা মায়ের হাত ধরে।আর জীবনটা শেষ করতে চাই আপনার হাত ধরে। আপনার শুণ্য থেকে শেষ অব্দি আমিই থাকতে চাই।হাজারো ভিড়ের মাঝে আমার শুধু আপনাকেই চাই।”
জারিফ আর লিয়া পাশাপাশি হাত ধরে ধীর পায়ে হেঁটে রাস্তার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।
প্রতিরক্ষা সচিব অফিসিয়াল কাজে ময়মনসিংহে আসছেন। বর্তমানে সার্কিট হাউসে অবস্থান করছেন।লিয়ার বাবা এনামুল খাঁন অফিসিয়ালি দেখা করতে আসছিলেন সার্কিট হাউজে সচিব স্যারের সাথে।দেখা করে যাওয়ার সময় হঠাৎ ওনার দৃষ্টি যায় রাস্তার পাশে দাঁড়ানো লিয়ার দিকে।একনজর দেখে ওনার মনে হয়,লিয়াকে দেখলাম।বিষয়টা শিয়র হওয়ার জন্য উনি সাথে সাথে ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরাতে বলেন।কারন উনার ভাবনার মাঝেই গাড়ি কিছুটা দূরে চলে যায়।ড্রাইভার গাড়ি ব্যাক করে একটু পিছনে যেতেই এনামুল খাঁন ব্রেক চাপতে বলেন।
পড়ন্ত বিকেলে পরিবেশ টা বেশ চমৎকার।জারিফ লিয়ার মনটাও বেশ চমৎকার। দু’জনের মনের মাঝেই আছে প্রিয়জন থেকে দূরে থাকার দুশ্চিন্তা।তবে আপাতত এখন পাশাপাশি দুজন থাকার সময় টুকুতে সেই দুশ্চিন্তার ছাপ ফেলতে চায়না।এই সুন্দর সময়টুকু দুজনে উপভোগ করতে চায়, হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে চায়।আরো চায় ক্যামেরা বন্দি করতে।তাইতো লিয়া জারিফের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন ভঙ্গিমায় সেলফি তুলতে থাকে।
এনামুল খাঁন গাড়ির জানালা দিয়ে দৃষ্টি দিয়ে দেখতে পান, রাস্তার ওপাশে লিয়া জারিফের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সেলফি তুলছে।এটা দেখে উনার কপালের রগ ফুলে উঠে। ফর্সা মুখাবয়বে নেমে আসে কালো ছায়া।হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আসে।জারিফ কে চেনেন লিয়ার টিচার হিসেবে। বাসায় ওনার সাথে কয়েকবার দেখা হয়েছিলো। একটা ইয়াং ছেলে মেয়ে কে পাশাপাশি দেখে ওনার বুঝতে বাকি থাকে না বিষয়টা।এনামুল খাঁন গম্ভীর গলায় ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলেন।কপালের রগ গুলো দপদপ করে ফুলতে থাকে।উনি মনে মনে ভাবেন,লিয়া এখানে।লিয়ার আম্মু কি এ ব্যাপারে কিছুই জানে না?আমার তো লিয়ার উপর অগাধ বিশ্বাস ছিলো?আমাদের ফ্যামেলি কালচার, শিক্ষা এসব কিছু থেকে কখনো বিচ্যুত হবে না। সর্বোপরি লিয়া নিজেও জানে,আমি অভ্র কে পছন্দ করেছি,তারপরেও আজকে যা দেখলাম।সেটা কিকরে সম্ভব?
ঘড়ির কাঁটা রাত আটটার ঘরে। কলিং বেলের শব্দ হওয়ায় রাজিয়া সুলতানা গিয়ে দরজা খুলে দেন। এনামুল খাঁন কোনো কথা না বলে সোজা গটগট করে রুমে চলে যান। রাজিয়া সুলতানা বেশ অবাক হন।কারন বাসায় ঢুকার সাথে সাথেই ছেলে,মেয়ের কথা জিগ্গেস করেন, রাহবার,লিয়া কি করে? কিন্তু আজ কোনো টু শব্দই করলো না।রাজিয়া সুলতানা ভাবেন ,হয়তো কোনো কারনে লিয়ার বাবার মন মেজাজ খা’রাপ আছে।রাজিয়া সুলতানা কফি বানিয়ে নিয়ে রুমে যান।বাইরে থেকে এসে কফি খাওয়ার অভ্যাস এনামুল খাঁনের।রুমে এসে দেখেন ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছেন ,টাওয়াল দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে। এনামুল খাঁন বিছানায় বসতেই রাজিয়া সুলতানা কফির মগটা বাড়িয়ে দিয়ে শীতল কন্ঠে বলেন,,”তোমার কফি।তোমার কি শরীর খা’রাপ?না মানে তোমাকে দেখে কেমন জানি লাগছে।”
এনামুল খাঁন চোখ তুলে স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলেন,,”কফি রাখো।তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।”
সেন্টার টেবিলের উপর কফির মগ টা রেখে রাজিয়া সুলতানা বেডের উপর ওনার স্বামীর সামনা-সামনি বসেন।ঝড়ের আগে পরিবেশ যেমন থমথমে থাকে।ঠিক তেমনি এনামুল খাঁন নিজেকে থমথমে অবস্থায় রেখেছেন অথচ ভিতরে তুমূল তান্ডব শুরু হয়েছে।সেই তান্ডব ভিতর ভেদ করে বাইরে আসতে পারে যেকোনো মুহূর্তে। এনামুল খাঁন নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক করে শান্তভাবে গম্ভীর গলায় বলেন,,”বিকেলে লিয়া আর লিয়ার হোম টিউটরকে একসাথে দেখলাম।কি যেনো নাম ছেলেটার
এনামুল খাঁন মনে করার চেষ্টা করেন। স্বামীর মুখের এতটুকু কথা শুনেই রাজিয়া সুলতানা বেশ বুঝতে পারেন উনার স্বামী জারিফের কথা বলতে চাচ্ছেন নিশ্চয়। রাজিয়া সুলতানা কিছুটা চিন্তিত হন আর কিছুটা ভয়ও কাজ করে।রাজিয়া সুলতানা শুকনো ঢুক গিলে নিয়ে নার্ভাস কন্ঠে বলেন,,”জারিফ।”
সাথে সাথেই এনামুল খাঁন গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন,,”হুম, জারিফ।জারিফ আর লিয়াকে দেখলাম।তুমি কি এই ব্যাপারে কিছু জানো?”
রাজিয়া সুলতানা নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে জড়তা নিয়ে বলেন,,”আমি জানি।”
নিজ স্ত্রীর মুখ থেকে এই স্বীকারোক্তি এনামুল খাঁন আশা করেছিলেন না।এই দুই শব্দের কথাটা যেনো এনামুল খাঁন এর রাগের পারদ টা সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে দেয়।চোখ বন্ধ করে কয়েকবার শ্বাস টেনে নিয়ে রা’গ টা কমানোর চেষ্টা করে কঠোরভাবে বলেন,,”তুমি জানো।তবে মেয়েকে কেনো বাধা দাওনি?আরো ইন্সপায়ার করে যাচ্ছো।তোমার কথা শুনে আমি অবাকের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছি।তুমি নিজেও তো অভ্র এর ব্যাপার টা জানো।যেখানে আমি কিছুটা হলেও কমিটমেন্টে আছি।আর তুমি মা হয়ে এটা জানা সত্বেও মেয়েকে নিষেধ না করে তাকে সাপোর্ট করে যাচ্ছো।তোমার কাছ থেকে আমি কখনো এটা আশা করিনি।”
রাজিয়া সুলতানা দৃষ্টি নিচু করে নির্বাক হয়ে আছেন।কোনো কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না।
এনামুল খাঁন মুখাবয়ব গম্ভীর করে কঠোরভাবে বলেন,,”আচ্ছা।বিষয়টা যতদূর গড়িয়েছে এই পর্যন্তই থাক। তুমি লিয়াকে থামিয়ে দাও।আর আমি অভ্র এর বাবার সাথে কথা বলে,লিয়া আর অভ্র এর বিয়ে টা দিয়ে শীঘ্রই দেবো।”
রাজিয়া সুলতানা আর নিশ্চুপ থাকতে পারলেন না।উনি বেশ শান্ত গলায় বলেন,,”লিয়া আর জারিফের জানাশোনা এটাকে তুমি প্রায়োরিটি দিবে না।ওদের দুজনের ভালো লাগার কোনো মূল্য নেই।”
এনামুল খাঁন শান্ত গলায় বলেন,,”শোনো আমি জেনে বুঝেই বলছি।বিয়ে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এখানে আবেগ কে প্রাধান্য না দিয়ে বাস্তবতা নিয়ে ভাবতে হয়।আমি অনেক চিন্তা ভাবনা করেই বলছি,লিয়ার জন্য অভ্র-ই পারফেক্ট হবে।”
রাজিয়া সুলতানা নির্বিকার গলায় বলেন,,”জারিফ কম কিসে?দেখতে শুনতে ভালো।তারপর ওতো ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছে।”
এনামুল খাঁন কপাল কুঁচকে দৃঢ় কন্ঠে বলেন,,”জারিফ ম্যাজিস্ট্রেট থেকে টিএনও হয়ে ত্রিশ-চৌত্রিশ বছর চাকুরী করে যে পর্যায়ে যাবে।আর অভ্র এখনই তার থেকে ডাবল পর্যায়ে আছে।”
স্বামীর এই কথাটা কিছুতেই রাজিয়া সুলতানা মানতে পারলেন না।তাই তো খুব ভদ্রভাবে নাকোচ করে ঠোঁট প্রসারিত বলেন,,”অর্থ-ই কি সব?”
এনামুল খাঁন চোখে মুখে বিরক্তিকর রেখা টেনে ঠোঁট চেপে বলেন,,”অভ্র দেখতে শুনতে তো ভালো।ফ্যামেলি স্টাটাস ভালো।ওদের সোসাইটি অনেক বড়।”
রাজিয়া সুলতানা শান্ত গলায় বলেন,,”মানছি এসব কিছু।তারপরে মেধারও তো একটা বিষয় আছে।জারিফ একজন মেধাবী। বিসিএস প্রশাসন এ সিলেক্ট হওয়া চারটি খানিক কথা নয়।এদিক দিয়ে ধরলে।”
এনামুল খাঁন ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন,,”হুম।আমি জানি তা।তবে আমি আশাকরি তুমি আমাকে আর কোনো যুক্তি না দেখিয়ে,আমার সিদ্ধান্ত টা তুমি মেনে নিবে।আর মেয়েকেও মেনে নিতে বলো।”
রাজিয়া সুলতানা শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে করুণ গলায় বলেন,,”আমি বলছি যে,তুমি আরেকটু ভালো করে ভেবে নাও।”
এনামুল খাঁন এবার উত্তেজিত গলায় বলেন,,”আমার যা বলার আমি বলে দিয়েছি।আর আমি যেনো লিয়াকে বাইরে যেতে না দেখি।জারিফের চ্যাপটার টা এখানেই ক্লোজড হোক।”
জান্নাত বেগম ওনার রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে যেতেই ছেলের উচ্চ গলা শুনে ওনাদের রুমের দিকে এগিয়ে যান।দরজার দাড়গোড়ায় দাঁড়িয়ে শুধালেন,,”মেজো খোকা মেজো বৌমা কি হয়েছে?”
এনামুল খাঁন বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে জান্নাত বেগমের উদ্দেশ্যে বলেন,,”তুমি তোমার বৌমার কাছ থেকে শুনে নাও।আর আমি আবারো বলছি,তোমরা জারিফের সাথে যোগাযোগ রাখতে লিয়াকে নিষেধ করে দাও।আর আমি অভ্র এর পরিবারের সাথে দ্রুতই কথা বলবো। লিয়ার উপর আমার অনেক বিশ্বাস ছিলো।আমার পছন্দের বিরুদ্ধে যাবে তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি।আগে যদি এই বিষয় টা জানতাম তাহলে অভ্রদের সাথে জড়িত হতাম না।ওর দেওয়া গিফট নিতাম না।কিছু একটা বলে ওদেরকে কাটিয়ে দিতাম।এখন যেহেতু অভ্র আর ওর ফ্যামেলির সাথে আমার একটা আন্ডারস্টান্ডিং হয়েছে।আমি চাইছিনা আন্ডারস্টান্ডিংটা মিসআন্ডারস্টান্ডিং করতে।”
এই বলে এনামুল খাঁন গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।জান্নাত বেগম সবটা শুনে রাজিয়া সুলতানা কে উদ্দেশ্য করে কপাল কুঁচকে গম্ভীর গলায় বলেন,,
“তোমাকে বলি বৌমা,কখনো তো আমার কথা শুনোনি।সব সময় নিজের যেটা ঠিক মনে হয়েছে তাই করেছো।আবার মেয়েকে ঠিকমত শাষন করোনি।সব সময় বেশি আদর দিয়ে সব কথা শুনে এসেছো।এবার দেখেছো তো সমস্যায় পড়ে গেলে।এখনও সময় আছে মেয়েকে সাবধান করে দাও।”
কিয়ৎক্ষন থেমে বেশ শান্ত গলায় বলেন,,” লিয়ার ঐ মাস্টার টা না?যদিও ছেলেটা দেখতে শুনতে ভালো। কিন্তু মেজো খোকার কথা শুনে মনে হলো,ওতো আরেক জায়গায় পছন্দ করছে।তাই বলছি মেজো খোকাকে তো তুমি চিনোই, ওর মতের বিরুদ্ধে গিয়ে বারবার কিছু বলে ছেলেটাকে আবার রাগিয়ে দিও না। ঠান্ডা মাথায় মেয়েকে বোঝাও।”
রাজিয়া সুলতানা লিয়ার রুমে গিয়ে সবটা লিয়াকে বলেন।রাজিয়া সুলতানা ম্লান গলায় বলেন,,”লিয়া তোর আব্বু জারিফ আর তোর সম্পর্কটা কিছুতেই মানতে চাচ্ছে না।আসলে অভ্র এমনভাবে তোর আব্বুর মন মস্তিষ্ক দখল করেছে,উনি অভ্র ছাড়া কিছুই ভাবতে চাচ্ছেন না।”
মায়ের মুখ নিঃসৃত কথা গুলো কর্ণগোচর হয়ে মস্তিষ্কে পৌঁছাতেই লিয়ার মাথার উপর দুশ্চিন্তার পাহাড় জমা হলো যেনো।লিয়ার নিউরনে নিউরনে ছেয়ে যায় দুশ্চিন্তা। মুহূর্তেই মুখটা ছোট হয়ে যায়।দুচোখে পানি টলমল করতে থাকে।লিয়া মায়ের কাঁধে মাথা রেখে ভেজা গলায় বলে,,”আম্মু তুমি কিছু একটা করে, আব্বু কে কনভিন্স করো।”
রাজিয়া সুলতানা লিয়ার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে মৃদু আওয়াজে বলেন,,”চিন্তা করিস না।আমি তোর পাশে ছিলাম আর সব সময় থাকবো।”
এরমধ্যে জান্নাত বেগম এসে গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন,,”এতো কিছুর পরেও মেয়েকে আরো উস্কে দিওনা। পরিবারের সম্মানের কথা একটু ভাবো।যেখানে মেয়ের জন্য এক জায়গায় পাত্র পছন্দ করে রাখা হয়েছে।তা জেনেও মেয়ে কিনা তার মাস্টারের সাথে বেড়াচ্ছে।মা হিসেবে তোমার তো লজ্জিত হওয়া উচিত।এসব জেনেও মেয়েকে আরো উস্কে দিচ্ছো।আর তোকেও বলি হারি লিয়া। তোর বড় বোনদের দেখেও তো কিছু শিখতে পারিস আদব কায়দা।তোর বড় বোন তো তোর থেকে কত বড়। কিন্তু কখনো শুনেছিস এরকম কান্ড করেছে কি?আর তুই কিনা আমার বংশের ছোট মেয়ে হয়ে,সবার আগে সেই ভুলটা করলি।তোর ছোট ফুপ্পির মতো একই ভুল।তুই জানতিস না,আমাদের বংশে এসব প্রেম ভালোবাসা করে বিয়ে করা নিষেধ। তারপর আরো বড় ভুল তুই জেনে শুনেই করলি, যেখানে তোর বাবা নিজে ছেলে পছন্দ করে রেখেছে,সেখানে আরেক জনের সাথে তুই ঘুরাঘুরি করিস।পুরো পরিবারের সবার কথা না হয় বাদই দিলাম।তোর বাবার মান সম্মানের কথা ভাবলি না।তোর এই আচরণে তোর বাবা কতটা কষ্ট পেতে পারে।তোর উপর বিশ্বাস ছিলো বলেই তো,তোর বাবা তাদের কে না করেনি বরং আশা দিয়েছিলো।সব শেষে কি হলো,নিজের বাবার বিশ্বাস টুকু রাখতে পারলি না।”
চারিদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে।রাত এগারোটা বাজতে চললো।লিয়ার চোখে ঘুম নেই।ব্যালকনিতে রাখা ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বসে আছে লিয়া। দৃষ্টি গ্রিল ভেদ করে নীকষ ঘুটঘুটে কালো অন্ধকারে।আকাশে চাঁদ মামা নেই কারন আজকে অমাবস্যা।ঠিক তেমনি লিয়ার মন জুড়েও অমাবস্যা।লিয়া গভীর চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। লিয়ার মস্তিষ্ক বলছে, আব্বু আমাকে কত আদর স্নেহ করে।আমি যা বলি সাথে সাথেই তাই করে। চাওয়ার থেকেই বেশি সব সময় পেয়ে এসেছি।সেই আব্বু যখন নিজে থেকে একটা মতামত দিলো। আর আমি কি-না রাখতে পারলাম না।আবার লিয়ার মন সাথে সাথেই বলে উঠল,স্যারকে ছাড়া অন্য কাউকে মেনে নেওয়া আমার জন্য পসিবেল নয়।আমি কিছুতেই অন্য কাউকে গ্রহণ করতে পারবো না।স্যার সারা অন্য কাউকে আমি ভাবতেও পারবো না, ইম্পসিবল।
নানান কিছু ভেবে নিয়ে লিয়া সিদ্ধান্ত নেয় এখনই জারিফকে বিষয়টা জানাবে।বেশি দেরি করা ঠিক হবে না। অবশেষে লিয়া জারিফের কাছে কল দেয়।
[চলবে…ইন শা আল্লাহ]