শুধু_তোমাকেই_চাই #শারমিন_হোসেন #পর্ব০৭

0
671

#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব০৭

“খাঁন ভিলার সামনে এসে গাড়ি থামে।বিশাল দো-তলা বাড়ি।বাড়ির সামনে সুন্দর মনো মুগ্ধকর ফুলের বাগান।চারপাশে বড় বড় নারিকেল সুপারির গাছ।আরো বিভিন্ন রকমের ফলের গাছ।বাড়ির দক্ষিণে রয়েছে বিশালাকার পুকুর। গাছপালার ছায়ায় আবৃত হয়ে থাকে খান ভিলা।গাছগালি বেশি হওয়ায় সূর্যের প্রখরতা তুলনামূলক ভাবে একটু কমই উপলব্ধি হয় বাড়িটাতে।আর সব সময় পাখির কিচিরমিচির শব্দ শোনা যায়।ব্যালকনিতে,ছাদে বা একটু বাড়ির বাইরে আসলে চোখে পড়ে নরম শরীর বিশিষ্ট সুন্দর সুন্দর কাঠবিড়ালীর এ গাছ থেকে অন্য গাছে লাফিয়ে বেড়ানোর মনোরম দৃশ্য।বাড়িটার প্রাকৃতিক পরিবেশ অনায়াসে একজনের মন ভালো করে দিতে সক্ষম।

প্রায় তিন ঘন্টা জার্নি করে অবশেষে লিয়ারা জামালপুর ওর দাদু বাড়িতে পৌঁছায়।গাড়ি থেকে নেমে অন্দর মহলে যেতেই ।লিয়ার বড় আম্মু তহমিনা বেগম রান্না ঘর থেকে শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে ছুটে আসেন ড্রয়িংরুমে।

লিয়া সবার সাথে কুশল বিনিময় করে ধপ করে সোফায় বসে পড়ে।তখন তহমিনা বেগম বলেন,,

“লিয়া, তাসনিম তোরা উপরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে। আমি খাবার রেডি করছি।আর তোদের দাদিমনি তোদের জন্য আমের আচার বানিয়েছে।সকাল সকাল তুষার কে দিয়ে আম পাড়িয়েছে।আমি আর সেজো তিনজনে মিলে আম কে’টে দিয়েছি।আর আম্মা নিজেই বানিয়েছেন।”

লিয়া সোজা হয়ে বসে বলে,,”ওয়াও আমের আচার।তাও আবার দাদিমনির হাতের।আগে তো আমি আচার ই খাবো।”

রাজিয়া সুলতানা বলেন,,”আগে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।”

লিয়া তহমিনা বেগম কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”বড় আম্মু আরিয়ান কই আর সেজো চাচিমা কেও তো দেখছি না।(আরিয়ান লিয়ার সেজো চাচার ছেলে বয়স দেড় বছর)

“আরিয়ান কে ঘুমাতে নিয়েছে রুমানা।যা তোরা ফ্রেশ হয়ে আয়।দুপুর হতে চললো খাবার খাবি।”

লিয়া উঠে যেতে যেতে বলে,,”আগে লম্বা একটা শাওয়ার নিবো।”

সিড়ি বেয়ে দোতলার দক্ষিণের দিকটার রুমে লিয়া চলে যায়।ওর সাথে তাসনিম ও।এটা মূলত তাসনিম এর রুম।লিয়ারা তো বছরে হাতে গোনা দুই থেকে তিনবার ওর দাদু বাড়িতে আসে।আর বড় জোড় এক সপ্তাহ থাকে।লিয়া তাসনিম এর সাথেই থাকে তাসনিমের রুমে।ব্যাগ থেকে একটা ব্ল্যাক ড্রেস বের করে নিয়ে লিয়া সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।

মধ্য দুপুর খাঁন বাড়ির সকলে একসাথে ডায়নিং এ বসে খাবার খাচ্ছে।লিয়ার মা আর দুই চাচি খাবার সার্ভ করছে।লিয়ার সেজো চাচি রুমানা বেগম গলা ঝেড়ে বলতে থাকে,,”আলিফ আর বড় আপা তো ফোনে বলেছিলো দুপুরের দিকে আসবে তা এখনো আসছে না কেনো?”

মঈনুল খাঁন খাবার চিবুতে চিবুতে বলতে থাকে,,

“আমি আপার কাছে ফোন দিয়েছিলাম।আপা বলেছে,আলিফ নাকি দুপুরে মেডিকেল থেকে আসবে তখন রওনা দিবে।তারমানে ওদের আসতে আসতে বিকেল হয়ে যাবে।”

তাসনিম তুষার কে উদ্দেশ্য করে বলে,,”তুষার শুনলাম তুই নাকি মিডে এক সাবজেক্টে ফেল করেছিস।তা ফাইনাল সেমিস্টারে রিকভার করতে পারবি তো।”

এমন মূহূর্তে এমন কথা শুনে তুষারের খুব রাগ হয় তাসনিমের উপর।মনে হচ্ছে কানের পাশে ঠাডিয়ে একটা চ’ড় দিতে।যতই টুইন হোক না কেনো তুষার মনে করে আমি তাসনিমের থেকে গুনে গুনে ষাট সেকেন্ড এর বড়।ষাট সেকেন্ড কম কোথায় এখানে ফ্যাক্ট হলো বড় তো পৃথিবীতে এক মিনিট আগে এসেছি।তাই সময়টা খুবই কম হলেও তো বড়।আর বড় ভাইকে কেও এভাবে সবার সামনে ছোট করে বেয়াদব মহিলা কোথাকার।তুষার মনে মনে তাসনিম কে খানিকটা বকে নেয়।এখানে মা চাচি কাকা আরো ছোটো ছোটো দুইটা বোন একটা ছোট ভাই আছে তাদের সামনে কিনা ফেইল শব্দটা বড় বেইজ্জতি বা মান সম্মানের ফালুদা বানানো। তুষার ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”আমার কি দোষ সব দোষ তো তোরই।”

তুষারের কথা শুনে তাসনিম কপাল কুঁচকে তাকিয়ে বলে,,”আশ্চর্য!আমি আবার কি করলাম?”

তুষার বলে,,”তুই আর আমি তো টুইন। সেইজন্য সব ব্রেন তোর মাথায় চলে গিয়েছিলো।আমার ভাগের ব্রেন টুকু তোর মাথায় চলে গিয়েছিলো। সেইজন্য পড়াশোনায় তোর থেকে আমি একটু কাঁচা।আমার বুদ্ধি নিয়ে তুই তো মহাজ্ঞানী হয়ে বসে আছিস।আর এদিকে আমার তো করুণ অবস্থা।”

তহমিনা বেগম মোটামোটা চোখ করে ছেলের দিকে তাকিয়ে কর্কশ গলায় বলে,,”হ্যা পড়াশোনা না করে শুধু বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বেড়ালে রেজাল্ট খা’রাপ আসবে না তো ভালো আসবে।আর উনি উল্টো আজগুবি যুক্তি তুলে ধরছে।”

তুষার জোরপূর্বক হেসে বলে,,”ফাইনালে দেখিয়ে দেবো হ্যা।কথায় আছে না শেষ ভালো যার সব ভালো তার।তাই শেষে গিয়ে বাজিমাতটা আমিই করবো।”

তাসনিম দৃষ্টি সরু করে তুষারের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,,”কিভাবে?”

মঈনুল খাঁন গলা পরিষ্কার করে বলে,,”বড় আম্মাজান আর বড় আব্বাজান আপনারা খাবার সময় একটু চুপ করে খাবার টা খেয়ে নিন।এসব ঝগড়া ঝাটি পড়ে করেন।আর দরকার পড়লে আমাকে আম্পায়ার বানিয়ো।আমি কিন্তু নিরপেক্ষ হবো।আম্পায়ার হিসেবে খুবই অনেস্ট হবো।তাই নির্দ্বিধায় আমাকে গুরুত্বপূর্ণ পদটা দিতে পারো।”

মঈনুল খানের রসাত্মকময় কথা শুনে ডায়নিং টেবিলের সবাই নিঃশব্দে হেসে ফেলে।

পড়ন্ত বিকেল সূর্য মামা ধীরে ধীরে পশ্চিম আকাশের দিকে যাচ্ছে।শান বাঁধানো পুকুরের ঘাটলায় বসে আছে লিয়া আর তাসনিম।লিয়া মাঝে মাঝে দুই একটা ছোট ছোট মাটির টুকরো, ভাঙ্গা ইটের টুকরো পানিতে ছুঁড়ে ফেলছে।দুই বোন বসে বসে বিভিন্ন কথা বলছিলো।এমন সময় লিয়া জুহুরির মতো আশে পাশে চোখ বুলাতে থাকে।লিয়ার দিকে তাকিয়ে তাসনিম ভ্রু যুগল কুঁচকে ইশারায় বলে,,”কি হয়েছে?”

লিয়া চারিদিকে দৃষ্টি বুলিয়ে এক হাত গালের সাথে ধরে শান্ত গলায় বলে,,”আমার সিক্স সেন্স বলছে।আমাদের কে কেউ ফলো করছে।”

লিয়ার কথা শুনে তাসনিমের নিটোল কপাল খানিকটা কুঁচকে অবাক গলায় শুধায়,,”ফলো করছে আমাদের কে অদ্ভুত।হু ইস হি অর সী?”

তাসনিম বুঝতে পারছে না এই জায়গায় ওদের কে কোন উদ্দেশ্যে ফলো করতে যাবে।আশে পাশে তো কাউকে দেখা যাচ্ছে না।আবার আশে পাশে কেউ থাকলেও বাড়ির লোকই থাকবে।কারন খান বাড়ির ভেতরে অবাদে সাধারনের প্রবেশ নিষেধ আছে।কারো কোনো প্রয়োজন হলে গেইটে থাকা দারোয়ান কে বলে পরিচিত হলে আসার অনুমতি পাবে এছাড়া নয়।

লিয়া নির্বিকার ভঙ্গিতে বলে,,”ফলো বলতে আমি ওরকমটা বুঝাতে চাইনি।আমি বলতে চাচ্ছি আমার মন কেনো জানি না বলছে,কেউ হয়তো আমাদের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।”

লিয়ার কথা শুনে তাসনিম ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,
“আমাদের নয় বল তোর দিকে।কারন যদি কেউ তাকিয়ে রয় তবে তোর দিকে তাকাবে আমার দিকে নয়। তাসনিম লিয়ার নাক টেনে দিয়ে বলে,,কজ তুই বেশি সুন্দরী।হিরে ফেলে কেউ নিশ্চয় রুপার দিকে তাকাবে না।”

তাসনিমের কথাগুলো লিয়া কোনো মতেই মানতে পারলো না।লিয়ার মস্তিষ্ক বলে উঠলো তাসনিম ভুল বলেছে।তাই তো লিয়া তাসনিমের কথা কে খুব সুন্দর ভাবে নাকোচ করে বলে উঠল,,

“ওহ আপু ইউ আর রং।কে বলেছে তুমি কম সুন্দর ।তোমার মাঝে এমন সব গুণ রয়েছে যা আমার মাঝে নেই।আর এখানে সৌন্দর্যের থেকে বড় ফ্যাক্টর হলো ভালোলাগা।কিছু কিছু মানুষের মধ্যে এমন গুণ আছে যা কারো কারো মনে বিঁধে যায়।সেই ক্ষেত্রে সৌন্দর্য ধোপে টিকে না।ভালোবাসার গভীরতা যত বেশি হয় সৌন্দর্য সেখানে এমনিতেই ফুটে উঠে।ভালোবাসার মানুষের প্রত্যেকটি জিনিষ আপনা আপনি ভালো লাগে।তার মুখের হাসি কথা বার্তা ছোট ছোট বিষয় গুলো খুব বেশি ভালো লাগায় পরিণত হয়।তাহলে কি দাঁড়ালো আপু,,ভালোবাসার গভীরতা ই হলো মূল বিষয়।কারো প্রতি ভালোবাসা যত গভীর হয় তার সব কিছুই ততটা ভালো লাগে। ভালোবাসার মানুষের প্রতিটা জিনিষেই মুগ্ধ হওয়ার জন্য গভীর ভালোবাসা প্রয়োজন নট সৌন্দর্য।আর জ্ঞানীদের কথা হলো,, বো’কারাই হলো সৌন্দর্য খোঁজে জ্ঞানীরা নয়।”

শেষের কথাটা বলে কিয়ৎক্ষন পরেই লিয়া মনে মনে বলে,,”তবে আমি কি সেই বোকাদের দলে না-কি।আমি কি মিস্টার আয়মান জারিফের সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়েছি?এই কথাটা ভাবার সাথে সাথে লিয়ার মন মস্তিষ্ক সাথে সাথেই লিয়ার সাথে বিরোধীতা করে বসল।না একদম ঠিক চিন্তা নয় এটা,কারন সতের বছরের জীবনে চলতে ফিরতে তো অনেক কেই দেখেছে।সে সবের মধ্যে হাতে গোনা কেউ কেউ হয়তো সুন্দর ছিলো।কারন এখনকার দশটা মানুষের মধ্যে দুইটা মানুষ মোটামুটি বলা চলে দেখতে বেশ সুন্দর হয়।কই সেই সব মানুষ দের দেখে তো অন্যরকম অনুভূতি হয়নি যেটা জারিফ কে দেখে হয়েছিলো।জারিফের পার্সোনালিটি লিয়াকে আরো মুগ্ধ করেছিলো।লিয়া ভাবে,, সৌন্দর্যতা ছাড়াও জারিফের মাঝে এমন কিছু আছে যা বারবার লিয়াকে জারিফের প্রতি আকৃষ্ট করে।জারিফের এটিটিউট লিয়াকে মুগ্ধ করে।জারিফ কে দেখলে লিয়ার মনে শীতলতা বয়ে যায়।চোখ বন্ধ করলেই জারিফের কিউট ফেস আর ভাসা ভাসা চোখ দুটি লিয়ার সামনে ভেসে উঠে।সেই সময় লিয়ার হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়।লিয়ার মন বলে,,জারিফ নামক প্রেমিক পুরুষের থেকে নিস্তার নেই লিয়া তোর।কোনো মতেই নিস্তার নেই।লিয়া নিজেও চাইনা এই ভালোলাগা থেকে নিস্তার পেতে।আরো আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিতে চায় এই কিশোরী বয়সের প্রথম ভালোলাগা আর ভালোবাসা টাকে।

এরমধ্যেই হঠাৎ করে দৌড়ে এসে তুলি হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,”তোরা দুইজন এখানে আর আমি ওদিকে তোদের কে খুঁজে খুঁজে হয়রান হচ্ছি।”

লিয়া উঠে দাঁড়িয়ে দুই হাত ঝেড়ে ফেলে বলে,,”তা তুলতুলি এতো খোঁজার কারন টা কি জানতে পারি?”

তুলি ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে,,
“তোরা আমাকে রেখেই গল্প করছিস।এটা কিন্তু মোটেও ঠিক নয়।আর আমি একটা গুড নিউজ নিয়ে এসেছি।বড় ফুপ্পি আর আলিফ ভাইয়া এসেছে। ফুপ্পি তো এসেই তোদের কথা বলছে।আমি সংবাদ বাহক হিসেবে এসেছি।দুই রাজকন্যার কাছে।”

তুলির ব্যাজ্ঞাত্মক কথা শুনে লিয়া আর তাসনিম শব্দ করে হেসে ফেলে।বাড়ির ভেতরে গিয়ে আতিকা বেগমের সাথে কুশল বিনিময় করে। তহমিনা বেগম তুলি কে উদ্দেশ্য করে বলে,,
“তুলি যাতো ছাদ থেকে আচারের বয়াম গুলো নিয়ে আয় সন্ধ্যা হতে চললো।”

তুলির সাথে লিয়াও ছাদের দিকে পা বাড়ায়।ধুপধাপ পা ফেলে লিয়া আগে আগে আর তুলি পিছে সিড়ি দিয়ে উঠছে।ছাদে গিয়ে দক্ষিণ দিকে লিয়ার দৃষ্টি যায়।ফরমাল গেটআপ এ রেলিং এ ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রল করছে আলিফ।কারো আসার শব্দ পেয়ে ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আলিফ সামনে তাকাতেই লিয়া আর তুলিকে দেখতে পায়।

লিয়া জড়তা নিয়ে বলে,,”আসসালামুয়ালাইকুম ভাইয়া,কেমন আছেন?”

আলিফ সালামের উত্তর দিয়ে বলে,, আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তোমরা কেমন আছো?

তুলি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।লিয়া মৃদু কন্ঠে বলে,, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

আলিফ কিছুটা এগিয়ে এসে বলে,,
“তা পিচ্চি তোমাদের পড়াশোনার কি খবর?”

পিচ্চি কথাটা শুনে লিয়া বিরক্ত হয়।লিয়ার ইচ্ছে করছে দুই হাত কোমড়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলতে,কোন এঙ্গেলে আমাদের কে দেখে আপনার পিচ্চি মনে হয় শুনি?আমি সেভেনটিন প্লাস আর কয়েকদিন পরই এইটটিন এ পা দেবো।আর তুলি সেও তো অলরেডি এইটটিন প্লাস।তাহলে এই পিচ্চি ওয়ার্ড টা কি আমাদের সাথে যায়।এসব কিছু মনে মনে বললেও মুখে বলতে পারলো না লিয়া।কারন ঐযো ভদ্রতা বলে একটা কথা আছে।মানুষ মনে মনে হাজার টা বললেও মুখে বলে সেগুলো প্রকাশ করা যায় না।তাই তো লিয়া ভদ্রতা বজায় রেখে নম্র ভদ্র মেয়ের মতো স্মিত হেসে নরম কন্ঠে বললো,,
“জি ভাইয়া ভালো।দোয়া রাখবেন আমাদের জন্য।”

আলিফ এক কথায় বলে,,”ইন শা আল্লাহ।”তারপর গটগট করে ছাদ থেকে নেমে যায়।

আলিফ চলে যেতেই লিয়া তুলি কে উদ্দেশ্য করে বলে,,এতো সময় মুখে কুলুপ এঁটে ছিলি কেনো বলতো?ভাইয়ার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলি না”

তুলি চোখ ছোট ছোট করে বলে,,”আসলে ভাইয়াকে দেখলে আমার কেনো জানি ভ’য় লাগে।কি বলতে কি বলে ফেলি সেই জন্য ওনার সামনে সাইলেন্ট থাকি।”

“বাঘ না ভাল্লুক যে দেখে ভয় লাগবে।কথাটা বলতে বলতে লিয়া ছাদের রেলিংয়ের পাশ ঘেঁষে দাঁড়ায়। হঠাৎ লিয়ার দৃষ্টি পুকুর পাড়ে যায়।লিয়া ভাবে এখান থেকে ঘাটলা তো খুব কাছেই স্পষ্ট দেখা যায় ।তবে তখন কি আমাদের কে
এতটুকু ভেবে লিয়া নিজেকে নিজেই তিরস্কার করে।দিন দিন লিয়া তোর কমন সেন্স গুলো হারিয়ে ফেলছিস।আর আলিফ ভাইয়া কেনো আমাদের কে ফলো করতে যাবে?এই সব আজগুবি চিন্তা কি করে আমার মাথায় আসে আমি নিজেও জানিনা।

সন্ধ্যার পর ড্রয়িংরুমের সোফাতে বসে তাসনিম পেপার দেখছিলো। ট্রি টেবিলের উপর পেপারটা দেখে মেলে ধরে চোখ বুলাতে থাকে।সেই সময় গ্রিন টিশার্ট আর ব্ল্যাক টাউজার গায়ে ক্যাজুয়াল লুকে সিড়ি দিয়ে আলিফ নেমে আসে। তাসনিম এর থেকে অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে সোফায় বসে পড়ে।কারো আসার শব্দ পেয়ে তাসনিম মাথা তুলে তাকিয়ে আলিফ কে দেখে সৌজন্যমূলক হেসে সালাম দিয়ে বলে,,
“ভাইয়া কেমন আছেন।”

আলিফ ফোন স্ক্রল করতে করতে বলে,,”এই তো ভালো। তুমি কেমন আছো?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।”

কিছুক্ষণ পরে নীরবতা ভেঙ্গে হালকা কেশে আলিফ বলে,,”পেপার পড়ছো গুড। নিউজ পেপারস ইস দ্যা স্টোর হাউজ অফ নলেজ।”

তাসনিম নরম কন্ঠে বলে,,”না মানে এমনি ফ্রি ছিলাম তো তাই পেপারটা দেখে আর এমনিও তো বিসিএস এর জন্য আউট নলেজ একোয়ার্ড করাও নেসেসারি।”

ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি দিয়ে আলিফ মৃদু কন্ঠে শুধায়,,
“তুমি ফাইনাল ইয়ারে তো? রেজাল্ট কি ফাস্ট ক্লাস আছে। তুমি তো মেধাবী।তুমি এমনি মেডিকেলেও চান্স পেতে।আর বিসিএস এ তো তোমাদের অনেক কুঠা আছে।”
“জ্বি ভাইয়া ফাস্ট ক্লাস আছে সব সেমিস্টারেই।”
আলিফ দুই শব্দে বলে,,”ভেরি গুড।”

রাজনৈতিক পৃষ্ঠা পড়ছিলো।তখন তাসনিম আলিফ কে উদেশ্য করে বলে,,”ভাইয়া দেখুন শিশুদের উপর ইসরাইল এর বর্বর হামলা।”

আলিফ তসনিম এর দিকে একটু সরে বসে পেপারে দৃষ্টি দিয়ে বলে,,”বিশ্ব বিবেক এখন নির্বাক।অথচ ইউক্রেনের ব্যাপারে বিশ্বের চোখে ঘুম নেই। এগুলো সবই ইউএসএ,ইউকে এদের হিপোক্রেসি।”

আলিফের কথা শুনে তাসনিম আলিফের দিকে তাকিয়ে বলে,,”ঠিক বলেছেন ভাইয়া।”

এই সময় আলিফও তাকায়।আলিফের মনে তাসনিম এর সৌন্দর্যের তীর বিদ্ধ হয়।আলিফ বলে,, “তাসনিম তুমি কি উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য কোনো কিছু ব্যবহার করো?”

তাসনিম কপাল কুঁচকে অবাক গলায় শুধালো,,”নাহ।ভাইয়া হঠাৎ এই কথা বলছেন।”

জড়তা নিয়ে আলিফ বলে,,”ই ইয়ে আসলে পূর্বের থেকে তোমার ফেসের ব্রাইটনেস ইনক্রিস করেছে।আলিফ মনে মনে নিজের উপর বিরক্ত হয়।নিজেই বুঝতে পারছে না কি থেকে কি বলছে। তাসনিম ওর কথায় কোনো মাইন্ড করবে না তো আবার?আলিফের নিজের কাছে মনে হচ্ছে যদি মেয়েদেরকে ইমপ্রেস করার কোনো কোর্স থাকতো তাহলে সেটা কমপ্লিট করলে আজ খুব উপকার দিতো। অন্তত নিজের প্রেয়সীর কাছে কি ভাবে মনের ভাব প্রকাশ করবে তা নিয়ে বিপাকে পড়তে হতো না।

তাসনিম মৃদু হেসে পেপারের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলে,,”ধন্যবাদ।”

তাসনিম এর হাসি মুখ আর ধন্যবাদ কথাটি শুনে আলিফ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।আলিফ ভাবে,,যাক বোঝা গেলো তাসনিম মাইন্ড করেনি। তাসনিম এর হাসি মুখ দেখে আলিফ আবেগী কন্ঠে হুট করেই বলে ফেলে,,
“তাসনিম তুমি যখন হাসো তোমাকে আরো সুন্দর লাগে।বিশেষ করে হাসলে তোমার গালে টোল পড়ে।এই টোল পড়া মুখখানি আমার হৃদয়ে ছবি হিসেবে ভেসে থাকে।”

আলিফের শেষের কথা শুনে তাসনিম একটু নড়েচড়ে বসে।আর তাসনিম আনইজি ফিল করে।মনে মনে আওড়ায়,,ভাইয়া একটু বেশিই কি বলে ফেললো?

রাতে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আলিফ ল্যাপটপে কাজ করছিলো। হঠাৎ ফোনে কল আসায়। রিসিভ করে কথা বলতে বলতে বাইরে যায়।তুলি আরিয়ান কে কোলে করে এনে সোফার উপর দাঁড় করায়।হুট করে আরিয়ান হিসু করে দেয়।সেটা গিয়ে ল্যাপটপের উপর পড়ে।এটা দেখে তুলি ঘাবড়ে যায়।এখন আলিফ আসলে কি বলবে ভেবে ওর হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।লিয়াকে নিচে নামতে দেখে তুলি লিয়াকে ডেকে বলে সবটা।লিয়া ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে নিঃশব্দে ঠোঁট চেপে হাসে।

“হাসি থামা তুই।আমি টেনশনে আছি আর উনি হাসছে।লিয়া দ্রুত গিয়ে গ্লাস,জগ বা বালতি ভরতি পানি নিয়ে আয়।”

তুলির কথা শুনে লিয়া কপাল কুঞ্চিত করে অবাক গলায় বলে,,”তুই কী বালতির পানি দিয়ে ল্যাপটপ কে গোসল করাতে চাচ্ছিস না কি?”

তুলি শুকনো ঢোক গিলে নিয়ে বলে,,”আরে না। দ্রুত পানি হাতে এখানে দাঁড়িয়ে থাক।ভাইয়া এখনি চলে আসবে হয়তো।ভাইয়া আসলে বলবি পানি পড়েছে।পানি পড়ার কথা বললে ব্যাপার না মুঝে নেবে।আর প্রসাব এর কথা বললে,ভাইয়া যে ক্ষুতক্ষুতে আর সাথে রাগি আমাকে ধমক দিবে ইভেন কানের পাশে লাগিয়ে দিতে পারে।তুলি ঝাঁঝালো গলায় আরিফান কে বলে,,এক মিনিটও হয়নি দাড় করিয়ে ছিলাম আর ওমনি সাথে সাথে দিলি তো ট্যাপ ছেড়ে।আর কপালও দেখো ট্যাপের পানি সোজা গিয়ে পড়লো ল্যাপটপের উপর।পড়ার আর জায়গা পেলো না,অসয্য।”

এরমধ্যে আলিফ চলে আসে।বসে ল্যাপটপের দিকে তাকাতেই পানি দেখতে পেয়ে তুলি আর লিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,,”এখানে এটা কি?”

তুলি জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলে,,”আ আ স লে ভাইয়া পানি পড়েছে।”

আলিফ ধমকের সুরে জোরে করে বলে,,”হোয়াট?পানি পড়লো কিভাবে?কে ফেলেছে?”

ধমক শুনে তুলি কেঁপে উঠে।লিয়া দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে থাকে।তুষার আসতে গিয়ে আলিফের কথা শুনে কাছে এসে বলে,,”কি হয়েছে ভাইয়া?”

আলিফ চুপ করে থাকে।তুষার ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে দাঁড়ানো আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে,,”এই আরিয়ানের প্যান্ট ভেজা কেনো?”

তুষারের কথা শুনে আলিফ নিজেও আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে সবটা বুঝে ফেলে।তুলি ভিতু ফেস করে কাঁপতে থাকে।আর মনে মনে তুষার কে হাজার টা গালি দেয়।কোথায় ভাই হয়ে বোন কে বিপদ থেকে রক্ষা করবে।তা না করে আরো বাঘের গুহার সামনে এগিয়ে দিবে।এই ভাইকে দ্বারা এটা অসম্ভব কিছু নয় তুলি মনে মনে ভাবতে থাকে।

আলিফ গম্ভীরভাবে বলে,,”ইডিয়েট সব।”
মিথ্যে বলার জন্য আলিফের খুব রাগ হয়। সেইজন্য কিছু কড়া কথা বলতে যাবে তখন ওখানে তাসনিম আসে। তাসনিম কে দেখে আলিফ চুপ করে যায়।আর নিজের রা’গ টা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। তাসনিম এর সামনে গাধা গুলোকে কিছু বলে নিজের ইমেজ খা’রাপ করতে চায়না আলিফ।

[চলবে…ইন শা আল্লাহ]

(এবার-কার গল্পের এতো রিচ দেখে আমার নিজেরই লজ্জা অনুভব হচ্ছে।লেখার আগ্রহ হারিয়ে গিয়েছে।ইশ! এত্তো বা’জে লিখি নিজেও জানতাম না 😅)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here