#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-২২
★ রাত ৯ টা। নূর বিছানায় শুয়ে আছে। চোখের কোন দিয়ে অঝোরে পানি পরছে। আবারো মিথ্যে স্বপ্ন দেখলি তুই। তুই কি ভেবেছিলি আদিত্যের মতো একটা ছেলে তোকে পছন্দ করবে।সবই তোর মিথ্যে স্বপ্ন। প্রতিবারের মতো যা দিনশেষে ভেঙে গেল। আর তুই আবারও বোকা প্রমাণ হলি। আসলেই তুই একটা একনাম্বারের গাধা। সেইজন্যই ওই মেয়েটার কাছে এতগুলো খারাপ কথা শুনতে হলো তোকে।তুই এইটারি যোগ্য। বামুন হয়ে চাদ ধরার সাহস করেছিস। সেই জন্যই আজ মুখ থুবড়ে পড়তে হলো।
নূর এতক্ষণ মনে মনে এসব ভেবে নিজেকেই নিজে বকছে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো। নূর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো আদিত্য ফোন করেছে। আদিত্যের কল দেখে নূরের রাগ উঠে যায়। মনে মনে ভাবে নিজের গার্লফ্রেন্ড থাকতে আমাকে কেন ফোন করছেন? নূরের আরো কান্না আসে। ও ফোন রিসিভ না করে রেখে দেয়। বাজতে বাজতে একসময় কেটে যায়। একটু পরে আবারও বেজে ওঠে। এভাবে অনেক বার কল আসার পরেও নূর রিসিভ করে না। একটু পরে টুন করে একটা ম্যাসেজ আসে। নূর ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আদিত্যের ম্যাসেজ।
” নূর প্লিজ শুধু একবার আমার ফোন উঠাও। কথা বলো আমার সাথে। আমার অনেক টেনশন হচ্ছে। ”
পড়তে পড়তেই আবার আদিত্যের কল আসে। নূর এবার ফোনটাই বন্ধ করে ফেলে। কিছুতেই কথা বলবে না ওই লোকের সাথে। কখনো না।
আদিত্য নূরের ফোন বন্ধ পেয়ে প্রচুর রেগে যায়। নিজের ফোনটা বেডের ওপর ঠাস করে ফেলে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর ঘরের ভেতর পায়চারী করতে থাকে। আর বিড়বিড় করে বলে।
…. কাজটা একদম ঠিক করলে না নূরপাখি। আমাকে এভাবে অশান্তিতে রেখে তুমি ফোনটা বন্ধ করে ফেললে? সাহস অনেক বেড়ে গেছে তোমার। একেতো ক্যাম্পাসে আমার সাথে দেখা না করে ওভাবে চলে গেলে। ফোন দিলাম তাও ধরলে না। এখন আবার ফোনটাও বন্ধ করে দিলে? কাল একবার দেখা হতে দাও। তারপর বুঝাবো আমাকে ইগনোর করার মজা।
———————————–
নূর মন খারাপ করে মাথা নিচু করে চুপচাপ রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। গলির মাথায় আসতেই সামনে তাকিয়ে দেখলো। আদিত্য প্রতিদিনকার মতো গাড়ি নিয়ে বসে আছে । কিন্তু নূর আজ আদিত্যের গাড়িতে উঠবে না। তাই ও আদিত্যের গাড়ী দেখেও না দেখার ভান করে অন্য দিকে ঘুরে রাস্তার আইলেন দিয়ে হাটা শুরু করে।
নূরের এভাবে চলে যাওয়া দেখে আদিত্যের রাগ আরো বেড়ে যায়। একেতো কাল থেকে এমনিতেই নূরের উপর রেগে আছে। তারউপর এখন আবার ওকে এভাবে ইগনোর করা দেখে আদিত্যের রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। রাস্তার মধ্যে নাম ধরে ডাকলেও সিনক্রিয়েট হতে পারে। নূরের সমস্যা হতে পারে, তাই আদিত্যও কিছু বললো না।
নূর অনেকক্ষণ ধরে চুপচাপ রাস্তার একপাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। হঠাৎ সাঁই করে এসে নূরের পাশে আদিত্যের গাড়ী ব্রেক করলো।
আচমকা এমন হওয়ায় নূর একটু ভয় পেয়ে দুই পা পিছিয়ে যায়। আদিত্য ফট করে গাড়ির দরজা খুলে বাইরে বের হয়। নূর কিছু বুঝে উঠার আগেই আদিত্য নূরের এক হাত শক্ত করে ধরে টানতে টানতে গাড়ির কাছে এনে ড্রাইভিং সিটের পাশের সিটের দরজা খুলে নূরকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে বসিয়ে দেয়। তারপর আবার দরজা বন্ধ করে নিজে যেয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে দেয়।
আদিত্য কোনো কথা না বলে চোখ মুখ শক্ত করে সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।
নূরের ভয়ে আত্মা বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। আদিত্যকে দেখেই বুঝতে পারছে যে আদিত্য প্রচুর রেগে আছে। নূর একটা ঢোক চিপে মনে মনে একটু সাহস যুগিয়ে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….দে দেদেখু……….
নূরের কথা শেষ হওয়ার আগেই। আদিত্য নূরের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে রাগী স্বরে বলে উঠলো।
…..জাস্ট সাট আপ। নট এ্যা ওয়ার্ড। চুপচাপ বসে থাকো।নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
নূর যেটুকু সাহস যুগিয়েছিলো আদিত্যের ধমকে তা বানের জলে ভেসে যায়। ভয়ে মিনি বিড়ালের মতো গুটিশুটি মেরে বসে থাকে।
আদিত্য আবার সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে।
—————————————–
এ্যানি নিজের রুমের সবকিছু ভাংচুর করছে। বারবার শুধু কাল আদিত্যের করা অপমান গুলো মনে পরছে এ্যানির। ভাংচুর করছে আর বলছে। তুমি এটা ঠিক করোনি আদি। একদম ঠিক করোনি। ওই দু টাকার মেয়ের জন্য আমাকে এভাবে অপমান করলে? ওই নূরকে তো আমি কিছুতেই ছাড়বো না। কিছুতেই না। তোমাকেতো আমার হতেই হবে। যে করেই হোক।
এ্যানির বাবা মেয়ের রুম থেকে ভাংচুরের শব্দ শুনে তড়িঘড়ি করে মেয়ের রুমে আসে। এ্যানিকে এভাবে ভাংচুর করতে দেখে এ্যানির বাবা এ্যানির হাত ধরে উদ্বিগ্ন হয়ে বললো।
…..কি হয়েছে মামুনি? এতো রেগে আছো কেন? কেউ কিছু বলেছে? বাপিকে বলো?
এ্যানি ওর বাবার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ।
…..বাপি আমি আদিত্যকে ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি। ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো না। আমার আদিত্যকে চাই। প্লিজ বাপি ওকে আমার করে দেও প্লিজ প্লিজ।
এ্যানির বাবা মুচকি হেসে বললো।
…..বাচ এই কথা? তা এতে এতো রাগারাগির কি আছে? তুই আদিত্যকে ভালোবাসিস এটাতো অনেক ভালো কথা। তুই চিন্তা করিস না। আমি আজই আদিত্যের বাবার সাথে কথা বলবো তোর আর আদিত্যের বিয়ের ব্যাপারে। আদিত্যের বাবা নিশ্চয় আমার কথা ফেলতে পারবে না।
এ্যানি খুশি হয়ে বললো।
……সত্যিই??? বাপি ইউ আর দা বেস্ট। আই লাভ ইউ।
……হুম। এখন নিজের মুড ঠিক করো যাও।
এ্যানির বাবা নিজের রুমে এসে আদিত্যের বাবাকে ফোন দিলো।আদিত্যের বাবা ধরে বললো ।
….কিরে কেমন আছিস? অনেকদিন পরে ফোন দিলি?
……এইতো আছি ভালো। শোন তোকে একটা দরকারে ফোন দিয়েছি।
….হুম বল?
তারপর এ্যানির বাবা সব কথা খুলে বললো। এবং এ্যানি আর আদিত্যের বিয়ের প্রস্তাবও দিলো।আদিত্যের বাবা সব শুনে বললো।
….দেখ আমার ছেলেমেয়েদের খুশীই আমার কাছে সবচেয়ে বড়ো জিনিস। ওরা যেটাতে খুশী থাকবে আমিও সেটাতেই খুশি। তুই যখন বলছিস আমি আদির সাথে কথা বলে দেখবো। আদি যদি রাজি থাকে তাহলে আমারও কোনো সমস্যা নেই। তবে যদি আদি মানা করে তখন আমিও কিছু করতে পারবো না।
এ্যানির বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।
….ঠিক আছে আদিত্যের সাথে কথা বলে দেখ।তারপর কি বলে আমাকে জানাস।
….ঠিক আছে।
————————————
একটা নদীর কিনারায় নির্জন নিরিবিলি জায়গায় এসে আদিত্য গাড়িটা একপাশে করে থামায়। তারপর গাড়ি থেকে বের হয়ে নূরের পাশে এসে দরজা খুলে নূরের হাত ধরে গাড়ি থেকে বের করে গাড়ির সাথে চেপে ধরে দাঁড় করায়। আদিত্য নূরের দুই পাশে নিজের দুই হাত গাড়ির ওপর রেখে নূরকে দুই হাতের মাঝে আটকে ফেলে। তারপর নূরের দিকে হালকা ঝুকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বললো।
……হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে ইগনোর করার? কাল ভার্সিটিতেও আমার সাথে দেখা না করে চলে গেলে। ফোন দিলাম ফোনও ধরলে।আবার এখনো আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলে। সমস্যাটা কি তোমার? তুমি জানো? কাল থেকে কতটা টেনশনে ছিলাম আমি?
নূর বেচারি ভয়ে কেঁদে দেওয়ার মতো অবস্থা। একটা ঢোক চিপে মনে একটু সাহস যুগিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
….দে দে দেখুন কাল আপনার গা গা গার্লফ্রে…….
নূর আর বলতে পারলো না। তার আগেই আদিত্য একটা রাম ধমক দিয়ে বললো।
….ডোন্ট ইউ ডেয়ার টু, কল হার মাই গার্লফ্রেন্ড। সি ইজ নট মাই গার্লফ্রেন্ড। ডিড ইউ হিয়ার মি? সি ইজ নট মাই গার্লফ্রেন্ড অর এনিথিং ইলস্। সি ইজ নাথিং টু মি।
আদিত্যের কথা শুনে নূর অবাক হয়ে তাকালো আদিত্যের দিকে। উনি কি সত্যিই বলছে? ওই মেয়েটা কি তাহলে উনার গার্লফ্রেন্ড না? তাহলে কি আমি উনাকে ভুল বুঝলাম? কিন্তু ওই মেয়েটা যে বললো????
নূরের ভাবনার মাঝেই আদিত্য আবার বলে উঠলো।
……কাল যখন ওই এ্যানি তোমাকে এতোগুলো কথা বললো। তখন কেন তুমি ওর মুখের ওপর জবাব না দিয়ে চুপচাপ চলে এলে? তোমাকে আমি বলেছি না? কেউ কিছু বললে আমাকে বলবে? তাহলে কেন আমাকে না বলে চলে গেলে? নাকি আমার ওপর তোমার বিশ্বাস ছিল না? আমার চেয়ে বেশি তোমার ওই এ্যানির কথায় বিশ্বাস ছিল? তাইতো আমার কাছে কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলে না? আমি তোমাকে বলেছিলাম না? এ্যানি শুধু আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে আর কিছুই না। তারপরও তোমার কাছে আমার চেয়ে ওই মেয়েটা কি বললো সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ন মনে হলো? সত্যিই আমি এটা ভেবেই অবাক হচ্ছি যে আমি এতোদিনে তোমার এতটুকু বিশ্বাসও অর্জন করতে পারিনি। কাল তানি এসে সবকিছু না বললে হয়তো আমি জানতামও না। তুমি জানো কাল কতটা টেনশনে ছিলাম আমি?
নূর কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। মাথা নিচু করে মনে মনে ভাবছে। আমি সত্যিই অনেক বড়ো গাধা। সবকিছু না জেনেই ওনাকে ভুল বুঝে বসে আছি। এসব ভেবে নূরের খুব খরাপ লাগছে। আদিত্যের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না।
নূরের চুপ করে থাকা দেখে আদিত্য আবারও একটা ধমক দিয়ে বললো।
…..চুপ করে আছো কেন? আনসার মি ড্যাম ইট।
নূর আর সহ্য করতে না পেরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে নাক টেনে টেনে অস্পষ্ট স্বরে বললো।
….স স সরি,,,,, আ আসলে কাল আমার খুব খা খাখারাপ লেগেছিল ওনার ক ক কথায় তা তাই…..
আদিত্যের এবার নিজেরি খুব খারাপ লাগছে নূরকে কাঁদতে দেখে। নূরের কান্না যে কিছুতেই ওর সহ্য হয়না। মেয়েটার সাথে মনে হয় একটু বেশিই কঠোর বিহেব করে ফেলেছে ও।নূরের কান্না দেখে আদিত্য কোনো কিছু না ভেবে নিজের দুই হাত দিয়ে নূরের মাথাটা আলতো করে বুকের সাথে চেপে ধরে বলে উঠলো।
….হুঁশশ শুশশ শুশ। ওঁকে ওঁকে আমি বুঝতে পেরেছি। এখন কান্না বন্ধ করো প্লিজ।
নূরও নিজের অজান্তেই আদিত্যের বুকে মাথা রেখে, বুকের শার্ট হাত দিয়ে খামচে ধরে
কাঁদতে লাগলো।আদিত্যের বুকে মাথা রেখে, নূরের মনে হচ্ছে এটাই যেন পরম সুরক্ষিত আর শান্তির জায়গা।
আদিত্য নূরের মাথায় হাত বুলিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করছে।একটু পরে ধীরে ধীরে নূরের কান্না থেমে আসে।
নূরের হঠাৎ হুঁশ আসে যে ও কোথায়। হুঁশ আসতেই নূর ঝট করে আদিত্যকে ছেড়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে।
……আ আ আমাদের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে। এ এখন যাওয়া উচিত।
আদিত্য নূরের ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললো।
….হুম ঠিক আছে চলো।
তারপর ওরা দুজন আবার গাড়িতে উঠে রওনা হলো ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। গাড়ির ভেতর নূর লজ্জায় আর কোনো কথা বলেনি আদিত্যের সাথে।
————————————
নূর ক্লাসে যেয়ে তানির পাশে যেয়ে বসে পরলো।
তানি নূরের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত স্বরে বললো।
….তুই ঠিক আছিস? কাল ওভাবে চলে গেলি।জানিস আমার কতো চিন্তা হচ্ছিল?
নূর মুচকি হেসে বললো।
….আমি ঠিক আছি। কাল একটু মন খারাপ ছিল। তবে এখন ঠিক আছি।
তানি একটু উৎসাহিত হয়ে বললো।
….তুই জানিস? কাল তুই চলে যাওয়ার পর এখানে কতো বড়ো সিন হলো? জেইন কসম” একদম সুপার ডুপার বাম্পার হিট সিন। ইশশ তুই মিস করে ফেললি। তুই থাকলে তুইও দেখতে পারতিস। আমিতো আদিত্য ভাইয়ার ফ্যান না পুরা এসি হয়ে গেছি।
নূর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো।
….মানে? কি বলছিস তুই? ঠিক করে বল।
তারপর তানি নূরকে কালকের সব ঘটনা খুলে বললো। সব শুনে নূর থ হয়ে গেলো। আদিত্য আমার জন্য এসব করেছে? আর আমি কিনা উনার উপর মিথ্যে রাগ করে বসে ছিলাম?
নূরের ভাবনার মাঝেই তানি আবার বললো।
…. কাল ওই এ্যানি ফ্যানি কুত্তার নানির যে হাল হয়ে ছিলো। আমার যা খুশি লাগছিল দেখে, তোকে কি বুঝাবো। আর একটা কথা জানিস? কাল ভাইয়ার কথা শুনে আমি হান্ড্রেড পার্সেন্ট সিওর হয়ে গেছি যে আদিত্য ভাইয়া তোকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।
তানির কথা শুনে নূরের মনের ভেতর খুশির বর্ষা শুরু হয়ে গেলো। হাজারো রঙিন প্রজাপতি উড়তে লাগলো। মনে মনে আওরাতে লাগল, উনি আমাকে ভালোবাসে? সত্যিই ভালোবাসে? নূর খুশিতে যেন হাওয়ায় ভাসতে লাগলো।
তানি দুষ্টু হেসে নূরের ঘাড়ে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো।
….কিরে? কোথায় হারিয়ে গেলি? ভাইয়ার খেয়ালে?হি হি…
নূর লজ্জা পেয়ে বললো।
…ধ্যাৎ এ এ এমন কিছুই না।
একটু পর তানি একটু সিরিয়াস হয়ে বললো।
….আচ্ছা শোন,একটা কথা বলার ছিল।
…..কি? বল?
…..আসলে আবির বললো কাল নাকি আদিত্য ভাইয়ার জন্মদিন। তাই ওরা সবাই মিলে আদিত্য ভাইয়াদের গাজীপুরে যে ফার্মহাউস আছে ওখানে যাবে সেলিব্রেট করতে। আদিত্য ভাইয়ার তেমন ইচ্ছে ছিল না।কিন্তু আবির আর তাসির দুজনে মিলে রাজি করিয়েছে। ওখানে বাইরের কেউ যাবে না শুধু ওরা তিনজন আর আদিত্য ভাইয়ার বোন সানা যাবে। এটা একটা পিকনিকের মতন হবে আর কি।
…..তো? এসব আমাকে বলছিস কেন?
….বলছি কারণ, আবির আমাকেও যেতে বলছে ওর সাথে। কিন্তু আমার একা যেতে কেমন যেন লাগছে তাই বলছিলাম যে তুইও চলনা আমাদের সাথে। আদিত্য ভাইয়ারও অনেক ভালো লাগবে তুই গেলে।
নূর চমকে উঠে বললো।
…আমি? পাগল হয়ে গেছিস তুই? তুই জানিস না আমার বাসার খবর? ছোট মা জানতে পারলে আমার জান কবাজ করে ফেলবে।
…হ্যাঁ জানিতো। তবুও দেখনা তুই যদি একটু কোনো ভাবে একটু ম্যানেজ করতে পারিস। আমরা সকালে যেয়ে আবার সন্ধার আগেই ফিরে আসবো। আর আদিত্য ভাইয়াও নিশ্চয় খুশি হবেন তোকে দেখে।
নূর একটু চিন্তায় পড়ে গেল। মন মনে ওরও ইচ্ছে হচ্ছে আদিত্যের জন্মদিনে ওর পাশে থাকার।কিন্তু ও যে ইচ্ছে করলেও যেতে পারবে না। ছোট মা সেটা কখনও হতে দিবে না। নূর মন খারাপ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
————————————
নূর কৃষ্ণচূড়া গাছের দিকে হেঁটে যাচ্ছে আদিত্যর সাথে দেখা করার জন্য। পেছন থেকে দেখতে পেল আদিত্য ব্রেঞ্চের ওপর বসে আছে। তানির বলা সেই কথাটা যে আদিত্য ওকে ভালোবসে।কথাটা মনে পরতেই নূর নিচের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে লাজুক হাসলো । তারপর নিজেকে একটু ঠিক করে আদিত্যের কাছে গেলো। আদিত্যের কাছে আসতেই আদিত্য মুচকি হেসে নূরকে বসতে বললো। নূর চুপচাপ আদিত্যের পাশে বসে পড়লো। আজ কেন যেন ওর খুব লজ্জা লাগছে।
আদিত্য নূরকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই হঠাৎ আবির তাসির আর তানি এসে ওখানে হাজির হলো। আদিত্য ওদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো।
….কি ব্যাপার তোরা এখানে কি করছি?
আবির ক্যাবলা হাসি দিয়ে বললো।
…ভাই জাস্ট টু মিনিটস।আমাদের কিছু কথা আছে ভা,,, আই মিন নূরের সাথে। বলেই চলে যাবো।
আদিত্য জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
… নূরের সাথে কি কথা?
…আরে বলতে দিলেতো বলবো।
আবির নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….আসলে নূর কাল ভাইয়ের জন্মদিন। তাই আমরা প্লান করেছি। কাল আমরা সবাই মিলে আমাদের ফার্মহাউসে যাবো। তাই তোমাকেও বলছি।তুমিও আমাদের সাথে গেলে আমাদের অনেক ভালো লাগতো। তো বলো তুমি আসবে।
নূর কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।ইচ্ছে থাকা সত্বেও হ্যাঁ বলতে পারছে না ।নিজের ফ্যামিলি প্রবলেমের কথা এদের কিভাবে বুঝাবে?
আদিত্য নূরের ব্যাপারটা বুঝতে পারছে। যদিও নূর আসলে সবচেয়ে বেশি খুশি আদিত্যই হবে। তবুও নূরের ফ্যামিলির কথা ওর ভালো করেই জানা আছে। তাই নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..তোমার কোনো সমস্যা হলে দরকার নেই। ইটস ওকে।উই ক্যান আন্ডারস্ট্যান্ড।
নূর কিছু না বলে শুধু একটা ম্লান হাসি দিল।
——————————————
গাড়ির ভেতর বসে আছে নূর। গাড়ি সিগনালে এসে দাঁড়িয়ে আছে। মনটা একটু খারাপ করে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ ওর নজর গেল সামনে থাকা একটা বাইকে। বাইকে একটা ছেলের পেছনে একটা মেয়ে বসে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা স্বামী স্ত্রী। কারণ মেয়েটা শাড়ি পরা পেছন থেকে ছেলেটার কোমড় জড়িয়ে ধরে বসে আছে। কোনো একটা কথা নিয়ে দুজন হাসছে। দেখে মনে হচ্ছে তারা অনেক সুখী।
নূরের কাছে ব্যাপারটা অনেক কিউট লাগছে। ওদের দেখে নূর মুচকি হাসছে।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে নূরকে এমন মুচকি হাসতে দেখে আদিত্যের ভ্রু কুঁচকে আসলো। তারপর নূরের দৃষ্টি অনুসরণ করে বাইরে তাকালো। আদিত্য দেখলো নূর বাইরে একটা বাইকে বসে থাকা দম্পতির দিকে তাকিয়ে আছে। আদিত্য মনে মনে ভাবলো নূরের কি বাইক পছন্দ?
পিছন থেকে আস হর্ণের শব্দে দুজনেরই ধ্যান ভাংলো। আদিত্য সামনে তাকিয়ে দেখলো সিগনাল গ্রিন হয়ে গেছে। তাই ও তাড়াতাড়ি গাড়ি স্টার্ট দিল।
তারপর নূরকে নামিয়ে দিয়ে আদিত্য চলে গেলো।
চলবে………..