#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব১২
“রুম জুড়ে শুনশান নীরবতা।রাত দশটা বাজতে চললো।লিয়া বিষন্ন মন নিয়ে শুয়ে আছে। তখন কার পর থেকে এখন পর্যন্ত লিয়া ওর রুম থেকে বাইরে যায়নি। কিছুক্ষণ আগে রাহবার এসেছিলো ডিনারের জন্য লিয়াকে ডাকতে,রাজিয়া সুলতানা রাহবার কে পাঠিয়ে ছিলেন।লিয়া দুই কথায় বলে দেয়,খাবো না। রাহবার চলে যাওয়ার কিছু সময় পর রাজিয়া সুলতানা নিজে আসেন লিয়ার রুমে।এসে দেখেন লিয়া উপুড় হয়ে দুই হাতে বালিশ জড়িয়ে ধরে বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। রাজিয়া সুলতানা বিছানার এক পাশে বসে লিয়ার পিঠের উপর হাত রেখে মৃদু কন্ঠে বলে,,”লিয়া খাবি না কেনো? বৃষ্টিতে ভেজার কারনে জ্বর টর আসে নি তো।”
লিয়া অন্যদিক হয়েই ছোট করে জবাব দেয়,,”নাহ্।”
রাজিয়া সুলতানা চিন্তিত হয়ে ভরাট গলায় শুধালেন,,”তাহলে কি সমস্যা খাবি না কেনো?কি হয়েছে আমাকে বল?না বললে আমি জানবো কি করে ?”
লিয়া পাশ ফিরে রাজিয়া সুলতানার কোলের উপর মাথা রেখে অস্ফুট কন্ঠে বলে,,”আম্মু তখন আমি তোমার আর আব্বুর সব কথা শুনেছি। আব্বু এখনই আমার বিয়ে নিয়ে কথা বলছে কেনো?”
রাজিয়া সুলতানা লিয়ার কথা শুনে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলেন,,”বিয়ের কথা বললেই তো আর বিয়ে হয়ে যাবে,এমন তো নয়।আর তোর আব্বু তো বলে দিয়েছে ওনাদের কে,এখন তোর বিয়ে নিয়ে ভাবছে না।তুই তোর মতো পড়াশুনা করতে থাক ,পড়ে পাছে না হয় এসব নিয়ে ভাবা যাবে।আর তোর অমতে কিছুই হবে না এটুকুও বিশ্বাস আমার উপর রাখতে পারিস।”
রাজিয়া সুলতানার শেষের কথা শুনে লিয়া আশার আলো দেখতে পায়।মনের কোণে জমা কষ্টের পাহাড় টা যেনো খানিকটা হলেও হালকা হলো। মরুভূমির ক্লান্ত পথিক যেমন মরিচীকা দেখে তৃষ্ণা মেটানোর জন্য একটু আশা করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়।লিয়া ওর মায়ের শেষের কথা শুনে তেমনই নিজের মন কে সান্ত্বনা দেওয়ার,মনটা কে ভালো রাখার একটু হলেও আশা খুঁজে পেলো।লিয়া উঠে বসে ওর মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে আবেগ ময় আবেদন করে,,”সত্যি বলছো তো তুমি?আমার চাওয়া কে প্রায়োরিটি দিবে?আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছু হতে দেবে না, প্লিজ আম্মু।”
রাজিয়া সুলতানা স্মিত হেসে লিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,”আজ পর্যন্ত কখনো, কোনো বিষয়ে তোকে জোর করেছি কি বল?করিনি তো,আর তুই কি করে ভাবলি।বিয়ের মতো জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তোকে জোর করবো।”
লিয়া ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”আব্বু। আব্বুর কথা বলছি তো,তুমি তো জানোই আব্বু নিজে যেটা ঠিক মনে করে সব সময় তাই করে।তাই বলছি, আব্বু নাকি ওনাদের কথা দিয়েছেন,তাহলে এবার কি হবে?”
রাজিয়া সুলতানা কিছু সময় ভেবে নিয়ে বলে,,”তুই এসব নিয়ে চিন্তা করিস না।আমি আছি তো,আমি সবটা সামলে নেবো।তুই রাজি না থাকলে সেই বিয়ে ক্যান্সেল করার দায়িত্ব আমার থাকবে।”
লিয়া ফট করে রাজিয়া সুলতানার গালে চুমু দিয়ে বলে,,”থ্যাংকস আম্মু।”
“আচ্ছা হয়েছে এবার চল খাবার খেয়ে নিবি।”
কাউকে গভীর ভাবে ভালো লেগে যাওয়া বা ভালোবেসে ফেলাটা একটা সমস্যা।তাকে ছাড়া আর অন্য কোনো কিছু ভালো লাগে না।অন্য সব কিছু তুচ্ছ মনে হয়। ভালোলাগার মানুষ টা ই সব থেকে বড় হয়ে দাঁড়ায়।হুটহাট করেই তাকে দেখতে ইচ্ছে করে।তার সাথে সব সময় কথা বলতে ইচ্ছে করে।মন মস্তিষ্ক জুড়ে তার কথাই সব সময় ঘুরেফিরে স্মরণ হয়।রাত বারোটা বাজে।লিয়ার চোখে ঘুম আসছে না। বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করতে থাকে।মনের মধ্যে প্রচন্ড ইচ্ছে জাগে জারিফ এর ভয়েজ শোনার । কিশোরী বয়স টাই হলো আবেগী।এই বয়সে আবেগ টাই বেশি কাজ করে।আর সেই আবেগে স্ব ইচ্ছায় গা ভাসিয়ে দিয়েছে লিয়া।লিয়ার মন প্রাণ জুড়ে একটাই ধ্যান ধারনা ওর ভালো থাকার মেডিসিন এখন একমাত্র জারিফ।লিয়া বিছানা থেকে নেমেই ব্যালকনিতে গিয়ে ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দেয়।চোখ বন্ধ করে তখনকার ফোনে বলা জারিফের কথা গুলো স্মরণ করতে থাকে।আমি যেমন স্যার কে নিয়ে ভাবি স্যারও কি আমায় নিয়ে ভাবেন?আজকে আমাকে হেল্প করলো শুধু ওনার ছাত্রী বলেই কি?
লিয়া অস্ফুট স্বরে বিড়বিড় করে বলে,,যেদিন থেকে আমি আপনাকে দেখেছি,সেদিন থেকে আমার স্বপ্ন গুলো হয়েছে বেপরোয়া।মনটাও আমার কন্ট্রোলে থাকে না আর।সময়গুলোও এলোমেলো হয়েছে আমার।আমার হাসি আপনাকে নিয়ে,আমার খুশি আপনাকে ঘিরে।আপনি আমার ছায়া,আপনি আমার রোদ।আপনি আমার হৃদয়ের উজ্জ্বলতা। আপনি আমার শত বছরের সম্পদ। আপনি জানেন কি?জানেন না?ভালো মন্দ প্রতিটি মূহুর্তে নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে,চোখের পলকে পলকে আমার শুধু আপনাকেই চাই।
জারিফ পড়ালেখা শেষ করে ব্যালকনিতে গিয়ে এক হাত টাউজারের পকেটে গুঁজে অন্য হাত দিয়ে চুলের মধ্যে হাত বুলিয়ে সটান দাঁড়িয়ে রয়। চাঁদ মামা যেনো আজ মেঘের সাথে লুকোচুরি খেলছে। চাঁদের আলো একটু উঁকি দিতেই,আবার কালো মেঘে আবৃত হয়ে যাচ্ছে।ঠিক জারিফ এর মন মস্তিষ্ক আজ চাঁদ আর মেঘের মতো লুকোচুরি খেলছে।মনের মধ্যে কিছু অনুভূতি আসতেই মস্তিষ্ক সেই অনুভূতি গুলোকে ঢেকে দিতে মরিয়া হয়ে উঠে।জারিফ চোখ বন্ধ করতেই লিয়ার মায়াবী চোখ দুইটা ভেসে উঠছে।জারিফ ছোট করে শ্বাস নিয়ে ঠোঁট আওড়িয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,,জানিনা ঐ মায়াবী চোখ দুটির মাঝে কি এমন আছে?তবে এতটুকু জানি আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি ঐ মায়াবী চোখের মাঝে। এরমধ্যে হঠাৎ শব্দ করে জারিফ এর ফোন বেজে উঠে।ফোন হাতে নিয়ে এতো রাতে তাসনিম এর কল দেখে জারিফ অবাক হয়।ফোন রিসিভ করে শান্ত গলায় বলে,,
“এতো রাতে তুই হঠাৎ ফোন করলি যে।”
তাসনিম এর আজ বারবার জারিফের কথা মনে হচ্ছিলো।তাই হুট করেই কল দিয়ে বসে। তাসনিম নরম গলায় বলে,,”রোজ,রুপক,রোহান ওদের সাথে গ্রুপে কথা বললাম।তুই তো অনলাইনে ছিলি না।তোকেও মেসেজ দেওয়া হয়েছিলো।আজ কয়দিন তোদের কারো সাথে কথা হয়নি তাই সবাই মিলে গ্রুপ চ্যাট করলাম। গ্রুপে তোকে না পেয়ে ভাবলাম যে ফোন করে তোর সাথে কথা বলে নেই।ফোন করে তোকে বিরক্ত করলাম বুঝি?”
জারিফ মৃদু কন্ঠে বলে,,”নাহ্ ঠিক আছে। বিরক্ত হবো কেনো?রাত বারোটা বাজে এই সময় ফোন করেছিস তাই প্রশ্ন টা করেছি।”
“জারিফ কেমন আছিস তুই?”
“ভালো।তোর কি খবর?কবে ফিরছিস?”
“এইতো পরশু চলে আসবো।”
“আচ্ছা তাসনিম ভালো থাক।আর ভালো ভাবে আয় কেমন।আমার ঘুম পাচ্ছে।বাই।”
তাসনিম বাই বলার সাথে সাথেই টুটটুট শব্দে কল কে’টে যায়। ফোনের দিকে তাকিয়ে তাসনিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
লিয়া কলম কামড়ে ধরে আড়চোখে জারিফের দিকে তাকাচ্ছে।জারিফ বিষয়টা দেখে স্থির ভাবে শান্ত গলায় বলে,,”কি হলো, অংক টা করো। নার্সারির বাচ্চার মতো কলম কামড়াচ্ছো কেনো?
লিয়া মাথা নিচু করে লিখতে যাবে সেই সময় লিয়া এক হাত চোখে ধরে অস্ফুট স্বরে, আহ্ শব্দ করে।জারিফ লিয়ার দিকে তাকিয়ে চিন্তিত হয়ে বলে,,”কি হয়েছে?লিয়া আর ইউ ওকে?”
লিয়া এক হাতে চোখ ডলতে ডলতে বলে,,”চোখের মধ্যে কিছু একটা পড়েছে হয়তো। চোখ খুলতে পারছি না।”
জারিফ বিরক্তিকর ফেস নিয়ে বলে,,”তোমার যত সমস্যা কি আমার সামনে থাকলেই হয়, আশ্চর্য।”
লিয়া ইন্নোসেন্ট ফেস করে করুণ গলায় বলে,,”পোকা গেলে আমি কি করব শুনি? আমার দোষটা কোথায় এখানে।আমাকে হেল্প করা বাদ দিয়ে আপনি আরো আমাকে কথা শুনাচ্ছেন স্যার।”
জারিফ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”সেদিনও তো এরকম বলেছিলে,তো কোনো পোকা টোকা কিছুই দেখতে পেলাম না। সেইজন্য বলছি যাও চোখে পানি দিয়ে আসো,সব ঠিক হয়ে যাবে।”
লিয়া এক হাত চোখে ধরেই ঠোঁট উল্টে বলে,,”এইভাবে চোখ বন্ধ অবস্থায় কি করে যাবো স্যার?”
লিয়ার কথা শুনে জারিফের মেজাজ খারাপ হতে থাকে।পোকা যদি যেয়েও থাকে তা তো এক চোখে,অন্য চোখটা কি হয়েছে শুনি।যে,অন্য চোখ দিয়ে দেখে আপাতত ওয়াশরুম পর্যন্ত যেতে পারবে না।এরকম বোকা বোকা কথা শুধু এই মেয়ের দ্বারাই সম্ভব,অন্য কারো দ্বারা নয়। অবশেষে জারিফ বলে,,”হাতটা সরিয়ে চোখ মেলে তাকানোর ট্রাই করো।আমি দেখছি আদৌ পোকা টোকা আছে কিনা।”
লিয়া হাত সরিয়ে ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়।আর মনে মনে বলে,,”কোথায় ভেবেছিলাম কেয়ার করবে, আলতোভাবে আমার চোখেতে হাত রেখে ঠোঁট গোল করে ফু দিবে,সেসব কিছুই হলো না। ধুর ভালোলাগে না।শুধু শুধু আমি আমার চোখটা ডলতে ডলতে লাল বানিয়ে ফেললাম।”
জারিফ গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,,”ফাস্ট অংক টা করে নাও। সময় চলে যাচ্ছে তো আমার কাজ আছে,আমাকে বাসায় যেতে হবে।”
লিয়া অংক করতে থাকে,আর জারিফ এর অগচরে খাতার ভেতর থেকে ছোট একটা চিরকুট বের করে টেবিলের উপর রেখে দেয়। কিয়ৎক্ষন পরেই জারিফের দৃষ্টি যায় টেবিলের উপর রাখা সাদা কাগজের উপর। যেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে,,
চাঁদ যেমন রাতকে ভালোবাসে
আমিও ঠিক তেমনি করে একজনকে ভালোবাসি।
চাঁদের ভালোবাসাকে যেমন করে কেউ বুঝে না,ঠিক তেমনই করে
সে আমার ভালোবাসা বুঝে না।
হাতের লেখা দেখে জারিফের বুঝতে বাকি থাকে না যে এটা লিয়ার লেখা।এই চিরকুট এর মানে কি? জারিফ তা ভালো ভাবেই বুঝতে পারে।সব কিছু বোঝা সত্বেও জারিফ নির্বিকার ভঙ্গিতে থাকে।লেখা গুলো পড়ে জারিফ লিয়ার দিকে তাকায়।লিয়া খুবই মনোযোগ দিয়ে অংক করছিলো।লিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে না যে,এইখানে এই মুহূর্তে এই চিরকুট টা রাখার মতো কাজটি লিয়া করতে পারে।কারন লিয়া বেশ সহজ সরল ভাবটা নিয়ে বসে আছে।লিয়া আড়চোখে জারিফের দিকে তাকিয়ে হাবভাব বোঝার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয় বুঝতে।কারন জারিফ ভাবলেশহীন ভাবে বসে ছিলো।ওকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে,আদৌ চিরকুট টা পড়েছে কিনা?
কিছুক্ষণ পর রাজিয়া সুলতানা নাস্তা দিয়ে যান।লিয়া ধোঁয়া উঠা কফির মগে ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে আর ভাবছে,স্যার কি চিরকুটের লেখা টা দেখতে পায়নি না-কি?এখন কি করবো,কিভাবে স্যার কে বলবো?আমি আপনাকে লাভ করি।মেয়ে হয়ে নিজ মুখে বললে বিষয়টা কিরকম দেখাবে না। মানলাম এভরিথিং ইজ ফেয়ার লাভ এন্ড ওয়ার,বাট স্যার যদি আমার কথায় রিয়াক্ট করে বসে তখন।এমনিতেই যে গম্ভীর স্বভাবের আমি যখন বলবো যে,স্যার আমি আপনাকে ভালোবাসি।আমার কথাটা শোনার সাথে সাথেই স্যার তখন নব্য প্রেমিকের রোল প্লে না করে ঠিক একদম মাস্টার মশাইয়ের রোল প্লে করতে ব্যাস্ত হয়ে পড়বে।মোটা গোলগোল ফ্রেমের চশমা চোখে দেওয়া গম্ভীর মুখ অবয়ব করে কঠোরভাবে বলবে,,দেখো লিয়া আমি তোমার থেকে অনন্ত এরকম আচরন আশা করিনি।আমি তোমাকে ছাত্রীর নজরে দেখি তাই এসব প্রেম ভালোবাসা সম্ভব নয়।আর তুমি তো এখনো ছোট এটা তোমার আবেগ।আর এই আবেগ কে কখনো ভালোবাসা বলে না।আর দ্বিতীয়ত আমার গার্লফ্রেন্ড আছে।লিয়া নড়েচড়ে বসে একটু থেমে আবার ভাবে,,স্যারের প্রথম কথা শুনে স্বাভাবিক থাকলেও দ্বিতীয় কথা শুনলে আমি সোজা অ্যাটাক ফ্যাটাক করে করে বসবো। হার্টের সাথে সাথে কিডনি,লিভার, ফুসফুস আরো যা যা আছে সব একসাথে অ্যাটাক করে বসবে।এসব ভেবে লিয়া লম্বা শ্বাস নিয়ে জারিফের দিকে তাকিয়ে মুখটা মলিন করে বলে,,
“স্যার আমার ছুটি শেষ।তাই কালকে চলে যেতে হবে।আবার আসতে আসতে চার মাস পেরিয়ে যাবে।ইয়ার চেন্জ এক্সাম এর পর আবার আসবো।”
জারিফ মাত্রই কয়েক ঢোক কফি খেয়েছে।এর মধ্যে লিয়ার কথা শুনে গালে থাকা কফি টুকু গলা দিয়ে নামাতে পারছে না।বেশ স্বাদের কফিটা হঠাৎ করেই বিস্বাদ হয়ে উঠলো।কেমন জানি তেতো তেতো লাগছে।কই একটু আগে তো কয়েক ঢোক খেয়েছিলো তখন তো তেতো লাগেনি।এখন কেনো হঠাৎ করেই তেতো লাগছে কেনো?কফিটা বিস্বাদ হলো নাকি জারিফ এর মনটা?জারিফ বুঝতে পারছে না।আসলেই বুঝতে পারছে না,না ইচ্ছে করেই বুঝতে চাইছে না?
জারিফ স্থির দৃষ্টিতে লিয়ার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বলে,,”ওহ্। আচ্ছা ভালো করে পড়াশোনা করো কেমন।”
লিয়া আবদারের সুরে বলে,,”স্যার কিছু মনে না করলে বলছি যে,মাঝে মধ্যে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করতে পারি।না মানে পড়াশোনার কোনো টপিক না বুঝলে, আপনার থেকে বুঝিয়ে নেওয়ার জন্য কল দিবো।”
জারিফের মনটা যেনো এই কথাটিরই অপেক্ষা করছিলো।লিয়ার এই কথাটা জারিফের অশান্ত মনকে কিছুটা হলেও শান্ত করতে সক্ষম হয়।জারিফ বলে,,”সমস্যা নেই,তোমার দরকার পড়লে নক দিও।”
লিয়া স্মিত হেসে বলে,,”থ্যাংকস”
“মন দিয়ে পড়াশোনা করো।আর নিজের খেয়াল রেখো।তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলে,,আমি আসছি,টেক কেয়ার।”
লিয়াও চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,,”স্যার আপনি না বলেছিলেন যে,সময় করে একদিন লাভের অংক টা বুঝিয়ে দিবেন,কই দিলেন না তো।”
জারিফ প্রায় দরজা পর্যন্ত গিয়েছিলো।লিয়ার কথা কানে পৌঁছানোর পরপরই পিছনে ঘুরে দুই হাত জিন্স প্যান্টের পকেটে গুঁজে,উপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে ফাইভ সেকেন্ড ভেবে নিয়ে হালকা ভয়েজে বলে,,”ওয়েট করো।যদি কোনোদিন বোঝানোর জন্য কাংখিত দিন আসে,তখন না হয় সেই কাংখিত দিনটিতে বুঝিয়ে দেবো লা ভ টা।একটু টেনে বলে তারপর এক হাত দিয়ে মাথা চুলকিয়ে নিয়ে বলে,আইমিন লাভের অংক টা।”
লিয়া লাজুক হেসে চঞ্চল কন্ঠে বলে,,”আদৌতেও কোনোদিন সেই কাংখিত দিনটি আসবে কি স্যার?
[চলবে…ইন শা আল্লাহ]