#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৩৫
“সম্পর্ক থাকলে ভুল বোঝাবুঝি হতেই পারে। যতই ভুল বোঝাবুঝি হোক না কেনো সেটা মিটিয়ে নিতে হবে।কারন ইগো টা নয়। সম্পর্ক টাই বেশি দামী।ভালোবাসা তাদের জন্য শ্রেষ্ঠ।যারা শত বাঁধার পরেও একজন আরেকজনের উপর আসক্ত।আ’ম আ্যডিক্টেড বাই ইউ।”
কথাগুলো কর্ণ দিয়ে শ্রবণ করলেও লিয়া হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে থাকে। জারিফের কথাগুলো অনুভব করে লিয়ার দুচোখের কার্নিশ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। শুধু মাত্র ভুল বোঝার জন্য এতদিন দু’জনেই কত কষ্ট পেয়েছে।লিয়া ভাবে,রা’গ জিদ করে না থেকে যদি স্যারের সাথে আরেকবার যোগাযোগ করে কথাটা শেয়ার করতাম।তাহলে হয়তো এতগুলো মাস আমাদের দুইজনকে কষ্টে কাটাতে হতো না।জারিফ হাত দিয়ে লিয়ার গাল বেয়ে পড়া পানিটুকু মুছে দিয়ে বলে,,”হুশ!আর কান্না নয়।তোমাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।ঠিক কতটা রাত নির্ঘুমে চোখের পানি ফেলে কাটিয়েছো।”
কিয়ৎক্ষন থেমে জারিফ আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলে,,
“আজকে মনে হচ্ছে আমি যেনো আমার প্রাণ ফিরে পেয়েছি।আমার অনুভূতি গুলো ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।জানো লিয়া যখন শুনেছিলাম তুমি অন্য কারো হয়েছো। অন্যকেউ তোমাকে ছুঁয়েছে।এটা ভাবতেই আমার নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। আমার নিজেকে খুব অসহায়, অস্তিত্বহীন মনে হতো সব সময়।সব কিছু থেকেও মনে হতে সত্যি বলতে আমার কিছুই নেই।যা সব আছে সেসবের কোনো মূল্যই নেই।তুমি ছাড়া আমার জীবনের সব কিছুই ভ্যালুলেস।তোমার ছবির দিকে তাকিয়ে কত রাত নির্ঘুমে পার করেছি তার হিসাব নেই। প্রতিটা সেকেন্ড কে আমার কাছে ঘন্টা মনে হতো।তবে আজকে কি মনে হচ্ছে জানো?আজকে জ্ঞানীদের কথাটা খুব করে স্মরণ হচ্ছে।জ্ঞানীরা বলেছেন,হতাশ হওয়ার কিছু নেই।যেটা যার ভাগ্যে থাকে দেরিতে হলেও সে সেটা পাবেই।”
লিয়ার মনেও একই অনুভূতি হচ্ছে।লিয়া শান্ত স্বরে বলে,,”আপনাকে কতটা ভালোবাসি তা আমি জানি না।আর আপনাকে কেনো নিজের থেকেও বেশী ভালোবাসি সেটাও আমি জানি না।আপনাকে ভালোবাসার কোনো ব্যাখা আমার জানা নেই। আমি শুধু এতটুকুই জানি, আপনার যায়গাটা কেউ কোনোদিন নিতে পারবে না।আর আমার জ্ঞান থাকা অব্দি আপনার যায়গাটা অন্য কাউকে দিতেও পারবো না। আপনার কাছে আমার বেশি কিছু চাওয়ার নেই।সারাজীবন ছায়ার মতো আপনাকে আমার পাশে চাই।”
জারিফ লিয়ার দিকে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দৃঢ় গলায় বলে,,”যদি বিশ্বাস করো তাহলে টেনশন মুক্ত থাকো।কারন ম’রে যাবো তবুও তোমায় ছেড়ে যাবো না।তুমি আমার এমন এক শুণ্যতা যা পুরো পৃথিবী দিলেও পূরণ হবে না। আমার শুণ্যতা পূরণ হওয়ার জন্য আমার শুধু তোমাকেই চাই।”
সুন্দর একটা ঝলমলে বিকেল। চারিদিকে বিভিন্ন রঙের লাইটিং এ পুরো বাড়িটা ঝলমল করছে। ঝলমল করছে লিয়া আর জারিফের মনটাও।এতদিনের কষ্ট শেষে দু’জনেই বেশ হাসি খুশি ফুরফুরে মেজাজে আছে।মন ভালো আছে তাই সব কিছুও ভালো লাগছে।লিয়া সুন্দর পরিবেশ টা বেশ উপভোগ করছে। প্রিয় জনকে পাশে নিয়ে আনন্দঘন পরিবেশ টা আরো বেশি চমৎকার লাগছে লিয়ার কাছে। প্যান্ডেলের একপাশে ফাঁকা জায়গায় লিয়া,জারিফ,তাসনিম আর আলিফ দাঁড়িয়ে খোশগল্প করছে।লিয়ার কিছুটা লজ্জা অনুভব হচ্ছে।তারপরেও পরিবেশটা দারুন উপভোগ্ করছে।
তাসনিম আলিফের সাথে জারিফের পরিচয় করিয়ে দেয়। তাসনিম জারিফকে দেখিয়ে আলিফকে উদ্দেশ্য করে বলে,,”এ হলো ম্যাজিস্ট্রেট আয়মান জারিফ।বাড়ি ময়মনসিংহে ।আমার ফ্রেন্ড।আমরা সেইম ফ্যাকাল্টিতে ছিলাম।তবে জারিফের পরিচয় এখানেই শেষ নয়।এখন থেকে আমাদের সাথে জারিফের বড় পরিচয় হলো,জারিফ এ বাড়ির জামাই হতে যাচ্ছে।তাহলে কি দাঁড়ালো?আপনারা দুজন ভাইরা ভাই হতে যাচ্ছেন।”
লিয়া মাথা নিচু করে ওড়ানার কোণা আঙ্গুলে পেচাতে থাকে।কিছুটা অস্বস্তি হতে থাকে লিয়ার। আলিফ অমায়িক হেসে বলে,,”ওহ্!তাই না-কি? কনগ্রাচুলেশন।”
আলিফ এক হাত বাড়িয়ে দেয় হ্যান্ডশেক করার জন্য। জারিফ হাস্যজ্বল মুখে হাতে হাত মিলিয়ে বলে,,
“থেংকিউ।”
ওদিকে বাড়ির ভেতরে উপরে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে রাজিয়া সুলতানা আর মঈনুল খাঁন লিয়ার বাবা এনামুল খাঁন কে বোঝাতে থাকেন। জারিফ কে মেনে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন কথা বলতে থাকেন।
রাজিয়া সুলতানা শান্ত স্বরে বলেন,,”অনেক তো হলো।দুই বছর ধরে চেষ্টা তো আর কম করোনি।মেয়ে তো কিছুতেই অভ্র কে বিয়ে করতে রাজি হলো না।দুই বছরে যেহেতু রাজি হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না।আমি জানি।আমি মা আমার মেয়ের মনের কথা আমি পড়তে পারি।তাই বলছি তুমি তোমার সিদ্ধান্ত টা এবার চেন্জ করো। মেয়ের ভালো থাকার কথা ভেবেও না হয় জারিফকে মেনে নাও।ভালো থাকার জন্য কখনো রাজপ্রাসাদের প্রয়োজন হয়না।ভালোথাকার জন্য কখনো কারি কারি টাকারও প্রয়োজন হয়না।ভালো থাকার জন্য একটা ভালো মানুষ ই যথেষ্ট।আর যদি সেই মানুষ টা হয় প্রিয় জন তাহলে তো কথাই নেই।মানছি জারিফের অভ্র দের মতো কারি কারি অর্থ সম্পদ নেই।বিএমডব্লিউ,ক্যারোলা, মার্সিডিস গাড়ি নেই।তবে আমি বলবো জারিফের কাছে থাকলে আর যাইহোক আমার মেয়ের কখনো সুখ শান্তির অভাব হবে না। জারিফের যা আছে তা দিয়ে আমাদের মেয়েকে হাসি খুশি রাখতে পারবে।লিয়াকে হ্যাপি রাখার জন্য জারিফের যা আছে তাই এনাফ।জারিফের ফ্যামেলি ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো।জারিফ একজন ছেলে হিসেবে আইডিয়াল। সর্বোপরি লিয়া নিজে ওকে চায়।আমি সবার আগে আমার মেয়ের চাওয়াকে প্রায়োরিটি দিতে চাই।আর আমি নিজেও পরখ করে দেখেছি। আমাদের মেয়ে ভুল কাউকে বেছে নেয়নি।”
এনামুল খাঁন গম্ভীর মুখাবয়ব করে ভাবতে থাকেন।মঈনুল খাঁন গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন,,”ভাই আমি তোমার থেকে অনেক ছোটো হলেও ভালো মন্দ বোঝার বয়স হয়েছে।আমি ছোটো হয়েও তোমাকে বলবো,তুমি আর ভুল করোনা।জারিফকে আমি ভালো করেই চিনি।খুবই অনেস্ট ছেলেটা। জারিফ ওর সততা, বিচক্ষণতা,আর সাহস নিয়ে কাজ করার জন্য প্রমোটেড হয়ে বগুড়া জেলা আদালতে আসছে।এই অল্প সময়ে তুমি আমি চেষ্টা করলেও হয়তো পারতাম না এই পর্যায়ে আসতে।তাই বলছি যা হওয়ার হয়েছে এবার তুমি তোমার ডিসিশন টা একটু চেন্জ করো।”
এতকিছুর পরেও এনামুল খাঁন নিশ্চুপ থাকেন।যা দেখে রাজিয়া সুলতানা হতাশ হন। মঈনুল খাঁন এনামুল খাঁন কে উদ্দেশ্য করে নিচের দিকে দেখিয়ে বলেন,,”ভাই একটু নিচে তাকিয়ে দেখো।আজকে মেয়েটার ফেসই বলে দিচ্ছে ও কতটা হ্যাপি আছে।মেয়ের মুখে সব সময় যেনো এই হাসিটা থাকে,বাবা হয়ে তুমি নিশ্চয় এটা চাইবে। তাই বলছি আর জিদ ধরে না থেকে।তোমার ইগো টাকে বড় করে না দেখে।তুমি জারিফের সাথে কথা বলো। আর যা হওয়ার হয়েছে।সেসব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে,মেয়ের চাওয়াটাকে প্রায়োরিটি দাও।”
নিচে জারিফ লিয়া পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সাথে তাসনিম আলিফও আছে।লিয়ার দিকে তাকিয়ে এনামুল খাঁন ভাবেন,,সত্যি আমি আমার ইগোটাকে বড় করে দেখে মেয়েটাকে অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। আরো অনেক আগেই আমার উচিত ছিলো,জারিফের সাথে কথা বলা।তাহলে আমার মেয়েটাকে এত কষ্ট পেতে হতো না অন্তত।আমার জিদটাকে বড় করে দেখে আমি বদলি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম পরিবেশ চেন্জ করলে লিয়া হয়তো জারিফকে ভুলে যাবে ।এইভাবনা আমার চরম বো’কামি ছিলো।তবে যাইহোক,এখন সময় এসেছে আমার ভুল শুধরে নেওয়ার।
এসব ভেবেই মনে মনে মাথা ঝাড়া দিলেন এনামুল খাঁন। তারপর গম্ভীর গলায় বলেন,,”হুম।ঠিক বলেছো তোমরা।আমি জারিফের সাথে কথা বলবো।আর ওর বাবার সাথেও কথা বলে সরি বলতে হবে। ভদ্র লোককে সেদিন কোনোমতেই আমার ফিরিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। সেই সব কথা মনে পড়তেই আমার নিজেকে খাঁটো মনে হচ্ছে।আ’ম রিপেন্ট ফর দিস।”
লিয়া স্টেজে নতুন চাচিমার পাশে বসে বিভিন্ন গল্প করছে। জারিফ গার্ডেন এরিয়ায় দাঁড়িয়ে ফোনে কারো সাথে কথা বলছিলো।কথা শেষে ফোনটা পকেটে রেখে পিছন ঘুরতেই এনামুল খাঁন কে দেখতে পান।জারিফ নম্র স্বরে সালাম দেয়।
এনামুল খাঁন সালামের উত্তর দিয়ে। শান্ত গলায় বলেন,,
“জারিফ বাবা কেমন আছো?তোমার বাবা মা কেমন আছেন?”
জারিফ মৃদু আওয়াজে বলে,,”আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে।”
এনামুল খাঁন গলা পরিষ্কার করে অপরাধবোধ নিয়ে বলেন,,”আসলে বাবা বলতে চাচ্ছি যে,যা কিছু হয়েছে তার জন্য আমি দুঃখিত।”
জারিফ নম্র স্বরে বলে,,”ইটস্ ওকে আঙ্কেল। প্লিজ এইভাবে বলবেন না।আপনি আমার গুরুজন।”
এনামুল খাঁন কথাটা শুনে জারিফের উপর বেশ স্যাটিসফাইড হন।জারিফের আচরণ ওনাকে মুগ্ধ করে।উনি কিছুটা জড়তা নিয়েই বলেন,,”আসলে বাবা অভ্রর ফ্যামেলির সাথে এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছিলাম। সেই সময় অন্য কোনো চিন্তা আমি করতেই পারিনি।
অভ্র ছেলেটা খা’রাপ নয়।অভ্র ছেলেটাও খুব ভালো।বেশ পলাইট। তবে সেসব বাদ দিয়ে আমি আমার মেয়ের ভালোলাগাকে দাম দিতে চাই।তোমাদের দুজনের জানা শোনা কে আমি প্রায়োরিটি দিতে চাই।”
কথাটা শুনে জারিফ মনে মনে খুব খুশী হয়। সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে।জারিফ মাথাটা নিচু করে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। এনামুল খাঁন কিয়ৎক্ষন থেমে আবার বলেন,,”জারিফ বাবা বলছি যে আমি তোমার বাবার সাথে ফোনে কথা বলে নিবো।আর তুমিও তোমার বাবা মা’কে বলো।আমরা বাসায় যাওয়ার পর যেনো ওনারা আসেন। এই বিয়েটার রেষ কাটলেই আমি তোমার বাবা মার সাথে কথা বলে দিনক্ষণ ঠিক করবো।”
“থেংকিউ আঙ্কেল।”
গোধূলি লগ্ন। পশ্চিম আকাশে সূর্য রক্তিম আভা ছড়িয়ে দিয়েছে। জারিফের যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। রাজিয়া সুলতানার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ির দিকে যেতে গিয়ে জারিফের মনটা ছটফট করতে থাকে।জারিফের ইচ্ছে করছে লিয়ার সাথে আরেকবার দেখা করে নেই।লিয়ার কথা ভেবে বাড়ির দিকে দৃষ্টি দিতেই জারিফের দৃষ্টি যায় দো-তলার ব্যালকনিতে। মাথাটা তুলে লিয়াকে ব্যালকনিতে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জারিফের ঠোঁটের কোণের হাসিটা চওড়া হয়।জারিফ লিয়াকে ইশারায় নিচে আসতে বলে। কোনো চিন্তা ভাবনা ছাড়াই লিয়াও ইশারায় জারিফকে ওয়েট করতে বলে।লিয়া রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় ভাবতে থাকে, লিভিং রুমে তো অনেকে আছে আমাকে এখন বাইরে যেতে দেখলে যেকেউ প্রশ্ন করতে পারে।আপু,তুলি ওরা তো বাড়ির ভেতরে আছে।আর বাইরে দূরের আত্মীয়রা।এই সময় একা একা বাইরে যেতেও কেমন জানি লাগছে।লিয়া চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিয়ে ঠোঁট আওড়ায়, আরিয়ান টাকেও কোথাও দেখছি না। আরিয়ান সাথে থাকলেও ভালো হতো।তবে না যেয়েও উপায় নেই স্যার তো ওয়েট করছে।এসব ভেবে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে লিয়া বাইরে যেতে থাকে।সদর দরজার চৌকাঠ পেরোতেই পেছন থেকে পুরুষালী কন্ঠে হাঁক ছেড়ে লিয়াকে ডাকে,,”এই লিয়া ওয়ান মিনিট। দাঁড়াও।”
কথাটা কর্ণপাত হতেই লিয়ার পা থেমে যায়।লিয়া বিরক্তিকর ফেস নিয়ে পিছন ঘুরে তুষারকে দেখতে পায়।তুষারের কোলে আসফি ছিলো।তুষার লিয়ার কাছে গিয়ে বলে,,”প্লিজ হেল্প মি।ওর মা কাজ করছে।আর কাউকে না পেয়ে আমার কাছে ধরিয়ে দিয়েছে।আমার কয়েকজন ফ্রেন্ড নিচে ওয়েট করছে আমার জন্য।সো বুঝতেই পারছো।”
লিয়া স্মিত হেসে বলে ,,”আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া।আমি আসফি কে নিচ্ছি।আপনি যেতে পারেন।”
তুষার আসফিকে লিয়ার কাছে দিয়েই হনহনিয়ে দ্রুত বেগে বাইরে চলে যায়।লিয়া আসফিকে কোলে নিয়ে গার্ডেন এরিয়ায় আসে।যেখানে জারিফ ওয়েট করছিলো। জারিফ দুই হাত পকেটে গুঁজে স্ট্রেইট দাঁড়িয়ে আছে।লিয়া আসফিকে নিয়ে জারিফের নিকটে গিয়ে ছোট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,,”এখন কোথায় যাবেন?না মানে বাড়িতে না বগুড়াতে?”
“কালকে অফিস আছে।বগুড়াতে যাচ্ছি। তা তোমরা বাসায় যাবে কবে?”
“আমরা হয়তো পরশু দিন যাবো।রাহবারের ক্লাস টেস্ট হচ্ছে।তাই তাড়াতাড়িই ফিরতে হবে।”
“ওহ্।”
জারিফ এক হাত দিয়ে আসফির চুলগুলো এলোমেলো করে দেয় ।আসফি কপাল কুঁচকে জারিফের দিকে তাকিয়ে থাকে।বেশ গম্ভীর মুখাবয়ব করে রেখেছে।ছোটো বাচ্চা তবে এটিটিউটড দেখে মনে হচ্ছে জারিফের কাজে মহাশয় বেশ বিরক্ত।জারিফ হালকা হেসে বলে,,”আঙ্কেল তো দেখতে হেব্বি কিউট হয়েছে। দেখতে অনেকটা তাসনিম এর মতো বাট গায়ের রং টা হয়েছে ওর বাবার মতো।একদম ধবধবে সাদা ফর্সা।”
লিয়া ঠোঁট উল্টে বলে,,”হুম।”
জারিফ আফসোসের সুরে বলে,,”দুই টা বছর ন’ষ্ট না হলে এতদিনে আমরাও এরকম একটা কিউট বেবি ডাউনলোড করতে পারতাম।আমার বেবিরা হয়তো আমাকে ব’কছে,তাদেরকে এই সুন্দর পৃথিবীতে আনতে দেরি হচ্ছে জন্য।”
লজ্জায় লিয়ার ফর্সা মুখটা লালাভ বর্ণ ধারণ করে।লিয়া ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যায়।লিয়ার কান দিয়ে উষ্ণ ধোঁয়া বের হতে থাকে।লিয়া ঠোঁট আওড়িয়ে বলে,,”স্টপ। প্লিজ স্টপ।”
জারিফের চোখে মুখে দুষ্টু হাসি খেলে যায়।লিয়াকে লজ্জা পেতে দেখে জারিফ বেশ মজা নিতে থাকে।লিয়াকে আরো অস্বস্তিতে ফেলতে জারিফ দুষ্টামি করে লিয়ার দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে,,”এরকম একটা কিউট বেবি আমারও চাই।চলো দ্রুত বিয়েটা সেরে ফেলি।আর বেবি ডাউনলোডের প্রসেসিং কিন্তু ওয়িডিং নাইট থেকেই শুরু হবে।”
লিয়ার হার্ট বিট যেনো মিস হলো।লিয়া চোখ বন্ধ করে নিয়ে বিড়বিড় করে আওড়ায়,,”অসভ্য একটা।মুখে কোনো লাগাম নেই।”
জারিফ একহাত দিয়ে আসফির গাল টেনে দিয়ে বলে,,”থাকো আঙ্কেল।তোমার মনি তো লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে।তাই এখানে আর আমার বেশিক্ষণ থাকা মোটেও ঠিক হবে না।”
আসফির গাল টেনে দেওয়াতে আসফি ঠোঁট উল্টে কান্না করতে যাবে।তখন লিয়া আসফিকে ঝাঁকিয়ে সোনা কান্না করে না হেনতেন বলে থামায়।জারিফ অবাক গলায় বলে,,”বাহবা! আঙ্কেল তো দেখছি। হেব্বি এটিটিউট বয়।”
জারিফের কথায় লিয়া ঠোঁট চওড়া করে শব্দহীন হাসে।জারিফ আসফির গালে টুপ করে একটা চুমু খায়।তারপর লিয়াকে বলে,,”রাতে ফোনে কথা হবে। তাড়াতাড়ি বাসায় চলে এসো কেমন। বগুড়ায় গেলে দেখা হবে।টেক কেয়ার।লাভ ইউ সো মাচ জান।”
লিয়া হাসি মুখে বলে,,”দেখে শুনে যাবেন।নিজের যত্ন নিয়েন।লাভ ইউ সো মাচ টু।বাই।”
জারিফ অন্যান্য অফিসার্স দের সাথে গাড়িতে উঠতে যাবে।তখন মঈনুল খাঁন কে দেখতে পান। মঈনুল খাঁন সবাইকে বিদায় দিচ্ছেন।সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলছেন।এমন সময় জারিফের নিকট এসে বলেন,,
“জারিফ আবার এসো।দেখে শুনে যেয়ো কেমন।”
জারিফ অমায়িক হেসে নম্র স্বরে বলে,,”নিশ্চয়।দোয়া রাখবেন আঙ্কেল। আসসালামুয়ালাইকুম।”
জারিফ আর মঈনুল খাঁন এর কথা শুনে অন্যান্য অফিসার্স অবাক হয়।কেউ কেউ মনে মনে আওয়াড়,কি ব্যাপার মঈনুল সাহেব আর জারিফ সাহেবের কথার টন হঠাৎ পাল্টে গেলো কিকরে? অফিসিয়াল সম্মন্ধন বাদ দিয়ে একজন শুধু জারিফ বলছে।আবার জারিফ সাহেব আঙ্কেল বলছে।ব্যাপার -স্যাপার কি? নিশ্চয় সামথিং সামথিং।
চারদিন পর,,,
লিয়ারা গতকালকেই বাসায় ফিরেছে। ক্লান্ত দুপুর মাথার উপর কাঠফাটা রোদ। চৈত্রের বাতাসে সব কিছু শুষ্ক। নদীনালা খালবিল শুকিয়ে আছে রৌদ্রের তাপে। বৃষ্টির দেখাও নেই। ঘড়ির কাঁটা জানান দিচ্ছে দুপুর একটা বাজে। ক্লাস শেষ করে লিয়া ওর ফ্রেন্ড রিভির সাথে নিচে নেমে আসছে।রিভি একনাগাড়ে গড়গড় করে এটা সেটা বলেই চলছে।
“তুই তো সেদিন ঐভাবে অনুষ্ঠান ফেলে চলে গেলি।তারপর তো আর কলেজেও আসলি না।”
লিয়া ঠোঁট মেলে বলে,,”আরে তখন বললাম না তোকে।আমার ছোটো চাচ্চুর বিয়ে ছিলো।তাই দাদুবাড়িতে গিয়েছিলাম।”
রিভি ঠোঁট উল্টিয়ে বলে,,”ওহ্। আচ্ছা তোকে তো সেদিনকার একটা ঘটনা বলাই হয়নি।জানিস?”
লিয়া ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”না বললে জানবো কিকরে?”
রিভি চোখে মুখে একরাশ আনন্দ নিয়ে বলতে থাকে,,
“সেদিন RAG DAY তে একজন ম্যাজিস্ট্রেট আসছিলো। লুকিং ভেরি বিউটিফুল এন্ড হ্যান্ডসাম।আ’ম ক্রাশড অন হিম লিয়া।আ’ম ক্রাশড।”
লিয়া চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে দাঁত কটমট করে বলে,,”তা এটা তোর কত নম্বর ক্রাশ হবে বলতো।”
রিভি অসহায় ফেস করে করুণ গলায় বলে,,”মনে করতে পারছি না।”
লিয়া বিরক্তিকর কন্ঠে বলে,,”মনে করতে পারবি কিকরে।যখন যাকে দেখিস তার উপরই ক্রাশ খাস।এত ক্রাশ খেলে মনে থাকবে কিকরে।তা বলছি এসব আজেবাজে জিনিস খেয়ে পেট খা’রাপ না করে পড়াশোনায় মন দে।”
রিভি মুখটা মলিন করে বলে,,”আরে দোস্ত রাখনা তোর জ্ঞান দেওয়া কথা বার্তা।আমি টেনশনে আছি ম্যাজিস্ট্রেট টা ম্যারিড না আনম্যারিড। সিঙ্গেল না মিঙ্গেল।”
এই কথা গুলো বলতে বলতে গেট দিয়ে বের হতেই রিভির চোখ জ্বলজ্বল করে উঠে।রিভি এক হাত দিয়ে ইশারা করে লিয়াকে দেখিয়ে এক্সাইটেড হয়ে বলে,,”এই দেখ লিয়া।বলতে বলতে মেজিস্ট্রেট সাহেবের দেখা পেয়ে গেলাম।ঐযে দেখ দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রল করছে।”
লিয়া সামনে তাকিয়ে দেখতে পায়। রাস্তার পাশে একটা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে জারিফ ফোন স্ক্রল করছে।রিভির কিছুক্ষণ আগে বলা কথাগুলো লিয়ার মস্তিষ্ক স্মরণ করিয়ে দিতেই।লিয়ার রা’গ জেলাসি দুইটাই হতে থাকে। জারিফের উপর রা’গ হতে থাকে আবার।লিয়া ভাবে এখানে এসে দাঁড়ানোর কি দরকার?কত মেয়েরা আছে।না জানি সেদিন আরো কত মেয়ে রিভির মতো ক্রাশ খেয়ে বসে আছে।তারা এখন জারিফকে আবার দেখে রঙিন স্বপ্ন বুনতে না শুরু করে।জারিফ এখানে না আসলেই তো ভালো হতো।দেখা করার ইচ্ছে তাহলে কল করে রেস্টুরেন্টে ডেকে নিলেই হতো।এসব ভেবে লিয়ার গাল ফুলিয়ে রাখে।
এরমধ্যে জারিফ ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকাতেই লিয়াকে দেখে খানিকটা এগিয়ে এসে লিয়াকে ডেকে বলে,,”এই লিয়া।কাম সুন।”
লিয়ার নাম ধরে ডাকাতে রিভির কপালে বেশ খানিকটা ভাঁজ পড়ে।রিভি কপাল কুঁচকে লিয়াকে প্রশ্ন করে,,”এই লিয়া উনি তোর নাম জানে কিকরে?”
লিয়া ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,” প্রশ্ন টা উনাকেই কর।”
জারিফ সামনে আসতেই রিভি আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারলো না। সালাম দিয়ে সোজাসুজি প্রশ্ন করেই বসে,,”স্যার আমি রিভি। থার্ড ইয়ারের ইকোনমিক্স ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট।সেদিন প্রোগ্রামে আপনাকে দেখেছিলাম।তা স্যার কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করতাম।”
জারিফ নির্বিকার গলায় বলে,,”ওকে নো প্রবলেম।”
লিয়াকে দেখিয়ে প্রশ্ন করে,,”আপনি ওকে চিনেন?”
জারিফ একহাত পকেটে গুঁজে। অন্যহাতের এক আঙ্গুল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে ফেলে ছোটো করে বলে,,”হুম।”
রিভির উৎসুকতা আরো দ্বিগুন বেড়ে যায়। কিউরিওসিটি নিয়ে বলেই ফেলে,,”কিকরে?না মানে রিলেটিভ হয়।”
জারিফ একহাত দিয়ে চুল গুলো ব্যাক ব্রাশ করে স্মিত হেসে বলে,,”আমার উডবি।”
আমার উডবি কথা শুনে রিভি ফাঁকা ঢুক গিলে নিয়ে মনে মনে আওড়ায়,,লে বাবা এবারের ক্রাশ খাওয়াটা হজমই করতে পারলাম না।”
রিভি মিষ্টি হেসে বলে,,”ওয়াও!তাই।খুব ভালো।”
আরো কিছু কথা বলে সব শেষে জারিফকে উদ্দেশ্য করে রিভি বলে,,”আচ্ছা ভাইয়া আপনারা থাকুন আমি আসছি।”
লিয়ার কানের পাশে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,,”সরি দোস্ত জানতাম না।তোর বুক করা জিনিস।বাই দ্যা ওয়ে।ইনজয় কর তোরা।”
রিভি চলে যেতেই লিয়া হনহনিয়ে হাঁটতে শুরু করে। জারিফ দুইহাত পকেটে গুঁজে লিয়ার পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলে,,”কিহলো।তুমি গালটা এরকম কমলা লেবুর মতো ফুলিয়ে রেখোছো কেনো?স্ট্রেইন্জ।”
লিয়া ঠোঁট আওড়ায়ে বলে,,”এইজন্য সকালে ফোন দিয়ে শুনে নিয়েছিলেন।আমি আজ কলেজে আসবো কি আসবো না।”
“হুম।তোমার সাথে দেখা করবো জন্য ফাস্ট সব কাজ শেষ করে চলে আসছি। এসে প্রায় টুয়েন্টি মিনিটস দাঁড়িয়ে আছি।এই কাঠফাটা রোদে।ঘেমে একাকার হয়েছি।”
একহাতে শরীরের সাথে লেপ্টে থাকা শার্ট টা একটু ছড়াতে ছড়াতে শেষের কথাটা বলে।লিয়া ভ্রু যুগল উঁচিয়ে বলে,,
“বিষয়টা টিনএজ দের মতো হয়ে গেলো না।একজন মেজিস্ট্রেট হয়ে কিনা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।বিষয়টা দৃষ্টি কটু হবে না।সবাই তো আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে পারে।বেশি পা’গ’লামি হয়ে গেলো না।”
জারিফ মৃদু আওয়াজে একটু সুর করে বলে,,”হাম তেরি মোহাব্বাত মে ইউ পা’গল রেহেতি হে।দিবানি ভি হামকো দিবানা কেহেতি হে।”
লিয়া জারিফের মুখের দিকে শীতল চাহুনি নিক্ষেপ করে ঠোঁট প্রসারিত করে শব্দ করে হাসে।জারিফ লিয়া কিছুদূর হেঁটে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে।চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে জারিফ পকেট থেকে টিস্যু বের করে লিয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয়।আরেক টুকরো টিস্যু দিয়ে নিজেও কপালের ঘামটা মুছে নেয়।জারিফ ফোনে সময় দেখে নিয়ে বলে,,
“লাঞ্চ টাইম হয়ে গিয়েছে তো।আর এদিকে আমার নিজেরও প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে।কি খাবে বলো?”
লিয়া ঠোঁট মেলে বলে,,”আস ইউর ইউশ।”
“ওকে। কাচ্চি বিরিয়ানী।”
লিয়া ঘাড় নাড়িয়ে হ্যা সম্মতি দেয়।খাবার শেষে কফি খায়।কফির মগে ঠোঁট ছুঁইয়ে জারিফ লিয়ার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বলে,,”আঙ্কেল আমার আব্বুর সাথে ফোনে কথা বলেছেন।সামনের সপ্তাহে আব্বু আম্মু এখানে আসবে।আমি বাসা দেখা শুরু করে দিয়েছি। অফিসার্স ড্রমেটরিতে থাকি। তাই এখন আর্জেন্ট বাসা নিতে হবে।বাসা পছন্দ করতে তোমার হেল্প চাই।সামনের সপ্তাহেই আমাদের এনগেজমেন্ট। এনগেজমেন্টটা এখানেই হোক।আর বিয়েটা বাড়িতেই হবে।বিয়েটা বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই হবে।”
এসির ভেতর শীতল পরিবেশে লিয়ার খুব ভালো লাগছে। লিয়া আলতো করে কফির মগে ঠোঁট ছোঁয়াচ্ছে আর জারিফের কথা শ্রবণ করছে।জারিফ চোখে মুখে একরাশ আনন্দ নিয়ে বলতে থাকে,,”বিয়ের প্রতিটা কাজ আমরা উপভোগ করবো। তোমাকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা আমার দিনদিন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। তোমাকে ছাড়া থাকতে মোটেও ভালো লাগছে না।অনেক তো বাবা মায়ের কাছে থাকলে।তাই এবার মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিয়ে নাও।বরের কাছে আসার।
[চলবে…ইন শা আল্লাহ]