#শুধু_তোমাকেই_চাই
#শারমিন_হোসেন
#পর্ব৩৭
“ছাদের রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে লিয়া। দৃষ্টি দূর আকাশ পানে জ্বলে থাকা মিটিমিটি তারকারাজির দিকে। লিয়ার পাশে দুই হাত বুকে গুঁজে স্ট্রেইট দাঁড়িয়ে আছে জারিফ। চারিদিকে নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। ঝিঁঝি পোকার শব্দ দূর হতে ভেসে আসছে।মৃদু দক্ষিণা বাতাস বইছে।হালকা বাতাসে লিয়ার কিছু চুল উড়ে এসে মুখের উপর পড়ছে। চমৎকার একটা পরিবেশ।এই চমৎকার পরিবেশের মতো বেশ চমৎকার আছে জারিফ লিয়ার মনটাও। দু’জনের মনটাই প্রফুল্ল আছে।জারিফ নিষ্পলক চাহুনিতে লিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
জারিফ নির্বিকার ভঙ্গিতে মৃদু আওয়াজে বলতে থাকে,,
“আমি একটা জিনিস সব সময় ভাবতাম।যে জিনিসটা আমার সে জিনিসটা যেখানেই থাকনা কেনো ,শত বাধা বিপত্তির পরেও আমার কাছেই ফিরবে।জীবনে চাওয়ার শেষ নেই।তবে যেই জিনিস গুলো ছাড়া।আমি একান্তই অসহায় তারমধ্যে টোটালি টপ অব দ্যা টপ তুমি।”
কথাটা শুনে লিয়ার ঠোঁটের কোণের হাসিটা চওড়া হয়। কিয়ৎক্ষন থেমে জারিফ আবেগময় কন্ঠে বলে,,
“তোমার সাথে থাকা প্রতিটি মূহুর্তই আমার কাছে খুব স্পেশাল। তুমি পাশে থাকলে আমি আকাশসম শান্তি খুঁজে পাই। তোমার সাথে থাকাকালীন প্রতিটা সেকেন্ড আমার কাছে ইনজয়েবল।তবে আজকের অনুভূতিটা কিছুটা অন্যরকম।আজ থেকে তুমি হাফ মিসেস জারিফ।আর মাত্র পনেরদিন পরেই ফুল মিসেস জারিফ হচ্ছো।তুমি একান্তই আমার পার্সোনাল উমেন হবে।”
মিসেস জারিফ কথাটা লিয়ার কানে ঝংকার তুলতে থাকে।এটা শুধু একটা ওয়ার্ড-ই নয়। এরমধ্যে মিশে আছে হাজারো ভালোলাগার অনুভূতি। ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে রেখেই লিয়া আনন্দিত কন্ঠে বলতে থাকে,,
“এই দিনটার জন্য আজ চার বছর ধরে আমি প্রহর গুনে আসছি।আপনাকে ফাস্ট দেখার পর থেকেই।আমার মনে – প্রাণে, আমার ধ্যান – ধারনায় আমার মস্তিষ্ক জুড়ে শুধুই আপনি বিরাজ করছেন।আমার সবটা জুড়ে শুধু আপনার রাজত্ব।আপনাকে দেখার পর থেকেই আমি রোজ স্বপ্ন দেখতাম ।আপনি কবে বাঁধবেন ঘর আমায় নিয়ে।আমার সেই স্বপ্নটা পূরণ হতে যাচ্ছে।এর থেকে খুশির বিষয় আমার কাছে আর কিছুই হতে পারে না।আ’ম সো হ্যাপি নাউ।”
“আমার নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে হচ্ছে। সৃষ্টিকর্তার দেওয়া স্পেশাল গিফট হলো তুমি।জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অব্দি আমার প্রতিটা মোনাজাতে আমার শুধু তোমাকেই চাই।”
আরো কিছুক্ষণ আবেগময় কথা বার্তা বলে দু’জনে নিচে নেমে আসে।রাতে ডিনার করে জারিফ আর ওর পরিবার বাসায় চলে যায়।
পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুত মনে হয় সময়।যদিও কাউন্ট করা যায়।তথাপি সময়ই সবচেয়ে বেশি ফাস্ট।দেখতে দেখতে লিয়া আর জারিফের বিয়ের দিন চলে এসেছে।আজ চারদিন হবে লিয়ারা ওর দাদুবাড়িতে আসছে।জারিফ গতপরশু ময়মনসিংহে গিয়েছে।বিয়ের কিছু কেনাকাটা লিয়াকে সাথে নিয়ে বগুড়াতেই করেছে।বিশেষ করে শাড়ি আর গহনা গুলো।আর বাকি শপিং জারিফ ওর ফ্রেন্ডদের কে সাথে নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে করেছে।
এনামুল খাঁন বেশ বড়সড় করেই বিয়ের প্রোগ্রামটা করছেন। একমাত্র মেয়ের বিয়ে বলে কথা।সেখানে কোনো কমতি রাখা যাবেনা। খাঁন ভিলাতে অতিথিদের আগমন ঘটছে।আজ গায়ে হলুদ আর কালকে বিয়ে।পুরো বাড়ি সুন্দর করে বেশ গর্জিয়াস ভাবে ডেকোরেশন করা হয়েছে।হলুদের জন্য ছাদে স্টেজ করা হয়েছে।হলুদ শাড়ি আর হলুদ গাঁদা ফুল দিয়ে লিয়াকে সাজানো হয়েছে। কাঁচা ফুলের গন্ধ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। হলুদ শাড়ি আর কাঁচা ফুল দিয়ে তৈরিকৃত অর্ণামেন্টেসের সাজে লিয়াকে অপ্সরী লাগছে।লিয়ার বিয়ে উপলক্ষ্যে অরিন আর ফিহা আসছে।আজ সকালেই দু’জনে আসছে।পুরো বিয়ে বাড়ি মাতিয়ে রাখার জন্য অরিন একাই যথেষ্ট।ফিহা মেডিকেলে পড়ে।আর অরিন জাবিতে।
জারিফের বাড়ি থেকে হলুদের তত্ব নিয়ে কিছুক্ষণ আগেই। জারা,জেরিন রোহান সহ জারিফের আরো কয়েকজন ফ্রেন্ড আসছে। রোহান তাসনিমের সাথে জেরিন কে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে।
সজ্জিত স্টেজে বসে আছে লিয়া।লিয়ার পাশে ফিহা,তুলি সহ আরো কাজিন রিলেটিভরা আছে।অরিন মোবাইল হাতে ছবি তুলতে ব্যস্ত। এরমধ্যে অরিন লিয়ার পাশে বসে ছবি গুলো লিয়াকে দেখিয়ে হাস্যজ্বল মুখে বলে,,
“এই লিয়া এই পিক গুলো দেখ । পিক গুলো এক্সিলেন্ট হয়েছে। আমি এই পিক গুলো জিজুর কাছে সেন্ট করছি।বেচারা জিজু তো আর সরাসরি এই হলুদ সাজে তোকে দেখতে পারলো না।তাই আপাতত ছবি দেখেই চোখের তৃষ্ণা টা একটু হলেও মিটিয়ে নিক।মনের তৃষ্ণা টা না হয় একেবারে সুদে আসলে কালকেই মিটাবে।”
কথাটা বলে অরিন বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হাসতে থাকে।লিয়া চোখ রাঙিয়ে মৃদু রা’গ দেখায় অরিনকে।অরিন লিয়ার লজ্জা মিশ্রিত রা’গের কারনটা জেনে বুঝেই ইচ্ছে করে লিয়াকে আরেকটু লজ্জা দিতে গমগমে স্বরে বলে,,
“আরে ইয়ার এত লজ্জা পাওয়ার কিচ্ছু নেই।কালকে তোর সব লজ্জা মাস্টার মশাই ভাঙ্গিয়ে দিবে।সেইজন্য হলেও কিছু লজ্জা তুলে রাখ দোস্ত।”
লিয়ার ফর্সা মুখে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়ে। লজ্জা আর অস্বস্তি লিয়াকে চেপে ধরে। লজ্জাটা আপাতত ভিতরে রেখে। উপরে লিয়া শক্ত খোলস নিয়ে কিছুটা কঠোর গলায় বলে,,”এই অরিন তুই থামবি।একটু বকবক কম কর বোইন।”
লিয়ার কথাটার উপর ভ্রুক্ষেপ না করে অরিন একহাতে মশা তাড়ানোর ভঙ্গিতে মুখের সামনে নাড়িয়ে বলে,,
“কথাটা আমি না বলে যদি তোর সাধের মাস্টার মশাই বলতো।তাহলে তো খুব ইনজয় করতি।ঠিক বলেছি না?”
লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে নিশ্চুপ হয়ে থাকে।লিয়া মনে মনে আওড়ায়,এর সাথে কথা বলে লাভ হবে না। বরঞ্চ আরো নিজেকে লজ্জায় পড়তে হবে।তাই সাইলেন্ট থাকাই আমার জন্য বেটার হবে।”
জারিফের গায়ে ছুয়ানো হলুদ লিয়ার গায়ে ছোঁয়ানো হয়। প্রথমে রাজিয়া সুলতানা লিয়ার গালে হলুদ ছোঁয়ায়।মেয়ের মিষ্টি মুখের দিকে তাকিয়ে ওনার দুচোখ চিকচিক করতে থাকে।মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে লিয়ার হাসিটা মলিন হয়ে আসে। দু’জনের মনেই বিদায়ের কথা স্মরণ হতেই বুকটা কেঁপে উঠে। হঠাৎ করেই লিয়া রাজিয়া সুলতানা কে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মাথা রাখে।রাজিয়া সুলতানা লিয়ার মাথায় স্নেহের হাত বুলিয়ে।লিয়ার মুখটা সামনে আঁজলা করে ধরেন।দুই হাত দিয়ে লিয়ার চোখের কোণে জমা অশ্রু টুকু মুছে দেন। জোরপূর্বক মুখে হাসি টেনে ভেজা গলায় বলেন,,
“মাশাআল্লাহ।আমার মেয়েটাকে কত্ত মিষ্টি দেখাচ্ছে।আজকের দিনে কন্দনরত তোকে মানাচ্ছে না।তবে আমি বলবো,শুধু আজকেই নয়।কখনোই তোর চোখের পানি আমার দুচোখে মানায় না।আমি চাই আমার অতি আদরের মেয়েটা সব সময় হাসি খুশি থাকুক।সব সময় উৎফুল্ল চিত্তে প্রাণবন্ত থাকুক।”
লিয়ার চাচিমারা হলুদ ছোঁয়ানোর পর তাসনিম আসে।লিয়া দুই হাত বাড়িয়ে দিতেই তাসনিম এর কোল থেকে এক লাফে আসফি লিয়ার কাছে চলে আসে।লিয়ার হাতে থাকা ফুলের দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে থাকে আসফি। কিয়ৎক্ষন পরেই এক হাত দিয়ে গাদা ফুলের পাপড়ি টানতে থাকে। কিছু কিছু পাগড়ি নরম হাতের মুঠোয় নিয়ে গাম্ভীর্য দৃষ্টিতে দেখতে থাকে আসফি। তাসনিম আলতো করে লিয়ার গালে হলুদ ছোঁয়ায়ে মিষ্টি হেসে বলে,,
“আমার ছোট বোনটাকে কিউট লাগছে।যদিও সব সময়েই আমার বোনকে কিউট লাগে।তবে হলুদ সাজে আরো বেশিই কিউটনেস ছড়িয়ে পড়েছে ফেসের মধ্যে। শুভকামনা তোর জন্য।”
একে একে ছোট বড় অনেক মেয়েরাই লিয়াকে হলুদ ছোঁয়ায়।সবাই এখন খাওয়া দাওয়া পর্ব নিয়ে ব্যস্ত আছে।
জারিফের বাড়িতেও বিয়ের তোড়জোড় চলছে।বাড়িতে অতিথিতে ভরপুর। জারিফকে সকালের দিকে হলুদ ছোঁয়ানো হয়েছে।জারিফ ফোন হাতে নিয়ে ওপেন করতেই হটস আ্যপে নটিফিকেশন আসে।জারিফ চেক করে দেখে হলুদ সাজে লিয়ার ছবি। প্রত্যেক টা ছবি খুবই মনোযোগ সহকারে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকে।লিয়ার ফর্সা গালে হলুদের প্রলেপ।জারিফ ঠোঁট কামড়ে ধরে মুচকে হেসে লিয়ার কাছে হটস আ্যপে ভিডিও কল দেয়।
সবাই খাবার খেতে ব্যস্ত। লিয়া মোবাইল টা নিয়ে স্ক্রল করছিলো।এমন সময় জারিফের ভিডিও কল দেখে লিয়া বিস্ময়কর চাহনিতে চেয়ে থাকে।ফাইভ সেকেন্ড পর রিসিভ করে সালাম দিয়ে নীরব থাকে।জারিফ ফোনের স্ক্রিনে হলুদ সাজে সজ্জিত হলুদ মানবী কে দেখে কয়েকবার শ্বাস টেনে নেয়। নীরবতা ভেঙ্গে গলা পরিষ্কার করে হালকা কেশে জারিফ বলে,,
“আমার হাফ মিসেস কে একদম হলুদ পরি লাগছে।তোমার শ্বেত শুভ্র মুখে হলুদের প্রলেপে খুবই দারুন লাগছে।ইশ!আফসোস হচ্ছে।”
লিয়া শেষের কথাটা শুনে বিস্ময়কর চাহনিতে চেয়ে অবাক স্বরে বলে,,”মানে? বুঝলাম না। আফসোসের কারনটা কি জানতে পারি জনাব?”
“অফকোর্স মাই সোল। আমার ব্যাপারে এ টু জেড তোমার জানার রাইট আছে।তোমাকে এই হলুদ সজ্জিত বেশে দেখে আমার আফসোস হচ্ছে।তোমাকে সামনা-সামনি না দেখতে পাওয়ার জন্য।তোমাকে টাইটলি হাগ করতে ইচ্ছে করছে। তোমার হলুদ রাঙা গালে টুপ করে চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।আরো কিছু বলবো?”
জারিফের প্রত্যেকটা বাক্য কর্ণগোচর হয়ে মস্তিষ্কে সাড়া জাগাতেই।লিয়ার বুকের ভেতর ধক করে উঠে।বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ শব্দ বাড়তে থাকে। লিয়া উপরের দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজেকে স্বাভাবিক রাখে। লিয়ার নাকের ডগা লাল হয়ে আসে লজ্জায়। জারিফ ভ্রু নাচিয়ে বলে,,”লজ্জা পেলে কাউকে এতটা সুন্দর দেখতে লাগে তোমাকে না দেখলে হয়তো জানতামই না।বাই দ্যা ওয়ে আমার শেষের প্রশ্নের আনসার এখনো দিলে না যে।”
লিয়া ফাঁকা ঢুক গিলে নিয়ে জড়তা নিয়ে বলে,,”হুম।ইয়ে আসলে। আসলে”
জারিফ দুষ্টু হেসে বলে,,”আমার ইচ্ছের কথা আরো শুনতে চাও?”
লিয়া ঘনঘন কয়েকবার মাথা ঘুরিয়ে না বোধক জবাব দেয়।জারিফ সফট ভয়েজে বলে,,”আর একদিন পরেই তোমাকে একান্ত ভাবে পেতে যাচ্ছি।এই শেষ সময়টুকু যেনো কাটছেই না। প্রতিটা সেকেন্ড আমার কাছে ঘন্টায় রুপ নিয়েছে। অপেক্ষার প্রহর সত্যি খুব কষ্টদায়ক।”
লিয়া স্মিত হেসে বলে,,”প্যাশেন্ট,প্যাশেন্ট মাস্টার মশাই।”
জারিফ হতাশ গলায় বলে,,”ওহ্! লিয়া। প্লিজ এই সম্মোধন আর নয়।তোমার গোলাপী পাতলা ওষ্ঠ নেড়ে এই মাস্টার মশাই ওয়ার্ড গুলো আমার জন্য একদম বেমানান।তারপরে আমি তোমার বর হতে যাচ্ছি।বুঝলে তুমি?”
লিয়া মজার ছলে দুদিকে ঘাড় নাড়িয়ে বলে,,”উঁহু!একদম বুঝতে পারিনি।”
জারিফ ভাবলেশহীন ভাবে বলে,,”ওকে ফাইন।ব্যাপার না।বোঝানোর জন্য আমি আছি তো জান।কালকে প্রাকটিক্যালি সব বুঝিয়ে দেবো। আমি তোমার মাস্টার মশাই লাগি না বর লাগি।সেটা তো কাল
জারিফের কথাটা ফিনিশ করতে না দিয়ে।লিয়া তাড়া দিয়ে বলে,,”এখন রাখছি।ওদিকে আমাকে ডাকছে।”
কথাটা বলেই জারিফকে আর কোনো বাক্য প্রয়োগের সুযোগ না দিয়ে লিয়া টুটটুট শব্দে কল কে’টে দেয়।ফোন এক হাতে চেপে ধরে লিয়া বুক ভরে শ্বাস নেয়।অরিন এসে জুহুরির চোখে লিয়াকে পরখ করতে থাকে। কিয়ৎক্ষন পরে কিছু ভেবে লিয়াকে উদ্দেশ্য করে ঠোঁট প্রসারিত করে বলে,,
“কেয়া ব্যাত দোস্ত।কেয়া ব্যাত।জিজু তো দেখছি সেই লেবেলের রোমান্টিক।ফোনে কথা বলেই তোকে লজ্জায় লাল নীল বানিয়েছে। দোস্ত একটু বলনা কি এমন বললো যে তুই রেইনবোর সেভেন কালার হচ্ছিস?”
লিয়া চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,
“থামবি তুই।কখন থেকে আজে বাজে বলেই চলছিস।”
সন্ধ্যায় ধরণীতে অন্ধকার নেমে আসার সাথে সাথে, খাঁন বাড়িতে আলোকসজ্জা ফুটে উঠতে থাকে। বিভিন্ন রঙের মরিচবাতি, লাইটিং এ পুরো বাড়ি ঝলমল করতে থাকে।রাতে আলো ঝলমলে পরিবেশটা দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। পার্লার থেকে আর্টিস্ট এসে লিয়াকে মেহেন্দি পড়াচ্ছে।অরিন মুখে কিছু খাবার চিবুতে চিবুতে এসে লিয়ার পাশে বসে।মুখের শুকনো খাবারটা কোনো রকমে গলাধঃকরণ করে নিয়ে।গলা ঝেড়ে নিয়ে বলতে থাকে,,”মেহেন্দি হে রচনে আলি গানটা না বাজালে। মেহেদী উৎসব টা অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে তো।”
কথাটা শেষ করেই গান টা বাজাতে থাকে। আর্টিস্ট কে উদ্দেশ্য করে অরিন ডিরেকশন দিতে থাকে হাতের মাঝে জারিফের নাম লিখতে। অরিনের বকবকানিতে আর্টিস্ট মেয়েটা কপাল কুঁচকে অরিনের তাকিয়ে বলে,,”ওকে ম্যাম। নিশ্চয় লিখবো।”
অরিন মুখটা মলিন করে বলে,,”ইশ!কবে আসবে আমার পালারে।কবে পড়বো আমি কবুল রে।”
পাশ থেকে ফিহা মোটা চশমার ভেতর দিয়ে অরিনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে বলে,,”কালকে তো বর পক্ষের অনেক লোকজনই আসবে। সেখান থেকে একটা কাউকে ধরে নিয়ে সোজা কাজী অফিসে গিয়ে ফটাফট কবুল পড়েনিস।”
“এই চশমিশ।থামবি তুই।ফটাফট কবুল বললে বিয়ের এত সব রিচুয়াল আমি মিস করে যাবো তো।বিয়ে নিয়ে আমার আকাশসম স্বপ্ন।বেশ জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে বিয়ে হবে আমার।গর্জিয়াস সাজে সাজবো।”
রাতে ডিনার করে লিয়া রুমে যায়।ব্যালকনিতে গিয়ে দুই হাত বুকে গুঁজে দাঁড়িয়ে রয়।লিয়ার মনে এক রাশ নতুন অনুভূতি হচ্ছে।জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো বিয়ে। প্রত্যেকটা মেয়েরই কম – বেশি স্বপ্ন থাকে এই দিনটা নিয়ে।তেমনি লিয়ার ও পাহাড়সম স্বপ্ন বিয়ে নিয়ে। প্রিয় মানুষটাকে একান্ত ভাবে নিজের করে পেতে যাচ্ছে।এটা যেনো আকাশের চাঁদ পাওয়ার থেকে বেশি খুশির বিষয় লিয়ার কাছে।
অন্যদিকে জারিফও দুচোখে একরাশ আনন্দ নিয়ে আছে।জারিফ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে ছাদ থেকে নেমে আসে।ব্যালকনিতে গিয়ে ফোনটা নিয়ে লিয়ার কাছে কল করে।
ঘড়ির কাঁটা রাত বারোটার ঘরে।লিয়া বিছানার হেডের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে।ফিহা ফোন স্ক্রল করছে।অরিন বিভিন্ন গল্প করছে।এমন সময় লিয়ার ফোনটা বেজে উঠে।লিয়া একহাত দিয়ে ফোনটা ধরতে যাবে।তার আগেই অরিন ফোনটা হাতে নিয়ে ঠোঁট উল্টে বলে,,”এই লিয়া,জিজুর তো আর তর সইছে না।রাতে না ঘুমিয়ে আবার ফোন করেছে তোকে।”
লিয়া চোখে মুখে বিরক্তিকর ছাপ নিয়ে ইশারায় ফোনটা চায়।অরিন ঘাড় নাড়িয়ে না বোধক জবাব দেয়।তারপর ফোনটা রিসিভ করে সালাম দিয়ে গলা ঝেড়ে বলতে থাকে,,”সরি জিজু।লিয়াকে এখন ফোনটা দেওয়া যাবে না।একটু ডিসটেন্স বজায় রাখুন।তাহলে মহব্বত টা বাড়বে।আর কালকে একদম সামনা-সামনি দেখা সাক্ষাৎ হবে।কথা হবে।সবই হবে।”
কাংখিত মানুষটার গলা না পেয়ে অরিনের গলা পেয়ে।জারিফ হতাশ হয় ।তারপরে অরিনের কথা শুনে জারিফের আনইজি ফিল হয়।জারিফও আর কথা না বাড়িয়ে “ওকে” বলে দ্রুত ফোন রেখে দেয়।ফোনের দিকে তাকিয়ে জারিফ অস্পষ্ট স্বরে আওড়ায়,,এই মেয়েকে নিয়ে বিশ্বাস নেই।এমনসব কথাবার্তা বলে আমাকে হেনস্তা করে ছাড়বে। লজ্জায় আর অস্বস্তিতে ফেলতে এই মেয়ের জুড়ি নেই।
আজ বিয়ে,,
ফুলে ফুলে সজ্জিত গাড়িতে বসে আছে জারিফ।জারিফের একপাশে জারা অন্যপাশে জেরিন।সামনে রোহান বসেছে। বাসন্তী কালারের শেরওয়ানি পড়েছে সাথে সাদা পাজামা।মাথায় পাগড়ি।হাতে জান্নাত বেগমের গিফট করা ঘড়িটা পড়েছে।বরবেশে জারিফকে দারুন লাগছে।পিছনে আরো কয়েকটা গাড়ি।বধু বেশে লিয়াকে দেখার জন্য জারিফের মনটা ব্যাকুল হয়ে আছে।গাড়িতে বসে জারিফ কল্পনা করছে বধুবেশে লিয়াকে কেমন দেখাবে।
পাক্কা তিন ঘন্টা ধরে সাজানো হলো লিয়াকে।দুইজন পার্লারের আর্টিস্ট লিয়াকে বধূর সাজে সজ্জিত করলো। বাসন্তী কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে লিয়া।গায়ে ভারি ভারি গহনা। স্টাইলিশ হেয়ার। ব্রাইডাল সাজে লিয়াকে খুব সুন্দর লাগছে। এরমধ্যে হইচই পড়ে যায়।বর এসেছে,বর এসেছে।কেউ কেউ উঠে বাইরে চলে যায় বরকে দেখার জন্য।অরিন উঠে দাঁড়ায় গেইট ধরার ওখানে যাবে জন্য।যাওয়ার জন্য লিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে গলা ছেড়ে গাইতে থাকে,,
“পিছে বারাতি আগে ব্যান্ড বাজা আয়ে দুলহে রাজা।গড়ি খোল দারোয়াজা।”
তুলি অরিনের হাত ধরে টানতে থাকে আর বলে,,”চলো গেইট ধরতে হবে।পরে গান গেয়ো কেমন।”
অরিন লিয়ার কানের পাশে মুখটা নিয়ে হুইচপার করে বলে,,”দোস্ত সবার সামনে জিজুর দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকিস না কিন্তু।একটু লজ্জা শরম রাখিস।আর ফটাফট কবুল বলিস না।একটু টাইম নিস। মুরুব্বিরা আছে তো তাই।আর কান্না না আসলেও একটু দুঃখী দুঃখী ফেস বানাস। দরকার পড়লে আমি তোর চোখে কমলা লেবুর রস দিয়ে দেবো।ব্যাপার না তখন গাল গড়িয়ে পানি পড়বে।”
লিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”আমি কি বিয়েতে রাজি না যে দেরি করে কবুল বলবো।আর আমাকে কি ধরে বেঁধে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে?সেই শোকে আমি ম’রা কান্না জুড়ে দিবো।”
“আরে ইয়ার। নব্বই দশকের বিয়ের কথা একটু ভাব। তখনকার বিয়েতে মেয়েদের তিন ঘন্টা লাগতো কবুল বলতে।আর কান্না করে বন্যা বয়ে ফেলতো।”
লিয়া ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে কপাল কুঁচকে বলে,,”এটা নব্বই দশক নয়।আর তোর যদি এতই শখ হয়।তুই না হয় নিজের বিয়েতে শখ টা মিটাস।”
এরমধ্যে দুইহাত কোমড়ে দিয়ে তুলি ভ্রু যুগল কুঁচকে বলে,,”তুমি যাবে কি?গেইটে বিগ আ্যমউন্ট তুলতে হবে না।”
গানটা রিপিট করতে করতে অরিন চলে যায়।গেইটের সামনে বরযাত্রী দাঁড়িয়ে আছে।বরসহ কয়েকজন চেয়ারে বসে আছে বাকিরা দাঁড়িয়ে।সামনে ফিতা বাঁধা।বিশাল গেইটটা মরিচ বাতিতে ঝলমল করছে।অরিন ফিহা তুলি আরো কয়েকজন মেয়েরা গেইটে যায়।একেক জনের হাতে একেক ট্রে।শরবত, মিষ্টি, ফলমূল, বিস্কিট চানাচুর সহ আরো অনেক কিছু টেবিলের উপর রাখা হয়।অরিন শরবতের ট্রে টা শব্দ করে টেবিলের উপর রাখে।মুখে বাঁকা হাঁসি নিয়ে অরিন একটা গ্লাস জারিফের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,,
“জিজু ঠান্ডা ঠান্ডা শরবত খেয়ে।মাথাটা কুল করে শালিকাদের আবদার টা পূরণ করুন।”
জারিফ একবার অরিনের হাতে থাকা শরবতের গ্লাসের দিকে তাকায়। আরেকবার পাশে বসা রোহানের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢুক গিলে নেয়।জারিফের হাবভাব দেখে অরিন ইশারায় হাতের গ্লাসটা দেখিয়ে ঠোঁট বেঁকিয়ে বলে,,”ওদিকে কি দেখছেন?এদিকে দেখুন।”
জারিফ রোহানের কানের পাশে মুখটা নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,,”এই রোহান এভাবে স্ট্যাচু হয়ে আছিস কেনো?কিছু বল।ডাল মে কুচ কালা হে।এই শরবতে কোনো গোলমাল আছে।আমি শিয়র।এই মেয়েকে আমার বিশ্বাস নেই।তুই আগে খাবার গুলো টেস্ট করে দেখ।”
রোহান মলিন হেসে বলে,,”তোর বিয়ে আমি আগে টেস্ট করতে যাবো কোন দুঃখে শুনি।কবুল বলার সময় কি আগে আমাকে বলতে বলবি তুই।নাকি বাসর ঘরে ঢুকার সময় আগে আমাকে যে
রোহানের কথার মাঝেই জারিফ চোখ পাকিয়ে রোহানের দিকে তাকায়।জারিফের ফেসের দিকে তাকিয়ে রোহান থেমে যায়।রোহান কয়েকবার ফাঁকা ঢুক গিলে নিয়ে জড়তা নিয়ে বলে,,”সরি,সরি দোস্ত।”
জারিফ দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,”আজ বোনের বর বলে ছাড় পালি।”
“সরি দোস্ত।মুখ ফস্কে বলে ফেলেছি।আ’ম জোকিং।”
“এরপর থেকে সাবধানে জোকস্ করবি।আমার বউকে নিয়ে কোনো মশকরা নয়। ক্লিয়ার?”
অরিন হালকা কেশে বলতে থাকে,,”এইযে, জিজু সাথে বেয়াই আপনাকেও বলছি। দু’জনে ফিসফিস করা বাদ দিয়ে এদিকে ফোকাস করুন।খাবার গুলো টেস্ট করে আমাদেরকে উদ্ধার করুন।আর বেয়াইনদের ডিমান্ডটা পূরণ করুন।”
রোহান শার্টের কলারে হাত দিয়ে ঝাঁকিয়ে ভাব নিয়ে বলে,,”এইযে বেয়াইন সাহেবা।তা আমরা আবার খুব দয়াবান লোক তো।তাই একা একা খাবার গুলো খেতে চাচ্ছি না।আপনাদের কে সাথে নিয়ে সব খাবার টেস্ট করতে চাচ্ছি। প্লিজ বেয়াইন আপনারাও আমাদের সাথে জয়েন করুন।”
কথাটা শুনে অরিনের মুখের হাসিটা উবে যায়।অরিন মনে মনে আওড়ায়,ব্যাটা তো দেখছি কানিং।ঠিক বাঁশ দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।অরিন জোরপূর্বক মুখে হাসি টেনে নিয়ে একটা গ্লাস রোহানের দিকে দেয়।রোহান ফিচেল হেসে গ্লাসটা নিয়ে বলে,,”থেংকিউ বেয়াইন। প্লিজ টেক আ গ্লাস।”
ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে রে।অরিনের অবস্থা সেরকম হয়েছে।অরিন একটা গ্লাস হাতে নিয়ে স্ট্যাচু হয়ে থাকে।রোহান এক চুমুক দেয় শরবতের গ্লাসে।কোনো রকমে মুখে থাকা পানীয় টুকু গলাধঃকরণ করে।রোহানের শ্যামবর্ণ মুখ লাল হয়ে যায় ঝালে।রোহান কোনো রকমে নিজেকে স্বাভাবিক রেখে অরিনের উদ্দেশ্যে বলে,,”বেয়াইন এবার আপনার পালা।নাউ স্টার্ট।”
অরিন কাঁদো কাঁদো ফেস করে এক চুমুক গ্লাসে দিয়ে।সাথে সাথে পাশে থু থু করে ফেলে দিয়ে কাঁশতে থাকে। অরিনের অবস্থা দেখে রোহান ডেভিল হাসে।উঠে দাঁড়িয়ে অরিনের দিকে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলে,,”কি বেয়াইন টক্কর তো সমানে সমানে হওয়া উচিত।ঠিক না।”
রোহান কে অরিনের দিকে ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে কিছু বলতে দেখে জেরিনের ফর্সা মুখটা কালো হয়ে আসে।জেরিন দাঁতে দাঁত চেপে মনে মনে আওড়ায়, বাসায় আগে যাই।মেয়ে দেখলে খুব ফিসফিস করতে ইচ্ছে করে না।”
পাশে জেরিনের দিকে নজর যেতেই রোহান চুপসে যায়।রোহান চেয়ারে বসে উসখুস করতে থাকে।জেরিন গাল ফুলিয়ে রাখে।গেইটে মেয়ে পক্ষের ডিমান্ড অনুযায়ী টাকা দিয়ে বরকে ভেতরে নিয়ে স্টেজে বসানো হয়।
বড়রা লিয়াকে স্টেজে নেওয়ার জন্য তাড়া দিতে থাকে।লিয়া গুটি গুটি পা ফেলে লেহেঙ্গার দুই কোণা দুই হাতে ধরে স্টেজের দিকে যেতে থাকে।লিয়ার পাশে তুলি,অরিন সহ আরো অনেকে আছে।জারিফের দৃষ্টি লিয়ার দিকে যেতেই।জারিফ নিষ্পলক চাহুনিতে চেয়ে থাকে লিয়ার দিকে।লিয়াকে জারিফের পাশে বসানো হয়।জারিফ মুগ্ধ নয়নে লিয়ার দিকে চেয়ে রয়।লিয়া ঘাড়টা ঘুরিয়ে জারিফের দিকে তাকিয়ে হালকা কেশে এহেম এহেম শব্দ করে। জারিফ এক হাত লিয়ার হাতের উপর রেখে আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল গুঁজে রাখে।জারিফের স্পর্শে লিয়ার হৃদস্পন্দন কয়েকগুণ ফাস্ট হতে থাকে।
জারিফ মৃদু আওয়াজে বলে,,”তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।একদম শুভ্রপরি মনে হচ্ছে।আমার শুভ্রপরি।”
লিয়া বিনিময়ে মিষ্টি হাসে।খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষে প্রথমে ধর্মীয় ভাবে আর পরে আইনি দুইভাবেই লিয়া আর জারিফের বিয়ে সম্পন্ন হয়।বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর বিদায় পর্ব আসে।
বিদায় শব্দটা সত্যি খুবই প্যাথেটিক।যেকেনো বিদায়ই কষ্টের হয়।যদিও জীবনের এক ধাপ থেকে অন্য ধাপে পদার্পণ করা হয়।তবুও প্রথমে সহজেই বিদায়টাকে মেনে নেওয়া যায়না না। শ্বশুড়বাড়ি কথাটা একজন বিবাহিত মেয়ের জন্য অতি পরিচিত ইজি বিষয়। কিন্তু একজন সদ্য বিবাহিত মেয়ের জন্য এতটাও ইজি নয়।নতুন পরিবেশ নতুন লোকজন সবার সাথে মানিয়ে নেওয়ারও ব্যাপার থাকে। সর্বোপরি বাবার বাড়ি ছেড়ে।বাবা মাকে ছেড়ে চলে যাওয়া কথাটা ভাবতেই একটা মেয়ের বুকটা কেঁপে উঠে।রাজিয়া সুলতানা লিয়ার সামনে আসতেই লিয়া ওর আম্মুকে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কান্না করতে থাকে। কান্না জিনিসটা এমন অটোমেটিকলি চলে আসে।পুরো বাড়ি জুড়ে রাশ ভারি হয়ে ওঠে।রাজিয়া সুলতানা কান্না করতে করতেই নাক টেনে নিয়ে,লিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।লিয়াকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,,
“লিয়া কান্না করে না। কান্না করলে অসুস্থ হয়ে পড়বে।আর কালকে তো তুমি আসছোই।তাই কান্না করে না।তুমি কান্না করলে তোমার আব্বুর খুব খা’রাপ লাগবে।রাহবারও খুব কষ্ট পাবে।”
এনামুল খাঁন লিয়ার সামনে আসতেই লিয়া জড়িয়ে ধরে। এনামুল খাঁন এক আঙ্গুল দিয়ে চোখের কোণের পানিটুকু আড়ালে মুছে নেয়।লিয়াকে সান্ত্বনা দিতে থাকেন।রাহবার এসে লিয়াকে জড়িয়ে ধরে।লিয়া রাহবার কে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কাঁদতে থাকে।রাহবারের সাথে করা সব খুনশুটি ঝগড়াগুলো লিয়ার মনে পড়তেই বুক ফে’টে কান্না তার গতি বাড়িয়ে দেয়।রাহবার হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলে,,”আপু তোকে খুব খুব মিস করবো।”
লিয়া নাক টেনে নিয়ে রাহবারের গাল বেয়ে পড়া পানিটুকু মুছে দেয়। ওদিকে বরপক্ষের মুরব্বিরা তাড়া দিতে থাকে।আবার দুই থেকে আড়াই ঘন্টা জার্নি করে যেতে হবে।
এনামুল খাঁন জারিফের হাতে লিয়ার হাতটা দিয়ে ভেজা গলায় বলেন,,”জারিফ বাবা আমার মেয়েটা খুব আদরের।আজ থেকে আমার মেয়ের সব দায়িত্ব তোমার হাতে তুলে দিলাম। আমার বিশ্বাস আছে তোমার উপর।তারপরেও বাবা হিসেবে বলছি, কখনো কোনো ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখো। দু’জনের মাঝে কখনো মিসআন্ডারস্টান্ডিং হলে সেটা দীর্ঘায়িত না করে মিটিয়ে নিও।আমার মেয়েটা খুব আহ্লাদের ওকে আগলে রেখো।”
জারিফ মাথাটা নুইয়ে ইনশিয়র করে দৃঢ় কন্ঠে বলে,,”বাবা আপনি চিন্তা করবেন না।লিয়াকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার।আমি সব সময় আমার বেস্ট টাই লিয়াকে দেওয়ার চেষ্টা করবো।লিয়াকে কখনো আমার জানামতে এতটুকু কষ্টের আঁচ লাগতে দেবো না ইন শা আল্লাহ্।”
সবার থেকে বিদায় নিয়ে লিয়াকে গাড়িতে উঠানো হয়।জারিফ লিয়া পাশাপাশি বসে আছে।লিয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে।জারিফ হাতের আঙ্গুল দিয়ে লিয়ার চোখের কোণে জমা অশ্রু টুকু ফেলে দেয়।কঠোর গলায় বলে,,”প্লিজ লিয়া ডোন্ট ক্রাই। অনেক কান্না করেছো আর নয়। কান্না করার ফলে তোমার হেডেক হবে তো।”
কথাটা শেষ করে একহাত দিয়ে লিয়াকে আলতোভাবে জড়িয়ে নেয়।লিয়া জারিফের বুকে মুখটা গুঁজে নিশ্চুপ হয়ে থাকে।জারিফের বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামে।
একতলা বিশিষ্ট বাড়িটা বিভিন্ন লাইটিং এর আলোয় ঝকঝক করছে।বাকি গাড়ি থেকে সবাই আগে নেমে নতুন বউ-বর কে ওয়েলকাম জানানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে।
জারিফ গাড়ি থেকে নেমে লিয়ার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে একটা হাত বাড়িয়ে দেয়।জারিফ ঘোর লাগা দৃষ্টিতে লিয়ার দিকে তাকিয়ে শীতল কন্ঠে বলে,,
“ওহ্ মাই মুন কামিং টু লাইট ইন মাই হোম।”
লিয়া বিনিময়ে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দেয়। তারপর ডান হাতটা জারিফের হাতে রাখে।জারিফ শক্ত করে লিয়ার হাতটা ধরে বলে,,”এইযে তোমার হাতটা ধরলাম।শেষ নিঃশ্বাস অব্দি আমার জ্ঞান থাকা পর্যন্ত তোমার হাতটা আঁকড়ে ধরে রাখবো।মাই মুন মাই বিবিজান তোমাকে জানাচ্ছি ওয়েলকাম।”
[চলবে…ইন শা আল্লাহ]
(অনেক মাস পরে বাড়িতে আসছি। সবার সাথে গল্প করতে সময় কে’টে যায়। গল্প লেখার সময় হয়না।সরি।এইটুকু দুইদিন ধরে লিখছি🤧।বাড়িতে অনেক লোকজন সবার মাঝে গল্প লেখার মতো উপযুক্ত পরিবেশ নেই 😥 এইটুকু কতবার যে ফোন হাতে নিয়ে লিখছি।তা আমিই জানি। রিচেইক করা হয়নি। ভুলত্রুটি মার্জনীয়।)