ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞 #লেখিকা- Mehruma Nurr #পর্ব-৬৩

0
887

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা- Mehruma Nurr
#পর্ব-৬৩

★ সকাল ৯-৩০
আদিত্য একটু আগেই অফিসে এসেছে। নিজের কেবিনে বসে কিছু ফাইল দেখছে। তখনই কেবিনের দরজায় কেউ নক করলো।আদিত্য ভেতর থেকে আসতে বললো।

দরজা খুলে আবির ভেতরে ঢুকলো। আবিরকে এইসময় এখানে দেখে আদিত্যও অবাক হয়ে গেল। আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….কিরে তুই আজকে রাস্তা ভুলে গেছিস নাকি? তাই আড্ডা দেওয়ার বদলে অফিসে চলে এসেছিস?

আবির ভেতরে এসে আদিত্যর সামনের চেয়ারে বসে বললো।
….ভাই তোরা কি ভাবিস বলতো আমাকে?

আদিত্য কিছু বলতে যাবে তার আগে আবির ওকে থামিয়ে দিয়ে বললো।
….থাক থাক ওটা আর বলতে হবে না। আমি বলছি শোন। আমি ভুল করে অফিসে আসিনি। ইচ্ছে করেই এসেছি। কারণ আমি আজ থেকে অফিসে বসবো।

আদিত্য ভ্রু কুচকে বললো।
….তুই কি সকাল সকাল মজা করার জন্য আমাকেই পেয়েছিস?

….আরে মজা কেন করবো? আই এ্যাম সিরিয়াস ভাই।

আদিত্য তাচ্ছিল্যের সুরে বললো।
…হ্যাঁ হ্যাঁ তুই সিরিয়াস হলে, আমি শাহরুখ খান।

আবির দুঃখী ভাব ধরে বললো
…তুই এটা বলতে পারলি ভাই? তুই জানিস আমি কেন অফিস জয়েন করতে চাই?

…কেন?

…তোর কথা ভেবে ভাই।

….আমার কথা ভেবে মানে?

…হ্যাঁ ভাই। তুই একা সব বিজনেসের কাজ দেখাশোনা করিস।তোর কতো কষ্ট হয়ে যায় তাইনা? কাজের জন্য ভাবিকেও ঠিকমতো সময় দিতে পারিস না। তাই আমি, তোর এই রেসপন্সেবল ভাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে,তোকে একা একা আর খাটতে দিবে না। এখন থেকে আমিও তোকে কাজে সাহায্য করবো।

আদিত্য তীক্ষ্ণ সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো।
….আমার তেল চর্বি একদমই পছন্দ না। তাই তেল না মেরে আসল কথা কি সেটা বল। আজ হঠাৎ করে তোর এতো সুবুদ্ধি কোত্থেকে উদয় হলো তাই বল?

আবির একটা মেকি হাসি দিয়ে বললো।
….হে হে , কিজে বলিস না ভাই। আমি কেন তোকে তেল মারতে যাবো? আমার কি তেলের কুয়া বের হয়েছে নাকি?

…ঠিক আছে বলতে না চাইলে তোর ইচ্ছে। কিন্তু পরে যদি বলতে চাস তখন কিন্তু আমি শুনবো না।

আবির একটু ঘাবড়ে গেল। ও জানে আদিত্যকে ছাড়া ওর কাজ হবে না। তাই তড়িঘড়ি করে বললো।
….আরে ভাই রাগ করছিস কেন? তুই যখন এতো ইনসিস্ট করছিস, তখন বলেই দিচ্ছি। আসলে হয়েছে কি ভাই। তুই আর নূর ভাবি বিয়ে করে নিলি,সানা আর তাসিরেরও এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেল। এখন এসব দেখে তানিও আমাকে বিয়ের জন্য প্রেসার দিচ্ছে। বলছে ওর নাকি খুব বেশি বিয়ে বিয়ে পাচ্ছে। আমাকে দশ নম্বর বিপদ সংকেত দিয়ে দিয়েছে। বলেছে তাড়াতাড়ি বাবা মাকে বলে ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব না নিয়ে গেলে, ও অন্য কাউকে ধরে বিয়ে করে নিবে।

আবিরের কথা শুনে আদিত্য হাসতে শুরু করে দিল। আবির দুঃখী ভাব ধরে বললো।
…তুই হাসছিস? এদিকে আমার হালুয়া টাইট হয়ে যাচ্ছে। তানি কি বলে জানিস? বলে ও নাকি তোদের মেয়েকে আমাদের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে বউয়ের শাশুড়ী হয়ে দেমাক দেখাবে। তাই তাড়াতাড়ি বিয়ে করে তোদের আগেই বাচ্চা নিতে বলছে। ভাবা যায় এল্লা?

আদিত্যর হাসতে হাসতে অবস্থা খারাপ। আদিত্য কোনরকমে হাসি থামিয়ে বললো।
….একদম ঠিক হয়েছে। তুই যেমন,পেয়েছিসও আরেকটা তেমন। তা এইজন্য বুঝি অফিস জয়েন করার সুবুদ্ধি উদয় হয়েছে।

….হ্যাঁ ভাই তানির বাবা মাকে ইমপ্রেস তো করতে হবে তাইনা? তবে তানির বাবা মা তো পরে, আগে আমার বাপ মাকে কে বলবে। আমি বললে তো বাবা আমার কান বরাবর একটা লাগাবে। ভাই তুই কথা বলনা, তোর কথা নিশ্চয় শুনবে ওরা।

আদিত্য হাসি মুখে বললো।
…..ওকে ওকে টেনশন নিস না।আমি চাচা চাচির সাথে কথা বলবো। রাতে নূরকে নিয়ে বাসায় এসে এ বিষয়ে কথা বলবোনে।

আবির উঠে এসে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে বললো।
…..থ্যাংকস ভাই, ইউ আর দা বেস্ট।

….হয়েছে হয়েছে এখন যা। অফিসে যখন এসেছিস তখন কিছু কাজও কর।

আবির মাথা ঝাকিয়ে বেরিয়ে গেল,নিজের কেবিনে।
—————–

রাত ৮টা
আদিত্য আর নূর একটু আগেই এসেছে। সবাই ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে আছে। আদিত্য ওর চাচা চাচীর দিকে তাকিয়ে বললো।
…..চাচা চাচী আপনাদের সাথে জরুরি কথা আছে।

আদিত্যর চাচা বলে উঠলো।
…হ্যাঁ আদি বলো কি বলবে।

…..আসলে আবিরের ব্যাপারে কথা বলতে চাই। আবির একটা মেয়েকে ভালোবাসে। মেয়েটাকে আপনারা চেনেন। মেয়েটা নূরের বান্ধবী তানি। ওরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসে। আর এখন বিয়ে করতে চাচ্ছে। আপনাদের কি মতামত এ ব্যাপারে?

আবিরের বাবা বলে উঠলো।
….আমাদের আর কি মতামত আছে। তুমি যদি ঠিক মনে করো তাহলে আমাদেরও কোনো সমস্যা নেই। এই হতচ্ছাড়াকে যে কেউ তাদের মেয়ে দিবে এটাইতো অনেক। বাকিতো ভাইয়া আর তুমি আছ। তোমরাই দেখে নেও।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…..তাহলে আপনারা রাজি থাকলে , আমরা কাল পরশুই তানিদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাই? কি বলেন?

….ঠিক আছে তুমি যেটা ভালো মনে করো।

একটু পরে বড়রা সবাই উঠে চলে গেল। আর আবির সোফায় উঠে দাঁড়িয়ে নাচতে লাগলো। নাচতে নাচতে বললো।
….ইয়েস,ইয়েস,ইয়েস। আমার বিয়ে হবে বাসর হবে। আয় হায় আমারতো তরই সইছে না,কবে বিয়ে হবে , বাসর হবে। আমার ছোট বেলা থেকে একটাই স্বপ্ন, বড় হয়ে বিয়ে করে বাসর ঘরে বিড়াল মারবো।

আবিরের কান্ড দেখে সবাই হাসতে হাসতে শেষ। তখনই হঠাৎ আবিরের ফোনটা বেজে উঠল। আবির সোফায় বসে ফোনটা বের করে দেখলো তানির ফোন। আবির বুঝতে পেরেছে যে,তানি বাবা মা বিয়ের ব্যাপারে কি মতামত দিল সেটা জানার জন্য ফোন করেছে। আবিরের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো। আবির সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
…..সবাই শোন, তানি ফোন করেছে এখানকার খবর জানার জন্য। তো ওর সাথে একটু মজা নেওয়া যাক কি বলো সবাই?

সানা বললো।
….হ্যাঁ ভাইয়া একটু মজা নেওয়া যাক।

নূর শুধু মুচকি হাসি দিল।
আদিত্য বললো।
….যাই কর কিন্তু পরে যেন কোনো ঝামেলা না হয়।

….আরে কিছুই হবে না। তুই দেখ কি মজা হয়।

কথাটা বলে আবির সিরিয়াস ভাব ধরে ফোনটা রিসিভ করে বললো।
….হ্যাঁ তানি বলো।

……বলো মানে? তুমি বলো ওখানে কি হলো? সব ঠিক আছে? আঙ্কেল আন্টি রাজি হয়েছে বিয়েতে? তাড়াতাড়ি বলো,টেনশনে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

আবির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুঃখী ভাব ধরে বললো।
…..তানি বেবি আমাদের কপালে মনে হয় মিলন নেই। শুধু বিরহই লেখা আছে।

….মানে?

….মানে বেবি, মা বাবা কেউই বিয়েতে রাজি হয়নি। তারা বলেছে আমি যদি এই বিয়ে করি, তাহলে আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করে দিবে। এখন তুমিই বলো বেবি, মা বাবাকে কষ্ট দিয়ে কিভাবে বিয়ে করবো আমি?

আবিরের কথা শুনে তানি থপ করে বেডের ওপর বসে পড়লো। ও কি বলবে বুঝতে পারছে না। মুখ দিয়ে কোনো কথায় বের হচ্ছে না।

আবির মেকি কান্না করে বলে উঠলো।
….তবে তুমি চিন্তা করোনা তানি বেবি। তোমাকে বিয়ে না করলে, আমি কোথায়ও বিয়ে করবো না। দরকার হলে সারাজীবন চিরকুমার থাকবো। তবুও তোমাকে ছাড়া কাওকে বিয়ে করবো না। এ মেরা বাচান হে,অর মেরা বাচান হি হে শাসান। ভালো থেক তানি বেবি। বেঁচে থাকতে হয়তো না মিলতে পারলাম, তবে মরার পরে অবশ্যই আমাদের মিলন হবে।
♬ ♬ হৃদয়ের লেনা দেনা
♬ ♬ এ পারেতে আর হবে না
♬ ♬ তোমার আমার দেখা হবে ওপারে

গানটা গাইতে গাইতে ফোনটা কেটে দিল আবির। তারপর হু হা করে হাসা শুরু করে দিল।

নূর বলে উঠলো।
….এটা কিন্তু ঠিক না আবির ভাইয়া, আমার বেচারি তানি হয়তো বসে বসে কাঁদছে এখন।

আবির মুচকি হেসে বললো।
…..আরে ভাবি চিন্তা করোনা। কষ্টের পরে যখন সুখ আসে, সেটার মজাই আলাদা।
———-
সকাল ৯-৩০
সানা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে। অন্যরা সবাই ব্রেকফাস্ট করে যার যার রুমে আরাম করছে। আজ শুক্রবার তাই সবাই বাসায়ই আছে।

হঠাৎ বাসার কলিং বেল বেজে উঠল। সানা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল। দরজা খুলে দেখলো সামনে তানি দাঁড়িয়ে আছে। তানিকে এখানে দেখে সানা একটু অবাক হয়ে বললো।
…..তানি আপু,তুমি এখন এখানে?

তানি শক্ত গলায় বললো।
….আবির কোথায়?

….ভাইয়া তো,,,

সানার কথা শেষ হওয়ার আগেই তানি সানাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ভেতরে ঠুকলো। ভেতর এসে জোরে জোরে আবিরের নাম ধরে ডাকতে ডাকতে বললো।
……আবির, আবির কোথায় তুমি? বেরিয়ে আস এক্ষুনি।

তানির চিল্লানিতে বাড়ির সবাই হকচকিয়ে উঠলো। সবাই তাড়াতাড়ি করে ড্রয়িং রুমে আসলো। তানিকে এখানে দেখে সবাই অবাক হয়ে গেল। সবচেয়ে বেশি আবির। আবিরের মনে মনে কেমন যানি ভয় করছে। মনে হচ্ছে ওর ওপর দিয়ে আজ টর্নেডো বয়ে যেতে চলেছে। আবির একটা ঢোক গিলে তানির কাছে এসে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
….তানি বেবি তুমি এখানে কি করছ?

তানি আবিরের কলার চেপে ধরে রাগী কন্ঠে বললো।
….কি করছি আমি তাইনা, কি করছি? আমার কথা বাদ দাও, তুমি কি করছ সেটা বল? তোমার সাহস কি করে হলো বলার যে, আমাকে বিয়ে করবে না হ্যাঁ?

তানির এমন এ্যাকশনে সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। সানা, নূর আর আদিত্য মিটিমিটি হাসছে।

আবির করুন সুরে বললো।
….তানি কি করছ? সবাই দেখছে তো?

…..দেখুক সবাই, সবাইকে দেখতে দেও। এমনিতেও কয়েক মাস পরে সবাই সবকিছু দেখতেই পাবে।

তানির কথার আগামাথা কিছু বুঝতে না পেরে আবির কনফিউজ হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
…..মানে?

….মানে আই এ্যাম প্রেগন্যান্ট।

কথাটা যেন বজ্রপাতের মতো সবার মাথায় পড়লো। সবাই হতভম্ব হয়ে গেল। বেচারা আবিরতো পুরো তব্দা খেয়ে গেছে। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। যা শুনলো তাকি ঠিক শুনল? আবির বেকুবের মতো বললো।
…..একমিনিট, আমি মনে হয় কানে ভুল শুনেছি ?তুমি নিশ্চয় প্রেগন্যান্ট বলোনি তাইনা?

তানি বলে উঠলো।
….তুমি ঠিকই শুনেছ আমি প্রেগন্যান্টই বলেছি। হ্যাঁ আমি তোমার বাচ্চার মা হতে চলেছি।

আবির যেন ২০০০ বোল্টের একটা ঝটকা খেল। বেচারা পুরো স্টাচু হয়ে গেল। কোনো রিয়্যাকশনই দিচ্ছে না।

সানা, আদিত্য আর নূর অনেক কষ্টে নিজেদের হাসি আটকে রেখেছে।
আবিরের মা অবাক হয়ে বললো।
……কিহহ্? হোয়াট টেল তুমি, তুমি হোয়াট টেল? মাই সান ইস প্রেসিডেন্ট ইউ?

আবিরের মায়ের কথা তানি কিছুই বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে ওর মাথার উপর কাক ডাকছে। তানির কনফিউজ চেহারা দেখে সানা তানির কাছে এসে কানের কাছে ঝুকে বললো।
….সি মিনস প্রেগন্যান্ট।

তানি এবার আবিরের মায়ের কাছে এসে দুঃখীয়ারি ভাব ধরে বললো।
….হ্যাঁ আন্টি আই এ্যম প্রেগন্যান্ট। আমি আপনাদের নাতি নাতনির মা হতে চলেছি।

আবিরের মা বললো।
…কিহ, কিন্তু হোয়েন, হাউ?

তানি লাজুক ভাব ধরে বললো।
….কিভাবে হলো এটা এখন কি করে বলি? আমার লজ্জা করে?

আবিরের মা এবার হাসিমুখে বললো।
….না না থাক থাক আর বলতে হবে না। তুমি দাঁড়িয়ে আছ কেন এস এস বসো।
আবিরের মা তানিকে নিয়ে গিয়ে আস্তে করে সোফায় বসিয়ে দিল। তারপর নিজেও তানির পাশে বসে তানির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
….হোয়াট হ্যাপেন ইজ হোয়াট হ্যাপেন। আই তো ভেরি খুশী। আমি আমার নাতী নাতনীর ফেসওয়াশ (ফেস) দেখতে চলেছি। তবে ইউ এখন থেকে ভেরি কেয়ারটেকার (কেয়ারফুল) হয়ে থাকবে। তোমার জন্য এতো ওয়াকিং ওয়াকিং একদম গুড না। আন্ডারওয়্যার (আন্ডারস্ট্যান্ড)?

আবিরের মায়ের ইংলিশ শুনে তানি বেচারির অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। তবুও জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
….ধন্যবাদ আন্টি, এখন নিশ্চয় আপনারা এই বিয়েতে অমত করবেন না? নাহলে আমি আর আমার পরিবার কাওকে মুখ দেখাতে পারবোনা।

আবিরের মা ভ্রু কুঁচকে বললো।
…….অমত?অমত হোয়াই থাকবে? আমরাতো টুমোরোই বিয়েতে এ্যাগরি হয়ে গেছি।

আবিরের মায়ের কথায় তানি একটা বড়সড় ধাক্কা খেল। তারমানে আবির কাল আমাকে মিথ্যে বলেছিল। আমি শুধু শুধুই এতো নাটক করলাম? এখন সবসইকে কি বলবো? সবার সামনে ইমব্রেসিং হতে হবে। সব এই আবিরের জন্য।
কথাগুলো ভেবে তানি রাগী চোখে আবিরের দিকে তাকালো।

আবির এতক্ষণও স্টাচু হয়ে ছিল।হঠাৎ দুই কানে হাত রেখে চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
….নেহিইইইইইইই,,,,নেহি নেহি নেহি। মেতো লুট গাই, বরবাদ হো গায়ি। এইসা নেহি হো সাকতা, কেহ দো কি এ ঝুট হে।
আবির তানির কাছে এসে বললো।
…. এত বড়ো ধোঁকা? বলো কে সে? কে তোমার মাঝে এই পোস্ট আপলোড করেছে? বলো বলো বলো?

বেচারি তানি পরে গেছে এক বিপাকে। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। শুধু অপরাধী মুখ করে এদিক ওদিক তাকিয়ে আছে।

এদিকে আবিরের কথা শুনে ওর বাবা এসে আবিরের গালে একটা চড় মেরে দিল। তা দেখে সবাই চমকে গেল। আবিরের বাবা রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
….বেশরম লজ্জা করেনা তোর?একেতো বিয়ের আগে এসব করে পরিবার মানসম্মান ডুবিয়েছিস। এখন আবার অসভ্যের মতো মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করছিস কে করেছে এসব? লজ্জা করেনা তোর?

আবির বেচারা বেকুব হয়ে গেল। বিনা অপরাধেই ধোলাইখেতে হলো। আবির গালে হাত দিয়ে ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো।
….মা তুমিতো শোন আমার ক,,,,

আবিরের কথা শেষ হওয়ার আগে ওর মা আরেক গালে থাপ্পড় মেরে দিয়ে বললো।
….ঠিকই টক করেছে ইউর বাবা। তোর ডেয়ার হাউ হলো, মেয়েটাকে এভাবে কুশন (কুয়েশ্চন) করার? এমনিতেই মেয়েটা কতো স্টেশনে (টেনশনে) আছে।

আবির এখানে পাত্তা না পেয়ে আদিত্যের কাছে গেল ওকে বললো।
…ভাই তুই তো অন্তত আমার কথা বিশ্বাস কর।

আদিত্য যদিও সব বুঝতে পারছে যে এসব নটাঙ্কি চলছে। তবুও বহমান নদীতে হাত ধোওয়ার মতো আদিত্যও আবিরের গালে হাত ছাফ করে নিল। তারপর বলে উঠলো।
….ছি ছি ছি তোর কাছ থেকে এটা আশা করিনি।

আবির এবার নূরের দিকে আশা ভরা চোখে তাকালো। তবে নূরও ওর আশায় পানি ঢেলে দিয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। আবির সানার দিকে তাকালে সানাও ছি ছি করে উঠলো।

আবির কোথাও আশ্রয় না পেয়ে আবার তানির সামনে এসে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগে তানিও ওর গালে একটা চড় মেরে দিল। আবির বেচারা তানির দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো সুরে বললো।
…..তুমি আবার কেন মারলে আমাকে? আমি কি তবলা নাকি,যে ফ্রীতে সবাই বাজিয়ে চলেছ? আরে ভাই মারার আগে বলেত দেও আমার দোষটা কোথাই? এখানে তো আমি নিজেই ভুক্তভোগী। এসব ঠিক না বলে দিলাম। এমন অন্যায় জাতি সহ্য করবে না।

তানি রাগ দেখিয়ে বললো।
…তো মারবো নাতো কি করবো? কাল যখন ফোন করেছিলাম, তখন মিথ্যে কেন বলিছিলে যে বাবা মা রাজি হয়নি বিয়েতে? তাহলে তো আর আমাকে এসব নাটক করতে হতো না।

নাটকের কথা শুনে সবাই আবার চমকে গেল। সবাই একসাথে একের পর এক বলে উঠলো।
…কিহহ্?

…কেয়া?

….হোয়াট?

…হ্যাঁঃ?

আবির খুশী হয়ে বললো।
…তারমানে এসব নাটক ছিল।

তানি কাচুমাচু হয়ে বললো।
…হ্যা, কাল যখন তুমি বললে যে, আঙ্কেল আন্টি বিয়েতে রাজি হয়নি। আমি অনেক চিন্তায় পরে গিয়েছিলাম। তাই আমি ভাবলাম যে, প্রেগন্যান্ট হওয়ার নাটক করলে আঙ্কেল আন্টি নিশ্চয় বিয়েতে রাজি হয়ে যাবেন। তাই এসব করেছি।

তানির কথা শুনে সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চায়ি করছে। কিছুক্ষণ পরে সবাই একসাথে অট্টহাসিতে ফেটে পরলো। হাসতে হাসতে সবার গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। তানি বেচারি পারছেনা লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে।

আবির দুঃখী ভাব ধরে ব্যাথিত, অভিমানী সুরে সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
….দেখেছ সবাই আমি বলেছিলাম না আমি কিছু করিনি? কিন্তু তোমরা, তোমরা একজনও আমার কথা বিশ্বাস করলে না। আজ তোমরা আমার ছোট্ট কচি মনটা ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছ। আজ দেখে নিলাম কে আপন আর কে পর। তোমাদের সাথে কাট্টি, আর খেলমুনা হুহ্।
তারপর ওর মায়ের কাছে এসে বললো।
….মা, তুমিও? তুমিও তোমার লালকে চিন্তে পারলে না? এ দুঃখ আমি কোথায় রাখবো? আমার তো ব্যাংক একাউন্টও নেই যে সেখানে গিয়ে জমা রাখবো।

আদিত্য আবিরের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….আবির, কাট দা ক্রাপ।

আবির সাথে সাথে স্বাভাবিক হয়ে বললো।
….ওকে ভাই,এজ ইউ সে।

আবিরের মা মুচকি হেসে তানির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
…. তুমি স্টেশন (টেনশন) নিও না। উই টুমরই তোমাদের হাউসে গোইং। তোমার আর আবিরের বিয়ের পেপসুডেন্ট (প্রপোজাল) নিয়ে।

আবিরের মায়ের কথা সব তানির মাথার উপর দিয়ে বাউন্সার গেছে। তাই ও বুঝতে পারছে না কেমন রিয়্যাকশন দিবে। সানা সেটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে বললো।
….চাচি বলতে চাচ্ছে আমরা কালকে তোমাদের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবো।

তানি লাজুক হেসে মাথা ঝাকালো। একটু পরে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তানি চলে গেল।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here