ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞 #লেখিকা-Mehruma Nurr #পর্ব- ৮০

0
814

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব- ৮০

★ ৩ বছর পর
বেলকনিতে নূর মনমরা হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আজকাল ও বেশির ভাগ সময় এটাই করে। এই তিন বছরেও নূর সেই সুখের মুখ দেখেনি যার জন্য ও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এই তিন বছরেও নূর কনসিভ করেনি। অনেক ট্রাই করেছে, এমনকি ডাক্তারও দেখিয়েছে। তবুও কোনো সুফল পায়নি। ডাক্তার বলেছে, নূরেরই কিছু সমস্যা আছে , তাই কনসিভ হতে সমস্যা হচ্ছে। এটা শোনার পর থেকে নূর আরও ভেঙে পরেছে। সব আশা প্রায় ছেড়ে দিয়েছে।

এরইমধ্যে নূরের পড়াশোনা শেষ হয়ে গেছে। তানির ছেলেটাও বড়ো হয়ে গেছে। সারা বাড়ি দৌড়ে বেড়ায় এখন। তোতলা তোতলা মুখে কথা বলে। সানা আর তাসিরেরও বিয়ে হয়ে গেছে এক বছর হলো। সানাও তিনমাসের প্রেগন্যান্ট। সবাই মা হচ্ছে শুধু নূরই হতে পারছে না। এসব ভেবে নূরের অনেক খারাপ লাগে। নিজেকে অসম্পূর্ণ মনে হয় ওর। নিজেকে কেমন আদিত্যর কাছে অযোগ্য লাগে এখন ওর। যতই আদিত্য মুখে কিছু না বলুক, কিন্তু সব ছেলেই বাবা হওয়ার সুখ পেতে চায়।আর আমার জন্য আদিত্য বাবা হওয়ার সুখ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে নূরের চোখে পানি চলে এলো। এই পানিও যেন আজকাল বেশি বেশি আশা শুরু করেছে।

একটু পরে আদিত্য অফিস থেকে এলো। রুমে ঢুকে দেখলো, নূর রুমে নেই। আদিত্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বেলকনিতে গেল। ও জানে নূর ওখানেই দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্য বেলকনিতে এসে দেখলো, নূর আকাশের দিকে তাকিয়ে নীরবে কান্না করছে। নূরকে এভাবে দেখে আদিত্যের বুকের ভেতর হু হু করে উঠলো। যদিও আদিত্যর বাচ্চা হওয়া না হওয়া নিয়ে কোনো আপসোস নেই। তবে নূরের এই অবস্থা ও কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না। ওর প্রাণপাখীটা যেন আজকাল হাসতেই ভুলে গেছে। আগের সেই হাসি খুশী প্রাণচঞ্চল নূরকে আর দেখা যায় না। আদিত্য অনেক ট্রাই করে নূরকে হাসিখুশি করার। আজকাল ও নূরকে নিয়ে সাভারের বাড়িতেই থাকে। যাতে সবার মাঝে থাকলে নূর যেন হাসিখুশি থাকে। কিন্তু তাতে খুব একটা কাজ হয়না। নূরের এমন অবস্থা আদিত্য আর দেখতে পারছে না। তাইতো নূরের খুশীর জন্য এখন ও নিজেও চায় যে নূর কনসিভ করুক। যাতে ওর প্রাণপাখীটা আবার হাসি খুশী হয়ে উঠে।

এসব ভেবে আদিত্য জোরপূর্বক মুখে হাসি এনে নূরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো।
…..কি করছে আমার প্রাণপাখীটা?

আদিত্য আশায় নূর তাড়াতাড়ি করে চোখের পানি মুছে নিল। তারপর জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে নরম গলায় বললো।
…..তুমি এসে গেছ? ফ্রেশ হয়ে নেও। আমি খাবার বাড়ছি।
কথাটা বলে নূর মাথা নিচু করে চলে গেল।

আদিত্যের অনেক খারাপ লাগছে। ওর প্রাণপাখীটা কেমন যেন দিন দিন ওর কাছ থেকে দূর হয়ে যাচ্ছে। ও চেয়েও কিছু করতে পারছে না। মাঝে মাঝে ওর অনেক ভয় লাগে নূরকে নিয়ে। যদি ওর নূর এভাবে একসময় অনেক দূর হয়ে যায়। তাহলে কি করবে ও? নূরকে ছাড়া যে ও একদম নিঃশ্ব।

একটু পরে সবাই ডাইনিং টেবিলে এলো ডিনারের জন্য। হঠাৎ তানির ছেলে নিবিড় দৌড়ে এসে নূরের কোলে চড়ে বসে বললো।
….বও (বড়ো) মা বও মা, আমাকে তাইয়ে দাও।

নূর মুচকি হেসে বললো।
….জ্বি জ্বি অবশ্যই, আমার বাবাটাকে তো আমিই খাইয়ে দেব।
নিবিড়কে দেখলেই শুধু নূরের মুখে একটু হাসি দেখা যায়। আর নূরের এইটুকু হাসিই যেন আদিত্যের কাছে অনেক কিছু।

নিবিড় খেতে খেতে বলে উঠলো।
….বও মা, বও বাবা কি তোমাল তুল (চুল) তায়(খায়)?

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কি বলছ বাবা এসব? চুল কি খাওয়া যায় নাকি?

….হ্যাঁ যায়তো, বাবা না ততন (তখন) আম্মুল তুল তাচ্ছিল। আমি দেতেছি। আমি যতন(যখন) বললাম। বাবা তুমি তি তরছ( কি করছ)? বাবা বললো,আমি তোমাল আম্মুল চুল তাচ্ছি। তুমি চতলেত খাও বাইলে যেয়ে।

নিবিড়ের কথায় আবিরের কাশি উঠে গেল। কি ছেলেরে বাবা, সবার সামনে ইজ্জতের ফালুদা করে দিচ্ছে। মানুষের ঘরে ছেলে হয়, আর আমার ঘরে বাপ পয়দা হয়েছে। একেই বলে কার্মা আবির, এতদিন তুই সবার বাজিয়েছিস। এখন তোর ছেলে তোরই বাজাচ্ছে। আবিরের এমন অবস্থা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসছে।

খাওয়া শেষে নিবিড় বলে উঠলো।
…. আত্তা বও মা, আম্মু বলেতে তোমাল তামিতে(টামিতে) নাকি আমাল বউ আতবে? তবে আতবে বওনা?

নিবিড়ের কথায় নূরের হাসি মুখটা আবার মলিন হয়ে গেল। এটা দেখে আদিত্য সহ বাকি সবারও মন খারাপ হয়ে গেল। তানি নিবিড়কে ধমক দিয়ে বললো।
…নিবিড় , আজকাল বেশি কথা বলা শিখে গেছ তুমি। তোমাকে না বলেছি ছোট বাচ্চাদের এসব কথা বলতে নেই? চলো রাত হয়েছে এখন ঘুমাবে চলো।

নূর জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো।
…..তানি ওকে কেন বকছিস? ও বাচ্চা মানুষ। ও কি বোঝে?
নূর নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে বললো।
…তুমি যাও বাবা। রাত হয়ে গেছে। এখন যেয়ে ঘুমু দাও কেমন?

নিবিড় মাথা ঝাকিয়ে নূরের গালে একটা চুমু খেয়ে তানির সাথে চলে গেল। নূর সবার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বললো।
…আমার খাওয়া হয়ে গেছে। আমি রুমে যাচ্ছি।
কথাটা বলে নূর দ্রুত ওখান থেকে চলে গেল।

নূরকে যেতে দেখে আদিত্যর মুখেও আর খাবার উঠলো না। ও ভালো করেই যানে নূর এখন রুমে যেয়ে কাঁদবে। আর এটা জানা সত্বেও আদিত্যের গলা দিয়ে কিভাবে খাবার নামবে? আদিত্য প্লেট রেখে উঠে গেল। বাকি সবাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। আদিত্য আর নূরকে এভাবে দেখে ওদেরও অনেক খারাপ লাগে।

রাত ১০টা
আদিত্য বেডের ওপর বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছিল। নূর পাশেই বসে আছে। নূর অনেকক্ষণ ধরে মনে মনে অনেক সাহস যোগাচ্ছে আদিত্যকে কিছু বলার জন্য। নূর নিজের মনকে শক্ত করার চেষ্টা করছে। নূর তোকে এটা করতেই হবে। তাছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এসব ভেবে নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..শ শোন এ একটা কথা বলার ছিল।

আদিত্য ল্যাপটপের দিকে তাকিয়েই বললো।
….হ্যাঁ বলো কি বলবে?

নূর চোখ বন্ধ করে দুই হাতে বিছানার চাদর খামচে ধরে বুকের ওপর পাথর চাপা দিয়ে ঢোক গিলে বললো।
…..ব বলছিলাম যে তু তুমি আরেকটা বিয়ে করে নেও।

কথাটা যেন তীরের মতো আদিত্যর কানে যেয়ে বিঁধল। ওর মনে হচ্ছে ও নিশ্চয় কানে ভুল শুনেছে। আদিত্য এক ঝটকায় নূরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
….সরি? কেন ইউ সে ইট এগেইন? মনে হচ্ছে আমি কিছু ভুল শুনেছি।

নূর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো।
….তু তুমি ভুল শোন নি। আমি ওটাই বলেছি। তু তুমি আরেকটা বি,,,

আর বলতে পারলোনা নূর। আদিত্য রাগে হাতের ল্যাপটপ টা নিচে ছুড়ে ফেলে দিয়ে অত্যন্ত রাগী কন্ঠে বলে উঠলো।
….স্টপ ইটটট,,,ডোন্ট ইউ ডেয়ার নূর। আরেক বার যদি এই কথা বলেছ তো আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।
আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে চুল টেনে ধরে কতক্ষণ রুমের পায়চারী করতে লাগলো। রাগে ওর মাথার রগ ফেটে যাচ্ছে। নূর কিভাবে বলতে পারলো এই কথা? কিভাবে? আদিত্য রাগে কাচের টি টেবিলে একটা লাথি মেরে দিল। তারপর নূরের কাছে এসে নূরের দুই কাঁধ ধরে ঝাকিয়ে রাগী কন্ঠে বললো।
…..তুমি জানো তুমি কি বলছো? এমন একটা কথা বলতেও কিভাবে পারলে তুমি ? তোমার কি একবারও বুক কাঁপলো না এই কথাটা বলতে? বলো?

নূর ভেতরে ভেতরে প্রচুর ভয় পেলেও। সেটা দমিয়ে রেখে শক্ত হয়ে বললো।
….আমি যা বলেছি ভেবে চিন্তেই বলেছি। আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি কখনো তোমাকে বাবা হওয়ার খুশী, আর বাবাকে কখনো দাদা হওয়ার খুশী দিতে পারবো না। হ্যাঁ তুমি হয়তো বলবে যে বাচ্চা এডপ্ট করি। কিন্তু সমস্যা তো আমার, তোমার তো কোনো সমস্যা নেই। তাহলে আমার জন্য তোমরা কেন স্যাক্রিফাইস করবে? তোমাদের পুরো হক আছে নিজেদের খুশী পাওয়ার। তাই আমি চাই তুমি আরেকটা বিয়ে করো।এটাই সবার জন্য ভালো হবে।

আদিত্য নূরকে ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হাতে তালি বাজিয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো
….ওয়াও নূর দেবী, তুমি কতো মহান। তোমার কোনো তুলনা হয় না। তুমি সবার চিন্তা করলে, সবার কথা ভাবলে। আর ভেবে চিন্তে ফয়সালাও শুনিয়ে দিলে। অথচ আমি নামক এই নগন্য ব্যাক্তির কথা একবারও ভাবলে না? একবারও আমার চিন্তা করলো না? তুমি এতো সেলফিশ কিভাবে হতে পারলে নূর? কিভাবে? তুমি কিভাবে ভাবলে যে আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে আমার জীবনে জায়গা দেব? বলো কিভাবে ভাবলে? আজ আমার চেয়ে তোমার কাছে বাচ্চাই বড়ো হয়ে গেল? আরে আমি কি তোমার কাছে কখনো বাচ্চা চেয়েছিলাম? আমিতো বরং তোমাকে আরও মানা করেছিলাম বাচ্চা নিতে। তাহলে তুমি আমাকে কিভাবে বলতে পারলে এই কথা? আমি তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি নূর। ইউ হার্ট মি নূর।

আদিত্যের কথায় নূরের ভেতরে ভেঙেচুরে যাচ্ছে। নূর কিভাবে বসে আছে তা শুধু ওই জানে। নূর কোনরকমে নিজেকে শক্ত করে বললো।
….এতে এতো ওভার রিয়্যাক্ট করার কি আছে? মানুষ কি দুই বিয়ে করে না? আর তাছাড়া, আমি তো আর তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি না। আমিও তো থাকছি তোমার কাছে।

আদিত্য নূরের কাছে এসে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে আবেগি কন্ঠে বললো।
….কি হয়ে গেছে তোমার প্রানপাখী? যেই তুমি আমাকে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলাই সহ্য করতে পারতে না। সেই তুমি কিনা আজ অন্য মেয়েকে আমার জীবনে তোমার জায়গা দিতে চাচ্ছ? কেন করছ এমন?

নূর নিচের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
….সবসময় মানুষ একরকম থাকে না।পরিস্থিতির সাথে মানুষ কেও বদলাতে হয়।

আদিত্য চোয়াল শক্ত করে বললো।
….আচ্ছা তাই?তাহলে একটা কথা বলোতো,আজ যদি সমস্যা তোমার না আমার হতো, তাহলে কি তুমিও বাচ্চার জন্য অন্য ছেলের সাথে বিয়ে করে বাচ্চা নিতে?

কথাটা শোনার সাথে সাথে নূর হাত দিয়ে নিজের দুই কান চেপে ধরে বললো।
….ছিহহ,,

আদিত্য নূরের দুই হাত ওর কান থেকে নামিয়ে দিয়ে বললো।
….কেন, এখন ছিহ কেন? নিজের ওপর আসলে এখন ছিহ হয়ে গেল? এখন জবাব দাও আমার কথার?

নূর শক্ত গলায় বললো।
….এখানে আমার কথা না,তোমার কথা হচ্ছে। আর আমার কথা মানতেই হবে।

আদিত্য এবার রাগ আর সহ্য করতে পারলোনা। রাগে হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে নূরের চুলের মুঠি ধরে বলে উঠলো।
….ওকে ফাইন বাচ্চা চাইনা তোর? ঠিক আছে আমি দেব তোকে বাচ্চা। আর বিয়ের কি দরকার? এখুনি বলার সাথে সাথে আমার কাছে হাজারটা মেয়ে হাজির হয়ে যাবে, আমার কাছে শোবার জন্য। আমি তাদেরই একজনকে এনে তোর সামনেই সে** করবো। আর তুই চেয়ে চেয়ে দেখবি। কি পারবি তো?
কথাটা বলে আদিত্য নূরকে ঝটকা মেরে ছেড়ে দিয়ে রাগে হনহন করে বেড়িয়ে গেল।

আদিত্য বেড়িয়ে যেতেই নূর বিছানায় উপর হয়ে পড়ে দাঁত দিয়ে চাদর কামড়ে ধরে হৃদয়বিদারক কান্না করতে লাগলো। এতক্ষণ আদিত্যকে এসব কথা কিভাবে বলেছে তা শুধু ওই জানে। ভেতরে ভেতরে হাজার বার মরেছে ও। ওর আদিত্যকে অন্য কারো হতে বলার আগে ওর মরন কেন হলোনা? কিন্তু ও কি করবে এছাড়া যে আর কোনো উপায় নেই। নূর একটু আগের কথা মনে করলো।

যখন ও পানি নিয়ে রুমে আসছিল। তখন আদিত্যের বাবার রুমের সামনে দিয়ে আসতেই হঠাৎ নূর শুনতে পেল।আদিত্যের বাবা আবিরের বাবকে বলছে।
….তোকেতো আল্লাহ নাতীর সুখ দিল। নাজানি আল্লাহ আমার কপালে এই সুখ কবে দিবে? আদির জন্যেও চিন্তা হয়। বাচ্চা কাচ্চা না হলে ওর ভবিষ্যৎই বা কি হবে? হয়তো বাচ্চা পালক নিতে পারবে।কিন্তু নিজের সন্তানের সুখ কি আর অন্য সন্তান দিয়ে পাওয়া যায়? এখন তো বাচ আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া। আল্লাহ যেন ওদের দিকে মুখ তুলে তাকায়। নিজের শরীরের অবস্থাও বেশি ভালো না। মরার আগে একবার আদির ছেলে মেয়ের মুখ দেখে যেতে পারলে শান্তি পেতাম।

আবিরের বাবা বলে উঠলো।
…চিন্তা করোনা ভাইয়া। আল্লাহ তায়ালা ঠিকই একদিন আমাদের দোয়া কবুল করবে।

….হ্যাঁ তাই যেন হয়। মেয়েটার জন্যও খুব খারাপ লাগে। এতিম মা মরা মেয়েটা,,,

নূর আর শুনতে পারে না। ওখান থেকে চলে আসে। নিজেকে স্বার্থপর মনে হচ্ছিল তখন ওর। নিজের অক্ষমতার জন্য অন্যদের কেন শাস্তি দিবে ও। তাইতো মরমে মরে এই কথা বলেছে আদিত্যকে ও। আর এই ডিসিশন নিয়েছে। এখন আর ওকে দূর্বল হলে চলবে না।

বিশ মিনিট ধরে আদিত্য ফুল স্পিডে গাড়ী চালাচ্ছে। রাগ কমানোর জন্য এটাই একমাত্র উপায় ওর। একটা নির্জন জায়গায় এসে গাড়ি থামালো আদিত্য। মাথার চুল টেনে ধরে চোখ বন্ধ করে স্টেরিং এর ওপর মাথা ঠেকিয়ে কতক্ষণ বসে রইলো। বারবার শুধু নূরের কথাটায় ওর মাথায় ঘুরছে। কিভাবে পারলো নূর ওকে ওমন কথা বলতে? কি হয়েছে আমার প্রাণপাখীটার? নূর কি সত্যি সত্যিই আমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছে? না না এটা আমি হতে দেবনা কখনোই না। আমার প্রাণপাখীকে আমি দূরে যেতে দেবনা। কিছুতেই না।

আদিত্যের হঠাৎ মনে পড়লো ও আজও রাগের মাথায় নূরের সাথে খারাপ ব্যবহার করে এসেছে। শিট শিট শিট, আমি আবারও আমার প্রাণপাখীকে কষ্ট দিলাম। আমি কেন নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারিনা? কেন? ওরও তো নিশ্চয় কতো কষ্ট হয়েছে ওসব বলতে। আর আমি কিনা ওর ওপর রাগ দেখিয়ে আসলাম? ভালো করে বুঝিয়েও তো বলতে পারতাম। আমার প্রাণপাখীটা নিশ্চয় এখন কতো কান্না করছে। আমাকে এখুনি ওর কাছে যেতে হবে। এসব ভেবে আদিত্য গাড়ী ঘুরিয়ে বাসার দিকে রওনা দিল।

ত্রিশ মিনিট পর আদিত্য বাসায় পৌঁছাল। গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত ভেতরে ঢুকে দৌড়ে ওর রুমের দিকে গেল। রুমে ঢুকে দেকলো নূর কোথাও নেই। আদিত্য ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওয়াশরুমের দরজা খোলা।তারমানে নূর ওখানেও নেই। আদিত্য তাড়াতাড়ি ব্যালকনিতে যেয়ে দেখলো, নূর ওখানেও নেই। আদিত্য এবার ঘাবড়ে গেল। কোথায় চলে গেল নূর? রাগ করে কোথাও চলে গেল নাতো? আদিত্য দৌড়ে ছাদে এসে দেখলো ছাদেও নেই নূর। আদিত্য এবার আরও ভয় পেয়ে গেল। আদিত্য ফোন বের করে নূরের নাম্বারে ফোন দিল। কিন্তু ওর ফোন বন্ধ আসছে। আদিত্যর নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। ও নিচে এসে সবাইকে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো। আদিত্যের ডাকে সবাই বেরিয়ে এলো। আদিত্য সবার দিকে তাকিয়ে বললো।
….নূর কোথায়? নূরকে দেখেছ তোমরা?

আদিত্যের বাবা বলে উঠলো।
….নূর কোথায় মানে? ওরতো রুমেই থাকার কথা।

…রুমে নেই ও। কোথাও চলে গেছে।আসলে আমাদের মাঝে একটু রাগারাগি হয়েছিল। আমি কিছুক্ষণের জন্য বাইরে গিয়েছিলাম। এসে দেখি নূর রুমে নেই। তোমারা কি কেউ দেখেছ ওকে?

সবাই বললো না ওরা কেউ দেখেনি। আদিত্য আরও হতাশ হয়ে গেল। তাহলে কি ওর প্রাণপাখী সত্যি সত্যিই দূর হয়ে গেল। নিজেকে খুন করতে ইচ্ছে করছে ওর। বারবার আমার ভুলের জন্য আমি আমার প্রাণপাখীকে হারিয়ে ফেলি। কি করবো এখন আমি? কোথায় খুঁজব ওকে?

হঠাৎ আদিত্যের ফোন বেজে উঠল। আদিত্য দেখলো নূরের বাবা ফোন করেছে। আদিত্য তাড়হুড়ো করে ফোন রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে নূরের বাবা বললো।
….বাবা আদিত্য তোমার কি নূরের সাথে কিছু হয়েছে?

আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কেন বলুনতো?

…না আসলে নূর এতরাতে একা বাড়ি আসলো।

….তারমানে নূর আপনাদের ওখানে গেছে?

….হ্যাঁ

আদিত্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। এতক্ষণে ওর দেহে প্রাণ এলো।

নূরের বাবা আবার বললো।
…..আমি জিজ্ঞেস করলাম তা কিছু বললো না। বললো এমনি ইচ্ছে হয়েছে তাই এসেছি। তোমার ভালো না লাগলে এখুনি চলে যাচ্ছি। ওর কথায় বুঝতে পারলাম, নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে। তাই আর ওকে কিছু বললাম না। ওতো আমাকে তোমার কাছে ফোন করতেও নিষেধ করেছিলো। কিন্তু আমি ভাবলাম তুমি হয়তো চিন্তা করছ তাই তোমাকে জানালাম।

….আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ বাবা। আপনি চিন্তা করবেন না। আমি এখুনি আসছি। আমি এসে সব ঠিক করে দেব।

….ঠিক আছে বাবা।

আদিত্য ফোন রেখে দ্রুত বাইরে এসে গাড়ি স্টার্ট দিল। গাড়ি চালাতে চালাতে মনে মনে বললো, আমি তোমাকে আমার কাছ থেকে দূরে যেতে দেবনা প্রাণপাখী। আমি আসছি, আমি এসে তোমার সব রাগ ভাঙিয়ে দেব।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here