দৃষ্টির_আলাপন #পর্বঃ১৭ #আদওয়া_ইবশার

0
431

#দৃষ্টির_আলাপন
#পর্বঃ১৭
#আদওয়া_ইবশার

সকাল হয়েছে অনেক্ষন। কিন্তু পাখিরা আজ ব্যর্থ তাদের কিচিরমিচির রব তুলে রক্তিমের ঘুম ভাঙ্গাতে। সারা রাত দৃষ্টি নামক উটকো ঝামেলাটা কিভাবে ঘাড় থেকে দূর করবে এটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই নির্ঘুম কেটেছে। তবে কোনো হদিস মিলেনি। অবশেষে ব্যর্থতাকে বরণ করে ফজরের ঠিক আগ মুহূর্তে ঘুমের দেশে পাড়ি দেয় রক্তিম। যার দরুন আজ এতো বেলা হওয়ার পরও ঘুমাচ্ছে সে। অন্যথায় ঠিক ফজর ওয়াক্তেই চোখ থেকে ঘুম উড়ে যায়। তার এই অভ্যাসটা তৈরি হয়েছিল ক্যাডেট কলেজ থাকাকালিন সময়ে। এরপর মিলিটারী চাকরি সূত্রে কঠোর নিয়মের বেড়াজালে সেই অভ্যাসটা একেবারে পাকাপুক্ত ভাবে থেকে যায় রক্তিমের জীবনে। দীর্ঘ পাঁচ বছরের সৈনিক জীবনের এমন আরও কিছু অভ্যাস এখনো রয়ে গেছে রক্তিমের জীবনে। এই যেমন প্রতিদিন ফজর ওয়াক্তে ঘুম থেকে ওঠে কমপক্ষে এক ঘন্টা সময় নিয়ে মর্নিং ওয়াক করবে। নেই শুধু চাকরিটাই। রক্তিম ওঠেনি দেখে আজ মেহেদীরও ওঠার কোনো নাম গন্ধ নেই। সেও পরে পরে ঘুমাচ্ছে।হঠাৎ ফোনের তীব্র শব্দে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে রক্তিমের। ঘুম ঘুম চোখে কপাল কুঁচকে পাপড়িদ্বয় অল্প ফাঁক করে ফোনটা রিসিভ করে কানে ঠেকায়। বালিশে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয় আবারও। ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,

‌”এতো সকাল সকাল ফোন করেছেন কেন?”

ছেলের এমন জবাবে ফোনের অপর পাশে থেকে কপাল কুঁচকায় আজীজ শিকদার। সাথে কিছুটা অবাক হয় এটা ভেবে যে ছেলেকে কখনো ছয়টা পযর্ন্ত বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখেনি সেই ছেলে আজ এতো বেলা অব্দি ঘুমাচ্ছে! তাও আবার এখন বলছে এতো বেলাকে সকাল! কিছুটা চিন্তিত হয় আজীজ শিকদার। জিজ্ঞেস করে,

“কয়টা বাজে দেখেছো? তোমার জন্য সকাল এখনো অপেক্ষা করে নেই। অনেক আগেই সে বিদায় নিয়েছে। তুমি হঠাৎ এতো বেলা অব্দি ঘুমাচ্ছো কেন? শরীর ঠিক আছে?”

বাবার কথায় এবার দু-চোখের পাতা পুরোপুরি আলগা হয় রক্তিমের। কান থেকে ফোন নামিয়ে সময় দেখে বিস্মিত হয় অনেকটাই। আশ্চর্য! সে এতো বেলা অব্দি ঘুমিয়েছে! বিষয়টা যেন বিশ্বাস হচ্ছেনা। ঘাড় কাত করে পাশে তাকিয়ে দেখে মেহেদীও এখনো বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। শরীরটা কেমন মেচমেচ করছে রক্তিমের। এটা নিশ্চয়ই অনিয়ম করে এতো বেলা অব্দি ঘুমানোর ফল। অলসতা ঝেড়ে তৎক্ষণাৎ শোয়া থেকে ওঠে বসে। বাবাকে জবাব দেয়,

“আমার শরীরের আবার কি হবে?গন্ডারের চামড়ায় যেমন কখনও আঘাত লাগেনা। তেমন আমার শরীরেও কখনো অসুখ বাঁধেনা। রাতে একটু দেরীতে ঘুমিয়েছিলাম তাই ওঠতে বেলা হলো। তা আপনি বলুন কেন ফোন দিলেন? সব ঠিকঠাক! না কি কেউ আবার কোনো গন্ডগোল পাকিয়েছে?”

“সব ঠিকঠাক আছে। ফোন করেছি রেডি হতে বলার জন্য। দ্রুত ওঠে ঝটপট রেডি হয়ে নাও। আমরা আজই ময়মনসিংহ যাব দৃষ্টির বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।”

অচিরেই যেন রক্তিমের মাথায় ধুম করে মস্ত বড় আকাশটা ভেঙ্গে পরে। সদ্য জাগ্রত হওয়া শান্ত মস্তিষ্ক তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারেনা কোন প্রতিক্রিয়া দেখাবে। কতক্ষণ স্থবির হয়ে বসে থেকে স্থিমিত স্বরে প্রশ্ন করে,

“আজকে না মা’কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবার কথা! তো ওখানে যাবেন কখন?”

“সকালটা এখন হয়নি বাবা। গুণে গুণে একেবারে সাড়ে চার ঘন্টা আগে সকাল হয়েছে। আর ডাক্তারেরাও আপনার মতো সারারাত রাজকার্য শেষ করে দশটায় ঘুম থেকে ওঠে দুটোই রোগী দেখতে বসেনা। ডাক্তার দেখিয়ে কতক্ষণ আগেই এসেছি।”

জবাবে শুধু ছোট্ট করে “ওহ্” বলে রক্তিম। পূনরায় কিছুক্ষণ চুপ থেকে জানতে চায়,

“ডাক্তার কি বলেছে?”

“হুট করে এতো বড় একটা আঘাত মস্তিষ্ক নিতে পারেনি। ভয়টা মন-মস্তিষ্ক দখল করে নিয়ে একেবারে মানসিক রোগীতে পরিণত করে রেখেছে। ধীরে ধীরে সঠিক কাউন্সেলিং আর চিকিৎসায় ঠিক হবে।”

বুক ফুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে রক্তিম। হতাশাগ্রস্থ হয়ে ডান হাতে মুখের একপাশ ঘষতে থাকে বারবার। সুস্থ্য স্বাভাবিক মা’কে মানসিক রোগীতে পরিণত করার জন্য অজান্তেই মনটা নিজেকেই দায়ী করে। এক ভালোবাসা নামক অভিশপ জীবনটাকে নরক করে দিয়েছে একেবারে। পূণরায় আবার কিভাবে রক্তিম নিজেকে সেই নরকের মাঝে নিয়ে যাবে? কেন বুঝতে চাইছেনা বাবা, ঐসব প্রেম, ভালোবাসা, সংসার অন্যদের জীবনে সুখ এনে দিলেও তার জীবনে শুধু কষ্ট ছাড়া কিছুই দেয়না। গত দুটো বছরে এই ভবঘুরে ছন্নছাড়া জীবনটাতেই তো মানিয়ে নিয়েছে রক্তিম নিজেকে। সময়ের সাথে সাথে পুরনো সেই ক্ষতটাতেও হালকা প্রলেপ পরতে শুরু করেছে। সেই প্রলেপ ছুটিয়ে ক্ষতটাকে নতুন করে তাজা করতে কেন ওঠেপরে লেগেছে আজীজ শিকদার আর ঐ মেয়েটা?

“আমাকে শান্তিতে থাকতে দেখে কি সত্যিই আপনার ভালো লাগছেনা? কেন বাবা হয়েও বারবার ঐ বিভীষিকাময় জীবনের দিকে ঠেলছেন?”

অসহায় কন্ঠে জানতে চায় রক্তিম। গম্ভীর্যতার দেয়াল ডিঙিয়ে এতোদিন পর ছেলের এভাবে অসহায় স্বরের কথা শুনে আজীজ শিকদারের মনটা অশান্ত হয়। ভিতরে ভিতরে সন্তানের অসহায়ত্বে গুড়িয়ে যায় বাবা নামক সত্তাটা। বুকের ভিতর হাহাকার করে ছেলেটার একটু সুখ দেখতে। ভিতর থেকে গুড়িয়ে গেলেও মুখে তা প্রকাশ করেনা আজীজ শিকদার। কঠোর স্বরে উত্তর দেয়,

“যা খুশি ভাবতে পারো। তোমার ভাবনায় আমার চেষ্টা থেমে যাবেনা। সন্তানের ভালোর জন্য বাবা-মা’কে অনেক সময় তাদের বিরুদ্ধে যেতে হয়। যা এই মুহূর্তে আমি করছি। এই যাত্রায় শেষ। আমাকে এই শেষ চেষ্টাটুকু করতে দাও। কথা দিচ্ছি, এবার যদি আমি ভুল হই তবে আর কখনো তোমার সামনে কোনো আবদার নিয়ে যাবনা। তোমার যেভাবে খুশি সেভাবেই চলতে পারবে।”

কঠোর চিত্তে কথাগুলো বলতে চাইলেও শেষ পযর্ন্ত কঠোরতা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয় আজীজ শিকদার। শেষের কথাগুলোতে রক্তিম স্পষ্ট টের পায় বাবার ব্যকুলতা। যার দরুন সে নিজেও আর কোনো পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেনা। এই দুটো বছর যাবৎ মানুষ গুলো তার থেকে তো আর কম কষ্ট পায়নি। কষ্টের আঘাত সহ্য করতে না পেরে বর্তমানে একজন মানসিক রোগীতে পরিণত হয়েছে। আরেকজন এখনো সন্তানের মঙ্গল কামনায় তৎপর। একেই বুঝি বলে বাবা-মা! যারা সন্তানের থেকে শত কষ্ট পাবার পরও তাদের ভালোর কথা ভাবতে ভুলেনা। এই যাত্রায় কেন যেন বাবার মুখের উপর না শব্দটা ছুড়ে দিয়ে তাকে কষ্ট দিতে বিবেকে বাঁধে রক্তিমের। কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা ছাড়াই আস্তে করে কান থেকে ফোনটা নামিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

এতোক্ষনে ঘুম ভেঙ্গে গেছে মেহেদীর। আড়মোড়া ভেঙ্গে ওঠে বসে। পরপর দুটো হাই তুলে তাকায় রক্তিমের দিকে। দেখতে পায় কেমন নির্জীবের মতো মাথাটা নত করে পা ঝুলিয়ে বসে আছে রক্তিম। তার এমন নির্জীবতায় খুব একটা অবাক হয়না মেহেদী। বৈশাখ থেকে চৈত্র বারো মাসেই তো এই ছেলে এমন নিঃস্পৃহ। এর এমন জড় বস্তুর মতো আচরণের জন্য নতুন করে কিছু ঘটতে বা ঘটাতে হয়না। কথাটা ভেবে অলস শরীরটা আবারও লুটিয়ে দেয় বিছানায়। ঠিক তখনই রক্তিম আগের অবস্থানে থেকেই শান্ত ভাবে বলে,

“ওঠে রেডি হো। বেড়োতে হবে আমাদের।”

একটু কপাল কুঁচকায় মেহেদী। তার জানা মতে আজকে তো কোনো কাজ থাকার কথা না। কাজের মাঝে শুধু একটাই অকাজ আছে। সেটা হলো মোড়ের দোকানে বসে কাপের পর কাপ চা শেষ করা আর সিগারেটের ধোয়া উড়িয়ে বায়ু দোষণ করা। সেটার জন্য নিশ্চয়ই এতো তাড়া দেওয়া না! তবে কেন? প্রশ্নটা মাথায় রেখে জানতে চায়,

“কেন? কোথাও যাবি না কি?”

বসা থেকে ধীরেসুস্থে ওঠে দাঁড়ায় রক্তিম।আলনায় এলোমেলো হয়ে থাকা কাপড়ের স্তুপ থেকে বেছে একটা শার্ট আর একটা প্যান্ট নিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে,

“ময়মনসিংহ যেতে হবে। নব নির্বাচিত এমপি সাহেবের আদেশ দ্রুত বেড়িয়ে পরতে হবে।”

হঠাৎ ময়মনসিংহ কেন যেতে হবে ভেবে পায়না মেহেদী। কোথায় ভেবেছিল আজকে এতোদিন পর একটু মনের সুখে পরে পরে ঘুমাবে। কিন্তু এই বাপ-ছেলের যন্ত্রণায় সেটাও আজ হয়ে ওঠলনা। চোখে-মুখে বিরক্তি নিয়ে না চাইতেও ওঠে যায় মেহেদী। রক্তিমের পাশাপাশি নিজেও কিছুটা পরিপাটি হয়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে। রাস্তায় দাঁড়ানোর দুই মিনিটের মাথায় দেখতে পায় এমপি সাহেবের গাড়ি তাদের সামনে এসে উপস্থিত। ড্রাইভারের পাশের সিটটা ঝটপট দখল করে নেয় রক্তিম। মেহেদী কিছুক্ষণ বোকার মতো দাঁড়িয়ে থেকে উপায় না পেয়ে পিছনের সিটে আজীজ শিকদারের পাশে গিয়ে বসে। ঠিক তখনই দেখতে পায় আজীজ শিকদার কেমন তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। একটু অপ্রস্তুত হয় মেহেদী। কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে কতক্ষণ উঁশখোঁশ করে অপ্রস্তুত হেসে সালাম জানায়। শব্দ করে সালামের জবাব দেয়না আজীজ শিকদার। মনে মনে জবাব দিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয় অন্যদিকে। এতে যেন মেহেদী আরও একটুর অপ্রস্তুত হয়। ভাবে এই মহান হৃদয়ের অধিকারী এমপির চোখে সে আবার কোন ভুল করে বসল?

***
ময়মনসিংহ শহরে স্বগৌরবে অবস্থানরত দৃষ্টিদের একতলা বাড়িটার বাহিরের সৌন্দর্যটায় যেন আশেপাশের উচু দালান গুলোকে হার মানাতে বাধ্য। বাড়ির নকশা, চারদিকের পরিবেশ এটুকু দেখেই যে কেউ বলে দিতে পারবে অত্যন্ত রুচিশীল কোনো মানুষের বসবাস এখানে। ভিতরের পরিবেশটাও ঠিক সেটাই বহন করে। সাদেক সাহেব মনের ইচ্ছে পুরোটা উজাড় করে মন মতো ডিজাইনে সুদক্ষ কারিগর দিয়ে তৈরী করেছেন নিজের ছোট্ট প্রাসাদটা। পূণরায় সেটা দিলশান আরা মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজিয়েছেন। দুজনের যৌথ ইচ্ছেতে পরিপূর্ণ রূপ নিয়েছে এই স্বপ্ন নিবাস। যে নিবাসের একমাত্র স্বপ্নচারিনী দিলশান আরা। যার কাজই হলো নিজের স্বপ্ন গুলোকে পূর্ণতা দান করার জন্য নিজের পাশাপাশি স্বামী, সন্তানদেরকেউ সেই পথে পরিচালনা করা। সর্বদা নিজের বাড়িতে দাম্ভিকতার সাথে নিজের ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দেওয়া দিলশান আরা হয়তো কখনো ভুল করেও ভাবেনি তার জীবনে এমন কোনো দিন আসতে পারে, যেদিন তার বাড়িতে দাঁড়িয়ে বাইরের কিছু মানুষ তার কথার বিরোধীতা করে জয় ছিনিয়ে নিয়ে যাবে। ভাবনাতীত সেই দিনটাই বোধহয় আজ। দুপুরের একটু পরপর কলেজ ছুটির পর বাড়িতে এসেছিল দিলশান আরা। এসে প্রতিদিনের মতোই সবার আগে ছেলে-মেয়ে দুটোর খোঁজ নিয়ে চলে যায় নিজের রুমে। ফ্রেশ হয়ে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় লাগানোর সাথে সাথেই বেজে ওঠে ডোরবেল। দৃষ্টি-দিহান দুজনই তখন দুপুরের খাবার খেয়ে ঘুমাচ্ছিল। কিছুটা অসন্তুষ্ট হলেও ওঠে যায় দিলশান আরা। সদর দরজা খুলে দিতেই বাড়িতে প্রবেশ করে একে একে এলাকার নবনির্বাচিত এমপি, সিটি কর্পোরেশনের মেয়ের সহ আরও কিছু গন্যমান্য রাজনৈতিক ব্যক্তি। ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে শুধু তাকিয়ে থাকে দিলশান আরা। হুট করে কোনো কারণ ছাড়াই এতো এতো রাজনৈতিক দলের লোক তার বাড়িতে ব্যাপারটা কেমন যেন অদ্ভূত লাগে। সেই সাথে মনের কোণে সঞ্চার হয় অল্প ভীতি। ভাবে নিজেদের অজান্তে আবার কোনোভাবে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে যায়নি তো!

“আমরা যদি ভুল না করি তবে এটাই তো সাদেক সাহেবের বাসা তাইনা!”

শুভ্র পাঞ্জাবী পরিহিত আজীজ শিকদার ঠোঁটের কোণে স্মতি হাসি নিয়ে সরল কন্ঠে জানতে চায়। একটু ধাতস্থ হয় দিলশান হয়। মনে মনে অল্প ঘাবড়ালেও মুখবিবরে তা প্রকাশ করেনা। স্বভাবজাত নিজের শিক্ষক জীবনের ব্যক্তিত্ব ধরে রেখেই বলে,

“জ্বি। এটাই সাদেক সাহেবের বাসা। আমি ওনার ওয়াইফ। তবে আপনারা হঠাৎ আমাদের বাসায় সঠিক কি কারণে বুঝতে পারলাম না। বিষয়টা একটু পরিষ্কার করে বললে ভালো হতো।”

“এসেছি যখন সব কিছুই বলব। তবে আমরা কি বসে কথা বলতে পারি? আর হ্যাঁ। সাদেক সাহেবকে ডাকলে একটু ভালো হয়। আপনাদের দুজনের সাথেই আমাদের কিছু কথা আছে।”

“নিশ্চয়ই। বসুন আপনারা। সাদেক সাহেব বাসায় নেই। অফিসে। আমি ওনাকে আসতে বলছি।”

“জ্বি ধন্যবাদ।”

মুচকি হেসে কথাটা বলে একে একে সাথে নিয়ে আসা রাজনৈতিক দলের প্রত্যেককে নিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসেন আজীজ শিকদার। তবে রক্তিম মেহেদী এখনো সেই দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে। রক্তিমের চোখে-মুখে রাজ্যের বিরক্তি। সে এখানে আসতে রাজি হয়েছিল কারণ জানত তার বাবা কখনো এই প্রস্তাবে দৃষ্টির বাবা-মাকে রাজি করাতে পারবেনা। দৃষ্টি যেদিন প্রথম তার সাথে দেখা করে সেদিনই অতি সচেতন রক্তিম শিকদার তার সম্পর্কে সকল খোঁজ খবর নিয়ে রাখে। এটা ভেবে, মেয়েটাকে আবার নতুন কোনো চাল শিখিয়ে বিরোধী দল পাঠিয়েছে কি না। তখনই সাদেক সাহেব এবং দিলশান আরা’র যে ব্যক্তির সন্ধান রক্তিমে পেয়েছিল সেটা থেকেই নিশ্চিত ছিল সে এমন সচেতন দুজন বাবা-মা কখনো তাদের মেয়ের জন্য এই প্রস্তাব মানবেনা। হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হবে আজীজ শিকদারকে। কিন্তু কে জানত লোকটা যে নিজের রাজনৈতিক পাওয়া খাটিয়ে একেবারে দলবল নিয়ে এসে হাজির হবে? এখন নিশ্চয়ই এই মানুষ গুলোকে নিজেদের ক্ষমতার দাপটে হাত করে নিবে। কথাটা ভেবেই মনে মনে অস্থির হয় রক্তিম। অন্যদিকে মেহেদীর চোখে-মুখে হতবুদ্ধিতার লেশ। সে এখন পযর্ন্ত এটাই বুঝতে পারছেনা এখানে আসার উদ্দেশ্যটা কি। এমনকি এটাই যে তার গুন্ডা বন্ধুকে ভালোবাসার মতো দুঃসাহসী মেয়ে দৃষ্টির বাসা এটাও এখন পযর্ন্ত জানতে পারেনি।

চলবে……

(গল্প কালকে দিতে পারিনি সেজন্য দুঃখিত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here