ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞 #লোখিকা-Mehruma Nurr #পর্ব-৬১

0
859

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি💞💞
#লোখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৬১

★সানা আসতেই তাসির সানার হাত টেনে ধরে দেয়ালের চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে রাগী কন্ঠে বললো।
…..এসব কি হচ্ছে হ্যা? তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে, আর তুমি আমাকে জানালেও না?

সানা ইনোসেন্ট ভাব ধরে বললো।
….আরে আমাকে রাগ দেখাচ্ছ কেন? আমি কি আগে থেকে জানতাম নাকি? আমিওতো দুপুরেই জানলাম। তোমাকে বলবো তার আগে তুমিই চলে এলে। এখন এতে আমার কি দোষ? আমিওতো তোমার মতই টেনশনে আছি তাইনা?

….তোমাকে দেখে তো সেটা মনে হচ্ছে না। তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে এই বিয়েতে তোমার আপত্তিই নেই। বলার সাথে সাথেই খুশী খুশী বিয়ে করে নিবে তুমি।

সানা এবার দুঃখী ভাব ধরে মেলোড্রামা করে বললো।
…..ও সামাঝতে হে হামে আদাত হে মুসকুরানে কি, আরে পাগলে এ তো আদা হে আপনি গাম ছুপানে কি।

….মানে?

…..মানে,তুমি এটা বলতে পারলে আমাকে? তুমি জানো ভেতরে ভেতরে কতো কষ্ট হচ্ছে আমার? কষ্টে বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। উপরে উপরে এই হাসিটা দেখছ না? এটা হলো নকল হাসি। কারণ আমি আমার কষ্টটা বাবা আর ভাইয়াকে দেখাতে চাই না। বাবা আর ভাইয়া আমাকে এতো কষ্ট করে মানুষ করেছে। এখন যদি তাদের সিদ্ধান্তে আমি দুঃখী হয়ে থাকি। তাহলে ওরা অনেক কষ্ট পাবে। আর আমি কখনো ওদের কষ্ট দিতে পারবো না, কখনো না। দরকার হলে নিজে ধুকে ধুকে মরে যাবো তবুও ওদেরকে খুশী রাখবো।
কথাগুলো বলে সানা মুখে ওড়নার আঁচল চেপে ধরে ন্যাকা কান্না করতে লাগলো।

তাসির বলে উঠলো।
….আর আমার কি হবে? আমার কথা তুমি একবারও ভাবলে না? তুমি অন্য একজনকে বিয়ে করে চলে যাবে, আর আমি চেয়ে চেয়ে সেটা দেখবো? কখনই না। তোমাকে আমি আগেই বলেছিলাম যে,আদিকে সবটা জানিয়ে দেই। তাহলে আজ আর এসব হতো না। কিন্তু তুমিই আমাকে মানা করলে। একটা কথা ভালো করে মনে রেখ, তুমি অন্য কারোর হওয়ার আগে আমি তোমাকে জানে মেরে ফেলবো। তারপর নিজেও মরে যাবো। তবুও তোমাকে অন্য কারোর হতে দেব না।

….হ্যাঁ এটাই ভালো উপায়। চলো আমি আর তুমি একসাথে মরে গিয়ে আমাদের প্রেমকে অমর করে দেই।

….জাস্ট সাট আপ। এটা কোনো ফিল্ম নয় বুজেছ? আর মরে তারাই যারা কাপুরুষ। আর তুমি কোনো কাপুরুষকে ভালোবাসনি। আমি এখুনি যেয়ে আদিকে সব খুলে বলছি। আদি নিশ্চয় বুঝবে।

সানা দুঃখী ভাব ধরে বললো।
….ঠিক আছে তুমি যদি শেষ চেষ্টা করতে চাও করো। তবে আমার মনে হয়না কোনো লাভ হবে। হয়তো এটাই আমাদের শেষ দেখা।
কথাটা বলে সানা মুখে ওড়নার কোণা চেপে ধরে টিভি সিরিয়ালের বউদের মতো ন্যাকা কান্না করতে করতে দৌড়ে চলে গেল।

ডিনার শেষে সবাই সোফায় বসে আছে। তাসির আদিত্যর দিকে তাকিয়ে অনেক সাহস যুগিয়ে বলে উঠলো।
….আদি শোন না, তোর সাথে একটা জরুরি কথা ছিল।

…..হ্যাঁ বল না?

….আ আসলে, না মানে, হয়েছে কি,,

….কি আসলে নকলে করছিস?যা বলার সোজাসুজি বলনা?

…আমি সানাকে ভালবাসি। আর সানাও আমাকে ভালোবাসে।
কথাটা বলেই তাসির চোখ বন্ধ করে নিল।

আদিত্য প্রথমে মিটিমিটি হাসলো তারপর আবার সিরিয়াস ভাব ধরে বললো।
…কিহহ্? কি বললি তুই? এমন একটা কথা বলতে তোর একবারও লজ্জা হলোনা? ছি ছি ছি, তোর কাছ থেকে এটা আমি কখনোই আশা করিনি। তুই আমার বেস্টফ্রেন্ড হয়ে আমার বোনের সাথেই? কাজটা তুই একদম ঠিক করিস নি। বন্ধু হয়ে বন্ধুর সাথে এইভাবে ধোঁকা দিলি?

আদিত্যর এমন রিয়্যাকশন দেখে তাসির প্রচুর ঘাবড়ে গেল। এতদিন যে ভয়টা পেয়েছিল সেটাই হলো। আদিত্য ওকে ভুল বুঝলো। এখন কি করবে ও? তাসির বিনতীর সুরে বললো।
….আদি প্লিজ আমাকে ভুল বুজিস না। আমার কথাটা তো শোন?

….এরপরও আর কি বলার বাকি আছে তোর? আজ তুই আমার মনটা ভেঙে দিয়েছিস। তোর সাথে আর কোনো কথা নেই আমার। এই ব্যাপারে তোর আর কিছু বলার থাকলে সেটা তুই কাল বাবাকে যেয়ে বলিস। এখন তুই চলে যা এখান থেকে।

তাসির হতাশ হয়ে মন খারাপ করে মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….ঠিক আছে তুই যা ভালো মনে করিস।
কথাটা বলে তাসির মন খারাপ করে চলে গেল।

তাসির চলে যেতেই নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….একটু বেশি হয়ে গেল না? বেচারা আমার ভাইটা কেমন মন খারাপ করে চলে গেল।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….আরে চিন্তা করোনা। কালকে এর থেকে চারগুণ বেশি খুশি হয়ে যাবে।

সানা বলে উঠলো।
…বায়দা ওয়ে ভাইয়া, আমিতো ভেবেছিলাম শুধু আবির ভাইয়াই ড্রামা করার ওস্তাদ। এখন তো দেখছি তুমিও কম যাওনা। কি ড্রামা টাই না করলে। বাপরে বেচারা তাসিরের নিশ্চয় আত্মার পানি শুকিয়ে গেছে।

সানার কথায় সবাই হেসে দিল
————

পরের দিন দুপুর ২টা
আদিত্যরা সবাই ওদের সাভারের বাড়িতে এসেছে। ড্রয়িং রুমে বসে গল্প করছে। তখনই বাসার কলিং বেলটা বেজে উঠল। আদিত্য একটা বাঁকা হাসি দিল। ও জানে এখন কে এসেছে। তাই সবার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলো।

একটু পরে তাসির ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো। আদিত্যর দিকে তাকাতেই আদিত্য মিথ্যে রাগ দেখিয়ে আরেক দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে নিল। তাসির একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আদিত্যের বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।
…..আঙ্কেল আপনার সাথে কিছু কথা আছে।

….আগে বসো বাবা, তারপর বলো কি বলবে?

তাসির সোফায় বসে মাথা নিচু করে কোনরকমে সাহস যুগিয়ে বললো।
….আ আসলে আঙ্কেল আপনি প্লিজ সানাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিবেন না।

সানার বাবা ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কেন? কি সমস্যা?

….আসলে আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কথা বলতে পারি না।তাই সরাসরিই বলছি। কথাগুলো হয়তো আমার বাবা মাকে নিয়ে বলা উচিত ছিল। কিন্তু এখন সেই সময় আমার কাছে নেই। তাই আমি নিজেই বলতে এসেছি।
আঙ্কেল আ আমি সানাকে ভালোবাসি। আর সানাও আমাকে ভালোবাসে। আমি ওকে বিয়ে করতে চাই। তাই আপনি প্লিজ ওর বিয়ে বা এঙ্গেজমেন্ট যাই ঠিক করে থাকেন না কেন, প্লিজ ক্যান্সোল করে দিন। প্লিজ আঙ্কেল আই রিকুয়েষ্ট ইউ।

আদিত্যর বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মন খারাপ করার মতো করে বললো।
….ঠিক আছে তুমি যখন নিজের এঙ্গেজমেন্ট নিজেই ক্যান্সেল করতে চাচ্ছ,তাহলে আর আমরা কি করতে পারি? আমি এখুনি তোমার মা বাবাকে এঙ্গেজমেন্ট ক্যান্সেল করতে বলে দিচ্ছি।

আদিত্যের বাবার কথা শুনে তাসির যেন হাজার বোল্টের একটা ঝটকা খেল। তাসির মাথা তুলে বেকুবের মতো তাকিয়ে বললো।
….মানে?

এবার সবাই ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠলো। সবার হাসি দেখে তাসির আরো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। একটু পরে ভেতর থেকে তাসিরের মা বাবা বেরিয়ে এলো। তাদের দেখে তাসির আরো অবাক হলো। এখানে কি হচ্ছে ও কিছুই বুঝতে পারছে না। সবকিছু ওর মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। তাসির ওর মা বাবার দিকে তাকিয়ে বললো।
….তোমরা এখানে? কি হচ্ছে এসব? আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।

আদিত্য মুচকি হেসে বলে উঠলো।
…আমি বলছি তোকে, তুই কি ভেবেছিলি হ্যাঁ? শুধু তুইই আমার ভালো মন্দ বুঝিস? আমি তোকে বুঝিনা? ভুলে যাসনা আমিও তোর বেস্ট ফ্রেন্ড। তোর মনের খবর আমার থেকে ভালো কেউ জাটনে না। আরে আমিতো অনেক আগে থেকেই জানতাম যে তুই পিচ্চিকে ভালোবাসিস। শুধু তোর মুখ থেকে শুনতে চেয়েছিলাম। তার জন্যই তো এতো নাটক করতে হলো।

তাসির খুশি হয়ে বলে উঠলো।
…তারমানে এসব নাটক ছিল?

…সবটা নাটক না। সানার এঙ্গেজমেন্টটা সত্যি। তবে সেটা তোর সাথে পাগলা। কাল আমরা তোর আর সানার এঙ্গেজমেন্টের করতে চেয়েছি। বাট এখন তুই যখন চাচ্ছিস না। তাহলে আমরা এঙ্গেজমেন্টটা এখন ক্যান্সেলই করে দেই।

তাসির তড়িঘড়ি করে বলে উঠলো।
….আরে আরে এঙ্গেজমেন্ট ক্যান্সেল কেন করবি? আমি করবো তো এঙ্গেজমেন্ট।
তারপর সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
….তাই না সানা? বলোনা সবাইকে আমরা করবো এঙ্গেজমেন্ট।

তাসিরের কথায় সবাই মুখ টিপে হাসছে। সানা সবার সামনে লজ্জায় পরে গেল তাসির কথাটা বলে নিজেও লজ্জায় পরে গেল।

একটু পরে সানার চাচী মিষ্টি নিয়ে এসে সবাইকে মিষ্টিমুখ করালো।
আবির তাসিরের কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে ভাব নিয়ে বললো।
….শোন এখন থেকে কিন্তু আমি তোর সুমুন্দি হয়ে গেলাম। তো এখন থেকে আমাকে সম্মান দিয়ে চলবি বুজেছিস?

তাসির মেকি হেসে বললো।
…কিউ নেহি, কিউ নেহি। তো আপনাকে সম্মান কোন জায়গা দিয়ে দেব? উপর দিয়ে না নিচ দিয়ে?

…মানে? সম্মান কি সাবান নাকি,যে উপর নিচ দিয়ে দিবি?

….এখুনি দেখাচ্ছি বোজাচ্ছি তোকে।
কথাটা বলেই তাসির আবিরের পিঠে কিল মারতে লাগলো।
আবির বাঁচার চেষ্টা করতে করতে বললো।
…এই এই কি করছিস? সুমুন্দির সাথে কেউ এমন করে? সালা তোর সাথে বোনই বিয়ে দেবনা।
আবির ওখান থেকে উঠে এদিক ওদিক দৌড়াতে লাগলো। তাসির ওর পেছনে ছুটতে ছুটতে বললো।
….কেন তোর না রেসপেক্ট দরকার? নে আরো রেসপেক্ট নিয়ে যা।

আবির দৌড়াতে দৌড়াতে বললো।
….দেখ তুই কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন করছিস? আমি কিন্তু এর তিব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি?

ওদের কান্ড দেখে সবাই হাসতে লাগলো।
——————–

পরদিন সন্ধ্যা ৬টা
আদিত্য নূরকে শাড়ী পরিয়ে দিচ্ছে সানার এঙ্গেজমেন্ট পার্টির জন্য। সেই কখন থেকে পরাচ্ছে তবুও শেষই হচ্ছে না। নূর একটু অধৈর্য হয়ে বললো।
….একটু তাড়াতাড়ি করোনা, একরকম পরিয়ে দিলেইতো হয়। দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তো। সবাই হয়তো রেডি হয়ে বেরিয়ে পরেছে পার্টি সেন্টারে যাওয়ার জন্য। আর বাড়ির বউই লেট হয়ে গেলে সবাই কি ভাববে?

আদিত্য শাড়ী পরানো শেষে উঠে দাঁড়িয়ে বললো।
…এইতো হয়ে গেছে প্রাণপাখী। তুমিও না একটুতেই অধৈর্য হয়ে যাও।আর একরকম হলেই হবে না। তুমি সাদমান শাহরিয়ার আদিত্যের বউ। তোমাকে দেখতে হবে সবচেয়ে বেস্ট বুজেছ?
আদিত্য নূরের কাঁধ ধরে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….ইশশ্ আমার প্রাণপাখীটা দিনে দিনে একদম হট হয়ে যাচ্ছে।

নূর লাজুক হেসে বললো।
….অনেক হয়েছে এবার চলো যাওয়া যাক।

আদিত্য নূরের ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিয়ে নেশালো কন্ঠে বললো।
….আমার তো যেতেই ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে এখানেই থেকে যাই। এই ফাঁকা বাড়িতে দুজন শুধু রোমাঞ্চ আর রোমাঞ্চ করবো। আইডিয়াটা দারুণ না?

নূর আদিত্যের দিকে ঘুরে বললো।
….একদম ফালতু আইডিয়া। মাথায় শুধু এগুলোই ঘোরে তাইনা? চলতো এখন।
নূর আদিত্যর হাত ধরে বাচ্চাদের মতো টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।

দরজা পর্যন্ত এসে আদিত্য নূরের হাত টেনে ধরে দরজার সাথে চেপে ধরে বললো।
….সময় আছে কিন্তু, এখনো ভেবে দেখ আমার আইডিয়ার ব্যাপারে।

….কোনো ভাবাভাবির সময় নেই। তাড়াতাড়ি চলতো।

আদিত্য নূরের পেছন পেছন যেতে যেতে আফসোসের সুরে বললো।
…হায় নির্দয় বউ।

রাত ৮টা
এঙ্গেজমেন্ট পার্টি পুরো দমে শুরু হয়ে গেছে। সব গেস্টরাও প্রায় চলে এসেছে। নূরের বাবা,ভাই আর তানিও এসেছে।

একটু পরে নূর আর তানি মিলে সানাকে নিয়ে এলো। সানাকে আজ মেরুন রঙের একটা লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে। লেহাঙ্গার ওড়নাটা মাথার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ঝুলে আছে।

তাসির হা হয়ে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। আজকে ওর পিচ্চিটাকে একদম বউ বউ লাগছে।
নূর আর তানি সানাকে স্টেজে নিয়ে এসে তাসিরের পাশে বসিয়ে দিল। তাসির এখনো অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে সানার দিকে। সানা সেটা দেখে তাসিরের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ মারলো। তাসির সেটা দেখে মুচকি হাসলো।

কিছুক্ষণ পরেই ওদের আংটি বদল হয়ে গেল। সবাই তালি বাজিয়ে ওদের অভিনন্দন জানালো। তারপর সবাই খাওয়া দাওয়া করে নিল।

আদিত্য একজায়গায় দাঁড়িয়ে কিছু গেস্টদের সাথে কথা বলছে। নূরও কিছুটা দূরে তানি আর নিশির সাথে কথা বলছিল। নূর কথা বলতে বলতে আদিত্যের দিকে তাকালো। তখনই কিছু একটা ওর নজরে পরলো। নূর ভালো করে তাকিয়ে জিনিসটা খেয়াল করলো। তারপর ওখান থেকে ধীরে ধীরে আদিত্যের কাছে এসে দাঁড়াল। সামনে গেস্ট থাকায় নূর গলা খাঁকারি দিয়ে আদিত্যকে ডাকলো।

আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…কিছু বলবে?

নূর জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে আস্তে করে বললো।
….একটু দরকার ছিল। আমার সাথে আসোনা?

আদিত্য মাথা ঝাঁকিয়ে গেস্টদের দিকে তাকিয়ে বললো।
…এক্সকিউজ মি প্লিজ?
কথাটা বলে আদিত্য নূরের সাথে গেল।

কিছুদূর যেয়ে আদিত্য নূরকে জিজ্ঞেস করলো।
…..কি হয়েছে প্রাণপাখী? কোনো সমস্যা?

নূর আদিত্যর হাত ধরে বললো।
….তুমি আগে আমার সাথে এসো তারপর বলছি।
কথাটা বলেই নূর আদিত্যর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। আদিত্য কিছুই বুঝতে পারছে না কি হয়েছে নূরের। অগত্যা ও নূরের সাথেই যেতে লাগলো।

নূর আদিত্যকে একটা ফাঁকা রুমের ভেতর নিয়ে এলো। রুমের ভেতর এসে নূর দরজা আটকে দিল। তারপর আদিত্যের সামনে এসে বললো।
….শার্ট খোল।

নূরের কথায় আদিত্য ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। নূর শার্ট কেন খুলতে বলছে?
লোকে বলে “যার মনে যা ফাল ওঠে তা”। আদিত্যের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে। নূরের কথায় ও নিজের মনমতো মিনিং বের করে নিল। আদিত্য নূরের দিকে ঝুকে আস্তে করে বললো।
….আর ইউ শিওর? এখুনি করতে চাও তুমি?

…হ্যাঁ হ্যাঁ এখুনি করতে হবে। এখুনি করা জরুরি। তাছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এখন তো আর বাসায় যাওয়া সম্ভব না তাইনা? তাই এখানেই করতে হবে। কেন তুমি এখন করতে চাওনা?

আদিত্য হাসি মুখে বললো।
…..আরে নেকি অর পুছ পুছ? আমি তো সবসময় এটার আশায়ই থাকি। এটার জন্য তো আমি এভার রেডি হয়ে থাকি।

নূর আদিত্যের কথায় বেশি ধ্যান না দিয়ে বললো।
….ঠিক আছে তাড়াতাড়ি শার্ট খোল।

আদিত্যর মনে যেন খুশিতে লাড্ডু ফুটছে। ওর বউ যে আজকে এতো বোল্ড হয়ে যাবে তা ও কল্পনাও করেনি। আদিত্য দেরি না করে ফটাফট শার্ট খুলে ফেললো। নূর শার্টটা হাতে নিল। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে এক্সাইটেড হয়ে বললো।
….তুমিও শাড়ী খোল।

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….শাড়ী কেন খুলব?

….আরে শাড়ী না খুলে কিভাবে হবে?

….শাড়ী না খুলেও করা যাবে। এখন শাড়ী খুললে পরে আবার পরতে সময় লাগবে অনেক।

…..ওঁকে ওঁকে তুমি যেভাবে চাও সেভাবেই হবে।

….ঠিক আছে তুমি এখানেই বস। আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি।

আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে বললো
….ঠিক আছে। তবে তাড়াতাড়ি করো। আমি কিন্তু বেশি অপেক্ষা করতে পারবো না।

নূর মাথা নাড়িয়ে বললো।
….আমি জলদিই আসছি।
কথাটা বলে নূর আদিত্যর শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল।

আদিত্য এদিকে এক্সাইটেড হয়ে ফুলে যাচ্ছে। বিছানায় শুয়ে নানান রকম পজিশন নিচ্ছে। হায় আজকে আমার বউটা একদম ওয়াইল্ড হয়ে গেছে। আজতো খেলা জমবে। আদিত্যর এসব জল্পনা কল্পনার মাঝে একটু পরে নূর ওয়াশরুম থেকে বের হলো।

নূরকে দেখে আদিত্য হাসি মুখে উঠে দাঁড়াল। নূর আদিত্যর সামনে ওর শার্ট টা এগিয়ে দিয়ে বললো।
….এই নেও তোমার শার্ট। পরিস্কার হয়ে গেছে। এখন পরে নেও।

নূরের কথা আদিত্য কিছুই বুঝতে পারছে না। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…পরিস্কার হয়ে গেছে মানে? কি পরিস্কার হয়ে গেছে?

…আরে তোমার শার্টে যে খাবারের দাগ লেগে ছিল সেটা পরিস্কার হয়ে গেছে। এখন তুমি শার্ট টা পরে নেও।

….মানে তুমি এতক্ষণ এই শার্টের দাগের কথা বলছিলে? আর এইজন্য তুমি আমার শার্ট খুলতে বলেছ?

….হ্যাঁ তা নয়তো কি? আরে পার্টিতে তখন আমি দেখলাম তোমার শার্টে খাবারের দাগ লেগে আছে। লোকে দেখলে কেমন লাগতো বল? তাইতো তোমাকে তাড়াতাড়ি এখানে নিয়ে এলাম। কেন তুমি কি ভেবেছিলে?

নূরের কথা শুনে আদিত্য যেন টুপ করে আসমান থেকে পড়লো। মুখটা চুপসে যাওয়া বেলুনের মতো হয়ে গেল। বেচারা কি ভেবেছিল আর কি হয়ে গেল?

নূর বলে উঠলো।
….যাইহোক চল এখন বাইরে যায়। নাহলে সবাই খুঁজবে আমাদের।
কথাটা বলে নূর যেতে নিলেই আদিত্য ওর হাত টেনে দেয়ালের সাথে আটকে দিয়ে বললো।
….কোথায় যাচ্ছ প্রাণপাখী? এভাবে আমার আরমান জাগিয়ে তুমি চলে যাবে, তাতো হবে না।

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কি বলছ এসব? আমি কখন তোমার আরমান জাগালাম? ছাড়না এখন, বাইরে যেতে হবে। সবাই কি ভাববে?

….যা ভাবে ভাবুক, আই ডোন্ট কেয়ার। আমি আরো ভাবলাম আমার বউটা আজকে হয়তো একটু ওয়াইল্ড হয়ে গেছে। তাইতো আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।

নূর চোখ মুখ ঘুচিয়ে বললো।
….ছিহ্ তুমি এটা ভেবেছ? আমি কি তোমার মতো বেশরম নাকি, যে এসব করবো। তোমার ব্রেনটা না ওয়াশ করা দরকার। মাথায় শুধু এসব ছাড়া আর কিছুই চলে না।

…সে যাইহোক, এখন আমার তোমাকে চাই ব্যাচ্।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের ঠোঁটের দিকে এগুতে লাগলো।

নূর ভীতু গলায় বলল।
…এই না না প্লিজ এমন করোনা। দেখ বাইরে সবাই কি ভাববে? বাসায় গিয়ে যা করার করো। প্লিজ এখন যেতে দেও।

নূরের কোনো কথায় আদিত্যর কানে ঢুকছে না। ও ওর কাজে ব্যাস্ত। আদিত্যর ঠোঁট নূরের ঠোঁটে ছুইছুই , তখনই হঠাৎ কেউ দরজায় নক করলো।

নক করার শব্দে আদিত্যের ঘোর কাটল। আদিত্য দরজার দিকে তাকালো। নূর দেখলো আদিত্যের হাত একটু ঢিলা হয়ে এসেছে। নূর সেই সুযগে হালকা ধাক্কা দিয়ে আদিত্যকে সরিয়ে দিল।

আদিত্য অপ্রস্তুত থাকায় আচমকা নূরের ধাক্কায় দু কদম পিছিয়ে গেল। নূর সেই সুযোগে ওখান থেকে দৌড় দিল। দরজার কাছে এসে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে একটা লাজুক হাসি দিয়ে দরজা খুলে বেড়িয়ে গেল।

আদিত্য পেছন থেকে উচ্চস্বরে বললো।
….এর প্রতিশোধ কিন্তু নিবোই। তারপর মাথা ঝাকিয়ে হেসে দিল

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here