#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৫৬
★ রাত ১০ টা
ডিনার শেষে বড়রা বাদে বাকি সবাই সোফায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। আদিত্য আর নূর পাশাপাশি বসে আছে। আবির নানা রকমের ফানি কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। কিন্তু আদিত্যের এসব একদম ভালো লাগছে না। ও তো শুধু কখন নূরকে নিয়ে রুমে যাবে সেই অপেক্ষায় বসে আছে। তবে নূরকে সেটা কিভাবে বুঝাবে? সেতো দিব্যি ওদের সাথে আড্ডায় মজে আছে। মনে হচ্ছে সারারাত এখানেই বসে থাকার প্ল্যান করেছে।
আদিত্য সবার নজর এড়িয়ে নিজের ডান হাতটা পেছন দিয়ে নূরের কোমড়ে স্লাইড করতে লাগলো। সাথে সাথে নূর কেঁপে উঠলো। সবার সামনে বেশি নড়াচড়াও করতে পারছে না। নূর সবার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে আদিত্যকে।
….কি করছো? সবাই এখানেই আছে?
আদিত্য এক পাশ থেকে নূরের দিকে হালকা ঝুকে বিড়বিড় করে বললো।
….তাহলে চলো রুমে। ওখানে কেউ নেই।
কথাটা বলে আদিত্য উঠে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললো।
…..গাইস আমার অনেক ঘুম পাচ্ছে। আমি রুমে গেলাম ঘুমাতে। গুড নাইট।
সবাই আদিত্যের মতলব ভালোই বুঝতে পারছে। তাই আবির দুষ্টু হেসে বলে উঠলো।
…..হ্যাঁ ঠিক আছে তুই যা। ভাবিতো আছে আমাদের সাথে। ভাবি থাকলেই চলবে। আমরা আজকে সারারাত আড্ডা দেব। কি ভাবি থাকবে না আমাদের সাথে?
নূর পড়ে গেছে এক ফ্যাসাদে। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। আদিত্য রুমে যেতে বলছে, আর এরা এখানে থাকতে বলছে। কোনটা করবে এখন? নূর জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে বললো।
….হ্যাঁ হ্যাঁ কেন নয়।
এদের কথা শুনে আদিত্যের কাশি উঠে গেলো। কাশতে কাশতে চোখের ইশারায় নূরের দিকে চোখ গরম করে তাকালো। যেন ও তাড়াতাড়ি রুমে চলে আসে।
আবির আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
….কিরে তুই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যক্ষ্মার রুগী হচ্ছিস কেন? তুই না বলে ঘুমাতে যাবি, তো যা।
আদিত্য কোনরকমে কাশি থামিয়ে বলে উঠলো।
….হ্যাঁ যাচ্ছি। আর তোদেরও এতো আড্ডা দিতে হবে না। অনেক রাত হয়েছে। যা রুমে গিয়ে শুয়ে পর। আর নূরেরও হয়তো ঘুম পেয়েছে? তাইনা নূর?
সানা বলে উঠলো।
….কিযে বলোনা ভাইয়া? ভাবির মোটেও ঘুম পায়নি। তাইনা ভাবি? তুমি আমাদের জন্য আজ একটু সময় দিতে পারবে না? প্লিজ,,, ভাবি?
নূর জোরপূর্বক হেসে বললো।
…হ্যাঁ অবশ্যই।
আবির আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কিরে তুই এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা ঘুমাতে যা। আমরা তোর মতো বুড়ো হয়ে যাইনি যে সন্ধ্যার সময়ই ঘুমিয়ে পড়বো। তুই এখন যা, আমাদের ডিস্টার্ব করিস না।
আদিত্য আর না পেরে ওখান থেকে চলে গেলো। সিঁড়ির ওপর উঠে এসে একবার নূরের দিকে তাকালো। নূর আদিত্যের দিকে তাকাতেই আদিত্য চোখের ইশারায় নূরকে রুমে আসতে বললো। তারপর আদিত্য রুমে চলে গেলো।
নূর এদিকে পরে গেছে মহা মুশকিলে। এখান থেকে কি করে যাবে তা বুঝতে পারছে না। উঠতে নিলেই সানা আর আবির ওকে কোনো বাহানায় আটকে দিচ্ছে।
এদিকে আদিত্য রুমের ভেতর পায়চারী করছে আর নূরের অপেক্ষা করছে। কিন্তু নূরের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। আদিত্যের এবার ভীষণ রাগ লাগছে নূরের উপর। মেয়েটার আসলে কোনো সেন্সই নেই। নিজের বরকে রেখে দেবর ননদের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। কি কপাল আমার। নাহ আদিত্য আর থাকতে না পেরে, আবার বেড়িয়ে এলো।
নূর এখানে বসে থাকলেও ওর মন যেয়ে আছে আদিত্যের কাছে। আদিত্য হয়তো আমার ওপর রেগে আছে। এসব নূরের একটু টেনশেনও হচ্ছে।
নূরের এমন অবস্থা দেখে সবাই মিটিমিটি হাসছে।
একটু পরে আদিত্য আবার ওদের কাছে আসলো। আর এসেই কোনো কথা না বলে সোজা নূরকে পাঁজা কোলে তুলে নিল। এটা দেখে সবাই হা হয়ে গেল। আচমকা এমন হওয়ায় নূরও থতমত খেয়ে গেল। আবির বলে উঠলো।
….আরে আরে এটা কি হচ্ছে ভাই? তুই এভাবে ভাবিকে নিয়ে যাচ্ছিস কেন? এটা কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। আর আমরা এর বিরুদ্ধে চরম আপত্তি পোষণ করছি।
আদিত্য ওদের দিকে তাকিয়ে বললো।
….আপত্তি কর আর বিপত্তি কর। তোদের যা খুশী তাই কর। আমার বউয়ের দরকার।তাই আমি আমার বউকে নিয়ে যাচ্ছি। এখন তোদের যা করার কর। আই ডোন্ট কেয়ার।
কথাটা বলেই আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে চলে গেলো।
আর বাকি সবাই যেন বেকুব হয়ে গেল। আবির মাথা নাড়িয়ে তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো।
…..ছ্যা ছ্যা ছ্যা, কি দিনকাল এসে গেলো গো। আজকালকার ছেলেমেয়েদের মাঝে তো লাজ শরমের বালাইও নেই। কিভাবে ভরা মজলিস থেকে বউকে কোলে তুলে নিয়ে গেল। কেউ করে এমন? আমি হলেতো কখনও এমন করবো না।
আবিরের কথায় সবাই আবিরের দিকে তীক্ষ্ণ অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকালো। আবির ওদের চাহনি দেখে একটা মেকি হাসি দিয়ে বললো।
….কি হয়েছে এভাবে দেখছিস কেন?আমি সত্যিই বলছি, আমি কখনও এমন করবনা।
তারপর একটু থেমে আবার বললো।
….কারণ আমি আমার বউকে কখনও ঘর থেকেই বের হতে দিবোনা।
কথাটা বলেই আবির উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। বাকি সবাইও আবিরের সাথে হেসে দিল।
রুমে এসে আদিত্য নূরকে নিচে নামিয়ে দিল। নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….এটা কি করলে তুমি? সবার সামনে এভাবে কেউ নিয়ে আসে? কি ভাববে সবাই?
…..তো কি করবো? কখন থেকে ওয়েট করছি তবুও তোমার রুমে আসার কোনো খবরই নেই। ডাফারের মতো ওখানে বসেই আছো।
নূর মিছে অভিমান দেখিয়ে বললো।
…কি বললে আমি ডাফার? ঠিক আছে যাও কথা বলতে হবে না আমার মতো ডাফারের সাথে।
কথাটা বলেই নূর যেয়ে বেডের একপাশে কাত হয়ে আদিত্যের দিকে পিঠ করে শুয়ে পড়লো।
কথাটা বলে আদিত্যও বেকুব হয়ে গেল। মনে মনে ভাবলো, ধ্যাৎ কি বলে ফেললাম? বউটা আমার রাগ করে ফেললো। এখন কি করবো? আদিত্য যেয়ে নূরের পাশে আধশোয়া হয়ে নূরের কাঁধে হাত দিয়ে বললো।
….আরে তুমি কেন ডাফার হতে যাবে? ডাফার তো আমি, শুধু ডাফার না স্টুপিড আর ইডিয়টও আমি। তাই তো আমার এত সুন্দর কিউট বউটাকে ডাফার বলেছি।
আদিত্যের কথায় নূরের পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে। তবে সেটা কন্ট্রোল করে নিয়ে অভিমানী সুরে বললো।
…..থাক থাক আর শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না। আমি সবই বুঝি। এখন সরো আমাকে ঘুমুতে দেও আমার ঘুম পেয়েছে।
আদিত্য এক হাত নূরের খোলা কোমড়ে গলিয়ে দিয়ে নূরকে জড়িয়ে ধরে, নূরের কানের কাছে মুখ নিয়ে আদুরে গলায় বললো।
….সরি না প্রাণপাখি প্লিজ? মাফ করে দেওনা?আই প্রমিজ আর কখনো ওটা বলবো না। এদিকে ঘোরনা প্লিজ? এই দেখ আমি কান ধরছি।
কথাটা বলে আদিত্য এক হাত দিয়ে নিজের কান ধরলো।
নূর মাথাটা একটু বাকিয়ে দেখল, আদিত্য সত্যি সত্যিই কান ধরেছে। নূর আর নিজের হাসি কন্ট্রোল করতে পারলো না। খিলখিল করে হেসে উঠলো। নূরের হাসি দেখে আদিত্য একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। ভ্রু কুঁচকে বললো।
….কি হলো হঠাৎ এত হাসির কি হলো?
নূর কোনরকমে নিজের হাসি থামিয়ে, আদিত্যের দুই গাল টেনে দিয়ে বললো।
….অওওওও ইউ আর সোওও কিউট। আরে আমিতো শুধু মজা করছিলাম। তুমি সত্যি ভেবে নিয়েছ?
আদিত্য নূরকে বালিশের সাথে চেপে ধরে বললো।
…..তবেড়ে, আমাকে বোকা বানানো? দাঁড়াও দেখাচ্ছি মজা। এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে। অনেক ভয়াবহ শাস্তি।
নূর আদিত্যের চোখে চোখ রেখে বললো।
…দাওনা শাস্তি। তোমার সব শাস্তি আমি মাথা পেতে নেব। তোমার শাস্তিও যে আমার কাছে আশীর্বাদের মতো।
নূরের এমন আবেগ ভরা কথা শুনে আদিত্য নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে রইলো নূরের দিকে। নূরের দুই হাতের আঙ্গুলের ভেতর নিজের দুই হাতের আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে নূরের দুই হাত বিছানার সাথে চেপে ধরলো। মুখ নামিয়ে নূরের ঠোঁটে ডুব দিল। কিছুক্ষণ পর মাথা তুলে নূরের ওপর থেকে শাড়ির আঁচলটা একটানে সরিয়ে ফেললো। আবারও ডুব দিল দুজন সুখের সাগরে। আরেকটা রাত সাক্ষী হলো ওদের ভালোবাসার।
————–
সকাল ৮টা
সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছে। আবির আদিত্যের দিকে তাকাতেই কিছু একটা দেখে দুষ্টু হাসি দিল। তারপর গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলো।
…..ভাই তোর ঘরে কি জংলী বিড়াল ঢুকেছিল নাকি?
আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
….ওয়াট রাবিশ, জংলী বিড়াল কেন আসতে যাবে?
….না মানে তোর কানে এমন দাগ দেখছি তো,তাই ভাবলাম হয়তো জংলী বিড়াল টিড়াল খামচি দিয়েছে কিনা?
আবিরের কথা শুনে আদিত্যের কাশি উঠে গেলো। নূর যেন পারছে না মাটির ভেতর ঢুকে যেতে। বাকি সবাই ঠোঁট টিপে হাসছে।
আদিত্যের বাবা চরম অস্বস্তিতে পরে গেলো। তাই এখান থেকে উঠে যাওয়ার জন্য বললো।
….আমার খাবার হয়ে গেছে। আমি যাই আমার মেডিসিন নিতে হবে।
কথাটা বলেই আদিত্যর বাবা তাড়াতাড়ি করে ওখান থেকে চলে গেলেন।
আদিত্যর চাচা, চাচীও বাহানা দিয়ে উঠে গেলেন।
আদিত্য এবার রাগী চোখে আবিরের দিকে তাকালো। আবির একটা মেকি হাসি দিয়ে ইনোসেন্ট ভাব ধরে বললো।
….কি হইছে ভাই? এমন ভাবে তাকাচ্ছিস কেন? আর সবাই এভাবে চলে গেলো কেন? আমি কি কিছু ভুল বলে ফেলেছি?
আদিত্য দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বললো।
….কি বলেছিস তাইনা?ন্যাকা সাজা হচ্ছে? আমি এখুনি তোর ন্যাকামি ছুটাচ্ছি।
কথা বলতে বলতে আদিত্য উঠে আবিরের দিকে তেড়ে আসতে লাগলো। আবির সেটা দেখে উঠে দৌড় লাগালো। আদিত্যও ওর পেছনে দৌড় দিল। দুজনেই সারা বাসায় দৌড়াতে লাগলো। ওদের কান্ড দেখে সানা আর নূর হেসে কুটিকুটি হচ্ছে।
হঠাৎ বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। বাসার কাজের মেয়েটা যেয়ে দরজা খুলে দিল। সবাই দরজার দিকে তাকালো।
দরজায় একটা একুশ বাইশ বছরের মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরনে জিন্স আর টাইট টিশার্ট। চুলগুলো ছোটো ছোট গোল্ডেন কালার করা। নূর মেয়েটাকে চিনতে পারলো না। তবে বাকি সবাই ঠিকই চিনতে পেরেছে। আর মেয়েটাকে দেখে যে কেউই খুব একটা খুশি না সেটা ওদের চেহারায় ফুটে উঠেছে। কারণ মেয়েটা আর কেউ না। ওদের ফুপুর বড়ো মেয়ে নিরা।
নিরা হাসি মুখে দৌড়ে আসতে লাগলো। আবির আর সানা ভালোই বুঝতে পারছে যে নিরা কোন দিকে যাচ্ছে। আবির সানাকে চোখ দিয়ে কিছু একটা ইশারা করলো। সানা সেটা বুঝতে পেরে মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো। নিরা দৌড়ে যেই আদিত্যকে জড়িয়ে ধরতে যাবে তখনই সানা এসে মাঝখান থেকে নিরাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….আরে নিরা আপু কোথায় ছুটছো মেল ট্রেনের গতিতে? আমিতো এখানে।
সানার কাজে নিরা মনে মনে প্রচুর বিরক্ত হলেও উপরে সেটা বুঝতে না দিয়ে মেকি হেসে বললো।
….আরে সানা কেমন আছ?
সানা নিরাকে ছেড়ে দিয়ে জোরপূর্বক হেসে বিড়বিড় করে বললো।
….এতক্ষণ তো ভালোই ছিলাম, এখন নাজানি কেমন হবো।
….সরি? কিছু বললে তুমি?
…আরে বলছিলাম আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো? আমেরিকা থেকে কবে এলে।
তারপর আবার বিড়বিড় করে বললো।
….আর কেন এলে?
….আমি আজই এসেছি। আর এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানেই এসেছি।
….ও তারমানে তুমি শুধু দেখা করতে এসেছ? এখুনি আবার চলে যাবে তাইনা? আফটার অল এতদিন পরে এসেছ, ফ্যামিলির সাথে নিশ্চয় সময় কাটাতে চাইবে তাইনা?
নিরা সানার উপর চরম বিরক্ত হচ্ছে। তবুও মুখে মেকি হাসি দিয়ে বললো।
….সানা তুমিও না, অনেক মজা করতে শিখেছ। যাক বাদ দেও।
কথাটা বলে নিরা আবারও আদিত্যের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।
এবার আবির এগিয়ে এসে বললো।
…আরে ছিরা, থুক্কু নিরা আমার সাথে তো দেখাই করলে না। দেখ আমি কতো হ্যান্ডসাম হয়ে গেছি।
…আরে আবির কেমন আছো?
…..ভালো আছি।শুধু ভালো না একদম ফাটাফাটি ভালো আছি। আর শুধু আমিই না। আমরা সবাই অনেক অনেক খুশি আছি।
নিরা ভ্রু কুঁচকে বললো।
….তাই? তা এত খুশির কারণ কি জানতে পারি?
আবির হাসি মুখে বললো।
….অবশ্যই, কেন জানতে পারবে না? বরং তোমারই তো বেশি জানার দরকার।
….মানে?
….মানে তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে। যা দেখলে তুমি একদম খুশিতে পাগল হয়ে যাবে।
নিরা উৎসাহ নিয়ে বললো।
…সত্যিই? কি সারপ্রাইজ?
….এখুনি দেখাচ্ছি। চোখ বন্ধ কর আগে।
আবিরের কথামতো নিরা চোখ বন্ধ করে নিল। আবির বাঁকা হেসে নূরের কাছে যেয়ে, নূরকে নিয়ে এসে আদিত্যের পাশে দাড় করালো।আদিত্য মুচকি হেসে পেছন থেকে নূরের কাঁধ জড়িয়ে ধরলো। আবির নিরার দিকে তাকিয়ে বললো।
…এখন চোখ খোল নিরা।
নিরা চোখ খুলে সামনে তাকালো। সাথে সাথেই আবির দুই হাত উঠিয়ে নূরের দিকে তাক করে বললো।
…..টাডা,,,দিস ইস ইউর সারপ্রাইজ। ইনি হচ্ছেন দ্যা সাদমান শাহরিয়ার আদিত্যর স্ত্রী মিসেস নূর সাদমান শাহরিয়ার।
আবির এবার নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…আর ভাবি ও হচ্ছে ফুপুর বড়ো মেয়ে আর নিশির বড়ো বোন নিরা। নিরা আদিত্য ভাইয়ার বোন। আর তোমার ননদ।
আবিরের কথায় নিরার মাথায় যেন বাজ পড়লো। নিরা উত্তেজিত হয়ে বললো।
…ওয়াট?ওয়াট ডু ইউ মিন বাই স্ত্রী?
আবির বলে উঠলো ।
….স্ত্রী মিনস ওয়াইফ,বউ,বিবি, পত্নী, ঘরওয়ালি আরো বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে এটাকে। ওইযে গান শুনেছ না? স্বামী আর স্ত্রী, বানাইছে কোন মিস্ত্রি। এরা হলো সেই স্বামী স্ত্রী। আই হোপ ইউ গেট ইট।
নিরা দাঁত কটমট করে বললো।
….আমি জানি স্ত্রী মানে কি। আমি বলতে চাচ্ছি আদিত্য কখন আর কবে বিয়ে করলো। আর আমাকে কেউ কিছু জানাল না। আর আদিত্য তুমি আমাকে না জানিয়ে বিয়ে করলে কিভাবে?
এতক্ষণে আদিত্য বলে উঠলো।
…..ওয়ান সেকেন্ড, প্রথমত আমি তোমার বড়ো । তাই আমাকে নাম ধরে না ভাইয়া বলে ডাকবে। আর দ্বিতীয়ত তুমি আমার কোনো গার্ডিয়ান বা গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যক্তি না যে তোমাকে জানিয়ে আমার বিয়ে করতে হবে। হ্যাঁ বিয়ের দাওয়াত হিসেবে তোমাদের পুরো পরিবারকে বলেছিলাম। এখন তোমার পরিবার যদি তোমাকে না জানিয়ে থাকে সেখানে আমাদের করার কিছু নাই। যাইহোক এসেছ যখন খাওয়া দাওয়া করে যেও। আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট ভিডিও কল করতে হবে আমি আসছি।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….নূরপাখি, একটা কফি নিয়ে রুমে এস।
নূর মুচকি হেসে মাথা ঝাকিয়ে সায় জানালো।
তারপর আদিত্য নিজের রুমে চলে গেলো।
আর এদিকে নিরা রাগে ফেটে যাচ্ছে। কি ভেবেছিল আর কি হয়ে গেলো। ওর সব প্লান এভাবে ভেস্তে যেতে পারে না। কিছুতেই না। আদিত্যকে আমি যেভাবেই হোক আমার করেই ছাড়বো। আর এই মেয়েটাকে তো আমি বিদায় করেই ছাড়বো। এসব ভেবে নিরা সয়তানি হেসে, সানার দিকে তাকিয়ে বললো।
…সানা আমাকে রুম দেখিয়ে দাওতো। আমি একটু ফ্রেশ হব।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও সানা মাথা ঝাকিয়ে নিরাকে রুম দেখিয়ে দিল।
—————-
দুপুর ২ টা
সবাই ডাইনিং টেবিলে লাঞ্চের জন্য আসছে। আজকে নূর সবার জন্য রান্না করেছে। যদিও আদিত্য মানা করেছিলো। তবে নূর অনেক মেহনত করে আদিত্যকে রাজি করিয়েছে। নূর টেবিলে খাবার সার্ভ করছে। একে একে সবাই এসে বসলো। আবির এসেই নাক টেনে খাবারের ঘ্রাণ নিয়ে বললো।
….খুশবুউউউউ,,,, বাহ্ আজকে সম্পেশ খানা হবে।
আবিরের কথায় সবাই হেসে দিল। তখনই নিরা ওখানে চলে এলো। নিরা দেখলো আদিত্যের পাশের সিট খালি আছে। নিরা সুযোগ পেয়ে ফট করে আদিত্যের পাশে বসতে নিলেই আদিত্য ওকে আটকে দিয়ে বললো।
….নিরা তুমি প্লিজ অন্য চেয়ারে গিয়ে বস।এখানে নূর বসবে।
নিরা বলে উঠলো।
…কিন্তু নূরতো খাবার সার্ভ করছে। ওতো আর এখন বসতে পারবে না তাই না?
আদিত্য চোয়াল শক্ত করে বললো।
….তোমাকে এক কথা কয়বার বলতে হবে? আমি যেমন তোমার বড়ো ভাই, নূরও তেমন তোমার বড়ো ভাইয়ের বউ। তাই তার নাম ধরে না ভাবি বলে ডাকবে। আর হ্যাঁ, নূর আমাদের সাথেই খাবে। তাই তুমি অন্য জায়গায় গিয়ে বস।
এতক্ষণে নূর বলে উঠলো।
….থাকনা নিরা আপু তো ঠিকই বলেছে। আমি খাবার সার্ভ করছি, এখন খেতে পারবো না। আমি পরে খেয়ে নেব।
আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
….তোমাকে এতো কথা বলতে হবে না। আর খাবার সার্ভ করার জন্য বাসায় অনেক লোক আছে। তোমাকে করতে হবে না। তুমি এখানে এসে বস।
নূর আর কিছু না বলে আদিত্যের পাশে এসে বসলো।
নিরা মনে মনে চরম রাগ হলেও উপরে উপরে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে অন্য চেয়ারে গিয়ে বসলো। নিরার এমন অবস্থা দেখে আবির আর সানা মিটিমিটি হাসছে।
নূরের রান্না করা খাবার খেয়ে সবাই নূরের অনেক প্রসংশা করছে। এসব দেখে নিরা জ্বলে যাচ্ছে। নিরা খাবার মুখে দিয়ে হঠাৎ থু থু করে বের করে দিয়ে বললো।
…..ওয়াক থু,, এগুলো কি খাবার, নাকি তেল আর মসলার ফ্যাক্টারি? এতো ওয়েলি ফুড খাইয়ে কি তুমি সবাইকে অসুস্থ করতে চাও নাকি? আর আদিত্য তো এসব ওয়ালি খাবার একদমই পছন্দ করে না। ওরতো সবসময় কন্টিনেন্টাল খাবার পছন্দ। কেমন বউ তুমি? বউ হয়ে বরের পছন্দ অপছন্দের কথাই জানোনা?
নিরার কথায় নূরের মুখটা মলিন হয়ে গেলো। চোখ দুটো চিকচিক করছে।
আদিত্য এদিকে রাগে ফেটে যাচ্ছে। মন চাচ্ছে এখুনি এই নিরাকে তুলে আছাড় মারতে। আাবির আর সানারও খুব রাগ হচ্ছে নিরার ওপর। আদিত্য রেগে উঠে নিরাকে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই আদিত্যের বাবা বলে উঠলো।
….কি বলছো এসব নিরা? খাবার তো অনেক ভালো হয়েছে। আর তেল মসলাও কমই আছে।
আদিত্যের চাচী বলে উঠলো।
…হ্যাঁ নিরা, ভাই হার্টের রুগী দেখে নূর অনেক কম তেল ব্যবহার করেছে। আর হ্যাঁ, নূর আদিত্যের জন্য কন্টিনেন্টাল খাবারও রান্না করেছিল। কিন্তু আদিত্য নিজেই এই খাবার খেতে চেয়েছে, তাই ওকে দেওয়া হয়েছে।
এবার আদিত্য বলে উঠলো।
….আর হ্যাঁ, আমার বউ কতটা ভালো না খারাপ সেটার সার্টিফিকেট নিশ্চয় তোমার কাছ থেকে নিতে হবে না। ফাস্ট এন্ড লাস্ট বার বলছি। এরপর আর কখনও যদি নূরকে উল্টো পাল্টা কিছু বলেছ তো আমার চেয়ে খারাপ কেও হবে না। এন্ড আই মিন ইট।
কথাটা বলেই আদিত্য ওখান থেকে হনহন করে চলে গেলো।
আদিত্যের বাবা নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…নূর মা তুমি আদিত্যের খাবার রুমে নিয়ে যাও। রাগ করে ঠিকমতো না খেয়েই চলে গেলো।
নূর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…..জ্বি বাবা।
তারপর একে একে সবাই চলে গেলো। আর নিরা ওখানে বসে বসে রাগে ফুঁসতে লাগলো।
——————-
রাত ১০টা
আদিত্য রুমের ভেতর দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। হঠাৎ পেছন থেকে দুটো হাত এসে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্য ভাবলো হয়তো নূর ওকে জড়িয়ে ধরেছে। তাই মুচকি হেসে ফোনের ওপারের ব্যাক্তিকে বললো।
…..আই কল ইউ লেটার।
কথাটা বলে আদিত্য ফোন কেটে দিয়ে প্যান্টের পকেটে রাখলো।
হঠাৎ ওর মনে হলো এটা নূর না। কারণ নূরের স্পর্শ আর ঘ্রাণ ওর হৃদয়ে মিশে আছে। তাই ওর চিনতে কখনোই ভুল হয় না। কথাটা ভেবে আদিত্য মেয়েটার হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলে।মেয়েটা আরো শক্ত করে ধরে বললো।
….আই লাভ ইউ আদিত্য। আই লাভ ইউ। আই কান্ট লিভ উইদাউট ইউ।
কন্ঠটা শুনে আদিত্যের বুঝতে বাকি রইল না যে মেয়েটা কে। আর বুঝতে পেরে আদিত্যের রাগ যেন সপ্তম আসমানে পৌঁছে গেল। এই মেয়ের সাহস কি করে হলো আমাকে টাচ করার? আদিত্য চোখ মুখ কঠিন করে এক ঝটকায় নিরার হাত ছাড়িয়ে দিয়ে, নিরার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনই কিছু পরার শব্দে দরজার দিকে তাকালো আদিত্য।
আর তাকাতেই চমকে গেল আদিত্য। কারণ দরজায় নূর দাঁড়িয়ে আছে। ওর হাতে থাকা গ্লাসটাই নিচে পরে ভেঙে গেছে। নূরকে দেখে আদিত্য ভয় পেয়ে গেল। মনে মনে ভাবলো, নূর আমাদের এভাবে দেখে ভুল বুঝল নাতো? কথাটা ভেবে আদিত্যর গলা শুকিয়ে আসছে।
নূর আর ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারলো না। দৌড়ে ওখান থেকে চলে গেল।
নূরের এভাবে যাওয়া দেখে আদিত্য আরো ঘাবড়ে গেল। নূরকি তাহলে সত্যি সত্যিই আমাকে ভুল বুঝল?
আদিত্যও নূরের পেছনে যেতে নিলেই, নিরা ওর হাত ধরে আটকে দিয়ে বললো।
…..যেতে দেও ওকে। আমি তোমাকে ওর চেয়েও বেশি ভালোবাসা দিব। আই,,,,
আর বলতে পারলো না নিরা। তার আগেই আদিত্য ঠাসস্ একটা চড় মেরে দিল ওর গালে। চড় খেয়ে নিরার মাথা বাঁকা হয়ে গেলো।
আদিত্য রাগী স্বরে বলে উঠলো।
….তোকে তো আমি পড়ে দেখে নিব। আল্লাহর কাছে দোয়া কর যেন নূর ঠিক থাকে। নাহলে আমি তোর কি হাল করবো তা তুই কল্পনাও করতে পারবি না।
কথাটা বলেই আদিত্য দ্রুত নূরের কাছে ছুটল।
নিরা পেছন থেকে সয়তানি হেসে মনে মনে বললো। যাও যাও, এখন আর গিয়েও কোনো লাভ হবে না। এসবের পড়ে নূর আর কখনোই তোমার সাথে থাকতে চাইবে না। তারপর তুমি শুধু আমার হবে।
চলবে………