ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞 #লেখিকা-Mehruma Nurr #পর্ব-৬৯

0
844

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৬৯

★ পরদিন সবাই আবার ঢাকায় ফিরে আসে। ঢাকায় এসে আবির আর তানির রিসিপশন হয়। এভাবেই দেখতে দেখতে আরও এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। সবাই আগের মতো যার যার লাইফে ব্যাস্ত হয়ে পড়েছে।

রাত ১০টা
নূর রাতের কাজ শেষ করে রুমে ঢুকলো। রুমে ঢুকে দেখলো আদিত্য বেডে হ্যালান দিয়ে বসে টিভি দেখছে আর ফোন নিয়ে কি যেন ঘাটাঘাটি করছে। টিভির দিকে তাকাতেই নূরের ভ্রু কুঁচকে এলো। টিভিতে একটা ইংলিশ গান চলছে, গানের মেয়েটা অনেক ছোট ড্রেস পরে নাচছে। শরীরের বেশির ভাগ অংশই দৃশ্যমান হয়ে আছে। এসব দেখে নূরের ভীষণ রাগ হলো আদিত্যের ওপর। ছি ছি কি সব দেখছে?

নূর টিভির সামনে যেয়ে ঠাস করে টিভি টা বন্ধ করে দিল। টিভি বন্ধ করা দেখে আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বললো।
…..কি হলো, টিভি বন্ধ করলে কেন? আমি দেখছিলাম তো?

আদিত্যের কথায় নূরের আরও রাগ হলো। একেতো এসব ফালতু জিনিস দেখছিল, তারওপর আবার সেটা গর্ব করে বলছেও উনি। নূর দাঁত চিবিয়ে বললো।
….হ্যাঁ হ্যাঁ দেখছিলাম তো কি দেখছিলে, আর দেখতে হবে না এসব ফালতু জিনিস।

….মানে? এখানে ফালতুর কি হলো? গানটা তো অনেক ভালো।

নূর রাগে আবার টিভি চালু করে দিয়ে বললো।
….ঠিক আছে দেখ তোমার নাঙ্গু পাঙ্গু।
কথাটা বলে নূর অভিমান করে বেলকনিতে চলে গেল।

নূরের কথায় আদিত্য বেকুব হয়ে গেল। ওয়াট ইস নাঙ্গু পাঙ্গু? ওর তো ভালো লাগছিল বলে শুধু গানটা শুনছিল। টিভির দিকে তো ভালো করে তাকায়ই নি। তারমানে ম্যাডাম এখন টিভির মেয়েদের ওপরও জেলাস হওয়া শুরু করেছে? কথাটা ভেবে আদিত্য ঠোঁট কামড়ে হেসে দিল। তারপর ধীরে ধীরে উঠে নূরের কাছে বেলকনিতে গেল।

নূর গাল ফুলিয়ে বেলকনির গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছে। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কাছে যেয়ে পেছন থেকে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মুখ গুঁজে দিয়ে নেশালো কন্ঠে বললো।
…..কি হয়েছে আমার প্রাণপাখীটার? হঠাৎ এতো অভিমানের কারণ জানতে পারি কি?

নূর অভিমানী সুরে বলে উঠলো
….কি আবার হবে? কিছুই হয়নি। আমাকে নিয়ে মাথা ঘামাতে হবে না। তুমি যেয়ে তোমার ওইসব নাঙ্গু পাঙ্গুদের দেখ গিয়ে।

….বাপরে এতো রাগ? আমারতো এখন ভয় করছে। কিন্তু কি করবো বলো, আমার বউ এত সুন্দর নাচতে পারা সত্বেও আমাকে কখনো নেচে দেখাল না। তাইতো টিভিতে নাচ দেখেই মন ভরতে হয়।

নূর থতমত খেয়ে বললো।
….মানে?

…মানে আমি জানি তুমি অনেক ভালো নাচতে পারো। সেদিন তোমাকে পার্টিতে নাচতে দেখেছিলাম। কিন্তু আপসোস সেটা আমাকে কখনো দেখালেনা।

নূর আমতা আমতা করে বললো।
….ও ওটাতো এমনি। ওওরা অনেক জোর করছিল তা তাই আরকি।

…সে যাইহোক। নাচতো তুমি জানো। শুধু আমাকেই দেখাও না।

নূর আদিত্যের দিকে ঘুরে মুখ ছোট করে বললো।
…তাই বলে তুমি ওইসব নাঙ্গু পাঙ্গু মেয়েদের নাচ দেখবে?

আদিত্য মুচকি হেসে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে উপরে তুলে বললো।
….এই পাগলি আমিতো মজা করছিলাম। আর আমি ওই নাঙ্গু পাঙ্গু মেয়েকেও দেখছিলাম না। আমিতো শুধু গানটা শুনছিলাম। তবে আমার প্রাণপাখী না চাইলে আর শুনবো না। নাও হ্যাপি? এখন চল শুয়ে পড়ি।
কথাটা বলে আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় যেয়ে নূরকে বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো। নূর মনে মনে ভাবলো, আদিত্য আমার নাচ দেখতে চায়। কাল আমার রাজকুমার কে একটা সারপ্রাইজ দেব।
কথাটা ভেবে নূর মুচকি হেসে আদিত্যের বুকে একটা চুমু খেয়ে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো।
————–

পরদিন রাত ৯টা
আদিত্য আর নূর মাত্রই ডিনার শেষ করে রুমে এসে বসেছে। নূর মনে মনে ভাবছে, এখুনি আদিত্যকে সারপ্রাইজটা দেবে। ও অনলাইন থেকে কিছু জিনিস অর্ডার করেছে সারপ্রাইজ এর জন্য।

নূরের ভাবনার মাঝে আদিত্য নূরের হাত ধরে নরম সুরে বললো।
….শোন প্রানপাখী, তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা ছিল।

নূর মুচকি হেসে বললো।
….হ্যাঁ বলো কি বলবে?

আদিত্য আমতা আমতা করে বললো।
….আসলে হয়েছে কি , লন্ডনে আমাদের যে ব্রাঞ্চ আছে ওটাতে কিছু সমস্যা হয়েছে। কিছু ইনভেস্টররা বাবকে ফোন করে বলেছে।

…তো?

…তো আমাকে কিছুদিনের জন্য লন্ডন যেতে হবে।

কথাটা শোনার সাথে সাথে নূরের বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। বুকটা কেমন কেঁপে উঠল। এতক্ষণ মনে মনে আদিত্যকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য যে খুশিটা ছিল, তা সব গায়ব হয়ে গেল। নূর ঝট করে আদিত্যের হাতের ভেতর থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে একটু পিছিয়ে গেল। আদিত্য নূরের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে নূরের দিকে এগিয়ে এসে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে বললো।
….দেখ প্রানপাখী, শুধু বিজনেসের ব্যাপার হলে আমি কখনোই যেতাম না। কিন্তু ওই ইনভেস্টররা অনেক পুরাণ। বাবার সাথে কাজ করতো। বাবার সাথে অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল ওনাদের। বাবা চায়না ওনাদের সাথে সম্পর্কটা নষ্ট হোক। তাই বাবা আমাকে রিকুয়েষ্ট করেছে লন্ডনে যাওয়ার জন্য। এখন তুমিই বলো আমি বাবার কথা কিভাবে ফেলে দেব? তোমাকে সাথে নিয়ে যেতাম, কিন্তু তোমার পাসপোর্ট এখনো হয়নি। তাই চেয়েও তোমাকে নিয়ে যেতে পারছি না। প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর।

নূরের ভেতর সব দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। নূর কোনরকমে মাথা নিচু রেখে কাপা কাপা কন্ঠে বললো।
…ঠি ঠিক আছে আমি বুঝতে পেরেছি। কি কিচেনে কিছু কাজ আছে আমি এখুনি আসছি।
কথাটা বলেই নূর ওখান থেকে উঠে চলে গেল।

আদিত্য বুঝতে পারছে যে নূরের মনের অবস্থা ঠিক নেই। ওর নিজেরই এতো খারাপ লাগছে, সেখানে নূরের তো খারাপ লাগারই কথা।

নূর কিচেনে এসে কতক্ষণ অস্থির হয়ে এদিক ওদিক হাটতে লাগলো। ধোঁয়া থালাবাসন বের করে আবার ধুতে লাগলো। মনটা কেমন অশান্ত হয়ে গেছে, কি করছে ও নিজেও জানে না। চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। নূর বারবার তা মুছসে, আবারও চলে আসছে। নিজের উপর নিজেরই রাগ লাগছে ওর। এত কাঁদার কি আছে? আদিত্যর ওপর এতো বড় বিজনেসের দায়িত্ব আছে। আর তার জন্য ওঁকে দেশ বিদেশে তো যেতেই হবে। এতে এতো অভার রিয়্যাক্ট করার কি আছে? তুই দুনিয়াতে একা না, যার স্বামী ব্যবসার কাজে বাইরে যাচ্ছে। বাবাও তো সারাজীবন ব্যবসার জন্য বাইরে বাইরেই থেকেছে। তাহলে তোর কেন এতো সমস্যা হচ্ছে? আদিত্য লন্ডনই তো যাচ্ছে, তোকে ছেড়ে তো আর চলে যাচ্ছে না? মনে মনে এসব হাজার কথা বলে নূর নিজের মনকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।

হটাৎ আদিত্য এসে নূরের হাত থেকে থালাবাসন কেড়ে নিয়ে রেখে দিল। তারপর নূরকে কোলে তুলে নিল। নূর তাড়াতাড়ি করে নিজের চোখ মুছে নিল। ও চায়না ওর দূর্বলতা আদিত্যের জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াক। আদিত্য নূরকে কোলে নিয়ে বেলকনিতে এসে সোফায় বসলো। নূরকে বুকের ভেতর জড়িয়ে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে ওভাবেই বসে রইলো। ও চাই নূরের মনটা একটু শান্ত হোক। তাই কিছু না বলে শুধু মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। নূরও আদিত্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রইলো। কিছুক্ষণ পরে নূর একটু শান্ত হয়ে এলো। আদিত্যের বুকের মাঝে থেকেই বলে উঠলো।
…..ক কবে যাবে? আর কতদিন থাকতে হবে?

….কাল রাতের ফ্লাইটেই যেতে হবে। আর ওখানে কতদিন লাগবে সেটা বলা যাচ্ছে না। তবে অন্তত দশ পনের দিনতো লাগবেই। এই কয়দিন তুমি সাভারের বাসায় থাকবে। আমি যত দ্রুত সম্ভব কাজ শেষ করে চলে আসবো। আমার প্রাণপাখীটাকে রেখে আমারওযে অনেক কষ্ট হবে থাকতে। আমি যে আমার আত্মাটাকেই এখানে রেখে যাবো। তোমাকে ছাড়া একটা সেকেন্ড আমার কাছে এক একটা বছরের সমান।সত্যিই বলছি বাবার ব্যাপার না হলে আমি কখনোই তোমাকে রেখে যেতাম না।

আদিত্যের কথা শুনে নূরের নিজের ওপর লজ্জা হলো। আদিত্যরও তো কষ্ট হচ্ছে, তবুও ও বাবার কথা রাখার জন্য যাচ্ছে। আর আমি কিনা ওঁকে সাপোর্ট না করে বসে বসে বসে কাঁদছি? না না আমাকে স্ট্রং হতে হবে। বাবার প্রতি আমারও তো কিছু দায়িত্ব আছে। আর আমি সেটা এড়িয়ে যেতে পারি না। আমি আদিত্যের দূর্বলতা না, ওর সাপোর্ট হতে চাই। আদিত্যকে আমার হাসিমুখে যেতে দিতে হবে।

নূরের হঠাৎ মনে পড়লো, ওতো আদিত্যের জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করেছিল। এসবের জন্য সেই কথা ভুলেই গেছে। কথাটা ভেবে নূর মাথা তুলে বললো।
….আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।

আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে নূরকে ছেড়ে দিল।নূর রুমে এসে কাবার্ড থেকে অনলাইন থেকে অর্ডার করা প্যাকেটটা নিয়ে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেল।

কিছুক্ষণ পর আদিত্যও উঠে রুমে এসে বেডের ওপর পা ছুলিয়ে বসে কাওকে ফোন করার জন্য ফোন বের করে কানে লাগলো। তখনই ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে আদিত্য আনমনেই সেদিকে তাকালো। আর তাকাতেই আদিত্য হাজার বোল্টের একটা জোরদার ঝটকা খেল। হার্টবিট যেন একমুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। ও স্বপ্ন দেখছে নাকি বাস্তব বুঝতে পারছে না।

নূর একটা শর্ট জিন্স পড়েছে, যাকে বলে একদমই শর্ট। তারওপর একটা পাতলা সাদা লেডিস শার্ট পড়েছে।শার্টের উপরের আর নিচে দুটো বোতাম খোলা।যারজন্য নূরের ফর্সা পেট দেখা যাচ্ছে। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া। নূরকে আজ কোনো হলিউডের হিরোইনের চেয়ে কম লাগছে না।নূরকে এভাবে দেখে আদিত্যের গলা শুকিয়ে আসছে। আদিত্য পুরো শক হয়ে গেছে। হুঁশ জ্ঞান সব উড়ে গেছে। আদিত্য নূরের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াল। আদিত্য এতটাই হারিয়ে গেছে যে ওর হাত থেকে ফোনটা ঠাস করে নিচে পরে গেল।

নূর একটা আবেদনময়ী হাসি দিয়ে এটিটিটউড নিয়ে পাশের টেবিলে থাকা আলেক্সার দিকে তাকিয়ে বললো।
…আলেক্সা, প্লে সং কামলি।

সাথে সাথে আলেক্সা গান শুরু করে দিল। নূর আবেদনময়ী ভঙ্গিতে আদিত্যের দিকে এগিয়ে আসতে আসতে গেয়ে উঠলো।

♬ ♬ মে রুঠিয়া ইয়ার মানাবাঙ্গে
♬ ♬ হার চিলমান ফুক জালাবাঙ্গে
♬ ♬ জাদ পাত্থার রানঝা পিঘলেগা
♬ তাদ মে কামলি কেহলাবাঙ্গে
(নূর আদিত্যের সামনে ঘুরে ঘুরে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ মেরে মাহিয়া সানাম জানাম
♬ ♬ নি মে কারেয়ানা মিদানাম
♬ ♬ সাব গুজরি দে জাগ সোয়া
♬ ♬ নি মে জাগেয়ানা বিদানাম

♬ ♬ নি মে কামলি কামলি,নি মে কামলি কামলি
♬ ♬ মেরে ইয়ার দি
♬ ♬ নি মে কামলি কামলি নি মে কামলি কামলি
♬ ♬ মেরে ইয়ার দি

♬ ♬ ঝিল দিল কো কার গায়া তু
♬ ♬ দাড়িয়া দাড়িয়া মেরে ইয়ারা
♬ ♬ আঁখিয়া দে মাহাল্লে মে
♬ ♬ হার শাম তেরা আলাম

♬ ♬ শাব গুজরি দে জাগ সোয়া
♬ ♬ নি মে জাগেয়া নামিদানাম
♬ ♬ নি মে কামলি কামলি নি মে কামলি কামলি
♬ ♬ মেরে ইয়ার দি
(নূর আদিত্যের কাছে এসে আদিত্যকে নানা ভঙ্গিতে ছুয়ে ছুয়ে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ মে তো পেহেনকে সাফা কেসারিয়া
♬ ♬ জুগনি জোগান বান জাউ
♬ ♬ সুরমে দে কালি যাদু সে
♬ ♬ কেহ দে তো জোগ ভুলাউ
(নূর আদিত্যের পেছনে এসে আদিত্যের পিঠের সাথে পিঠ লাগিয়ে নাচতে নাচতে গাইলো)
♬ ♬ মে তো শেহের দি ঠান্ডি শাবনাম
♬ ♬ হা গুলশান কা ইতার চুরাউ
♬ ♬ রুখ বাদলু তো সেইলাব হু মে
♬ ♬ পার্বাত ভি চির দিখাউ

♬ ♬ বেখুদি মে তু খুদি কা
♬ ♬ জারিয়া জারিয়া মেরে ইয়ারা
( ধীরে ধীরে আদিত্যের শকটা কমে আসছে,এখন ও নূরের ডান্স এনজয় করছে। নূর আদিত্যের সামনে এসে এক হাত আদিত্যের কাঁধে রেখে এক পা আদিত্যের কোমড়ে রাখল।আদিত্য নূরকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরলো।নূর মাথা পেছনের দিকে হেলিয়ে দিয়ে দুই হাত ছড়িয়ে গাইলো)
♬ ♬ ঝালার মে সিতারো কা
♬ ♬ চাল বারগা তু ইয়ারাম
♬ ♬ শাব গুজরি দে জাগ সোয়া
♬ ♬ নি মে জাগেয়া নামিদানাম

♬ ♬ নি মে কামলি কামলি,নি মে কামলি কামলি
♬ ♬ মেরে ইয়ার দি
♬ ♬ নি মে কামলি কামলি নি মে কামলি কামলি
♬ ♬ মেরে ইয়ার দি

নূরের এমন সেনশুয়াল ডান্স দেখে আদিত্যের পাগল প্রায় অবস্থা। আদিত্য নেশালো চোখে তাকিয়ে নূরের ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই নূর হালকা ধাক্কা দিয়ে আদিত্যকে বেডে ফেলে দিল। আদিত্য বেডে পড়ে চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে হাসলো। নূর আদিত্যের পেটের ওপর উঠে বসলো। তারপর আদিত্যের টিশার্টের কলার চেপে ধরে বলে উঠলো।
…..তুমি সব রুপে শুধু আমাকেই দেখবে, অন্য কাওকে না বুঝেছ?

আদিত্য এতক্ষণে বুঝতে পারলো যে, কালকে টিভিতে ওই মেয়েটাকে দেখার জন্য নূর এই আবতার ধারণ করেছে। আদিত্য নূরের পিঠে হাত দিয়ে নূরকে নিজের মুখের ওপর ঝুকিয়ে দুষ্টু হেসে বলল।
……আমার এতো হট এন্ড স্পাইসি বউ থাকতে আমি অন্য কাউকে কেন দেখতে যাবো? তবে যাই বলো, কাল টিভিতে ওটা না দেখলে তোমার এই হট আবতার দেখতেও পেতাম নিয়ে না। তুমিতো রীতিমতো কেয়ামত নামিয়ে দিয়েছ।

নূর এতক্ষণ এটিটিউড নিয়ে থাকলেও এবার ওর প্রচুর লজ্জা করছে। নূর লজ্জায় আদিত্যের বুকে লুকিয়ে পড়লো। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের মুখটা উপরে তুলে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠলো।
…..এখন আর মুখ লুকালে তো হবে না প্রানপাখি। পাগল যখন করেছ, তখন এই পাগলকে শান্তও তুমি করবে।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের ঠোঁটে ডুব দিল। নূরের ঠোঁটের মধুসুধাপান করতে লাগলো। চুমু খেতে খেতে আদিত্য নূরের শার্টের বোতাম খুলে শার্টটা খুলে ফেললো। তারপর নূরকে ঘুরিয়ে নিচে শুইয়ে দিল। দুজন আবারও হারিয়ে গেল ভালোবাসার সাগরে।

একঘন্টা পর ভালোবাসার পর্ব শেষে নূর আদিত্যের উন্মুক্ত বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে। আর আদিত্য নূরের চুলে আঙুল দিয়ে বিলি কেটে দিচ্ছে। আদিত্য মুচকি হেসে বলে উঠলো।
…..দ্যাট ওয়াজ গ্রেট প্রানপাখী। আজকের সারপ্রাইজ টা সবচেয়ে বেস্ট সারপ্রাইজ ছিল। আমিতো এখনো ওটার হ্যাংওভার থেকে বেরোতেই পারছি না।

আদিত্য খেয়াল করলো কখন থেকে শুধু ওই বলে যাচ্ছে, নূর কোনো জবাবই দিচ্ছে না। নূর কি ঘুমিয়ে পড়েছে। আদিত্য আস্তে করে নূরের নাম ধরে ডাক দিল।
….প্রাণপাখী?

নূর কোনো জবাব দিল না। একটু পরে হঠাৎ আদিত্য ওর বুকের ওপর তরল কিছু অনুভব করলো। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে বুকের ওপর হাত লাগিয়ে আবার সামনে এনে দেখলো আঙুলে পানি। তারমানে নূর কাঁদছে? আদিত্য চমকে উঠে সাথে সাথে নূরকে ঘুরিয়ে বালিশে শুইয়ে দিয়ে দেখলো নূর সত্যি সত্যিই কাঁদছে। আদিত্য নূরের কানের নিচে চার আঙুল রেখে, বৃদ্ধাঙ্গুল দিয়ে নূরের চোখের পানি মুছে দিয়ে নূরের কপালের কপাল, নাকের সেই সাথে নাক ঠেকিয়ে মায়া ভরা কন্ঠে বললো।
….প্রানপাখী তুমি এভাবে ভেঙে পড়লে আমি কিভাবে যাবো বলো? তুমি জানোনা তোমার কান্না আমার কিছুতেই সহ্য হয়না? তোমাকে রেখে যেতে আমারও কি কম কষ্ট হচ্ছে বলো? শুধু আমিই জানি আমি কিভাবে যাচ্ছি। আমি তোমাকে এতো কষ্টে রেখে যেতে পারবো না। দরকার হলে আমি যাওয়ায় ক্যান্সেল করে দেব। তবুও তোমাকে এভাবে দেখতে পারবো না আমি।

নূর এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠে দুই হাতে আদিত্যের মুখটা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
….কি করবো আমি বলো? আমি অনেক চেষ্টা করেও নিজেকে আটকাতে পারছি না। আমি কখনোই চাই না তোমার জন্য বাঁধা হতে। তোমার দূর্বলতা হতে। কিন্তু কি করবো? কেন জানি আমার খুব ভয় হচ্ছে। ভয় হচ্ছে তোমাকে হারিয়ে ফেলার, মনে হচ্ছে তুমি আমার কাছ থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছ। আর ফিরে পাবনা তোমাকে। তুমি যদি আমার কাছ থেকে হারিয়ে যাও, তাহলে কি করবো আমি? তোমাকে ছাড়া যে আমি বাঁচব না।

….হুঁশশ, বাচ বাচ শান্ত হও। পাগল হয়ে গেছ তুমি? কি বলছ এসব আবোল তাবোল? আমি কোথায় হারিয়ে যাব? কেউ কি তার প্রাণ ছাড়া শুধু দেহ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে বলো? তাহলে আমি আমার প্রাণপাখীকে ছেড়ে কোথায় যাবো বলো? মনে রাখবে যতক্ষণ পৃথিবীতে তোমার নিঃশ্বাস চলছে, ততক্ষণ এই আদিত্যরও নিঃশ্বাস চলছে। তুমি নেই তো এই আদিত্যও নেই। বুজেছ পাগলি?

…সত্যি বলছ তো? তুমি ফিরে আসবে তো আমার কাছে?

আদিত্য দুষ্টু হেসে বলল।
….না তোমার কাছে না, আমি তো কালকের টিভির ওই মেয়েটার কাছে যাবো।

নূর দুই হাতে আলতো করে আদিত্যের গলা ধরে রাগী কন্ঠে বললো।
….যেয়েতো দেখাও, একদম গলা টিপে মেরে ফেলবো।

আদিত্য হেসে উঠে বললো।
….মৃতকে আর কি মারবে? আমিতো কবেই তোমাতে মরে গেছি।
কথাটা বলে আদিত্য মুচকি হেসে নূরের কপালে চুমু দিয়ে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিল।

নূরও আদিত্যকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একদম আদিত্যের বুকের মাঝে ঢুকে গেল। যেন বুকটা চিরে বুকের ভেতর ঢুকে যেতে পারলো শান্তি। তাহলে আর ওকে আদিত্যের থেকে দূরে থাকতে হতো না। আদিত্য যতই বলুক তবুও নূরের মন থেকে আদিত্যকে হারনোর ভয়টা দূর হচ্ছে না। মনে হচ্ছে ও আদিত্যের থেকে দূর হয়ে যাবে। নূর আর ঠিকমতো ঘুমুতেই পারলো না।

পরদিন আদিত্য নূরকে সাভারের বাসায় রেখে লন্ডন চলে গেল। যাওয়ার সময় নূরের মনে হচ্ছিল কেউ ওর কাছ থেকে ওর কলিজাটাই নিয়ে যাচ্ছে। আদিত্যরও একই অবস্থা ছিল। নূর অনেক কষ্টে নিজেকে আদিত্যের সামনে ঠিক রেখেছিল। আদিত্য চলে যেতেই নূর দরজা আটকে কাঁদতে শুরু করে দিল। নূর মনে মনে আল্লাহর কাছে শুধু একটাই দোয়া করলো, ওর ভয় যেন সত্যি না হয়। ওর আদিত্য যেন সহিসালামত ওর কাছে ফিরে আসে। আর কিছু চাইনা ওর।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here