ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞 #লেখিকা-Mehruma Nurr #পর্ব-৭৫

0
839

#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭৫

★দেখতে দেখতে আরও এক সপ্তাহ কেটে গেছে। এই এক সপ্তাহে নূরের অনেকটা উন্নতি হয়েছে। নূর এখন হাসিখুশি থাকে, সবার সাথে ফ্রী ভাবে কথা বলে। আদিত্যের সাথেও অনেক ফ্রী হয়ে গেছে এই কয়দিনে। এখন প্রতিদিনই নূর আদিত্যের বুকেই ঘুমায়। আদিত্যও ওর প্রাণপাখীকে বুকে জড়িয়ে শান্তিতে ঘুমায়। নূরের মাঝে মাঝেই আবছা আবছা কিছু স্মৃতি মনে আসে। তবে পরিস্কার বুঝতে পারে না ও।

আদিত্য এখন মাঝে মাঝে অফিসেও যায়। কারণ ও বুঝতে পারছে যে আবিরের ওপর বেশি চাপ পড়ে যাচ্ছে। তাই ওর হেল্প করা দরকার। আর তানিও প্রেগন্যান্ট ওকেও সময় দেওয়া দরকার আবিরের। এসব ভেবেই আদিত্য আবার অফিস যাওয়া শুরু করেছে। তবে অল্প কিছুক্ষণের জন্যই থাকে। শুধু জরুরি কাজ করেই চলে আসে। কারণ এই অবস্থায় নূরকে বাসায় রেখে ও বেশিক্ষণ থাকতেও পারে না। ওর মন অস্থির হয়ে যায়। তাইতো তাড়াতাড়ি কাজ সেরে চলে আসে।

রাত ১০টা
নূর শোবার জন্য কাবার্ড খুলে রাতের কাপড় বের করছিল। হঠাৎ ওর চোখ পড়লো কাবার্ডের এক কোনায় পড়ে থাকা একটা গিটারের দিকে। নূর ভ্রু কুঁচকে গিটার টা বের করলো। তারপর আদিত্যের কাছে এসে বললো।
….এটা কার?

আদিত্য নূরের হাতে গিটার দেখে একটু অবাক হলো। নূর হারিয়ে যাওয়ার পর থেকে আদিত্য আর কখনো গান গায়নি, আর না গিটার বাজিয়েছে। কারণ ওর কাছ থেকে যে ওর গানের প্রেরণাই হারিয়ে গিয়েছিল। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো।
….আমার কাবার্ডে যেহেতু আছে তাহলে আমারি হবে তাইনা?

নূর উৎসাহ নিয়ে বললো।
…..আপনার? আপনি বাজাতে পারেন এটা?

….হ্যাঁ পারি।

নূর আরও একটু উৎসাহ নিয়ে বললো।
…তারমানে আপনি গানও গাইতে পারেন?

…হ্যাঁ সেতো একটু আধটু পারি।

নূর আমতা আমতা করে বললো।
….আমাকে একটু শোনাবেন গান?

আদিত্য নূরের দিকে মায়া ভরা দৃষ্টিতে তাকালো।আজ কতদিন পর ওর প্রাণপাখী ওর কাছে গান শুনতে চাইছে। আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….তুমি শুনতে চাও আমার গান?

নূর বাচ্চাদের মতো দ্রুত মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বুঝাল।

….ঠিক আছে চলো।
কথাটা বলে আদিত্য নূরের হাত ধরে বেলকনিতে নিয়ে গেল। বেলকনিতে এসে দুজন পাশাপাশি বেতের সোফায় বসলো। আদিত্য নূরের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে গিটার বাজানো শুরু করলো। নূর মুচকি হেসে মনোযোগ দিয়ে আদিত্যের গিটার বাজানো দেখছে। আদিত্য গিটার বাজাতে বাজাতে গেয়ে উঠলো।
♬ ♬ মে জিতনা তুমহে দেখুউউ
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে
♬ ♬ মে জিতনা তুমহে সোচু
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে

♬ ♬ ইন আখো মে ছালাকতা হে
♬ ♬ মেরা পেয়ার তেরা পেয়ার
♬ ♬ কাহি তুঝ মে ধারাকতা হে
♬ ♬ মেরা পেয়ার তেরা পেয়ার

♬ ♬ মেরা পেয়ার তেরা পেয়ার (২)

♬ ♬ মে জিতনা তুমহে দেখু
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে
♬ ♬ মে জিতনা তুমহে সোচু
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে
(নূর মনোমুগ্ধকর হয়ে আদিত্যের গান শুনছে। ওর মনে হচ্ছে এই কন্ঠটা ও হাজারো বার শুনেছে। কন্ঠটা যেন ওর হৃদয়ের সাথে মিশে আছে)
♬ ♬ থোড়াসা মেরা হে থোড়া তুমহারা
♬ ♬ মিলা ঝুলা সা ইয়েহ খাওয়াব হামারা
♬ ♬ এক মিঠি ধুন সুনাই
♬ ♬ দে রাহি হে আজ কাল
♬ ♬ হাস কে সারে গাম হামারে
♬ ♬ দেগা খুশিও মে বাদাল

♬ ♬ মেরা পেয়ার তেরা পেয়ার (২)

♬ ♬ মে জিতনা তুমহে দেখু
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে
♬ ♬ মে জিতনা তুমহে সোচু
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে

♬ ♬ কোয়ি নেহি স সাল জিয়া হে
♬ ♬ পেয়ার মাগার কায়েম রেহতা হে
♬ ♬ ধুপ খুশবু অর হাওয়ায়ে
♬ ♬ বানকে ইয়ে রেহ যায়েগা
♬ ♬ বাদ আপনে ভি হামারে
♬ ♬ ইয়ে জাহা মেহকায়েগা

♬ ♬ মেরা পেয়ার তেরা পেয়ার (২)

♬ ♬ মে জিতনা তুমহে দেখু
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে
♬ ♬ মে জিতনা তুমহে সোচু
♬ ♬ মান ইয়ে না ভারে

গান শুনতে শুনতে নূর আদিত্যের কাঁধে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আদিত্য মুচকি হেসে নূরের গালে হাত বুলিয়ে কপালে একটা চুমু খেল। তারপর নূরকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিল। নিজেও নূরের পাশে শুয়ে নূরকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
—-

সকাল ৮টা

সকালের মিষ্টি রোদ চোখে পড়তেই নূরের ঘুমটা হালকা হয়ে এলো। নূর আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকালো। সামনে তাকিয়ে দেখলো আদিত্য মাত্রই শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে। খালি গায়ে শুধু তোয়ালে পড়ে আয়নার সামনে দাড়িয়ে চুল ঝাড়ছে। নূর হা হয়ে তাকিয়ে রইলো আদিত্যের দিকে। ফর্সা সিক্স প্যাক বডিতে বিন্দু বিন্দু পানির কনা জমে, মুক্ত দানার মতো লাগছে। আদিত্যকে এইমুহূর্তে চরম আকর্ষণীয় লাগছে নূরের কাছে। নূর একবার চোখ বন্ধ করছে, আবার এক চোখ খুলে আদিত্যকে দেখছে।

আদিত্য আয়নায় নূরের সব কাজই দেখছে। আদিত্য ঠোঁট কামড়ে দুষ্টু হেসে আয়নার দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলো।
….দেখতে চাইলে ভালো করে দেখ। এভাবে চুরি করে দেখার কি আছে?তোমারই তো হাসব্যান্ড, যত খুশি দেখ।

আদিত্যের কথা শুনে নূর চোখ বন্ধ করে ফেললো। ইশরে দেখে ফেলেছে।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….হইছে আর লজ্জা পেতে হবে না। এখন ফটাফট উঠে পড়। আজকে তোমাকে নিয়ে ডক্টরের কাছে যেতে হবে। তাই তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে রেডি হয়ে নেও।

নূর মাথা নিচু করে উঠে দাঁড়িয়ে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল। নূরের কান্ড দেখে আদিত্য হাসতে লাগলো।

একটু পরে ওরা নাস্তা করে রেডি হয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে গেল।

হসপিটালে ডক্টরের সামনে বসে আছে আদিত্য আর নূর। ডক্টর নূরকে চেক-আপ করে বললো।
….হুম ইটস গুড সাইন। উনার আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে জলদিই উনি পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবেন।

আদিত্য খুশী হয়ে বললো।
….থ্যাংক ইউ ডক্টর, থ্যাংক ইউ সো মাচ।
আরো কিছুক্ষণ কথা বলার পর ওরা ডক্টরের চেম্বার থেকে বেড়িয়ে এলো।

চেম্বার থেকে বেড়িয়ে কিছুদূর এগুতেই হঠাৎ পেছন থেকে মেয়েলী কন্ঠে কেউ আদিত্যর নাম ধরে ডাক দিল। আদিত্য থেমে গিয়ে পেছনে ফিরে তাকালো। আদিত্যের দেখাদেখি নূরও পেছনে ফিরে দেখলো, একটি মেয়ে হাসিমুখে ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে। গায়ে ডাক্তারের সাদা এপ্রন পড়া। মনে হয় এখানকার ডাক্তার হবে।

নূরের ভাবনার মাঝেই মেয়েটা ওদের সামনে এসে হাসিমুখে আদিত্যের দিকে তাকিয়ে বললো।
….আরে আদিত্য,তুমি এখানে? কতদিন পরে তোমাকে দেখলাম, কেমন আছো তুমি?

আদিত্য মেয়েটির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। আসলে ও মেয়েটিকে চিনতে পারছে না। মেয়েটি বুঝতে পেরে বলে উঠলো।
…..কি ব্যাপার, চিনতে পারছো না আমাকে? আরে আমি জেরিন, জেরিন খান। তোমার সাথে লন্ডনে এখই ভার্সিটিতে ছিলাম। আমি মেডিকেল ডিপার্টমেন্টে ছিলাম।

আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
….ওওও জেরিন, সরি চিনতে পারিনি তোমাকে। তা কেমন আছ?

….হ্যাঁ চিনবে কেমন করে কখনো কি কোনো মেয়ের দিকে ভালো করে তাকিয়েছ? যাইহোক আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছ? এখানে কি মনে করে?

….ভালো আছি। আসলে আমার ওয়াইফ একটু অসুস্থ, ওকেই দেখাতে এসেছিলাম। ও তোমাকে তো পরিচয় করিয়ে দেইনি। মিট মাই ওয়াইফ নূর। আর নূর, ও হচ্ছে জেরিন। আমরা লন্ডনে
একসাথে পড়াশোনা করেছি।

নূর মেয়েটির দিকে তাকিয়ে সৌজন্যমূলক হাসি দিল। জেরিন বলে উঠলো।
…..ওয়াও দেশের মোস্ট হ্যান্ডসাম ব্যাচেলর কিনা শেষমেশ বিয়ে করে এতো গুলো মেয়ের মন ভেঙে দিল।

জেরিনের কথায় আদিত্য হেসে দিল। নূরের কেন যেন জেরিন কে একদমই ভালো লাগছে না। কেমন হেসে হেসে কথা বলছে। যেন কখনো ছেলেমানুষ দেখেনি।

জেরিন আবার বলে উঠলো।
….বাইদা ওয়ে, কি হয়েছে ভাবির? আমিও একজন ডক্টর। তুমি চাইলে আমার সাথে ডিসকাস করতে পারো। পাশেই আমার কেবিন চলো কেবিনে বসে কথা বলি।

আদিত্য মনে মনে ভাবলো নূরের ব্যাপারে জেরিনের সাথে ডিসকাস করলে ভালো হবে। একটা সেকেন্ড অপিনিওন পাওয়া যাবে। কথাটা বলে আদিত্য মুচকি হেসে বললো।
…..ঠিক আছে চলো।

নূরের জেরিনের কেবিনে যাওয়ার মোটেও ইচ্ছে নেই। মেয়েটাকে ওর একদম ভালো লাগছে না। তবুও অনিচ্ছা সত্ত্বেও আদিত্যের সাথে যেতে হলো ওকে।

কেবিনে বসে জেরিন বলে উঠলো।
…..কি খাবে বলো চা না কফি?

….না না কিছুই খাব না এখন।

….আরে আমার এখানে প্রথম আসলে কিছু একটা নিতেই হবে। আমি জানি তোমার কফি পছন্দ। তাই কফি অর্ডার করছি।

আদিত্য আর কিছু বললো না।
জেরিন আবার বলে উঠলো।
….বাইদা ওয়ে, তুমি কিন্তু আগের থেকে আরও হ্যান্ডসাম হয়ে গেছ। আই ওয়ান্ডার তুমি সবসময় এতো হ্যান্ডসাম কিভাবে থাক?

জেরিনের কথায় আদিত্য মৃদু হাসলো।
এসব দেখে নূরের রাগ আরও বেড়ে যেতে লাগলো। কেন এমন হচ্ছে ও নিজেও জানে না। তবে আদিত্যকে এই মেয়েটার সাথে হেসে হেসে কথা বলতে দেখে আদিত্যের ওপরও খুব রাগ হচ্ছে ওর। এখানে আর মোটেও থাকতে ইচ্ছে করছে না ওর। তাই নূর আদিত্যের হাতা ধরে আস্তে করে টান দিল। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে বললো।
….কি হয়েছে?

নূর মিনমিন করে বললো।
…..বাসায় চলুন না,আমার এখানে ভালো লাগছে না।

….কেন কি হয়েছে? শরীর খারাপ লাগছে?

….না তেমন না। এমনিই চলুন না।

….আচ্ছা একটু বসো, আমি একটু জেরিনের সাথে কথা বলে নি।তারপর যাবো।
কথাটা বলে আদিত্য আবার জেরিনের সাথে কথা বলতে লাগলো।

আদিত্যের এমন কাজে নূরের মনে মনে অনেক অভিমান হলো। এখনতো আর একমুহূর্তও থাকবে না এখানে। তাই নূর বলে উঠলো।
….ঠিক আছে আমি বাইরে গেলাম। আপনারা কথা বলুন।

আদিত্য ভাবলো নূর থাকলে ওর সামনে ভালো করে সবকিছু ডিসকাস করা যাবে না। কথাটা ভেবে আদিত্য বলে উঠলো।
….ঠিক আছে তুমি একটু বাইরে যেয়ে বসো।আমি জেরিনের কথা বলে আসছি।

আদিত্যের কথায় নূরের অভিমান আরও বেড়ে গেল। ওতো ভেবেছিল বাইরে যাওয়ার কথা বললে আদিত্যও ওর সাথে যেতে চাইবে। কিন্তু এখনতো আমার থেকে এই মেয়েটাই ওর কাছে বেশি জরুরি হয়ে গেছে। এখন আর আমার কি দরকার। এসব ভেবে নূরের ভীষণ কান্না পাচ্ছে। নূর আর একমুহূর্তও ওখানে না দাঁড়িয়ে বাইরে চলে এলো। বাইরে এসে অভিমান করে চেয়ারে বসে রইল। চোখ দিয়ে পানি আসতে লাগলো। বারবার হাত দিয়ে মুছছে , আবার চলে আসছে।

এভাবে পাঁচ মিনিট পার হয়ে গেল তবুও আদিত্য বাইরে আসছে না। নূর আর বসে থাকতে পারলো না। নূর মনে মনে ভাবলো ওনার যখন আমার দরকারই নেই তাহলে আমি এখানে বসে বসে ওনার জন্য কেন অপেক্ষা করবো? উনি থাকুক ওই মেয়েটার সাথে। এসব ভেবে নূর রাগ করে হাটতে হাটতে একা একাই হসপিটালের বাইরে বেরিয়ে এলো। রাস্তায় এসে হাটতে হাটতে একদিকে চলে গেল।

দশ মিনিট পর আদিত্য কেবিনের বাইরে আসলো। বাইরে এসে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো নূর কোথাও নেই। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে ভাবলো নূর আবর কোথায় গেল? আদিত্য এদিক ওদিক ভালো করে দেখতে লাগলো। কোথাও নেই নূর। আদিত্য এবার চিন্তা হতে লাগলো। কোথায় গেল মেয়েটা? আদিত্য পুরো হসপিটালে সব জায়গায় পাগলের মতো নূরকে খুজতে লাগলো। সবাইকে মোবাইলে নূরের ছোট দেখিয়ে নূরের কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলো। তবুও কোথাও পেল না। ভয়ে এবার আদিত্যের গলা শুকিয়ে আসছে। নূরের কাছে তো ফোনও নেই যে, ওকে ফোন করবে। আমি কেন ওকে একা ছাড়তে গেলাম? এখন কি করবো আমি? কোথায় খুঁজব ওকে?

আদিত্য গেটের কাছে এসে দারোয়ানকে নূরের ছবি দেখিয়ে ওর কথা জিজ্ঞেস করলো। দারোয়ান বলে উঠলো।
….এই ম্যাডাম তো দশ মিনিট আগে গেট দিয়ে বেড়িয়ে রাস্তার দিকে গেছে।

আদিত্যের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। বে বেড়িয়ে গেছে মানে? কোথায় বেড়িয়ে গেছে? ওতো এখন রাস্তাঘাট কিছুই চেনে না। তাহলে কোথায় যাবে ও? আদিত্য মাথার চুল টেনে ধরে দু কদম পিছিয়ে গেল। ওর প্রাণপাখী কি আবার হারিয়ে গেল ওর কাছ থেকে? না না এবার নূরের কিছু হয়ে গেলে ও সত্যিই মরে যাবে। আদিত্য পাগলের মতো রাস্তার পাশ দিয়ে দৌড়াতে লাগলো নূরকে খোঁজার জন্য।

বিশ মিনিট ধরে হাটার পর নূর অনেক দূর চলে এলো। তখন রাগে রাগে চলে এলেও, এখন খুব ভয় লাগছে নূরের। ওতো রাস্তাঘাট কিছুই চেনে না।বাড়ির রাস্তাও চেনে না। আবার যে হসপিটালে ফিরে যাবে সে রাস্তাও ভুলে গেছে ও। এখন কি করবে ও? ওর কাছেতো ফোনও নেই। অন্য কারোও ফোন দিয়ে যে ফোন দিবে, ওরতো কারোও নাম্বারও মনে নেই। খুব কান্না পাচ্ছে ওর। নিজের বোকামির ওপর নিজেরই রাগ লাগছে। কি দরকার ছিল ওভাবে চলে আসার? এখন কি করবি তুই?এসব ভাবতে ভাবতে নূর কখন রাস্তার মাঝে চলে এসেছে ও নিজেও জানে না। হঠাৎ গাড়ির হর্ণের শব্দে নূর পাশে ফিরে তাকালো। দেখলো একটা গাড়ি ওর দিকে দ্রুত গতিতে ছুটে আসছে। নূর ভয়ে ওখানেই জমে গেল। আর নড়াচড়া করার শক্তি পেল না। গাড়িটা কাছে আসতেই নূর কানে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। ও ভাবলো এটাই বোধ হয় ওর শেষ সময়।

আদিত্য এদিকে নূরকে খুঁজতে খুঁজতে পাগল প্রায় অবস্থা। নিজের ওপর চরম লাগছে ওর।আবারও নিজের ভুলের জন্য ওর প্রাণপাখীকে হারিয়ে ফেললো ও। কতো সাধনার পরে ওর ওর প্রাণপাখীকে খুঁজে পেয়েছিল। আর ও কিনা আগলে রাখতে পারলো না? আবারও হারিয়ে ফেললো নূরকে। এখন কি করবে ও? আদিত্য মাথার চুল টেনে ধরে কাঁদতে কাঁদতে ধপ করে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে ওর।

হঠাৎ ওর ফোনটা বেজে উঠল। আদিত্য ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরলো। কিছু একটা শুনে আদিত্য একমুহূর্তও দেরি না করে এক ছুটে ওখান থেকে চলে গেল।

বাসায় এসে দেখলো সবাই ড্রয়িং রুমে বসে আছে। আদিত্য ওদের সামনে যেয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো।
….কোথায় ও?

আদিত্যকে দেখে সবাই ভয় পেয়ে গেল। আদিত্যের চোখ প্রচুর পরিমাণ লাল হয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে আদিত্য চরম পরিমাণে রেগে আছে। তাসির আদিত্যের কাঁধে হাত রেখে বলে উঠলো।
…আদি কাম ডাউন। নূর এমনিতেই অনেক ভয় পেয়ে গেছে। জানিনা কিভাবে আমার গাড়ির সামনে চলে এসেছিল। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানী যে ঠিক সময়ে আমি ওকে দেখতে পেয়ে গাড়ি ব্রেক করে ফেলেছি। নাহলে কি হয়ে যেতো সেটা ভাবাও কষ্টকর।

আদিত্য দাতে দাত চেপে বললো।
….ও কোথায় আগে সেটা বল?

….রুমে আছে।

আদিত্য আর এক সেকেন্ডও দেরি না করে দ্রুত গতিতে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। সবাই টেনশনে আছে আদিত্য যে রেগে আছে, নাজানি কি করে বসে?

আদিত্য রুমে এসে দেখলো নূর বেডের ওপর মাথা নিচু করে বসে আছে। আদিত্য ঝড়ের গতিতে যেয়ে নূরের হাত ধরে টেনে তুলে দাড় করিয়ে ঠাসস করে গালে একটা চড় মেরে দিল। রাগে ওর মাথা নষ্ট হয়ে গেছে। আজকে ও নিজের রাগকে কিছুতেই কন্ট্রোল করতে পারছে না।
চড় খেয়ে নূরের মাথাটা একদিকে কাত হয়ে গেল। আদিত্য নূরের দুই কাঁধ ধরে ঝাকিয়ে রাগী কন্ঠে চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
…..কোথায় গিয়েছিলে তুমি? বলো কোথায় গিয়েছিলে? জানো আমার কি অবস্থা হয়েছিল? কি চাও কি তুমি বলো? আমাকে কি তোমার মানুষ বলে মনে হয়না? আমিও তো একটা রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। আমারো কষ্ট হয়।আর কতো কষ্ট দিতে চাও আমাকে তুমি? আর কতবার মারতে চাও আমাকে? এভাবে বারবার মৃত্যু যন্ত্রণা দেওয়ার চেয়ে একবারেই মেরে ফেল আমাকে। তাহলে তুমিও শান্তি পাবে আর আমিও। বারবার মরার চেয়ে একবারেই মরে যাওয়া ভালো।

আদিত্য এবার নূরকে ছেড়ে দিয়ে টেবিলের ওপর থেকে ফুলদানিটা হাতে নিয়ে ফ্লোরে ঠাসস করে আছাড় মেরে চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
….তোমাকে আমি বাইরে থাকতে বলেছিলাম না, তাহলে কেন তুমি একা একা চলে গেলে? ওয়াই ড্যাম ইট ওয়াই? আজ যদি তোমার কিছু হয়ে যেত, তাহলে কি করতাম আমি? বলো কি করতাম? আমাকে কষ্ট দিয়ে তোমার অনেক ভালো লাগে তাইনা? ঠিক আছে তাহলে তুমি ভালোই থাকো।
কথাটা বলে আদিত্য টি টেবিলে একটা লাথি মেরে হনহন করে বেড়িয়ে গেল।

আদিত্যের এতো রাগ দেখে নূরের অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। নূর এক কোনায় জড়োসড়ো হয়ে বসে কাঁপতে লাগলো আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলো।

আদিত্য নিচে এসে সোজা বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল। সবাই পেছন থেকে অনেক ডাকাডাকি করলো।কিন্তু কারোর কথা শুনলো না ও। তানি আর সানা তাড়াতাড়ি নূরের কাছে গেল। নূরের কাছে যেয়ে ওকে সামলাতে লাগলো।

আদিত্য রাগে ফুল স্পিডে গাড়ী চালাচ্ছে। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে আজ ও। প্রায় বিশ মিনিট গাড়ী চালানোর পর হঠাৎ ওর হুঁশ এলো, ও কি করে এসেছে নূরের সাথে। আদিত্য সাথে সাথে গাড়ির ব্রেক কষলো। আদিত্য নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো।
…..নো নো নো, নো আদি। হাউ কুড ইউ ডু দিস? আমি কি করলাম এটা? আমি আমার প্রাণপাখীর গায়ে হাত তুললাম? আমি কি করে করতে পারলাম এটা? কি করে? নূর এখন অসুস্থ জানা সত্বেও আমি কি করে এমন ব্যবহার করতে পারলাম? এই তোর ভালোবাসা? এই তোর কেয়ার? এতটুকুই সহ্য করতে পারলাম না আমি? শেইম অন ইউ আদি, শেইম অন ইউ।

আদিত্য ওর হাতের দিকে তাকিয়ে বললো।
….এই হাত দিয়ে আমি আমার প্রাণপাখীকে আঘাত করেছি। এই হাত রাখার কোনো অধিকার নেই আমার।
কথাটা বলে আদিত্য ওর হাত দিয়ে জানালার কাচে একটা ঘুষি মারলো। সাথে সাথে জানালার কাচ ভেঙে গেল। আদিত্য সেই ভাঙা কাচের ওপর নিজের হাত চেপে ধরলো। হাত কেটে হাত দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো। তাতে আদিত্যের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। ওর এখন নিজেকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে। ও কিভাবে ওর প্রাণপাখীর গায়ে আঘাত করতে পারলো?

হঠাৎ আদিত্যর মনে পড়লো ও তখন রুমে কাচের ফুলদানি ভেঙে এসেছে। আদিত্যের ভয় হতে লাগলো। যদি ভাঙা কাচ নূরের হাত পায়ে লেগে যায় তখন? কথাটা ভেবে আদিত্য সাথে সাথে গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল। আজ ওর জন্য নূরের কিছু হয়ে গেলে ও নিজেকে কখনো মাফ করতে পারবে না। কখনো না।

চলবে…..
(কাল বাইরে গিয়েছিলাম তাই গল্প দিতে পারিনি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here