#ভালোবাসার_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্ব-৭৮
★ দেখতে দেখতে চার মাস কেটে গেছে। সবকিছু আবার আগের মতো হয়ে গেছে। নূর আর আদিত্য তাদের সুখের সংসারে অনেক খুশী আছে। নূর এক বছর গ্যাপ দিয়ে আবার পড়াশোনা শুরু করেছে। তানির এখন নয় মাস চলছে। ভরা পেট নিয়ে তানির চলাফেরা অনেক মুশকিল হয়ে যায়। তাই আদিত্য আপাতত আবিরকে অফিসে যেতে মানা করেছো। বাসায় তানির কাছে থাকতে বলেছপ।তানির দেখাশোনার জন্য নূরও এখন সাভারের বাড়িতেই থাকে। আর নূর যেখানে আদিত্যও সেখানেই থাকবে।
বিকাল ৪টা
আদিত্য ওদের একটি পুরাণ পরিত্যক্ত গোডাউনের সামনে এসে দাঁড়াল। ওর লোকদের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই তারা গোডাউনের শাটার খুলে দিল। শাটার খুললে আদিত্য ভেতরে গেল। ভেতরে ঢুকতেই এক বিচ্ছিরি দুর্গন্ধ এসে নাকে লাগল। আদিত্য সাথে সাথে নাকের ওপর রুমাল চেপে ধরলো। আদিত্য আবারও ওর লোকদের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই এক লোক যেয়ে গোডাউনের লাইট জ্বালিয়ে দিল। লাইট জ্বালাতেই আদিত্য দেখতে পেল, ফ্লোরে অজ্ঞানের মতো পড়ে আছে রিপা। গায়ের জামাকাপড় পঁচে গলে গেছে। গায়ের ওপর দিয়ে মাছি ভিনভিন করছে। তেলাপোকা, ইদুর, মাকড়সারা হেঁটে বেড়াচ্ছে ওর গায়ের ওপর দিয়ে।
হ্যাঁ এই চার মাস হলো আদিত্য রিপাকে এখানেই আটকে রেখেছে। এই অন্ধকার গোডাউনে। যেখানে চব্বিশ ঘন্টায় কখনো আলোর দেখা পায়না রিপা। এখানেই দিনরাত থাকতে হয় ওকে। সঙ্গি হিসেবে ওরা সাথে থাকে এইসব পোকামাকড়। প্রথম প্রথম এইসব দেখে ভয়ে অনেক চিল্লাপাল্লা করলেও, এখন আর সেই এনার্জিও নেই ওর মাঝে। তাই ওমনিই পড়ে থাকে। যে জামাটায় ওকে এখানে নিয়ে আসা হয়েছিল এখনো সেই জামাটাতেই আছে। খাবার জন্য প্রতিবেলায় একটা পোড়া রুটি আর নুন দেওয়া হয়। প্রথম প্রথম না খেলেও পড়ে ক্ষুদার চোটে ওগুলই খায়। বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লে আদিত্য ডাক্তার এনে ওকে ঠিক করে। তবুও ছেড়ে দেয়না।
আদিত্য ওর লোকের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই লোকটা এক বালতি গরম পানি নিয়ে এলো। আদিত্য মগে করে গরম পানি নিয়ে রিপার মুখে ছিটে মারলো। সাথে সাথে রিপা চিৎকার করে আর্তনাদ করে উঠে বসলো। সামনে তাকিয়ে আদিত্যকে দেখে ভয়ে ওর কলিজা ধড়ফড়িয়ে উঠলো। আদিত্য বাঁকা হেসে বললো।
….কেমন আছেন মিস রিপা? আমার লোকজন আপনার ঠিকমতো খেয়াল রাখছে তো? যতই হোক শালিকা বলে কথা। আপনার খেদমতে কোনো কমতো চাইনা আমি।
রিপা এবার কেদে উঠে হাত জোড় করে বললো।
…প্লিজ এবার ছেড়ে দিন আমাকে? আর কতো শাস্তি দিবেন আমাকে? প্লিজ দয়া করুন আমার ওপর।
আদিত্য চোয়াল শক্ত করে বললো।
….দয়া করবো তোর ওপর? তুই কি দয়া করেছিলি আমার প্রাণপাখীর ওপর? যখন ও তোর কাছে নিজের জীবন ভিক্ষা চাইছিল, তখন তুই দয়া করেছিলি ওর ওপর? তাহলে আমি কিভাবে তোর ওপর দয়া করবো? তখন তোর মনে ভয় ছিলনা যে তুই কার কলিজায় হাত দিচ্ছিস? এর পরিনাম কতকাল ভয়াবহ হতে পারে? তুই যদি আমাকে কিছু করতি , তাহলে হয়তো তোকে শুধু পুলিশে দিয়ে ছেড়ে দিতাম। কিন্তু তুই আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস।আমার প্রাণপাখীকে মারার চেষ্টা করেছিস।তোর জন্য এতটা দিন নূর আমার কাছ থেকে ওকে দূরে থেকেছে। যাকে এক মিনিট না দেখলে আমি পাগল হয়ে যাই,তাকে এতটা দিন না দেখে আমার মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। তাহলে তুই ভাবলি কি করে এতকিছুর পর তোকে আমি ছেড়ে দেব?
….তা তাহলে আমাকে মেরে ফেলুন। এই নরকের চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। আপনি আমাকে মেরে ফেলুন।
…এতো সহজে না। মৃত্যু তোর জন্য অনেক ছোট শাস্তি। তোকে এভাবে তিলে তিলেই ভুগতে হবে। তুই না বাঁচতে পারবি,না মরতে পারবি। তুই আমাদের পাঁচ পাঁচটা মাস ধরে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করিয়েছিস। সেখানে তোর তো মাত্র চারমাস হয়েছে। আগে পাচ মাস পুরা হোক, তারপর ভেবে দেখবো তোর সাথে কি করবো। তোকে মেরে ফেলবো, নাকি তোকে পুলিশের হাতে দিয়ে দেব। ততদিনের জন্য বাই বাই মিস রিপা। এনজয় ইউর লাইফ।
কথাটা বলে আদিত্য চলে যেতে নিয়ে আবার রিপার সামনে ফিরে এসে বললো।
….একটা কথা সবসময় মনে রাখবি, যারা যারাই আমার প্রাণপাখীকে কষ্ট দিবে আমি তাদের কাওকে ছাড়বো না। কাওকে না।
কথাটা বলে আদিত্য চোখে সানগ্লাস পরে চলে গেল।
_________
সন্ধ্যা ৭টা।
আদিত্য একটু আগেই অফিস থেকে এসেছে।বেডে বসে শার্ট খুলছে। নূর রুমের মিনি ফ্রিজ থেকে ওর জন্য ঠান্ডা পানি আর আইস বেড় করে আদিত্যের পাশে এসে বসলো। হঠাৎ আদিত্যর ফোনটা বেজে উঠল। আদিত্য ফোন বের করে দেখলো তাসির ফোন করেছে। আদিত্য ফোন রিসিভ করে কথা বলতে লাগলো।
এটা দেখে নূরের মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি এলো। নূর একটা আইস কিউব নিয়ে আদিত্যের শার্টের ভেতর দিয়ে দিল। আচমকা এমন হওয়ায় আদিত্য লাফিয়ে উঠে মুখ দিয়ে শব্দ করতে লাগলো।
…..উহু হু হু হু,,
আদিত্যের এমন আওয়াজ শুনে তাসির দুষ্টু হেসে বলে উঠলো।
….ছি ছি আদি এসব কি আওয়াজ বের করছিস? আর এমন সময় কেউ ফোন ধরে?
আদিত্য বলে উঠলো।
….শাট আপ ইডিয়ট। এমন কিছুই না। তুই কবে থেকে আবিরের মতো ফালতু জোক মারা শুরু করলি?
তাসির হেসে উঠে বললো।
…আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। বায়, আমি রাখছি এখন।
আদিত্য ফোন রেখে নূরের দিকে তাকালো। নূর বুঝতে পারছে এখন ওর খবর আছে। তাই ও সুর সুর করে উঠে দৌড় দিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হলোনা, আদিত্যও পেছন থেকে দৌড়ে যেয়ে নূরকে ধরে ফেললো। নুরকে কোলে নিয়ে এসে বেডের ওপর ফেলে দিয়ে নূরকে বেডের সাথে সাথে চেপে ধরে বললো।
….কোথায় পালাচ্ছ হুম? তুমি না আজকাল অনেক দুষ্টু হয়ে গেছ। জানো তাসির কিসব উল্টো পাল্টা ভাবছিল?
নূর বাচ্চাদের মতো মুখটা কিউট করে বললো।
…. সরিইই আর হবে না।
…উহু, সরি বললেতো হবে না। তুমি তখন আমার গায়ে বরফ দিয়েছ। এবার আমার পালা।
কথাটা বলে আদিত্য ট্রে থেকে এক টুকরো আইস কিউব নিয়ে, প্রথমে নূরের কপালে লাগালো। সাথে সাথে নূর ঠান্ডায় কেঁপে উঠল। আদিত্য আইস কিউব টা নূরের কপাল থেকে স্লাইড করে নাকের ওপর দিয়ে ঠোঁটের ওপর আনল। তারপর ধীরে ধীরে গলা বেয়ে নিচের দিকে নামতে লাগলো। আদিত্য নূরের ওপর থেকে শাড়ির আঁচল সরিয়ে ফেলে, পেট আর নাভির ওপর দিয়েও আইস কিউব ঘুরাতে লাগলো। নূর আরও কেঁপে উঠল। আদিত্য মুখ নামিয়ে চুমু খেতে যাবে তখনই হঠাৎ বাইরে থেকে হইচই এর শব্দ এলো।
ওরা দুজনই চমকে উঠে বসলো। আদিত্য কি হয়েছে দেখার জন্য উঠে দরজা খুলতে গেল। নূরও তাড়াতাড়ি নিজের শাড়ি ঠিক করে, আদিত্যর পিছু পিছু গেল।
বাইরে এসে দেখলো সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে। সানাকে দেখে আদিত্য ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
…হয়েছেটা কি? সবাই এভাবে দৌড়াদৌড়ি করছে কেন?
সানা বলে উঠলো।
…..আরে ভাইয়া তানি ভাবির লেবার পেইন শুরু হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি উনাকে হসপিটালে নিতে হবে।
আদিত্য বলে উঠলো।
…ওকে ওকে, তুই আবিরকে বল জলদি তানিকে নিয়ে নিচে আসতে। আমি এখুনি বের করছি।
সানা মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে ভাইয়া।
একটু পরে আবির তানিকে নিয়ে এসে গাড়ির পেছনের সিটে বসলো। তানিকে শুইয়ে দিয়ে মাথাটা নিজের কোলে রাখল আবির। তানি ব্যাথায় চিৎকার করছে, আর আবির তানির মাথায় হাত বুলিয়ে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। আদিত্য গাড়ি চালাচ্ছে, আর নূর ওর পাশের সিটে বসে আছে। তানির জন্য অনেক টেনশন হচ্ছে ওর। পরিবারের বাকি সদস্যরাও পেছনে অন্য গাড়িতে আসছে।
আবির তানির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
….এইতো আরেকটু সময় লাগবে। ততক্ষণ একটু ধৈর্য ধরো তুমি। সব ঠিক হয়ে যাবে।
তানির এইসময় আবিরের শান্তনা বানিও অসহ্য লাগছে। তানি ব্যাথায় আর্তনাদ করতে করতে রাগী কন্ঠে বললো।
….আহহ, ধৈর্য ধরবো? ধৈর্য ধরবো আমি? ব্যাথা আমার হচ্ছে না তোমার হচ্ছে? নিজে একবার এই ব্যাথা সহ্য করে দেখ কেমন লাগে? আইছে লেকচার দিতে। আহহ এই এইসব তোমার জন্য হয়েছে। তুমি করেছ আমার এই অবস্থা। এখন আরামে বসে আমাকে লেকচার দিচ্ছ?
….দিস ইস নট ফেয়ার তানি। তুমিই বাচ্চার জন্য আমার মাথা খাচ্ছিলে। তাড়াতাড়ি করে বিয়ে করালে এই বাচ্চার জন্য। যাতে ভাবির আগেই তুমি বাচ্চা নিতে পারো। আর এখন সব দোষ আমার হয়ে গেল।
….চুপপ চুপ একদম কথা বলবে না। তোমার দোষ মানে দোষ। আর কোনো কথা বলবে না তুমি। আহহ,,
আদিত্য আবিরকে ধমক দিয়ে বললো।
….শাট আপ আবির তুই কি পাগল হয়ে গেলি নাকি? এমন সময় ওর সাথে তর্ক করছিস? আরে তানির এখন হুঁশ নেই ও কি বলছে। তাই ওর কথা গায়ে নিস না। ও এখন ব্যাথার যন্ত্রণায় এসব আবোল তাবোল বলছে।
আবির মাথা ঝাকিয়ে সায় দিল। বিশ মিনিট পর ওরা হাসপাতালে এসে পৌঁছাল। তানিকে স্ট্রেচারে করে ভেতরে নিয়ে গেল। ডক্টরকে আগেই ফোন করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তাই সবকিছু রেডিই আছে। তানি আবিরের হাত ধরে বললো।
….দেখ তুমি কিন্তু আমার সাথেই থাকবে। একদম আমাকে একা ছাড়বে না।
আবির বলে উঠলো।
…কিন্তু আমাকেতো ভেতরে আসতে দিবে না।
আদিত্য বলে উঠলো।
…সমস্যা নেই এই হসপিটালের মালিক আমার পরিচিত। আমি কথা বলে নিব। তুই তানির সাথেই যা।
আবির মাথা ঝাকিয়ে, একটু পরে তানিকে নিয়ে ওটিতে ঢুকলো। বাকি সবাই বাইরে অপেক্ষা করছে।
একটু পরে ডক্টর আসলো। ডক্টর দরজা খুলতেই পায়ের নিচে থাকা তারের সাথে বেজে ঠাসস করে ফ্লোরে উবুত হয়ে পড়ে গেল। আবির দৌড়ে এসে ডক্টরকে টেনে তুলে বললো।
….আপনি ঠিক আছেন ডক্টর?
ডক্টর আবিরকে বললো।
…..আরে আপনি এখানে কি করছেন? আপনার তো ডেলিভারি হবে। আপনি শুয়ে পড়ুন বেডে।
ডক্টরের কথায় আবির ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। কি বলে এই লোক? আমার ডেলিভারি?
তখনই একজন নার্স দ্রুত এসে নিচে পরে থাকা চশমাটা উঠিয়ে ডক্টরের চোখে দিয়ে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করে বললো।
….ডক্টর আপনিও না চশমা ছাড়া কিছু চোখেই দেখেন না। পেশেন্ট উনি না, উনার ওয়াইফ মিসেস তানি।
ডক্টর বলে উঠলো।
….পানি? এই সময় তোমার এখন পানি খেতে ইচ্ছে করছে?
নার্স বিরক্তির সুরে বললো।
….পানি না তানি তানি। ওফ্ফ আপনার বোধহয় কানের মেশিনটাও পড়ে গেছে।
কথাটা বলে নার্সটা নিচে এদিক ওদিক তাকিয়ে কানের মেশিন খুঁজে এনে ডক্টরের কানে লাগিয়ে দিল।
এসব দেখে আবির বেচারার অজ্ঞান হওয়ার উপক্রম। এ কেমন ডক্টর?
ওদিকে তানি ব্যাথায় চিল্লিয়েই যাচ্ছে। আবির তাড়াতাড়ি তানির কাছে এগিয়ে গেল।
ডক্টর তানির কাছে এসে, তানিকে চিল্লাতে দেখে,একদম শান্ত সুরে যোগ গুরুদের মতো করে বললো।
….নো মাই চাইল্ড, নো ভায়োলেন্স। চিল্লা চিল্লিতে কোনো কাজের সমাধান হয়না।জীবনে সবসময় আমাদের মনকে শান্ত রাখতে হবে। যাই হয়ে যাকনা কেন আমাদের কখনো উত্তেজিত হওয়া যাবে না। ধৈর্যের সাথে কাজ করতে হবে।
ডক্টরের কথাবার্তা শুনে তানিতো রাগে কটমট করছে। ইচ্ছে করছে এইডারে এখুনি লাথি মেরে উগাণ্ডায় পাঠিয়ে দিতে। তানি দাত কিড়মিড় করে আবিরের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে বললো।
….এই কার্টুন পিচ কোথাথেকে ধরে নিয়ে এসেছ? কি বলছে ছাগলের মতো? তাড়াতাড়ি কিছু করো, নাহলে আমি কিন্তু এই ডক্টরের বাচ্চাকে খুন করে ফেলবো?
আবির মাথা ঝাকিয়ে বললো।
….তুমি টেনশন নিও না আমি দেখছি।
আবির ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বললো।
…..ডক্টর এসব ছাড়ুন না। আপনি প্লিজ কাজ শুরু করুন না জলদি?
ডক্টর বললো।
….,এটাও আমার কাজেরই একটা অংশ। রোগীকে শান্ত না করে কাজ কিভাবে করবো? তাই আমাকে আমার কাজ করতে দিন।
ডক্টর আবার তানির দিকে তাকিয়ে বললো।
….দেখুন আপনি শান্ত হন। আমকে দেখুন, আমি যেভাবে করছি সেভাবে করুন। জোরে একটা নিঃশ্বাস টেনে নিন, আবার ধীরে ধীরে ছাড়ুন। ব্রিথ ইন,ব্রিথ আউট। ব্রিথ ইন,ব্রিথ আউট।
তানি আর সহ্য করতে পারলোনা। একেতো ব্যাথার যন্ত্রণায় ছটফট করছে। তারওপর এই ডক্টরের ফালতু প্রবচন শুনে রাগে তানির মাথার রগ ফেটে যাচ্ছে। তানি দুই হাতে ডক্টরের কলার টেনে ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে রাগী কন্ঠে বললো।
….এই ডক্টরের বাচ্চা কি বলছিস এসব হ্যাঁ?ক্ষ্যাতা পুরি তোর শান্ত হওয়ার। শান্ত হবো? মজা চলছে এখানে? আমি এখানে যন্ত্রণায় মরছি আর তুই যোগগিরি শুরু করে দিয়েছিস? তাড়াতাড়ি আমার বাচ্চা বের কর, নাহলে এখুনি তোকে জীবনের মনে শান্ত করে দেব।
অবস্থা বেগতিক দেখে আবির আর নার্সরা মিলে ডক্টরকে তানির কাছ থেকে টেনে ছারাল। ডক্টর ছাড়া পেয়ে হাঁপাতে লাগলো। তাড়াতাড়ি পকেট থেকে ইনহেলার বের করে মুখে লাগিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো। তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠলো।
…..এ এমন কেউ করে? জানেন আমি হার্টের পেশেন্ট? তিনবার করে সার্জারী করেছি। এখন যদি আমার কিছু হয়ে যেত তখন?
আবির বলে উঠলো।
….সরি সরি ডক্টর। প্লিজ কিছু মনে করবেন না। আসলে ও ব্যাথায় এমন করছে। প্লিজ আপনি আপনার কাজ শুরু করুন।
ডক্টর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…ঠিক আছে ঠিক আছে, আমি দেখছি।
কথাটা বলে ডক্টর তানিকে চেক-আপ করতে নিলেই, হঠাৎ ডক্টরের ফোন বেজে উঠল। ফোন দেখেই ডক্টর ভয়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। কাঁপতে কাঁপতে তড়িঘড়ি করে ফোন ধরে বললো।
….হ্যাঁ হ্যাঁ বলোনা বেবি কি হয়েছে? আমি বাসার সব কাজ করে দিয়ে এসেছি। ঘর মুছেছি,থালাবাসন ধুয়েছি, কাপড় কেচেছি, তারপর তোমার জন্য নাস্তা বানিয়ে টেবিলে রেখে এসেছি। তুমি খেয়ে নিও কেমন? তুমি চিন্তা করোনা আমি এসে তোমার পা টিপে দেব কেমন? আমি এখন রাখি? আসলে আমি এখন ওটিতে আছিতো। ওকে বাই বাই বেবি।
ফোনটা কেটে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
এসব দেখে তানি আর আবির দুজনেই বিরক্তির চরম পর্যায়ে। আবির বলে উঠলো।
….এসব কি ডক্টর? ওটিতে কেউ ফোন ইউস করে? আপনি ফোন বাইরে রেখে আসেননি কেন?
ডক্টর করুন সুরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললো।
….কি করবো ভাই? আমি যদি ফোন রিসিভ না করি,তাহলে আমার যে দজ্জাল বউ।সোজা এই ওটিতেই চলে এসে আমারই অপারেশন করে ফেলবে। কি বলবো দুঃখে কথা, আমার বউ কোনো বউ না। সে একটা লেডি ভ্যাম্পায়ার। সবসময় তার ধারাল দাঁত বের করেই থাকে, আমার রক্ত চুষে খাওয়ার জন্য।
কথাগুলো বলে ডক্টর বাচ্চাদের মতো কান্না শুরু করে দিল।😭
এদিকে আবির বিরক্তির চরম পর্যায়ে। তানিতো পারছেনা ডক্টরের মাথা ফাটাতে। কোন পাগলের পাল্লায় পড়লো ও। এখন ওর আর ওর বাচ্চার কি হবে?
আবির বলে উঠলো।
….ডক্টর আপনার দুঃখের কাহিনি পড়ে শুনবো। আপনি প্লিজ আমার স্ত্রীকে দেখুন না?
ডক্টর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো।
…হুম দেখছি আমি।
কথাটা বলে ডক্টর তানিকে চেক করতে লাগলো। হঠাৎ ডক্টর ফ্লোরে পড়ে থরথর করে কাঁপতে লাগলো। এটা দেখে আবির ঘাবড়ে গেল। এর আবার কি হলো?
একটা নার্স এসে তাড়াতাড়ি ডক্টর কে একটা বড়ি খাইয়ে দিল। একটু পরে ধীরে ধীরে ডক্টর ঠিক হয়ে গেল। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বললো।
….সরি ফর ডিস্টাবেন্স। আসলে আমার ম্রিগি রোগ আছে তো।তাই মাঝে মধ্যে জেগে যায়। ইটস ওঁকে। এখন আমি ঠিক আছি। লেটস কন্টিনিউ।
আবির বলে উঠলো।
….ডক্টর এমন কোনো রোগ কি আছে। যা আপনার নেই। আমারতো মনে হয় পুরো দেশেও এতো রোগ নেই। যত রোগ আপনার মাঝে আছে।
ডক্টর মুচকি হেসে বলে উঠলো।
….হ্যাঁ আপনি ঠিকই বলেছেন। আসলে ছোটবেলা থেকেই আমার অনেক রোগ। তাইতো আমার মা বাবা আমাকে ডক্টর বানিয়েছেন। যাতে আমার এতো রোগের জন্য অন্য ডাক্তার কে টাকা দিতে না হয়।
তানি এবার চিল্লিয়ে বলে উঠলো।
….তোমরা এসবই করবে, নাকি আমাকেও দেখবে?
ডক্টর মাথা ঝাকিয়ে বললো।
…জ্বি জ্বি অবশ্যই, এখুনি দেখছি। ডক্টর তানিকে দেখে বলে উঠলো।
…হ্যাঁ হ্যাঁ বাচ্চা পজিশন মতো চলে এসেছে। আপনি একটু জোরে জোরে পুশ করুন।
আবির তানির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
…পুশ করো তানি, পুশ করো।
তানি জোরে জোরে পুশ করতে লাগলো। ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা তানির। এদিকে আবির শুধু বারবার বলেই যাচ্ছে।
…পুশ করো তানি, পুশ করো।
তানি অসহ্য হয়ে রাগে আবিরের গালে একটা চড় মেরে দিয়ে বললো।
…কি বারবার একই কথা বলছ? করছিতো? এখন কি হাতুড়ি দিয়ে ঠেলা দিব নাকি?
আবির বেচারা গালে হাত দিয়ে চুপ করে উঠলো। তানি এবার জোরে পুশ করলো। একটু পরেই বাচ্চার কান্নার শব্দ এলো। ডক্টর বাচ্চা কোলে নিয়ে বললো।
….কংগ্রাচুলেশন আপনাদের ছেলে হয়েছে।
আবির আর তানি খুশিতে কেঁদে ফেলে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরলো। একটু পরে বাচ্চাকে পরিস্কার করে এনে আবির আর তানির কোলে এনে দিল। আবির বাচ্চার কপালে চুমু খেয়ে, তারপর তানির কপালে চুমু খেয়ে বললো।
…ধন্যবাদ তানি আমাকে জীবনের সবচেয়ে বড়ো খুশি দেওয়ার জন্য।
ডক্টর বাইরে এসে সবাইকে খুশির সংবাদ দিয়ে দিল। সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলো। নূর খুশিতে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আবিরের বাবা পুরো হসপিটালে মিষ্টি বিতরণ করলো।
একটু পরে তানিকে কেবিনে শিফট করা হলো। সবাই কেবিনে এলো বাবু দেখার জন্য। সবাই এক এক করে বাবুকে কোলে নিয়ে আদর করলো। নূরও এসে বাবুকে কোলে নিল। তানি মুচকি হেসে বললো।
…দেখ নূর তোর জামাই কিন্তু চলে এসেছে। এখন আমার বউমাকে তাড়াতাড়ি নিয়ে আয়।
তানির কথায় নূর লাজুক হেসে আদিত্যের দিকে তাকালো। কিন্তু আদিত্য কোনো রিয়্যাকশন দিলনা।
দুই দিন পড় তানি আর বাচ্চাকে বাসায় নিয়ে আসা হলো।
চলবে……