ভালোবাসা_চেয়েও_বেশি 💞💞 #লেখিকা-Mehruma Nurr #পর্র-৬২

0
853

#ভালোবাসা_চেয়েও_বেশি 💞💞
#লেখিকা-Mehruma Nurr
#পর্র-৬২

★ স্টেজের উপরে তাসির, সানা,আবির আর তানি আরো অনেকে বসে গল্প করছে। তখনই ওখানে এন্ট্রি নিল। গ্রেট রবি দা বাবাজী। রবি এসে ভাব নিয়ে বললো।
…. বৎস গন তেরা ধ্যান কিধার হে, রবি বাবাজী ইধার হে। সোয়াগাত নেহি কারোগে হামারা?

তাসির বলে উঠলো।
…আরে বাবাজী, আসুন আসুন। বাবাজী সবই আপনার কৃপা। আপনার দোয়ায় আজ এইসব হচ্ছে। আপনি ধন্য বাবা ।

…..আমি ধন্য না আমি রবি। যাইহোক আমি তোমাদের আগেই বলেছিলাম। আমার নজর তোমাদের ওপর পরেছে,তোমাদের এখন শুধু মঙ্গল না বুধ, বৃহস্পতি,শুক্রও হবে।

আবির বলে উঠলো।
….বাবাজী এবার আমার ওপরও একটু কৃপাদৃষ্টি করুন। আমারতো কিছু হচ্ছে না।

রবি বললো।
…বালক, কিছু হওয়ার জন্য তোমাকে আগে বিয়ে করতে হবে। তারপরে না কিছু হবে। বিয়ে করো তারপরে শুধু কিছু কেন মিছু, টিছু আরো যতগুলো চাও ততগুলাই হবে। যাইহোক আমি এখন যাই। আমার আরো ভক্তরা ওয়েট করছে তাদেরও দর্শন দিতে হবে।

কথাগুলো বলে রবি যেমন এসেছিল তেমনই আবার চলে গেল।

আর বাকিরা সবাই হাসতে লাগলো।
——-

নূর অনেকক্ষণ হলো আদিত্যকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না। নূর ভাবলো, তখন ওভাবে ধাক্কা দিয়ে চলে আসায় আদিত্য আবার রাগ করে নিত?
কথাটা ভেবে নূর এদিক ওদিক তাকিয়ে আদিত্যকে খুঁজতে লাগলো। একটু পরে নূর দেখলো আদিত্য এককোনায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে। নূর মুচকি হেসে আদিত্যর দিকে এগিয়ে গেল। আদিত্যের কাছে এসে যেই কিছু বলতে যাবে, তখনই আদিত্য অন্যদিকে তাকিয়ে হাত নাড়িয়ে সেদিকে চলে গেল।

নূরের এবার সত্যিই চিন্তা হচ্ছে। আদিত্য কি সত্যি সত্যিই ওর ওপর রেগে আছে? কথাটা ভেবে নূরের খুব মন খারাপ হয়ে গেল। মুখটা মলিন হয়ে গেল। তখনই নিশি এসে নূরকে টেনে নিয়ে গেল ছবি তোলার জন্য। নূর অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিশির সাথে গেল।

স্টেজের ওপর পরিবারের সবাই তাসির আর সানার চারিদিকে দাঁড়িয়ে আছে ফ্যামিলি ফটো তোলার জন্য। তবে আদিত্য এখনো আসেনি। তাই সবাই আদিত্যের জন্য ওয়েট করছে। আদিত্য না আসায় নূর মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরে আদিত্য ওখানে এলো। নূর আদিত্যকে দেখে একটু খুশী হলো। আবির বলে উঠলো।
….ভাই কোথায় ছিলি তুই? তাড়াতাড়ি আয় আমরা সবাই মিলে ফ্যামিলি পিক তুলবো।

আদিত্য মাথা ঝাকিয়ে সবার কাছে এসে নূরের পাশে দাঁড়াল। আদিত্য শুধু সামনে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে নূরের দিকে একবারও তাকাচ্ছে না। সেটা দেখে নূরের আরো খারাপ লাগছে। তবুও কিছু না বলে জোরপূর্বক একটা হাসি দিয়ে ছবি উঠলো। ছবি উঠা শেষে নূর আদিত্যকে কিছু বলতে যাবে, তখনই আদিত্যর ফোন বেজে উঠল। আদিত্য ফোনটা কানে নিয়ে কথা বলতে বলতে ওখান থেকে চলে গেল। নূর এবার শিওর হয়ে গেছে যে,আদিত্য ওর ওপর রেগে আছে। নূর কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। কিছুই ভালো লাগছে না ওর।

নূর নিচে নেমে এসে আদিত্যকে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও দেখতে পেল না। নূরের এবার প্রচুর কান্না পাচ্ছে।

একটু পরে অনুষ্ঠান শেষ হয়ে এল। সবাই বাসায় যাওয়ার জন্য বাইরে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়াল। আদিত্য এখনো আসেনি। নূর শুধু অস্থির হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে আদিত্যকেই খুঁজছে। আবির তখন নূরের কাছে এসে বললো।
…..ভাবি তুমি আমাদের গাড়িতে চল। আদি ভাইয়ের একটা কাজ পরে গেছে। তাই ও আসতে পারবে না। আমাকে ম্যাসেজ করে বলে দিয়েছে। ওর কাজ শেষ হলে ও সরাসরি বাসায় চলে যাবে।

নূর বুঝতে পারছে যে , কাজ টাজ কিছুই না। আদিত্য ওর ওপর রেগে আছে তাই চলে গেছে এখান থেকে। তাইতো আমাকে কিছু না বলে আবিরকে ম্যাসেজ করে দিয়েছে। নূরের ভাবনার মাঝে আবির বলে উঠলো।
….কি হলো এস গাড়িতে বস।

নূরের ভেতরে কান্না জড়িয়ে আসছে। নূর ঢোক গিলে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। নূর জানালার দিকে তাকিয়ে সবার আড়ালে চোখের পানি ফেলতে লাগলো। নিজের ওপর চরম রাগ লাগছে ওর। কি হতো তখন আদিত্যর কথাটা মেনে নিলে? তাহলে এখন আর রাগ করে থাকতো না। ওতো নিজের বউকে কাছে চেয়েছে অন্য কাউকে তো আর চাইনি? তাহলে কেন মানা করলাম আমি? আদিত্য আমার জন্য কতকিছু করে। আমার একটু খুশির জন্য পুরো দুনিয়া উলট পালট করে ফেলে। আর আমি কিনা ওর এইটুকু আবদারই রাখতে পারলাম না? কেমন বউ আমি নিজের স্বামীকেই নারাজ করে ফেললাম? এসব ভেবে ভেবে নূর নীরবে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।
———

রাত ১২-৩০
নূর বেডের ওপর হাঁটু ভাজ করে দুই হাতে হাঁটু জড়িয়ে ধরে, হাটুর ভেতর মুখ দিয়ে বসে আছে। আর চোখের পানি ফেলছে।চেঞ্জ না করে এখনো পার্টির শাড়ীই পরে আছে। আদিত্য এখনো আসেনি। নূর ফোন করেছিল ফোনও বন্ধ পেয়েছে। তাই ওর আরও খারাপ লাগছে। নিজেকেই নিজের মারতে ইচ্ছে করছে ওর। এখন কি করবো আমি? আদিত্য কোথায় তুমি? প্লিজ চলে এসো। আমি প্রমিজ করছি আর কখনো এমন করবোনা। কক্ষনো না। একবার চলে এস,আমি তোমার সব রাগ ভাঙ্গিয়ে দেব। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ। কাঁদতে কাঁদতে বিড়বিড় করে এসব বলতে লাগলো নূর।

হঠাৎ গাড়ির হর্ণের আওয়াজ শুনতে পেল নূর। নূরের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। তারমানে আদিত্য চলে এসেছে। নূর চোখের পানি মুছে বেলকনিতে যেয়ে নিচে তাকিয়ে দেখলো, এটা আদিত্যরই গাড়ি। নূর ছলছল চোখে ঠোঁট কামড়ে হেসে দিল। নূর দৌড়ে আদিত্যর কাছে যেতে নিয়ে আবার থেমে গেল। আয়নার সামনে যেয়ে নিজেকে একবার দেখে নিল।তারপর নিজেই নিজেকে বলতে লাগলো।
…..কি করছিস তুই নূর?এইভাবে পাগল বেসে তুই আদিত্যর সামনে যাবি? এমনিতেই আদিত্য তোর উপর রেগে আছে। তারওপর তোর এমন চোখ মুখ ফোলা,এলোমেলো চুলে দেখলে আদিত্য আরও রেগে যাবে। নানা আমাকে আদিত্যর রাগ ভাঙাতেই হবে।
কথাগুলো বলে নূর ওয়াশরুমে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

একটু পরেই আদিত্য রুমে এলো। রুমে এসে দেখলো নূর রুমে নেই। ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ দেখে বুঝলো নূর ওয়াশরুমে আছে। আদিত্য ড্রেসিং টেবিলের সামনে যেয়ে হাতের ঘড়ি খুলে নিচে রাখল। গায়ের ব্লেজার খুলে রাখলো। তারপর শার্টের বোতাম খুলতে লাগলো। উপরের দুটো বোতাম খুলতেই, নূর এসে ধীরে ধীরে পেছন থেকে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরলো। আদিত্যর শার্টের কলার নিচের দিকে নামিয়ে, পেছন থেকে আদিত্যের ঘাড়ে, গলায় চুমু খেতে লাগলো।

আদিত্য সুখের আবেশে চোখ বন্ধ করে মুচকি হাসলো। নূর পেছনে থাকায় সেটা দেখতে পেল না। হঠাৎ আদিত্য চোখ খুলে নূরের হাত ছাড়িয়ে বলে উঠলো।
…..নূর আমার ভালো লাগছে না।আমি শাওয়ার নিবো।
কথাটা বলে আদিত্য ওয়াশরুমে চলে গেল।

আদিত্যের এমন বিহেভিয়ার নূর আর সহ্য করতে পারলো না। মুখে হাত চেপে ধরে বাইরে চলে গেল।

বিশ মিনিট পর আদিত্য ওয়াশরুম থেকে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বের হলো। রুমে এসে দেখলো নূর নেই। আদিত্য ভ্রু কুঁচকে ভাবলো, নূর আবার কই গেল? একটু আগেওতো তো এতো রোমান্টিক হচ্ছিল, এখনি আবার গায়েব? এই মেয়েটাকে নিয়ে আর পারিনা।
কথাগুলো ভেবে আদিত্য মুচকি হেসে, কাবার্ড থেকে টিশার্ট আর টাওজার বের করে পড়ে নিল। আয়নার সামনে গিয়ে চুলগুলো আঁচড়ে, একটু পারফিউম লাগিয়ে নিল। এভাবে দশ মিনিট পার হয়ে গেল তবুও নূর রুমে আসছে না। আদিত্য আর না পেরে বাইরে বেরিয়ে দেখতে গেল নূর কোথায় আছে।

আদিত্য নিচে ড্রয়িং রুমে এসে দেখলো সেখানে কেউই নেই। তারপর কিচেনে গিয়ে দেখলো সেখানেও নেই। আদিত্যের এবার চিন্তা হতে লাগলো। এতরাতে নূর কোথায় গেল? আদিত্যের হঠাৎ ছাদের কথা মনে হলো। আদিত্য তাড়াতাড়ি সিড়ি বেয়ে ছাদে উঠে গেল। ছাদে এসে দেখলো নূর ছাদে মেঝেতে হাঁটু ভাজ করে, হাটুর ভেতর মুখ দিয়ে বসে আছে।

আদিত্য নূরের কাছে এসে বুঝতে পারলো নূর কাঁদছে। আদিত্যর বুকের ভেতর ধক করে উঠলো। আদিত্য তড়িৎ গতিতে নূরের সামনে বসে দুই হাতে নূরের মুখটা উপরে তুলে উত্তেজিত হয়ে বললো।
….হেইই প্রাণপাখী, কি হয়েছে তোমার? কাঁদছ কেন? শরীর খারাপ করছে? নাকি কেউ কিছু বলেছে? বলনা সোনা?

নূর এবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠে আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো।
….আই এ্যাম সরি, আই এ্যাম সরি। আর কখনো এমন করবোনা। প্লিজ তুমি রাগ করে থেকনা প্লিজ। তুমি আমাকে যে শাস্তি দিতে চাও দাও, তবুও রাগ করে থেকনা প্লিজ। আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।

আদিত্য নূরকে সামনে এনে দুই হাতে মুখটা আগলে ধরে বললো।
……কি বলছ এসব প্রাণপাখী? কিসের সরি? আমি কখন রাগ করলাম তোমার ওপর? আর কেনই বা রাগ করবো?

….তুমি আমাকে শান্ত করার জন্য মিথ্যে বলছ তাইনা? আমি জানি তখন ওভাবে তোমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে আসার জন্য তুমি আমার উপর রেগে আছ। আমি আসলেই খুব খারাপ বউ।

আদিত্য এবার ধমকের সুরে বললো।
….জাস্ট শাট আপ, কি আবোলতাবোল বলছ এসব? পাগল হয়ে গেছ? আমাকে কি তোমার ওইসব হাসব্যান্ড মনে হয়, যারা শুধু তার বউকে দৈহিক চাহিদার জন্য ভালোবাসে হ্যাহ্?

নূর ফোপাঁতে ফোপাঁতে বললো।
….তা তাহলে তুমি আমাকে ওভাবে ইগনোর করছিলে কেন?

…আমি কখন তোমাকে ইগনোর করলাম?

….তখন পার্টিতে আমি যখন তোমাকে ডাকতে গেলাম, তুমি অন্যদিকে হাত নাড়িয়ে চলে গেলে। আবার ছবি তোলার পরে আমি যখন তোমার সাথে কথা বলতে চাইলাম, তখন তুমি ফোন কানে নিয়ে চলে গেলে। আর এলে না। আমাকে কিছু না বলে আবিরকে ম্যাসেজ করে বলে দিলে। আমি যখন ফোন করলাম তখন তোমার ফোন বন্ধ। আর এখন রুমে আমি যখন তোমাকে আদর করছিলাম, তুমি আমাকে ছাড়িয়ে চলে গেলে। এখনো বলবে যে তুমি আমার ওপর রাগ করোনি?

আদিত্য নূরের বোকামি দেখে একটু মুচকি হেসে বললো।
…..হায়রে পাগলি কি থেকে কি ধরে নিয়ে বসে আছে। আরে পার্টিতে তুমি যখন আমাকে ডাকতে এসেছিলে তখন তো আমি তোমাকে খেয়ালই করিনি। ওইসময় আমার অনেক পুরানো একটা ফ্রেন্ড কে দেখতে পেয়েছিলাম। তাই ওর দিকে হাত নাড়িয়ে দেখা করতে গিয়েছিলাম। আর ছবি তোলার পরে যে ফোনটা এসেছিল সেটাও ওই ফ্রেন্ডরই। ওর গাড়ি নো পার্কিং-এ থাকায় পুলিশ ওর গাড়ি টো করে নিয়ে গিয়েছিল। ও আমার কাছে হেল্প চেয়েছিল। তাইতো ওর সাথে তখন পুলিশ স্টেশনে যেতে হয়েছিল। তোমাকে বললে তুমি টেনশন করবে তাই তোমাকে না বলে আবিরকে ম্যাসেজ করে দিয়েছিলাম। আর পরে ফোনের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এতসময় পুলিশ স্টেশনে থেকে শরীরে ঘাম আর ময়লা লেগে ছিল। তাই তখন তোমাকে ছেড়ে শাওয়ার নিতে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ফ্রেশ হয়ে এসে তোমাকে সব খুলে বলবো। কিন্তু তোমার তো আবার একলাইন বেশি বোঝার অভ্যাস। তাইতো নিজের মতো কাহিনি গড়ে নিয়ে বসে বসে কাদছ।

নূর আবার আদিত্যকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো সুরে বললো।
…তো কি করবো? তুমি জানো না,তোমার একটুখানি অবহেলাও আমি সহ্য করতে পারি না? আমার অনেক কষ্ট হয়। আর কখনো এমন করবে না। যাই হয়ে যাক না কেন,আমাকে সব বলবে। আমার কাছ থেকে কখনো কিছু লুকাবে না।

আদিত্যও নূরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো।
….ইশশ্ আমার প্রাণপাখী টা আমার জন্য কতো কষ্ট পেয়েছে। আই এ্যাম সো সরি প্রাণপাখী। আর কখনো এমন হবে না।আই প্রমিজ।

তারপর আদিত্য নূরকে কোলে তুলে নিয়ে রুমে আসলো।রুমে এসে আদিত্য নূরকে বেডে বসিয়ে দিল। নিজেও নূরের পাশে বসে মুচকি হেসে নূরের হাত দুটো ধরতেই, নূর ব্যাথায় হালকা ককিয়ে উঠলো।
….আহহ্

আদিত্য চমকে উঠে বললো।
….কি হয়েছে প্রাণপাখী?

নূরের মনে পরলো তখন ছাদে নিজের উপর রাগ করে দুই হাতের তালু মেঝের সাথে ঘষে ঘষে লাল করে ফেলেছে। শেষেতো রক্তও বের হয়েছে হাত দিয়ে। এখন আদিত্য দেখলে নিশ্চয় রাগ করবে। তাই নূর হাত দুটো তাড়াতাড়ি পেছনে নিয়ে জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললো।
……ক কিকিছুই হয়নি। কি হবে আবার? রাত অনেক হয়েছে তুমি এখন শুয়ে পড় হ্যাঁ? আমিও শুয়ে পরছি।
কথাটা বলে নূর পেছাতে নিলেই, আদিত্য শক্ত গলায় বলে উঠলো।
….নূর হাত দেখাও আমাকে।

নূর তবুও দেখাচ্ছে না।আদিত্য এবার রাগী সুরে বললো।
….নূর শো মি ইউর হ্যান্ডস।
কথাটা বলে আদিত্য নিজেই নূরের হাত দুটো সামনে নিয়ে এলো। হাত ধরায় নূর ব্যাথায় চোখ খিচে বন্ধ করে নিল। চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গরিয়ে পড়লো।

নূরের হাতদুটো সামনে মেলে ধরতেই, আদিত্য আৎকে উঠলো। চোখ দুটো লাল হয়ে আসলো। কতক্ষণ ওভাবেই তাকিয়ে রইলো।নূরের দুই হাতের তালুর চামড়া উঠে গেছে, রক্তগুলো জমাট বেঁধে আছে। নূরের হাতের এমন করুন অবস্থা দেখে আদিত্যের হাতদুটো কাপছে। আদিত্য নূরের দিকে তাকিয়ে চোয়াল শক্ত করে বললো।
….এ এসব কি? কিভাবে হলো এটা?

আদিত্যকে এভাবে দেখে নূরের প্রচুর ভয় লাগছে। নূর ভীতু স্বরে বললো।
….আ আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমার ধাক্কা দেওয়ায় রাগ করেছ। তা তাই আমি আমার হাতকে শা শাস্তি দিয়েছি।

নূরের কথায় আদিত্যের রাগ যেন সপ্তম আসমানে পৌঁছে গেল। আদিত্য নূরের হাত ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দুই হাতে নিজের চুল শক্ত করে টেনে ধরে, চোখ বন্ধ করে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। আদিত্য অতিরিক্ত রাগে সামনের টি টেবিলে একটা লাথি মেরে দিল। নূর আদিত্যের রাগ দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নিল। আদিত্য নূরের সামনে বসে দুই হাতে নূরের মুখটা ধরে অগ্নি চোখে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে রাগী কন্ঠে বললো।
….হাউ ডেয়ার ইউ নূর? হাউ ডেয়ার ইউ? তোমার সাহস কি করে হলো নিজেকে আঘাত করার? তোমাকে বলেছি না, তোমার সবকিছু আমার? তোমার নিজের ওপর তোমার কোনো অধিকার নেই? তাহলে তোমার সাহস কি করে হলো আমার জিনিসকে আঘাত করার? বলো?

নূর ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে বললো।
…..স সসরি,,

নূরকে এভাবে ভয় পেতে দেখে আদিত্যের হুঁশ এল। আদিত্য চোখ বন্ধ করে নিজেকে একটু শান্ত করে নিল। তারপর উঠে গিয়ে কাবার্ড থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এলো। নূরের সামনে বসে তুলোই স্যাভলন লাগালো। নূরের হাতটা আলতো করে নিজের হাতে নিয়ে স্যাভলন লাগানোর চেষ্টা করে বললো।
….এ একটু জ্বলবে তুমি সহ্য করতে পারবে তো?

নূর মাথা ঝাকিয়ে হ্যা বুঝাল।আদিত্য একবার নূরের হাতের কাছে স্যাভলন ওয়ালা হাত নিচ্ছে আবার পিছিয়ে আনছে। মনে হচ্ছে নূরের হাতে না নিজের হাতে লাগাতে যাচ্ছে। টেনশনে বেচারার ঘাম ছুটে যাচ্ছে। আদিত্যের এমন অবস্থা দেখে নূরের ভীষণ হাসি পাচ্ছে। নূর ঠোঁট টিপে নিজের হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে। আদিত্য নূরের হাতে স্যাভলন লাগাতেই, নূর হালকা ককিয়ে উঠলো।
….আহহ্

আদিত্য ঘাবড়ে উঠে বললো।
….সরি, সরি,সরি এখুনি ঠিক হয়ে যাবে। আর একটু খানি বাচ, তারপরই হয়ে যাবে।
আদিত্য বাচ্চাদের মতো নূরকে শান্তনা দিচ্ছে আর ফু দিয়ে দিয়ে স্যাভলন দিয়ে হাত পরিস্কার করে দিচ্ছে। হাত পরিস্কার শেষে আদিত্য নূরের হাতে অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিচ্ছে।

নূর আদিত্যের দিকে তাকিয়ে শুধু মুচকি মুচকি হাসছে। আদিত্য সেটা দেখে গম্ভীর কণ্ঠে বললো।
….খুব হাসি পাচ্ছে তাইনা?হাসি বন্ধ করো। আমি কিন্তু তোমার ওপর অনেক রেগে আছি। ভেবনা যে তোমার হাসি দেখে আমি গলে যাবো।

নূর মুচকি হেসে বাচ্চাদের মতো করে বললো।
….একটুও না?

….না একটুও না।

নূর ফট করে আদিত্যের এক গালে চুমু দিয়ে বললো।
….এখন?

….এখনও না?

নূর এবার আরেক গালে চুমু দিয়ে বললো।
…এখন?

আদিত্য ভেতরে ভেতরে খুশী হলেও উপরে উপরে বললো।
….এক চিমটিও না।এসব করে কোনো লাভ হবে না। আমার রাগ এত স,,,,

আর বলতে পারলোনা আদিত্য। নূর আদিত্যের ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে চুমু খেতে লাগলো। আদিত্য অপ্রস্তুত থাকায় প্রথমে একটু অবাক হয়ে গেলেও পরে নিজেও নূরের ঠোঁটে চুমু খেতে লাগলো। পাঁচ মিনিট চুমু খাওয়ার নূর আদিত্যের ঠোট ছেড়ে দিয়ে লাজুক হেসে মাথা নিচু করে বললো।
….এখন কি সরি এক্সেপ্টেবল হয়েছে?

আদিত্য দুষ্টু হেসে বললো।
….এখনো পুরোপুরি হয়নি। তবে আরেকটু চুমু খেলে হয়তো হতে পারে।

নূর লাজুক হেসে আদিত্য জড়িয়ে ধরে বললো।
….আই এ্যাম সরি।

আদিত্যও মুচকি হেসে নূরকে জড়িয়ে ধরে বললো।
….আই এ্যাম অলসো সরি প্রাণপাখী। এন্ড আই লাভ ইউ।
—-+—-

এক সপ্তাহ পর।
সকাল ৮ট।
সাভারের বাড়িতে সবাই ডাইনিং টেবিলে নাস্তার জন্য এসেছে। আদিত্যরা এঙ্গেজমেন্টের পরের দিনই চলে গেছে। তাই আপাতত ওরা নেই।

হঠাৎ সিড়ির দিকে তাকাতেই সবাই অবাক হয়ে গেল। কারণ আবির সকাল সকাল সুট বুট পড়ে একদম ফর্মাল ড্রেসআপে নেমে আসছে। একেতো এত সকাল সকাল আবির ঘুম থেকে উঠেছে, তারওপর আবার এমন ড্রেসআপ দেখে সবাই হা হয়ে গেছে।

সানা ওর বাবার দিকে হালকা কাত হয়ে বললো।
….বাবা আমার মনে হয় আমার ঘুম এখনো ভাঙেনি। তাইতো স্বপ্ন দেখছি যে আবির ভাইয়া এতো সকাল সকাল রেডি হয়ে এসেছে।

সানার বাবা মুচকি হেসে বললো।
……কিন্তু আমিতো সেই ভোরবেলায় উঠেছি। তাহলে আমি কি করে স্বপ্ন দেখছি?

….তারমানে আবির ভাইয়া সত্যি সত্যিই আসছে?

….হ্যাঁ তাইতো মনে হচ্ছে।

আবির ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে হাসি মুখে বললো।
….গুড মর্নিং এভরিওয়ান।

সবাই অটো হয়ে তাকিয়ে আছে। কেউ কোনো কথাই বলছে না।আবির সেটা দেখে বললো।
….কি হয়েছে সবাই এভাবে তাকিয়ে আছ কেন? আমি জানি আমি অনেক হ্যান্ডসাম, তাই বলে এভাবে দেখার কি আছে? নজর লেগে যাবে তো আমার।

আবিরের বাবা বলে উঠলো।
….আজ সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠেছে, যে জনাব এতো সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছে? আর এই সঙ সেজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?

আবির বলে উঠলো।
….ওয়াট ইস সঙ বাবা? দিস ইস নট সঙ,দিস ইস অফিশিয়াল ড্রেসআপ। কারণ তোমরা জেনে খুশী হবে যে আমি আজ থেকে অফিস জয়েন করছি।

কথাটা শোনার সাথে সাথে সানার মুখে থাকা পানি ফুস হয়ে বেড়িয়ে গেল। কাজের মেয়েটা খাবারের ট্রে নিয়ে আসছিল। আবিরের কথা শুনে ওর হাত ঠাস করে ট্রে টা নিচে পড়ে গেল। আর আবিরের মাতো আরও একধাপ এগিয়ে, সে এতবড় শক হজম না করতে পেরে সোজা অজ্ঞানই হয়ে গেল।

আবির এদের অবস্থা দেখে বললো।
….মনে হচ্ছে এতো খুশি এরা বরদাস্ত করতে পারছে না। যাইহোক আমি গেলাম। তোমরা ধীরে ধীরে খুশীটা হজম করে নেও।বাই এভরিওয়ান
কথাগুলো বলে আবির এটিটিউড নিয়ে বেরিয়ে গেল।

চলবে…..
(আমি ভেবেছিলাম এই গল্পটা সবচেয়ে বেশি বড়ো গল্পের রেকর্ড করবো। তবে মনে হচ্ছে আপনারা এই গল্পে বোর হয়ে যাচ্ছেন। তাই ভাবছি গল্পটা শেষই করে দেই। সারাদিন এত কষ্ট করে গল্প লিখে আপনাদের বোর করার কি দরকার তাইনা?

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here