#লুকোচুরি_গল্প
#পর্ব_২৯
#ইশরাত_জাহান
🦋
শীতের রাতের ঘন কুয়াশায় বাইকে করে প্রণয় পুরুষের সাথে অনেকদিন পর সময় কাটাচ্ছে দীপান্বিতা।মুখে তার কোনো কথা নেই।শুধু প্রণয় পুরুষের প্রতি জমা আছে কিছু অভিমান।কেনো সে এতগুলো বছর কথা বলেনি।কেনো সে তার বিপদের কথাগুলো শুনতে চায়নি।এবার একটু সেও বুঝুক অভিমানের পাল্লা ভারী হলে কতটা যন্ত্রণা বসবাস করে মনের গহীনে।
অভ্র ঘুমিয়ে গেছে নীরবের কোলে।দীপান্বিতা নীরবের কাধে এক হাত দিয়ে রেখেছে।নীরবের দৃষ্টি রাস্তার দিকে কিন্তু মন তার মায়াবন বিহারিনীর দিকে।অভ্র ঘুমিয়ে আছে বুঝতে পেরে নীরব বাইক নিয়ে সোজা বাড়িতে চলে আসে।বাইক থামতেই দীপান্বিতার মন খারাপ হয়ে যায়।মনে মনে বলে,”এই পথ যদি শেষ না হতো!”
“তাহলে আমাদের পথ যাত্রা আবার শুরু করা যাক?”(নীরব বলে)
থতমত খেয়ে যায় দীপান্বিতা।স্মিত হেসে নীরব বলে,”প্রিয়তমার মনে আমার জন্য এখনও বাসা বেঁধে আছে।খুব সহজেই বুঝতে পারি সে কি চায়।”
“হ্যাঁ,খুব ভালো বুঝতে পারেন।তাই তো আমার বিপদটা বুঝতে পারেননি।”
“সবকিছু তো নতুন করে শুরু করা যায়?”
“আপনি করেন নতুন করে শুরু।আমি চললাম।”
বলেই অভ্রকে কোলে নিয়ে চলে যায় দীপান্বিতা।নীরব বিড়বিড় করে বলে,”এ মেয়ে সোজা কথা শুনবে না।বাকা পথ দেখতে হবে আমাকে।”
বলেই বাসায় চলে যায় নীরব।
নীরবদের আসার আগেই চলে আসে দ্বীপ ও নীরা।দ্বীপ গাড়ি থেকে নামার পর নীরা দুই হাত উচু করে বলে,”কোলে করে যেমন গাড়িতে উঠিয়েছেন ঠিক কোলে করে এখন আমাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে যাবেন।আমি এখন অলস বোধ করছি।”
দ্বীপ নীরাকে কোলে নেয়।তারপর বলে,”এভাবে বউ আবদার করলে কি আর না বলা যায়?”
দুজনে হেসে উপরে যেতে থাকে।দ্বীপ নীরাকে কোলে নিয়ে নীরার দিকে তাকিয়ে হাঁটছে আর নীরা দ্বীপের চশমা দেওয়া চোখের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিতে থাকে।ফ্ল্যাটের সামনে আসার পর দ্বীপ বলে,”আমার পকেটে দেখো চাবি আছে।দরজা খুলো তুমি।”
নীরা চাবি নিয়ে দ্বীপের কোলে থেকেই দরজা খুলে।ঘরে এসে তাড়াতাড়ি করে হিজাব খুলতে যাবে দ্বীপ হাত ধরে বাধা দিয়ে বলে,”আমি খুলে দিচ্ছি হিজাব।”
নীরা খুশি হয়ে বলে,”ওকে,ক্যাডার সাহেব।”
দ্বীপ ধীরে ধীরে নীরার মাথায় থাকা গাজরা খুলে দেয় তারপর হিজাব খুলতে থাকে।নীরা আয়নায় তাকিয়ে নিজের স্বামীর এই ভালোবাসাগুলো উপভোগ করতে থাকে।আয়নায় দ্বীপের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে বলে,”এভাবেই আমাকে সব সময় ভালোবাসবেন তো,ক্যাডার সাহেব?”
দ্বীপ আয়নাতে নীরার দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর নীরাকে জড়িয়ে ধরে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে,”সারাজীবন ভালোবেসে কাছে আগলে রাখবো বলেই তো আমার এই ইচড়ে পাকা চন্দ্রপাখিকে বিয়ে করা।উল্টো চিন্তা তো আমার হচ্ছে।”
নীরা আয়নায় দ্বীপের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে।বোঝাতে চাইছে দ্বীপ কিসের জন্য চিন্তা করছে।দ্বীপ বলে,”এই যে আমাদের এজ ডিফারেন্ট।তুমি কি আমার বয়স বাড়লেও এতটা ভালোবাসবে?আস্তে আস্তে যখন আমার চুল পাকতে শুরু করবে এই ভালোবাসা কি স্থায়ী থাকবে?”
নীরা দ্বীপের দিকে ঘুরে দ্বীপকে পুরোপুরিভাবে আলিঙ্গন করে বলে,”আমার হবু চুনু মুনুদের বাবাকে আমি কখনও ছেড়ে যাবো না।মৃত্যু ছাড়া আমি কখনও আপনার থেকে আলাদা হবো না,ক্যাডার সাহেব।তাতে আপনি বুড়ো হন না কেনো।”
“ভালোবাসি আমার চন্দ্রপাখি।”(বলেই দ্বীপ নীরাকে শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে)
____
কেয়া ও রিক সবার পরিবার আজ কমিউনিটি সেন্টারে আছে।কেয়ারা এক পাশের রুমে আছে তার ওপর পাশের রুমে রিকেরা আছে।হঠাৎ গভীররাতে কেয়ার ফোনে এসএমএস আসে।কেয়া জেগে ছিলো।ভাবছিলো কাল তার পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে রিকের সাথে থাকবে।ফোনের এসএমএস এর জন্য আলো জ্বলতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকায় কেয়া।ফোন হাতে নিয়ে দেখে রিকের এসএমএস।
“জানি তুমি ঘুমিয়ে নেই।তাড়াতাড়ি ছাদে আসো।আমি আছি তোমার অপেক্ষায়,মাই ডিয়ার চশমিশ।”
রিকের এসএমএস দেখে অবাক হয়ে বালিশের পাশে থাকা চশমা নিয়ে চোখে সেট করে কেয়া।তারপর আবার এসএমএস পড়ে। নাহ রিক তাকে এই রাতে ছাদে যেতে বলেছে।পাশে তাকিয়ে সবাইকে পরখ করে নেয়।সবাই ঘুমে বিভোর হয়ে আছে।কেয়া তাড়াতাড়ি করে একটি চাদর গায়ে মুড়িয়ে কাপতে কাপতে চলে যায় তার সাদা বিলায়ের দিকে।এত রাতে রিক তার জন্যে অপেক্ষা করছে সে কি না যেয়ে পারে?ছাদে এসে দেখে রিক নিজেও একটি চাদর মুড়িয়ে কাপতে থাকে।ভ্রু কুচকে তাকায় কেয়া।রিক কেয়ার কাছে আসে।
বলে,”তোমার এই চশমার ভিতরে ভ্রু কুচকে তাকানো দেখতে আমার অনেক ভালো লাগে,চশমিশ।”
“আর কয়েকঘন্টা পর তো আমাদের বিয়ে।এখন এই হাড় কাঁপানো শীতে ডেকেছেন কেনো?”
“বিয়ের আগের দিন রাতে হবু বউয়ের সাথে প্রেম করবো তাই।”
“শীতে মরে যাচ্ছি।কি কুয়াশা দেখেছেন? গাছগুলো কুয়াশায় ভিজে আছে।”
“আর এই শীতল হাওয়াতে একটু চন্দ্র বিলাস করছি আমি আর আমার চশমিশ।”
কেয়া রিকের ভালো লাগার মুহূর্তকে বাধা দিতে চায় না।তাই রিককে আর কিছু না বলে চুপ থাকে।রিক বলে,”হাড় কাঁপানো শীত হোক আর চৈত্র মাসের সূর্যের করা উত্তাপ ভালোবাসার মুহূর্ত থাকবে সব সময়।এগুলো নিজেদেরকেই তো অর্জন করে নিতে হবে।”
লজ্জাতক দৃষ্টিতে চশমার ফাকে কেয়া তাকায় রিকের দিকে।বলে,”এত ভালোবাসেন আমাকে?”
“অনেক,কেনো তুমি বাসোনা?”
“বলেছি একবারও?”
“ভালোবাসি বলোনি তো একবারও।”
“সব কথা কি মুখে বলতেই হবে?”
“প্রিয় মানুষের মুখে ভালোবাসি শুনতে পাওয়ার অনুভূতিটাই যে ভিন্ন,চশমিশ।একটিবার বলবে আমার এই চোখের দিকে তাকিয়ে?ভালোবাসি।”
কেয়া লজ্জা পেয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।এই কনকনে শীতে এখন তার হাতের উপর লোমগুলো দাঁড়িয়ে যায়। কখনও কাউকে ভালোবাসা প্রকাশ করেনি।আজ কিভাবে বলবে?
রিক বলে,”হায় মেরে চশমিশ!ভালোবাসি বলতে এত লজ্জা?”
“ধেত।”
“বলো একটিবার।”
কেয়া এবার তাকায় রিকের দিকে।দূরত্ব কমিয়ে কিছুটা কাছে এসে চাঁদ বরাবর দাড়িয়ে থাকা রিকের কানের কাছে আসে।ফিসফিস করে রিকের কানে বলে,”আমি ভালোবাসি আমার এই সাদা বিয়ালাইকে।অনেক বেশি ভালোবাসি তাকে।”
বলেই দৌড়ে চলে যায় কেয়া।এখন তার খুব লজ্জা লাগছে এখানে থাকতে।রিক হালকা হাসে।চাঁদের দিকে তাকিয়ে আনমনে এক চোখ টিপ দেয় রিক।যেনো চাঁদকে সাক্ষী রেখেছিলো আজ তার চশমিশ তাকে প্রোপজ করেছে।
ঘরে এসে বসতেই কেয়ার ফোনে আবার একটি এসএমএস আসে।না এবার আর রিক দেয়নি এসএমএস।এবার এসএমএস দিয়েছে নীরা।লেখা,”আরে দোস্ত বিয়ের আগে হাড় কাঁপানো শীতে ছাদে দাড়িয়ে প্রেম করলে জ্বর আসে না।”
কেয়া লেখে,”তুই কি করে জানলি?”
“আইডিয়া যে আমার ছিলো।রিক ভাই তোর মুখে ভালোবাসি শুনতে চেয়েছিলো তাই আমি বলেছিলাম আপনি ওকে রাতের বেলায় একটু ইমোশনাল করে দিবেন।”
কেয়া স্মিত হেসে নীরাকে গুড নাইট জানিয়ে দেয়।দ্বীপের বুকে মাথা দিয়ে নীরা কেয়াকে গুড নাইট লিখে দেয়।নীরা কেয়ার এই রোমান্টিক মোমেন্ট এর জন্যই থাকতে চেয়েছিলো আজ কেয়ার কাছে।কিন্তু ক্যাডার সাহেব তা হতে দিলো কোথায়!নীরা দ্বীপের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার লুচু ক্যাডার সাহেব।”
দ্বীপ বলে,”অনেক প্রেম হয়েছে এখন ঘুমাও চন্দ্রপাখি।”
চলবে…?
আজকে রিচেক দিতে পারিনি, আশা করি আপনাদের পড়তে অসুবিধা হবে না।😥