খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_৪৯ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
468

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৪৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

চৌধুরী বাড়ির প্রতিটি কোণায় নিস্তব্ধতা ঘিরে ধরেছে। পরিবেশ জুড়ে পিনপতন নিরবতা। মুনতাসিমের শীতল চাওনি প্রলয়ের ভেতরে ঝড় তুলে দিয়েছে। সমস্ত মন মস্তিষ্ক ভয়ে কাবু হয়ে আসছে। মানুষটা তার সাথে কোনো কড়া বাক্যে কথা বলেনি। তবুও সে ভয় পাচ্ছে ভিষণ ভয়। বাক্য গুলো কণ্ঠ নালিতে এসে আঁটকে যাচ্ছে। প্রলয়ের ভেতরে দারুন জড়তা কাজ করছে। মুনতাসিমের গম্ভীর আঁখিযুগল প্রলয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুনতাসিমের শীতল দৃষ্টি প্রলয়ের ভেতরটা কাঁপিয়ে তুলছে। যাকে দেখলে অন্যরা ভয় পায়। আজ সে কাউকে দেখে ভয় পাচ্ছে! ভয় তো পাবারই কথা একজন মন্ত্রীকে তো আর বলা যায় না। স্যার আপনার বউয়ের সাথে অন্য একটা পুরুষ একান্তে কথা বলতে চায়। আপনি কথা বলার অনুমতি দিন। বিরক্তিতে মুনতাসিমের সমস্ত মুখশ্রী কুঁচকে এল। মুনতাসিম রাগান্বিত হয়ে বলল,

–আপনার সময়ের মূল্য না থাকতে পারে প্রলয়। কিন্তু আমার সময়ের মূল্য আছে। আপনি দশ মিনিট ধরে এখানে চুপচাপ বসে আছেন। আপনাকে দেখার জন্য নিশ্চয়ই আমাকে বসিয়ে রাখেন নি। আপনার যা কথা বলার আছে। আপনি কোনো জড়তা ছাড়াই বলতে পারেন। মুনতাসিমের বাক্যগুলো কর্ণকুহরে আসতেই প্রলয় এলোমেলো হয়ে গেল। মস্তিষ্ক শূন্য হতে শুরু করল। বুদ্ধিরা কাজ না করার পণ করেছে। প্রলয় কোথায় থেকে শুরু করবে ভেবে পাচ্ছে না। সে গাঢ় শ্বাস ছেড়ে বলল,

–সাতদিন ধরে আপনার বাসায় আসছি। আপনার দেখা না পেয়ে আমাকে বারবার ঘুরে যেতে হচ্ছে। আমি একটা অনুমতি চাইতে আপনার কাছে এসেছি। আমি জানি আবদারটা আমার জন্য কতটা ভয়ংকর। তবুও আমি নিরুপায় স্যার। আপনি আমাকে সাহায্য করুন।

–আমি জানি আপনি আমার অর্ধাঙ্গিনীর সাথে জারিফকে শেষ বারের মতো কথা বলিয়ে দিতে চাইছেন। আমি ইচ্ছে করেই সাতদিন আপনার সাথে দেখা করিনি। আপনি নিশ্চই চাইবেন না। আপনার অর্ধাঙ্গিনীকে পরপুরুষের কাছে কথা বলতে পাঠাতে। এমন কোনো কথা বলবেন না। যেটা আমি রাখতে পারব না। আপনার সততাকে আমি সন্মান করি। আশা রাখছি। আপনি আমার সন্মানের মূল্য দিবেন। মুনতাসিমের কথায় প্রলয়ের মুখশ্রীতে অসহায়ত্ব ফুটে উঠল। ভেতরটা হাহাকার করে উঠল। তবে কি জারিফকে দেওয়া কথা রাখতে পারবে না সে? জারিফ যে তার অস্তিত্ব বিলীন করে দিবে ধরনীর বুকে থেকে। প্রলয় কাতর কণ্ঠে বলল,

–জারিফকে কথা দিয়েছিলাম। লা’শ দু’টোর সন্ধান দিলে তাকে মেহেভীনের সাথে কথা বলিয়ে দিব। সে তার কথা রেখেছে। আমি তাকে দেওয়া কথা রাখতে পারিনি বলে, সে আমার অর্ধাঙ্গিনী আর সন্তানকে আঁটকে রেখেছে। আপনি যদি সদয় না হোন। তাহলে আমার জন্য আমার প্রিয় মানুষ গুলো ধরনী থেকে বিলীন হয়ে যাবে। আমি যে জীবিত লা’শ হয়ে যাব স্যার। আমাকে একটু দয়া করুন।

–আপনি চিন্তা করবেন না। আপনার অর্ধাঙ্গিনী আর সন্তানকে পেয়ে যাবেন। তাদের আপনার হাতে তুলে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। আপনি এবার আসতে পারেন। আমাকে বের হতে হবে। আর পরের বার মেহেভীন নয় ম্যাডাম বলে ডাকবেন। মনে থাকে যেন। কথা গুলো বলেই মুনতাসিম নিজের কক্ষে চলে গেল। প্রলয় আহত হৃদয় নিয়ে চৌধুরী বাড়ির বাহিরে আসলো। জারিফ আগ্রহ নিয়ে প্রলয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। প্রলয়ের মলিন মুখশ্রী দেখে জারিফের যা বোঝার বুঝে গেল। সে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে চৌধুরী বাড়ির দিকে দৌড় দিল। প্রলয় সহ আরো চারজন পুলিশ জারিফের পেছনে দৌড়ে দিল। একজন গার্ড জারিফকে গুলি করল। সেটা জারিফের কায়া স্পর্শ না করেই অন্য দিকে চলে গেল। প্রলয় গার্ডদের গুলি করতে নিষেধ করল। জারিফকে তারা ধরবে। গার্ডরা শুনলো না। সবাই মিলে জারিফকে ধরার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হলো। জারিফ দৌড়ে মুনতাসিম এবং মেহেভীনের থেকে দশ হাত দুরত্বে এসে স্থির হয়ে গেল। সে ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। হাতে তার হ্যান্ডকাফ লাগানো। সমস্ত কায়া শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে। আঁখিযুগলের নিচে কালো দাগ পড়েছে। রমণীদের আর্কষণ করা সুদর্শন পুরুষটা আজ তার সৌন্দর্য হারিয়েছে। জারিফকে দেখেই মেহেভীন শক্ত হাতে মুনতাসিমের হাত আঁকড়ে ধরল। গার্ডরা এসে জারিফকে টানতে চাইলে এক চুল নড়াডে পারছে না। জারিফ হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

–আমি দশটা মিনিট মেহেভীনের সাথে কথা বলব স্যার। আমার মৃত্যুর আগে শেষ চাওয়া আপনার কাছে। আপনি তো সারাটাজীবন আমার শখের মানুষটার সাথে কাটাবেন। সেখানে থেকে আমাকে দশটা মিনিট সময় দেওয়া যায় না স্যার? আমি আপনার পায়ে পড়ি। আমাকে আপনি এখানেই রক্তাক্ত করে দিন। আজ যদি মেহেভীনের সাথে কথা বলতে না পারি। তবে আমাকে এক চুল পরিমাণ সরাতে পারবেন না। আমাকে খু’ন করুন না হলে মেহেভীনের সাথে কয়টা কথা বলতে দিন। মেহেভীন ভয়ার্ত দৃষ্টিতে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করল। মেহেভীনের মুখশ্রীতে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। মুনতাসিম আঁখিযুগল দিয়ে মেহেভীনকে ভরসা দিল। মেহেভীনের হৃৎপিণ্ডের গতিবেগ তড়িৎ গতিতে ছুটে চলেছে। গার্ডরা জারিফকে টানাটানি করতে লাগলে মুনতাসিম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–ছাড়ো ওকে। এখন সাতটা দশ বাজে সাতটা বিশে তোমার সময় শেষ। যা বলার আমার সামনেই বলতে হবে। বাড়াবাড়ি করার চেষ্টা করলে দেহ থেকে মাথা আলাদা করে দিব। মুনতাসিমের অনুমতি পেয়ে জারিফের হৃদয় শীতল হয়ে গেল। আঁখিযুগলে অশ্রু এসে ভরে গেল। অদ্ভুত ভাবে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। জারিফের দৃষ্টিতে প্রিয় মানুষকে দেখার জন্য কত দিনের তৃষ্ণা জমে আছে। এত দিনের জমিয়ে রাখা তৃষ্ণা আজ সব উসুল করে নিচ্ছে। পিপাসিত হৃদয়টা আজ প্রেয়সীকে দেখে শীতল হয়ে গেল। তিন মিনিট সে মেহেভীনকে মন ভরে দেখে নিয়েছে। বাকি সাত মিনিটে কথা গুলো বলে শেষ করতে হবে। জারিফ আহত দৃষ্টিতে মেহেভীনকে পর্যবেক্ষণ করে নিল। প্রিয় মানুষটাকে অন্যের পাশে দেখে বুকটা ভারি হয়ে আসছে। ভেতরটা হাহাকার করে উঠছে। মনটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। জীবনে মৃত্যু আসুক তবু্ও প্রিয় মানুষকে অন্যের পাশে দেখার মতো পরিস্থিতি কারো না আসুক। জারিফ কাতর কণ্ঠে বলল,

–আমার মনের রাণী কি সুন্দর একটা ভরসার হাত পেয়েছে। ধরনীর বুকে কত-শত পুরুষ আছে। কিন্তু আমার মহারাণী কাউকে ভয় পায় না। শুধু আমাকে ভয় পায় । আর পাবেই না কেন? মানুষ তো মানুষকে ভয় পায় না। ভয় পায় মানুষরুপী জা’নো’য়া’র’কে আমি তো মানুষ না। আমি একটা মানুষ রুপী জা’নো’য়া’র। কতটা ভাগ্য নিয়ে জন্মালে আমার শখের মানুষটাকে অন্য কেউ না চাইতেই পেয়ে যায়। আর আমি এত চেয়েও পাইলাম না। আমার মুনতাসিমকে ভিষণ করে ঈর্ষা হয় জানিস। আমি কেন মুনতাসিম হতে পারলাম না বল তো? পরপারে যদি আমাদের দেখা হয়। তাহলে আল্লাহকে বলব। আল্লাহ যেন আমাকে মুনতাসিম বানিয়ে দেয়। আজ আমার জায়গায় মুনতাসিম আছে। সেদিন মুনতাসিমের জায়গায় আমি থাকব। আমাকে কেন ভালোবাসলি না মেহেভীন? আমার মধ্যে কিসের কমতি ছিল? এতটা ভালোবাসা দিয়েও আমি কেন তোকে পেলাম না? আমাকে এরা ফাঁসি দিচ্ছে না কেন বল তো? আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না। আমার মতো নষ্ট পুরুষের সাথে তোর যায় না। মুনতাসিমের মতো অসাধারণ পুরুষের পাশেই তোকে মানায়। তোকে না পাওয়ার আক্ষেপ আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থেকে যাবে। জারিফের কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মেহেভীন। প্রতিটি মানুষের জীবনে যেমন খারাপ কিছু মুহূর্তে থাকে। ঠিক তেমনই ভালো মুহূর্তও থাকে। আজ মেহেভীনের ভালো মুহূর্তের কথা স্মরন হলো। সে কঠিন বাক্যে বলল,

–তুই আমাকে ভালোবেসে ছিলি এটা ঠিক। কিন্তু তোর ভালোবাসার কৌশল সঠিক ছিল না। ভালোবাসা পেলে শত্রুরাও গলে যায়। যেখানে আমি একজন মানুষ মাত্র তা-ও তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলি। ভালোবাসার মতো ভালোবাসলে তোকে ভালোবাসতে বাধ্য ছিলাম আমি। কিন্তু তুই সবকিছু নিজের মন মতো চেয়েছিস। তোর যা লাগবে তুই পেলেই হবে। অন্য কারো যে মন আছে। তার-ও যে মতামত আছে। সেটা তুই ভাবসি নি। তুই আমাকে কলঙ্কিত করতে চেয়েছিলি। আমার সাথে পৈশাচিক আরচণ করেছিস। জোর করে চাহিদা মেটানো যায়। কিন্তু ভালোবাসা পাওয়া যায় না। তুই সব সময় নিজের ইচ্ছেকে গুরুত্ব দিয়েছিস। তোর ভাষায় যেটা ভালোবাসা। আমার ভাষায় সেটা শরীরের কামনা। যদিই ভালোই বাসতি। তাহলে আমাকে অসুস্থ করে দিতি না। সেদিনের কথা স্মরন হলে আজও আমার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেঁপে ওঠে। আজ-ও আমি তোকে ভয় পাই। ভালোবাসায় তো ভয় থাকে না। ভালোবাসায় থাকে শুধু বিশ্বাস আর ভরসা। যেটা তোর মধ্যে আমি কোনোদিন পাইনি। আর কি বললি মুনতাসিম আমাকে না চাইতেই পেয়ে গেছে। মুনতাসিম একটাই এক পিস। সে আমাকে পাবার জন্য যা কিছু করেছে। তা তোর মানসিকতায়ও আসেনি। তোকে তোর কামনা মিটাতে দেইনি বলে তুই আমাকে প্রহর করতে দু’বার ভাবিসনি। আর মুনতাসিম আমাকে প্রহার করবে না বলে সে নিজেই নিজেকে প্রহার করে। আমি তোর হতে চাইনি বলে তুই আমায় সন্মান নষ্ট করতে চেয়েছিস। আর আমি মুনতাসিমের হতে চাইনি বলে, সে আমায় ভালোবাসতে বাধ্য করেছে। আমি তাকে কশ-শত অসম্মান, অবহেলা, দুঃখ দেওয়ার পরও মানুষটা শুধু আমায় চেয়েছে। মুনতাসিম এমন একটা মানুষ যাকে ভালো না বেসে থাকা যায় না। এখানেই তোর আর মুনতািসমের পার্থক্য। মুনতাসিম সব সময় আমার চাওয়া পাওয়ার মূল্য দিয়েছে। আমাকে গুরুত্ব দিয়েছে। আমার স্বামী আমার কাছে সুপার হিরো। আমার চোখে দেখা শ্রেষ্ঠ পুরুষটি হচ্ছে আমার স্বামী। আমার স্বামীর সাথে নিজের তুলনা দিয়ে আমার স্বামীকে অসম্মান করিস না। তোর মতো অমানুষের সাথে আমার স্বামীর মতো অসাধারণ মানুষের তুলনা দিলে-ও পাপ হবে। পরিশেষে একটা কথাই বলব। আমি তোকে ঘৃণা করি। মনের গভীর থেকে ভিষণ ভাবে ঘৃণা করি। তোর মুখশ্রী দেখে আমার সমস্ত কায়া ঘৃণায় রি রি করে ওঠে। আমার জন্য দু’টো খু’ন করলেই তোর পাপ সব ছাপ হয়ে যাবে না। আমি তোমার স্বামীকে ভিষণ রকমের ভালোবাসি। আমি আমার স্বামীকে নিয়ে সুখ আছি। আর কখনো আমার স্বামীর সাথে নিজের তুলনা দিয়ে নিজেকে নিচু মন মানসিকতার পরিচয় দিস না। আমি আর তোর সাথে কথা বলতে চাইছি না। তুই আমার সামনে থেকে চলে যা। তোর মতো বড়লোক ঘরের ছেলেদের আমার চেনা আছে। বাবার টাকা দিয়ে দু’দিন পর ঠিকই জেল থেকে বের হয়ে আসবি। মেহেভীনের কথায় জারিফ মলিন হাসল। হাসিটা যে কারো হৃদয় কাঁপিয়ে তুলবে। কিন্তু হৃদয় কাঁপল না মেহেভীনের। সে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরে নিল। মুনতাসিম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল আর এক মিনিট সময় আছে। জারিফের ভেতরটা রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছে। শেষ বারের মতো মেহেভীনকে আলিঙ্গন করতে ইচ্ছে করল। পূর্ণতার জীবনে সবকিছু পূর্ণতা পায় না। কিন্তু অপূর্ণ ইচ্ছে নিয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে হয়। জারিফ নিজ থেকেই সামনের দিকে এগোতে লাগলো। আঁখিযুগল বেয়ে অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়ছে। আঁখিযুগল অসম্ভব ভাবে লাল হয়ে গিয়েছে। অধরের কোণে মলিনতার হাসি। সমস্ত কায়া দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। শেষ বারের মতো মেহেভীনকে এক নজর দেখে নিল। পুরুষ মানুষের আঁখিযুগলে অশ্রু বড্ড বেমানান। এতদিন তেজে হুংকার করা মানুষটা হঠাৎ শান্ত হয়ে গেল। চরণ দু’টি যেন আর এগোচ্ছে না। প্রলয় গভীর ভাবে জারিফকে পর্যন্ত করল। মনের অজান্তেই জারিফের জন্য বুকটা হুঁ হুঁ করে উঠল। জারিফ বাহিরে এসে চিৎকার করে বলল,

–আমার সবকিছু মিথ্যা ছিল মেহেভীন। কিন্তু আমি যে তোকে ভালোবাসি। তোর প্রতি আমার ভালোবাসাটা এতটুকুও মিথ্যা ছিল না। আমার সব মিথ্যার মধ্যে আমি যে তোকে ভালোবাসি, এই কথাটা মৃত্যুর মতো সত্য ছিল। তোকে না পাওয়ার আক্ষেপ আমাকে প্রতিটি মুহুর্তে পোড়াবে। তুই দেখে নিস। জারিফ আর তোর পিছু নিবে না। এই অমানুষটা ম’রে গেলে লা’শটা দেখতে আসিস না। আমার মৃত মুখটা তোর দুঃখ বাড়িয়ে দিবে। বেঁচে থাকতে যত দুঃখ দিয়েছি। সেগুলো পুষিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা আমার নেই। তবে তোর পিছু ছেড়ে শান্তিতে থাকতে দেওয়ার পথ আমার জানা আছে। তুই ভালো থাকিস। আমাদের আর দেখা হবে না। পৃথিবীকে জানিয়ে গেলাম। তোমরা প্রেমে পড়ো না প্রেম মানুষকে বাঁচতে দেয় না। যদি প্রেম তোমার কাছে চলে আসে। তবে প্রিয় মানুষটাকে নিজের করে নিও। নিজের শখের মানুষটাকে অন্যের পাশে দেখার মতো ভয়ংকর যন্ত্রনা পৃথিবীতে দুটো নেই। মৃত্যু আসুক তবুও প্রেম না আসুক। কথা গুলো বলেই জারিফ গাড়িতে গিয়ে উঠে বসল।

প্রাপ্তির মা চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে ছিল। মেহেভীন আর মুনতাসিম ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করতেই প্রাপ্তি মা তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,

–তুমি কেমন মেয়ে রে মেহেভীন? তোর মাকে পুলিশ ধরে গিয়েছে আর তুই নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াচ্ছিস! এই তোর মায়ের প্রতি ভালোবাসা! তোর মতো স্বার্থপর মেয়ে আমি দু’টো দেখিনি। যেই মন্ত্রীর বউ হয়েছিস। ওমনি মায়ের কথা ভুলে গিয়েছিস!

–আপনি কি সংসারে অশান্তি লাগানোর জন্য এসেছেন চাচি? আমি প্রতিদিন মায়ের সাথে কথা বলি। কাল রাতেও বলেছি। এসব মিথ্যা কথা আমার কাছে বলে লাভ নেই।

–তোকে মিথ্যা কথা বলে আমার লাভ আছে। তোর স্বামীও জানে তোর মাকে পুলিশ ধরে নিয়ে গিয়েছে। সে কি তোরে বলে নাই। আরো নতুন নতুন খবর শুনলাম। তোর মা নাকি তোর বাপকে খু’ন করেছে। মুনতাসিম নাকি তোর মাকে সাহায্য করেছে। তুই একজন খু’নি’র সাথে সংসার করেছিস মেহেভীন? মেহেভীনে সর্বাঙ্গ কেঁপে উঠল। সে মায়া ভরা দৃষ্টিতে মুনতাসিমের দিকে তাকালো। মুনতাসিম অপরাধীর ন্যায় মস্তক নুইয়ে নিল। মেহেভীন শান্ত কণ্ঠে বলল,

–চাচি যা বলছে সব সত্যি কথা বলছে মুনতাসিম? মেহেভীন সহজে মুনতাসিমের নাম ধরে ডাকে না। আর যখন ডাকে তখন মুনতাসিমের হৃদয় কাঁপিয়ে তুলে। মুনতাসিম অনুভূতি শূন্য হয়ে গেল। উপস্থিত বুদ্ধি আজ কাজ করছে না। মুনতাসিম কেন জানি মিথ্যা কথা বলতে পারে না। তবে আজ সত্য মিথ্যার সংমিশ্রণ সে করবে। সে মেহেভীনের দিকে না তাকিয়েই বলল,

–সব সত্যি। আমি আপনার বাবাকে খু’ন করেছি। আপনার মা আমাকে বাঁচানোর জন্য নিজে পুলিশের কাছে ধরা দিয়েছে। আপনি আপনার মাকে বোঝান। সে যেন ফিরে আসে। আপনি আপনার মাকে ভুল বুঝবেন না। আপনার যা শাস্তি দেওয়ার আমাকে দিন। বাক্য গুলো কর্ণকুহরে আসতেই মেহেভীনের সমস্ত কায়া নিস্তেজ হয়ে গেল। মনটা বিশ্বাস করতে চাইছে না। তবুও মস্তিস্ক অচল হয়ে পড়তে শুরু করেছে। মেহেভীন আহত দৃষ্টিতে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করল। সামনে ভয়ংকর রকমের কিছুর আভাস পাচ্ছে মেহেভীন। তবে কি সে ভয়ংকর সত্যের মুখোমুখি হতে চলেছে। ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে। অদ্ভুত ভাবে শ্বাস আঁটকে আসছে তার। মেহেভীন দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেল। মুনতাসিম শত ডেকে ও মেহভীনের থেকে সাড়া পেল না। তবে কি দুঃখ এসে সুখে ভাঙ্গন ধরে গেল!

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here