তোকেই_ভালোবাসি #লেখিকা:#আমেনা_আক্তার_আখি #পর্বঃ১৭

0
316

#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখিকা:#আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ১৭

“ও আমাকে ভালোবাসে বড়মা।আর আমিও ওকে ভালোবাসি।”

পিছন থেকে কারো কন্ঠস্বর কর্ণকুহরে প্রবেশ করতে মিথিলা, তিতলি হক পিছনে ফিরে তাকায়।মিথিলা প্রথমে কথাটি শুনে ভ্রু গুটালেও,সামনে থাকে ব্যক্তিটিকে দেখে অবাক হয়ে যায়।কয়েকবার চোখের পল্লব ফেলে আবার তাকায়।
ও কি ভুল দেখছে নাকি ভুল শুনছে কোনটা?

এদিকে তিতলি হক সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে একবার দেখছে একবার নিজের মেয়ের দিকে তাকাচ্ছে।সামনে থাকা ব্যক্তিটি আবার বলে ওঠে,,

“বড়মা আমি ওকে বিয়ে করতে চাই!মিহুর বিয়ে শেষ হলে তোমরা আমাদের বিয়ে নিয়ে কথা বলবে?”

ইয়াশের কথা শুনে তিতলি হক এক দৃষ্টিতে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে থাকে কিয়ৎক্ষণ।তারপর নিজের মেয়ের দিকে তাকায়।মিথিলা মাথা নিচু করে নেয় এবার।ইয়াশ তিতলি হককে আবার বলে ওঠে,,

“বড় মা শোনো,,,,”

“এখন কিছু শুনতে চাচ্ছি না আমি!তুমি নিজের রুমে যাও।”

তিতলি হক শান্ত কন্ঠে কথাটা বলে মেয়ের হাত ধরে ওখান থেকে নিয়ে আসে।নিজের রুমে এসে ঝাপটা মেরে হাতটা ছেড়ে দেয়।মিথিলা ঘরের এককোণে গিয়ে দাড়ায় জড়সড় হয়ে।তিতলি হক কি করছে সেটা দেখতে থাকে।
মিথিলার মাথায় একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,,তার মা কি এখন তার গায়ে হাত তুলবে?এটা ভেবে মিথিলা শুকনো ঢোক গিলে।তখন তিতলি হককে দরজা আটকাতে দেখে ভয় পেয়ে যায়।তিতলি হক মিথিলার কাছ আসতে মিথিলা মাথা নিচু করে চোখ খিচিয়ে বন্ধ করে নেয়।
তিতলি হক নিচু করে রাখা মেয়ের মুখের দিকে তাকায়।চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস টানে কয়েকবার।নিজের রাগ নিবারণ করে শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,,

“ইয়াশ যা বললো সব সত্যি?”

মিথিলা চোখ খুলে মায়ের দিকে তাকায়।আমতা আমতা করে বলে,,

“মা আসলে আমি ভাইয়াকে ভালোবাসি ঠিকই,,, ”

“কবে থেকে চলছে এসব?”

মিথিলার পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে তিকলি হক বলে ওঠেন।মিথিলা আবার মাথা নিচু করে নেয়।নিরব থাকে।তিতলি হোক চাপা কন্ঠে ধমক দিয়ে বলেন,,

“কথা বলছিস না কেন?”

মিথিলা চোখ বন্ধ করে কয়েকটা শ্বাস নেয়।চোখ বন্ধ করেই বলে,,

“মা আমি ভাইয়াকে ভালোবাসি।আগে থেকেই পছন্দ করতাম।কিন্তু ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে কিনা জানিনা।সে আমাকে কখনো ভালোবাসার কথা বলেনি।আর আজ কিজন্য বলেছে সেটাও আমি জানিনা।”

গড়গড় করে কথাগুলো বলে মিথিলা চোখ তুলে মায়ের তুলে মায়ের দিকে তাকায়।তিতলি হক তখন স্থির দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল।কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে,,

“যা এখান থেকে।”

মিথিলা কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে যায়।তিতলি হোক গিয়ে বিছানার উপর বসেন।মিথিলা সেদিকে একবার তাকিয়ে গুটিগুটি পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
তিতলি হক মেয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ।দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।রুকমা হক, ইকবাল হক কেউ এই সম্পর্ক মানবে কিনা জানা নেই।তবে মিনহাজ হক। সে তো মনে হয়না কোনোদিন এদের সম্পর্ক মেনে নিবে।তার উপর সামনে বড় মেয়ের বিয়ে এখন এসব কোনোকিছু কাউকে জাননো ঠিক হবে না।আপাতত কাউকে কিছু না বললেও যখন সবাই জানতে পারবে তখন কি হবে?এটার চিন্তা করছেন তিতলি হক?ইকবাল হক,মিনহাজ হক যদি এটা নিয়ে ঝামেলা করেন।

——————————————

মিথিলা ইয়াশের রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে।মিথিলাকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভিতর থেকে ইয়াশ বাইরে আসতে আসতে বলে,,

“জানতাম তুই আসবি!আয় ভিতরে আয়?”

ইয়াশের সম্মতি পেয়ে মিথিলা ভিতরে ঢুকে।সোজা ইয়াশের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে রাগী কন্ঠে বলে,,

“কেন বললে মিথ্যে?”

ইয়াশ কপাল কুঁচকে বলে,, “কখন মিথ্যে বললাম?ইয়াশ এখনও তোর মতো মিথ্যে বলা শিখেনি!”

মিথিলা এবার রেগে ইয়াশকে ধাক্কা মারে,চিল্লিয়ে বলে ওঠে,,

“আপনি আমাকে ভালোবাসেন।তো এতদিন কেন বলেলনি? এতদিন আপনার পিছনে ঘুরতাম এতদিন পাত্তা দিতেন না।আর এখন,,শুনুন আপনি আমাকে ভালোবাসলেও আমি আপনাকে এখন ভালোবাসিনা।আর বিয়ে সেটা কখনই হবে না!”

“এখন বাসবি কেন?এখন তো আকাশ আছে।এখন তো আকাশকে ভালোবাসিস!”

“ভাইয়া!”

“আহা চিল্লাচ্ছিস কেন?সত্যি কথাই তো বললাম।”

“আজেবাজে কথা বন্ধ করো।আকাশ শুধু আমার ভাইয়া।আর ভাইয়ের থেকে বেশি কিছু আমি ওকে ভাবিনা।তাই এসব ফালতু কথা বলা বন্ধ করবে।”

রাগের চোটে টুপটুপ পানি পড়ছে চোখ দিয়ে।চিল্লিয়ে কথাগুলো বলে রুম ত্যাগ করর মিথিলা।এখানে আর একমুহূর্তে থাকতে পারবে না সে।
এদিকে মিথিলা যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ইয়াশ বাকা হাসে।রুমের দরজা আটকিয়ে দিয়ে কাউকে ফোন করে।ওপাশ থেকে কিছু বলতে ইয়াশ হেসে দেয়।হাসতে হাসতে বলে,,

“ওর থেকে দেখি তোমার বেশি কষ্ট হচ্ছে?”

——————————————–

সন্ধ্যার দিকে মিনহাজ হক, ইকবাল হক,মইনুল হক তিন ভাই বাড়ি ফিরেছে।বাড়ির গিন্নিরা সব রান্নায় ব্যস্ত।রুকমা হক সবজি কাটতে কাটতে তিতলি হকের দিকে তাকিয়ে বলে,,

“আপা কি হয়েছে তোমার?আজকে এত চুপচাপ?”

রুকমা হকের সাথে তাল মিলিয়ে আনোয়ারা হকও বরের,, হ্যা বড় আপা,তুমি আজকে কেমন মনমরা হয়ে আছো কি হয়েছে?”

তিতলি হক দুজনের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,,”না কিছু হয়নি?”

“তুমি কিছু হয়নি বললে কি আমরা বিশ্বাস করে নিব?ভাইয়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে?”

“না তেমন কিছু না আনোয়ারা?এমনি আজকে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না।”

“সে কি কথা এমনি এমনি কেন মন খারাপ হবে?”

“আচ্ছা তোমরা একটু রান্নার দিকটা দেখো আমি আসছি!”

কথাটা বলে তিতলি হক রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যায়।রুকমা হক আনোয়ারা হক তিতলি হকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয়।তিতলি হক সোজা নিজের রুমে আসেন।রুমে মিনহাজ হক শুইয়ে ছিলেন।তিতলি হককে দেখে উঠে বসেন।রান্নার টাইমে তিতলি হককে ঘরে দেখে খানিকটা অবাক হয় মিনহাজ হক।বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রম্ন করেন,,

“কিছু বলবে?তুমি কি অসুস্থ?”

তিতলি হক গিয়ে মিনহাজ হকের পাশে বসেন।মিনহাজ হকের মন মেজাজ দেখে বলেন,,

“একটা কথা বলবো?”

“বলো!”

তিতলি হোক নিরব থাকেন।মনে মনে কথা সাজান কিভাবে কি বলবেন।কিন্তু সে কিছুতেই মিলাতে পারছেন না।মনে হচ্ছে মিনহাজ হক সবটা শুনলে তুলকালাম বাধাবে।
তিতলি হককে চুপ থাকতে দেখে মিনহাজ হক আবার বলেন,,

“কি বলবে বলো!”

“না কিছুনা!”

বলে তিতলি হক উঠে চলে যান।মিনহাজ হক ভ্রু কুঁচকে তাকান তিতলি হকের যাওয়ার দিকে।মনে মনে আওরায়,
“এর আবার কি হলো?”
——
রাতে সবাই খেতে বসেছে।কিন্তু মিথিলা নেই।মিথিলাকে না দেখে মইনুল হোক বলেন,,

“পুতুল কোথায়?”

ইফা মইনুল হকের দিকে তাকিয়ে বলে,, “বুঝলে চাচ্চুদের মেয়েকে মনে হয় জ্বীন-পেত ধরেছে।সারাদিন ঘর আটকিয়ে কি করে কেডা জানে?”

ইকবাল হক মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে,, “ইফা এসব বলে না।তুমি চুপচাপ খাও।পারলে মিথু কে ডেকে নিয়ে এসো।”

“আমি যাব ওই শাঁকচুন্নি কে ডাকতে।নো!তার থেকে আমি চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছি।”

ইফা চুপ হয়ে যায়।তিতলি হক বলে,, “আমি গিয়ে দিয়ে আসবো তোমরা খেয়ে নাও।”

ইয়াশ তিতলি হকের দিকে খেয়াল করলো।তিতলি হক তার ওর দিকে তাকিয়ে আছে।ইয়াশ এবার ডাক দেয়,,

“বড়মা!”

তিতলি হক চমকে উঠে বলে,, “হ্যাঁ কিছু লাগবে?”

“না!”

“লাগবো না যখন তখন এমনিতেই ডাকো কেনো?”

ইফার কথা শুনে আকাশ বলে ওঠে,, “তুই সবার কথার মাঝে নাক গলাস কেন?”

“আমার নাক আছে তাই গলাই তাতে আপনার কি?আর আপনিও তো গলাচ্ছেন?”

“কি?”

“নাক?”

ইফার কথা শুনে পাশ থেকে মিহু হেসে দেয়।আকাশ মিহির দিকে তাকিয়ে ঠোট উল্টে বলে,, “আপু হাসছো কেন?”

“হাসি থামিয়ে চুপচাপ খা?একটা কথাকে কি থেকে কি বানাচ্ছিস।”

ইয়াশের কথায় মিহু হাসি থামায়।চুপচাপ খেতে থাকে।কিছুক্ষণ পর মিথিলা নামে নিচে।একটা বোতলে পানি ভরে আবার রুমে চলে যায়।সবাই খাওয়ার কথা বলতেই মিথিলা পরে খাবে বলে চলে যায়।ইয়াশ আড়চোখে মিথিলার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।তখন ওর ফোনে মেসেজ
আসে।ইয়াশ মেসেজটা দেখে হাসে।

চলবে,, ইন শা আল্লাহ🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here