#এক_পশলা_ঝুম_বর্ষায়❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৭
সমুদ্র থেকে খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে মিটমিট করে হাসছে চাঁদনী। আদ্রিতাদের থেকে সেই সূদুরে চলে এসেছে সে। চাঁদনীর চোখ মুখ হাসি হাসি। বুকের ভিতরটা বিরতিহীন কাঁপছে। আদিবকে যেদিন প্রথম দেখেছিল সেদিনই তার ভালো লেগেছিল। আজ এই অনাঙ্ক্ষিত দেখা হওয়ার বিষয়টায় খুবই অবাক সঙ্গে খুশি হয়েছে চাঁদনী। ছেলেটাকে রাগাতে ভালো লাগে তার। কেন লাগে পুরোপুরি বুঝতে না পারলেও একটু আকটু ধরে ফেলেছে চাঁদনী। চাঁদনীর ভাবনার মাঝেই ওর দুই কাঁধে হাত রাখলো দুটো মানুষ। দৃষ্টি তাদের সমুদ্রের স্রোতের দিকে। আদ্রিতা আগে বললো,
“জানিস মুন আজ না কোথাও গিয়ে প্রেমে পড়ার গন্ধ পেলাম।”
আদ্রিতার কথা শুনে মুনমুনও সায় দিয়ে বললো,
“আমিও পেয়েছি বুঝলি।”
“তার মানে ফাইনালি আমাদের চাঁদ আপু কারো প্রেমে পড়েছে।”
মুনমুনও মৃদু হেসে বললো,“মনে তো তাই হচ্ছে।”
চাঁদনী এবার মুখ খুললো। নিজেকে পুরোপুরি ধাতস্থ করে বললো,“তোরা যা ভাবছিস তা কিন্তু মটেও সঠিক নয়।”
আদ্রিতা মুনমুনের দিকে তাকালো। বললো,
“মুন শুনেছিস আমরা যা ভাবছি তা নাকি সঠিক নয়।”
“শুনছি তো আদু। কিন্তু কথা হলো আমরা কি ভাবছি?”
“সে তো চাঁদ আপু জানে।”
চাঁদনী রাগ দেখিয়ে দুজনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বললো,“তোরা একটা যাচ্ছে তাই।”
কথাটা বলেই হনহনিয়ে হেঁটে গেল চাঁদনী এগোতে এগোতে মৃদু হাসলো ঠিকই। আদ্রিতা আর মুনমুনও হাসলো। আদ্রিতা চেঁচিয়ে বললো,
“চাঁদ আপু এখন কি আর আমরা খাই সুজি,
আদ্রিতার কথা পিঠে মুনমুনও চেঁচিয়ে বললো,
“তাই তো চাঁদ পাখি যতই লুকাক আমরা কিন্তু অনেক কিছুই বুঝি।”
হেঁসে উঠলো আদ্রিতা আর মুনমুন। চাঁদনীও তাদের কথোপকথন শুনতে পেয়ে হাসলো খুব। চাঁদনী অনুভব করলো প্রথমবার কারো প্রেমে পড়ার অনুভূতিটা দারুণ।’
—-
রাগে ফুসফুসতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছে আদিব। ইচ্ছে করছে ওই বদমাশ মেয়েটাকে ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় বসাতে কিন্তু আফসোস পারছে না। তার সমুদ্র বিলাসের সম্পূর্ণটাই বৃথা গেল। আদিব দ্রুত নিজের রুমে ঢুকে পড়লো এবার আর সমুদ্রে যাবে না। এবার সোজা ঢাকাতে ফিরবে। যাওয়ার পথে ফারিশের রুমটা নজরে এসেছিল আদিবের। সে বুঝেছে ফারিশ ভাই আজ বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।’
সন্ধ্যা সাতটা। সারাদিনের হৈ-হুল্লোড় করে হোটেলে ফিরলো আদ্রিতা, চাঁদনী, মুনমুন, আশরাফ, রনি আর মৃদুল। তারা আজ অনেক মজা করেছে। প্রচুর ছবি তোলা, প্রচুর খাওয়া-দাওয়া আর শেষে, শেষ বারের মতো সমুদ্রে পা ভেজানো সঙ্গে সূর্যাস্ত দেখা। সূর্যাস্তের সময়টা যেন খুবই মুগ্ধনীয় কেটেছে সবার। কি মুগ্ধনীয় পরিবেশখানা। গোল থালার মতো রক্তবর্ণধারণ করা সূর্যটা কি সুন্দর আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছিল। ইস! আমার মতে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দুটো মুহূর্ত হলো সকালের সূর্যোদয় দেখা আর সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বাভাসের এই সূর্যাস্ত দেখা। দারুণ দুটো মুহূর্ত। মৃদুল তাড়া দিয়ে বললো,“অতঃপর কক্সবাজারের ভ্রমন আমাদের এ পর্যন্তই সবাই সবার ব্যাগপত্র গুছিয়ে আদুদের রুমে আয়। শেষ একটা চা আর নানরুটির ভোজন হবে তারপর সবাই ব্যাক।”
মৃদুলের কথা শুনে সবাই হেঁসে হেঁসেই বললো,“ঠিক আছে।”
আদ্রিতা আর মুনমুন নিজেদের রুমে ঢুকলো। মুনমুন তার ব্যাগপত্র বের করতে করতে বললো,“তারপর তুই থাকছিসই?”
আদ্রিতা খানিকটা মুড অফ করে বললো,
“ইচ্ছে তো ছিল না কিন্তু কি করার।”
“হুম যাক প্যারা নাই। চিল।”
“হুম দেখা হবে। এখন দ্রুত কর।”
মুনমুন দ্রুত তার ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আদ্রিতার একটা কল আসলো। সে দ্রুত কলটা রিসিভ করে চলে গেল ব্যালকনিতে।
—
আধমরা ভেঙে শোয়া থেকে উঠে বসলো ফারিশ। মাথা ভাড় হয়ে গেছে তার। আজ সারাদিনটাই সে ঘুমিয়ে কাটালো। এত ঘুম হওয়ার কথা ছিল না তাও এত কিভাবে ঘুমালো ভাবছে। হয়তো কাল শেষ রাতের ড্রিংকটা বেশি হয়েছিল। ফারিশ সেই সকালে ঘুমিয়েছে ঘুম ভেঙেছে মাত্র। ফারিশ আশপাশ তাকিয়ে ফোনটা হাতে নিলো। আদিবের মেসেজ দেখা গেল। ছেলেটা কক্সবাজার থেকে বেরিয়েছে সেই দুপুরেই। ফারিশ মেসেজ দেখেই সোজা চলে গেল ওয়াশরুমে। একটা সাওয়ার নেয়া দরকার।’
—-
“আপনি চিন্তা করবেন না স্যার আমি কাল সকালেই চলে যাবো।”
অপর পাশের ব্যক্তিটিও বললো,
“ঠিক আছে আদ্রিতা। কাজটা সেরে তুমি বিকালেই চলে আসতে পারবে। তোমার গাড়িটা আনিয়ে নিও।”
“জি স্যার।”
“আচ্ছা শোনো লোকেশনটা তোমার ফোনে পাঠিয়ে দিচ্ছি কেমন।”
“আচ্ছা স্যার দেন।”
ফোন কাটলো আদ্রিতা। ফোন কাটার কিছু সময়ের মাঝেই আদ্রিতার ফোনে মেসেজ আসলো। সে দেখলো। আদ্রিতার সার্জারীর কাজটা বিকেল থেকে সরিয়ে সকালে আনা হয়েছে। সকাল দশটায় অপারেশন শুরু করলে সব ঠিক থাকলে দুপুরের মধ্যেই হয়ে যাবে আর দিন থাকতেই বিকেলের মাঝে বাড়ি ফিরতে পারবে আদ্রিতা। বিষয়টা ভালো হয়েছে। আদ্রিতা জোরে একটা নিশ্বাস নিলো। তারপর চলে গেল ভিতরে। ততক্ষণে মুনমুনের গোছগাছ কমপ্লিট। এবার শুধু নিজের রেডি করা বাকি।’
রাত আটটা। মোটামুটি চা আর নানরুটির ভোজন শেষ করে হোটেল গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আশরাফ, মুনমুন, চাঁদনী, মৃদুল,রনি আর আদ্রিতা। আদ্রিতার গায়ে চাঁদর জড়ানো বাহিরে বেশ শীত পড়েছে। আদ্রিতা সবাইকে বিদায় দিতে নিচ পর্যন্ত এসেছে। মৃদুল বললো,
“আদু শোন আজ আর হোটেল থেকে বের হবি না। খাবার দাবার যা আছে ওগুলাই খাবি। একা বের হবি না কেমন।”
“ঠিক আছে।”
“শুধু ঠিক আছে বললে চলবে না। বললাম আমরাও থাকি শুনলি না। আচ্ছা আমি একা থেকে যাই।”
আশরাফের কথা শুনে মিহি হাসলো আদ্রিতা। বললো,“তোরা এত টেনশন নিস না। আমি কাল তাড়াতাড়িই চলে যাবো।”
রনি এগিয়ে এলো। বললো,“তাও বিষয়টা ভালো লাগছে না আমরা চলে যাচ্ছি তুই একা থাকছিস।”
চাঁদনী মুনমুনও বললো,“আমাদেরও ভালো লাগছে না।”
আদ্রিতা কি বলবে ভেবে পায় না। সে আচমকাই সবাইকে একসাথে জড়িয়ে ধরলো। বললো,“তোরা টেনশন নিস না আমি ঠিক সামলে নেবো।”
সবাই খুশি হলো। চাঁদনী বললো,
“ঠিক আছে। সাবধানে থাকিস বোন।”
“হুম থাকবো।”
একটা অটো এসে থামলো সেই মুহূর্তে। আশরাফ এগিয়ে গেল। বাসস্ট্যান্ড যাওয়ার কথা বললো অটোচালকও রাজি হলো। তারপর একে একে সবাই উঠে বসতে লাগলো অটোতে। মুনমুন আদ্রিতাকে জড়িয়ে ধরে বললো,“সাবধানে থাকিস কিন্তু আদু আর শোন পারলে চাঁদ আপুর প্রেমিক পুরুষের নাম্বারটা জোগাড় করিস।”
হাসলো অাদ্রিতা। বললো,“দেখি। যা এখন নয়তো বাসে সিট পাবি না।”
অতঃপর আদ্রিতাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল সবাই। যাওয়ার আগে বলে গেছে। ফোনে চার্জ দিয়ে রাখতে তারা কল করবে। আদ্রিতাও হাতের ইশারায় বায় জানিয়ে বলেছে,“আচ্ছা রাখবো।”
দেখতে দেখতে চোখের ইশারায় দূর থেকে সূদুরে চলে গেল মৃদুল ওরা। মাঝে মাঝে আদ্রিতার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়। এমন সুন্দর একটা ফ্রেন্ড সার্কেল পেয়ে।’
আদ্রিতা মৃদু হেঁসে পিছন ফিরতেই ধাক্কা লাগলো ফারিশের সাথে। মাথা ঠেকলো আবারও ফারিচের বুকে। তড়িৎ বুকটা কেঁপে উঠলো আদ্রিতার। ফারিশেরও সেইম অবস্থা। সে মাত্রই কথা বলতে বলতে গেট থেকে বাহিরে বেরিয়ে ছিল। আদ্রিতা মাথা উঁচু করে কিছু বলতে নিবে তার আগেই ঠোঁটে আঙুল দিলো ফারিশ। চুপ করিয়ে দিল তাকে। আদ্রিতার নিবিড় চাহনী। ফারিশ বললো,
“আমি একটু তাড়ার আছি কথা বলতে চাচ্ছি না প্লিজ।”
কথাটা বলেই আদ্রিতার থেকে নিজেকে সরিয়ে চলে গেল ফারিশ। আদ্রিতা ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। পরক্ষণেই আর কিছু না ভেবে হেঁটে চলে গেল হোটেলের ভিতরে। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই কল করলো তার ড্রাইভারের নাম্বারে। প্রথম কলেই ফোন তুললো ড্রাইভার। আদ্রিতা বললো,
“সোহেল আমার গাড়িটা কি ঠিক হয়েছে?”
অপরপ্রান্তে থাকা সোহেলও বললো,
“জি ম্যাডাম। আপনি যাওয়ার একদিন পরই ঠিক করে এনেছি।”
“ঠিক আছে। শোনো কাল তুমি সকাল সকাল কক্সবাজার উদ্দেশ্য গাড়ি নিয়ে চলে আসবে। আমি দুপুর দুটো কি আড়াইটার মধ্যে হসপিটাল থেকে বের হবো। লোকেশন আমি পাঠিয়ে দিবো।”
“আচ্ছা ম্যাডাম।”
“হুম তাড়াতাড়ি আসবে কিন্তু।”
“আচ্ছা।”
আদ্রিতা ফোন কাটলো। যাক এবার আর টেনশন নেই। দ্রুত কাজ সেরে চটপট চলে যাবে বাসায়।”
—–
আরেকটা সুন্দর সকাল। আদ্রিতা তার ব্যাগপত্র গুছিয়ে একেবারে হোটেল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলো। একসাথেই হোটেল থেকে বেরিয়ে কাজ সেরে গাড়ি করে চলে যাবে। আদ্রিতা পুরো রুমটা একবার চেক করে হোটেল কতৃপক্ষকে চাবিটা দিয়ে বেরিয়ে পড়লো হোটেল থেকে। টাকাপয়সার মিটমাট কাল রাতেই কমপ্লিট তাদের।’
অন্যদিকে ফারিশও তার জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলো। প্রথমে গাড়ি করে একটা জায়গায় যাবে ফারিশ তারপর দুপুরের দিকেই ঢাকার উদ্দেশ্যে বের হবে। হোটেলে আর ঢুকবে না তাই সব গুছিয়ে গাছিয়েই বের হচ্ছে। আদ্রিতা বের হওয়ার পাঁচ মিনিটের মাথাতে ফারিশও বের হলো।’
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ। আমি খুব দুঃখিত এত লেট করে গল্প দেয়ার জন্য। আসলে শীতের জন্য আমার অবস্থা বেহাল। তবে ইনশাআল্লাহ এবার থেকে রেগুলার দিবো।]
#TanjiL_Mim♥️