#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৫০
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ বেড়েছে। মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। বুদ্ধিরা আজ শূন্য হয়ে গিয়েছে। বুকের ভেতরটা অসহ্য যন্ত্রনায় ছটফট করছে। আঁখিযুগলে অশ্রুকণা এসে জমা হয়েছে। মেহেভীনের সমস্ত মুখশ্রীতে অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। রাইমা বেগম মেয়েকে দেখে প্রশান্তির হাসি হাসলেন। তার মুখশ্রীতে নেই কোনো ভয়! আতঙ্ক মেহেভীনকে স্পর্শ করতে পারলেও রাইমা বেগমকে স্পর্শ করতে পারেনি৷ মেহেভীনের মন, মস্তিষ্ক চিন্তায় অকেজো হয়ে গিয়েছে। রাইমা বেগম জেলের অন্ধ কুঠুরি থেকে মেয়ে দিকে এগিয়ে আসলেন। মেহেভীনের মুখশ্রীতে হাজারটা প্রশ্নের উত্তর শোনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। রাইমা বেগম শীতল কণ্ঠে বলল,
–কেমন আছিস মা?
–তুমি এখানে কিভাবে আসলে আম্মু? তোমার সাথে আমার রোজ কথা হয়। তুমি কেন আমাকে জানাওনি? যে তোমাকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসেছে! আমি আজকেই তোমার জামিনের ব্যবস্থা করছি। তারা কিসের ভিত্তিতে তোমাকে এখানে নিয়ে আসলো? তুমি তাদের বাঁধা প্রয়োগ করলে না কেন? মুনতাসিম কি সব বাজে কথা বলছে। চাচি এসে তোমার নামে বাজে কথা বলে যাচ্ছে। এবার কিন্তু তার স্বামীর সাথে তাকে-ও জেলে ভরে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিব আম্মু।
–মুনতাসিম তোকে কি বলেছে?
–সে বলেছে সে নাকি আমার বাবাকে খু’ন করেছে। আবার চাচি বলছে তুমি নাকি বাবাকে খু’ন করেছ।
–মুনতাসিম তোকে মিথ্যা বলেছে। আর তোর চাচি তোকে সত্যি কথা বলেছে। আমি-ই তোর বাবাকে খু’ন করেছি। আমি অনেক আগেই ধরা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মুনতাসিমের জন্য পারিনি। ছেলেটা তোকে বড্ড বেশি ভালোবাসে। তোকে হারানোর ভয়ে প্রতিটি মুহুর্তে তার হৃদয় কাঁপে। আমার জন্য ছেলেটাকে ভুল বুঝিস না মা। মুনতাসিমের মতো জীবনসঙ্গী পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার এমন ভাগ্য সবার থাকে না। তুই ভাগ্য করে পেয়েছিস। হৃদয়ের গুপ্ত কুঠুরিতে আগলে রাখিস। রাইমা বেগমের বাক্য গুলো শেষ হতেই মুনতাসিম এসে উপস্থিত হয়। মুনতাসিমকে দেখেও রাইমা বেগমের মুখশ্রীতে প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল। মুনতাসিম কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হতেই রাইমা বেগম বললেন,
–আজ তুমি কিছুই বলবে না মুনতাসিম। আজ আমি বলব। তোমরা শুনবে।
–আমার দোষ কেন শুধু শুধু নিজের কাঁধে নিচ্ছেন আন্টি?
–তুমি মিথ্যা বলায় ভিষণ কাঁচা মুনতাসিম। মিথ্যা কথা বলতে গিয়ে তোমার কণ্ঠনালি কাঁপছে। আমাকে তো অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখলে আর কতদিন বাঁচাবে? একজন খু’নিকে একদিন না একদিন মরতেই হবে। শুধু শুধু আমাকে বাঁচিয়ে রেখে কি লাভ? তুমি যে যন্ত্রনাটা মেহেভীনের থেকে আড়াল করতে চাইছ। সেটা মেহেভীন নিজ থেকে জানতে পারলে দ্বিগুন কষ্ট পাবে। তার থেকে ভালো আমি বলে দিয়ে কষ্টটা কমিয়ে দেই। সত্যটা যত তাড়াতাড়ি মেহেভীন মেনে নিতে পারবে। তত তাড়াতাড়ি মেহেভীনের জন্য মঙ্গল। তুমি আমাকে আন্টি না ডেকে মা ডাকবে। আন্টি ডাকে ভালোবাসা খুঁজে পাই না।
–আপনি মা হয়ে ছেলের কথা রাখলেন না কেন মা? আমাকে আর একটু সময় দিলে আপনার খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত? মুনতাসিমের মুখশ্রীতে মা ডাকটা খুব মধুর শোনালো রাইমা বেগমের কাছে। সে বুক ভারি করা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
–আমি তোর বাবাকে খু’ন করেছি। তাকে ছয় টুকরো করে ছয় জেলায় লুকিয়ে রেখেছিলাম। আমি অনেক আগেই আত্নসমর্পণ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মুনতাসিমের জন্য পারিনি। তখন তোর সদ্য চাকরি চলে গিয়েছে। তোর বাবার তোর ছোট্ট হৃদয়টা রক্তাক্ত করে দিয়েছিল৷ তুই যখন আমাকে বললি তোর চাকরিটা আর নেই। তখন আমি ভিষণ ভয় পেয়েছিলাম। তুই বাড়ি আসলে আবার সবকিছু বুঝে না ফেলিস। তোর বাবার মৃত্যুর খবরটা তোকে একদম ভেতর থেকে শেষ করে দিয়েছিল মেহেভীন। তুই ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করতি না। চার দেওয়ালের আবদ্ধ কক্ষে নিজেকে বন্দী করে ফেলছিলি৷ তোর মুখের হাসিটা যেন কোথায় বিলীন হয়ে গেল। তোর চেহারার দিকে তাকানো যেত না। দিন দিন শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছিলি। মা হয়ে মেয়ের এমন করুন অবস্থা কিভাবে সহ্য করতাম বল? তাই নিজের যন্ত্রনাকে মাটি চাপা দিয়ে তোকে সুখী দেখতে চেয়েছি। মুনতাসিমের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। আমি মুনতাসিমকে বলেছিলাম তিন মাস আমি তোমাকে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য সময় দিলাম। কিন্তু বিশ্বাস কর প্রতিটি সেকেন্ড আমি শতবার করে মরে যাই। যে মানুষটাকে ঘৃণা করতে করতে তার পবিত্র ভালোবাসায় জড়িয়ে গিয়েছি। যার মায়ায় আমি নিজেকে হারিয়েছি। তাকে হারিয়ে আমি কিভাবে বাঁচব বল? বলতে পারিস বুড়ো বয়সে এসে মা এসব কি কথা বলছে! ভালোবাসায় কোনো বয়স মানে না। মানে না কোনো জাত। ভালোবাসার মতো ভালোবাসলে আশি বছরেও ভালোবাসার গভীরতা ব্যাখ্যা করা যায়। তোর বাবাকে আমি প্রথমে প্রচুর ঘৃণা করতাম। সে আমার সাথে ছলনা করে আমাকে বিয়ে করেছে। আমি মন থেকে ভালোবাসতাম মাহতাবকে। মাহতাব অনেক ভালো মনের মানুষ ছিল জানিস মেহেভীন। এই তো দুপুরেও আমরা দু’জন মিলে যুক্তি পরামর্শ করেছি। রজনীর মধ্য প্রহরে দু’জন পালিয়ে যাব। আমাদের প্রণয়নের সম্পর্কটা বাড়ি থেকে মেনে নিচ্ছিল না। তোর বাবা আর মাহতাব দু’জন বেস্ট ছিল। ওদের বন্ধুত্ব দেখে লোকে হিংসা করত। ওদের একটা বাজে স্বভাব ছিল। ওরা দু’জন জু’য়া খেলতো। তাদের কাছে জুয়ার নেশা একদিকে ধরনীর মানুষ আরেক দিকে। যেদিন রাতে আমাদের পালানোর কথা ছিল। সেদিন রাতে তোর বাবা আর মাহতাব জুয়া খেলে। তোর বাবা মাহতাবকে শর্ত দিয়েছিল। যে মাহতাব হারলে ফরিদ যা বলবে মাহতাব তাই মেনে নিবে। ফরিদের শর্তে মাহতাব রাজি হয়ে যায়। এই সুযোগ টাই ফরিদ লুফে নেয়। ফরিদ আমাকে মনে মনে ভালোবাসত। কিন্তু প্রাণ প্রিয় বন্ধুর প্রেয়সীকে তো আর সরাসরি চেয়ে নাওয়া যায় না। তাই সে অসৎ পথ অবলম্বন করে। সেদিন ফরিদ আমার বাড়ি এসেছিল। সে আমাকে বলল তাকে মাহতাব পাঠিয়েছে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিতে। আমি তৈরি হবার জন্য প্রস্তুত হতেই পেছনে থেকে ফরিদ আমার মুখ চেপে ধরল। তারপরে আমার আর কিছুই মনে ছিল না। পরের দিন সকালে লোকজনের কোলাহলে আমার নিদ্রা ভাঙে। তোকে একটা মেয়ের গল্পটা শুনিয়ে ছিলাম না মেহেভীন। সেই মেয়েটাই আমি। বিয়ের পরে আমি মাহতাবের কাছে গিয়েছিলাম। সে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে। আমাকে বলে আমি যদি ফরিদকে ডিভোর্স দিয়ে তার কাছে আসি। তাহলে এই সমাজ আমাদের সুখে সংসার করতে দিবে না। একটা মেয়ের জীবনে বিয়ে কতবার হয়? একবার যখন বিয়েটা হয়ে গিয়েছে। তখন তুমি ফরিদের সামনে মানিয়ে নাও। সেদিন আমি মাহতাবের পা পর্যন্ত ধরেছি। তবুও সে আমায় গ্রহন করেনি। আমার ভেতরটা ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। আমি প্রতিটি মুহূর্ত মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করেছি। কতবার যে আ’ত্ন’হ’ত্যা করার চেষ্টা করেছি। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে আমার অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছিল। ঠিক তখনই তোর বাবা আমাকে ভালোবাসার চাদরে মোড়ানোর চেষ্টা করল। একজনকে মনে রেখে আরেকজনের সাথে সংসার করা এতটাই সহজ বল! আমি কতটা যতটা সহজ ভাবে বলছি। কিন্তু আমার পরিস্থিতি এতটা সহজ ছিল না। আমি প্রতিটা মুহূর্ত পুড়েছি। তোর বাবাকে কিছুতেই মেনে নিতে পারতাম না। আমি খুব করে চাইতাম তোর বাবাকে মেনে নিতে। কিন্তু আমার মন তোর বাবাকে গ্রহণ করত না। সবাই আমাকে পরামর্শ দিল। আমি যেন একটা বাচ্চা নেই। তাহলে তোর বাবার প্রতি ভালোবাসাটা আমার মনে আসবে। এরপর তুই হলি তবুও আমার মনে তার জন্য কোনো মায়া কাজ করে না। তোকেও আমার বিরক্ত লাগত। তোর বাবা রাত জেগে তোকে দেখাশোনা করত। দিনে আমাকে রান্না করে খাওয়াত। আমি বাড়ির কাজ করতাম না। তোর বাবার এত কেয়ার এত ভালোবাসা দেখে মনের অন্তরালে তার জন্য সুপ্ত অনুভূতি কাজ করতে লাগলো। তাকে আমি শর্ত দিলাম আমার সাথে থাকতে হলে জুয়া খেলতে পারবে না। সন্ধ্যার পরে বাড়ির বাহিরে থাকতে পারবে না। মানুষটাকে আমার আর দ্বিতীয়বার এসব কথা বলতে হয়নি। আমার এক কথায় ফরিদ সবকিছু ছেড়ে দিল। আমি ভালো থাকব কিসে সারাক্ষণ এটা নিয়ে চিন্তা করত। আমি কষ্ট পাব এমন কাজ থেকে বিরত থাকত। আমি অসুস্থ থাকলে রাত জেগে আমার সেবা করত। সে আমাকে এমন ভাবে ভালোবেসেছে তাকে আমি খু’ন করে ফেললেও মুখশ্রী দিয়ে একটা শব্দ বের করত না। এমন মানুষের মায়ায় না বেঁধে আমি যেতাম কই? আমাকে ভালোবাসতে হয়নি ভালোবাসা গুলো ফরিদকে ভালোবেসেছে। ফরিদকে মেনে নিতে আমার কয়েকটি বসন্ত কে’টে গিয়েছে। আমার পরে গিয়ে মনে হয়েছিল। আমি ফরিদকে ভালো না বেসে মাহতাবকে কেন ভালোবেসে ছিলাম? আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা ফরিদেরই হওয়া উচিৎ ছিল। আমার মৃত্যুর পরে যদি বলা হয়। আমি কাকে চাই? তাহলে আমি তোর বাবাকে চাইব। তোর বাবা আমাকে অনেকটা যত্ন আর অনেকটা ভালোবাসা দিয়েছে। সেই ভালোবাসা ছেড়ে আমি কেন যে আমায় গ্রহণ করেনি। তাকে চাইব! মাহতাব ভালো মানুষ ছিল। কিন্তু ভালোবাসার মানুষ হিসেবে সে শূন্য। কিন্তু তোর বাবা মানুষ হিসেবে একটু খারাপ ছিল। কিন্তু ভালোবাসার মানুষ হিসেবে সে ছিল পরিপূর্ণ। তোর বাবার ভালোবাসা এতটা ছিল যে নিজেকে কোনো রাজ্যের রাণী ছাড়া অন্য কিছু মনে হত না। নিজের বউকে সেই রাণীর মতো করে রাখে। যার মনটা রাজার মতো। পরপারে যদি তোর বাবার সাথে আমার দেখা হয়। তবে আল্লাহকে বলব শুদ্ধ আর পবিত্র হয়ে যেন আমাদের দেখা হয়। তোর বাবা ভালোই ছিল। শেষ বয়সে এসে হঠাৎ করে কি যে হয়ে গেল। মানুষের নজরে আমি খুব একটা বিশ্বাস করতাম না। তবে আজ গভীর ভাবে বিশ্বাস করি। ভালো জিনিসে মানুষের নজর লাগে। তাই ভালো জিনিস গুলো লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে হয়। তোর বাবা তোকে আমার সামনে কটু বাক্য শোনাল। তবুও আমি তোর বাবাকে কিছু বলিনি। সে মাহতাবকে সন্দেহ করল। তবুও আমি তাকে কিছু বলিনি। সে আরিয়ানের বাবার সাথে জুয়া গেলে হেরে গেল। সে তোকে নিয়ে বাজি ধরেছিল। ফরিদ হারলে তোকে আরিয়ানের সাথে বিয়ে দিতে হবে। তোর সাথে মাহতাবের যোগাযোগ আছে। সেটা আমি জানতাম না। তবে তোর বাবা কিভাবে জানি খবর পায়। আমাকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে মাহতাবকে খু’ন করে বসে। এতকিছুর পরে-ও আমি তোর বাবাকে ক্ষমা করেছি জানিস। কারন আমি মানুষটাকে অত্যন্ত ভালোবেসে ফেলছি। নিজের ভালোবাসার মানুষ যতই বড় অন্যায় করুক না কেন, সেটা তার ভালোবাসার মানুষের কাছে অন্যায় মনে হবে না। আমিও চেয়েছি তোর বাবা বাঁচুক। কিন্তু তোর বাবা দিন দিন অমানুষ হয়ে উঠছিল। জুয়ার নেশা তোর বাবাকে ধংস করে দিয়েছিল। সে ভালোমন্দ বিচার করা ভুল গিয়েছিল। ধীরে ধীরে সে মাদকদ্রব্য সেবন করা শুরু করে দেয়। আমাকে বাজি ধরে একদিন রাতে জুয়া খেলেছিল। ফরিদ হেরে গেলে একজন পর পুরুষ এক রাত আমার সাথে থাকবে। এমন শর্ত দেয় বিপরীত পক্ষের মানুষটা। তোর বাবাও রাজি হয়ে যায়। তোর বাবা সেদিন হেরে যায়। রজনীর মধ্য প্রহরে তোর বাবা একটা শ্যাম পুরুষকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। আমি ভেবেছিলাম। তোর বাবার কোনো বন্ধু হবে হয়তো। পরে যখন কথা গুলো শুনলাম। আমার পায়ের তলা থেকে মাটি সরে গিয়েছিল। আমার সব ধৈর্যর বাঁধ ভেঙে মস্তিষ্ক টগবগ করে উঠেছিল। সেদিন আমি নিজের নিয়ন্ত্রণ ছিলাম না। তোর বাবার সাথে আসা মানুষটা তার কুৎসিত চাহনি নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছিল। ভয়ে আমার সমস্ত কায়া অবশ হয়ে গিয়েছিল। উপস্থিত বুদ্ধি কাজ করছিল না৷ হঠাৎ করে মনে পড়ে তোর বাবা তোকে অজ্ঞান করে আরিয়ানের সাথে বিয়ে দাওয়ার জন্য ঔষধ এনে রাখছিল। আমি সেটার ব্যবহার করি। তার জন্য আমাকে অনেক কাট কয়লা পোড়াতে হয়। আমাদের এলাকায় একটা পুকুর আছে না। সেখানে খুব একটা মানুষ আসে না। আমি সেখানে দু’জনকে নিয়ে যাই। রজনীর মধ্য প্রহর চলায় মানুষ খুব কম ছিল। রাতের আঁধারের সুযোগ নিয়ে দু’জনকেই ছয় পিস করি। জীবনে দ্বিতীয় বার তৃতীয় খু’ন করে প্রচুর শান্তি পেয়েছিলাম। আমার ইন্দ্রিয় খুব সজাগ ছিল। আমি অনুভব করলাম আমাকে খু’ন করতে কেউ দেখে ফেলছে। আমি টুকরো গুলো বস্তায় পুরে পানিতে ডুবিয়ে রেখেছিলাম। কচুরি পানা দিয়ে সেগুলো খুব সাবধানে আড়াল করে রাখি। পরে সময় সুযোগ পেলে সরিয়ে ফেলব। বাড়ি ফিরে সমস্ত মন মস্তিষ্ক শীতল হতে শুরু করল। বুঝলাম রাগে বশীভূত হয়ে কি করে ফেলেছি। রাগ মানুষকে ধংস করে দেয়। যখন বুঝলাম তখন অনেকটা দেরি হয়ে গিয়েছে। পরবর্তীতে মনে হয়েছে। যা হয়ে ভালো হয়েছে। যে সম্পর্কে সন্দেহ আর বিশ্বাস নড়বড়ে হয়ে যায়। সেই সম্পর্ক কোনোদিন আগের মতো জোড়া লাগে না। তোর বাবা আজ একজনকে আমার বিছানায় পাঠাতে চেয়েছে। কাল দশজনকে পাঠাতে চাইবে। যে পাপে জর্জরিত হয়ে গিয়েছে। তাকে কিভাবে ঠিক করতাম বল? আমার কথার অবাধ্য না মানুষটা আমার কথার অবাধ্য হয়েছে। আমার সাথে উচ্চস্বরে কথা না বলা মানুষটা কথায় কথায় আমাকে ধমকেছে। আমার ভাগ কাউকে দিবে না বলে ছলনা করে আমাকে বিয়ে করল। সেই মানুষটা পর পুরুষকে আমার বিছানাতে পাঠাতে চাইল। এটা তো আমি মেনে নিব না। একটা নারীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে তার সন্মান। যে নারীর সন্মানে আঘাত করার চেষ্টা করবে। তার মৃত্যু অনিবার্য। যে স্বামী তার স্ত্রীর সন্মান নষ্ট করতে চায়। আমি মনে করি তার বেঁচে থাকার অধিকার নেই। কথা গুলো একদমে বলে থামলো রাইমা বেগম। শীতল চাহনিতে মেহেভীনের দিকে চেয়ে আছে। কথা গুলো বলার সময় রাইমা বেগমের কণ্ঠনালি কাঁপেনি। আঁখিযুগলে এসে অশ্রুকণা জমা হয়নি। কিন্তু তার ভেতরটা যে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে। সেটা কি মেহেভীন দেখতে পেয়েছে। মেহেভীন অদ্ভুত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবেশ শীতল হয়ে উঠল। চারিদিকে পিনপতন নিরবতা বিরাজ করছে। এই মুহূর্তের নিস্তব্ধতা প্রতিটি মানুষের হৃদয় কাঁপিয়ে তুলছে।
চলবে…..
(পুরো গল্পটা ধৈর্য ধরে পড়ে শেষে এসে এতটা অধৈর্য হয়ে যাচ্ছেন কেন বলেন তো? আমি আগেও বলেছি এটা খালি রোমান্টিক গল্প না। গল্পটা একটু রাজনৈতিক, থ্রিলার আর রোমান্টিক করার চেষ্টা করেছি। কতটুকু উপস্থাপন করতে পেরেছি জানিনা। তবুও কয়েকজন বলছেন। মেহেভীন আর মুনতাসিমের বিয়ের পর দুই পর্ব দিয়ে গল্প শেষ করে দিলে ভালো হত। মেহেভীনের বাবার মৃত্যুর রহস্য, তার মায়ের কাহিনি, মুনতাসিমের সিক্রেট শত্রু কে এসব না প্রকাশ করেই গল্পটা শেষ করে দেই। তবে আপনারাই বলতেন এভাবে কেন গল্পটা শেষ করলাম। যারা রোমান্টিক গল্প পছন্দ করেন। তাদের এই পর্ব গুলো ভালো লাগবে না স্বাভাবিক। ভালো না লাগলে পড়বেন না। তবুও হুটহাট গল্প শেষ করার কথা বলবেন না। এমনিতেই গল্পটা শেষে দিকে চলে আসছে। রাইমা বেগমের কাহিনি দিয়েই আজকের পর্বটা শেষ হয়ে গেল। আশা রাখছি। রাইমা বেগমকে নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন থাকবে না। এবার মুনতাসিমের সিক্রেট শত্রুকে সামনে নিয়ে আসব। তারপর প্রণয়নের পরিনতি দেখিয়ে গল্প শেষ। এতটুকু দেখাতে যে কয় পর্ব হয় হবে। ধৈর্য ধরতে পারলে পড়বেন। না পারলে ইগনোর করার অনুরোধ রইল। সবাই রেসপন্স করবেন। শব্দসংখ্যা:২০৩২)