#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখনীতে_আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ১২
ধরনী জুড়ে অন্ধকার।শীতের প্রকোটে সবাই তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েছে।মিথিলা দেয়াল ঘড়ির দিকে একবার তাকালো সাড়ে দশটা পেড়িয়ে গেছে।দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে এসে বিছানায় শুয়ে পড়ল।এদিকে যে কারো মনে সে ঝড় তুলে রেখেছে তার কোনো হদিস নেই।ইয়াশ পায়চারি করে একবার মিথিলার রুমের সামনে যাচ্ছে আবার ঘুরে তার রুমে আসছে।নিম্নে পাঁচ-ছ বার এভাবে ঘুরা শেষ তার।মিথিলা রুমের দার হতে নিজের রুমের দিকে যাবে সামনে মিহুকে দেখে থেমে যায় ইয়াশ।মিহু ইয়াশকে পায়চারি করতে দেখে প্রশ্ন করল,,
“তুই এতরাতে এভাবে পায়চারি করছিস কেন?”
ইয়াশ মাথা চুলকে বলে,, “ওই এমনি একটু হাঁটছিলাম?”
মিহু এবার ভ্রু কুঁচকে বলে,, “তাই বলে এই রাতে এভাবে হাঁটছিস?”
“এখনি ঘরে যাচ্ছিলাম!তুই যা কোথায় যাচ্ছিলি।”
“হ্যাঁ যা ঘরে যা।আমি পানি নিতে আসছিলাম।”
“আচ্ছা!”
মিহু চলে যেতে ইয়াশ জোরে শ্বাস ফালায়।নিজের রুমে চলে যায়।দরজা,জানালা,লাইট অফ করে শুতে যায়।মিনিটখানিক যেতে উঠে পড়ে বিছানা থেকে।তার মন তো কিছু জানতে চাচ্ছে।এই প্রশ্নের উত্তর না জানলে মনে হয় তার রাতে আর ঘুম হচ্ছে না।
ইয়াশ উঠে রুমের দরজা খুলে আবার মিথিলা রুমের সামনে যায়।কিছুক্ষণ কিছু একটা ভেবে দরজায় টোকা দেয়।প্রথমবারে মিথিলা দরজা না খুললেও।পরেরবার টোকা দিতে মিথিলা বিরক্ত মুখে দরজা খুলে দেয়।ইয়াশকে এসময় দেখে বিরক্তি কেটে অবাক নয়নে তাকায় ।মিথিলা মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে তার আগে ইয়াশ ঘরে ঢুকে যায়।
“আকাশ তোর প্রিয় মানুষ হলো কবে?”
মিথিলা ঘুরে তাকাতে প্রশ্নের সম্মুখীন হয়।ইয়াশ বুকে হাত গুজে খানিকটা আগায় মিথিলার দিক উত্তরের আশায়।মিথিলা ইয়াশকে একবার পর্যবেক্ষণ করে মনে মনে শয়তানি হাসে।
“বেডা থুবরা খাইয়া পড়ছ তাইলে আমার প্রেমে।আহা কি যে শান্তি লাগতাছে।এবার শুধু তোমার মুখ থেকে বের করানোর পালা।ওহে আমার প্রেমিক পুরুষ,কবে তোমার মুখে মিষ্টি স্বরে শুনব-মিথু তোকে আমি অনেক ভালোবাসি।ইশশ!ভাবতেই তো মনটা নাচতেছে। এটা যেদিন ঘটবে সেদিন কি হবে?”
ইয়াশের বিশাল ধমকে মিথিলার ভাবনার ছেদ ঘটে।ইয়াশের দিকে তাকিয়ে মেকি রাগ দেখিয়ে বলে,,
“রাতবিরেতে অন্যের ঘরে এসে এভাবে চিল্লাছো কেন?আজব!”
“তোকে আমি প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দে?”
“মানে কি এত রাতে কিসব প্রশ্ন করতে আসছ?দিন কি চলে যাচ্ছিল নাকি?”
“তুই বুঝবিনা? বল আকাশ তোর প্রিয় মানুষ হলো কবে?”
মিথিলা গিয়ে বিছানার উপর বসে পড়ে।কিছুক্ষণ ইয়াশের দিকে তাকিয়ে থাকে।ইয়াশ মিথিলার দিকে তাকিয়ে ছিলো।ইয়াশ ভ্রু গুটাতে মিথিলা মিনমিন স্বরে বলে,,
“ছোটবেলা থেকেই তো আকাশ ভাইয়া আমার প্রিয়!”
“আর আমি?”
মিথিলা চোখ তুলে ইয়াশের দিকে তাকায়।ইয়াশ উত্তরের আশায় তাকিয়ে আছে।মিথিলা চোখ এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে কি বলবে ভাবে।বিছানা থেকে উঠে দাড়ায় মুচকি হেসে বলে,,
“তুমিও তো আমার প্রিয় ভাইয়া!”
ইয়াশ স্বস্তির শ্বাস ফেলে।ফের ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,,
“আমি কেমন প্রিয় আর আকাশ কেমন প্রিয়।মানে দুজন কি সমান সমান?!”
“নাহ তো!”
“তাহলে,,”
“আকাশ ভাইয়া আমার বেশি প্রিয় আর তুমি আকাশ ভাইয়ার থেকে একটু কম!”
“আর কাকে বেশি ভালোবাসিস?”
মিথিলা এবার মাথা নিচু করে ঠোঁট টিপে হাসল।কিছু বলতে যাবে তার আগে ইয়াশ ওকে থামিয়ে বলে ওঠে,,
“যা বলবি ভেবে চিন্তে বলবি?”
মিথিলা ইয়াশের কথায় মাথা নাড়ায়।কিছুক্ষণ ভেবে মুখ খুলে,, “দেখ,,,,,”
“দেখ আমি কিন্তু ভেবে বলতে বলছি তোকে?”
মিথিলা এবার বিরক্ত হয়।বিরক্তি নিয়ে বলে,,
“আরে ধুরর আমাকে তো আগে বলতে দিবে আমি কি বলতে চাচ্ছি?”
“আচ্ছা বল!”
মিথিলা ইয়াশের দিকে কিছুটা আগায়।মিথিলাকে ওর দিকে আসতে দেখে ইয়াশ ভ্রু গুটায়।মিথিলা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে ঠুস করে ইয়াশের গালে একটা চুমু খায়।কোনোদিক না তাকিয়ে বিছানায় শুয়ে কম্বলের নিচে ঢুকে যায়।ইয়াশ কিছুক্ষণ হতবিহ্বল হয়ে দাড়িয়ে থাকে।হাতটা গালে ছুইয়ে মিথিলার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,
“অসভ্য কোথাকার।বেয়াদব হচ্ছে দিনদিন!”
ইয়াশ বিরবির করতে করতে চলে যায়।ইয়াশ যেতে মিথিলা কম্বল থেকে মাথা উচু করে মুচকি হাসে।দরজা আটকানোর জন্য উঠে দাড়ায়।মুচকি মুচকি হেসে দরজাটা আটকাটে যাবে সামনে ইয়াশ এসে দাড়ায়।মিথিলা ভয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে যায়।চোখ বড় বড় করে বলে,
“তুমি!”
“ভালো তাহলে আমাকেই বাসিস তাইনা!”
ভ্রু নাচিয়ে কথাটা বলে ইয়াশ উল্টো হাটা ধরে।মিথিলা ভেঙিয়ে বলে,
“বয়ে গেছে আমার,তোমাকে ভালোবাসবো হাহ!তুমি ওই নীলাকে নিয়ে থাকো যত্তসব!”
কথাটা বলে মিথিলা ঠাস করে দরজা আটকিয়ে দেয়।বিছানায় গিয়ে কম্বল মুড়িয়ে শুয়ে পড়ে।
——————————————
সকালে ঘুম থেকে উঠতে সকলের ব্যস্ততা নজরে পড়ল মিথিলার।কাজের বুয়া সারা বাড়ি সকালে মুছে পরিষ্কার করে ফেলেছে।একদম ঝকঝক করছে।মিথিলা ড্রইংরুম উঁকিঝুঁকি মেরে দেখল কেউ আছে কি না!কেউ নেই দেখে ও মিহুর রুমের দিকে হাটা ধরল।মিহুর রুমে আসতে দেখল ইফা খাটের এককোণে বসে ঝিমুচ্ছে।মিথিলা গিয়ে ইফাকে ধাক্কা মারে।ইয়ফা পড়ে যেতে নিয়েও পড়ে না।চোখ খুলে মিথিলা কে দেখে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়।
“একেতো রুম ছাড়তে হয়েছে একজনের জন্য।এখন কি এখানেও শান্তি পাবোনা।”
সকাল সকাল ইফার এমন তিড়িক্ষ মেজাজ দেখে মিথিলা দুহাত দিয়ে ইফার মাথায় বাতাস করতে থাকে।কয়েকটা ফুল দিয়ে বলে,,
“কুল কুল বইন।কার জন্য তোর রুম ছেড়েছিস তোর জামাই আসছে নাকি?”
“জামাই না আমার শত্রু আসছে?বিরক্তিকর!”
“তোর শত্রু!”
ইফা কিছু না বলে ভেংচি কাটে।মিথিলা এবার মিহুর কাছে যায়। প্রশ্ন করে,,
“আপু কারা আসছে বলো তো?এতো সাজসজ্জা কিসের?”
“ছোট চাচ্চুরা আসছে?”
“ওহহ!,,,হ্যাঁ আকাশ ভাইয়ারা আসছে?কবে?কখন?”
“আরে আস্তে প্রশ্ন কর।আজ রাতের দিকে চলে আসবে।তাই বাড়িঘর পরিষ্কার করা হচ্ছে।”
মিথিলা ইফার দিকে তাকায়।বাকা হেসে বলে,,
“ইফা তুই তো এতদিন আকাশ ভাইয়ার রুমে ছিলি।তোকে আস্ত না গিললে হলো।আহা কতদিন পর আমার শান্তি ফিরছে বল।”
“হ্যাঁ তুমিতো শান্তি পাবাই। এখন অশান্তিতে থাকতে হবে আমাকে।ধুরর ভাল্লাগেনা!”
“এই ইফা তুই এখন কোথায় ঘুমাবিরে?”
“তোমার মাথার উপর যায়গা দিবে?”
মিথিলা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে,, “আমার মাথার উপরে কিভাবে ঘুমাবি,তবে আমার রুমের ফ্লোরে তোকে যায়গা দিতে পারি।”
“তোর যায়গা তুই রাখ শাঁকচুন্নি!”
“শাকচুন্নি বললি না আমার ফ্লোরেও তোর যায়গা হবে না।বেদ্দপ মহিলা।”
ইফা মিহুর দিকে তাকিয়ে রেগে বলে,,, “মিহু আপু তোমার এই খচ্চর বোনডারে যাইতে বলবা আমার চোখের সামনে থেকে?”
“মিহু আপু তুমিও বলে দাও।এত সক্কাল সক্কাল মেজাজ হাই হওয়া ভালো না হুহ!”
মিথিলা কথাটা বলে ভেংচি কেটে বেরিয়ে যায়।ইফা সেদিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
মিথিলা ড্রইংরুমে এসে রান্নাঘরে ঢুকে তিতলি হক রুকমা হক রান্না করছিল।তাদের রান্নাবান্না দেখে আবার নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়।অর্ধেক রাস্তা যেতে ইয়াশের সাথে দেখা।ইয়াশকে দেখতে মিথিলার মাথায় শয়তানি চাপে।ইয়াশের একদম পাশ কেটে যায়।যাওয়ার সময় স্লো ভেসে বলে,,
“প্রিয় মানুষটা আসছে তবে।আহা কতদিন পরে তার দেখা পাবো।”
ইয়াশ কথাটা শুনে দাড়িয়ে যায়।পিছন ঘুরে মিথিলার কাছে যায়।মিথিলার হাত ধরে নিজের কাছে আনে।শাসিতস্বরে বলে,,
“আরেকবার এই প্রিয় মানুষ,কতদিন পর দেখা এসব বলে দেখ আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না!”
“ভালোবাসো আমায়!”
মিথিলা কথাটা বলে ভ্রু নাচায়।ইয়াশ এবার মিথিলাকে ছেড়ে দিয়ে উল্টো ঘুরে হাটা দেয়।মিথিলা ইয়াশকে শুনিয়ে জোরেই বলে,,
“কতদিন আর এড়িয়ে চলবে?একদিন না একদিন তো ভালোবাসি বলতেই হবে ওই মুখে।আগে বললে কিন্তু তোমারই লাভ!”
চলবে,, ইন শা আল্লাহ🍁