#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখনীতে_আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ৫
ভোর ৫:৩০ টা।শীতের সকাল।ইয়াশ,মিথিলা পরিবারের সকলে স্টেশনে বসে আছে।৫:৩০ ট্রেন আসার কথা।সকলে বসে ট্রেনের জন্যই অপেক্ষা করছে।যাওয়ার কথা শুনে ইকবাল হোক কালকেই ট্রেনের টিকিট কেটে রেখেছিলেন।কিন্তু দুর্ভাগ্য বসত একেকজনের সিট একেক যায়গায় পড়েছে।আবার ২ টো সিট পায়নি।এটার জন্য রুকমা হক, তিতলি হক বকবক করেই যাচ্ছেন তখন থেকে।তাদের মতে,যাবেই যখন তখন আগে থেকে টিকিট কেটে রাখলে কি হতো।দুজনের বকবকানি মনে ইকবাল হক মুখ পানসে বানিয়ে রেখেছেন।দোষটা কি আদৌ তার সে এটার বুঝার চেষ্টা করছে।রুকমা হক যদি আগে যাওয়ার কথা বলত তাহলে তো সে আগেই টিকিট কেটে রাখত।মেয়ে মানুষ মাথার তাড় ছিরা। এটা ভেবে ইকবাল হক নিজের মনকে শান্তনা দেয়।
‹›
অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৫:৪৫ ট্রেন আসে।সবাই এগিয়ে যায় ট্রেনে ওঠার জন্য।গলির সামনে যেতেই মিথিলা মিহু দুজনে ধাক্কা খায়।মিহু মিথিলাকে আগলে ধরে দাড় করায়।মিথিলা একবার ধাক্কা দেওয়া লোকটাকে দেখে নিয়ে রেগে বলে,
“এভাবে কেউ ট্রেনে ওঠে?চোখ নেই নাকি আপনাদের মানুষজন দেখেন না?!”
মিথিলার কন্ঠ শুনে ইয়াশসহ বাকি সকলে পিছনে তাকায়।মিনহাজ হক দুই মেয়ের হাত ধরে বলে,
“মা এখানে রাগারাগি করো না!চলো আগে ট্রেনে ওঠো।ভুলবসত হয়তো লেগে গেছে।”
মিনহাজ হকের কথা শুনে মিথিলা আর কিছু বলে না।মিনহাজ হক দুই মেয়েকে ট্রেনে উঠিয়ে দেয়।একে একে সবাই ওঠার পর।মিনহাজ হক, ইকবাল হক,আর ইয়াশ উঠে পড়ে।ট্রেনে উঠে সবাই নিজেদের সিটে গিয়ে বসে পড়ে।ইয়াশ,ইকবাক হক, মিনহক দাড়ানো।খালি আছে একটা সিট।তিনজন তিনজনের দিকে তাকিয়ে একবার সিটের দিকে তাকায়।অদূরে বসে থাকা মিথিলা,মিহু,ইফা তাদের দেখে এগিয়ে আসে।মিহু মিহি কন্ঠে বলে,
“বাবা,চাচ্চু তোমরা যাও ওখানে গিয়ে বসো।আমরা দাড়িয়ে থাকতে পারব।”
“কিন্তু তোমরা,”
“বাবা আপু ঠিক বলেছে যাও তোমরা বসে পড়ো।আমরা নাহয় দাড়িয়ে থেকে যাব।ইফা তুইও যা বাবাদের সাথে।”
ইকবাল হক কিছু বলতে যাবেন তখন ইয়াশ বলে ওঠে,, “বাবা মিথিলা ঠিক বলেছে,তোমরা যাও বসে পড়ো!”
তারা তিনজন চলে যেতে মিহু মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলে,, “তুই বস!আমি আর ইয়াশ দাড়িয়ে যেতে পারব।”
মিথিলা জোরে জোরে দুপাশে মাথা ঘুরিয়ে বলে,
“তুমি আমার বড় আপু।আমি বসে যাব আর তুমি দাড়িয়ে?!না না তা কিভাবে হয় তুমি বরং বসে যাও আর আমি দাড়িয়ে।”
মিহু ভ্রুযুগল কুঁচকে বলে, “ইয়াশ ও তোর থেকে বড়!”
মিথিলা এবার ইয়াশের দিকে তাকিয়ে মিনমিন করে বলে,,”উনি তো ছেলে মানুষ!”
ইয়াশ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “ভাগ্যিস ছেলে,নাহলে মনে হয় এতক্ষণে সিট নিয়ে চুলোচুলি লেগে যেত!”
কথাটা বলে ইয়াশ সামনে ইফাদের কাছে যায়।মিথিলা একবার গাধার মতো ইয়াশের দিকে তাকিয়ে মিহু দিকে তাকায়।মিহু মিথিলাকে চোখ রাঙিয়ে বসে পড়ে সিটে।মিথিলার চোখ ঘুরিয়ে তাকাতে মিহুর পাশের বসা মহিলাটার দিকে চোখ পড়ে।কেমন অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে আছে।যেন আজব কোনো প্রাণী দেখছে।
‹›
মিথিলা নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।ট্রেন মাত্রই চলতে শুরু করেছে।মিথিলার এখন আফসোস হচ্ছে,কেন জানালার পাশে সিটটাতে বসল না।বরাবরই ট্রেন ভ্রমণ তার প্রিয়।কিন্তু এবার একটা প্রিয় জিনিসের জন্য আরেকটা প্রিয় জিনিসকে বলি দিতে হচ্ছে!
মিথিলা কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে ইয়াশ আসল।একবার মিথিলার দিকে তাকিয়ে চলে গেল ওখান থেকে।মিথিলা ইয়াশের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।ভাব হুহ্!
প্রায় একঘন্টা যেতে মিথিলার পা লেগে আসে।পাশে তাকিয়ে দেখে মিহু চোখ বন্ধ করে আছে।হয়ত ঘুমাচ্ছে!মিথিলা ঘুরে হাটা ধরে।সামনে এগিয়ে ট্রেনের দরজার সামনে চলে যায়।ইয়াশ একপাশে দাড়িয়ে ছিল।মিথিলা গিয়ে বিপরীত পাশে দাড়িয়ে পড়ে।পিঠ হেলান দিয়ে ইয়াশের দিকে তাকায়।মনে মনে আওড়াও,
“ইশশ!তুমি এত সুন্দর কেন ইয়াশ ভাই!একটু বেশি সুন্দর বলে বুঝি এত ভাব?আচ্ছা আমি যদি তোমার থেকেও সুন্দর হতাম তাহলে কি তুমি আমায় ভালোবাসতো?”
বেশ কিছুক্ষণ এভাবে তাকিয়ে থাকতেই মিথিলার মনে একটা প্রশ্ন উদয় হয়।সে ইয়াশকে করবে কি করবে না সেটা নিয়ে দ্বিধায় ভুগে।না বলা পর্যন্ত তো শান্তি পাবেনা তাই মুখ ফসকে বলেই ফেলে;
“ইয়াশ ভাই তুমি কি ক্রিম ইউস করো গো?আমিও মেখে একটু তোমার মতো সুন্দর হতাম?তাহলে তুমিও আমায় পাত্তা দিতে?!”
মিথিলা এসেছে ইয়াশ অনেক্ক্ষণ ধরে খেয়াল করেছে কিন্তু কিছু বলেনি।এবার মিথিলার প্রশ্ন শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ওর দিকে।মিথিলা তখনো একিভাবে তাকিয়ে আছে ইয়াশের দিকে।এবার ইয়াশ ধমকে উঠে।হঠাৎ ধমক শেনে চমকে ওঠে মিথিলা।ইয়াশ মিথিলার হাত ধরে দরজা থেকে একটু দুরে সরিয়ে আছে।ধমক দিয়েই বলে,
“মরার জন্য ওখানে গিয়েছিলি নাকি?আর মাথার তার কি সব ছিড়ছে?”
“সে তো কবেই ছিড়ে গেছে?যেদিন প্রথম তোমার প্রেমে পড়েছিলাম?সেদিনি আমার মাথার সব স্ক্রু ঢিলা হয়ে গেছে?”
ইয়াশ রাগি দেখিয়ে বলে, “ফাজলামো করতোছিস বেয়াদব! কালকের মার ভুলে গেছিস!”
“ভুলব কেন?আর মনে রাখলেও বা কি?আমি যদি মারের জন্য তোমার উপর অভিমান করেও থাকি;তুমি আমার সেই অভিমান না ভাঙাবে আর না বুঝবে?!তাইতো আবার ঘুরে ফিরে তোমার কাছেই আসি!”
ইয়াশ এবার দাত চেপে বলে, “আচ্ছা লজ্জা বলেও তো একটা জিনিস আছে।তোর মধ্যে মনে হয় লজ্জা ‘ল’ ও নেই তাইনা।”
মিথিলা এবার ক্যাবলামার্কা হাসি দিয়ে বলে, “একটু ভুল বলে ফেলেছ ভাইয়া,তোমার ক্ষেত্রে আমার লজ্জার ‘ল’ কেন ল এর মাত্রাও নাই!”
ইয়াশ আর কিছু বলে না।এর থেকে গরু ছাগলের সাথে কথা বলেও লাভ আছে ওর মনে হয়।তাই চুপ করে থাকল।মিথিলা ইয়াশকে চুপ থাকতে দেখে গোমড়া মুখ বানিয়ে ফেলে।দরজার সামনে গিয়ে পা ঝুলিয়ে বসে পড়ে।ইয়াশ একবার সেদিকে লক্ষ করে ধমকে টেনে মিথিলাকে সেখান থেকে নিয়ে আসে।মিথিলা এবারও অভিমান হয় খুব।নিজেও কথা বলবে না আবার ওর ইচ্ছা মতো থাকতেও দিবে না হুহ্!
————————————–
কয়েকঘন্টা যেতে মিথিলার কোমড় যেন লেগে আসে। কোথাও একটা বসতে পারলে মনে হয় শান্তি পেত।মিথিলার হাসফাস করা দেখে ইয়াশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় মিথিলার দিকে।চাপা স্বরে জিজ্ঞেস করে,
“এমন করছিস কেন?”
মিথিলা ইয়াশের দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে, “না কিছুনা?!”
“চুপচাপ দাড়াবি এখানে,আমি এখনি আসছি?”
কথাটা বলে ইয়াশ চলে যায়।মিথিলা যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেয়।যে কারণেই যাচ্ছে ওর ভালোর কারণে তো আর যাচ্ছে না।তাই ওখানেই দাড়িয়ে থাকে।বেচারির এখন আফসোস হচ্ছে কেন যে সিটে বসল না।এই রসকসহীন মানুষের সাথে থাকার চেয়ে সিটে বসে আরামে ঘুম দিয়ে গেলেও অন্তত শান্তি পেত ও!
বেশ কিছুক্ষণ পর ইয়াশ আসে হাতে একটা টুল নিয়ে।মিথিলার সামনে টুল টা রেখে বলে, “বস এখানে!”
মিথিলা চোখ বড়বড় করে বলে, “এটা কোথায় পেলে তুমি!”
“যেখানেই পাইনা কেন,তোকে বসতে বলছি বস?!”
মিথিলা ইয়াশকে একবার পর্যবেক্ষণ করে বলে, “আমি একা বসব তুমি বসবে না?তোমার ও তো পা লেগে গেছে?”
“আমাকে নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না।তোকে বসতে বলছি বস।আর টাকা আমার কাছে ধরেনি এত টাকা খরচ করব!”
টাকার কথাটা বুঝল না মিথিলা।অগ্যতা বসে পড়ল। এখন কথা বললে ধমক খেতে হবে এটা জানে সে।
.
আরো দু’ঘন্টা পর ট্রেন এনে নিদিষ্ট গন্তব্যে থামল।ভিতর থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে দেখে মিথিলাও উঠে বসল।
ধাক্কাধাক্কির থেকে ও আগে আগে নেমে পড়ে ট্রেন থেকে।মিথিলা নামতে ইয়াশ নেমে পড়ে।ইকবাল হক মিনহাজ হক উপর থেকে ইয়াশকে ব্যাগগুলো ধরিয়ে দিয়ে নামাতে সাহায্য করে।ইয়াশ ব্যাগগুলো এক সাইটে রেখে এসে,মিথিলাকে নিয়ে সেখানে গিয়ে দাড়ায়।সবাই নামতে ইয়াশ দুটো সিএনজি ভাড়া করে উঠে পড়ে।এবার আর মিথিলা ইয়াশের সাথে যায়না।মিথিলা,মিহু,ইফা আর মিনহাজ হোক এক গাড়িতে আর অন্য গাড়িতে বাকি চারজন।
‹›
আধঘন্টা পার হতেই গাড়ি এসে একটা বাড়ির সামনে থামে।বাড়িটা অর্ধ পাকা। সবাই গাড়ি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে ভিতরের দিকে হাটা শুরু করে।একটা মধ্যবয়স্ক পুরুষ এসে রুকমা হককে জড়িয়ে ধরে।রুকমা হক জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।ইয়াশের দুই মামা একজনকে মিথিলা চিনে কিন্তু একে চিনলো।ধরে নিলো এটা আরেকজন।একে একে সবার সাথে পরিচয় হতেই সবাই রুমের ভিতর যায়।মিথিলা, মিহু,ইয়াশ পিছনে ছিল।তখন কোথা থেকে একটা মেয়ে এসে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে।মিথিলা এটা দেখে চোখ বড় বড় করে সেদিকে তাকায়।এদিকে ইয়াশ মিথিলাকে একবার দেখে নিয়ে জড়িয়ে ধরা মেয়েটার দিকে তাকায়।
চলবে, ইন শা আল্লাহ 🍁
#তোকেই_ভালোবাসি
সকল পর্বের লিংক
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122116347122106938&id=61553208165829&mibextid=2JQ9oc