#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখিকা:#আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ১৮
গালে কারো শীতল হাতের ছোঁয়া পেয়ে মিথিলার ঘুম উড়ে যায়।ও পিটপিট করে চোখ তুলে তাকায়।সামনে কে আছে বোঝার চেষ্টা করে,সামনের ব্যক্তিটি চোখে পরিষ্কারভাবে ধরা দিতে সে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।অবাক কন্ঠে বলে,,
“তুমি!”
সামনের ব্যক্তিটি ভাবলেশহীন তাকিয়ে আছে ওর দিকে।মিথিলা ওর মুঠোফোনটা খুজে অন করে দেখে বারোটার বেশি বাজে।ভ্রু গুটিয়ে বলে,,
“এত রাতে এখানে কি করছো?আর আমার রুমের দরজা তো বন্ধ,কোথা দিয়ে এসেছো?”
ইয়াশ বেলকনির দরজার দিকে ইশারা করে বলে,, “ওদিক দিয়ে আসছি।”
মিথিলা একবার সেদিক তাকিয়ে চোখ ছোট ছোট করে বলে,, “কিন্তু আমিতো দরজা আটকিয়ে ছিলাম।”
“ওহহ,তাহলে হয়ত ভুতে খুলে দিয়েছিল তুই লাগানোর পর!কারণ ভুত জানতো আজকে আমি আসবো।”
মিথিলা দাত চেপে বলে,,”ফালতু কথা বাদ দেও!তুমি এখানে কেন এসেছো?”
“দেখতে এসেছি আমার ভবিষ্যৎ বউ বেঁচে আছে না মরে গেছে!”
“মানে?”
“মানে রাতে খাসনি কেনো?”
“এটা জানার জন্য তুমি এখানে এসেছো?”
“নাহ!”
“তাহলে?”
“তোকে দেখার জন্য?আর তুই খেলি কি খেলি না এতে আমার কিছু যায় আসেনা!”
মিথিলা মুখ ঘুরিয়ে উল্টোদিকে তাকায়।ইয়াশ ঠোট টিপে হাসে।কিছুক্ষণ মিথিলার দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে চলে যায়।
“ভাইয়া তুমি সত্যি আমাকে ভালোবাসো?”
কয়েক কদম যেতে পিছন থেকে মিথিলার বলা কথাটা শুনে থেমে যায় ইয়াশ।পিছন ঘুরে মিথিলার কাছে আসে।ওর দিকে খানিকটা ঝুঁকে।এক ভ্রু উঁচিয়ে বলে,,
“ভালোবাসি?হুহ্ আমি ভালোবাসিনা!তুই আমাকে ভালোবাসিস জন্য আমি তোকে ভালোবাসি।”
ইয়াশের কথা শুনে মিথিলা ভ্রু কুঁচকে ইয়াশের পানে তাকিয়ে থাকে।ইয়াশ মিথিলার মাথায় গাট্টা মেরে ওখান থেকে চলে যায়।মিথিলা ইয়াশের যাওয়ার পানে তাকিয়ে বিরবির করে,,
“সে ভালোবাসেনা, আবার আমি তাকে ভালোবাসি জন্য সে আমাকে ভালোবাসে।এ আবার কেমন ভালোবাসা?”
———————————————
সকালে কলেজ যাওয়ার সময় বাড়ি থেকে মিথিলা ইফা বের হতেই মিথিলার মুখ হা হয়ে যায়।ইফাও চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে সামনের দিকে।সামনে ইয়াশ বাইক থেকে নেমে দুজনের সামনে গিয়ে দাড়ায়।মিথিলার মুখটা বন্ধ করে বলে,,
“হাতি ঢুকে যাবে।”
ইফার মাথায় গাট্টা মেরে বলে,, “গরুর মতো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”
ইফা কয়েকবার চোখের পাতা ফেলে অবিশ্বাস্য সুরে বলে,,
“ভাই ছোট থেকে বড় হইছি একদিনও দেখিনি তুমি আমাদের স্কুলে বা কলেজে নিয়ে যাওয়ার জন্য দাড়িয়েছো।সবসময় তুমি আগে চলে যেতে।আবার মা আমাকে আর মিথুকে স্কুলে দিয়ে আসতে বললে কত বাহানা করতে। কোনোদিন কোথাও ঘুরতেও নিয়ে যাওনি।আর সেই তুমি আজকে আমাদের জন্য ওয়েট করছো।আমাদের কলেজ ছেড়ে দিবে বলে।আমার ওতি আনন্দের চিক্কুর দিতে মন যাইতেছে ভাইয়া।”
এতটুকু বলে নাক টেনে কান্নার অভিনয় করে।আবার বলতে শুরু করে,,
“জানো আদৌ আমি ভাবতাম না আমার একটা ভাই আছে।তবে আজকে আমার তোমারে ধইরা চিক্কুর পাইরা কানতে মন চাইতেছে।তুমি আমাদের এতো ভালোবাসো ভাইয়া।”
ইফা থামতে ইয়াশ বলে,, “তোর নাটক শেষ হলে ওই পিছনে আকাশ আছে ওর সাথে চলে আসিস যা।”
ইয়াশের কথা শুনে ইফা বাম দিকে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায়।কিছুটা দুরে আকাশ বাইকের সাথে হেলান দিয়ে ফোন দেখছিল।ইফা ভ্রু কুঁচকে সেদিকে তাকিয়ে বলে,,,
“আমি এর সাথে যাবোনা।তার থেকে আমি একাই চলে যাবো তাও ভালো।”
“সেটা তোর ব্যাপার!মিথিলা তুই আমার সাথে আয়।”
ইফা চোয়াল ঝুলিয়ে বলে,, “তুমি কি আমার ভাই নাকি এই শাঁকচুন্নির ভাই?”
“অবশ্যই আমি তোর ভাই।আমি কেন মিথিলার ভাই হতে যাবো?আমি তো মিথিলার জামাই!”
ইফার চোয়াল যেন এবার মাটি ছুলো।চরম অবাক হয়ে চেচিয়ে বলে উঠল,, “কিহহ?এই শাঁকচুন্নি তোমার বউ?কবে বিয়ে করলে তোমরা?আর এই শাকচুন্নিকে কেন বিয়ে করেছো?আল্লাহ কি সর্বনাশ করছো!”
মিথিলা এতক্ষণ চুপচাপ এদের নাটক দেখে গেলেও এবার চুপ থাকতে পারলো না।দাতে দাত চেপে ইফার দিকে তাকিয়ে বললো,,
“ওই চুন্নি তুই আমাকে বারবার কেন শাঁকচুন্নি বলছিস?আর তোর ভাইকে আমি কেন বিয়ে করতে যাবো।দেশে কি ছেলের অভাব?”
ইফা ভাব নিয়ে বলে,, “দেশে ছেলের অভাব পড়বে কেন?আমার ভাই কত হ্যান্ডসাম প্রেমে পড়তেই পাড়িস।তবে তোর মতো শাঁকচুন্নির সাথে আমি আমার ভাইয়ের বিয়ে দিবো না।ভাইয়া তুমি অফিস যাবে না যাও।”
“আমারও ঠেকা নাই তোর ভাইকে বিয়ে করার।যত্তসব।”
দুজনের ঝগড়ার মাঝে আকাশ ওদের সামনে এসে দাড়ায়।মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলে,, “কি হয়েছে মিথু?”
“কিছুনা ভাইয়া?আমার কলেজের দেরি হয়ে যাচ্ছে গেলাম আমি।”
এদিকে ইয়াশ ইফার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেনো ওকে দুইটা চটকানি দিতে পারলে শান্তি লাগতো!ভাইয়ের প্রেমে কিভাবে বাধা দিচ্ছে বেয়াদব মেয়ে!ইয়াশ আকাশের দিকে তাকিয়ে কিছু ইশারা করতে আকাশ ইফার হাত ধরে ওখান থেকে নিয়ে আসে।
“আরে আপনি আমাকে এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কেনো আজব?হাত ছাড়ুন।”
আকাশ বাইকের কাছে নিয়ে গিয়ে ইফার হাত ছেড়ে দেয়।ইফার হাত ছাড়তে ও রাগী কন্ঠে বলে,, “সমস্যা কি আপনার?রাস্তাঘাটে এভাবে একটা মেয়ের হাত ধরে টানাটানি করছেন?”
আকাশ বাইকে উঠে ইফার দিকে তাকিয়ে বলে,, “ওঠ!”
“যাবো না আমি আপনার সাথে।”
আকাশ মৃদুস্বরে ধমকে বলে,, “তোকে উঠতে বলছি ওঠ।বেশি কথা বললে খবর আছে!”
ইফা আকাশের কথা কানে না তুলে সামনে দিকে হাটা দেয়।আকাশ বাইক থেকে নেমে ইফার সামনে গিয়ে দাড়ায়।চাপা কন্ঠে বলে,,
“উঠবি না বাইকে?”
“না উঠবো না? কি করবেন আপনি।”
“কি করবো? আচ্ছা তুই যা!”
ইফা সামনে হাটতে থাকে।কিছুদুর যেতে থেমে যায়।আকাশ আর আসতেছে না।ইফা পিছনে তাকিয়ে আকাশকে খুজতে খুজতে হাটতে থাকে।পাশে থেকে কারো শিষ বাজানোর শব্দে পাশে ঘুরে তাকায়।আকাশকে দেখে চোখ ছোট ছোট করে বলে,,, “আপনি এখানে কখন আসলেন?”
“পিছনে কাকে খুজছিলি?”
“কাউকেই না।আপনি আমার পিছন পিছন কেন আসছেন।”
“তোর পাশাপাশি যাচ্ছি আমি।পিছন পিছন কখন আসলাম?”
“দেখুন?”
“কি দেখবো?”
“বিরক্তিকর!”
“জানি!”
ইফা চুপ হয়ে যায়।এর সাথে কথা বলার থেকে চুপ থাকা হাজারগুণ শান্তির।কয়েক মিনিট অতিক্রান্ত হতে আকাশ গুণগুণ করে বলে,,
“এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলোতো?”
ইফা থেমে যায়।ইফা থামতে আকাশও থেমে যায়।কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইফা কোমড়ে হাত দিয়ে আকাশের দিকে ঘুরে তাকায়।দাত চেপে বলে,,
“সমস্যা কি আপনার?এভাবে আমার পিছনে পড়েছেন কেন?”
“দেখ সকাল থেকে আমি তোর পাশাপাশি আছি বারবার পিছনের কথা বলছিস কেন?”
“ভাইয়া।”
“মিথুও কিন্তু ইয়াশ ভাইয়াকে ভাইয়া বলে?”
“তো?”
“ওদের কিন্তু এখন প্রেম হয়েছে?”
“তো?”
“তো তো করছিস কেন? আচ্ছা যাই হোক আজকের মতো এতটুকু থাক।তুই একা চলে যেতে পারবি?”
“না আমাকে কোলে করে নিয়ে যেতে হবে নিন?”
আকাশ বাকা হেসে বলে,, “আচ্ছা এদিক আয় নিচ্ছি!”
“ভাইয়া আপনি যদি এখন না যান খুব খারাপ হয়ে যাবে বলছি?”
আকাশ এবার হেসে দেয়।ইফার গাল টেনে দিয়ে বলে,, “আচ্ছা বায়!”
আকাশ চলে যেতে।ইফা সামনে যেতে যেতে বিরবির করে “অসহ্যকর”।
————————————–
“মিথিলা তোকে কিন্তু বলছি বাইকে উঠতে?রাগ উঠাস না?”
“আমি উঠবো না?আর তুমি এভাবে আমার সাথে আসতেছো কেন? তোমার তো কাজ আছে? ”
“তুই আমাকে ভালোবাসিস তাই তোর সাথে আসতেছি!”
মিথিলা হাটা বন্ধ করে থামে।ঘাড় ঘুরিয়ে ইয়াশের দিকে তাকায়।মৃদু হেসে বলে,,
“আমি তো ভালোবাসতে জানিনা ভাইয়া।তুমি তো বলো তোমার উপর থেকে আমার মন উঠে গেছে।আমি এখন আকাশ ভাইয়াকে ভালোবাসি।দেখো এসব কথা বাদ দেও।তুমি বলছ আমি তোমাকে ভালোবাসি।হ্যাঁ আমি তোমাকে ভালোবাসি।সত্যি ভালোবাসি।কিন্তু তোমার মতে আমি আজকে তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু দুদিন পর হয়ত অন্যকাউকে ভালোবাসব।তাই যাকে নিয়ে তোমার মনে সন্দেহ আছে তাকে কেন ভালোবাসবে বলো?”
মিথিলা কথাটা বলে হালকা হেসে সামনে হাটা ধরে।ইয়াশ মিথিলার যাওয়ার পানে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
চলবে,, ইন শা আল্লাহ 🍁