#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৪২
______________
কাঠের দরজায় ক্যাচ করে শব্দ হওয়াই চমকে উঠলো সাজিদ খন্দকার। এই নিকষ কালো অন্ধকার রজনীতে চারপাশ টা কেমন ভুতুড়ে ভুতুড়ে ঠেকছে। পুরো ঘর অন্ধকারাচ্ছন্ন। শরীরে তার বিন্দু পরিমান শক্তি অবশিষ্ট নেই, মোটা কাঠের চেয়ারে হাত পা শক্ত করে বাঁধা আজ দুদিন। দুদিন সূর্যের আলো শরীরে পরেনি তার। খাবারের অভাবে শরীর টা কেমন নেতিয়ে গেছে তার। বলিষ্ঠ দেহে যেন মরুভুমির পানি শূন্যতা দেখা দিয়েছে। চোখ গুলো ঘোলাটে ঘোলাটে লাগছে।
মাঝ রাত হওয়াই আচমকা দরজার শব্দ বিকট শোনা গেলো। একটা মোমবাতি হাতে প্রবেশ করছে কেউ। ঘোলাটে চোখে সেদিকেই তাকিয়ে আছে সাজিদ। কাছাকাছি আসতেই একটা নারী অবয়ব দেখে বুঝতে পারলো এটা আরুহী ছাড়া কেউ না। তবে আরুহীর চেহারা তার কাছে ঘোলাটে।
সমস্ত শরীর ব্যথায় জ্বলে যাচ্ছে তার। দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ আদর যত্ন করেই মেহমান দারী করেছে আরুহীর লোকেরা। সাজিদের এমন অবস্থা দেখে বাঁকা হাসলো আরুহী। ঘাড় কাত করে এক পলক আপাদমস্তক দেখে নিলো সাজিদের।
খানিক দুরে মোমবাতি টা রেখে সাজিদের সামনে রাখা চেয়ারে পা তুলে বসলো সে,
সাজিদ ধীরে ধীরে মাথা তুলে আরুহীকে দেখার চেষ্টা চালালো কিন্তু সব কিছু ই যেন তার কাছে ঘোলাটে আর অস্পষ্ট। দেখতে পেলো না আরুহী কে।
” আ””’আরুহী ”
আরুহী হাসলো,
” বলুন মিস্টার খন্দকার! ”
কথা বলার অবস্থায় নেই সে তবুও চেষ্টা করে বলল,
” আমাকে যেতে দাও আরুহী! ”
আরুহী বাঁকা হেসে সামনের দিকে খানিকটা ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলল,
” যেতে কি ভাবে দেই বলুন তো! ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়েদের যখন কষ্ট দিতেন তখন তারাও কাতর কন্ঠে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলতো কিন্তু শুনেছেন আপনি? শুনেননি! তাই আজ আমি আরুহীও শুনবো না ”
নেতিয়ে যাওয়া কন্ঠে বলে উঠলো,
” মুক্তি দাও আমায় ”
আরুহী কিছু একটা ভেবে বলল,
” ওকে, মুক্তি দিবো আপনাকে, চিরজীবনের জন্য মুক্তি দিবো শুধু আমার একটা প্রশ্নের উত্তর সঠিক দিলে ”
আরুহীর কথায় সাজিদ অবাক দৃষ্টিতে আরুহীর দিকে তাকালো,
” কি’ প্রশ্ন? ”
” আমি জানি আসল মাস্টার মাইন্ড আপনি নন, আসল মাস্টার মাইন্ড কে সেটা স্বীকারুক্তি দিয়ে দেন”
সাজিদ খন্দকার ভয়ে গলার খানিকটা কেঁপে কেঁপে উঠে,
খুব কষ্ট করে বলল,
” তাকে আমি চিনি না ”
আরুহীর চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো,
” আপনি জানেন মিস্টার সাজিদ খন্দকার! আপনি খুব ভালো করে ই জানেন লোকটা কে! ”
সাজিদ খন্দকার বারবার মাথা ডানে বামে নাড়তে নাড়তে বিরবির করে বলল,
” আমি সত্যি ই জানি না সে কে! ”
আরুহী ফুঁসে উঠে টেবিলে থাবা দিয়ে সাজিদ খন্দকার বসে থাকা টেবিলের উপর দুই হাত রেখে খানিকটা ঝুঁকে হিসহিসিয়ে বলল,
” আপনি বলবেন কি না বলবেন না! ইয়েস অর নোওও?”
সাজিদ খন্দকার দুর্বল চিত্তে কেপে উঠলো, সাহস সঞ্চয় করে বলল,
” বিশ্বাস করো আরুহী আমি সত্যি ই জানি না উনি কে! কোথায় থাকে! শুধু কথা হতো উনার সাথে ”
আরুহী ঘাড় কাত করে সাজিদ খন্দকার এর দিকে তাকালো, বর্তমানে আরুহী কে দেখে সাইকোদের মতো লাগছে। ঘাড় কাত করে বাঁকা হাসি হাসলো আরুহী।
” নাম্বার নেই? ”
আরুহীর ঠান্ডা গলার স্বর শুনতে পেয়ে শুকনো ঢুক গিলল সাজিদ খন্দকার।
” সবসময় আলাদা আলাদা নাম্বার থেকে কল আসতো কথা বলে রেখে দেওয়ার পর সাথে সাথে কল ব্যাক করলেই নাম্বার বন্ধ বলতো। আমি কখনোই সামনা সামনি দেখি নি শুধু কন্ঠ শুনতে পেয়েছি।
আরুহী দুহাতে নিজের ঘাড় বাঁকা করে সাজিদ খন্দকার এর দিকে তাকালো,
মনে হচ্ছে না সে মিথ্যা বলছে। তবে প্রাপ্য শাস্তি তো তার পেতেই হবে।
আরুহী পুনরায় টেবিলের কাছে গেলো, ফাস্ট এইড বক্স রাখা, তার থেকে হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে ধা*রালো ছুড়ি, কাঁচি আরোও কিছু সরঞ্জাম হাতে নিয়ে বাঁকা হাসলো। আজ পর্যন্ত কোন খু*ন সে নিজের হাতে করে নি তবে আজ তা পূর্ণ করবে তাই তো সাথে কাউকেই আনে নি। কিছু একটা ভেবে রেখে দিলো সব।
আরুহীর চোখ দুটো ছোট ছোট করে এক বোতল পানি হাতে নিয়ে সাজিদের দিকে এগুলো,
মুখে পানির স্পর্শ পেতেই চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে নিলো সাজিদ খন্দকার। চোখ টা কেমন জ্বালা করছে তার। শরীরটাও ভিষণ জ্বলছে, ধীরে ধীরে জ্বলন ফোঁস কায় রুপ নিচ্ছে। সাজিদ চিৎকার করতে পারছে না, গলা দিয়ে স্বর আঁটকে আসছে। গলা কা*টা মুরগির মতো ছটফট করছে সে কিন্তু তা দেখে আরুহীর কোন ভাবাবেগ হলো না বাঁকা হেসে তার এই কাতরানোর দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলো, এই মূহুর্তে আরুহীকে কোন সাইকো সিরিয়াল কিলার থেকে কম কিছু মনে হচ্ছে না। সাজিদ আবছা দৃষ্টিতে তাকালো আরুহীর দিকে। একটা মেয়ে কতটা নিষ্ঠুর হলে এতো ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে হাসতে পারে সাজিদের জানা নেই।
দেখতে দেখতে সাজিদের সমস্ত শরীর কালো কালো ফোঁসকায় পূর্ণ হয়ে গেলো, কেমন ভয়ঙ্কর দৃশ্য তা! গায়ের শুভ্র রঙ টা কালচে হয়ে বিদঘুটে দেখাচ্ছে।
আরুহী মুচকি হেসে সাজিদের সামনে বসে পড়লো,
সাজিদ খন্দকার কিছু বিরবির করতে দেখে ভ্রু কুঁচকে সামনে ঝুকলো সে,
” মে*রে ফেলো আমায়, এভাবে বাঁচা যায় না, আমি বাঁচতে চাই না, মে*রে ফেলো আমায়, মে’রে ফেলো ”
আরুহী হু হা করে হাসতে লাগলো যেন সাজিদ কোন জোক্স শুনিয়েছে। এমন হাড় হিম করা পরিবেশে আরুহীর হাসি টা কেমন অদ্ভুতুরে লাগলো, শরীরে সমস্ত লোম কুপ কাটা দিয়ে উঠলো সাজিদের। তার কাছে মনে হচ্ছে না আরুহী কোন সুস্থ মেয়ে! কোন সুস্থ মেয়ে কখনো এমন ভয়ঙ্কর কাজ তো দুর এর কথা শুনলেও ভয়ে হাড় কাঁপবে।
” তুই কি ভেবেছিস? মে*রে ফেলব আমি তোকে? আরে গবেট আমি কি তোর মতো বোকা নাকি! ম*রলে তো সব শেষ ই, তোকে তো আমি মারব না। যে মরে যায় সে তো বেঁচে যায় আর যে বেঁচে থেকেও মরে যায় সে তো সেকেন্ডে সেকেন্ডে ম*রে ”
সাজিদ মাথা নিচু করে খিঁচুনি দিয়ে আছে। সারা অঙ্গ তার ঝলসে যাচ্ছে। কি মিশিয়েছে আরুহী সেই পানি তে? এসিড? নাকি অন্য কিছু!
আরুহী উঠে দাঁড়ালো, হাত থেকে হ্যান্ড গ্লাভস খুলে ছুড়ে ফেলল মেঝেতে।
” ভেবেছিলাম তো কে*টে কে*টে এসিড লাগাবো কিন্তু ডিসিশন চেঞ্জ। যাস্ট ট্রায়াল দিলাম, তোর বসকে পেলে দুটোকে একসাথে জে*ন্ত কবর দিবো, মাইন্ড ইট ”
বলেই পকেটে হাত দিয়ে শিশ বাজাতে বাজাতে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
_____________
” আসবো নাকি আরু? ”
আরুহী মাত্র ই ফ্রেস হয়ে বিছানায় বসলো, বেশ ক্লান্ত লাগছে শরীর টা। কয়েকদিন যাবত শরীর টা একটু বেশি ই খারাপ। ডাক্তারের এপোয়েন্টম্যান্ট এবার না নিলেই নয়।
আরুহী দরজার দিকে তাকালো,
” আররে মিরাজ খান যে, এতোদিন পর বোনের কথা মনে পড়লো তাহলে! নাকি ভুলেই গিয়েছিলে যে তোমার একটা বোন আছে ”
মিরাজ আলতো হাসলো, আরুহী সবার সাথে রুড ভাবে কথা বললেও তার সাথে বাচ্চাদের মতোই কথা বলে।
মিরাজ রুমে ঢুকে বিছানায় বসতে বসতে বলল,
” আমি ভুলি নাই রে! তুই ই ভুলে গেছিস আমাকে ”
আরুহী চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল,
” কিভাবে?”
” নিজের কাজ নিয়ে এতোই বিজি যে আমাকে মনে করার সময় ই পাচ্ছিস না ”
” এই ঠাডা পড়া মিথ্যা কথা কেমনে কইলা ভাই! ”
মিরাজ খিলখিল করে হেসে উঠলো,
আরুহী বিছানায় বসলো,
মিরাজ আরুহীর মাথায় টোকা দিয়ে বলল,
” শুনলাম ফোর্সে জয়েন করলি ”
আরুহী আড়মোড়া ভেঙে বলল,
” হুমম ঠিক ই শুনেছো”
” আবার নাকি সিক্রেট ফোর্সের টিম লিডার! বাহ্ বেশ দায়িত্ব ”
আরুহী কিছুক্ষণ মিরাজের দিকে তাকিয়ে বলল,
” আর বলো না তো ভাইয়া, সবই ঝামেলা, দায়িত্ব দিলো কিন্তু একটা ক্লু ও পাচ্ছি না যে আগাবো,
কিছুক্ষন চুপ থেকে আনমনে বলে উঠলো,
” এবার মনে হয় বিশাল ক্লু পেতে যাচ্ছি ”
চলবে…
[ আজকের পর্বটা কেমন লাগলো গঠন গত মন্তব্য করবেন কিন্তু ]