#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখিকা:#আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ১৪
“এই মেয়ে দেখে চলতে পারোনা। আর এত সকালে একটা ছেলের রুমে কি করছো।নির্লজ্জ!”
নির্লজ্জ কথাটা শুনে ইফার মেজাজ গরম হয়ে যায়।ও কোমড়ে হাত দিয়ে মেজাজ নিয়ে বলে,,
“শুনুন এটা না আমার রুম।নির্লজ্জ তো আপনাকে বলা উচিত।কিভাবে একটা মেয়ের রুম তার থেকে কেড়ে নিছেন।”
আকাশ এবার উঠে ইফার সামনাসামনি দাড়ায়।ইফার দিকে খানিকটা ঝুঁকে বলে,,
“ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন,রুমটা কিন্তু আমার।ছোটবেলা থেকে রুমটায় আমি বড় হয়েছি।নেহাৎ আমি চলে গিয়েছিলাম তাই বলে বাড়ির লোকজন তোমাকে রুমটা দান করেছে।”
ইফা আকাশকে ধাক্কা দিয়ে বলে,, “এই সরুন।রুমের কোথাও কি আপনার নাম লিখা আছে নাকি।এতদিন এ রুমে আমি থেকেছি মানে এটা আমার রুম।”
আকাশ বুকে হাত গুজে ইফার দিকে ভ্রু উঁচিয়ে তাকায়।মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে,,
“হুম বুঝলাম!”
“কি?”
“ছোটবেলার মতো ঝগড়ুটে শাঁকচুন্নি রয়ে গেছিস এখনো!”
ইফা এবার রেগে বলে,,”দেখুন”
“কি দেখব?কিছু দেখাচ্ছিস নাকি?”
ইফা আঙুল উঠিয়েও কিছু বলেনা।হাত নামিয়ে বিরবির করে,, “অসভ্য!”
আকাশ কথাটা শুনলেও কিছু বলেনা।কথা ঘুরাতে বলে,,
“মিথু কোথায় রে? আশার পর থেকে একবারও দেখলাম না?”
ইফা অনিচ্ছা সত্বেও মুখ খুলে,, “আপনার মিথু কোথায় সেটা আমি কিভাবে জানবো?”
আকাশ ইফার সামনে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে,, “আমার মিথু!”
ইফা কিছু না বলে মুখ ভেঙায়।মুখ ঝামটি মেরে ঘরের বাইরের দিকে হাটা দেয়।যাওয়ার সময় রাগীস্বরে বলতে বলতে যায়,,
“ঘরে একটা গন্ডারকে যায়গা দিয়েছি।ঘরের এদিক ওদিক কতকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে।ইশশ!আমার পা টাই শেষ হয়ে গেছে।”
ইফা বকবক করে চলে যায়।ইয়াশ,মিথিলা ইফার থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আকাশের দিকে তাকায়।তারা দুজন মূলত এতক্ষণ দুজনের ঝগড়া দেখছিল।এবার মিথিলা গিয়ে আকাশকে জড়িয়ে ধর।খুশি হয়ে বলে,,
“এতদিন পরে আমাদের কথা মনে পড়েছে?”
আকাশ মন খারাপের ভান করে বলে,, “তোর তো দেখি তাও মনে নেই?কালকে রাতে এসেছি এতক্ষণে কেউ খবর নিতে এসেছে?!”
“কালকে রাতে মাথা ব্যথা ছিল তাই দেখা করতে পারিনি।সরি গো!”
আকাশ চিন্তিত স্বরে বলে,, “এখন ঠিক আছিস?”
“একদম!”
এদিকে ইয়াশ দুজনের কথোপকথন আর হাসি দেখে রাগী দৃষ্টিতে তাকায় দুজনের দিকে।মিথিলা ইয়াশের দিকে তাকিয়েছিল ওকে রাগানোর জন্য কিছু বলতে।কিন্তু ইয়াশের দৃষ্টি দেখে নিজেই ঢোক দিকে।ইয়াশ মিথিলার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন এখন ওকে একা পেলে জ্যান্ত পুতে ফেলে দিতো।মিথিলা আকাশের থেকে সরে এসে ইয়াশের দিকে যেতে নিবে।মিথিলাকে আসতে দেখে ইয়াশ ধুপধাপ পা ফেলে ওখান থেকে চলে যায়।ইয়াশ যেতে মিথিলা স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে।মিথিলা আকাশের দিকে ঠোঁট উল্টে তাকাতে আকাশ জোরে হেসে দেয়।
হাসতে হাসতে বলে,, “এদিকে আয়!”
মিথিলা আকাশের কাছে যায়।আকাশ মিথিলার গাল টেনে দিয়ে বলে,, “বড় হয়ে গেছিস অনেক তাইনা?”
“ধুরর ছাড়োতো ভাল্লাগেনা।এর কয়েকদিন ধরে কি হয়েছে কে জানে?”
“আরে বুঝিস না জেলাস ফিল করছে।কিন্তু এটা বুঝলাম তোকে আমার সাথে দেখে জেলাস ফিল করার কি হলো?”
মিথিলা এবার অন্যদিকে তাকিয়ে জ্বিভ কাটে।আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,,
“ভাইয়া!”
“হ্যাঁ!”
“শোনো তুমি আমার সাথে কয়েকদিন প্রেমের অভিনয় করবা।মানে যতদিন না ওই বেডা আমারে ভালোবাসি না বলে?”
আকাশ কিছুক্ষণ ভেবে বলে,, “কিন্তু,,,”
“ভাইয়া কিন্তু টিন্তু বাদ দেও।করতে হবে তোমাকে।”
“আচ্ছা তাহলে আমার লাভ?মানে আমি তো কিছু প্রাপ্য তোর থেকে তাহলে!”
“সময় হলে দিয়ে দিব।ঘুষখোর!”
ঘুষখোর কথাটা শুনে আকাশ হেসে দেয়।মিথিলা চোখ ছোট ছোট করে বলে,, “আচ্ছা থাকো গেলাম।”
মিথিলা যেতে আকাশ মুচকি হেসে দরজা আটকিয়ে দেয়।ভিতরে এসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।নিজের পোশাক বের করে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
———————————————-
সবাই সকালের নাস্তা করতে বসেছে।ইফা মিথিলা মিহু তিনজন একসাথে বসেছে।তাদের সামনে চেয়ার গুলোতে আকাশ,ইয়াশ আর আসিফ বসেছে।খাওয়ার এক পর্যায়ে মিথিলা ইফাকে খোচা মারে।ইফা প্রথমবার কিছু বলে না।পরেরবার খোঁচা মারতে বিরক্ত হয়ে বলে,,
“খাওয়ার সময় এমন খোঁচাখুঁচি শুরু করছ কেন?”
মিথিলা এবার ইফার কানে কানে গিয়ে বলে,, “আচ্ছা এইটা সেই ছোট্ট পটলু না।আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন রে?”
ইফা মিথিলার কথা শুনে আসিফের দিকে তাকায়।আসলেই আসিফ মিথিলার দিকে তাকিয়ে ছিল।ইফা মিথিলার দিকে তাকিয়ে বলে,,
“তোমার এই পেত্নীর মতো চেহারা দেখে তোমার দিকে তাকিয়ে আছে।এমন ভয়ংকর চেহারা আগে কোনোদিন দেখেনি কিনা!”
“তোর সাথে কথা বলাই লস!যা এখান থেকে?”
ইফা কিছু না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।মিথিলা আসিফের দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে। চোখ টেরু করে।আসিফ কয়েকবার চোখ ঝামটা দিয়ে মিথিলার দিকে তাকায়।কিন্তু তখন মিথিলা খাচ্ছে।আসিফ মিথিলার দিকে আবার তাকাতে মিথিলা আবার চোখ টেরু করে।
আসিফ এবার গ্লাসে পানি ভরে খেয়ে ভাত খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।ভুলেও আর মিথিলার দিকে তাকায় না।
—
খাওয়া-দাওয়া শেষ হতে যে যার মতো রুমে চলে যায়।মিথিলা হাত ধুয়ে উঠতে আসিফ গিয়ে ওর সামনে কোমড়ের হাত দিয়ে দাড়ায়।চোখ ছোট ছোট করে বলে,,
“এই মিথেন গ্যাস তুমি তখন আমার দিকে ওভাবে ভুতের মতো তাকাচ্ছিলে কেন?”
“তুই আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিলি কেন পটলু?”
“আমিতো দেখছিলাম তুমি মিথেন গ্যাস নাকি?”
মিথিলা ভ্রু কুঁচকে বলে,, “এই মিথেন গ্যাস কি?”
আসিফ এবার পালটা প্রশ্ন করে,, “পটলু কি?”
“তোকে এটা ছোট বেলায় ডাকতাম আমি। পটোলের মতো ছিলি তো তাই।”
“তোমার নামের সাথেও মিথেন গ্যাস যায় তাই আমিও তোমায় মিথেন গ্যাস ডাকি।হাহ!আচ্ছা বাদ দেও আমি আবার খাওয়ার পর বেশি কথা বলতে পারিনা।পরে তোমার সাথে গল্প করব এখন যাই।একটু রেস্ট নেই!”
কথাগুলো বলে আসিফ চলে যায়।মিথিলা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে বলে,, “বাঁচাল!”
——————————————–
ইয়াশ প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে ঘরে পায়চারি করছে রুমের দরজা খুলে।মিথিলা যাওয়ার সময় ওকে কয়েকটা কথা শোনাবে বলে।কিন্তু মিথিলার কোনো চিহ্নই নেই।মিথিলার নিজের রুমে যেতে হলে ইয়াশের রুমের সামনে দিয়ে যেতে হবে।আর খাওয়া-দাওয়া অনেক আগে শেষ হয়ে গেছে মিথিলার তো এতক্ষণে নিজের রুমে যাওয়ার কথা।ইয়াশ আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলো।কিন্তু না কোনো খোঁজ নেই।ইয়াশের ধৈর্যের সীমা পেরুতে ও মিথিলার রুমের দিকে হাটা ধরল।মিথিলার রুমের সামনে গিয়ে দেখল দরজা খোলা।রুমে উকি দিয়ে দেখল কেউ নেই।রুমে মিথিলাকে না পেয়ে মিহুর রুমের দিকে হাটা ধরে।মিহুর রুমে ইফা আর মিহু দুজন গল্প করছিল মিথিলা নেই।ইয়াশের এবার আকাশের কথা মাথায় আসে।ও আকাশের রুমের দিকে যায়।কিন্তু আকাশের রুমেও নেই কেও।ইয়াশের মেজাজ গরম হয়।ও কতক্ষণ ধরে এই মেয়ের অপেক্ষা করছে আর এই মেয়ের কোনো খোঁজখবর নেই।ইয়াশের এবার ছাদের কথা মাথায় আসে।ও ছাদের দিকে হাটা দেয়।সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতে মেজাজ আরো বিগড়ে যায় ওর।হাত মুষ্টিবদ্ধ করে সামনের দিকে তাকিয়ে থাকে।
চলবে,, ইন শা আল্লাহ 🍁