#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখিকা:#আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ১৬
ধরণীতে রাত্রি নেমেছে।সবাই ঘন্টাখানেক হয়েছে বাড়ি ফিরেছে।এদিকে মইনুল হক দেশে কেনা নিজের বাড়িতে ফেরার জন্য জিদ ধরেছে।মিনহাজ হক আর ইকবাল হকের জন্য যেতে পারছেন না।মইনুল হকের বেশি জোরাজুরি করায় শেষে মিনহাজ হক গম্ভীর কন্ঠে বলে,,
“মিহুর বিয়ের আগে তুই এই বাড়ি থেকে যেতে পারবি না।আর যদি চলে যাস তাহলে আমিও চলে যাব। থাকবো না মেয়ের বিয়েতে।এখন তুই যদি চাস মেয়ের বিয়েতে তার বাবা না থাকুক তাহলে যা,চলে যা!”
মিনহাজ হকের একটা কথায় মইনুল হক দমে যায়।অগ্যতা থেকে যেতে হয়।বাবা তার মেয়ের বিয়েতে থাকবে না সেটা তো আর হতে পারে না।
——————————————–
রাত্রের খাবার জন্য সবাইকে ডাকা হয়েছে।রাফসান আর রাফিন রাত্রে খেয়ে বেরিয়ে যাবে।ছেলেদের আগে খেতে দেওয়া হয়েছে।রাফসান,রাফিন,ইয়াশ,আকাশ আর বাড়ির তিন ভাই বসেছে একসাথে।ছেলেদের খাওয়া-দাওয়া শেষ হতে তারা উঠে যেতে মেয়েরা বসে।মিথিলাকে না দেখে তিতলি হক মিহুকে জিজ্ঞেস করে মিথিলা কোথায়?!
“ঘরে আছে হয়ত?আজকে এখনো আসছে না কেনো?”
“ডেকে নিয়ে আয় একটু?”
মিহু উঠে মিথিলার রুমের দিকে হাটা দেয়।মিথিলার রুমের সামনে এসে দেখে দরজা বন্ধ।মিহু খানিকটা অবাক হয়।ভ্রু গুটিয়ে কয়েকবার টোকা দেয় দরজায়।
“মিথু দরজা খুলে খেতে আয়।”
প্রথমে ভিতর থেকে কোনো সারাশব্দ আসল না।মিহু মিথিলাকে আরেকবার ডাক দেয়,,
“মিথু,,দরজা আটকিয়ে রেখেছিস কেন?তুই তো এ সময় কোনোদিন দরজা আটকাস না।”
ভেতর থেকে এবার মিথিলা বলে ওঠে,,”এমনি ভালো লাগছে না আপু।খাবোনা আমি!তোমরা খেয়ে নাও!”
“খাবিনা মানে?তুই দরজা খোল আগে?কি হয়েছে?”
“কিছু হয়নি আপু।মাথা ব্যাথা করছে শুয়ে পড়েছি আমি।এখন উঠব না যাও তুমি।”
মিহু আরেকবার বলতেও মিহু না করে দেয়।মিহু আর কিছু না বলে নিচে চলে যায়।নিচে যেতে তিতলি হক মিথিলার কথা জিজ্ঞেস করতে মিহু বলে,,
“ওর মাথা ব্যাথা করছে!তাই আসবে না।তুমি নাহয় গিয়ে দিয়ে এসো পড়ে।”
তিতলি হক খাবার বাড়তে বাড়তে বিরবির করে বলে,, “এই মেয়েকে নিয়েও পারিনা!”
——
সবার খাওয়া-দাওয়া শেষ হতে তিতলি হক একটা প্লেটে খাবার বেরে নিয়ে যায় মিথিলার রুমের দিকে।রুমের সামনে গিয়ে মিথিলাকে ডাকে।
“মিথি,,দরজা খোল খাবার নিয়ে এসেছি?”
“আপুকে বললাম তো খাবোনা।নিয়ে যাও!”
“খাবিনা কেন? দরজা খোল আগে।দেখি কি হয়েছে?”
“মা বললাম তো,,?”
বাইরে অন্যকারো কন্ঠ শুনতে মিথিলা চুপ করে যায়।বাইরে ইয়াশ তিতলি হককে দেখে বলে,,,
“বড়মা তুমি এখানে কি করছ?”
“দেখনা এই মেয়ে আসার পর থেকে দরজা আটকিয়ে বসে আছে। খেতেও আসেনি?দরজা খুলতে বলছি তাও খুলছে না?”
“খেতে যখন চাইছে না তো জোর করছ কেন?না খেলে তো আমাদেরই ভালো বলো।যতদিন না খেয়ে থাকবে ততদিন আমাদের টাকা কম খরচ হবে।এত ডাকাডাকির থেকে তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো।”
কথাগুলো বলে ইয়াশ নিজের রুমে চলে যায়।তিতলি হক ইয়াশের কথাগুলো শুনে,,কিছুক্ষণ চুপ করে দাড়িয়ে থেকে আবার মিথিলাকে ডাকে।মিথিলা ভিতর থেকে সব কথায় শুনেছে।তিতলি হোক একবার ডাকতে মিথিলা দরজা খুলে দিয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে।তিতলি হক গিয়ে বিছানার উপর বসে।মিথিলার মাথায় হাত রেখে বলে,,
“কি হয়েছে তোর?এভাবে ঘর আটকিয়ে বসে আছিস কেন?”
মিথিলা মায়ের কোলে মাথা রেখে কোমড় জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।মুখ লুকিয়ে বলে,,
“কিছু না মা?”
“মিথ্যে বলছিস?”
মিথিলা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,, “মিথ্যে না মা সত্যি কিছু হয়নি।একটু মাথা ব্যাথা করছে এই।মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিবে মা?”
কথাটা বলে মিথিলা মাথা তুলে তিতলি হকের দিকে তাকায়।তিতলি হক মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষণ।কেমন শুকিয়ে আছে মুখটা।তার মেয়ে যে কষ্ট পাচ্ছে এটা সে ঠিকই বুঝতে পারছে।কিন্তু কেন?সেটা ঠিক ধরতে পারছে না।তিলতি হক মিথিলা মাথা তার কোলের উপর রেখে হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।কিছুক্ষণ যেতে তিতলি হক শান্ত কন্ঠে বলেন,,
“খাবার এনেছি,খাইয়ে দেই?”
“উহু ভালো লাগছেনা খাবোনা।জোর করোনা প্লিজ!”
তিতলি হক আর জোর করে না।মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে।খানিক্ষণ যেতে মিথিলা ভাঙা কন্ঠে বলে,,
“আজকের রাতটা তুমি আমার সাথে থাকবে মা,প্লিজ!”
মেয়ের আবদার শুনে তিতলি হকের মনটা ধক করে ওঠে।মেয়ে তার কখনো তার সাথে থাকার আবদার করেনা।আজকে কি হলো তাহলে।তিতলি হক এবার মেয়ের দুগালে হাত রাখে চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত,আদুরে কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,,
“কি হয়েছে মা?”
আদুরে কন্ঠের ডাক শুনে মিথিলার গাল বেয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়ে।মিথিলার চোখে পানি দেখে তিতলি হোক ঘাবড়ে যান।মেয়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বুকে আগলে ধরেন।মিথিলা তিতলি হককে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে উঠে বলে,,
“আমি অনেক খারাপ মেয়ে তাই মা?সবসময় না বুঝে না জেনে সব করে ফেলি।”
তিতলি হক মেয়েকে আগলে নিয়ে চুলের ভিতর আঙুল গলিয়ে হাত বুলায়।কপালে চুমু দিয়ে বলে,,
“কে বলেছে আমার মেয়ে খারাপ?যে বলেছে তার মাথায় সমস্যা আছে বুঝলি।আমার মেয়ে তো ভীষণ ভালো।”
মিথিলা অশ্রুচোখে মৃদু হাসে।তিতলি হক আবার জিজ্ঞেস করেন,,
“কি হয়েছে তোর মা?”
“কিছুনা মা?তুমি একটু আমার পাশে শুইয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে।একটু ঘুমোবো আমি।”
তিতলি হোক মেয়েকে শুইয়ে দিয়ে দরজা আটকিয়ে নিজেও পাশে এসে শুয়ে পড়েন।মিথিলা তিতলি হককে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ে।এদিকে তিতলি হক মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিন,কিন্তু তার মাথায় অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।সে যা ভাবছে তা সত্যি হলে সর্বনাশ!
——————————————-
পরেরদিন সকালবেলা,মিথিলা না খেয়ে বেরিয়ে যায় কলেজের উদ্দেশ্যে।তিতলি হক রুকমা হক অনেক ডাকাডাকি করে তবুও মেয়ে কথা শুনে না।ইফা বসে বসে খাচ্ছিল।খাওয়া রেখে বলে,,
“মা আমিও যাচ্ছি।গিয়ে দেখি এই মেয়ের কি হলো?”
ইফা অর্ধেক খাবার রেখে বেরিয়ে যায়।এদিকে তিতলি হোক দীর্ঘশ্বাস ফেলেন।তার মেয়ে কেন এমন করছে তার জানতে হবে।এটাও জানতে হবে তার সন্দেহই ঠিক কিনা!
ইফা বাইরে বেরুতে দেখে মিথিলা হেটে হেটে অনেকদুর চলে গেছে।ও দৌড়ে মিথিলাকে ধরার চেষ্টা করে।কয়েকবার পিছন থেকে ডাকে কিন্তু মিথিলার সেদিকে খেয়াল নেই।সে হেটে যাচ্ছে তো যাচ্ছেই।ইফা দৌড়ে মিথিলার সামনে গিয়ে বলে,,
“কি হয়েছে রে শাঁকচুন্নি?না খেয়ে চলে এলি!আবার এভাবে একা একা যাচ্ছিস।”
মিথিলা না রেগে শান্ত কন্ঠে বলে,, “সর সামনে থেকে?”
ইফা হোক হয়ে চোখ বড়বড় করে বলে,, “সূর্য আজকে কোনদিক দিয়ে উঠেছে রে? তুই এত শান্তশিষ্ট ভাবে আমার সাথে কথা বলছিস?”
মিথিলা ইফার কথা উত্তর না দিয়ে পাশ কেটে চলে যায়।একটু হাটতে একটা রিকশা দেখতে পায়।মিথিলা রিকশা দাড় করিয়ে রিকমায় উঠে পড়ে ইফাকে রেখেই।রিকশা টা চলে যেতে ইফা বোকার মতো দেখতে থাকে রিকশাটা চলে যাওয়া।ও কি স্বপ্ন দেখছে নাকি।মিথিলা ওর সাথে এভাবে কথা বলছে আবার ওকে রেখেই চলে যাচ্ছে।
ইফা ঠোট উল্টে সামনে দিকে হাটতে থাকে।তখন ওর পাশে একটা বাইক এসে থামে।ইফা অন্যমনস্ক থাকায় কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।লোকটাকে কয়েকটা কথা শোনানোর জন্য বামে ঘুরতে আকাশকে দেখতে পায়।আকাশকে দেখে ও সোজা হাটা দেয় কোনো কথা না বলে।আকাশ ও ইফার হাটার সাথে তাল মিলিয়ে বাইক চালাচ্ছে।আকাশকে ওর সাথে সাথে আসতে দেখে ইফা থেমে যায়।আকাশের দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বলে,,,
“সমস্যা কি?আমার পিছে পিছে আসছেন কেন?”
“বোকা!”
আকাশ কথাটা বলে বাইক থেকে নেমে পড়ে। ইফার সোজাসুজি দাড়িয়ে বলে,,
“আমি তোর পিছু পিছু না সমানে সমানে যাচ্ছিলাম গাঁধা।”
“সে যাই হোক আপনি এখানে আমার সাথে কেন যাচ্ছে?”
আকাশ ওর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ইফাকে প্রশ্ন করে,,
“মিথু কোথায়?”
“চলে গেছে।”
“তোকে রেখে চলে গেছে?”
“হ্যাঁ।”
আকাশ এবার বাইকে উঠে ইফাকে পিছনে ইশারা করে বলে,, ” ওঠ আমি তোকে পৌছে দিচ্ছি!”
“দরকার নেই।”
আকাশ দাতে দাত চেপে বলে,, “উঠতে বলছি উঠবি এতো কথা কিসের।উঠ!”
ধমক খেয়ে ইফা পিছনে উঠে বসে পড়ে।আকাশ মৃদু হেসে বাইক স্টার্ট দেয়।সোজা কলেজ চলে যায়।ইফাকে কলেজে নামিয়ে দিয়ে বিদায় জানিয়ে চলে যায়।ইফা ভিতরে গিয়ে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে মিথিলাকে খুজে কিন্তু ট
পায়না।অগ্যতা নিজের ক্লাসে চলে যায়।
————————————————–
“কাউকে ভালোবাসিস?”
সবে কলেজ থেকে বাড়ি ফিরে নিজের রুমে ঢুকেছে মিথিলা।ততক্ষণাৎ তিতলি হক ওর রুমে এসে প্রশ্নটা করে বসে।মিথিলা সবকিছু ভুলে মায়ের দিকে বোকার মতো তাকিয়ে থাকে।তিতলি হক পুনরায় বলে ওঠে,,
“কাকে ভালোবাসিস মিথুন বল আমাকে?”
মিথিলা আমতা আমতা করে বলতে নেয়,, “মা আআমিতো, না মমানে,,,,”
“ও আমাকে ভালোবাসে বড় মা?”
পিছনে কারো কন্ঠ শুনতে মিথিলা আর তিতলি হোক দুজনে একসাথে পিছন ঘুরে তাকায়।মিথিলা সামনে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে ভ্রু গুটিয়ে নেয়।
চলবে,, ইন শা আল্লাহ 🍁