শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(একুশ) #Mst.Shah Mira Rahman

0
520

#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(একুশ)
#Mst.Shah Mira Rahman
রাত তখন গভীর।নিস্তব্ধ নির্জন গা ছমছমে পরিবেশ।গহীন জঙ্গলের ভেতর হেঁটে চলেছে একজোড়া মানব মানবী।পূর্ণ চাঁদের আলো গাছের ফাঁক গলিয়ে তাদের গায়ে পড়ছে।নির্মল কে সাথে আনেনি।ও গিয়েছে অন্যদিকে। আয়াতের বুক কাঁপছে ভয়ে।একেই তো এই গভীর জঙ্গলে অন্ধকার এই রাতে একা একটা পরপুরুষের সাথে আছে। অন্যদিকে ওমরের হাতে পিস্তল।যা দেখিয়ে তাকে কিছুক্ষণ আগেও হুমকি ধামকি দিয়েছে ওমর।আয়াত ভয় পাচ্ছে।লোকটা তাকে মেরে ফেলবে না তো?পরমুহূর্তেই নিজের ভাবনা কে নিজেই দমিয়ে দিল।মারতে হলে আগেই মেরে দিত। এতদূর টেনে আনার তো প্রয়োজন ছিল না।আয়াত হাঁপিয়ে উঠল। হাঁটুতে দুই হাত ভর দিয়ে দাঁড়ালো।ওমর হাঁটা থামালো।আয়াত করুণ কণ্ঠে বলল,
“দয়া করুন।আমি আর হাটতে পারবো না হাঁপিয়ে গিয়েছি আমি।”
ওমর তাকিয়ে দেখল আয়াত কে।হাপাচ্ছে আয়াত।দুর্বল দেখাচ্ছে তাকে।আজ সারাদিনে আয়াতের ভালোভাবে কিছু খাওয়া হয়নি।তার ওপর রাত জেগে এত পথ হেঁটে আসা চাট্টিখানি কথা নয়।ওমর এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা গাছের নিচে গিয়ে বসে পড়লো।তাকে বসতে দেখে আয়াত সেদিকে এগিয়ে গেল।ওমরের থেকে দূরত্ব রেখে নিজেও বসে পড়ল।ওমর হাতের কাছের জায়গা পরিস্কার করে টানটান হয়ে শুয়ে পড়ল মাটির ওপরেই।দৃষ্টি গাছের আবডালে রেখে কাটকাট গলায় বলল,
“আজকের জন্য এখানেই ঘুমাতে হবে।এর থেকে ভালে ব্যবস্থা আর হবে না।আর হ্যা,একদম পালানোর চেষ্টা করবি না নয়তো এখানেই মে*রে পুঁতে ফেলবো।”
কথাটা বলে থামলো না।সাথে সাথে উঠে বসল।হাতের থাবায় আয়াতের গলার ওরনা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিল।আয়াত আঁতকে উঠল। দম ধরে কিছু বলবে তার আগেই ওমর তার হাত টেনে ওরনার একপাশ দিয়ে বাঁধতে লাগল। আয়াত হতভম্ব।গলায় কৌতুহল ঝড়ে পড়ল,
“কী করছেন এসব?”
“তোর ওপর ভরসা নেই।আমার ঘুমানোর সুযোগ নিয়ে তুই পালানোর পাঁয়তারা করতে পারিস।এবার পালিয়ে দেখা।”
ওমর কথা বলতে বলতে ওড়নার ওপরপাশের অংশ নিজের হাতে বেধে উল্টোপাশ ফিরে শুয়ে পড়ল। আয়াত তাকিয়ে রইল ওমরের দিকে।ও কী ছোট বাচ্চা?ওড়না বাধলেই কী সে পালাতে পারবে না?আয়াতের কেনো জানি হাঁসি পেল।আবার পর মুহূর্তে রাগ ও হলো।জঘন্য লোক তার ওড়নায় কিভাবে হাত দিল!আয়াতের দম বন্ধ‌ হয়ে এলো।রাগে দুঃখে বসে বসে ফোপাতে লাগল।তবে বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারলো না।শরীর ভেঙ্গে এসেছে।ক্লান্ত লাগছে তার।উল্টোপাশ ফিরে নিজেও শুয়ে পড়ল মাটির ওপর। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুম ধরা দিল চোখ জোড়ায়।
ওমরের ঘুম ভাঙল তার বেশ কিছুক্ষণ পর।পাশ ফিরে আয়াতের দিকে তাকাতেই দেখল আয়াত ঠাণ্ডায় কাপছে।তার শরীরে সোয়েটার নেই।ওমরের মাথা গরম হলো। মেয়েটা বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় সোয়েটার পড়ে আসে নি।দিনের বেলা ওতো ঠাণ্ডা বোঝা যায় না।এতক্ষণ যাবৎ হাঁটার কারণেও হয়তো তেমন ভাবে ঠাণ্ডাটা বুঝতে পারেনি।কিন্তু এখন ঠাণ্ডা একবারে জেঁকে বসেছে।ওমর বেশি ভাবলো না।নিজের গা থেকে জ্যাকেট টা খুলে জড়িয়ে দিল আয়াতের গায়ে।আয়াত ঘুমের মাঝেই ওম পেয়ে জ্যাকেট টা আরো ভালোভাবে নিজের শরীরে জড়িয়ে নিল। ওমর তাকিয়ে রইল সেদিকে।ধীরে ধীরে তার ঠাণ্ডা বেড়ে গেল। ওপরপাশে শুয়ে থেকেও শান্তি পেল না।উঠে বসল।আশপাশ থেকে অনেকগুলো পাতা একসাথে করে কিছু পাতা আয়াতের ওপর ছড়িয়ে দিল।কিছু পাতা নিজের শরীরে ছড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পরল।তাও ঠাণ্ডা কমলো না।বাকী রাতটা নির্ঘুম কাঁপতে কাঁপতে কাটিয়ে দিল।
____
সুলেমান বাড়ি ফিরল গভীর রাতে।মীরা এগিয়ে গেল তার কাছে।মৃদু সরে ডাকল তাকে,
“সুলেমান?”
সুলেমান মুখ তুলে চাইল।সামনে মীরা দাঁড়িয়ে।বেডের ওপর বসেই মীরার কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের কাছে টেনে নিল।মাথা গুঁজে দিল মীরার বুকে।মীরা আলতো ভাবে হাত বোলালো সুলেমানের মাথায়।সুলেমান মীরাকে জড়িয়ে রেখেই ধীমি সুরে বলল,
“আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে তাদের আগলে রাখার চেষ্টা করেছি মীরা।সবসময় ওদের তিনজনের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি প্রতিটি মুহূর্তে যেন কোনো বিপদ তাদের ধারে কাছেও না ঘেষতে পারে।তবুও আজ আমি ব্যর্থ।আজ আয়াতের এই অবস্থা শুধুমাত্র আমার খামতির জন্য। জানিনা ও এখন কোথায় আছে কোন অবস্থায় আছে।তার কিছু হলে আমি কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না মীরা।”
মীরা চুপ করে শুনলো সুলেমানের কথা।অতঃপর সুলেমানের মাথায় চুমু দিয়ে বলল,
“নিজেকে দোষারোপ করবেন না সুলেমান।এখানে আপনার কোনো দোষ নেই।আয়াত খুব শীঘ্রই ফিরে আসবে আমাদের মাঝে।কিচ্ছু হবে না আয়াতের।”
সুলেমান চুপ করে থাকে।মীরার কথাই যেন সত্যি হয়। আয়াত যেন সুস্থ থাকে।
____
আয়াতের ঘুম ভাঙল সকাল সকাল। পাখির কিচিরমিচির শব্দে কপাল কুঁচকে এলো তার। তবু চোখ খুলল না। সকালের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় শরীরে ওম অনুভূতি হতে আরো গভীর ভাবে মিশে গেল কারো মাঝে।সাথে সাথে টনক নড়ল আয়াতের।চোখ মেলে সামনে তাকাতেই নজরে এলো এক ঘুমন্ত পুরুষ মুখশ্রী।দুই হাতে তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে।আয়াত থমকালো।কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইল সেদিকে।কোনো পুরুষকে ঘুমন্ত অবস্থায় বুঝি এতটা স্নিগ্ধ নিষ্পাপ লাগে।অথচ এই মানুষটা ই তার সাথে কাল কী জঘন্য ভাবেই না নিজেকে পরিচিত করেছে।আয়াতের মানসপটে ভেসে উঠল কালকের ঘটনাগুলো।গা গুলিয়ে এলো তার।ঘৃণায় গা ঘিন ঘিন করল।এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরে বসল। ওমরের ঘুম ভেঙে গেল।চোখ ডলে পিট পিট করে তাকালো আয়াতের দিকে।আয়াত খেয়াল করল তার শরীরে জ্যাকেট জড়ানো।জ্যাকেট টা ওমরের।আয়াত ছুড়ে ফেলল জ্যাকেটটা। ওমরের ঘুম পুরোপুরি ছুটে গেল।উঠে বসে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল রাগে ফুঁসতে থাকা আয়াতের দিকে।অতঃপর চুপচাপ নিজের জ্যাকেট নেওয়ার জন্য এগিয়ে আসতেই আয়াত চেঁচিয়ে উঠলো,
“খবরদার আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না।জানে মেরে ফেলবো।”
ওমর বিরক্ত হলো।নাক মুখ কুঁচকে জ্যাকেট হাতে নিয়ে তা গায়ে গলিয়ে বিরক্তির সুরে বলল,
“আমার এতটাও খারাপ দিন আসে নি।তোর কাছে আসার জন্য মরে যাচ্ছি না আমি।”
“তা তো বুঝতেই পারছি।”
ওমর তাকালো আয়াতের রেগে লাল হওয়া মুখের দিকে।কী বলতে চাইছে এই মেয়ে।সে কী ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরেছে?ঘুমের ঘোরে ধরেছে।তাতে কী এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গেছে।
রাতে জ্যাকেট খুলতে গিয়ে হাতে ওড়না খুলে আয়াতের শরীরেই জড়িয়ে দিয়েছিল ওমর।আয়াত নিজের ওড়না ভালোভাবে জড়িয়ে আশেপাশে তাকালো।তার হাত পা মুক্ত‌ অবস্থায়।চাইলেই এখন সে দিনের আলোয় এই গহীন জঙ্গলে মিলিয়ে যেতে পারে।মুক্তি পেতে পারে এই জঘন্য লোকটির হাত থেকে। আয়াত মনে মনে বুদ্ধি আটলো।ওমরের দিকে চেয়ে বলল,
“খিদে পেয়েছে আমার।কাল থেকে তেমন কিছুই খাই নি”
ওমর‌ অদ্ভুত চোখে তাকালো আয়াতের দিকে।মুখ বাঁকিয়ে বললো,
“এটাকে কি তোর ফাইভস্টার রেস্টুরেন্ট মনে হচ্ছে?এখানে খাবার পাবো কোথা থেকে? সকাল বেলা উঠেই খাই খাই লাগিয়ে দিয়েছে।ভুটকি কোথাকার।”
আয়াতের পুরো শরীর জ্বলে উঠলো।”ভুটকি” শব্দটা তার মোটেও পছন্দ নয়।মানছে সে একটু খাদ্যপ্রেমি সাথে ঘুমপ্রেমি ও।একারনেই হয়তো হায়াতের থেকে তার সাস্থ্য একটু বেশি ‌তাই বলে তাকে মোটা বলা চলে না।তার মাঝে গুলুমুলু একটা ভাব আছে।বাড়ির সকলেই বলে তার এই গুলুমুলু ভাবের জন্যই হায়াতের থেকে তাকে বেশি মায়াবী,আদুরে লাগে।অথচ এই লোক তাকে ভুটকি বলছে! খাওয়ার খোঁচা দিচ্ছে।রাগে ফেটে পড়ে আয়াত বসা অবস্থাতেই তেড়ে গেল ওমরের দিকে। আঙুল তুলে বলল,
“খরবদার আমাকে ভুটকি বলবি না নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে বলছি।”
আয়াতের মুখ থেকে তুই তুকারি শুনে ওমরের রাগ হলো। হিসহিসিয়ে বলল,
“হাজার বার বলবো।তুই একটা ভুটকি।কি করবি তুই?”
যাকে এতদিন যাবৎ প্রিয় মানুষের পৃষ্ঠায় ফেলেছিল সেই মানুষটার থেকে এরকম বাঞ্ছনা লাঞ্ছনা সহ্য হলো না আয়াতের। রাগে অপমান জ্ঞানশূন্য হয়ে ঠাস করে চড় বসালো ওমরের গালে।অতঃপর নিজেই ভয় পেয়ে গেল।ওমর হতভম্ব।ভাবতেও পারেনি আয়াত এমন কিছু করবে। মস্তিষ্ক ঝাড়া দিয়ে উঠল।দাউ দাউ করে আগুন জ্বলে উঠলো মাথায়।এগিয়ে এসে আয়াতকে মাটিতে ফেলে তার পেটের ওপর দুই পাশে পা রেখে উঠে বসল।আয়াতের দুই হাত মাথার ওপর মাটির সাথে চেপে ধরল। ক্রোধের চাপে জোড়ে জোড়ে শ্বাস ফেলল ওমর।আয়াত ঘাবড়ে গেল।বুক ধাপড়ের ন্যায় ওঠানামা করল।আর বুঝি শেষ রক্ষা হলো না। নিজেকে ছাড়াতে হাত মোচড়াতে লাগল।চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরলো অশ্রুবিন্দু।
হাজার নারীর সংস্পর্শে আসা পুরুষের দৃষ্টি সবসময় মেয়েদের স্পর্শকাতর অঙ্গেই সর্বপ্রথম পড়বে এটা স্বাভাবিক।ওমরের ক্ষেত্রেও তাই হলো।তার দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো আয়াতের বুকের দিকে।ওমর কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল।চেয়ে রইল সেদিকে।চোখ তুলে আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সত্যি করে বল তোর বিয়ে হয়নি।”
আয়াত তাকালো ওমরের দিকে।শক্ত গলায় বলল,
“বিয়ে হয়ে গেছে আমার। কতবার বলতে হয়?”
ওমর শুনলো তার কথা।অতঃপর আবার দৃষ্টি ফেলল আয়াতের বুকের উপর।আনমনে বলে উঠলো,
“আমার তা মনে হয় না।”
আয়াতের শ্বাস ঘন হলো।লজ্জায়,ঘৃণা, অসস্থিতে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল।থমথমে গলায় বলল,
“সরে যান।”
ওমর তাকালো আয়াতের দিকে। চুপচাপ সরে এলো তার ওপর থেকে।আয়াত উঠে বসল বসল।গা ঝেড়ে ওড়নাটা নিজের শরীরে ভালেভাবে জড়িয়ে নিল। ঘৃণায় গা গুলিয়ে আসছে তার।রাগে ফেটে যাচ্ছে ভেতরটা। কিন্তু এখন সে কোনোভাবেই ওমরের সাথে তর্কে জড়াতে চায় না।এই গভীর জঙ্গলে সে একা একটা মেয়ে হয়ে কিছুতেই পেরে উঠবে না ওমরের সাথে।রাগ হোক ঘৃণা হোক আর নিজের সম্মান রক্ষার খাতিরেই হোক আয়াত চুপ করে বসে রইল একপাশে।ঠিক সেই মুহূর্তে ওমর আরো একটি অভাবনীয় কাজ করে ফেলে।এক হাতে আয়াতের ঘাড় টেনে ধরে নিজের কাছে এনে মুখ ডোবায় তার গলায়।কণ্ঠনালীতে নাক ঘষে জোড়ে শ্বাস টানে।আয়াত থমকালো, বাকরুদ্ধ হলো।শ্বাস আটকে বসে রইল।বুকের ভেতর অদ্ভুত অনুভূতির শিহরণ জাগল।ওমর তাকালো আয়াতের দিকে।আয়াতের করুন অবস্থা অবকোলন করে তার অতি নিকটে গিয়ে বলল,
“এটাই তোর জীবনের প্রথম পুরুষ স্পর্শ তাই না?”
আয়াত কথা বলল না।চুপ করে নিজের এলোমেলো হওয়া হৃদয়কে সামলানোয় ব্যস্ত হয়ে পড়ল।ওমর দূরে সরে এলো।অন্যদিকে ফিরে মৃদু হাসল।
এরই মাঝে আশপাশ কোথাও হতে বেশ কিছু মানুষের চেঁচামেচি কানে এলো ওমরের।কান খাড়া করে আশেপাশে চাইল সে।দেখল কিছু মানুষ লাঠিসোটা নিয়ে তাদের দিকেই এগিয়ে আসছে।
চলবে🌺
কিছু বলবো না 😒

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here