শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(তিন) #Mst.Shah Mira Rahman

0
558

#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(তিন)
#Mst.Shah Mira Rahman
_
অজানা এক আবেশে সকাল জড়িয়ে গেল সিদ্ধান্তের শরীরে সাথে।তাকে আগলে নিল সিদ্ধান্ত।ঠোঁটের মৃদু মন্দ স্পর্শ‌ এবার বন্য হয়ে উঠলো। সকাল দিশেহারা হলো। নিশ্বাসের অভাবে হাঁসফাঁস করল।হাত দিয়ে সিদ্ধান্ত কে সরানোর চেষ্টা করল। সিদ্ধান্ত সরল না। ঠোঁট ছেড়ে সকালের গলায় মুখ ডোবালো।নাক টেনে শরীরের ঘ্রাণ নিল সিদ্ধান্ত। ছোট ছোট ঠোঁটের স্পর্শে বেকাবু হলো সকাল।আঁকড়ে ধরে মিশে রইলো সিদ্ধান্তর সাথে। সিদ্ধান্ত ছাড়লো নিজের মতো করে। ঠোঁট সরালেও হাত সরালো না।দুই হাতে আগলে নিয়ে তাকালো সকালের দিকে। সকাল তখনও চোখ বন্ধ করে ঘন ঘন শ্বাস ফেলছে। সিদ্ধান্ত ঠোঁট কামড়ে হাসলো।সকালকে জ্বালাতে গলার স্বর গম্ভীর করে বলল,
“তুমি ভাবতে পারছো সকাল? বিয়ের তিন বছরে আমি মাত্র তিন বারই আমার বউকে চুমু খেতে পেরেছি। তোমার কি মনে হয়না এটা আমার প্রতি করা তোমার এক দণ্ডনীয় অপরাধ?”
সকাল চট করে তাকালো সিদ্ধান্তর দিকে। সিদ্ধান্ত চোখ মুখ ছোট করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সকাল এদিক ওদিক তাকালো। সকালের অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত আবার বলল,
“ঠিক আছে কোনো ব্যাপার না।যখন তোমাকে তোমার সম্মতিতে এই ঘরে নিয়ে আসবো তখন নাহয় সব সুদে আসলে বুঝে নিব।”
সকাল লজ্জায় গাট হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।বুঝলো সিদ্ধান্ত তাকে লজ্জায় ফেলার জন্যই এই ধরনের কথা বলছে। কিন্তু সে কথা বলবে না। অজানা কোনো এক অভিমানে মুখ ঘুরিয়ে চুপ করে রইল সে। এবার যেন সিদ্ধান্তের ধৈর্য্যের বাধ ভাঙলো। চোয়াল শক্ত করে সকালের কোমড়ে চাপ দিয়ে নিজের দিকে টেনে নিল।
“একেই তো একমাস পর দেখা দিলে।এখন আবার কথাও বলছো না। সমস্যা কি তোমার?এমন করছো কেন আমার সাথে?এভাবে জ্বালাচ্ছো কেন আমায়?”
“আমি বাড়ি যাবো। ছাড়ুন আমায়।”
“থাপড়ে গাল লাল করে দেব বেয়াদব মেয়ে। আরেকবার বাড়ি যাবো বাড়ি যাবো করলে পা ভেঙে এখানেই বসিয়ে রাখবো। একচুলও নড়তে দেবনা।”
সকালের কান্না পেল।মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করল।আজ কাল সিদ্ধান্ত একটু ধমক দিলেই তার কান্না পায়।আচ্ছা সে কি একটু বেশিই অভিমানি হয়ে যাচ্ছে।
সিদ্ধান্ত দেখল সকালের ছলছল করা চোখ।দমে গেল সে।রাগ গলে পানি হয়ে গেল।সকালের গলায় নাক ঘষতে ঘষতে নরম কণ্ঠে বলল,
“এমন কেন তুমি?একটুও বোঝো না আমায়।চলে এসো না আমার কাছে।আমি অপেক্ষায় আছি তোমার।আর কত অপেক্ষা করাবে?বুড়ো হয়ে গেছি। চুলে পাক ধরতে শুরু করেছে।এমন হলে তো পরে নিজের সন্তান আব্বা না ডেকে দাদা ডাকা শুরু করে দেবে।”
সকালের কেন জানি হুট করেই হাসি পেয়ে গেল। নিজের হাসি আটকানোর চেষ্টা করলেও তা সিদ্ধান্তর চোখে পরল। বুঝলো অভিমানীনির অভিমান একটু হলেও কমেছে।সে সকাল কে ছেড়ে তার হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে গেল বেডের দিকে।বেডের ওপর সকাল কে বসিয়ে তার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরলো সিদ্ধান্ত।দুই হাতে কোমড় জড়িয়ে ধরে পরপর দুটো চুমু বসালো সকালের পেটের ওপর। সকাল কেঁপে উঠল। শিরদাঁড়া বেয়ে অদ্ভূত শিহরণ বয়ে গেল।
“আর কত অপেক্ষা করাবে আমায়?”
“যতদিন না আপনি ওই পথ ছেড়ে দিচ্ছেন।আমি কখনোই মানতে পারবো না আমার স্বামী আমার সামনে বসেই আমার বাবা ভাই দের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।”
“তোমার বাপ ভাইরা অন্যায় করতে পারবে আর আমি তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবো না।জবাব দিতে পারবো না আমার বাবার প্রতি করা তাদের অন্যায়ের?”
“তারা কখনোই কোনো অপরাধ করতে পারে না।আমি চিনি তাদের।”
মুহূর্তেই সিদ্ধান্তের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। কঠিন কিছু কথা শোনানোর জন্য উদ্ধুত হয়েও দমে গেল।আজ অনেকদিন পর সে সকাল কে নিজের কাছে পেয়েছে।সময়টা ঝগড়া করে কাটাতে চায় না।এক হাতে সকালের হাত ধরে নিজের মাথায় রাখল সে।
“টিপে দাও তো একটু ঘুমাবো।”
সকাল তাকালো তার দিকে। সিদ্ধান্ত যে প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাইছে তা বুঝল।সে নিজেও চায় না তার সাথে ঝগড়া করতে। সিদ্ধান্তর সান্নিধ্য তার ভালো লাগে।সুখ সুখ লাগে ভীষণ। কিন্তু তার কিছু করার নেই।একজন স্বনামধন্য এমপির মেয়ে হয়ে সে কি করে তার বাবা কে বলবে তারই বিরোধী দলের নেতা সিদ্ধান্ত বুশরা কে সে ভালোবাসে বিয়ে ও করে নিয়েছে।বাবা ভাইরা হয়তো কিছুই বলবে না।চুপচাপ মেনে নেবে তার সিদ্ধান্ত কে। কিন্তু মনে মনে ঠিক কষ্ট পাবে।সে কি করে তার বাবা কে কষ্ট দেবে?ভয় হয় তার।ভীষণ ভয়। সকাল নিজের ভাবনা থেকে বেরোলো।সিদ্ধান্তর চুলে আঙুল নাড়াতে নাড়াতে নরম গলায় বলল,
“বাড়ি যেতে হবে আমায়।নয়তো সবাই চিন্তা করবে।”
“সাতটার আগে পৌছে দেব।”
___
প্রায় ভোর রাত। সকালের আলো তখনও ফোটেনি। সুলেমানের ঘুম ভেঙেছে সেই কখন।তবু চোখ খোলেনি সে।আসলে খুলতে ইচ্ছে হয়নি।বন্ধ চোখে ভেসে ওঠা নারী প্রতিচ্ছবিটি কে নিয়ে নানান কল্পনা করতে তার ভালো লাগছে। নারীটির মন ভোলানো সেই হাসি, চঞ্চল চাহনি,তার কথা, তার সাথে কাটানো কিছু মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মানসপটে ভেসে উঠতেই প্রশান্তিতে ছেয়ে গেল সুলেমানের দেহ মন হৃদয়।কল্পনায় সাজালো নারীটিকে নিয়ে তার ছোট্ট এক খুনসুটি ময় সংসার।আর সেই সংসারে আলো হয়ে জন্ম নেওয়া তাদের একমাত্র সন্তান।
থেমে গেল সুলেমানের ভাবনা। এগুলো কি আদৌ কল্পনা নাকি বাস্তব! বুকের বাঁ পাশটা চিনচিনে ব্যথায় ছেয়ে গেল।স্মৃতিগুলো সুঁই ফোড়ানোর ন্যায় ফুড়তে লাগলো কোথাও যেন। বন্ধ চোখের কোণা বেয়ে এক ফোঁটা জল বেয়ে পরল বালিশের ওপর। সুলেমান পাশ ফিরে হাত দ্বারা পুরো মুখমন্ডল ঢেকে নিল।নিজের দুর্বলতা সে নিজেকে দেখাতেও নারাজ।
____
ময়মনসিংহের একটি প্রাইভেট হসপিটালের ৩০৪ নং কেবিনে বসে আছে সুলেমান। তার সামনেই মাথায় সাদা ব্যান্ডেজ নিয়ে সিঙ্গেল বেডটায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে সালমান।
“তোকে বলেছিলাম ওদের সাথে ঝামেলা না করতে।”
সালমান তাকালো সুলেমানের দিকে।
“আমি ঝামেলা করিনি।ওই সিদ্ধান্তের বাচ্চাই লেলিয়ে দিয়েছে ওর লোক গুলোকে।আমি তো শুধু ওদের আটকাতে গিয়েছিলাম।”
ওদের কথার মাঝেই শাহিন মির্জা কেবিনে ঢুকলো। সালমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সব ফরমালিটিজ শেষ।ওরা ডিসচার্জ করে দিয়েছে তোকে।তুই কি এখন বাসায় যাবি।”
“অসম্ভব! এখন বাসায় গেলেই মায়ের প্যানপ্যানানি শুরু হয়ে যাবে।আমি এই মুহূর্তে এসব একদম সহ্য করতে পারবো না।”
আঘাত ততটা গুরুতর নয় বলে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই ডিসচার্জ পেয়ে গেছে সালমান।তবে এই অবস্থায় বাড়িতে সন্ধ্যার আহাজারি তে নিশ্চিত আবার তাকে হসপিটালে ভর্তি হতে হবে। সালমান ঠিক বলেছে ভেবেই সুলেমান শাহিন মির্জার উদ্দেশ্যে শান্ত গলায় বলল,
“তুমি বাড়ি যাও বাবা।আমি ওকে নিয়ে আমাদের এপার্টমেন্টে যাচ্ছি। কয়েকদিন ওখানেই থাকুক। তুমি মাকে কিছু একটা বুঝিয়ে দিও।”
শাহিন মির্জা সম্মতি দিলেন।উনি বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরোতেই সালমান কে নিয়ে সুলেমান ও বেরিয়ে পরলো।
_____
সালমান কে নিজেদের ফ্লাটে দিয়ে সুলেমান বেরিয়ে পরলো।তার ইমার্জেন্সি কোর্টে যেতে হবে। তাড়াহুড়োয় নিচে নেমেই বুঝলো গাড়ির চাবি ফ্লাটেই রেখে এসেছে সে। বিরক্তি তে চোখ মুখ কুঁচকে আবার লিফটে উঠলো। কিন্তু ঠিক সেই মুহূর্তে একটা হৃদয় কাঁপিয়ে দেওয়া ঘটনা ঘটল।লিফটের দরজা বন্ধ হওয়ার আগে কোথা থেকে শাড়ি পরিহিত এক রমনী দৌড়ে এলো।দুই হাতে বাজারের ব্যাগ।তবে লিফটের ভেতর ঢুকলো না। সামনের ব্যাক্তিটিকে দেখে থমকে দাঁড়ালো।সময় থমকালো।থমকালো হৃদস্পন্দন।কিছু মূহূর্ত কিছু পল যেন এক নিমেষে উধাও হলো।লিফটে দরজা বন্ধ হলো।সাথে সাথে মীরার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরলো এক ফোঁটা অশ্রু।তবে তাকে অবাক করে দিয়ে বন্ধ হওয়া লিফটের দরজা আবার খুলে গেল।
চলবে ❤️
গায়েষ 😎 নায়িকার এন্ট্রি তো হয়ে গেছে🥺

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here