শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(বাইশ) #Mst.Shah Mira Rahman

0
584

#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(বাইশ)
#Mst.Shah Mira Rahman
প্রায় চার পাঁচজনের মতো লোক আশপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে ওমর ও আয়াত কে।আয়াত ভয় পেলে গেল।ওমরের পেছনে গিয়ে লুকানোর চেষ্টা করল।সে বুঝলনা তার কী ভয় পাওয়া উচিত নাকী এই লোক গুলোর কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত? লোকগুলো কে সে চেনে না।যদি এদের উদ্দেশ্য অসৎ হয়?যদি এরা তার অসহায়ত্বের সুযোগ নেয়।চট করেই কোনো সিদ্ধান্ত নিল না আয়াত।পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করল।ওমর একবার আয়াতের ভয়াতুর মুখশ্রী দেখে উঠে দাঁড়ালো।তার সাথে সাথে আয়াত ও উঠলো।তাদের দেখে ওই লোকগুলোর মাঝ হতে একজন বলে উঠলো,
“দেখেন সামাদ ভাই।নিজের চোখে দেখেন।দুনিয়ায় কী জামানা এসে পড়ল। জঙ্গলের মধ্যে এরা এসব কী শুরু করে দিছে ছিঃ ছিঃ।”
সামাদ তাকালো ওই লোকটার দিকে।অতঃপর সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলে মেয়ে দুটোর দিকে।ওমর দৃষ্টি ফেলল তার ওপর।সতর্ক দৃষ্টিতে দেখল সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটিকে।শুভ্র রঙের পাঞ্জাবি সাদা কালো দাড়িতে মধ্যবয়স্ক এই লোকটিকে দেখতে খুবই বিচক্ষণ মনে হলো তার। সামাদ স্বল্পভাষী বুদ্ধিদীপ্ত মানুষ।সহজেই কোনো সিদ্ধান্ত নেন না।তিনি ওমরের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“তোমরা দুজন এখানে কী করছো এত সকালে?রাতেও কি এখানেই ছিলে?”
ওমর পরিস্থিতি বুঝে নিজেকে শান্ত রাখল।মৃদু গলায় বলল,
“দেখুন,আপনারা ভুল বুঝছেন।আমরা পথ হারিয়ে এদিকে চলে এসেছি।আপনারা যেমনটা ভাবছেন তেমন কিছুই নয়।”
আয়াত চমকালো। তাকালো ওমরের দিকে।এ তো গিরগিটির থেকেও দ্রুত রঙ পল্টায়। কিছুক্ষণ আগের ওমর আর এখনকার ওমরের মধ্যে সাদৃশ্য খুঁজে পেল না আয়াত। এরই মাঝে আব্দুল আবার চেঁচিয়ে উঠলো,
“মিথ্যে কথা সামাদ ভাই।আমি নিজের চোখে দেখেছি এই ছেলে ওই মেয়ের উপর উঠে বসে ছিল।আপনারা নিজেও দেখলেন কিছুক্ষণ আগেই ছেলে টা কিভাবে মেয়েটারে ধরে ছিল।”
আয়াতের কান দিয়ে ধোঁয়া বের হতে লাগলো। লজ্জায় অপমানে চোখ জ্বলে উঠলো।সামাদ ধমক দিল লোকটাকে।
“আহ্ আব্দুল চুপ করো।এদের কে এলাকায় নিয়ে চলো ওখানেই সব কথা হবে।এসো।”
বলেই সামাদ হাটা ধরল।তাদের সাথে থাকা কয়েকজন লোক আয়াত ও ওমরকে সাথে নিয়ে যেতে লাগল।ওমর টু শব্দটি করলো না। চুপচাপ গেল তাদের সাথে।জঙ্গল থেকে কিছুটা দূরে লোকালয়ে এসে দাঁড়ালো তারা।ছোট এলাকা।তবে উন্নত মানের।শহুরে ছোঁয়া রয়েছে এই এলাকায়।তাদের নিয়ে যাওয়া হলো সামাদের বাড়িতে।তাদের বাড়ির আঙিনায় একপ্রকার বিচার বসানো হলো।মানুষের ভীড় বাড়ল।ওমর কে একপাশে ও আয়াত কে অন্যপাশে দাড় করানো হলো।সামাদ এই এলাকার মেয়র।তাই ছোট খাটো বিষয় গুলো তাকেই সামলাতে হয়।তিনি দুজনের মাঝে একটা চেয়ারে বসে আয়াতের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
“কোথা থেকে এসেছো তুমি?”
আয়াত মাথা নিচু করে মিনমিন করে জবাব দিল,
“ময়মনসিংহ।”
“ও তোমার কে হয়?”
আয়াত তাকালো ওমরের দিকে।মুহূর্তেই ঘৃণায় তার শরীর গুলিয়ে উঠলো।আজ এই লোকটার জন্য তাকে এরকম একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে।সবাই আঙুল তুলছে তার ওপর।রাগে ঘৃণায় আয়াত দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“কেউ না।কেউ না ও আমার।”
ওমর আগুন চোখে তাকালো আয়াতের দিকে।আয়াত বুঝল সে ভুল করে ফেলেছে।অন্তত কিছু একটা সম্পর্ক জুড়ে দেওয়া উচিত ছিল তার। সামাদ এবার ওমরের দিকে তাকালো।
“তোমরা কি করছিলে ওখানে?”
“বললাম তো পথ হারিয়ে এদিকে চলে এসেছি। তারপরও এত প্রশ্ন কেন?আর আমরা আপনাকে জবাবদিহিতা করতে বাধ্য নই।আমাদেরকে আমাদের মতো ছেড়ে দিন।”
আবদুল ক্ষেপে উঠল। সামাদ কে বলল,
“দেখেছেন ভাই তেজ কত এই ছেলের।মুখে মুখে তর্ক করে।নোংরামি করার সময় মাথা ঠিক থাকে না আর এখন আসছে তর্ক করতে।দুইটাকে ধরে বিয়ে দিয়ে দিন।তাহলেই বুঝবে মজা।”
ওমর চেঁচিয়ে উঠলো,
“অসম্ভব,আমি এই বিবাহিতা মহিলা কে বিয়ে করতে পারবো না‌।”
সবাই বিস্ফোরক চোখে তাকালো আয়াতের দিকে।আয়াত হতবাক।পাশ থেকে এক মহিলা বাকা কণ্ঠে বলে উঠলো,
“ছিঃ ছিঃ বিবাহিতা হয়েও জঙ্গলে জঙ্গলে নাগর নিয়ে ঘুরে।এ কেমন পাপাচার?”
আয়াতের কান গরম হয়ে গেল।লজ্জায় অপমানে চোখের জল ছেড়ে দিল।
“মিথ্যে কথা।আমি বিবাহিতা নই।ওটা আমার জমজ বোন হায়াত ছিল।”
ওমর তাকিয়ে রইল আয়াতের দিকে।মনে মনে হাসল। গলায় কৌতুক মিশিয়ে বলল,
“শা*লার জমজের চৌদ্দগুষ্টি কি শুধু তোদের বাড়িই খুজে পেয়েছিল।চিড়িখানার লোক আসে না তোদের নিয়ে যেতে?”
আয়াত চেতে উঠলো।তড়িৎগতিতে ওমরের দিকে এগিয়ে গিয়ে আঙুল তুলে বলল,
“খবরদার আমার পরিবার নিয়ে আর একটা কথাও বলবি না।নইলে জ্বিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।”
ওমরের রাগ বাড়ল।তেড়ে গেলো আয়াতের দিকে,
“একশোবার বলবো হাজারবার বলবো।কী করবি তুই?কী করার সাহস আছে তোর?শা*লা সার্কাসের বংশধর।”
কিছু লোক এসে ওমরকে ধরে রইল।রাগে ফুঁসছে সে।আয়াত নিজেও রাগে ফোপাচ্ছে। চোখের জলের বন্যা বইছে।আবদুল পাশ থেকে বলে উঠলো,
“সামাদ ভাই,এরা তো সাপ নেউলের মতো ঝগড়া করতেছে।কি করবেন এখন?”
“কী আর করবো?যা গিয়ে কাজী ডেকে আন।আগে বিয়েটা পড়িয়ে নিই।”
এবার আয়াত চেঁচিয়ে উঠলো,
“অসম্ভব আমি এই জঘন্য লোক কে কিছুতেই বিয়ে করবো না।এই লোক আমাকে অপহরণ করেছে।বন্দুক দেখিয়ে ভয় দেখিয়ে এতদূর অবধি নিয়ে এসেছে।ও একটা ক্রি*মিনাল।”
“বেশ করেছি তুলে এনেছি। ছয়মাস প্রেম করার পর আমাকে বলছে বিয়ে করবে না।তো তুলে আনবো না তো কী পূজা করবো? বিশ্বাস না হলে ছয়মাসে আমাদের প্রেমালাপের সমস্ত প্রমাণ আছে আমার কাছে।”
সামাদ এবার মহা বিরক্ত হলো। বিরক্ত স্বরে বলল,
“তাহলে এতক্ষণ যাবৎ বিয়ে করবে না বলে নাটক করছিলে কেন?”
“ও আমাকে বলেছিল ও বিবাহিতা তাই বলেছি বিয়ে করবো না।এখন তো সত্যি টা স্বীকার ই করলো আপনাদের সামনে।”
সামাদের মাথা গরম হয়ে গেল। আবদুল কে হাক ডেকে বলল,
“জলদি জলদি কাজী ডেকে এই দুইটারে বিয়ে দিয়ে দে।সাথে পুলিশেও খবর দে।বিয়ে দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দে ওদের।”
আয়াত বাকরুদ্ধ।তার কথাটা কিভাবে পাল্টে দিল। বারবার বলার পরও আর কেউ তাকে বিশ্বাস করলো না।কাজী এলো।দুজনকে সামনাসামনি বসিয়ে বিয়ে পড়ানো হলো।কবুল বলার সময় ওমর পরপর কবুল বললেও আয়াত চুপ করে শূন্য মস্তিষ্কে বসে রইল।যেই লোকটা তাকে অপহরণ করেছে তাকেই নাকি এখন বিয়ে করতে হচ্ছে তাকে?জীবন তাকে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।তার ভবিষ্যৎ কোথায়?আশেপাশের মহিলারা জোড় দিল তাকে কবুল বলার জন্য। আয়াত অনুভূতিহীন মৃদু স্বরে বলল,
“কবুল,কবুল,কবুল।”
তাদের বিয়ে পড়ানো হলো।অথচ কাজী ছাড়া কেউই আলহামদুলিল্লাহ বললো না।মিষ্টি বিতরণ হলো না। আয়াত মূর্তির মতো বসে রইল।ওমর সেদিকে একপলক তাকিয়ে একজন মহিলা কে উদ্দেশ্য করে বলল,
“খিদে পেয়েছে আমার। খাওয়ার কোন ব্যবস্থা করা যাবে?”
ডাহা মিথ্যা কথা।খিদে সহ্য করার ক্ষমতা তার আছে।যেই ছেলে মায়ের শরীরি ব্যাবসার টাকার খাবার খাবে না বলে সেই ছোট বেলাতেই কখনো বাড়িতে খেতে অবধি যেত না।রাস্তায় রাস্তায় ঘুরত।আজ সেই ছেলে কারো কাছে খাবার চাইছে এটা যেন সত্যি কোনো এক আশ্চর্যের বিষয়।তাদের একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করা হলো।আয়াতের বেশ খিদে পেয়েছিল। কিন্তু চোখের সামনে খাবার দেখেই কেমন গা গুলিয়ে উঠলো।পেট ফুলে গেল।অল্প একটু খেয়ে আর খেতে পারলো না।পেট ব্যাথা শুরু হলো। অনেকক্ষণ ধরে না খেয়ে থাকার ফল এটা।ওমর দেখল তাকে। আনমনে বলে উঠল,
“একদিনে কতটা শুকিয়ে গেছিস তুই।এভাবে না খাওয়ার কারনেই এমন হয়েছে।একবার এইসব ঝামেলা মিটে যাক।তোকে পেট পুড়ে খাওয়াবো আমি।”
আয়াত তাকালো তার দিকে।ওমর অপ্রস্তুত হয়ে পরল।এসব কি বলছে সে।এই মেয়েটাকে সে অপহরণ করেছিল নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য।ওমর নিজের পকেট থেকে ফোন বের করলো। সুলেমানের সাথে কথা বলে ফোন বন্ধ করেছিল সে।আর চালু করা হয়নি। এখন কী একবার ফোনটা অন করবে?আবারো নিজের চুক্তির কথা মনে করিয়ে দেবে তাকে।ওমর ফোন করল না।বন্ধ ফোনটা আবার পকেটে পুড়ে আয়াতের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সামাদের বাড়িতে পুলিশ এলো।সামাদের স্ত্রী দ্রুত পায়ে ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকল তাদের নেওয়ার জন্য। কিন্তু অবাক হলেন।ঘরে কেউ নেই। জানালার গ্রিল খোলা। সামাদ মাথায় হাত দিল।অল্প কিছু সময় একা ছাড়া হয়েছিল তাদের এর মধ্যেই পালিয়ে গিয়েছে।তার মানে কী মেয়েটা ঠিক বলছিল।তাকে অপহরণ করা হয়েছে।
____
ওমর আয়াত পালিয়ে ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে শহরের দিকে গেল।আয়াত রেগে গেল।ওমরের ওপর চেঁচিয়ে উঠলো,
“যখন পালিয়েই আসবেন বিয়ের আগে পালালেন না কেন।বিয়ের পর পুলিশের ভয়ে পালিয়ে এসেছেন।ভীতু কা*পুরুষ একটা।”
ওমর কথা বলল না।চেয়ে রইল আয়াতের দিকে।শহরে এসে প্রথমেই ওমর সপিং মলে ঢুকল।একটা বোরখা হাতে নিয়ে আয়াতের দিকে এগিয়ে দিল।
“যা এটা পড়ে নে।”
আয়াত কথা বাড়াল না।ঝটকা মেরে বোরখা হাতে নিয়ে ট্রায়াল রুমের ভেতর ঢুকল।বাইরে দাঁড়িয়ে পাহারা দিল ওমর। কিছুক্ষণ পরই বেরিয়ে এলো আয়াত।ওমর তাকাল তার দিকে।পুরো শরীর বোরখায় আবৃত।শুধু মুখমণ্ডল দৃশ্যমান।ওমর মুগ্ধ হয়ে গেল বোরখার মাঝে আয়াতের স্নিগ্ধ মুখশ্রী।অতঃপর এগিয়ে গিয়ে হাত দিয়ে নিকাব নামিয়ে ঢেকে দিল আয়াতের মুখখানা। বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠলো।চোখের কোণা জ্বলে উঠলো।মন বলল,এই স্নিগ্ধতা কেউ না দেখুক।কেউ না মুগ্ধ হোক তার নারীর প্রতি।এই নারীর স্নিগ্ধতা শুধু সে দেখবে।তার প্রতি শুধু সে মুগ্ধ হবে। শুধুমাত্র তার একার অধিকার এই নারী।
কত শত মেয়ের অনাবৃত হওয়ার পেছনে ওমরের হাত রয়েছে।সেই ওমর আজ একজন নারীকে আবৃত করে বুক ভরে শ্বাস ফেলে। শান্তির শ্বাস।
আয়াত শক্ত চোখে তাকায়।চোয়াল শক্ত করে বলে,
“ছোঁবেন না আমায়। কতগুলো মেয়েকে ছুঁয়েছেন এই হাতে।”
ওমর তাকালো আয়াতের দিকে।কণ্ঠে অদ্ভুত গম্ভীরতা ঢেলে বলল,
“আমি কখনো কোনো নারীর এতটা কাছে যাইনি আয়াত যতটা কাছে তোমার গিয়েছি।তা আজ সকালেই হোক আর এখন এই মুহূর্তে ই হোক না কেন।”
আয়াত আবাক চোখে তাকালো।ওমর দাড়ালো না আয়াতের হাত ধরে মল থেকে বেরিয়ে এলো।ওমর ঘৃণা করে নারী শরীর কে সাথে নিজের শরীরকে ও।যেদিন তার নিজের মা তাকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে এই ঘৃণাটা তার সেদিন থেকে ই জন্মেছে।এত বছরে অনেক মেয়ের সাথে সে প্রেমের অভিনয় করেছে।ছলনা করেছে।মন ভেঙেছে তাদের। কিন্তু কখনো তাদের সাথে শরীরি খেলায় মেতে ওঠে নি।না নিজে গিয়েছে।না কাউকে কখনো সুযোগ দিয়েছে।অথচ এই দুইদিনে আয়াত যেন তার সকল নিয়ম ভেঙে দিয়েছে।সীমা ছাড়িয়ে কখন তার এতটা কাছে এসে গিয়েছে ওমর তা খেয়াল ও করে নি।ওমর বুঝল সে তার লক্ষ্য থেকে সরে যাচ্ছে।কেন সরে যাচ্ছে সেটাও বুঝল।ওমর বেশি ভাবলো না এসব নিয়ে।একটা ট্যাক্সি ভাড়া করে উঠে বসল।আয়াত বসল তার পাশে।কৌতুহলী জিজ্ঞেস করল,
“কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“জানিনা।”
ওমরের এমন ওকপটে উত্তরে চুপ করে গেল আয়াত।মুখের ওপরের নেকাব সরিয়ে বাইরে তাকালো।রাতে ঘুম কম হওয়ার কারণে কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুম নেমে এলো দুচোখ ভরে।
___
বেশ কিছুক্ষণ ধরে জ্যামের মধ্যে আটকে আছে তাদের গাড়ি।সামনে পুলিশ চেকপোস্ট চলছে। সুলেমান নিজে প্রত্যেকটা গাড়ি চেক করছে।ওমর তাকালো আয়াতের দিকে।সিটে মাথা এলিয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে।এক হাত বাড়িয়ে আগলে নিল তাকে।আয়াতের মাথাটা নিজের বুক রেখে ঠোঁটের স্পর্শ আঁকল আয়াতের কপালে।বুকের ভেতর অদ্ভুত ভাবে কাঁপছে।তারা ছদ্মবেশে আছে। চিনতে পারার কোনো উপায় নেই। তারপর ও ওমর ভয় পাচ্ছে।অতি মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলার ভয়।আয়াত ঘুমের ভান ধরে পড়ে রইল।ডান হাত ধীরে ধীরে ওমরের পেছনে এনে তার কোমড়ে গুঁজে রাখা পিস্তল ধরল।ওমর বুঝল।অবাক দৃষ্টিতে চাইল আয়াতের দিকে।আয়াত সময় নষ্ট করল না।কোমড় থেকে পিস্তল বের তার উল্টোপাশ দিয়ে সজোড়ে আঘাত করল ওমরের মাথায়।ওমর মাথায় হাত দিয়ে আর্তনাদ করে উঠল।আয়াত এই সুযোগে গাড়ির দরজা খুলে বেরোতে যাবে তার আগেই তার হাত চেপে ধরলো ওমর। কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“কোথায় যাচ্ছিস তুই? কোথাও যাবি না।আমরা চলে যাচ্ছি আয়াত।এই শহর ছেড়ে।শুধু তুই আর আমি।”
আয়াত বুঝলো না ওমরের কথার গভীরতা।দিক বেদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে পিস্তল অন্য হাতে নিয়ে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে আবার আঘাত করল ওমরের কপাল‌ বরাবর।ওমর হাত ছেড়ে কপাল‌ চেপে ধরল।আয়াত গাড়ি থেকে বেরিয়ে দৌড়াতে লাগল।তার পিছু নিল ওমর।সামনেই লোহার রড ভর্তি ভ্যান গাড়ি চোখে পড়লো আয়াতের।ভাগ্যবসত হোক আর দুর্ভাগ্য বসত সেখানে একটা ছোট কাটা রড ও চোখে পড়ল তার।আয়াত এগিয়ে গেল সেদিকে।রড হাতে নিয়ে পিছু ফিরে আঘাত করল ওমরের মুখ বরাবর।গাল ধরে রাস্তায় বসে পড়ল ওমর।হাতের ফাঁক গলে রক্ত ঝরল অনবরত।আয়াত দেখল না সেই রক্ত।পিছু ফিরে দৌড়াতে লাগল।ওমর গর্জন করে উঠল।
“যাবি না আয়াত।ওখানেই দাড়া।শু*য়োরের বাচ্চা তোকে দাঁড়াতে বলছি আমি।”
আয়াত শুনলো না তার কথা।লাল রক্তবর্ন চোখজোড়া মেলে তাকিয়ে রইল আয়াতের গমন পথে।উপরে রাগ দেখালো।মুখে গালি দিল।অথচ বুকের ভেতর যে রক্তক্ষরণ শুরু হয়েছে তা দেখাতে পারল না কাউকেই। এতো কেন যন্ত্রণা হচ্ছে তার?ধরা পড়ে গেছে তাই নাকি সামনের নারীটি তাকে ধোঁকা দিয়ে চলে গিয়েছে সেজন্য!
ইতিমধ্যেই এমন একটা ঘটনায় রাস্তার মানুষদের মাঝে হৈ চৈ পড়ে গেছে। সুলেমান তাকিয়ে আছে আয়াতের আসার পথে।আয়াত দৌড়ে এসে সোজা তার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ল।হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো।এ কান্না আনন্দের নয়।মুক্তির নয়।মানুষটাকে আঘাত করে এসেছে সে। চিনচিনে এক ভোঁতা যন্ত্রণায় ভেতরটা ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছে তার।তবু পিছু ফিরে তাকালো না সে। সুলেমান তার মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে দূরে রাস্তায় বসে থাকা ওমরের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
“ঠিক আছিস তুই?”
আয়াত মাথা নাড়াল।সে ঠিক আছে। সুলেমানের সাথে থাকা পুলিশগুলো দৌড়ে গিয়ে আটক করেছে ওমরকে।ওমর নড়াচড়া করল না।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল না।তার ভয়ঙ্গকর রক্ত ঝরা চোখ গুলো সুলেমানের বুকে পড়ে থাকা আয়াতের দিকে।সেই দৃষ্টি দেখল সুলেমান।আয়াতকে শক্ত করে ধরে পিছু ফিরে নিজের গাড়ির দিকে যেতে যেতে বলল,
“চল এখান থেকে।”
চলবে 🌺
বড় করে দিছি আজকে🙆

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here