শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(ষোলো) #Mst.Shah Mira Rahman

0
513

#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(ষোলো)
#Mst.Shah Mira Rahman
জরুরী নয় আমরা যাদের ভালোবাসি তাঁদের ও আমাদেরকেই ভালোবাসতে হবে। ভালোবাসা এমন এক অনুভূতি যা কখনো জোর করে অনুভব করা যায় না যদি না তা মন থেকে আসে। সুলেমানের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। হায়াত তাকে ভালোবাসে।অথচ হায়াতের প্রতি কোনোদিন তার এমন কোনো অনুভূতি জন্মায় নি।যেই মেয়েটাকে সে ছোট থেকে বড় হতে দেখেছে।প্রতি পদে পদে যাকে ছোট বোনের ন্যায় আগলে রেখেছে।সেই মেয়েটার প্রতি অন্যরকম অনুভূতি জন্ম নেওয়া কতটুকু যুক্তিসঙ্গত সুলেমান বুঝে না।তার আগলে রাখা, দায়িত্ব পালন করাটাকে যদি‌ হায়াত নিজের মনে অন্যভাবে গুছিয়ে নেয় সেখানে সুলেমানের কী করার থাকে?সারাদিন একসাথে থেকে হেসে খেলে কথা বলেও হায়াতের প্রতি মুগ্ধ না হওয়া সুলেমান নিজের বিয়ের জন্য ঠিক করা মেয়ে মীরা কে একপলক দেখেই থমকে গিয়েছিল।তার লজ্জাবনত চোখ ঠোঁটের কোণের মৃদু হাসি গাল জুড়ে ছড়িয়ে পড়া লালরঙা আভায় মুগ্ধ হয়েছিল সুলেমান।সেই সুলেমান যদি হায়াতের প্রতি কিছু অনুভব না করে সেখানে তার দোষ কোথায়?সে কেন‌ ভুক্তভোগী হবে সেই না করা দোষের জন্য?সে তো হায়াতের অনুভুতি গুলোকে অবজ্ঞা করেনি।বরং সম্মান করেছে।কাছে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝিয়েছে বাস্তবতা মেনে নিতে।হায়াত মানেনি।তবে তার দোষী সুলেমান হলো কেন?আর মীরা?তার দোষ কোথায় এখানে?কেন আজ মীরা আর তার সংসার টা পরিপূর্ণ নয়?আজ যেখানে তার মেয়ের বাবা বাবা বলে ডেকে পুরো ঘরময় দৌড়ানো কথা ছিল আজ সেই ঘর খা খা পড়ে আছে।আর সেই বাবা ডাকা মেয়েটা কবরে শুয়ে আছে।এটাই কি ছিল তাদের প্রাপ্য?কারো একপাক্ষিক ভালোবাসার দেওয়া উপহার!
সেদিন‌ মীরার সাথে যা হয়েছিল সেটা কোন দুর্ঘটনা নয়।কারো বিকৃত মস্তিষ্কের পরিকল্পনা ছিল।আর সেই পরিকল্পনাটি করেছিলেন হায়াতের বাবা মাহিন মির্জা। সুলেমানের বিয়ের পর বাস্তবতা মানতে না পেরে হায়াত ভেতরে ভেতরে কষ্ট পাচ্ছিল।বাবা হিসেবে মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারেন নি মাহিন।মনে মনে দোষারোপ করেছে সুলেমান ও মীরাকে। যার দরুন সেদিন সুলেমানের হাত থেকে তেল পড়ে যাওয়ার পর মাহিন মির্জা দ্রুত এগিয়ে যান হায়াত আয়াতের ঘরে।দুজন তখন পড়ছিল।মাহিন হায়াত কে দিয়ে মীরাকে নিচে ডেকে পাঠায় শাহিন মির্জার নাম করে।মীরা সরল মনে নিচে আসার জন্য সিড়ির কাছে আসতেই ঘটে দুর্ঘটনা। রক্তাক্ত মীরাকে সিড়ির ওপর পড়ে থাকতে দেখে কয়েক মুহূর্তের জন্য জাগতিক সকল জ্ঞান লোপ পেয়েছিল সুলেমানের।ওই সময়ের যেই যন্ত্রণা টা অনুভব হয়েছিল সুলেমান ভয় পায় সেই ভোঁতা অনুভুতি কে।নিজের চোখের সামনে ধ্বংস হতে দেখেছিল পাঁচ মাস যাবৎ একটু একটু করে জমা করা তাদের স্বপ্ন‌গুলো।সাতমাসের মেয়েটার মৃত দেহটা যখন তার হাতে দেওয়া হয়েছিল প্রথমবারের মতো সুলেমান স্পর্শ করেছিল বাবা হিসেবে নিজের সন্তান কে।অথচ সেই সন্তান মৃত ছিল।সময়টা কি এতটাই সহজ ছিল?যতটা সহজে মাহিন মির্জা ক্ষমা চেয়েছিলেন নিজের কৃতকর্মের জন্য।সুলেমান যখন জানতে পারলো তার জঘন্য পরিকল্পনার কথা মাহিন তখন কত সহজেই ক্ষমা চাইলো তার কাছে। অনুতপ্ত হলেন নিজের কাজের জন্য।অথচ সুলেমান তার চোখে অনুতাপ দেখেনি।তাহলে কী করে এতো সহজেই ক্ষমা করতো তাকে।বছর কয়েক আগে যেই সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত হন তা সুলেমানের নির্দেশনায় করানো হয়েছিল। দীর্ঘদিন হসপিটালে থেকে তিন মাস বেডে পড়ে থাকতে হয়েছিল মাহিন কে। তারপরও এখন অবধি তার পা পুরোপুরি ঠিক হয়নি।এতেও সন্তুষ্ট না হওয়া সুলেমানের নজর তখন যায় হায়াতের দিকে।এতদিন যার অনুভূতি গুলোকে সম্মান দিয়েছিল মুহূর্তেই তা বিষের কাঁটার ন্যায় বিঁধতে লাগলো তার শরীরে।যেভাবে সেদিন মীরা কেঁদেছিল তার সামনে বসে ঠিক একই ভাবে সে কাঁদাতে চেয়েছিল হায়াত কে।তার করা দোষের ভাগ দিতে চেয়েছিল তাকে। কিন্তু পারেনি।যেই মেয়েকে সে বোনের মতো আগলে ছোট থেকে বড় করেছে তার ওপর প্রতিশোধ পরায়ণ হতে পারেনি সে।কিন্তু ক্ষমাও করতে পারেনি।শুধুমাত্র তার জন্য মীরা কেদেছে।কষ্ট পেয়েছে।দোষারোপ করে দূরে সরে গেছে তার থেকে।এত ভুলের ক্ষমা কি করে করতো সে।ক্ষমা করাটা কি আদৌ উচিত হতো? সুলেমান তাকে সেদিন ও ক্ষমা করেছিল যেদিন সে ফুটন্ত পানি ইচ্ছে করে মীরার পায়ে ফেলেছিল।সেবার ও ক্ষমা করেছিল যেদিন মীরার কোমড় সমান চুল গুলো কেটে পিঠের ওপর বরাবর করে দিয়েছিল।চুল গুলো সুলেমানের খুব পছন্দ ছিল বলে মীরার সেদিন কি কান্না! সুলেমান জড়িয়ে ধরে চুপ করিয়েছিল তাকে।এত কিছুর পরও হায়াত কে ক্ষমা করা সুলেমান এবার হায়াতকে চোখের দেখাও সহ্য করতে পারে না।গা রি রি করে তার।মনে হয় এই সবকিছুর জন্য দায়ী হায়াত।মীরার দোষী সে।তার ক্ষমা চাওয়া উচিত মীরার কাছে। সুলেমান তাকালো মীরার দিকে।বারান্দা থেকে ঘরে আবছা অন্ধকারে এলোমেলো ভাবে শুয়ে থাকা মীরাকে অনায়াসেই দেখা গেল। অশান্ত মন শান্ত হলো।মেয়েটা তার শান্তির একমাত্র কারণ।ও কাছে থাকলেই সুলেমানের দেহ মন শিথিল থাকে। পরিপার্শিক সব কিছু ভুলে হারাতে চায় এই মেয়ের অনুভূতির মাঝে।সুলেমান এগিয়ে গেল মীরার দিকে।তার গায়ের ওপর থাকা চাদর সরিয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল তাকে।নাক ঘষল মিরা বক্ষ বিভাজিকায়।ঘুমের ঘোরে কেঁপে উঠলো মীরা।হাত দিয়ে সরাতে চাইল সুলেমান কে। সুলেমান সরল না।বরং কামড় বসালো মীরার গলার বেশ খানিকটা নিচে ডান পাশে।মীরার গোঙানির শব্দ শোনা গেল।ঘুম হালকা হলো তার। সুলেমান তাকালো মীরার দিকে।ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে থাকা মিরার চোখে চোখ রেখে মৃদু কণ্ঠে বলল,
“আমায় মেরে ফেলো মীরা। কিন্তু কখনো দূরে সরে যেও না।এটা মৃত্যুর চেয়েও বেশি যন্ত্রণাদায়ক আমার জন্য।”
______
রাত প্রায় বারোটা।বেডের ওপর শুয়ে শুয়ে গভীর মনোযোগে উপন্যাসের বই পড়ছিল আয়াত।চোখের চশমা টা বেকে আছে। এলোমেলো কোঁকড়ানো চুল গুলো বিছানায় লেপ্টানো।এমন সময় হুট করেই তার ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠল। আয়াত তাকালো সেদিকে। পরিচিত নাম্বার দেখে তার ফুলো ফুলো গাল দুটো ভড়ে গেল।ফোন হাতে নিয়ে মেসেজ দেখল।
“কাল দেখা করতে চাই।”
আয়াতের হৃদয় কেপে উঠল।দীর্ঘ ছয়মাস পর আবার দেখা!কাপা কাপা হাতে রিপ্লাই দিয়ে হাত পা ছড়িয়ে আবার শুয়ে পরলো। অনুভূতি গুলো প্রজাপতির ন্যায় উড়তে চাইছে।আনন্দে মেতে উঠেছে তারা।আয়াত ভালোবাসে ওই মানুষটাকে।আজ থেকে নয়।ওই ছয় মাস আগে‌ সাজেকে সেই প্রথম দেখা দিন থেকেই।আয়াত চোখ বন্ধ করল। মনে করল সেই দিনটির কথা। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল সাজেকে।হায়াত যায়নি অসুস্থ থাকায়। সেখানেই এক বারবিকিউ পার্টি তে দেখা হয় লোকটার সাথে।তার হাসি, তার কথা বলার ভঙ্গি, চলন বলনের ধরন সব কিছু মুগ্ধ করেছিল আয়াত কে।পরে জানতে পারে তারা যেই রিসোর্টে উঠেছে লোকটা ও ওখানে ই উঠেছে।আয়াত খুশি হয়েছিল।এরপর থেকে মাঝে মাঝেই কথা হতো তাদের। দুদিন পর হুট করেই লোকটা চলে আসে সেখান থেকে। আয়াত কে জানায়নি পর্যন্ত। অজানা কারনে আয়াত বেশ অভিমান করেছিল লোকটার ওপর।তবে তার বেশ কিছুদিন পর হঠাৎ ই তার ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে।কল রিসিভ করে জানতে পারে এটা ওই লোকটার ফোন।আয়াত অবাক হয়েছিল।বিস্ময় ছেয়ে গিয়েছিল তার পুরো মুখে। একটা অবিশ্বাস্য ভাব নিয়েই অল্প অল্প করে আলাপ শুরু হয় তাদের।ধীরে ধীরে জন্ম নেয় অনুভূতি।এবং তা সময়ের সাথে গভীর হতে শুরু করে।আয়াত চোখ বন্ধ অবস্থাতেই লোকটার নাম আওড়ালো বেশ কয়েকবার।
“মিনহাজ, মিনহাজ, মিনহাজ।”
চলবে🌺
আজকের পর্ব ভালো হয়নি।🥺
সবাই বলবা ভালো হইছে তাইলে 💵(ঘুষ)দিমু🤦

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here