#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(সতেরো)
#Mst.Shah Mira Rahman
টেবিলের ওপর রাখা নীল রঙের ডায়রীটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে হায়াত।গভীর মনোযোগে কিছু একটা ভাবছে।সালমান হাতের কাজ করতে করতে তাকালো হায়াতের দিকে।তাকে এত গভীরভাবে কিছু ভাবতে দেখে ভ্রু কুচকে সামনে তাকালো।টেবিলের ওপর ডায়রীটা চোখে পড়তেই মেজাজ খিচে গেল তার।এগিয়ে গেল সেদিকে।হাত দিয়ে চট করে তুলে নিল ডায়রী টা।হায়াত ভয় পেল।সালমান তার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
“খুব পছন্দের ডায়রী বুঝি?”
হায়াত নিভু কণ্ঠে বলল,
“এক সময় ছিল।এখন নেই।”
শান্তি পেল সালমান। উত্তর টা তার পছন্দ হয়েছে।খিচে যাওয়া মেজাজ শান্ত হলো।তবুও কণ্ঠে গম্ভীরতা ভরে জিজ্ঞেস করল,
“এখন ও ভাইকে নিয়ে ভাবিস?”
হায়াত চমকে উঠল।
“তুমি পড়েছো?”
“অনেক আগেই।”
হায়াতের রাগ হলো। সালমানের হাত থেকে ডায়রী কেড়ে নিতে হাত বাড়ালো।
“কারো ব্যক্তিগত জিনিসে তার অনুমতি ছাড়া হাত দিতে নেই তুমি জানো না?”
সালমান ডায়রী ধরা হাতটা উপরে তুলে অন্যহাতে হায়াতের কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। মৃদু কণ্ঠে উচ্চারণ করল,
“তুই আস্ত মানুষটাই তো আমার ব্যক্তিগত।তোর আবার নিজস্ব কী ব্যক্তিগত?”
হায়াত তাকালো সালমানের দিকে। চোখের চোখ পড়ল।দৃষ্টি বিনিময় হলো দুই জোড়া চোখের।দমে গেল হায়াত।অপরাধ বোধ স্পষ্ট হলো চোখ জোড়ায়।মিইয়ে আসা কণ্ঠে বলল,
“অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি সালমান ভাই।পাপ করেছি আমি। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি ইচ্ছে করে করিনি কিছু।আমার রাগ হতো খুব।ইচ্ছে করতো সবকিছু শেষ করে দিতে।আর সেই রাগ গিয়ে পড়ত মীরা ভাবীর ওপর।আমি ভাবীর সাথে অনেক অন্যায় করেছি সালমান ভাই।এর প্রায়শ্চিত্ত আমি কি করে করবো?কিভাবে ক্ষমা চাইবো ভাবীর কাছে?নিজেকে বড্ড ছোট মনে হয় সালমান ভাই।মনে হয় আমার জন্যই আজ তাদের জীবনের এই পরিস্থিতি।আমি যদি ওইদিন তাকে ডাকতে না যেতাম তবে এমন কিছুই হতো না।সালমান ভাই মীরা ভাবী কী আর আসবে না?আমি ক্ষমা চাইবো তার কাছে।এই সুযোগটা ও কি দেবে না সে?”
সালমান তাকিয়ে রইল হায়াতের দিকে।হায়াতের চোখ ছলছল করছে।হাত এগিয়ে নিয়ে তার মাথা বুকে চেপে ধরল।শান্ত গলায় বলল,
“তোর জন্য কিচ্ছু হয়নি হায়াত।যা ঘটেছে পুরোটাই একটা দুর্ঘটনা।নিজেকে দোষ দিবি না একদম।আমার পছন্দ নয়।”
হায়াতের থেকে একটা তিক্ত সত্য লুকালো সালমান। মাহিন মির্জার কৃতকর্মের কথা বাড়ির কেউ জানে না। হায়াত ও না।যদি জানতে পারে এসব তার বাবা শুধু তার জন্য করেছে তবে সে সারাজীবন এই অপরাধবোধ কাঁধে চেপে বাড়াবে।সালমান কী করে সহ্য করবে তা।অন্যের করা আন্যায়ের দায় তার স্ত্রী কেন নেবে?
_____
সকালের নাস্তা করে বাড়ি থেকে বেরোনোর সময় সালমান কে পিছু ডাকে মাহিন।সালমান এগিয়ে যায় তার কাছে।মাহিন মির্জা কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে কাঁধে চাপড় মেরে সামনে এগোয়।সালমান ও তার পাশে হাঁটতে থাকে।বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে মুখ খুলেন মাহিন,
“সালমান,তুমি জানো হায়াত আয়াত দুজনেই আমার বড় আদরের সন্তান। তাদের কখনোই আমি কষ্ট কি বুঝতে দেয়নি।গায়ে হাত তোলা তো দূরে থাক জোড়ে ধমক অবধি দেইনি। আমার বড্ড স্বাধের মেয়ে তারা।দীর্ঘ বছরের অপেক্ষার ফল।আমার সেই সন্তানদের একজন কে আমি তোমার হাতে তুলে দিয়েছি।আশা করি তুমি আমাকে নিরাশ করবে না।যাকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিজ হতে নিয়েছ তাকে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে ভালো রাখার চেষ্টা করবে।আমার আগের করা কৃতকর্মের শাস্তি যেন আমার মেয়ে না পায়। জানিনা আমার সেদিন কী হয়েছিল। ঝোঁকের মাথায় এমন একটা অন্যায় করে ফেলেছি যার কোনো ক্ষমা নেই। অনুতাপের অনলে পুড়ে ছাড়খার হচ্ছি আমি। মীরার কাছে আমার ক্ষমা চাওয়া বাকী। তোমার ভাই কে বলো তাকে ফিরিয়ে আনতে।আমাকে নিয়ে যেন আর ভয় না পায় সে।অন্যের প্ররোচনায় এসে যেই অন্যায়টা আমি করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই আমি।দয়া করে এইটুকু সুযোগ তাকে দিতে বলো আমায়।”
সালমান তাকিয়ে রইল মাহিনের দিকে।দেখল এক বাবার আকুতি।সান্ত্বনা হিসেবে বলল শুধু অল্প কয়েক শব্দ।
“তুমি চিন্তা করো না। হায়াত আমার স্ত্রী।তাকে ভালো রাখার দায়িত্ব আমার।আর আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে জানি চাচা।”
কথাটা বলেই ওখান থেকে চলে গেল সালমান।কেন জানে না এই লোকটার সাথে কথা বলতে তার বড্ড বিতৃষ্ণা কাজ করে।একদলা তিক্ততা চলে আসে মনে।
____
আজ সত্যি সত্যিই মীরাকে হসপিটালে যেতে দেয়নি সুলেমান।সামান্য একটা কারণে ওই হসপিটাল থেকেই বের হয়ে আসতে বলছে।মীরা বুঝিয়েছে।সুলেমান বোঝেনি।এ নিয়ে বেশ রাগারাগি করেছে সে। সুলেমান কিছু না বলেই অফিসে চলে গেছে।মীরা ঘরে বসে কান্না করছে।গো ধরে বসে আছে সুলেমানের সাথে কথা বলবে না সে।এমনকি বাসায় এলে দরজাও খুলে দেবে না। এর মাঝে সুলেমান বেশ কয়েকবার ফোন করেছে তাকে সে তুলেনি।ফোন বন্ধ করে রেখে দিয়েছে।কিন্তু দুপুর বেলা যখন কলিং বেল বাজল তখন হন্তদন্ত করে গিয়ে দরজা খুলল মীরা।দরজার সামনে সুলেমান দাঁড়িয়ে।মীরা মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল।সুলেমান দেখল তার যাওয়া।অতঃপর চুপচাপ ভেতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করলো।মীরা রান্নাঘরে গেছে।সুলেমান কথা না বলে ঘরে এসে হাতের ব্যাগ রেখে ওয়াশরুমে ঢুকল।ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে বসার ঘরে গেল।মীরা খাবার বাড়ছে।সুলেমান গিয়ে চুপচাপ বসল।তার পাতে ভাত বেড়ে মীরা চলে যাওয়ার জন্য উদ্ধুত হতেই সুলেমান আটকে দিল তাকে।হাত টেনে বসালো নিজের কোলে।মীরা তবুও কথা বলল না।ছোটাছুটি করল না।তার নিশ্চুপতা সহ্য হলো না সুলেমানের।কণ্ঠে কোমলতা এনে বলল,
“সরি।”
মীরা অন্যদিকে তাকালো।সুলেমান এক হাতের আঙুল দিয়ে তার দুই গাল চেপে ধরে নিজের দিকে ফেরালো।
“আমার দিকে তাকাও মীরা।বলেছি তো সরি।”
“তাহলে কাল থেকে হসপিটালে যেতে পারবো?”
“না।”
মীরা এবার নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল। সুলেমান ছাড়লো না।কোমড়ের চাপ দৃঢ় করল।থেমে গেল মীরা।
“ওখানেই কেন চাকরি করতে হবে?তুমি চাইলে বড় কোনো হসপিটালে কাজ করতে পারো মীরা।আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।আর যদি এমন টা না চাও তাহলে কিছুদিন অপেক্ষা করো। কয়েকদিন পর হসপিটালে যাওয়া শুরু করো।আপাতত ছুটি কাটাও।”
মীরা তাকালো সুলেমানের দিকে। উৎফুল্ল মনে বলল,
“সত্যি।”
“হুম।তোমার ছুটির ফ্রম নিয়ে এসেছি আমি হসপিটাল থেকে।এবার খুশি?”
মীরা মাথা নাড়ালো।সে খুশি।সুলেমান দেখল তার উজ্জ্বল মুখ।গালে আঙুলের স্পর্শ একে দুষ্টুমির ছলে বলল,
“তাহলে এবার একটা চুমু খাও। খুব খিদে পেয়েছে আমার।”
“খিদে পেয়েছে ভাত খান।চুমু কেন?”
“না আমার চুমু খেতে ইচ্ছে করছে।দেখি এদিকে আসো।”
মীরাকে টেনে নিল নিজের কাছে।মুখ ডোবালো তার গলদেশে।ছোট ছোট অধর স্পর্শ করল কণ্ঠনালীতে।মীরার শরীর থেকে ভেসে আসা মিষ্টি ঘ্রাণটা নাসারন্ধে গিয়ে ঠেকলো।মীরা চোখ বন্ধ করে অনুভব করল সেই স্পর্শ।
“মীরা।”
“হুম।”
“কাল রেডী হয়ে থেকো তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।”
“কী সারপ্রাইজ?”
“কাল দেখবে।”
____(১৮+ অংশ প্রয়োজনে স্কিপ করুন)
রাত প্রায় বারোটা। ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সকাল।এর মাঝেই তার ফোন বেজে উঠল।হাতে নিয়ে দেখল সিদ্ধান্তর কল।ধরবে না ধরবে না করেও কেটে যাওয়ার আগ মুহূর্তে ফোন রিসিভ করে কানে দিল। সিদ্ধান্ত কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলল,
“কি হয়েছে?এত রাতে ফোন দিয়েছেন কেন?”
“নিচে এসো আমি অপেক্ষা করছি তোমার জন্য।”
সকাল অবাক হলো।সিদ্ধান্ত এখন নিচে তাদের বাড়ির বাইরে কী করছে?সে দ্রুত জানালার কাছে গেল।রাস্তার পাশে সিদ্ধান্তর গাড়ি দেখা গেল। সকাল সরে এলো ওখান থেকে। কাটকাট গলায় বলল,
“আমি যাবো না।”
“তুমি আসবে।”
“আমি বলছি তো আমি যাবো না।চলে যান আপনি।”
“সকাল।”
সকাল চুপ করে রইল।রাগে ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল।সেই নিঃশ্বাসের শব্দ শুনল সিদ্ধান্ত।গলায় আকুতি মিশিয়ে বলল,
“এসো সকাল।আমি মিস করছি তোমায়।”
সকালের বুকটা ধ্বক করে উঠলো।হু হু করে উঠলো ভেতরটা।আর কোনো কথা না।সোজা বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। বাড়ির বাইরে বেরোতেই সিদ্ধান্তের গাড়ি সামনে পড়লো। সকাল উঠে বসল গাড়িতে।গাড়ি আরো সামনের দিকে এগিয়ে গেল।সিদ্ধান্ত চুপচাপ। সকাল তাকিয়ে রইল সিদ্ধান্তর দিকে।বেশ কিছু দূর গিয়ে গাড়ি থামালো সিদ্ধান্ত। তাকালো সকালের দিকে।একদৃষ্টে তাকিয়েই রইল।যেন কতদিন দেখে না এই মুখ। সকালের মায়া হলো।এমন কেন করছে লোকটা। নিজের কৌতুহল প্রকাশ করল।নরম গলায় সুধালো,
“কি হয়েছে আপনার?এমন করছেন কেন?”
“কিছু না।”
বলেই সিদ্ধান্ত চোখ বন্ধ করে নিজের সিটে পিঠ ঠেকিয়ে মাথা এলিয়ে দিল।সকাল আবার প্রশ্ন করলো,
“তাহলে আপনাকে এরম দেখাচ্ছে কেন?কি হয়েছে বলুন।”
“তোমায় কাছে পেতে ইচ্ছে করছে।”
সকাল চমকালো।দম বন্ধ হয়ে এলো মুহূর্তেই। সিদ্ধান্ত তাকালো তার দিকে।সকালের এমন চাহনি দেখে আগের অবস্থায় মাথা এলিয়ে দিল।
“তুমি কী করে বুঝবে আমার অবস্থা। বিবাহিত হয়েও অবিবাহিতদের মতো জীবন কাটাতে হচ্ছে আমায়।এটা কতটা কষ্টকর জানো তুমি?সব হয়েছে তোমার বাপ ভাইদে……”
বাকি কথা বলতে পারলো না সিদ্ধান্ত। সকাল এক অভাবনীয় কাজ করে ফেলেছে।নিজের সিট থেকে উঠে তার দুই পাশে পা রেখে কোলের ওপর বসেছে। সিদ্ধান্ত হতবাক, হতভম্ব। বিস্ফোরক চোখ চেয়ে আছে সকালের দিকে। সকাল দুই হাতে সিদ্ধান্তর গাল চেপে ধরল।কণ্ঠে মাদকতা ছড়িয়ে বলল,
“তাহলে কেন নিয়ে যাচ্ছেন না নিজের কাছে?আমি তো যেতে চাই।”
সিদ্ধান্ত হাঁসফাঁস করল।করুণ গলায় বলল,
“সকাল সরে যাও।”
“কেন?”
“নিজেকে সামলানো কঠিন হয়ে যায়?”
“কে বলেছে সামলাতে?আমি তো সাড়া দিয়েছি।”
সিদ্ধান্তর মাথায় যেন সকালের নেশা চাপল।দুই হাতে চেপে ধরল সকালকে।নিজের সাথে মিশিয়ে দুই জোড়া অধরের মিলন ঘটালো।দংশন হলো একে ওপরের দ্বারা।সিদ্ধান্ত অগোছালো হলো।সকালের অধর ছেড়ে গলায় ঘাড়ে ছোট ছোট স্পর্শ আঁকল। ধীরে ধীরে তা কামড়ে পরিণত হলো। সকাল কেঁপে উঠলো।মিষ্টি যন্ত্রণায় ছটফট করল।সিদ্ধান্তর হাত সকালের শার্টের ওপর হানা দিল।শার্টের উপরের বোতাম ছিঁড়ে গেল। সিদ্ধান্ত মুখ ডোবালো সকালের বক্ষ বিভাজিকায়।সকাল লজ্জায় গুটিয়ে গেল।এই প্রথম সিদ্ধান্তের এত উন্মাদ ছোঁয়ায় খেই হারালো সে।অনুভূতির জোয়াড়ে ভাসল।ঠিক সেই মুহূর্তে সিদ্ধান্তের স্পর্শ থেমে গেল।ঘন ঘন শ্বাস ফেলে তাকালো সকালের দিকে।কপালে কপাল ঠেকিয়ে ধাতস্থ হলো। সকাল চোখ বন্ধ করে আছে লজ্জায়।এই মুহূর্তে সিদ্ধান্তের চোখে চোখ রাখার সাহস তার নেই। সিদ্ধান্তর এলোমেলো কণ্ঠ শোনা গেল।
“তোমার বাড়ি যাওয়া উচিত সকাল। এখানে আমার সামনে থাকলে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা ঘটে যাবে।”
চলবে 🌺
🥱🥱🥱🥱 যাই ঘুমাই🙊🙊🙊🙊