#তোকেই_ভালোবাসি
#লেখিকা:#আমেনা_আক্তার_আখি
#পর্বঃ২১
বাড়িটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।সবাই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত হক বাড়ির।বড় মেয়ের বিয়ে বলে কথা।আজকে সন্ধ্যায় মিহুর গায়ে হলুদ।পুরো বাড়িটা সাজানো হচ্ছে।ইয়াশ,আকাশ ও যোগ দিয়েছে তাতে।মেয়েরা মব মিহুর ঘরে বসে আড্ডা দিচ্ছে।তাদের এখনো কোনো কাজ করতে বলা হয়নি।আড্ডা দেওয়ার এক পর্যায়ে ইফা বলে উঠলো ম,,
“জানো তোমরা মিহু আপুর বিয়ের কয়েকদিন পর আমার ভাইয়ার বিয়ে!”
ইফার কথাটা শুনে সবাই অবাক হলেও মিথিলা একটুও হলোনা।বরং সে ইফার কথায় বেশ বিরক্ত হলো।মেয়েটা কালকে থেকে ওর কানের কাছে ইয়াশের বিয়ের কথা বলার যাচ্ছে।সুযোগ পেলেই বলছে।এখন আবার শুরু করেছে।
“ইয়াশের বিয়ে?কার সাথে?কই আমি তো জানিনা!”
মিহুর অবাক কন্ঠে বলা কথাটা শুনে ইফা বলে,, “আরে জানবা কিভাবে কাউকে এখনো জানানো হয়নি?আর বিয়েটা যার সাথে তাকে তোমরা সবাই চিনো!”
সবাই অবাকের উপর অবাক হচ্ছে।নীলা ইফার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে ইফা হয়ত ওর কথা বলবে।তাই মাথা নিচু করে একটু লজ্জা পাওয়ার অভিনয় করে।ইফা এটা ভালোই এনজয় করছে।তখন সবাই একসাথে বলে ওঠ,, ” কে সে?”
ইফা দাত বের করে হেসে বলে,, “রানু মন্ডল!”
মিথিলা ভ্রু কুঁচকায়।ও ভেবেছিল ইফা নীলার কথা বলবে।
মিহু মেকি রাগ দেখিয়ে ইফাকে বলে,, “ফাজিল হচ্ছিস দিনে দিনে।ইয়াশকে বলবো?”
“বলো তাতে আমার কি?আমি তো সত্যিটা বললাম।ভাইয়ার সাথে যার বিয়ে হবে সে আসলেই রানু মন্ডল!”
“ইফা ফালতু কথা রাখ?”
“আমার কথাকে কেও গুরুত্ব দেয়না ফালতু ভেবে উরিয়ে দেয়।কিছু বলবই না তোমাদের।”
“চুন্নির কথায় কে বা গুরুত্ব দিবে।ভালো মানুষ হলে তো গুরুত্ব দিবে।”
ইফা ক্ষেপে উঠে,, “তুই চুপ থাক শাঁককচুন্নি!”
“আচ্ছা তোরা কি ঝগড়া না করে থাকতে পারিস না?আজকে আমার গায়ে হলুদ,কালকে বিয়ে,!চলে যাবো আমি আর তোরা এখনো একে অন্যের সাথে ঝগড়া করতেছিস?”
“তোমার বোন তো আগে শুরু করে।”
মিথিলা তেড়ে উঠে। “আমি আগে শুরু করছি?নাকি তুই শুরু করছিস?”
“চুপপপপপ!”
মিহু চিল্লানোতে দুজন চুপ হয়ে যায়।দুজন দুজনের দিকে ক্ষিপ্ত নজরে তাকায়।মিহু দুজনের দিকে তাকিয়ে বলে,,
“বইন তোরা যদি ঝগড়া করতে চাস তাহলে যা!তোদের রুম আছে।তবুও আমার মাথা খাসনা যা!”
মিথিলা ইফা এবার দুজন দুদিকে ঘুরে বসে।মিহু দাম ছেড়ে দুজনের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরায়।নীলাদের সাথে কথা বলতে থাকে।মিথিলা ইফা দুজন মিহুর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে।মিহু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে অন্যদের সাথে গল্প করতে থাকে।এটা দেখে মিথিলা ইফাও কথা শুরু করে।মিহু যে এখন ওদের দুজনকে পাত্তা দিবে ভালোই বুঝে গেছে দুজন।
——————————————-
সন্ধ্যা,,
ছাদে গায়ে হলুদের স্টেজ সাজানো হয়েছে।ওখানে মিহুকে বসিয়ে রাখা হয়েছে।নীলা মিহুর হাতে মেহেদী পড়াচ্ছে।নীলা মেহেদি দেওয়া দেখে মিথিলা মুখ বাকায়।নীলা এত সুন্দর মেহেদী দিতে পারে ও পারে না কেন?নীলা তো তাহলে ওর থেকে একধাপ এগিয়ে গেল।সবকিছুতেই তো ও অনেক ভালো।এর জন্যই বুঝি মেজোমা ওকে ছেলের বউ হিসেবে পছন্দ করেছে।
“মিথু এদিকে আয়?”
মিহুর ডাক শুনে মিথিলা সেদিক পানে তাকায়।উঠে মিহুর পাশে গিয়ে বসে।
“ওখানে এভাবে বসে ছিলি কেন?”
“এমনি!”
“মেহেদী পড়বি না?”
“না ইচ্ছা নেই!”
মিহু এবার ভ্রু কুঁচকায়।পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় বোনের দিকে।কেমন মনমরা হয়ে আছে।মিহু মিথিলার পিছন দিয়ে হাত দিয়ে হালকাভাবে বোনকে জড়িয়ে ধরে।আদুরে কন্ঠে বলে,
“মন খারাপ কেন হ্যাঁ?তুই মন খারাপ করে রাখলে আমি কিন্তু রেগে যাবো।হাসি দে একটু?”
মিথিলা ঠোটে হাসি টেনে বলে,, “মন খারাপ না আপু।তুমি মেহেদী পড়ো আমি একটু আসছি।”
“কোথায় যাবি তুই?কোথাও যাবিনা আমার পাশে বসে থাক নীলা তোকে মেহেদী দিয়ে দিব। ”
নীলা ইফার হাতে মেহেদী পড়াচ্ছিল মিহুর কথা শুনে বলে,, “হ্যাঁ মিথিলা ইফার হাতের মেহেদী পড়ানো শেষ হলে তোমাকে পড়িয়ে দিব।একটু বসো!”
“দরকার নেই।পড়বো না আমি মেহেদী!”
“পড়বিনা কেন শুনি?দেখ নীলা কতো সুন্দর মেহেদী দিচ্ছে?”
ইফাও মিথিলার সাথে সায়িয়ে বলে,,”হ্যাঁ দেখো নীলা আপু কত সুন্দর মেহেদী দিচ্ছে।”
নীলার এত এত প্রসংশা শুনে মিথিলা রেগে যায়।রেগে বলে,, “এত সুন্দর হচ্ছে তাহলে তোমরাই পড়ো আমাকে কেন নিতে বলছো বারবার।”
রেগে কথাটা বলে ওখান থেকে উঠে চলে যায় মিথিলা।মিহু মিথিলার এর হঠাৎ মন খারাপ,হঠাৎ রাগের কারণটা বুঝলো না।ইফা পাশ থেকে বলে উঠে,,
“এ মেয়ের মাথা আসলেই খারাপ!”
————————————————-
মিথিলা নিজের রুমে বসে রাগে ফুঁসছে।নীলার কথা ভাবতেই তার মাথায় রাগ তিরতির করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।সবাই ওর প্রসংশা করছে।কেন করবে?কেন?
এদিকে ইয়াশ সারাবাড়ি মিথিলাকে খুজে যাচ্ছে কিন্তু তার দেখা নেই।দুদিন হয়ে গেছে মেয়েটা তার সামনে আসছে না।ওতো ভালবাসি বলে দিলো তবুও মেয়েটা ওকে এড়িয়ে চলছে।ব্যাপারটা নিতান্তই সন্দেহজনক।মেয়েটা কি ওকে ভুল বুঝলো কোনো কিছুতে?কিন্তু ও তো সেরকম কোনো কিছু খুজেই পাচ্ছে না!
ইয়াশ পুরো বাড়ি খুঁজে না পেয়ে ছাদের এক সাইডে চেয়ারে বসে পড়ে।ছাদের এদিক-ওদিক তাকিয়ে পায়না।আকাশ ইয়াশকে একা দেখে ওর পাশে গিয়ে বসে।
“ব্রো কি ব্যাপার, এমন পেঁচামুখো হয়ে বসে আছো কেন?”
“মিথিলাকে দেখেছিস কোথাও?”
আকাশও পুরো ছাদটা একবার নজর বুলায়।মিথিলাকে দেখতে না পেয়ে বলে,, “না দেখিনি!”
“দেখবি কিভাবে?তোর চোখ তো শুধু একজনের দিকেই আছে?”
আকাশ দাত বের করে হেসে বলে,, “এবার একটা ঠিক কথা বলেছো!আসলেই আমি তোমারটাকে কিভাবে দেখবো?আমারটাকে দেখেই তো সময় পাইনা!”
“তোর বিয়ে ক্যন্সেল!”
আকাশ অবাক হয়ে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বলে,, “বিয়ে ক্যন্সেল মানে?”
“মানে তোর যার সাথে বিয়ে হবে তার সাথে বিয়ে ক্যন্সেল!”
“মানে কী এসবের?”
“আগে আমার বিয়ের সানাই বাজা তাহলে তোরটা আপনাআপনি বেজে যাবে।আর যদি আমারটা না বাজে?তো ভাই আফসোসের সাথে বলতে হচ্ছে,তোমার উনিকে আর তুমি পাবানা।”
“পাবোনা মানে?এই এই এটা কিন্তু বাটপারি হচ্ছে?”
“তুই কি আমাকে বাটপার বললি?আজকে থেকে এখন থেকে এই মুহুর্তে থেকে আমার বোনের আশেপাশে যেন তোকে না দেখি?”
“মানে কি?তোমারটা তোমাকে পাত্তা দিচ্ছে না বলে আমারটাকেও দুরে নিয়ে যাবে?দিস ইজ নট ফেয়ার ভাইয়া!”
ইয়াশ চুপ থাকে মুখ ঘুরিয়ে।আকাশ সেদিকে তাকিয়ে বলে,,
“ভাইয়া?”
“ভাইয়া ভাইয়া করবি না?যেদিন শালাবাবু বানাতে পারবি সেদিন এসে ডাকিস!”
“শালাবাবু বানাবো কিভাবে তুমি তো পথ বন্ধ করে দিচ্ছো?”
“বললাম না আমার সানাই বাজাতে পারলে তোরটাও বাজবে?তোর আমাকে শালাবাবু বানাতে হলে তো তোকে আগে আমার বিয়ের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।বুঝলি?”
“নিজে পারতেছোনা আমার বোনকে পটাতে এখন আমারটাও কেড়ে নিচ্ছো?”
“পকপক করিস না যা বলছি করতে পারলে করে নাহলে যা।আর আমার বোনের আশেপাশে যেন না দেখি তোকে?”
আকাশ কিছুক্ষণ কিছু একটা ভেবে বলে,,”এখন তো মিহু আপুর বিয়ে হচ্ছে এখনি সবাইকে তোমার বিয়ের কথা বলবো?”
ইয়াশ আকাশের দিকে তাকিয়ে আকাশের মাথায় গাট্টা মেরে বলে,, “এখন কেন বলবি?এখন আপাতত তোর ভাবিকে খুজে দে!”
আকাশ চোখ বড়বড় করে বলে,,”ভাবি!”
“তো মিথিলা যদি আমার বউ হয়, তোর ভাবি হবে না!”
আকাশ আফসোস করে বলে,,”ওকেও এখন আমার ভাবি ডাকতে হবে?”
ইয়াশ এবার বিরক্ত হয়।বিরক্ত নিয়ে বলে,, “তোর যা ইচ্ছে ডাকিস এখন ওকে খুজে নিয়ে আয় যা!”
আকাশ ইয়াশের পাশ থেকে উঠে পড়ে।চারিপাশে একবার চোখ বুলিয়ে ইফা আর মিহুর দিকে হাটা ধরে।মিহুর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,, “আপু মিথু কোথায়?”
মিহু আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,, “মেয়েটা রেগেমেগে চলে গেছে,দেখ নিজের রুমে আছে কিনা?হঠাৎ রেগে গেল কেন বুঝলাম না?আমিও যেতে পারছি না তুই একটু দেখে আয় না,কি করছে মেয়েটা?”
আকাশ মাথা নাড়িয়ে বলে,, “আচ্ছা!”
ওখান থেকে উঠে আবার ইয়াশের কাছে যায়।মিহুর বলা কথাগুলো ইয়াশকে বলে।ইয়াশ এবার মিথিলার রুমের দিকে হাটা দেয়।মিথিলার রুমের সামনে এসে থামে।দরজা আটকানো।ইয়াশ কয়েকবার দরজায় টোকা দেয়।কয়েকবার নক করতে মিথিলা দরজা খুলে দেয়।দরজা খুলে ইয়াশের মুখ দেখে আরো রাগ হয় মিথিলার।রেগে বলে,,
“তুমি এখানে কেন আমার কাছে কেন এসেছো?যাও তোমার ওই নীলার কাছে যাও।।আমার সামনে আসবে না তুমি!”
চলবে,, ইন শা আল্লাহ🍁