#শব্দহীন_প্রণয়কাব্য(নয়)
#Mst.Shah Mira Rahman
বিয়ের এক বছরের মাথায় মীরা একটা ভয়ংকর সুন্দর অনুভূতির সাথে পরিচয় করালো সুলেমানের।সে বাবা হতে চলেছে।মীরা মা হবে।খবরটা শুনে কিছুক্ষণ থম মেরে মীরার দিকে তাকিয়ে রইল।মীরা লজ্জা পেল।তাকে এভাবে লজ্জা পেতে দেখে সুলেমান শুয়ে থেকেই আলগোছে জড়িয়ে ধরল তাকে।মুখ দিয়ে টু শব্দটি পর্যন্ত বের হলো না।আসলে অনুভূতি গুলো বোঝানোর মতো শব্দ পেল না।বেশ কিছুক্ষণ মীরাকে ওভাবে জড়িয়ে রেখেই তার গলায় মুখ ডুবিয়ে ধীর স্বরে বলল,
“আমি খুব খুশি মীরা।সত্যিই খুব খুশি।”
রাতটা ওভাবেই এক সুখ সুখ অনুভুতিতে কাটলো দু’জনের।পরেরদিন সুলেমান মীরাকে নিয়ে হসপিটালে গেল চেকআপ করাতে।চেক আপ করাতে গিয়ে এক অনাকাঙ্ক্ষিত সত্যির মুখোমুখি হলো দুজনে।মীরার জরায়ুতে সাব মিউকাস নামক টিউমার ধরা পরেছে।মীরা অবাক হলো।সে নিজে একজন ডক্টর। জরায়ুতে টিউমার হলে সিম্পটম দেখা গেল না কেন?সে তো কিছুই বুঝতে পারেনি।গাইনোকলজিস্ট আয়শা সিকদার জানালো, অনেক কেসেই সিম্পটম দেখা যায় না। গর্ভধারণ করার পর আল্ট্রাসাউন্ড করার সময় ধরা পরে।এ ক্ষেত্রে মা ও সন্তান দুজনেরই জীবন ঝুঁকি থাকে।এমনকি গর্ভপাত ও হতে পারে।মীরা কেঁপে উঠে পেটে হাত রাখলো।তার সন্তানের কিছু হবে না তো? সুলেমান কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।ডঃ এর সাথে কথা বলে তারা হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো।সেখানে এক লোমহর্ষক দৃশ্য দেখল তারা। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের মৃত্যু।সাদা চাদরে ঢাকা লাশটা কে বের করে আনা হয়েছে এম্বুলেন্সে ওঠানোর জন্য।লাশের পাশে তার পরিবারের কান্না কাটি।অন্যদিকে একটা যুবক সদ্য জন্ম নেওয়া একটা বাচ্চা কোলে দাঁড়িয়ে আছে।মীরার বুকটা হু হু করে উঠল।কর্মসূত্রে অনেক মৃত্যু দেখলেও আজ যেন তার হৃদয় কেঁপে উঠলো।ভয় পেল পেল সে।তবে তার থেকে বেশি ভয় পেল সুলেমান।বাড়ি ফিরেই মীরার হাত ধরে বলল,
“মীরা,বাচ্চা চাইনা আমার।আমার সাথে চলো এবোরশন করাবে তুমি।”
মীরা আতকে উঠল।
“কি বলছেন এসব?মাথা ঠিক আছে আপনার?
“না ঠিক নেই।মীরা ভালো কথা বলছি চলো এবোরশন করিয়ে ফেলি।”
“সুলেমান আপনার রেস্টের প্রয়োজন।”
“না আমার তোমাকে প্রয়োজন।ডক্টর কি বলল শুনলে না।যত দিন যাবে তোমার প্রেগনেন্সি ক্রিটিক্যাল হতে থাকবে।”
মীরা দেখল সুলেমান কে।এর আগে কখনও সুলেমানের এমন আচরণ দেখেনি মীরা।কেমন যেন ছন্নছাড়া।সুলেমান হাত টেনে ধরল মীরার,
“চলো মীরা আমার চেনা পরিচিত ডাক্তার আছে।সব ঠিক করে দেবে একদম চিন্তা করো না।”
মীরা ঝটকা মেরে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল।রাগে পুরো শরীর কাঁপতে লাগল,
“আপনি নিজের ঔরষজাত কে কি করে হত্যা করার কথা ভাবছেন সুলেমান?এতটা নিষ্ঠুর বাবা কি করে হতে পারেন আপনি?”
সুলেমান তাকিয়ে রইল মীরার দিকে।মীরা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই ধপ করে বসে পরল বেডের ওপর।মীরা সন্ধ্যা কে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো। সুলেমানের ওপর অভিমান টা পাহাড় সমান হলো।নিজের সন্তান কে কেউ কী করে হত্যা করার কথা ভাবতে পারে? এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হলো সুলেমান?তার সুলেমান তো এতো নিষ্ঠুর নয়।
সন্ধ্যার আগে আগে বুশরা বাড়িতে পৌঁছালো মীরা। সিদ্ধান্ত তখন বাড়িতে ছিল না।ব্যাবসার কাজে শহরের বাইরে গেছে। এতদিন তাদের পারিবারিক ব্যাবসা তার চাচা আনোয়ার বুশরা সামলাতো। হুমায়ূন মারা যাবার পর তার জায়গায় রাজনীতি তে পা রাখলেন আনোয়ার বুশরা।আর ব্যাবসা ধরিয়ে দিলেন সিদ্ধান্ত কে। তাকে সহযোগিতা করছে নিয়ণ। এতদিন না না বলে পার পেয়ে গেলেও বাবার মৃত্যুর পর আর ঘাটায়নি সিদ্ধান্ত।
মীরা কতক্ষণ চাচা চাচীর সাথে গল্প করে নিজের ঘরে চলে গেল। সিদ্ধান্ত এলো তার অনেক পরে।এসেই মীরার ঘরে ছুটল।মীরা সিদ্ধান্ত কে বসিয়ে তার এক হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখল।সিদ্ধান্ত দেখল মীরার বিধ্বস্ত মুখ।চিন্তায় পড়ল। সুলেমানের সাথে কি ঝগড়া করে বেরিয়ে এসেছে মীরা?নিজের সন্দেহ দূর করতে রয়ে সয়ে জিজ্ঞাসা করল,
“কি হয়েছে মীরা?তোকে এরকম লাগছে কেন?”
“তুমি মামা হতে যাচ্ছো ভাইয়া।”
সিদ্ধান্ত বাকরুদ্ধ।এরকম একটা খুশির খবর কেউ বেজার মুখে দেয়?খুশিতে মীরাকে জড়িয়ে ধরল।
“তো এই খবর কেউ এতো মন খারাপ করে দেয়?”
মীরা হাসল। তাকিয়ে দেখল ভাইয়ের খুশিতে চকচক করা চোখ দুটো।
_____
সুলেমান বরাবরই শান্ত স্বভাবের লোক।ঠাণ্ডা মাথায় কঠিন পরিস্থিতিও খুব সহজেই সামলে নেয়। কিন্তু কথা যদি আসে মীরার ক্ষেত্রে।তবে যেন সুলেমান আলাদাই একটা মানুষ হয়ে যায়।
মীরার প্রতি তার পজেসিনেস তাকে নিজের স্বভাবের বিপরীতে নিয়ে আসে।যা তার চরিত্রের সাথে কখনোই যায় না।মীরাকে হারানো ভয় তাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছে।এতগুলো দিন মীরার সাথে যেই সুখ সে বিনিময় করেছে যেই নতুন অনুভূতি গুলোর সাক্ষী হয়েছে সেই মীরা কে সে হারাতে চায় না।কোনো ভাবেই না।মীরাকে নিয়ে সে ওভার পজেসিভ তা অনেক আগেই বুঝেছে।তাই বলে এতটা যে নিজের সন্তান কে হত্যা করার কথা চিন্তা করছে?
প্রায় ঘন্টাখানেক গুম ধরে বসে থাকার পর সুলেমানের মাথায় চাপ পরল।বুঝল সে কি করেছে!মায়ের সামনে তার বাচ্চাকে মেরে ফেলার কথা বলেছে। কাল যখন মিরা জানালো সে বাবা হতে চলেছে তখন তো সে নিজেই কতটা খুশি হয়েছিল।তাহলে মীরা কতটা খুশি হয়েছিল যখন সে জানতে পারল সে মা হতে চলেছে।নিজের মাথা চেপে ধরল সুলেমান।না চাইতেও সে মীরা কে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে। সুলেমানের বুকটা হু হু করে উঠলো।ঘর থেকে বেরিয়ে মীরাকে খুঁজল পেল না।বসার ঘরে হায়াত আয়াত কে জিজ্ঞেস করলে কিছু জানতে পারল না। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা নিজে এসে বলল মীরার বাড়ি যাওয়ার কথা। সুলেমান এই বিষয়ে জানে না এতেও বেশ অবাক হলো।
সুলেমানের ভয় হলো মীরা কি তবে তার ওপর রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে?বেশি ভাবলো না।যেভাবে ছিল ওই অবস্থাতেই বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে।
রাত প্রায় নয়টার দিকে বুশরা বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ালো।ভেতরে গেল না রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে ফোন করল মীরাকে।মীরা ধরল না।আবার ফোন দিল। তিনবারের বার ফোন রিসিভ হলো।মীরাকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই বলল,
“নিচে এসো আমি দাঁড়িয়ে আছি।”
মীরা তড়িঘড়ি শোয়া থেকে উঠে বারান্দায় গেল। গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে সুলেমান।পড়নে বাড়ির রেগুলার ইউস করা টি শার্ট আর ট্রাউজার। দৃষ্টি তার দিকে।মীরা সরে গেল।কাটকাট গলায় বলল,
“আমি যাবো না।চলে যান আপনি।”
“তোমাকে না নিয়ে ফিরবো না।এসো আমি অপেক্ষা করছি।”
মীরার কি যেন হলো।ফোন কেটে দিয়ে বারান্দার পর্দা ছেড়ে দৌড়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এলো। সুলেমান দেখল মীরার আসা।এগিয়ে গেল সেদিকে।
“এভাবে দৌড়াদৌড়ি করছো কেন?এই সময় দৌড়াদৌড়ি একদম এলাও নয় মীরা।”
মীরার চোখ দুটো ঝাঁপসা হয়ে এলো। ঝাপিয়ে পড়ল সুলেমানের বুকে।
“আপনি খারাপ সুলেমান।খুব খারাপ।”
মীরাকে কোলে তুলে নিল সুলেমান। গাড়ির দিকে যেতে যেতে বলল,
“জানি।”
মীরাকে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসলো।তবে গাড়ি স্টার্ট করলো না।মীরা কে কাছে টেনে নিল।দুই হাতে জড়িয়ে ধরে তার কাঁধে মুখ গুজে দিল।মীরা চুপ করে রইল।
“সরি মীরা।আর কখনো এমন কথা বলবো না আমি।জানি না কি হয়েছিল আমার।মাথা ঠিক ছিল না।আমাদের সন্তান ও।আমার আর তোমার সন্তান।ও সুস্থ স্বাভাবিক ভাবেই পৃথিবীর আলো দেখবে। কিচ্ছু হবে না ওর আর নাই তোমার। কিচ্ছু হতে দেব না আমি। আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন।দেখো সব ঠিক হয়ে যাবে।”
মীরা দেখলো সুলেমান কে। সুলেমান তার দিকে তাকালো।
“আর হ্যা,আর কোনোদিন রাগ করে এভাবে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসবে না।কষ্ট হয় আমার।বুঝেছো?”
মীরা হাসল।মাথা নাড়ালো,বুঝেছে।সুলেমান দেখল সেই হাসি।মীরাকে আরো কাছে টেনে বলল,
“তাহলে এবার একটা চুমু দাও।”
মীরার হাসি প্রসারিত হলো। সুলেমানের কপালে দুই গালে নিজের ঠোঁট চেপে ধরল।চোখ বন্ধ করে সুলেমান অনুভব করল সেই স্পর্শ।অশান্ত মন খনিকেই শান্ত হয়ে গেল।গাড়ি চলতে শুরু করল।মীরা সিদ্ধান্ত কে মেসেজ করে জানালো তার ফিরে যাওয়ার কথা।মেসেজ দেখে মৃদু হাসল সিদ্ধান্ত।
______
পরেরদিন বাড়িতে কিছু আত্মীয় স্বজন ডেকে সালমান আর হায়াতের আবার বিয়ে পড়ানো হলো।হায়াতের হাত পা কাঁপছে।তাকে সালমানের ঘরে বসিয়ে রাখা হয়েছে।কিন্তু সে বসে রইল না।ঘরের এদিক থেকে ওদিক পায়চারি করছে।সে কিছুতেই সালমানের সাথে সংসার করবে না।প্রশ্নই ওঠেনা।তার আকাশ পাতাল চিন্তার মাঝে ঘরে ঢুকলো সালমান। হায়াত কে ওভাবে পায়চারি করতে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেল।
“কি ব্যাপার এভাবে ইঁদুরের মতো এদিক থেকে ওদিক ছোটাছুটি করছিস কেন?”
হায়াত তাকালো সালমানের দিকে। ভাবনায় বিভোর থেকেই উত্তর দিল,
“ভাবছি।”
“কি ভাবছিস?”
“কি করে তোমার থেকে রেহাই পাওয়া যায়।”
সালমান চেয়ে রইল হায়াতের দিকে।অতঃপর কিছু একটা ভেবে ঠোঁট চেপে হাসল।ঘরের বাতি নিভিয়ে এগিয়ে গেল হায়াতের দিকে।হায়াত চেঁচিয়ে উঠলো,
“এই এই বাতি নেভালে কেনো?আমি কিছু দেখছি না।”
কথা শেষ করার আগে সালমানের শক্ত হাত জড়িয়ে ধরল হায়াতের কোমড়। হায়াত কেঁপে উঠলো।কণ্ঠ জড়িয়ে এলো।
“আমাকে ছোঁবে না।মেরে ফেলবো একদম।”
“আমি তো কবেই মরেছি।”
সালমানের কণ্ঠে নেশা।হায়াত চমকালো। সালমান কে সরানোর চেষ্টা করল। সালমানের ভ্রু কুঁচকে এলো।
“বিরক্ত করছিস কেন?”
“ছোঁবে না আমায়।কামড়ে দেব।”
“বিয়ে কি তোকে শোকেস-এ সো পিস সাজিয়ে রাখার জন্য করেছি নাকি?দেখি এদিকে আয় টপাটপ দুটো চুমু খেয়ে আগে এঁটো করে নি তোকে।”
হায়াত আতকে উঠলো।পালানোর চেষ্টা করল।সালমান ধরে ফেলল। নিজের দিকে ঘুরিয়ে চট করে হায়াতের ঠোঁটে দুটো চুমু খেল।কিন্তু মন ভরল না।আবারো ঠোঁট জোড়া নামিয়ে নিল হায়াতের ঠোঁটে।হায়াতের দম বন্ধ হয়ে এলো।জীবনে প্রথমবার কোনো পুরুষের স্পর্শ পেল খুবই বেকায়দায়।শ্বাস ঘন হলো তার। মেরুদণ্ড শিথিল হয়ে গেল। সালমানের স্পর্শ গভীর হলো।হায়াত কামড়ে দিল সালমানের ঠোঁট। পরবর্তীতে নিজেও কামড়ের শিকার হলো।বেশ কিছু সময় পর সালমান ঠোঁট ছেড়ে নাক ঘষল হায়াতের ঘাড়ে।
“হায়াত?”
“হুম।”
“এই সুখে আমি পাগল হয়ে যাবো।”
হায়াত রেগে সালমানের ঘাড়ে নখ বসালো।সালমান সাথে সাথে কোলে তুলে নিল তাকে।ছুড়ে মারল বিছানার ওপর।হায়াত ব্যথা পেল। কিন্তু নিজেকে সামলানোর সুযোগ পেল না।সালমানের আক্রমনাত্মক স্পর্শ ছুটে এলো তার দিকে।হায়াত কেঁপে কেঁপে উঠলো।নিজেকে গুটিয়ে নিতে গিয়েও ব্যর্থ হলো।মিশে গেল সালমানের শরীরের সাথে। সালমান খুব সাবধানে আগলে নিল তাকে।
চলবে🌺