#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_চতুর্থ_পর্ব ৷
– আমি জানি আপনি আমাকে ভালো ছেলে হিসেবে পছন্দ করেন । আর আপনার সেই বিশ্বাসের কোনো ভঙ্গ আমি করেছি বলে মনে হয় না । তবুও যদি আমি অনিচ্ছায় কিছু করে থাকি সেটা আমাকে দেখিয়ে দিয়ে তারপর শাসন করে দিবেন আমি শুধরে নেব কারণ আপনি আমার শিক্ষক । আর আপনি শুধু আমার শিক্ষা জীবনের শিক্ষক নন, আপনাকে আমি নিজের দৈনন্দিন জীবনের শিক্ষক মনে করি ।
– এত এত জ্ঞানের কথা না বলে তাড়াতাড়ি বাসায় আসো , আর সত্যিটা বলে আমাকে উদ্ধার করো ।
– ঠিক আছে স্যার আমি আসতেছি ।
– হুম ১০ মিনিটের বেশি যেন না লাগে ।
– ওকে স্যার ।
মোবাইল কল কেটে দিয়ে জাফর ভাই আর শফিক কে বললাম , ” ভাই আপনারা ডিনার শুরু করেন আমি একটু আসতেছি , জরুরি যেতেই হবে । ”
– জাফর ভাই বললেন , তাহলে আমরা অপেক্ষা করি তুমি আসলে একসাথে খাবো ।
– না ভাই আমার দেরি হতে পারে , আর আপনি কষ্ট করে জার্নি করে এসেছেন তাই খেয়ে নিন । আমি এসে খাওয়া দাওয়া করে আবারও তাসের আড্ডা শুরু করবো । শফিককে উদ্দেশ্য করে বললাম , তুই আর রকি ভাইকে নিয়ে খাওয়া শুরু কর আমি একটু যাব আর আসবো ।
– আচ্ছা ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসিস।
– হুম ।
★★
রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর ভাবছি , কি এমন করলাম যে কারণে স্যার এমন রাগ করলো ? বৃষ্টি কি তাহলে মিথ্যা কিছু বানিয়ে বললো ? কেমন যেন অদ্ভুত একটা মেয়ে সেটা বুঝতে পারছি বিকেলে কিন্তু তার কর্মকান্ড অদ্ভুত হবে ? স্যারের বাসা মুহসিন কলেজ মোড় পেরিয়ে আরেকটু সামনে মেঘার মোড়ে । আমি কেবল হাউজিং মোড়ে এসে দাঁড়ালাম , রাস্তার পাশে জামিল কাকার হোটেল দেখা যাচ্ছে । হোটেলের সামনে চুলোর পাশে একটা কাঠের টেবিল রাখা আছে আর সেই টেবিলে একটা কুকুর ঘুমিয়ে আছে। আমরা এই হোটেলের কিছুই কখনো খাইনা , কারণ যেই টেবিলের উপর কুকুর ঘুমিয়ে আছে সেই টেবিলের উপর আগামীকাল সকালে জামিল কাকা রুটি পরটা বানাবে । কি বিশ্রী অবস্থা !
১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছাতে পারলাম না , ১৭ মিনিট হেঁটে হেঁটে স্যারের বাসায় আসলাম । আমি আগে কখনো স্যারের বাসায় যাইনি যদিও স্যার বলেছেন কয়েকবার কিন্তু যাওয়া হয়নি আর । চারতলা বাড়ির একদম উপর তলায় তারা থাকেন । আমি সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে চারতলায় গিয়ে থমকে গেলাম । তিনটা ফ্ল্যাটের আলাদা তিনটা দরজা , কিন্তু কোন দরজাটা স্যারের সেটা বুঝতে পারছি না । ভাবলাম স্যার কে কর দেবো কিন্তু সাহস হচ্ছে না তাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি । হঠাৎ করে একটা দরজার সামনে পরিচিত জুতা দেখতে পেলাম , এই জুতা বিকেলে বৃষ্টির পায়ে ছিল । আমি কিছু না ভেবেই দরজা নক করলাম , আর ২০ সেকেন্ডের মধ্যে দরজা খুলে গেল ।
দরজা খুলেছে বৃষ্টির ছোটবোন । বৃষ্টির বোনের নাম জানা হয়নি এখনো তাই ভাবলাম এখন জিজ্ঞেস করলে কেমন হয় ? পরে ভাবলাম , নাহহ আগে বাসার পরিস্থিতি স্বাভাবিক কিনা সেটা বুঝতে হবে তারপর নাহয় জিজ্ঞেস করে নেবো ।
ড্রইং রুমের একপাশে ডাইনিং টেবিল সাজানো আর সেই টেবিলে স্যার আর বৃষ্টি পাশাপাশি বসে আছে । টেবিলের পাশে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে মনে হয় তিনি স্যারের বউ মানে বৃষ্টি আম্মু ।
– স্যার টেবিলে বসে বললেন , সজীব তাড়া এসো দেরি হয়ে গেল কেন ? তুমি তো সময় নষ্ট করার মানুষ না তাহলে আজকে ১০ মিনিটের যায়গায় তার বেশি সময় লাগলো কেন ?
– পাশ থেকে বৃষ্টি বললো , বাবা তুমি যেভাবে তোমার ছাত্রকে ভয় দিয়েছ তাতে মনে হয় তোমার ছাত্রের হাত কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়েছে । তাই হাঁটতে গিয়েও জোরে হাঁটতে পারে নাই ।
– স্যার বললেন , আরে না সজীব প্রচুর সাহসী ।
– বৃষ্টি বললো , তাতো আমি দেখতেই পাচ্ছি চোখের সামনে ।
– স্যার বললেন , সজীব বেসিং থেকে হাত ধুয়ে আসো তাড়াতাড়ি , আমাদের সাথে বসে ডিনারটা আগে কমপ্লিট করে নাও ৷
– বললাম , না স্যার সমস্যা নেই মেসের মধ্যে গিয়ে ডিনার করে নেবো । জাফর ভাই এসেছেন সন্ধ্যা বেলা তার খেতে বসার আয়োজন করছিলাম ঠিক তখনই আপনি কল দিলেন ।
– জাফর মানে ইলেক্ট্রনিকস ডিপার্টমেন্টে পড়তো সাতক্ষীরার সেই ছেলেটা ?
– জ্বি স্যার ।
– ওহহ আচ্ছা, আগে বললে তো তাকে নিয়ে আসতে বলতাম । কলেজ থেকে বেরিয়ে যাবার পরে জাফর এর সাথে আর দেখা হয়নি ।
– আমরা মোটামুটি রান্নার ব্যবস্থা করেছি , এখন হয়তো তাদের খাওয়া শেষ হয়ে গেছে ।
– তাহলে তুমি ঝটপট করে আমাদের সাথে বসে পরো , আমাদের বাসায় আবার শুক্রবারের রান্নার কিছু ভালো আয়োজন করা হয় । আর সে আয়োজন দুপুরে না করে রাতের বেলা করতে পছন্দ করি আমরা । আজকে আমাদের সাথে তুমি মেহমান আর ওভাবে ভয় পাইয়ে দিয়ে তোমাকে আসতে বলার জন্য সরি ।
– ছি ছি সরি কেন বলছেন ? সমস্যা নেই ।
– আচ্ছা তাহলে তাড়াতাড়ি বসো ।
★★
রান্না ভালো ছিল , পেটের মধ্যে ক্ষুধাও ছিল তাই গ্রাম বাংলার বাঙালীর মত কম খাইনি । খাবার খেয়ে ড্রইং রুমে বসে ছিলাম , স্যার বললো , “সজীব তুমি কি এখনই চলে যাবে ? মানে রাত বেশি হয়ে গেলে তো আবার পথে সমস্যা হতে পারে । ”
– বললাম , জ্বি স্যার সেটাই ভালো হয় , তাছাড়া মেসে জাফর ভাই অপেক্ষা করবে ।
– ও হ্যাঁ হ্যাঁ তাইতো , আচ্ছা আগামীকাল সকালে কলেজ যাবার সময় তাকে সাথে নিয়ে যেও ।
– কথা দিতে পারছি না স্যার , ভাই একটা কাজের জন্য এসেছে তাই সকাল বেলা যদি তার কাজ থাকে তাহলে তো যেতে পারবে না ।
– আচ্ছা যদি ফ্রী থাকে তাহলে নিয়ে যেও ।
– ঠিক আছে স্যার , আসসালামু আলাইকুম ।
– ওয়া আলাইকুম আসসালাম ।
★★
দরজা দিয়ে বের হয়ে জুতা পায়ে দিতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম বৃষ্টির সেই জুতা নেই । তাহলে কি বৃষ্টি বাইরে গেল ? আমি তো ভেবেছিলাম হয়তো রুমের মধ্যে চলে গেছে তাই বারবার এদিক সেদিক উঁকি দিয়ে তাকে খোঁজার চেষ্টা করছি । কিন্তু সে কি সত্যি সত্যি বাইরে গেল ? নাকি মসজিদের মুসল্লীর জুতা যেমন করে চুরি হয়ে যায় তেমন করে কেউ চুরি করেছে ?
সিড়ি বেয়ে দোতলায় নেমে এসেছি তখনই মোবাইলে কল বেজে ওঠলো , বের করে দেখি বৃষ্টির নাম্বার থেকে কর এসেছে । রিসিভ করে কানের কাছে ধরলাম , ” বৃষ্টি বললো , আপনি কি আমাদের বাসা থেকে বেরিয়ে পরেছেন ? ”
– বললাম , হ্যাঁ বেরিয়ে পরেছি কেন তুমি কোথায় ?
– আমি আর মারিয়া ছাদে দাঁড়িয়ে আছি , আপনিও চলে আসুন আপনার সাথে জরুরি কথা আছে ।
– এত রাতে ছাঁদে কেন ?
– আপনি আসুন জরুরি কথা আছে ।
– ঠিক আছে ।
এত কষ্ট করে ভালো ভালো খাবার গুলো খেলাম কিন্তু সিড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে করতে সেগুলো হজম হয়ে যাবে । ছাঁদে গিয়ে দেখি বৃষ্টি আর তার ছোট বোন দাঁড়িয়ে আছে , তারমানে শালির নাম মারিয়া ।
– বললাম , তাড়াতাড়ি বলেন আমাকে একটু জরুরি যেতে হবে ।
– কিসের জরুরি জানতে পারি ? নাকি মেসের সেই জাফর নাকি ফাফরের জন্য যেতে চাচ্ছেন ?
– জ্বি অনেকটা সেরকমই ।
– আপনি কি রাগ করেছেন ?
– কোন বিষয় ?
– এত রাতে আপনাকে হালকা ভয় দিয়ে তারপর বাসায় আনার জন্য ।
– নাহহ ।
– আসলে আমিই বাবাকে বলেছিলাম যে তোমার ছাত্র খুব ভিতু কিন্তু বাবা মানতে রাজি হচ্ছে না কারণ তার বক্তব্য হচ্ছে আপনি সাহসী তাই এমন করে বলতে বললাম ।
– ওহহ আচ্ছা সমস্যা নেই মাঝে মাঝে ভয় পাওয়া ভালো ।
– আমি বাসায় এসে বাবাকে আপনার ছবি দেখিয়ে বললাম , বাবা এই ছেলেকে তুমি চেনো ? তখন বাবা বললো , আপনি নাকি তার প্রিয় ছাত্র । তারপর বাবা বললো আমি কিভাবে চিনি ? তখন আপনার সাথে পাঁচ বছর আগের পরিচয় এর কথা বললাম । আর আজকে যে দেখা হয়েছিল সেটাও বলেছি ।
– ভালো করেছেন ।
– বিকেলে বলেছিলাম যে তুমি করে বালাট যেন বহাল থাকে কিন্তু আপনি সেটা করছেন না ।
– আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে ।
– ছোটবেলা থেকে আমার একটা বিশাল বদভ্যাস আছে ।
– যেমন ?
– আমি হুটহাট করে কঠিন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত অপরজনকে মেনে নিতে খুব কষ্ট হয় ।
– যেমন ?
– যেমন , এখন আমি একটা সিদ্ধান্ত নিলাম যেটা আপনার কাছে হয়তো অপ্রকাশিত হতে পারে ।
– কি সিদ্ধান্ত ?
– আপনার সাথে আমার আর যোগাযোগ হবে না , মোবাইলে কোন মেসেজ , নদীর তীরে দেখা কিংবা কল দিয়ে শুভ রাত্রি শুভ সকাল ইত্যাদি কিছুই না । আমি আপনাকে চিনিনা আর আপনিও আমাকে চিনেন না ।
– এটা কেমন সিদ্ধান্ত ? আমার অপরাধ ?
– উহুঁ আপনার কোন অপরাধ নেই , কিন্তু এটা হচ্ছে আমার ছোটবেলা থেকে বদভ্যাস । অপ্রকাশিত র সিদ্ধান্ত আপনাকে মেনে নিতে হবে , তাই অনুগ্রহ করে আর কখনো যোগাযোগ করতে চেষ্টা করবেন না আপনি ।
– এটা কিন্তু ঠিক না ।
– দেখুন আপনার কাছে যেটা ঠিক সেটা আপনি করবেন , আর আমার কাছে যেটা ঠিক সেটা আমি করবো ।
– তাই বলে হুট করে যোগাযোগ বন্ধ করতে হবে ?
– হ্যাঁ হবে ।
– কেন ?
– আমি চাই না তাই ।
– পাঁচ বছর পরে খুঁজে পেলাম আর আজকেই এমন কথা শুনতে হবে ?
– আপনি এখন আসুন ।
– সিদ্ধান্ত তো পরিবর্তন হবে না ?
– হলে জানাবো ।
– অপেক্ষা করবো ।
– আশাহত হবেন ।
– তবুও আফসোস থাকবে না ।
– তাহলে তো ভালোই ।
– ভালো থেকো সবসময় ।
– চেষ্টা করবো । আর বাসায় গিয়ে একটা ফোন দিয়েন এবং সেটাই শেষ কল ।
– চেষ্টা করবো ।
★★
বাসায় আসার সময় একটা অজানা ভয় নিয়ে এসেছি কিন্তু এখন আরেকটা অজানা কষ্ট নিয়ে চলে যাচ্ছি । মনটা সম্পুর্ণ খারাপ হয়ে গেল কারণ বৃষ্টি হঠাৎ এমন কথা বলবে বুঝতে পারিনি ।
রাস্তায় বেরিয়ে জোরে জোরে হাঁটতে শুরু করলাম , ঘড়িতে রাত ১০ঃ৩৪ মিনিট । হাউজিং মোড়ে সেই জামিল কাকার হোটেলের সামনে এসে দেখি সেই টেবিলের উপর দুটো কুকুর ঘুমিয়ে আছে । বাহহ এর মধ্যে সঙ্গী যোগাড় করে ফেলেছে ?
মোবাইল বেজে উঠলো , ভাবলাম বৃষ্টি হয়তো কল দিয়ে বলবে , “আমি আপনার সাথে ফাজলামো করেছি , বাসায় গিয়ে কল দিও অনেক কথা আছে । ”
– কিন্তু কল করেছে মেসের রান্না করা খালা , রিসিভ করে জানলাম , সন্ধ্যা বেলা রান্না শেষ করে বাসায় গিয়ে খালা নাকি আবার পিঠা বানিয়েছে । কারণ জাফর ভাই নাকি যখন ছিলেন তখন পিঠা খুব পছন্দ করতো । তাই এত বছর পরে তাকে পেয়ে আবারও পিঠা খাওয়াতে ইচ্ছে হলো । তিনি বাসায় গিয়ে বানাতে বানাতে এত রাত হয়ে গেছে আর খালা এখন ক্লান্ত । আমরা যদি এখনই গিয়ে নিয়ে আসি তাহলে নাকি গরম গরম খেতে পারবো । দরকার হলে , খালার বড় মেয়ে আর তার ভাইয়ের মেয়েরা মিলে কিছুটা সামনে আসবে ।
– বললাম , ঠিক আছে আমি হাউজিংয়ের ভিতর থেকে সোজা লাল বিল্ডিংয়ের পাশ দিয়ে রেললাইনে যাচ্ছি । সেই পথ দিয়ে তাদের আসতে বলেন ।
– খালা বললো , ঠিক আছে মামা আসেন তাহলে ।
★★
লাল বিল্ডিংয়ের সামনে গিয়েই ওদের সাথে দেখা হয়ে গেল । খালার মেয়ে তুলি আর একটা মামাতো বোন এসেছে সাথে । রাত বেশি হয়ে গেছে তাই বেশি কথা না বাড়িতে তাদের হাত থেকে পিঠার ব্যাগ নিয়ে পিছনে ফিরে হাঁটা শুরু করলাম । ব্যাচেলর জীবনে পরপর দুদিন পিঠা খাবো আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে ।
মেসে ফিরে দেখি শফিক আর রকি রুমের মধ্যে বসে সিগারেট খাচ্ছে । জাফর ভাই রুমের মধ্যে নেই সে জলিল ভাইয়ের সাথে তার রুমে কথা বলছে । রুমে ঢুকে সিগারেটের গন্ধে আমার মাথা গরম হয়ে গেল । এমন চিৎকার শুরু করলাম যে , দুজনেই সাথে সাথে ব্যাগ থেকে রুম স্প্রে বের করে ফুছ ফুছ করে মেরে দিল । জাফর ভাইও রুমের মধ্যে আসলো । আমি পিঠা তাদের হাতে দিয়ে বললাম , শুরু করেন আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি ।
বাথরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রুমের বাইরে গেটে দাঁড়িয়ে শফিক ফোনে তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে । আমি রুমের মধ্যে গিয়ে জাফর ভাইয়ের সাথে কিছু পিঠা খেলাম । তারপর শফিককে ডাক দিলাম কিন্তু সে কথা বলেই যাচ্ছে তাই দৌড়ে গিয়ে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে আসলাম ।
তারপর ভরা পেটে চারজনেই আবার পিঠা খেতে শুরু করলাম , সকলের পেট হয়তো বলছে যে তাদের মালিক আজকে এত খাচ্ছে কেন ?
রকির মোবাইল বেজে উঠলো , শফিক বললো তার মোবাইলও কেড়ে নিতে হবে । জাফর ভাই বললো , সবার মোবাইল বন্ধ করে তারপর আবার খেলা হপ্পে ঠিক আছে ?
– আমরা বললাম ঠিক আছে তাই হবে ।
পিঠা গুলো পাশে রেখে চারজন আবারও তাস খেলতে বসে গেলাম । আস্তে আস্তে আমি বৃষ্টির কথা জাফর ভাইকে বললাম । স্যারের মেয়ে কথাটা শুনে ভাই চমকে গেল , কিন্তু বৃষ্টির প্রাক্তন প্রেমিকের বিষয় নিয়ে পরে বুদ্ধি দেবে বলে জানালেন ।
★★
রাত তিনটা পেরিয়ে গেছে ।
দরজার সামনে বড় বুটজুতোর শব্দ শুনতে পাচ্ছি , আমাদের দরজাটা ধাক্কা দিচ্ছে বাইরে থেকে । আমি উঠে দরজা খুলে দেখি ৫/৬ জন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে তাদের সাথে রান্না করা খালার ছেলে পারভেজ এবং সেই বস্তির আরো ৭/৮ জন লোক দাঁড়িয়ে আছে ।
– পুলিশের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল চিকন পুলিশটা আমাকে বললো , তোমার নাম সজীব ?
– বললাম , জ্বি স্যার আমি সজীব ।
– তোমাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে ।
– কিন্তু কেন ? আমার অপরাধ ?
– রেললাইনের বস্তির যেই মহিলা তোমাদের মেসে রান্না করে তার বড় মেয়ে এবং ভাইয়ের মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে রেললাইনের পাশে । আলামত দেখে মনে হচ্ছে , ধর্ষন করার পরে খুন করে লাশ ওখানে ফেলে রাখা হয়েছে । মেয়ের মায়ের বক্তব্য অনুযায়ী সেই মেয়ে তোমার কাছে পিঠা দিতে এসেছে । তারপর আর তারা বাসায় ফিরে যায়নি , আপনার নাম্বারসহ আপনার রুমমেইটদের নাম্বারে কল করা হচ্ছে কিন্তু আপনাদের নাম্বার বন্ধ । আমাদের সন্দেহের প্রাথমিক তালিকায় আপনি তাই রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত আপনাকে আমাদের হেফাজতে থাকতে হবে ।
চলবে….
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম ((সজীব))