_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি । #_পর্ব = ৪০

0
232

#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ৪০

” কি হইছে সবকিছু আমাকে খুলে বলো, তারপর দেখি কি করলে ভালো হবে? আর কীভাবে করতে হবে? ”

” মা আর বেতন বোনাসের টাকা সব বিভিন্ন কাজের মধ্যে খরচ হয়ে গেছে, মিষ্টি খুব কান্না করছে তাকে নতুন কাপড় কিনে দিতে হবে। বাড়ি ভাড়া দিতে গিয়ে হাত একদম খালি হয়ে গেছে, তাই নিরুপায় হয়ে তোমার স্মরণাপন্ন হতে হয়েছে। যা কিছু করি তবুও তুমি আমার একমাত্র শেষ ভরসা সেটা আমি আমার মনে প্রানে বিশ্বাস করি। ”

” ওহহ আচ্ছা। ”

” ওহহ আচ্ছা মানে কি? বিশ্বাস হয় না? ”

” হ্যা বিশ্বাস হয়, নাহলে তো তুমি মামুনের কাছেও টাকা চাইতে পারতে কিন্তু তার কাছে না বলে তুমি আমার সাথে শেয়ার করেছ এটা বিশ্বাস না করে কোন উপায় আছে? ”

” আমি কিন্তু শুধু নুপুর জোড়া নেবো, বাড়তি কোন টাকা নিতে পারবো না। ”

” একটা বুদ্ধি আছে আমার, বলবো? ”

” কি বুদ্ধি? ”

” নুপুর জোড়া আমি আমার অফিসের এক আপুর কাছে দেখিয়েছিলাম কারণ তার সাথে আমি আমার সবকিছু শেয়ার করি। তখন তিনি নুপুর জোড়া খুব পছন্দ করেন, আমাকে বলেন এইরকম এক জোড়া নুপুর তিনিও বানাতে চায়। এখন তুমি যদি বলো তাহলে আমি তার সাথে কথা বলে দেখতে পারি সে যদি এটাই কিনে তাহলে আমরা আসল দামটা পাবো নাহলে দোকানে গেলে ৫০০/৬০০ টাকা কম হয়ে যাবে। ”

” ঠিক আছে তুমি তাহলে তার সাথে কথা বলো, আর যদি সে না কেনে তাহলে তুমি যেকোনো একটা দোকানে বিক্রি করে আমাকে টাকা দেবে। আরেকটা কথা হচ্ছে, নুপুর জোড়া সুন্দর করে ছবি তুলে রাখবে তাহলে আমি সেই ছবি দিয়ে নতুন করে নুপুর তৈরী করতে পারবো। ”

” ঠিক আছে মেডাম তাই হবে। ”

” তাহলে তুমি কখন জানাতে পারবে? ”

” আগামীকাল বিকেলে আমি নুপুর বিক্রির টাকা তোমার কাছে দিয়ে দেবো তখন তুমি কিনে নিও। ”

” আর তুমি? ”

” আমি কি? ”

” তুমি আমার সাথে যাবে না? ”

” নিতে চাইলে অবশ্যই যাবো! ”

” ঠিক আছে কাল বিকেলে আমি মিষ্টিকে নিয়ে বের হবো তখন তুমি ফ্রী পোর্ট মোড়ে থেকো। ”

” আচ্ছা ঠিক আছে। ”

★★

কল কেটে দিয়ে বৃষ্টি অনেকটা আস্বস্ত হয়ে গেল, সে মনে মনে সজীব এর বিষয় অবাক হলো। মনে মনে হাজার গুণ ভালবাসা মুক্ত আকাশে উড়িয়ে তার নামে পাঠিয়ে দিল।

সজীব একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো, বালিশের তলায় নুপুর জোড়া রাখা ছিল তাই বের করে হাতের উপর ধরে রইল। কত ইচ্ছে ছিল সে এটা নিজের হাতে বৃষ্টির পায়ে পরিয়ে দেবে, বৃষ্টির সুন্দর পায়ে সৌন্দর্য বাড়িয়ে দেবে নুপুর জোড়া। কিন্তু তার সেই ইচ্ছেটা কেমন করে মিলিয়ে যেতে চলছে? আফসোস আজ সে ভালবাসার কাঙাল বলে নিজের ইচ্ছেটা খাটাতে পারে না।

সারারাত সজীব দুচোখের পাতা এক করতে পারলো না, সেহরি খেয়ে তারপর নামাজ পড়ে নিবু নিবু চোখ দিয়ে বিছানায় ঢলে পড়েছে। সেই ঘুম ভাঙ্গলো বেলা এগারোটার দিকে, তাও বৃষ্টির নাম্বার থেকে কল আসার কারণে। ঘুম থেকে উঠে গোসল করে তৈরি হয়ে সজীব কে বের হবার জন্য বলেই বৃষ্টি কল কেটে দিল। সজীব আরো কিছুক্ষণ গড়াগড়ি করে আস্তে আস্তে বিছানা ছেড়ে উঠলো। রকি বিকেলে বাড়িতে চলে যাবে গতকাল যাবার ইচ্ছে ছিল কিন্তু টিকেট সংগ্রহ করতে পারেনি।

বৃষ্টি যদিও বলেছিল বিকেলে ফ্রী পোর্ট অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে থাকতে কিন্তু সজীব একটা বাজার খানিকটা আগেই বাসা থেকে বের হয়ে গেল। কারণ রকি এখন বের হচ্ছে, তার গাড়ি জি,ই,সি থেকেই বিকেল তিনটা বেজে ছেড়ে যাবে। তাই এখন বেরিয়ে রওনা দেয়া উচিত নাহলে আবার গাড়ি মিস হতে পারে। সজীব এর বাড়ি থেকে গ্রামের বাড়ি যাবার জন্য বারবার বলা হয়েছে কিন্তু সজীব তার কেসের ব্যাপার নিয়ে অজুহাত দিয়ে এড়িয়ে গেল। গতকাল থেকে খালা অনেকবার কল দিয়েছে কিন্তু সজীব রিসিভ করে নাই। বেতনের টাকা দিয়ে চার হাজার টাকা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে, তার নিজের কাছে অবশ্য এখনো পনের হাজারের বেশি টাকা আছে। কারণ খুলনায় কেসের ব্যাপারে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা টাকা রেখে দিয়েছিল কিছু তবুও খরচও হয়েছে কিছু।

|
|

বৃষ্টি আর মিষ্টি দুই বোন ফ্রী পোর্ট যখন আসলো তখন দুটো বাজে বাজে অবস্থা। সজীব রকিকে তার সিএনজিতে উঠিয়ে দিয়ে জোহরের নামাজ পড়ে চারিদিকে পায়চারী করছিল। ব্যস্ত শহর থেকে সব মানুষের গ্রামের বাড়িতে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে চলে যাচ্ছে। চারিদিকে তাকালে শুধু ব্যাগ ও মালামাল নিয়ে সবাইকে এদিক সেদিক হাঁটতে দেখা যাচ্ছে।

সজীব যদিও বলেছিল আগ্রাবাদ যাবে কিন্তু বৃষ্টি তাতে আপত্তি জানিয়ে বললো, ঝনক প্লাজা কিংবা চৌধুরী মার্কেট অথবা বে-শপিং সেন্টার থেকে কিনে নিলেই হবে। সজীব কোন তর্কে না গিয়ে বৃষ্টি সাথে সাথে প্রথমে ঝনক প্লাজায় গেল ঢুকলো।

মহিলাদের নিয়ে মার্কেটে আসলে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। একটা নেলপলিশের রঙ পছন্দ করতে করতে তারা দু তিনট মার্কেট ঘুরে বেড়াবে। বৃষ্টি আর মিষ্টির সাথে হাঁটতে হাঁটতে সজীব ক্লান্ত কিন্তু তবুও কেনা হয়েছে শুধু একটা থ্রি-পিস। মেহেদী, চুড়ি, কানের দুল ইত্যাদি নিতে নিতে দুই ঘন্টা পার হয়ে গেল। এরপর সজীব জোর করে বৃষ্টিকে একটা থ্রি-পিস কিনে দিল, যদিও আপত্তি ছিল কিন্তু সবার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলার ইচ্ছে বৃষ্টির ছিল না। সজীবকেও একটা শার্ট কিনতে হলো কারণ সেটা ছিল বৃষ্টির পছন্দ করা তাই সজীব আর আপত্তি করতে পারে নাই।

” মার্কেট থেকে বের হতে হতে সন্ধ্যা হই হই অবস্থা, অবশেষে রাস্তায় বেড়িয়ে বৃষ্টি বললো, অনেক সময় লেগে গেল। আর মিষ্টি আজকে রোজা রেখেছে তাই ওর কষ্ট হচ্ছে খুব, আমরা বাসায় চলে যাচ্ছি। ”

” সজীব বললো, ঠিক আছে। আর কিছু বাকি আছে কিনা দেখো তো? ”

” কিছু বাকি নেই বরং বেশি কেনা হয়েছে। ”

” আচ্ছা তাহলে রিক্সা নিয়ে চলে যাও। ”

” ঠিক আছে ভালো থেকো তুমি। ”

” বৃষ্টি শোনো! ”

” হ্যাঁ বলো। ”

” সজীব পকেট থেকে একটা ছোট্ট বক্স বের করে বৃষ্টির হাতে দিয়ে বললো, এটা তোমার জন্য। ”

” বৃষ্টি দেখলো তার হাতে নীল গ্রাফ কাগজে মোড়া ছোট্ট একটা বক্স তবে হালকা। সে দ্বিতীয় কোন প্রশ্ন না করে বললো, এবার তাহলে আসি? ”

” আচ্ছা ঠিক আছে। ”

★★★

সজীব রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটা শুরু করলো, আজকে মনটা একটু প্রশান্তি লাগছে। বৃষ্টি তাকে তার জীবন থেকে বের করে দেয়নি যদি দিতো তাহলে বিপদের সময় সজীব এর কাছে আসতো না। বৃষ্টি হয়তো বিশ্বাস করে সজীব তাকে অজস্র নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসে। সে জেনে বুঝে হয়তো সজীবকে কষ্ট দিচ্ছে কারণ সে জানে সজীব তাকে ছেড়ে কখনো যাবে না। এতো মানুষের ভিড়ে কেউ একজন সজীবের উপর অধিকার খাটাচ্ছে, আবার ইচ্ছে করে কষ্ট দিচ্ছে। চোখে চোখে রাখছে তার ভুলত্রুটি বলে দিচ্ছে, আর এসব সজীব হয়তো কষ্ট মনে করে না।
হাঁটতে হাঁটতে বাসায় এসে সজীব সেভাবেই বিছানা দখল করে শুয়ে পরলো। পরক্ষণেই মনে পরলো যে আসরের নামাজ পড়তে হবে তাই লাফ দিয়ে উঠে নামাজের জন্য অজু করতে গেল।

বাসায় ফিরে মিষ্টি তার মা-বাবার সঙ্গে দাঁড়িয়ে আনন্দে নাচানাচি শুরু করে দিল। একটা একটা করে তার জন্য কেনা সবকিছু বের করছে আর নিজ অনুভূতি প্রকাশ করছে। বৃষ্টি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে ইফতারের ব্যবস্থা করতে লাগলো। যদিও এখনো আধা ঘণ্টার মতো সময় আছে তবুও আস্তে আস্তে সব তৈরী করা ভালো।

দেশবাসীর ধারণা ছিল এ বছর রোজা হবে ত্রিশটা কিন্তু গতকাল রাতেই জানা গেছে যে ত্রিশ রোজা পূর্ণ হবে না। আজকে সৌদি আরব সহ মধ্যপ্রাচ্যের আরব দেশগুলোতে ঈদ হয়েছে। তাই নিয়মানুযায়ী আগামীকাল বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে।

ইফতারে পরে মিষ্টি মেহেদী নিয়ে আসলো তাকে মেহেদি পরিয়ে দিতে হবে। বৃষ্টি মেহেদী বের করতে গিয়ে দেখে সজীব এর দেয়া নীল বক্সটা। তাই বৃষ্টি মেহেদী রেখে আগে বক্সটা খুলতে শুরু করলো। বক্সের ভিতরের জিনিস দেখে বৃষ্টি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো কারণ তার চোখের সামনে গতকাল সজীব এর দেয়া সেই নুপুর জোড়া। তার মানে সজীব নুপুর জোড়া বিক্রি করে নাই বরং নিজের টাকা দিয়ে বৃষ্টির চাহিদা পুরন করে দিল। কিন্তু তার জন্য তৈরি করা নুপুর জোড়া ঠিক তাকেই দিল, গতকাল বৃষ্টি নুপুর জোড়া গ্রহণ করে নাই বরং বিরক্ত হয়েছে। কিন্তু আজকে সে মনে হয় অনেক খুশি হয়ে গেছে কারণ তার চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক। দুচোখ ভর্তি পানি টলমল করতে লাগলো মনে হয় যেন তা এখনই গড়িয়ে পরবে।

বৃষ্টি দেখল ভিতরে আরেকটা কাগজে চিঠি আছে, সাদা কাগজে লেখা একটা চিঠি। তারমানে সজীব বাসা থেকে চিঠি লিখে তৈরী হয়ে এসেছে আর সে নুপুর বিক্রির কথা মিথ্যা বলেছে।

বৃষ্টি…

আমার আসলে কিছু করার নেই তোমাকে ভালবাসা ছাড়া। তোমার কাছে আমার ব্যবহার টা মনে হয় পাগলামি কিন্তু আমার কাছে সেটাই ভালো লাগে কি করবো ? আমার কাছে মনে হয় এটা স্বাভাবিক।

তোমাকে বারবার বিরক্ত করেছি, তুমি সবসময় তোমার নিজের বিরক্তিটা দেখেছো কিন্তু কখনও আমার বিরক্ত করার কারণ টা অনুভব করো নি। আমি পারবো না নিজে তোমার সামনে থেকে সড়ে দাঁড়াতে। খুব যত্ন করে তোমার জন্য বুকের মধ্যে ভালবাসা সাজিয়ে রাখতে রাখতে আজকে সেটা বিশাল ভালবাসার সমুদ্র হয়ে গেছে। তুমি যখন এই বুক ভর্তি ভালবাসা ফিরিয়ে দিয়ে চুপ করে বসে থাকো তখন আমার হৃদয় হাহাকার করে। অজানা নীল প্রান্তের মাঝে স্বপ্ন গুলো ডানে তোমার আঁধারে খুঁজে বেড়ায়।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তোমার জন্য আমার চোখে অজস্র নিঃস্বার্থ স্নেহময় ভালবাসা থাকবে। পৃথিবীর নির্জন পথে চলতে চলতি যদি সত্যি সত্যি কখনো তোমার মনে হয় ভালবাসার ভিষণ দরকার। তখন নাহয় এসে নিয়ে যেও।

নুপুর জোড়া তোমার জন্য অনেক আশা নিয়ে আমি বানিয়েছি। ইচ্ছে ছিল নিজের হাতে পরিয়ে দিয়ে তোমার সাথে কোন এক স্নিগ্ধ বৃষ্টিতে ভিজতে যাবো। অথবা শীতের সকালে কুয়াশা ঘেরা শহরের মাঝে পাশাপাশি হাঁটবো। কিন্তু সেই নুপুর জোড়া কারো কাছে বিক্রি করে দেবো কীভাবে বলো? সামান্য কিছু টাকার জন্য যদি এটা বিক্রি করা হয় তাহলে টাকার মূল্য ভালবাসার চেয়ে বেশি হয়ে যাবে।

তোমার কাছে অনুরোধ, নুপুর জোড়া যদি ব্যবহার করতে ইচ্ছে না করে তবুও ঘরের সব অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেখানে রাখা থাকে সেখানে রেখে দিও।
আমি যদি মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে হারিয়ে যাই। তারপর কোন এক সন্ধ্যা বেলা অলস বারান্দায় দাঁড়িয়ে আমার কথা তোমার মনে পরে। তাহলে সেই অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থেকে খুঁজে বের করে আমার স্মৃতিটা নেড়েচেড়ে দেখার আমন্ত্রণ রইল।

বৃষ্টির ঝাপটায় যদি বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে না পারো, আর রুমের মধ্যে বসে তবুও যদি আমাকে মনে পরে তবে জানালা দিয়ে তাকিয়ে থেকো। গভীর রাতে যদি স্বপ্ন দেখে ঘুম ভাঙ্গে তাহলে ঘুম থেকে উঠে চোখে মুখে পানি দিয়ে বসবে বিছানায়। যত্ন করে নীল একটা শাড়ি পরবে, দুহাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি দেবে, ঠোঁটে হালকা করে লিপস্টিক ব্যবহার করবে। সেদিন দুপায়ে নুপুর জোড়া পরবে। আমি তোমার খোলা জানালা দিয়ে দক্ষিণা বাতাসের সাথে রুমে প্রবেশ করবো। বাতাসের সাথে সাথে মিশে যাবো তোমার ওই শরীরের কানায় কানায়।

আফসোস, একটা মানুষের ভালবাসা বারবার চেয়ে তবুও পেলাম না। আমি তাকে এমন ভাবে চেয়েছি যেন সে আমায় দেখে একবার নয়, দু’বার নয়, পুরো জীবনজুড়ে মুগ্ধ হতে থাকবে। আমার প্রতিটি স্বপ্নের কথা গভীর আগ্রহ নিয়ে শুনবে আর আমার হাসিতে সে সুখ খুঁজে পাবে। আমার একটু নীরবতায় তার বুকের ভেতরটা লন্ডভন্ড হবে, আমার মনের সকল পাগলামী তার কাছে ভালোবাসা হয়ে ধরা দেবে।
আমার করা প্রতিটি অভিমান সে ভাঙাতে মরিয়া হয়ে উঠবে। কারণে অকারণে ভালোবাসি বলবে
আমি বলার আগেই আমার মন খারাপটা বুঝে নেবে
আমার সব দুঃখ সে আলতো হাতে মুছে দেবে !
কল্পনায় এমন একজনকে আমরা জীবনসঙ্গী হিসেবে চাই। বাস্তবের জীবনসঙ্গী মুগ্ধ হয় তবে জীবনের অনেক লড়াই আড়াল করতে করতে অভ্যাসবশত মুগ্ধতাও চট করে আড়াল করে ফেলে!

ভালবাসা আমার জীবনে এসেছে। কিন্তু জানি সে আমার না, আমিও আর তার না তবুও ভাবতে ভালো লাগে তার অস্তিত্ব আমার পুরোটা জুড়ে।

সজীব….

চিঠি বন্ধ করে বৃষ্টি বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল। চিঠি রেখে দিয়ে ব্যাগ থেকে সামনের মাসে বাজারের জন্য রাখা সাড়ে তিন হাজার টাকা থেকে দুই হাজার টাকা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। বৃষ্টির মা রুমে ছিলেন না, মিষ্টি পিছন থেকে বললো ” আপু আমার মেহেদী কখন লাগিয়ে দেবে? ” বৃষ্টি বললো, আমি আসতেছি তারপর লাগিয়ে দেবো।

রাস্তায় বেড়িয়ে রিক্সা নিয়ে আবার ফ্রি পোর্ট মোড় আসলো সজীব কে কল দিয়ে বললো, সে যেন এখনই ফ্রী পোর্ট চলে আসে। সজীব আচ্ছা ঠিক আছে বলে কল কেটে দিল। বৃষ্টি চৌধুরী মার্কেটের মধ্যে গিয়ে বিভিন্ন দোকান ঘুরে ঘুরে আটশো টাকা দিয়ে একটা প্যান্ট আর ছয়শো টাকা দিয়ে একটা কফি কালারের পাঞ্জাবি কিনলো। প্যান্ট কেনার সময় আনুমানিক করে ওয়েস্ট বেল্ট ছত্রিশ ইঞ্চি দেখে কিনলো তবে দোকানদারকে বললো যে যদি বড় ছোট হয়ে যায় তাহলে পরিবর্তন করবে। তখন দোকানদার বললো ঠিক আছে সমস্যা নেই।

মার্কেট থেকে বের হবার আগেই সজীব কল দিল, বৃষ্টি বুঝতে পারলো সজীব এসে গেছে। তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে সজীব এর সাথে কথা বলে তার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। সজীব সামান্য ভিত চোখে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে রইলো, তার সেই মুখের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি হেসে দিল। তাদের হাতের প্যাকেট গুলো সজীব এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললোঃ-

” এগুলো তোমার জন্য। ”

” সজীব অবাক হয়ে বললো, কিন্তু কেন? ”

” এর মধ্যে একটা প্যান্ট আরেকটা পাঞ্জাবি আছে, জুতা যেহেতু নুতন আছে তাই কিনলাম না। আচ্ছা তোমার কোমরের মাফ কত? ”

” ছত্রিশ। ”

” বাহ তাহলে ঠিক আছে। খালা কি গ্রামের বাড়িতে গেছে নাকি চট্টগ্রামে আছে? ”

” চট্টগ্রামে আছে। ”

” ভেরি গুড, কালকে সকালে ঘুম থেকে উঠে গ্রামের বাড়িতে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে দোয়া চাইবে। এরপর নতুন প্যান্ট আর পাঞ্জাবি পরে ঈদের নামাজ এর আগে খালার বাসায় যাবে। তারপর তার বাসা থেকে মিষ্টি জাতীয় নাস্তা করে নামাজ পড়তে যাবে। নামাজ পড়ে আমার বাসায় যাবে, আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করবো। ”

” সজীব অবাক হয়ে হেসে দিয়ে বললো, তারপর? ”

” নামাজের মুনাজাত শেষ করে আমার কাছে কল দিয়ে বলবে যে তুমি তখন রওনা দিয়েছ। তোমার কল পেয়ে তারপর আমি মেহেদী লাগাতে শুরু করবো। ”

” আজব তো, আজকে রাতে অথবা আগামীকাল খুব সকালে উঠে মেহেদী দিলেই তো হয়। আমার কল পেয়ে তারপর মেহেদী পরা শুরু করবে কেন? ”

” হিহিহি বলা যাবে না, আর তাছাড়া আজকে রাতে বাসায় গিয়ে মিষ্টির থ্রি-পিস কাটতে হবে তারপর পাশের রুমের এক আপুর সেলাই মেশিন আছে সেই মেশিনে সেলাই করবো। ”

” মেহেদী পরার রহস্য টা বলবে না? ”

” বলা যায়। ”

” তাহলে বলো। ”

” তুমি নামাজ পড়ে আমার বাসায় যেতে যেতে তখন মেহেদি পরা হয়ে যাবে কিন্তু হাত থাবে ভিজে। তখন নুপুর জোড়া তোমার সামনে দিয়ে বলবো ” আমার হাতে তো মেহেদি মাখা তাই তুমি একটু পরিয়ে দেবে প্লিজ? হাহাহা হাহাহা। ”

” বৃষ্টি হাসছে আর সজীব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ”

#চলবে….

লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here