_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি । #_পর্ব = ১১

0
329

#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ১১

বিঃদ্রঃ- গল্পটা হয়তো অনেকের কাছে অনেক রকম ভালো বা খারাপ লাগতে পারে । তাই সবাই স্বাধীন ভাবে মন্তব্য করে জানাবেন ।

#_দশম_পর্বের_পরে

– রাফসান বিয়ে করেছে অনেক আগেই , রাঙ্গামাটি যুদ্ধের সময় রাফসান আহত অবস্থায় একটা মুসলিম পরিবারের কাছে আশ্রয় নেয় । সুস্থ হতে হতে তার প্রায় দুই মাস অতিবাহিত হয়ে গেছে তারপর সেই পরিবারের বড় মেয়েকে রাফসান বিয়ে করে ।

– সজীব বললো , কিন্তু কেন ?

– বৃষ্টি বললো , কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার জন্য ওই মেয়েকে বিয়ে করেছে । তারপর রাঙ্গামাটির অবস্থা বেশ কয়েকমাস খারাপ ছিল কারণ বনদস্যুরা প্রায়ই আক্রমণ করতো । তাই রাফসান এতটা দিন তাদের সাথে কাটিয়ে দিয়েছে কিন্তু কখনো বৃষ্টি নামক এই আমার কথা মনে করেনি । বাবা অসুস্থ ছিল তাই তাকে নিয়ে অনেক পরিশ্রম সে করেছে । তারপর সে তার মতো করে আমাদের জীবন থেকে পালিয়ে গেছে । অবশ্য সে থাকলেও আমার কাছে তার কোন অস্তিত্ব ছিল না ।

– আচ্ছা ঠিক আছে বুঝতে পারছি , স্যার কেমন আছেন ?

– মৃত্যুর চেয়ে আরো বড় কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে । ডান সাইড প্যারালাইজড হয়ে গেছে তাই নাড়াতে পারে না আর মুখের কথা অস্পষ্ট উচ্চারণ ।

– আন্টি ?

– মাও গার্মেন্টসে চাকরি নিয়েছে , কিছু করার ছিল না সজীব । কারণ আমার বাবা অসুস্থ হবার পরে আমাদের কোন আত্মীয় স্বজনরা ১ টাকা দিয়েও কখনো সাহায্য করে নাই । বাবা অসুস্থ না হলে তো কোনদিন আপন প্রিয়জনের আসল রূপ দেখতে পারতাম না । তাইতো পৃথিবীর সকল আত্মীয় স্বজন ত্যাগ করে একাকী এই শহরে এসেছি । আমাদের হয়তো বিলাসিতা থাকবে না কিন্তু মনের মধ্যে হাজার স্বপ্ন আছে । সৎ পথে সেই স্বপ্ন পূরনের স্বপ্ন দেখি প্রতিদিন কিন্তু এর শেষ কোথায় জানিনা ।

– আমার কাছ থেকে পালিয়ে এলে কেন ? রাফসান যেহেতু বিবাহিত ছিল তাহলে কেন সেদিন বললে না যে সজীব আমি শুধু তোমার । কেন এতটা মাস ধরে অন্ধকার জেলের মধ্যে কষ্টের মাঝে আরো বেশি কষ্ট দিলে আমাকে ?

– মিথ্যা স্বপ্ন তোমাকে দেখাতে চাইনি ।

– মিথ্যা কেন হবে ? তুমি কি আমাকে ভালবাসো না , নাকি আমার সাথে জীবন পার করতে কোন অসুবিধা আছে ? আমি জেল আসামি তাই ?

– নাহহ সেরকম কোন সমস্যা না , আমার বাবা অসুস্থ তাই সংসারের সকল দায়িত্ব আমার আর মায়ের উপর । এই মুহূর্তে আমি যদি তাদের ছেড়ে তোমার সাথে বিয়ে করে নিজের সংসার গড়ে তুলি তাহলে আমার মা-বাবা যে না খেয়ে মারা যাবে । এতটা স্বার্থপর হতে পারবো না তাই সেদিন তোমার কাছ থেকে পালিয়ে এলাম । কিন্তু কি ভাগ্য আমার তুমি কিন্তু আমাকে ঠিকই খুঁজে বের করলে ।

– তোমার পরিবারের দায়িত্ব যদি আমি নিই তাহলে তো কোন আপত্তি নেই তাই না ?

– আপত্তি আছে , ঘোর আপত্তি আছে আমার ।

– কেন ?

– তোমার নিজের পরিবার আছে সজীব , তাদের কে দেখাশোনা করার দায়িত্ব কিন্তু তোমার ।

– আমি দুটো পরিবারেরই দায়িত্ব নিতে চাই , তাছাড়া তুমি তো আমার সাথে থাকবে । যখন ক্লান্ত হয়ে যাব তখন ছায়া হয়ে শীতল পরশে জুড়িয়ে দেবে মন ।

– তুমি বুঝতে পারছো না সজীব , আমার পরিবার যখন তুমি দায়িত্ব নিতে চাইবে তখন নানা মানুষ নানান ধরনের কথা বলবে । আর আমি তোমার সাথে এ বিষয় কোন কথা বলতে চাই না আমার সিদ্ধান্ত আমার কাছে অটল ।

– আমি তোমাকে ভালোবাসি ।

– আমি জানি সজীব , কখনো তো অস্বীকার করিনি তাই না ?

– তাহলে ভালবেসে সুখী হবার অধিকার দেও ।

– সেটা যদি সম্ভব হতো তবে সেদিন মিথ্যা কথা বলে তোমার মনে কষ্ট দিয়ে পালিয়ে আসতাম না ।

– জীবন থেকে পালিয়ে গিয়ে , নিজের মনের ভিতর টাকে কষ্ট দিয়ে সুখী হওয়া যায় বৃষ্টি ?

– সুখী হবার স্বপ্ন তো আর দেখছি না আমি ।

– তোমার নিজের ইচ্ছে না থাকতে পারে কিন্তু তোমার সাথে যে আমার সুখটাও বাঁধা হয়ে গেছে সেই সুখ কেড়ে নেবে কেন ?

– তোমার একার সুখের চেয়ে বড় আমার মা-বাবা আর ছোট বোনের সুখ । তাদের মুখে একটু হাসি দেখতে পেলে আমাকে পৃথিবীর সকল দুঃখ কষ্ট ভুলে যেতে পারবো । কিন্তু তাদের মুখে যদি হাসি না থাকে তাহলে আমি রাজরানী হয়েও শান্তি পাবো না সজীব ।

– তবুও…

– বাদ দাও সজীব , আমাকে এখন বাজার করতে হবে তারপর বাসায় গিয়ে রান্না করে খেয়ে তারপর ঘুমাবো । আবার আগামীকাল সকালে পাঁচটা বাজে ঘুম থেকে উঠে রান্না করে গোসল করে অফিসে আসতে হবে ৷ জীবনের সাথে আমি যুদ্ধ শুরু করেছি সজীব , নাহলে আমার মত মেয়ে বৃষ্টি কখনো যে গার্মেন্টসে চাকরি করবো সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি ।

– মানুষ মাঝে মাঝে তার ভাবনাকে অতিক্রম করে কিছু বাস্তবতার মুখোমুখি হয়ে যায় । সেই বাস্তবতা মেনে নিতে খুব কষ্ট হয় কিন্তু আমরা নিরুপায় তাই চাইলেই মায়া ত্যাগ করতে পারি না । যেমন আমি এত শান্তশিষ্ট ভাবে চললাম তবুও আমাকেই জেলে যেতে হয়েছে ৷ কলেজ থেকে নাম কেটে বের করে দিয়েছে আমাকে , আর আমার নামের সাথে এখন খুনি ও ধর্ষনের পদবী যুক্ত হয়েছে ।

– রকি ভাই মনে হয় আসবে না , কিন্তু আমারও আর দেরি করলে চলবে না তাই উঠতে হবে । তুমি কি আমার সাথে যাবে ? বাবা তোমাকে দেখলে অনেক খুশি হবে , চলো যাবে ?

– অবশ্যই যাবো , চলো তাহলে ।

★★

রেস্টুরেন্টের বিল এসেছে দুইশো ছাপ্পান্ন টাকা , বৃষ্টি যখন বিল দিতে যাচ্ছে তখন সজীব বললো সে বিল দেবে ।

কিন্তু বৃষ্টি বললো ” তোমাকে আমি জরুরি কথা বলার জন্য নিয়ে এসেছি তাই বিলটা আমিই দেবো ।”

বৃষ্টির কথার উপর সজীব আর কিছু বললো না , কারণ চারপাশে অনেক মানুষ আছে তাই এখানে দাঁড়িয়ে বিল দেওয়া নিয়ে তর্ক না করাই ভালো ।

বৃষ্টিদের বাসা ফ্রী পোর্ট মোড় থেকে সোজা পূর্বদিকে একটা রাস্তা গেছে । সেই রাস্তা দিয়ে কিছুটা ভিতরে গেলে নিউমুরিং এলাকা শুরু। অনেকটা পথ পেরেয়ে রাস্তার ডানহাতে বড় বড় দুটো ১০০০ লিটারের মদিনা ট্যাংক । সবাই এটাকে নিউমুরিং পানির টাংকি বলে চেনে , সেই টাংকির পাশ দিয়ে ডানহাতে ছোট একটা গলি ঢুকে গেছে । গলির ভিতরটাকে সবাই বোবা কলোনি বলে ডাকে কিন্তু বোবা কলোনি ডাকার বিশেষ কোন কারণ বৃষ্টি জানেনা অবশ্য অনুসন্ধান করার চেষ্টা করেনি কখনো । সেই গলির শেষ মাথায় বছর বিশেক পুরনো একটা পাঁচ তলা বাড়ি । বৃষ্টিরা একদম ছাঁদে একটা বড় রুমে চারজনে থাকে তবে রাতের বেলা ঘুমাতে অসুবিধা হয়ে যায় । বৃষ্টির মা-বাবা খাটের ওপর ঘুমায় আর বৃষ্টি ও তার ছোট বোন নিচে কাঁথা বিছিয়ে বিছানা করে তার উপর ঘুমায় । মাস খানিক ধরে বৃষ্টি শুধু ভাবছে একটা ছোট তোশক বানাবে কারণ নিচের শক্ত মেজেতে ঘুমিয়ে শরীর ব্যথা করে । কিন্তু মাস শেষে বেতন পাবার পরে বাড়ি ভাড়া , দোকানের বিল , বিদ্যুৎ বিল বাবার ঔষধ বাজার সাদায় করে আর বেশি টাকা অবশিষ্ট থাকে না । যাও কিছু টাকা থাকে সেটা দিয়ে প্রতিদিন কাঁচা বাজার করতে হয় ।
জীবন বড়ই অদ্ভুত , কখন কাকে কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে কেউ জানেনা ।

সেজন্য হয়তো আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে সূরাহ আল-ইমরানের মধ্যে বলেছেন , ” আল্লাহই সকল ক্ষমতার অধিকারী , তিনি এক নিমিষেই বাদশাহ কে ফকির করে দিতে পারেন । আবার তিনি চাইলে এক নিমিষেই ফকিরকে বাদশাহ বানিয়ে দিতে পারেন । ”

পানির টাংকির সামান্য আগেই একটা বড় কাঁচা বাজার আছে । বৃষ্টি প্রতিদিন সেখান থেকেই বাজার করে বাসায় ফেরে তাই আজকেও সজীব কে নিয়ে সেই বাজারের মধ্যে প্রবেশ করলো । প্রথমেই মাছের বাজারে গিয়ে দেখে দেখে একটা দোকানে গিয়ে দাঁড়াল , একটা বড় দেখে সিলভার কার্ফ মাছ ওজন করতে বললো । ওজন করে দোকানদার বললো , ১৮৫ টাকা দাম এসেছে কিন্তু বৃষ্টি ব্যাগে হাত দিয়ে দেখে তার কাছে আছে মাত্র ৩০০ টাকার মতো ।

হঠাৎ করে তার মনে পরলো যে , সে ৫০০ টাকার নোট ভাঙ্গিয়ে রেস্টুরেন্টে দুইশো ছাপ্পান্ন টাকা বিল দিয়েছে ৷ ৫০০ টাকা সে মরিয়ম এর কাছ থেকে আজকে ধার করেছে , কারণ মাস প্রায় শেষ তাই এই সময় হাতে টাকা থাকে না । বৃষ্টি ভেবেছিল বেতন পাবার আগ পর্যন্ত তার কাছের ৬০ টাকা ও মরিয়ম এর কাছ থেকে আনা ৫০০ টাকা সব মিলিয়ে হিসাব করে খরচ করবে । কিন্তু হঠাৎ করে অপ্রত্যাশিত ভাবে দুইশো ছাপ্পান্ন টাকা খরচ হয়ে গেছে ।

– বড় মাছ রেখে দিয়ে বৃষ্টি ঘুরে ঘুরে পিছনে গিয়ে চল্লিশ টাকার চিংড়ি মাছ কিনলো । চিংড়ি মাছ কেনার সময় সজীব বললো , ” তোমার কাছে মনে হয় টাকা নেই তাই বড় মাছ কিনতে গিয়ে ফিরে এসেছো তাই না ? চিন্তা করো না আমার কাছে টাকা আছে চলো আমি কিনে দিচ্ছি । ”

– বৃষ্টি সজীব এর কথার জবাব না দিয়ে চোখ এমন গরম করে তাকালো যেই চোখ দেখে সজীব চুপসে গেল । আর চুপচাপ বৃষ্টির পিছনে পিছনে বাজারে বাজারে হাঁটতে লাগলো ।

– বাজার থেকে বেরিয়ে তারা আবার হাঁটতে শুরু করলো । হাঁটতে হাঁটতে বৃষ্টি বললো , তোমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে আমি বাজার করবো কেন ?

– সজীব বললো , তোমার কাছে তো ছিল না তাই আমি ভাবলাম মাছটা নাহয় কিনেই দেবো ।

– আমি নাহয় চাকরি করি তাই টাকা থাকে কিন্তু তুমি তো সাত মাস পরে জেল থেকে বেরিয়ে এসেছ তাহলে তুমি টাকা পেলে কোথায় ?

– গতকাল রকি তিন হাজার টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দিয়েছিল সেই টাকা সবগুলো তো খরচ হয়নি ।

– তাই বলে আমাকে বাজার করে দিতে হবে ।

– না মানে ইয়ে !

– নিজের কাছে রেখে দাও কাজে লাগবে , আর আমার কাছে তো টাকা থাকে কিন্তু মাস শেষ হয়ে আসলে শেষ কিছুদিন কষ্ট হয় চলতে । তবে বেতন পেলে আবার ঠিক হয়ে যাবে সবকিছু তখন যার কাছে যা ধার সব শোধ করে দেই ।

– ওহহ আচ্ছা ।



বোবা কলোনির মধ্যে ঢুকে তারা দুজন কথা বলতে বলতে পাশাপাশি হেঁটে যাচ্ছে । হঠাৎ করে গলির পাশের “দুলাল জেনারেল স্টোর” এর সামনে দাঁড়ানো একটা ছেলে বৃষ্টির নাম ধরে ডাক দিল । ছেলেটার নাম মামুন , বৃষ্টি এই গলিতে আসার ১৫ দিন পর থেকেই ছেলেটা সবসময় বৃষ্টিকে দাঁড় করিয়ে কথা বলতে চায় । বৃষ্টি দু একটা জবাব দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায় কারণ এ ছাড়া উপায় নেই । চট্টগ্রামের স্থানীয় মানুষের মুখের আঞ্চলিক ভাষা বৃষ্টি বুঝতে পারে না ৷ তারা খুব দ্রুত করে তাদের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে আর বৃষ্টি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ৷ কিন্তু মামুন নামের ছেলেটা নাকি চট্টগ্রামের স্থানীয় তবে সে বৃষ্টির সাথে সবসময় সুন্দর করে কথা বলে । কখনো বৃষ্টির সাথে সে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করে না ৷

– মামুন বললো , বৃষ্টি শোনো ।

– বৃষ্টি দাঁড়িয়ে গেল ।

– মামুন দুই পা সামনে এসে বললো , কেমন আছো তুমি ?

– জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ।

– তোমার বাবা কেমন আছেন ?

– জ্বি ভালো ।

– তোমার সাথের ছেলেটা কে ? আগে তো কখনো তোমার সাথে দেখিনি আজকে হঠাৎ করে দেখলাম দুজন কথা বলতে বলতে আসতেছ ।

– আমার বন্ধু ।

– কেমন বন্ধু ?

– আমরা যখন খুলনা শহরে ছিলাম তখন থেকে পরিচিত আর বাবার কলেজের ছাত্র । চট্টগ্রামে এসেছে তাই বাবার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে আমার সাথে ৷

– ওহহ আচ্ছা , তোমার বাবার সাথে দেখা করে যেন চলে যায় । রাতে আবার বাসায় থাকতে দিও না আর তাকে বলবা ঘনঘন যেন এদিকে না আসে ।

– আচ্ছা ঠিক আছে ।

– কি বাজার করলা ?

– ইছা মাছ ( চিংড়ি মাছ ) আর পুঁইশাক ।

– আচ্ছা যাও তাহলে , আঙ্কেল কে আমার সালাম দিও ।

– জ্বি ঠিক আছে ।

|
|

বৃষ্টি দ্রুত হেঁটে হেঁটে বাসায় চলে এল আর তার পিছনে পিছনে সজীব এসেছে ৷ সিড়ি বেয়ে বেয়ে পাঁচ তলায় উঠে সজীব কে নিয়ে বৃষ্টি রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো । বৃষ্টির মা এখনো আসেনি , বৃষ্টির ছোট বোন পাশের রুমে মনে হয় টিভি দেখতে গেছে কারণ সে এই সময় প্রতিদিন টিভি দেখে । বৃষ্টির বাবা ঘুমিয়ে আছেন , ওষুধের মধ্যে তার ঘুমের ওষুধ দেয়া আছে তাই ঘুম বেশি আসে তার । আর স্টোকের রোগী তাই ডাক্তার বলছেন কখনো যেন ঘুমের মধ্যে ডাক দিয়ে ডাকা নাহয় ৷ বৃষ্টি সজীবকে খাটের এক পাশে বসতে দিয়ে হাত থেকে বাজার থেকে আনা মাছ আর পুঁইশাক এক পার্শ্বে রেখে দিল ।

– তারপর রুমের মধ্যেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বোরকা খুলতে শুরু করলো । গলা দিয়ে বোরকা বের করে বোরকা এক পাশে রেখে ওড়না ছাড়া সজীব এর দিকে তাকিয়ে বললো , বাবা তো ঘুমাচ্ছে তুমি কিছুক্ষণ অপেক্ষা করো । আমি তোমার জন্য আগে চা গরম করে দিচ্ছি আর ঘরে বিস্কুট আছে , চা দিয়ে ভিজিয়ে ভিজিয়ে খাও । আমি ততক্ষণে চুলোয় চাল ধুয়ে বসিয়ে দিয়ে মাছ আর পুঁইশাক কেটে কুটে প্রস্তুত করি ।

– সজীব প্রথমে বৃষ্টির ওড়না ছাড়া শরীরের দিকে তাকিয়ে রইলো । তার চোখের দৃষ্টি বৃষ্টির বুকের উপরের স্তনের উপর পরেছে কিনা জানিনা । তবে হা করে তাকিয়ে আছে তাই দেখে বোঝা যাচ্ছে যে সে অপ্রত্যাশিত কিছু দেখে ফেলেছে । সজীব নিজেকে সাধু সন্ন্যাসী প্রমাণ করার জন্য বৃষ্টিকে বললো , বৃষ্টি তোমার বুকে ওড়না নেই , আগে ওড়না টা ঠিক করে পরে নাও ।

– সজীব এর কথা শুনে বৃষ্টি চমকে গেল , নিজের শরীরের দিকে তাকিয়ে দেখল সত্যি সত্যি তার শরীরে ওড়না নেই । ইসসস কি লজ্জাজনক একটা অবস্থা হয়ে গেল , সে তাড়াতাড়ি র্যাক থেকে ওড়না নিয়ে গায়ে জড়িয়ে দিল । তারপর সজীব কে বললো , তুমি বসো আমি একটু আসতেছি ।

সজীব বুঝতে পেরেছে যে বৃষ্টি তার লজ্জিত লাল মুখটা লুকানোর জন্য পালিয়ে গেছে । কথাটা মনে করে সজীব নিজে মনে মনে মুচকি মুচকি হেসে দিল।

বৃষ্টি রুম থেকে বেরিয়ে ছাঁদের কিনারে এসে দাঁড়াল মনে মনে ভাবলাে কি একটা লজ্জা । আসলে বৃষ্টি সবসময় এমনই করে বেশি কারন তাদের ঘরে বাহির থেকে কেউ আসে না । আর সারাদিন অফিস শেষ করে বাসায় এসে প্রচুর গরম লাগে তাই বোরকা খুলে ওড়না ছাড়াই বেশিরভাগ সময় মাছ তরকারি কাটে। কিন্তু আজকে যে সজীব তাদের বাসায় আছে সেটা তার স্মরণ ছিল না । যদি থাকতো তাহলে এমন লজ্জায় মাটির সাথে মেশার মতো কাজ করতো না ।

কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি বাহির থেকে চুলার গ্যাস পরীক্ষা করে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো । গ্যাস এখনো আসেনি তাই চা গরম করতে পারবে না । এলাকায় গ্যাস রাত সাড়ে নয়টার দিকে মোমবাতির মতো জ্বলতে শুরু করে । আর আস্তে আস্তে সাড়ে দশটার পরে গ্যাসের পাওয়ার বৃদ্ধি পায় ।

বৃষ্টি বিস্কুট বের করে দিয়ে নিচে মাছ আর পুঁইশাক নিয়ে বসলো তারপর আপন মনে কাজ করতে লাগলো । সজীব একটা বিস্কুট হাতে নিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে ৷

প্রায় আধ ঘন্টা পার হয়ে গেল , বৃষ্টি তার কাজ শেষ করে মাছ আর শাক ধুয়ে নিয়ে আসলো কিন্তু বৃষ্টির বাবার ঘুম ভাঙ্গলো না ।

হঠাৎ করে রকি ফোন করলো , সজীব রিসিভ করলো আর রকি বললো এখনই যেন সজীব ফ্রী পোর্ট যায় ৷ সজীব তখন বৃষ্টির বাসার কথা বলেছে কিন্তু রকি বললো তার সাথে দেখা করাটা জরুরি কারণ অফিসের কোন স্যার যেন কথা বলবে ।

– সজীব মোবাইল কেটে দিয়ে বললো , বৃষ্টি স্যার যখন ঘুমাচ্ছে তখন আমি তাহলে আসি । রকি ফোন করেছে , অফিসের কোন স্যারের সাথে নাকি কি কাজের জন্য দেখা করতে হবে । স্যারের ঘুম ভাঙ্গলে আমার কথা বলবে , আর আমি আগামীকাল আসবো সেটাও বলে দিও । আন্টির সাথেও দেখা হলনা কপাল ।

– বৃষ্টি বললো , আচ্ছা ঠিক আছে যাও তাহলে । ভালো বাজার করতে পারি নাই বলে রাতে খেয়ে যেতে বলতে পারছি না । বেতন পাবার পরে নিজের হাতে রান্না করে তোমাকে দাওয়াত করবো ।

– আচ্ছা ঠিক আছে , আন্টি আসলে তার কাছেও আমার কথা বলিও ।

– ঠিক আছে সাবধানে যেও ।
( বাসায় পৌঁছে একটা কল দিও )

★★

– সজীব বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটা শুরু করলো , সে হাঁটতে হাঁটতে গলির মাঝামাঝি যখন আসলো তখন সেই মামুন নামের ছেলেটার সাথে দেখা । সজীব কে দেখে তিনি বললো , আসসালামু আলাইকুম ভাই ৷

– সজীব বললো , ওয়া আলাইকুম আসসালাম ।

– আমাকে চিনতে পারছেন ভাইজান ?

– ব্যাক্তিগত ভাবে চিনিনা তবে একটু আগে আপনি বৃষ্টির সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন তখন আপনাকে দেখেছি ।

– বাহহ ভাইজানের স্মৃতিশক্তি খুব ভালো , কিন্তু ভাইজান আপনাকে একটু কষ্ট করে আমাদের সাথে ওই দোকানের পিছনে একটা ফাঁকা যায়গা আছে সেখানে যেতে হবে ৷

– যা বলার এখানেই বলেন , আমার একটু তাড়া আছে ভাই ।

– পৃথিবীতে সবারই তাড়া আছে ভাই , কেউ কাজের জন্য , কেউ বাসায় ফেরার জন্য , কেউ অফিসে যাবার জন্য আবার কেউ মৃত্যুর জন্য । কিছু কিছু কথা আছে যেগুলো লোকালয়ে বসে বলা যায় না তাতে পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায় । তাই সেই কথা গুলো বলার জন্য নিস্তব্ধ ফাঁকা স্থানের প্রয়োজন । কথা না বাড়িয়ে চলেন আমাদের সাথে নাহলে কিন্তু….

চলবে…..

লেখক V/S পাঠক পাঠিকা কথোপকথন ;-

– পাঠক/পাঠিকাঃ- লেখক সাহেব আপনি এমন কেন ?

– লেখকঃ- কেমন ?

– আপনি কি চাননা যে আমরা শান্তিতে ঘুমাই ?

– অবশ্যই চাই ।

– তাহলে গল্প এমন যায়গা শেষ করেন কেন ? গল্পের মাঝে রাফসান চলে গেছে ভেবে মনের মধ্যে শান্তি পেলাম । অমনি আপনি মামুন নামের ছেলেটা কে ভিলেন করে নিয়ে এলেন । কাজটা কিন্তু ঠিক না ভাই আমাদের কিন্তু চিন্তা মুক্ত থাকতে ইচ্ছে করে ।

– হাহাহা হাহাহা হাহাহা ।

#লেখাঃ-
#মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here