#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ১২
– সজীব বললো , নাহলে কি করবেন ভাই ?
– কিছু করবো না কারণ আমরা সবাই ভদ্র ঘরের সন্তান আমরা কি কিছু বলতে পারি ?
– তাহলে ভাই প্লিজ আমাকে যেতে হবে আমি একটা নতুন জব নেবো আর সেই অফিসের স্যার আমার জন্য অপেক্ষা করে আছে ।
– ঠিক আছে তাহলে আরেকদিন আমাদের কথা হবে যেহেতু আপনি বৃষ্টির বন্ধু তাই আপনার সাথে জরুরি কথা আছে ।
– ঠিক আছে ভাই আমি আগামীকাল আবার আসবো কারণ স্যারের সাথে দেখা করতে পারি নাই ৷ স্যার ঘুমিয়ে আছে তাই আর কথা বলতে পারি নাই আগামীকাল আসতে হবে ।
– ঠিক আছে বড় ভাই তাহলে আগামীকাল কথা হবে আপনার সাথে ।
– ধন্যবাদ ভাই ।
★★
ফ্রী পোর্ট গিয়ে রকি আর সেই স্যারের সাথে দেখা করলাম । তার সাথে দেখা করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাকে যেন বৃষ্টির লাইনে ডিউটি দেয়া যায় । কারণ তিনি নাকি আমাদের ওই ফ্লোরের কোয়ালিটি ইনচার্জ তাই তিনি লোক সেটআপ করবেন । আমার কাজ হচ্ছে অপারেটর গন যেসব পোশাক সেলাই করবেন সেগুলো স্যাম্পল এর সাথে সম্পুর্ন মিল আছে কিনা ! কাজের মধ্যে কোন ধরনের ভুল ত্রুটি আছে কিনা সেগুলো চেক করে বডি সামনে পাস করা । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে একটাই আর তা হলো সারাদিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ডিউটি করতে হবে । বসার কোন সুযোগ নেই কোয়ালিটি ডিপার্টমেন্টের ছেলেদের । রকি অবশ্য ৬ তলায় স্টোর রুমের মধ্যে আছে , ওর কথা আলাদা কারণ ও তো কিছুদিন পরে ডিপ্লোমা শেষ করে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে যাবে । কিন্তু আমার কপাল খারাপ তাই সেই ভাগ্য আমার আর হলো না । সবচেয়ে বড় আর প্রধান কথা হচ্ছে আমি আপাতত চাকরিটা পাচ্ছি না । কারণ যেখানে ডিউটি করলে সবসময় বৃষ্টির সাথে দেখা হবে সেখানে এখন লোক নিবে না । আর যেহেতু মাসের শেষ প্রায় তাই এখন নতুন লোক নেবে না তবে বেতন দেবার পরের দিন অনেকে বেতন পেয়ে চলে যাবে । তখন সেই শূন্য স্থানে নতুন লোক নিয়োগ করা যায় তাই সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ।
ইনচার্জ এর নাম শহিদুল ইসলাম , তিনি রকির মামার ভালো বন্ধু তাই রকি তার সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিল । লোকটার মন মানসিকতা খুব ভালো নাহলে এমন একটা বিষয় তার সাথে ফ্রী হয়ে বলকে পারতাম না । তার সাথে কথা বলে আমরা বন্দরটিলার দিকে হাঁটতে শুরু করলাম ।
সজীবের খালার বাসা বন্দরটিলা সিটি করপোরেশন অফিসের পিছনের গলিতে । সেখানে এসে রকিকে বললাে , তুই তাহলে বাসায় চলে যা আমি খালার বাসা থেকে ঘুরে আসি । মা-বাবা কেমন কি আছে তা তো জানিনা তাই সবকিছু খালার কাছে জানতে হবে।
– রকি বললো , আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে যা কিন্তু তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি । তুই অনেক ক্লান্ত আর গতকাল জেল থেকে বেরিয়ে আজকে সারাদিন আবার গার্মেন্টসে গেলি । কিন্তু আবার যে বেতন পাওয়ার আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে ।
– সজীব বললো , সমস্যা নেই দেখতে দেখতে পার হয়ে যাবে আর বৃষ্টির সাথে যখন দেখা হয়ে গেছে তখন তো আর কথাই নেই ।
– আচ্ছা আমার তো মনেই নেই বৃষ্টির কথা জিজ্ঞেস করবো তোকে । আচ্ছা বৃষ্টি গার্মেন্টসে চাকরি করে কেন ? তার কি বিয়ে হয়নি জিজ্ঞেস করেছিলি কিছু ?
– বিয়ে হয়নি ওর , কিন্তু তুই তো আগেই জানতি ও গার্মেন্টসে চাকরি করে তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করছিস কেন ?
– আমি দুদিন আগে তাকে দেখেছি , হঠাৎ করে পাঁচ তলায় মামার কাছে গেছিলাম আর অমনি দেখি শুনতে পেলাম কে যেন বৃষ্টি বলে ডাক দিল ।
– আমার কান সজাগ হয়ে গেল তারপর ভালো করে লক্ষ্য করে দেখি এই সেই বৃষ্টি ।
– ওহহ আচ্ছা
– হুম তুমি খালার বাসা থেকে ঘুরে আয় তারপর বাকি কি করা যায় সেই প্ল্যান করবো । শফিককে কল দিয়ে চট্টগ্রামে আসতে বলতে হবে ।
– ঠিক আছে আমি গেলাম তাহলে ।
★★
সজীব তার খালার আগের সেই আগের বাসার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে । সাত মাসের মধ্যে যদি তারা বাসা পরিবর্তন না করে থাকে তাহলে তো আগের বাসাতেই পাবে । সিড়ি বেয়ে বেয়ে তিন তলায় উঠে পরিচিত সেই দরজায় নক করলো । দুই মিনিট পর দরজা খুলে দিয়ে সজীব এর খালা আইরিন মুখ বের করলো । সজীব তার খালার দিকে তাকিয়ে একটা ছোট্ট হাসি দেবার চেষ্টা করলো । তার খালা তাকে দেখে অবাকের চেয়ে বড় অবাক হয়ে গেল । ভিতরে যেতে বলার মতো জ্ঞান তার ছিল না ।
– কেমন আছো ছোট মা ? (সজীব)
– ভালো আছি খুব ভালো আছি , তুই কেমন আছো ?
– আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি , ভিতরে নেবে না ?
– আয় আয় তাড়াতাড়ি ।
– সবাই তো আমাকে ভুলেই গেলে তোমরা , বেঁচে আছি কিনা কেউ খবর নিলে না ।
– আমি তো তোর মত আরেক জেলখানায় চাকরি করি বাপ , সেখান থেকে যেতে পারি নাই । আর তোর বাবা বললো , ওখানে যাওয়া লাগবে না তাই আর যাইনি । ছাড়া পেয়েছিস কবে ? চট্টগ্রামে কবে এলি তুই ?
– গতকাল জেল থেকে বেরিয়ে চট্টগ্রামে আসলাম ।
– সারাদিন কোই ছিলি ?
– এক বন্ধুর কাছে উঠেছি ।
– আমার বাসায় সরাসরি এলে কি হতো ?
– একটু কাজ ছিল তার কাছে আর জেল থেকে বেরিয়ে কেমন কি ভাববে তাই ।
– তুই যে নির্দোষ সেটা আমরা সবাই জানি কিন্তু তেমন কিছু করতে পারি নাই । তোর বাবাকে কারা যেন নিয়মিত ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে তাই তো তিনি চুপ করে বাড়িতে পরে আছে ।
– ভয় দেখাচ্ছে মানে কি ?
– ভাইয়া ( সজীব এর বাবা ) যখন খুলনা ছিল তখন নাকি তাকে কারা যেন অনেক ভয় দেখিয়েছে । বলেছে তোকে জামিনে বের না করতে , তাহলে নাকি তোকে জেলের মধ্যে কিংবা জেল থেকে বেরিয়ে আসলে তারা খুন করবে । তোর বাবা কে তারা চড় থাপড় মেরেছে তাই সে খুব ভয় পেয়ে সেদিন তোকে রেখে চলে গেছে । তুমি তো জানিস দুলাভাই অনেক ভীতু একটা মানুষ , দোকান থেকে বাকি খেয়ে যদি কেউ টাকা না দেয় সেই টাকাটা চাইতেও ভয় পায় । আর তাকে যখন বলা হয়েছে তোকে জেলের মধ্যে কিংবা জেল থেকে বের হলে খুন করা হবে তখন তো তার কলিজা শুকিয়ে গেছে ।
– ওহহ শিট , বাবা আসলে কখনো মানুষ হবে না । এগুলো পুলিশ আর উকিলকে বললে তো আসল অপরাধী ধরা পরতে পারতো । তা না করে উনি কাপুরুষের মতো গ্রামের বাড়িতে গিয়ে বসে আছে । ওনার ছেলে যে জেলের মধ্যে পঁচে মারা যাচ্ছে সেদিকে তার খেয়াল নেই ।
– রাগ করিস কেন ? দুলাভাই তো ভয় পায় সেটা তুই ভালো করে জানিস আর তুই তোর তো মা-বাবার একমাত্র ছেলে । তোর কিছু হয়ে গেলে তখন তারা কত কষ্ট পাবে ভেবে দেখেছিস ?
– আচ্ছা ঠিক আছে বুঝতে পারছি , তাহলে তো আমাকে খুব তাড়াতাড়ি বাড়িতে যেতে হবে । আর কে আমার বাবার কাছে কল দিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন সেটা বের করতে হবে । নাহলে যে আমার মুক্তি নেই ছোট মা ।
– যা করবি ঠিক মাথায় ভেবে চিন্তে করবি , এখন তুই বস তাহলে আমি ফ্রিজ থেকে মাংস বের করে রান্না করি । তুই তাড়াতাড়ি বাড়ির নাম্বারে কল দিয়ে কথা বল সবাই দেখবি কত খুশী হবে ।
– না থাক এখন , শরীর ভালো লাগে না তাই বন্ধুর বাসায় গিয়ে ঘুমাবো । আরেকদিন আসবো তখন তোমার হাতে খাবার খেয়ে যাবো । আর বেরিয়ে বাড়িতে কল দেবো ।
– তুই বললেই হবে নাকি ? চুপচাপ বসে থাক নাহলে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পর আমি রান্না শেষ করে ডাক দেবো তোকে ।
– দেরি হবে অনেক ।
– তো কি হইছে ?
– আচ্ছা ঠিক আছে রান্না করো ।
– এইতো লক্ষি ছেলে আমার ।
★★
খাটের ওপর সুয়ে মোবাইল বের করে সজীব দেখল একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ৮ টা মিস কল । অপরিচিত নাম্বারে কথা বলার ইচ্ছে করে না তাই আর কল ব্যাক না করে মায়ের নাম্বারে কল দিল । সাত মাস পর আজ আবার মায়ের সেই নাম্বারে কল বাহহ সাত মাস কেটে গেল ? রিসিভ করে তার মা যখন হ্যালো বললো তখন তার সমস্ত শরীর কেঁপে ওঠে ।
– বললো , কেমন আছো মা ?
– কে বাবা সজীব ? আমি ভালো আছি বাবা তুই কেমন আছো ? জেল থেকে বের হইছো ?
– হ্যাঁ মা গতকাল বের হলাম ।
– আমি আর তোর বাবা জানতাম যে একদিন তুই ঠিকই নির্দোষ হয়ে বের হবি । ও বাপ এখন কোই আছো তুই ?
– চট্টগ্রামে । আর আমি এখনো নির্দোষ হতে পারি নাই , জামিনে বের হয়ে আসছি ।
– মানে কি ? গতকাল বের হয়ে আজকে চট্টগ্রামে কিভাবে ?
– সে অনেক কথা মা , বাবা কোই ? মাহি কেমন আছে মা ?
– মাহি তো পড়তে বসেছে ওর রুমে , আর তোর বাবা এখনো দোকান থেকে আসেনি । ও মাহি এদিকে আয় তোর দাদা কল করেছে ।
– মা আমি দু একদিনের মধ্যে বাড়িতে আসতেছি । বাবাকে কারা নাকি ভয় দেখাচ্ছে ? তাদের খুঁজে বের করে নিজেকে নির্দোষ করতে হবে নাহলে আমাকে আবার জেলে যেতে হবে ।
– কিন্তু ওরা নাকি তোকেও মেরে ফেলবে ?
– মৃত্যু যদি লেখা থাকে তাহলে মরবো কিন্তু এভাবে অন্যায় মাথায় নিয়ে বাঁচার কোন মানে হয়না মা ।
– তোর বাবা শুনলে ভয়ে শেষ হয়ে যাবে ।
– কিছু হবে না , আমার একজন ভালো পরিচিত উকিল আছে আর খুলনার একজন পরিচিত বড় ভাই আছে । তাদের বলে আমি ব্যবস্থা করতে পারবো তাতে বাবার খুলনা শহরে যেতে হবে না ।
– আমার তো শুনেই আবার হাত পা কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে ।
– আচ্ছা বাদ দাও এসব কথা , মাহিকে আর বাবা কে বলো আমি ভালো আছি । আগামীকাল সকালে মাহি আর বাবার সাথে কথা বলবো । আর আমি এখন ছোট আম্মুর বাসায় আছি দু একদিনের মধ্যে বাড়িতে আসতেছি ।
– আইরিন কোই ?
– তোমার বোন রান্না করে , এতদিন পরে আসলাম রান্না না করে পারে ? রান্না করতে গেছে ।
– আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে খাওয়া দাওয়া করে বিশ্রাম করো ।
– ঠিক আছে মা ভালো থেকো সবসময় ।
★★
খালার বাসা থেকে রাতের খাবার খেয়ে রকির কাছে যেতে সজীব এর এগারো টা বেজে গেছে । বাসায় গিয়ে রকির কাছে বাড়ির কথা খুলে বললো সবকিছু তারপর দুজন মিলে ছাদে গেল । ছাঁদে গিয়ে রকি সিগারেট খাচ্ছে আর সজীব আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে । পকেট থেকে মোবাইল বের করে নিস্তব্ধ রাতের কিছু গান শুনতে ইচ্ছে করছে । মোবাইল বের করে দেখে সেই অপরিচিত নাম্বার থেকে কল বেজেই চলেছে । সজীব সবসময় তার মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখে তাই বুঝতে পারে না ।
– এতবার যখন কল আসে তখন সজীব রিসিভ করে বললো , আসসালামু আলাইকুম ।
– ওয়া আলাইকুম আসসালাম , ওই সজীববববা সমস্যা কি তোর ? কল রিসিভ করো না কেন ?
– সজীব বুঝতে পারলো এটা বৃষ্টির কন্ঠ তারমানে বৃষ্টি এতক্ষণ ধরে কল দিচ্ছে ? বললো , আসলে মোবাইল পকেটে সাইলেন্ট করা ছিল তাই টের পাইনি । সরি ।
– দরকার হলে কিভাবে পাবো তোমাকে ?
– আচ্ছা আজ থেকে আর সাইলেন্ট করে রাখবো না ঠিক আছে ?
– আচ্ছা ঠিক আছে , কি করো ?
– ছাঁদে বসে আছি আর বাড়ি যাবো সেই কথা ভাবছি ।
– মানে কি ? বাড়িতে কেন যাবে ? তাদের সাথে কথা হয়েছে ? কেমন আছেন তারা ?
– কাজ আছে বাড়িতে । আর মা-বাবা সবাই ভালো আছে ।
– তাহলে তোমাকে এখনই যেতে হবে কেন ? অফিসে চাকরি নিলে তার কি হবে ?
– তোমাদের অফিসে চাকরি করবো না ।
– কেন ? কেন ? কেন ?
– আজকে প্রথম দিনে গার্মেন্টসে গিয়ে বুঝতে পারছি যে প্রচুর মেয়ে চাকরি করে । তাই ভাবছি তোমার অফিসে না গিয়ে অন্য অফিসে চাকরি করবো তাহলে অনেক গুলো প্রেম করতে পারবো । নাহলে তোমার অফিসে তো শুধু তুমি একা তাও আবার তুমি রাজি না ।
– ঠাপ দিয়ে ডাব গাছের মাথায় তুলে দেবো তখন বুঝতে পারবা লুচ্চামি করার কত মজা ?
– কেন জ্বলছে নাকি মনের মধ্যে ?
চলবে…
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)