#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ৩০
” বৃষ্টি বললো , মিতুর বাসায় অন্যদিন যেও , এখন তুমি ফ্রি পোর্ট আসো তাড়াতাড়ি । ”
” কিন্তু ”
” কোন কিন্তু নেই তাড়াতাড়ি । ”
” হবে না বৃষ্টি , তুমি বাসায় চলে যাও । ”
” তোমার সাথে কথা না বলে আমি যাব না , এবার তুমি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করো । ”
” সেটা তোমার ইচ্ছে কিন্তু আমি মিতুর সাথে যাচ্ছি , আর তুমি তো জানো আমি মিতুর অফিসে চাকরি নেবো তাই সে বিষয় কিছু কথা আছে । ”
” ঠিক আছে তোমার ইচ্ছে । ”
” রাখলাম তাহলে ? ”
” টুট টুট টুট ”
★★
শুধুমাত্র নুডলস খাবার জন্য বাসায় গেলে কিন্তু সে নুডলস খেয়ে ফিরতে পারলো না । সজীবকে বাসায় রেখে মিতু নিজেই বাহিরে এসে সামনের মুরগির দোকান থেকে মুরগী নিয়ে গেল । নিজের হাতে রান্না করতে করলো প্রায় দুই ঘন্টার অধিক সময় নিয়ে । সজীব রুমের মধ্যে বসে টিভি দেখছে , তার সামনে ২৪” রঙিন টিভিতে Sony max চ্যানেলে শাহরুখ খান কাজল অভিনীত ‘ দিলওয়ালে ‘ সিনেমা চলে । সজীব এর আগেও দেখেছে মুভিটা কিন্তু তবুও পুনরায় দেখতে ভালো লাগছে । মিতু যাদের সাথে থাকে এই বাসার কর্তার নাম শহিদুল ইসলাম । তাই সজীব শহিদুল ইসলাম এর মায়ের সঙ্গে গল্প করে সময় পার করছেন । মিতু একটু পর পর বিদ্যুৎবেগে রুমের মধ্যে প্রবেশ করে আবার কিছু একটা নিয়েই ঝড়ের গতিতে প্রস্থান করে । নাকমুখ ঘামে ভিজে একাকার হয়ে গেছে , পরনের জামা পিঠের কাছে ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা ।
মিতুর হাতের রান্না খেয়ে সজীব এর বাসা থেকে বের হতে সাড়ে নয়টা বেজে গেছে । রাস্তার গলিতে এসে দাঁড়িয়ে দেখে এখনো প্রচুর মানুষের ভিড় । সবাই যার যার পরিচিত জনের সাথে আড্ডা দিতে ব্যস্ত । সজীব পকেট থেকে মোবাইল বের করে বাড়ির নাম্বার বের করে মায়ের কাছে কল দিল ।
” আসসালামু আলাইকুম , কেমন আছো মা ? ”
” ওয়া আলাইকুম আসসালাম , আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি বাবা তুই কেমন আছো ? ”
” জ্বি মা আলহামদুলিল্লাহ , বাবা মাহি তারা সবাই কেমন আছে ? ”
” তোর বাবা ভালো আছে কিন্তু মাহির মন খারাপ দুপুর থেকে । ”
” কেন কেন কেন ? কি হইছে ? ”
” আমাদের যে ১২ টা হাঁস ছিল সেই হাঁসের মধ্যে সবচেয়ে ছোট সাদা রঙের হাঁসটা মারা গেছে । মাহি সবসময় ওদের খাবার দিত আদর করতো তাই সেই হাঁসের শোকে কিছুটা শোকাহত । ”
” কিভাবে মারা গেছে ? ”
” গতকাল থেকে একটু কেমন কেমন লক্ষ্য করেছি তারপর আজকে সকালেও দেখলাম সবার থেকে আলাদা দাঁড়িয়ে আছে । বেলা এগারোটার দিকে টিউবওয়েলের সামনে এসে আমার সামনে বাটি থেকে পানি খেলো তারপর আস্তে আস্তে শেষ । ”
” ওহহ আচ্ছা , কি অদ্ভুত তাই না ? ”
” হ্যাঁ ”
মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল , ডিসপ্লেতে সিম কোম্পানির মেসেজ দেখা যাচ্ছে ব্যালেন্স নেই । সামনের দিকে হাঁটতে হাঁটতে একটা ফ্লেক্সিলড এর দোকান থেকে রিচার্জ করে বের হলো । বাড়িতে আর কল দিতে ইচ্ছে করছে না , হঠাৎ করে মোবাইলের মেসেজ টোন বেজে উঠলো । সজীব ভাবলো মাত্র তো রিচার্জ করার মেসেজ আসলো তাহলে এখন আবার কিসের মেসেজ ? নাকি দোকানদার আবার রিচার্জ করে দিয়েছে ? তবে সেই সম্ভবনা খুবই কম কারণ সিম কোম্পানি ইদানীং এত পরিমাণ মেসেজ দেয় যে এখন আর কেউ মেসেজ চেক করে না । অথচ একটা সময় ছিল যখন সজীব তার সকল বন্ধুদের সাথে মেসেজ দিয়ে দিয়ে সারাদিন কথা বলে কাটিয়ে দিত ।
মেসেজ চেক করে দেখে অবাক হয়ে গেল সজীব , কারণ মেসেজটা বৃষ্টির । ঠিক মেসেজ বলা যাবে না কারণ এটা একটা কবিতা এবং পাঠানো হয়েছে এমএমএস করে ।
আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো
তোমার জন্য আমি ?
অপেক্ষা করতে কষ্ট হচ্ছে
বোঝনা কেন তুমি ?
দাঁড় করিয়ে রেখে আমায়
হারিয়ে কোথায় গেলে ?
খুব বেশি কি ক্ষতি হতো
সঙ্গে আমায় নিলে ?
বলেছি আমি তোমার সাথে
করবো আজকে দেখা ।
তবুও তুমি চলে গেলে
আমায় রেখে একা ।
থাকতে আর পারছি না গো
জলদি আসো তুমি ।
শরীরটা আজ বেজায় খারাপ
আসছে শুধু বমি ।
তোমার মুখটি না দেখিয়া
ফিরবো না আজ ঘরে ।
দরকার হলে দাঁড়িয়ে থাকবো
সারাটা রাত ধরে ।
তবুও কি তুমি আসবে না গো
এতটা পাষাণ মন ?
সত্যিই কি আমায় ভুলে যাবে
এটাই কি তোমার পণ ?
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সজীব তিনবার সেই এমএমএস পড়লো । তারপর ডানে বামে তাকিয়ে একটা রিক্সা নিয়ে ফ্রি পোর্ট মোড়ে রওনা দিল । রিক্সায় বসে সে বৃষ্টি কাছে কল দিয়ে জিজ্ঞেস করে সে কোথায় আছে জেনে নিল তারপর সারাক্ষণ চুপচাপ রিক্সায় বসে রইলো ।
বৃষ্টি দাঁড়িয়ে ছিল ফুট ওভার ব্রিজের উপর , সজীব ব্রীজের উপর গিয়ে বৃষ্টির সামনে দাঁড়াল । বৃষ্টি সজীব এর দিকে তাকিয়ে বললো ” এতটা দেরি করে না আসলেও পারতে ! ”
” সজীব বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে দেখে চোখের পাতা গুলো ভেজা ভেজা । বুঝতে বাকি রইল না যে বৃষ্টি এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নীরবে কান্না করেছে । খুব একা একা মানুষ যখন দাঁড়িয়ে থাকে তখন একান্ত বেদনার কথা গুলো হঠাৎ করে যদি মনে আসে । বা কারো অবহেলা মনে করে যদি নিজে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে কিংবা সুয়ে থাকে তাহলে চোখ বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু আসবে তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই ।
” সজীব বললো আমি তো জানতাম না তুমি এখনো দাঁড়িয়ে আছো । ”
” কিন্তু আমি তো তখনই বলেছিলাম তোমার সাথে দেখা না করে বাসায় যাবো না । ”
” যে মানুষটাকে নিজের সর্বস্ব দিয়েও আমার প্রতি বিন্দু পরিমাণ মমতা বোঝাতে পারিনি সেই মানুষটা আমার জন্য এতটা অপেক্ষা করবে সেটা আমার কল্পনার বাইরে ছিল । ”
” এমন করে কথা বলো মনে হয় তুমি সবার মনের কথা বলতে পারো ? ”
” হয়তো পারি আবার হয়তো না । ”
” বাবাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে , ভেবেছিলাম তুমি হয়তো যাবে কিন্তু মা বললো যে মামুন আর মা নাকি বাবাকে নিয়ে বাসায় এসেছে । ”
” আমি যেতে চেয়েছিলাম সকালে স্যারের কাছে এ বিষয় বলেছিলাম । কিন্তু তিনি মুখের উপর সাথে সাথে বলে দিলেন যে আমার যাবার দরকার নেই । কারণ মামুন ভাই নাকি সবকিছু খুব যত্ন করে করছে তাই আমার না গেলেও চলবে । পরে ভাবলাম যাদের কারো কাছে আমি প্রিয়জন বা প্রয়োজন কোনটাই হতে পারি নাই তাদের কাছে গিয়ে আগাছা হয়ে বিরক্ত করে লাভ কি ? আমরা সবাই জানি আগাছার বাড় বেশি কিন্তু সেই আগাছা যতবারই বেড়ে ওঠে ততবারই তাকে উপড়ে ছুড়ে ফেলা হয় । তাই তোমার আর তোমার পরিবারের কাছে আমি সজীব নামক আগাছা বারবার বিরক্ত করতে চাই না । ”
” আমার জীবনে তোমার প্রয়োজন কিংবা আমাদের পরিবারের কাছে তুমি প্রিয়জন না সেটা কিভাবে বুঝতে পারলে ? ”
” হাসপাতালে গিয়ে স্যার এর ব্যবহারে মোটামুটি বুঝতে পারছি আর তাছাড়া সর্বক্ষণ তুমি তো সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছ । ”
” আমি কি করলাম ? ”
” স্যার অসুস্থ ছিল সে কথা কিন্তু একবারও তুমি আমাকে জানাওনি কারণ আমি তো তোমাদের মাঝে কেউ না । তাই শুধু শুধু আমাক না জানিয়ে যাকে জানানো দরকার ছিল তাকে জানিয়েছ । অবশ্য সে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে তোমাদের কাছে প্রিয়জন হয়ে থাকার জন্য । ”
” আমি রাগ করে তোমার সাথে কল করিনি । ”
” এখন হঠাৎ করে রাগ চলে গেল কেন ? ”
” অভিমান করে দুরে ঠেলতে গিয়ে যখন বুঝতে পারছি যে আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাবার ভয় আছে । তখন আর রাগ অভিমান করে দুরে রেখে বোকামি করার ইচ্ছে নেই । কারণ আজকের রাগের একটা ছোট্ট ভুল হয়তো আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারে , সেটা যে সইতে পারবো না । ”
” আগে অনেকবার বলেছি , আজকে আবারও বলি যে আমার সমস্ত শিরায় শিরায় তোমার অস্তিত্ব । সেই অস্তিত্ব বিলীন করে , প্রতিটি শিরায় শিরায় থেকে বৃষ্টিকে বের করে নতুন কারো অস্তিত্ব প্রবেশ করাতে গেলে আমাকে নতুন করে জন্ম নিতে হবে । জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার সময় তোমার নামটা চোখ বন্ধ করে অনুভব করবো । ”
” তাহলে মিতু ? ”
” বললাম তো , কাউকে একবার মন দিয়ে দিলে , সেটা আর ফেরত নেয়া যায় না । কারো জন্য একবার ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে গেলে , সেটা আর কখনো ধ্বংস করা যায়না । সবকিছুই সয়ে যেতে হয় শুধু নীরবে , কিছুই করার থাকে না । তোমার দেয়া প্রতিটি মুহূর্তের অবহেলা , আঘাত , কষ্ট , আমি যত্নে সাজিয়ে রেখেছি । কারণ স্মৃতি বিজড়িত কিছু জিনিস দরকার ছিল তাই চোখের সামনে থেকে সরাতে পারিনি । ভেজা মেঘের মত অদুর আকাশে উড়তে উড়তে যদি জীবনের সুতোয় তোমার টান পরে কখনো । তবে চলে এসো আমার এই নিঃশ্ব মলিন জীবনে , বুক ভর্তি ভালবাসা দেব , নিস্তব্ধ আধার নৈঋতের রাতে জোৎস্না দেখতে সাথি হবো । জীবনের শেষ দিনে মাথা ভর্তি কাঁচা পাকা চুল নিয়ে তোমার ঐ কানের কাছে মুখ নিয়ে বলতে চাই প্রিয়া
*বড় বেশি ভালবাসি তোমায়* । ”
” আমার আর কিছু জানার নেই , চলো নিচে নেমে একটা রিক্সা করে আমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে আমাদের গলিতে । তবে আগেই বলে রাখছি যে আজকে কিন্তু বাসায় নিতে পারবো না তাই আমাকে পৌঁছে দিয়ে তুমি আবার সেই রিক্সা করে চলে আসবে । ”
” ঠিক আছে । ”
রিক্সায় উঠে বৃষ্টি সজীব এর সাথে একদম চেপে বসলো , এতটা চেপে ধরলো যে সজীব পরে যাবার উপক্রম হলো । রিক্সার হুড নামিয়ে দিয়ে সজীব ডান হাতটা দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে ঘাড়ে মাথা রেখে বসে রইলো । আর সজীব ? সে তো নির্বিকার ।
★★
বৃষ্টি রুমের মধ্যে প্রবেশ করে হাতের ব্যাগ রেখে বোরকা খুলতে ব্যাস্ত । বৃষ্টি বাবা খাটের উপর সুয়ে আছে আর মা পাশেই বসে আছে ।
” বৃষ্টির মা বললো , এত দেরি হলো কেন ? কোথায় ছিলি এতক্ষণ ? ”
” বৃষ্টি কোনরকম অযৌক্তিক কথা না বলে সরাসরি বললো , সজীব এর সাথে কথা বলতে বলতে দেরি হয়ে গেছে । ওর সাথে দেখা হবে কথা বলে তারপর এসেছি নাহলে আরো আগে আসতাম । ”
” বৃষ্টির মা খানিকটা রাগান্বিত হয়ে বললো , সজীব এর সাথে দেখা করতে গিয়ে তুই মাঝরাতে বাসায় ফিরবি ? ”
” কেন মা কি হইছে তাতে ? আমি কি খুব বেশি কিছু করে ফেলেছি ? ”
” সজীব এর সাথে আর কথা না বলাই ভালো হবে , তাছাড়া মামুন দেখলে অনেক কিছু মনে করতে পারে তাই যোগাযোগ করার দরকার নেই । ”
” মামুনের জন্য সজীব এর সাথে যোগাযোগ বন্ধ করতে হবে কেন ? মামুন কে ? ”
” দেখ বৃষ্টি , তুই ভালো করে জানো যে মামুন তোকে পছন্দ করে । আর আমার বিশ্বাস তার সাথে তোর বিয়ে হলে অনেক সুখে থাকতে পারবি । ”
” বিয়ে ? মামুনকে ? তুমি কিন্তু ভালো করে জানো যে আমি রাফসানের স্মৃতি ভুলে সজীবকে ভালবেসেছি এবং তাকে আর স্মৃতি করতে চাই না । ”
” রাফসানকে যখন ভুলতে পারছো তখন সজীবকেও ভুলতে পারবি সমস্যা নেই । ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে তোকে মতামত পরিবর্তন করতে হবে । ”
” সেটা সম্ভব না , রাফসান ভাইকে আমি পছন্দ করতাম ঠিকই কিন্তু কখনো তাকে নিয়ে কোন মেয়ের বিষয় হিংসা হয়নি । সে আমার সাথে প্রেম করার সময় অন্য মেয়ের সাথে টাইমপাস করেছে । কিন্তু তখন আমার কখনো মন খারাপ লাগে নাই কিন্তু সজীব এর ব্যাপার সম্পুর্ন আলাদা । কারণ ওর পাশে আমি কাউকে সহ্য করতে পারি না , যখন দেখি তখন ওই মেয়েকে খুন করতে মনে চায় । তাই যার জন্য নিজের মাঝে এতটা পরিবর্তন , যাকে আমি বারবার আঘাত করার পরও জোকের মতো লেগে আছে । তাকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিয়ে আমি অন্য কারো সাথে ঘর বাঁধতে পারবো না । ”
” দিন দিন কথার উন্নয়ন হচ্ছে নাকি ? আমরা যদি বলি তবুও তুই শুনবি না ? ”
” নাহহ শুনবো না , যদি বেশি জোরাজোরি করো তাহলে সজীব এর হাত ধরে অনেক দুরে পালিয়ে চলে যাবো । তখন কিন্তু সন্তানের দোষ দিতে পারবে না কারণ আমি আমার মতামত প্রধান্য না পেলে বাধ্য হবো করতে । ”
” আর আমাদের কথা চিন্তা করবি না ? ”
” নিজের কষ্টের অনুভূতি প্রকাশ করার পরেও যদি তোমরা আমার ভালবাসা না মানো তাহলে আমার কষ্টতো আমাকেই দুর করতে হবে । ”
” সজীব এর সাথে বিয়ে হলে আমরা থাকবো কোই ভেবেছিস ? ”
” হ্যাঁ ভেবেছি । ”
” কি ভেবেছিস জানতে পারি ? ”
” বাবাকে আর মিষ্টিকে নিয়ে তুমি গ্রামের বাড়িতে চলে যাবে , আমি সজীব দুজনেই চাকরি করবো । মাস শেষে তোমাদের যা খরচ দরকার সব আমি পাঠিয়ে দেবো । আমরা দুজনেই একটা ছোট্ট বাসা নিয়ে সেখানে থেকে চাকরি করবো । সজীব এর পরিবার আর আমার পরিবার দুটো পরিবারই দেখার দায়িত্ব আমাদের । তবে সজীবদের গ্রামের বাড়িতে স্থানীয় বাজারে বড় দোকান আছে তাই ওদের বাড়ি আপাতত আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে না । কারণ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রয়োজনীয় চাহিদা পুরন করতে পারে , সেখানে আমাদের আপাতত না দেখলেও চলবে । ”
” তাই বলে ? ”
মায়ের কথা শেষ হবার আগেই বৃষ্টি কাপড় নিয়ে গোসলখানায় চলে গেল । আর বৃষ্টির মা নিজে রাগে গজগজ করতে করতে একা একা কতক্ষণ সামনে অনুপস্থিত বৃষ্টিকে বকাবকি করে স্বামীর পাশে সুয় পরলো ।
বৃষ্টি বাথরুমে পানি ছেড়ে দিয়ে অনেকক্ষণ ধরে বসে রইলো , ঝরনার পানি ছেড়ে দিয়ে কিছুক্ষণ কান্না করলো । তারপর আস্তে আস্তে গোসল করে বেরিয়ে গেল , কিন্তু ততক্ষণে প্রায় চল্লিশ মিনিট পার হয়ে গেছে । রুমের মধ্যে গিয়ে ভেজা কাপড় দেয়ালে টানানো রশির সাথে বিছিয়ে দিল । তার মা মশারী টানিয়ে স্বামীকে নিয়ে খাটে শুয়ে আছেন কিন্তু বৃষ্টির বাবা ঘুমিয়েছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না । বৃষ্টির ছোট বোন মিষ্টি নিচে বিছানায় শুয়ে আছে , আর বৃষ্টিও রাতের খাবার না খেয়ে বাতি বন্ধ করে বোনের সাথে শুয়ে পরলো ।
কিন্তু বিছানায় শুয়ে পরলেই যদি দুচোখ ভর্তি হয়ে ঘুম আসতো তাহলে পৃথিবীতে কষ্টে জর্জরিত সকল মানুষগুলো কখনো বিছানা ছেড়ে উঠতো না । বরং সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কষ্ট গুলো ভুলে থাকার চেষ্টা করতো । কিন্তু সবচেয়ে বড় কষ্ট হচ্ছে মানুষ নিস্তব্ধ আধার রাতে যখন সবকিছু রেখে বিছানায় গিয়ে বসে । তখন তার সমস্ত কষ্ট গুলো সঙ্গী হয়ে পাশে এসে জড়িয়ে ধরে । কষ্টগুলো তখন অস্পষ্ট করে বলে “তোমার কোন ভয় নেই কারণ আমরা কষ্টগুলো সারাক্ষণ তোমার সাথে আছি । ”
চলবে….
#_ওহে_বালক/বালিকা ! হ্যাঁ আপনাকেই বলছি , যদি আপনার কাছে গল্পটা ভালো লাগে তাহলে লাইক দিয়ে সুন্দর একটা মন্তব্য প্রকাশ করুন ।
লেখাঃ
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)