_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি । #_পর্ব = ৩১

0
205

#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ৩১

খালার বাসায় গিয়ে ব্যাগ নিয়ে সজীব যখন রকির বাসায় গেল তখন এগারোটা বেজে গেছে । অবশ্য রকির কাছে কল দিয়ে বলেছিল যে সজীব আসতেছে । বৃষ্টির কাছে কল দিতে ইচ্ছে করে কিন্তু উপায় নেই কারণ বৃষ্টি রিক্সা থেকে নেমে বলেছিল যে বৃষ্টি কল দিলে তাহলে যেন কল করে । যদি বৃষ্টি কল না করে তাহলে যেন সজীবও কল না দেয় কারণ দিলেও লাভ হবে না । সজীবকে কল দিতে মানা করার কারণ হচ্ছে বৃষ্টি মনে মনে ভেবেছিল বাসায় গিয়ে কিছু একটা রাগারাগি হতে পারে । তাই সেই রাগের প্রতিক্রিয়া সজীব এর উপর যেন না পরে তাই কল দিতে নিষেধ করেছে ।

” সবকিছু শুনে রকি বললো , আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো লাগছে ভাই , আরেকটা কথা আছে । ”

” সজীব বললো , কি কথা ? ”

” রমজানের ঈদের পরে শফিক চট্টগ্রামে আসবে । ”

” সত্যি বলছিস ? ”

” হ্যাঁ সব মিলিয়ে আর মাস দেড়েক পরে আসবে , আর শফিক আসলে আমরা তিন বন্ধু আবারও সেই একসাথে পার করতে পারবো । ”

” বাহহ দারুণ , আমার জীবন থেকে কষ্টের সবগুলো মেঘের ভেলা একসাথে সরে যাচ্ছে মনে হয় । ”

” কেন বৃষ্টির সাথে সম্পর্ক ঠিক হয়েছে ? ”

” হ্যাঁ মোটামুটি তার ভাব দেখে বোঝা যাচ্ছে মনের মধ্যে সজীব সজীব বলে ডাক শুরু করেছে । ”

” বাহহ তাহলে তো মেলা মেলা খুশী । ”

” হ্যাঁ অনেক ? ”

” আর মিতুর সাথে কথা হইছে ? ”

” হ্যাঁ আজকে তার বাসায় গেছিলাম , খুব যত্ন করে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়ালো । ”

” তারমানে তুই দুটো নৌকার মধ্যে পা দিয়ে বসে আছিস তাই না ? ”

” আরে ধুর না , মিতু তো ভালো করে জানে আমার সমস্ত হৃদয় জুড়ে বৃষ্টির বসবাস । তাই সেখানে যদি সে বাসা বানানোর স্বপ্ন দেখে তার জন্য আমি কেন দায়ী হবো ?”

” তুই তার সাথে দেখা করো কথা বলো এটাই কিন্তু তাকে তোর প্রতি আরো দুর্বল করে দেবে ৷ আসলে ভালবাসার বা পছন্দের মানুষ যদি সবসময় চোখের সামনে থাকে তাহলে স্বপ্ন গুলো আরো নতুন নতুন রূপ নেয় । ”

” কিন্তু আমি তো মিতুর অফিসে চাকরি নেবো । ”

” নিবি ঠিক আছে কিন্তু এমন কোন ভঙ্গি করবি না যাতে করে মিতু বেশি ইমোশনাল হবার সুযোগ পেয়ে যায় । ”

” চেষ্টা করবো । ”

” সেটাই আসল ! ”

” আচ্ছা ঠিক আছে তুই ঘুমিয়ে পর নাহলে কালকে আবার সকালে উঠতে কষ্ট হবে । ”

” হুম ঠিক আছে বাতি বন্ধ করে দে তাহলে । ”

” আচ্ছা । ”

সজীব এতক্ষণ ধরে বৃষ্টির কলের জন্য অপেক্ষা করে ছিল কিন্তু এখনো যেহেতু কল আসলো না তাই তার ধারণা আজকে আর বৃষ্টি কল দেবে না । মোবাইল টা বের করে ২০১১ সালের সেই নীল শাড়ি পরা ছবির দিকে মেলা মেলা সময় ধরে তাকিয়ে রইলো । মনটা হঠাৎ করে কেমন যেন অন্যরকম অনুভুতি প্রকাশ করতে লাগলো তাই মেসেজ অপশনে গিয়ে ভাবলো একটা মেসেজ করে রাখা যাক ।

সজীব শুরু করলো ,

অপেক্ষায় ছিলাম অনেক রাত্রি
কল দিলে না তুমি ।
তোমার কথা ভেবে ভেবে
ক্লান্ত হলাম আমি ।

দুচোখে আমার ঘুম ধরে না
তোমার কথা ভেবে ।
জানিনা আমি কোন দিন তোমার
কাছে টেনে নেবে ।

সেই দিনটা আসবে কবে ?
জানতে ইচ্ছে করে ।
আর সহেনা দেরি আমার
যাচ্ছি গো তাই মরে ।

বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে
ঘুমাইতে স্বাদ জাগে ।
কবে হবে ইচ্ছে পুরন ?
জানিয়ে দেও গো আগে ।

বড্ড বেশি ভালবাসি
বুঝতে পারো কি তুমি ?
তোমায় কতটা ভালবাসি
জানে অন্তর্যামী ।

বৃষ্টি জেগেই ছিল তবে চোখ বেয়ে বেয়ে পানি বের হচ্ছে অজস্র ধারায় । এতকিছু হবার পরেও সজীব কে নিয়ে বৃষ্টি নতুন করে একটা পৃথিবী সাজানোর স্বপ্ন দেখে । সেই পৃথিবীতে কষ্ট বলতে কোন জিনিস এর স্থান বরাদ্দ দেওয়া হবে না । শুধু সুখের সমুদ্র সৈকতে ভেসে বেড়াবে সাদা মেঘের মতো আকাশে উড়তে উড়তে ।

সজীব মেসেজ আসার সাথে সাথে বৃষ্টি মেসেজ টা পড়লো । এতটা মন খারাপের মাঝেও তার মনটা সামান্য ভালো হয়ে গেল । অন্ধকারে কান্নাজড়িত চোখ মুখ উজ্জ্বল করে একটা ফিক করে হাসি বের করে দিল । রাতের আধারে সেই হাসি দেখার কেউ ছিল না তবে হাসির গভীরতা অনুভব করার জন্য আপনারা পাঠক পাঠিকা নিশ্চয়ই আছেন ?

বৃষ্টি মেসেজ রিপ্লাই করার জন্য লিখলোঃ-

আমিও অনেক ভালবাসি
বোঝাতে পারিনি হায় !
মনের মধ্যে ঝড় বয়ে যায়
কি করি উপায় ?

ওগো সজীব জানো কি তুমি
কতটা ভালবাসি ?
তোমার সাথে কাটাতে চাই
সকল দিবস নিশি ।

কল দেবার কথা ছিল
দিতে পারিনি আমি ।
তাই বলে কি রাগ করেছ
আমার সাথে তুমি ?

রাগ করো না লক্ষি সোনা
বোঝার চেষ্টা করো ।
মায়ের সাথে ঝগড়া হয়েছে
আজকে অনেক বড় ।

বলে দিয়েছি মুখের উপর
সজীব কে আমার চাই ।
সজীব ছাড়া বৃষ্টির জীবনে
কারো অস্তিত্ব নাই ।

সকল কিছুর বিনিময়েও
আপন করবো তাকে ।
ভয় করিনা বাধা বিপত্তি
কপালে যদি থাকে ।

আমার মোবাইলে টাকা নেই
মেসেজ যাবে না আর ।
কাল সকালে দেখে করিও
ওভার ব্রীজের উপর ৷

সজীব আর কোন রিপ্লাই না করে মিতুর নাম্বারে কল দিল কিন্তু নাম্বার বন্ধ । আরো দু তিনবার কল দিয়ে যখন বন্ধ পেল তখন আর চেষ্টা করলো না ।

★★

বৃষ্টির মা রাত দুটোর দিকে ঘুম থেকে উঠে রুমের বাতি জ্বালিয়ে ওয়াশরুমে গেল । সেখান থেকে বের হয়ে রুমের মধ্যে এসে পানি পান করতে গিয়ে দেখেন বৃষ্টির ভাত এখনো প্লেটের মধ্যে । প্রথমে ভেবেছিলেন বৃষ্টি হয়তো অন্য প্লেটে নিয়ে ভাত খেয়েছে কিন্তু তরকারির কড়াই চেক করে দেখে মাছ সবগুলো ঠিকই আছে । তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে বৃষ্টি না খেয়ে রাগ করে ঘুমিয়ে গেছে । তাই আস্তে আস্তে তিনি বৃষ্টি আর মিষ্টি পাশে এসে বসলেন ।

” বৃষ্টির গায়ে হাত রেখে আস্তে আস্তে ডাকতে লাগল কিন্তু বৃষ্টি সাড়া দিচ্ছে না । আরো দুতিন টা ডাক দেবার পরে বৃষ্টি চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে তার মা সামনে বসে আছে । বৃষ্টি কান্না করতে করতে কেবল মাত্র ঘুমিয়েছিল ঠিক তখনই তার মায়ের ডাকে আবার উঠতে হলো । বৃষ্টি বললো , কি হইছে মা ? কিছু বলবে ? বাবা ঠিক আছে তো ? ”

” মা বললো , হ্যাঁ সবকিছু ঠিক আছে কিন্তু তুই রাতে ভাত খাওনি কেন ? ”

” বৃষ্টি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো , খেয়ে আর কি হবে মা ? কষ্টে ভর্তি জীবনে সুখের স্বপ্ন দেখা তো আমার জন্য পাপ তাই ইচ্ছে করছে না খেতে । ”

” বৃষ্টির মা বুঝতে পারছেন যে তার ব্যবহারে বৃষ্টি অনেক কষ্ট পেয়েছে তাই নরম হয়ে বললো , মন খারাপ করে মায়ের সঙ্গে রাগ করে খাবার বন্ধ করে দিস না মা । আমি ভেবেছিলাম মামুন ছেলেটা কিন্তু অনেক ভালো তাই ওর সাথে তোর বিয়ে হলে তুই অনেক সুখে থাকতে পারতি । কিন্তু তোর যদি মত না থাকে তাহলে তো জোর করে কিছু হবে না । তবুও বলবো যা করবি ভেবে চিন্তে তারপর করবি কারণ জীবন তো একটাই । ”

” ঠিক আছে মা আমাকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না , আমি আমার মতো একটু থাকতে চাই । আচ্ছা রাতে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে মনে ছিল না । ”

” কি কথা ? ”

” হাসপাতালে কত টাকা খরচ হয়েছে ? ”

” প্রায় ১৪ হাজার টাকা । ”

” আমি কত টাকা দিছিলাম ? ”

” পনের হাজার টাকা , হাসপাতালে ১৪ হাজার দিয়ে বাকি এক হাজার টাকা ছিল । সেই টাকা দিয়ে সাত দিনের ঔষধ কিনেছি টাকা থাকলে এক মাসের নিয়ে আসতাম । ”

” তোমার অফিসে বেতন দেবে কবে ? ”

” আজকে তো দেবার কথা ছিল কিন্তু আমার তো তিনদিন অফিস মিস করতে হয়েছে । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে , ১৫ হাজারের মধ্যে আমার বেতন ছিল ১২ হাজার আর বাকি তিন হাজার আমি মরিয়ম এর কাছ থেকে এনেছিলাম । তুমি কালকে অফিসে গিয়ে বেতন পেলে সেই টাকা দিয়ে আগে বাবার জন্য বাকি ২৩ দিনের ঔষধ কিনতে হবে । তারপর যা থাকবে তা দিয়ে দোকানের বাকি টাকা শোধ করে দিতে হবে নাহলে পরের মাসে বাকি দিতে চাইবে না । কিন্তু বাড়ি ভাড়ার টাকা এ মাসে দেবার দরকার নেই আগামী মাসে ঈদের বোনাস থাকবে সঙ্গে বেতনের টাকা । তাই তখন একসাথে দু মাসের বাড়ি ভাড়া দিতে পারবো সমস্যা হবে না । ”

” তুই যেটা ভালো মনে করো সেটা করবি সমস্যা নেই কারণ তোর সংসার চালানোর দক্ষতা ভালো । ”

” আচ্ছা তুমি এখন ঘুমিয়ে পরো কালকে সকালে তো অফিসে যেতে হবে । ”

” তুই আগে খেয়ে নে তারপর ঘুমাবো । ”

” আজকে তুমি খাইয়ে দেবে ? কতদিন হয়ে গেছে তোমার হাতে খাইয়ে দেও না । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে তুই হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় আমি ততক্ষণে ভাত রেডি করি । ”

বৃষ্টি ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে মায়ের সামনে বসলো আর তার মা ভাত মেখে মুখে তুলে দিচ্ছে । ঠিক তখনই বৃষ্টির ছোট বোন মিষ্টি ঘুম থেকে উঠে বললো , মা আমাকেও খাইয়ে দাও । ” বৃষ্টি আর তার মা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো , তারপর বৃষ্টি বললো ” মুখ ধুয়ে আয় । ”

অনেকদিন দিন পরে বৃষ্টির মা নিজের হাতে দুই মেয়েকে আদর করে খাইয়ে দিলেন । তাদের দৃষ্টির অগোচরে চোখের পানি মুছে ফেলে আবারও সামনে তাকিয়ে রইলো । গভীর রাতের এই মা আর সন্তানের ভালবাসার কিছু মুহূর্ত এই তিনটি প্রাণী ছাড়া আর একজন হয়তো দেখেছেন তিনি হচ্ছেন আসমান জমিনের সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ । কিন্তু তাদের বাইরে আরো একটা মানুষ নীরবে এই দৃশ্য মুগ্ধ হয়ে উপভোগ করেছেন তিনি হচ্ছে বৃষ্টি বাবা । হঠাৎ করে রুমের মধ্যে বাতি জ্বলে তাই তার ঘুম ভাঙ্গলো আর সামনে তাকিয়ে তিনি তার ২৪ বছরের সঙ্গী বৃষ্টির মা’কে দেখতে লাগলেন ৷ কত পরম স্নেহের মহিমায় মহিমান্বিত হয়ে সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে । এই মুহূর্তে নিজের মায়ের কথা মনে করেও বৃষ্টির বাবার চোখ দিয়ে অশ্রু দুফোঁটা গড়িয়ে গেল ।

★★

বৃষ্টির কাছে একবার মনে হলো সজীব এর সাথে এই মুহূর্তে কল দিয়ে কথা বললে কেমন হয় ? খুব রাগ করবে নাকি ? নাকি রাতের বেলা খুশী রুমের মধ্যে চিৎকার চেচামেচি করে সবার ঘুম ভাঙ্গাবে ? আচ্ছা সে এখনো জেগে আছে তো ? এতরাতে কল দিলে আবার ভয় পাবে নাকি ? ভাববে হয়তো কোন বিপদ হয়ে গেছে । ভাবতে ভাবতে ফোন হাতে নিয়ে কল দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো ।

সজীব জেগে জেগে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস “দেনাপাওনা” পড়ছে । বৃষ্টির নাম্বার থেকে কল এসেছে দেখে সত্যি সত্যি অবাক হয়ে গেল কারণ এতরাতে কেন কল দেবে ? কল কেটে দিয়ে কলব্যাক করলো ।

” বৃষ্টি রিসিভ করে আস্তে আস্তে বললো , এখনো জেগে আছো নাকি কল পেয়ে জাগ্রত হলে ? ”

” সজীব বললো , জেগে ছিলাম জেগে জেগে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস পড়ছিলাম । ”

” এত রাতে ? ”

” ঘুম পাচ্ছে না তাই ভাবলাম বই পরলে ঘুম আসতে পারে কিন্তু তাও আসছে না ৷ পড়তে পড়তে প্রায় অনেক পৃষ্ঠা ফুরিয়ে গেছে কিন্তু ঘুম পাচ্ছে না ৷ তবে তুমি এখনো জেগে আছো কেন ? আগামীকাল ডিউটি আছে ভুলে গেছো নাকি ? ”

” নাহহ এমনিতেই মনে পরলো খুব তাই কল দিলাম আর তাছাড়া কাকে যেন বলেছিলাম আমি কল না দিলে সেও যেন কল না করে । তাই সেই মানুষটা যদি আমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে পুরনো পিওনের মতো বসে থাকে তাই কল দিলাম । ”

” হঠাৎ করে সেই মানুষটার জন্য এত মায়া জাগ্রত হবার কারণটা সে জানতে চায় । জানানো যাবে কি ?

” মানুষটার জন্য মায়া অনেক আগে থেকে বৃষ্টির ছিল কিন্তু আমি বৃষ্টি চেয়েছিলাম তাকে আলাদা করে তার জীবনটা সাজানোর সুযোগ দিতে । কিন্তু যখন দেখলাম আমার সজীব এর জীবন সাজানোর পরিবর্তে উল্টো এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তখন আর চুপ করে থাকি কিভাবে বলো ? ”

” আমার বৃষ্টি কি জানে না যে সজীব এর জীবনে যদি বৃষ্টি না থাকে তাহলে তার জীবন টা মরুভূমির মতো হয়ে যাবে ? ”

” হ্যাঁ বৃষ্টি জানে এবং বিশ্বাস করে তাইতো সজীবের জীবন টা নতুন করে রঙিন করতে সে রাজি । ”

” সজীব এর অপেক্ষার দিনগুলো তাহলে ফুরিয়ে গেছে তাই না ? ”

” হুম ঠিক তাই ! কিন্তু এখন যে সজীব এর বৃষ্টিকে ঘুমাতে হবে নাহলে কালকে সে ডিউটি করতে গিয়ে অনেক কষ্ট পাবে । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে শুভ রাত্রি । ”

” শুভ রাত্রি । ”

” I love you ”

” I love you too ”

” বৃষ্টি কল কেটে দিয়ে মোবাইল রাখার সাথে সাথে ছোট বোন মিষ্টি বললো , সজীব ভাইয়ের সাথে তাহলে তোমার বিয়ে হবে তাই না আপু ? ”

” হ্যাঁ হবে , আর তোর হবে দুলাভাই । ”

” আচ্ছা আপু বিয়ের পরে তুমি কি সজীব ভাইয়ের সাথে থাকবে ? ”

” হ্যাঁ , এখন যেমন করে তোর সাথে সুয়ে আছি , তখন এভাবে সজীব আর আমি ঘুমাবো । ”

” তাহলে তখন আমি কার সাথে ঘুমাবো ? ”

” তুই তখন বড় হয়ে যাবি তাই একা একা ঘুমাতে পারবি ।”

” একটা কথা বলবো আপু ? ”

” হ্যাঁ বল । ”

” ঈদের সময় আমাকে নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে হবে কিন্তু , পুরনো গুলো দিয়ে হবে না । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে কিনে দেবো এখন ঘুমা । ”

” সত্যি দেবে তো ? পরে মা যদি নিষেধ করে বকা দেয় তাহলে মতামত পরিবর্তন করবে না তো ? ”

” না করবো না । ”

” মেলা মেলা মেলা ধন্যবাদ আপু ! ”

” এখন চোখ বন্ধ করে ঘুমা । ”

” ওকে বায় ।

★★

বৃষ্টি সজীব কে ওভার ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে বলেছিল কিন্তু সে দাঁড়িয়ে আছে বে-শপিং সেন্টারের সামনের ফাঁকা যায়গায় । কারণ ওভার ব্রিজের উপর দিয়ে এখন প্রচুর মানুষ পার হচ্ছে তাই সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ঠিক না ৷ বৃষ্টির কাছে কল দিয়ে তাকে বলে দিল যে বে-শপিং সেন্টারের সামনে আসতে হবে তাকে । বৃষ্টি যখন আসলো তখন হাতে খানিকটা সময় বেশি আছে কিন্তু সারারাত ভালো ঘুম হয়নি বলে চোখ গুলো লাল হয়ে গেছে ।

” সজীব বললো , চা খাবে ? ”

” হুম খেতে পারি কারণ আজকে প্রচুর ঘুম পাচ্ছে জানিনা অফিসে গিয়ে কি করবো ? ”

” সজীব আর বৃষ্টি দুজনেই দুকাপ চা হাতে নিয়ে সাইডে দাড়িয়ে রইলো । সজীব বললো , আজকে যদি মিতুর অফিসে বেতন দেয় তাহলে কাল পরশু তাদের অফিসে চাকরি নেবো ৷ ”

” একটা কথা বলবো ? ”

” বলো ! ”

” আমি রমজানের ঈদের সময় এই অফিস থেকে চাকরি ছেড়ে দেব । ”

” কেন ? ”

” ঈদের পরে তোমার ওই অফিসে চাকরি নেবো । ”

” হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত ? ”

” নিজের একান্ত দামী জিনিস গুলো সবসময় চোখে চোখে রাখতে হয় কারণ ওই দামী জিনিস গুলোর উপর অন্যের চোখ পরে । ”

” আরে ধুর আমি কারো সাথে কথা বলবো না । ”

” একদম চুপ , আমাদের অফিসে যখন ছিলে তখন কি কি করছো আমার সবকিছু মনে আছে । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে আগে আমার চাকরি হোক তারপর ঈদের পরে তোমারটা দেখা যাবে । ”

” গুড ভেরি গুড । ”

” শবেবরাত এর পরেরদিন কি তোমাদের অফিস বন্ধ থাকবে ? ”

” হ্যাঁ বন্ধ । ”

” তাহলে ওই দিন চলো না দুজনে ঘুরতে যাই , এই চট্টগ্রামে কত সুন্দর সুন্দর যায়গা আছে সারাদিন ঘুরবো আর অনেক কিছু খাবো । ”

” আমি সেদিন রোজা রাখবো আর তুমি বলো কিনা সারাদিন খাবে ? শোন সজীব ভাইয়া , যেদিন বিয়ে করে ঘরের বউ করতে পারবো সেদিন ঘুরতে যাবার কথা বলবে । তার আগে কখনো এ বিষয় আমার সাথে কিছু বলবে না , আমি কখনো তোমার সাথে ঘুরতে যাবো না ৷ ”

” আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই , এখন তাহলে যাও তোমার নাহলে দেরি হয়ে যাবে । ”

” আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ , সন্ধ্যা বেলা দেখা হবে । ”

★★

বৃষ্টিকে বিদায় দিয়ে সজীব বাসায় এসে আবারও ঘুমিয়ে গেল আর সেই ঘুম ভাঙ্গলো বেলা বারোটার দিকে মোবাইলের ডাকে । মোবাইলে কল এসেছে তাই ঘুম ভাঙ্গলো কিন্তু তাকিয়ে দেখে বৃষ্টির নাম্বার থেকে কল এসেছে । বরাবরের মতো কল কেটে দিয়ে কলব্যাক করলো সজীব কিন্তু ওপাশ থেকে কথা বলছে মরিয়ম ।

” হ্যালো সজীব ভাই ? আমি মরিয়ম বলছি । “.

” হ্যাঁ মরিয়ম বলো । ”

” ভাইয়া আপনি কি এখনই আমার অফিসের সামনে আসতে পারবেন ? বৃষ্টি খুব অসুস্থ তাই ওকে বাসায় নিতে হবে । ”

” সজীব লাফ দিয়ে শোয়া থেকে বসে গেল তারপর বললো , কি হইছে বৃষ্টির ? ”

” আপনি একটু কষ্ট করে আসুন তাহলে সব জানতে পারবেন , প্লিজ সজীব ভাই । ”

” বৃষ্টি এখন কোথায় ? ”

” আমাদের অফিসের নিচতলায় যে প্রাথমিক চিকিৎসার মেডিকেল আছে সেখানে । বৃষ্টি বর্তমানে অজ্ঞান হয়ে আছে তাই আপনি একটি তাড়াতাড়ি আসুন সজীব ভাই ৷ ”

” ঠিক আছে আমি আসতেছি । ”

চলবে….

যদি আপনার কাছে গল্পটা ভালো লাগে তাহলে লাইক দিয়ে সুন্দর একটা মন্তব্য প্রকাশ করুন ।

ভালবাসা অবিরাম অন্তহীন ।

লেখাঃ
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here