_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি । #_পর্ব = ৩৩

0
177

#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ৩৩

সজীব বাসা থেকে বের হবার সাথে সাথে মামুন এসে সামনে দাঁড়িয়ে বললো ” ভাইজান ভালো আছেন ? ”

” জ্বি ভাই ভালো আছি , আপনি ? ”

” ভালো আর কি করে থাকি বলেন ? আমি যাকে এতটা পছন্দ করি তাকে যদি আপনি আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চান , তাহলে ভালো থাকা যায় ? ”

” আসলে ভাই এখানে কেড়ে নেবার মতো কিছু নেই কারণ বৃষ্টি যদি আপনাকে ভালবাসে তাহলে আমি কখনোই আপনাদের সামনে আসবো না । যদি সে আপনার থাকতো তাহলে কেড়ে নেবার প্রসঙ্গ আসে কিন্তু সে তো আপনাকে পছন্দ করে না । ”

” আপনি জানেন ? বৃষ্টি যদি আমাকে পছন্দ না করে তাহলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে অনেকক্ষণ কথা বলে কেন ? তার বাবার অসুস্থতার সময় আপনাকে না ডেকে তারা আমাকে ডাকে কেন ? ”

” আমি তখন চট্টগ্রাম ছিলাম না । ”

” আচ্ছা ভাইজান আমি যদি আপনাকে সহজ সরল ভাবে বলি যে বৃষ্টিকে আমাকে দিয়ে দেন তাহলে কি আপনি রাজি হবেন ? ”

” এ জীবনের পরে যদি আবারও জীবন থাকে তবে সেই জীবনেও আমি তাকে চাই । ”

” আমি যদি যেকোন কিছুর বিনিময়ে বৃষ্টিকে নিজের করে নিয়ে যাই আপনার আপত্তি আছে ? ”

” বৃষ্টি যদি একবার বলে যে সে আমাকে চায় না সে অন্য কাউকে চায় । তাহলে আমি তার জীবন থেকে সরে যাবো , তবে ভাববেন না যে আমার ভালবাসা শেষ হয়ে যাবে । আমার ভালবাসা ঠিকই থাকবে কিন্তু হয়তো অপূর্ণ থেকে যাবে । ”

” তাহলে আমি যদি বৃষ্টিকে আমার প্রতি রাজি করাতে পারি তাহলে আপনি আমাদের মাঝখান থেকে সরে যাবেন ? ”

” হয়তো । ”

” ঠিক আছে ধন্যবাদ ভাই , আমি চাইলে মারামারি করে আপনাকে চট্টগ্রাম থেকে বিতাড়িত করতে পারি কিন্তু সেটা করবো ৷ কারণ বৃষ্টির চোখে আমি খারাপ গুন্ডা হতে চাই না বরং একজন প্রকৃত খাঁটি প্রেমিক হতে চাই । ”

” ঠিক আছে আপনি চেষ্টা করতে থাকুন । ”

” ওকে ভাই আল্লাহ হাফেজ । ”

” ভালো থাকবেন সবসময় । ”

★★

বাসা পৌছানোর আগেই বৃষ্টি সজীব এর কাছে কল দিয়ে কথা বললো । সজীব ভেবেছিল বৃষ্টি হয়তো কঠিন কিছু কথা বলবে যা তার মন খারাপ হয়ে যাবে এবং দুপুরে খেতে ইচ্ছে করবে না । কিন্তু তেমন কিছু হলো না বরং বৃষ্টি এমন সুন্দর সুন্দর কিছু কথা বলে যেটা শুনে সজীব অবাক হয়ে গেল । তাহলে চলুন আপনারাও শুনুন ।

” হ্যা বৃষ্টি বলো । ”

” বাসায় গেছো ? ”

” না এখনো রাস্তায় , তুমি কি করো ? ”

” শুয়ে আছি কিন্তু ঘুম আসছে না । ”

” মন ফ্রেশ করে চিন্তা বন্ধ করো তাহলে ঠিকই ঘুম চলে আসবে । ”

” আমি একা একা কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি । ”

” যেমন ? ”

” মা-বাবা আর মিষ্টিকে আমাদের গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেব । তারপর তোমাকে বিয়ে করে দুজনে টোনাটুনির সংসারে শুরু করবো । মাস শেষে বাড়ি টাকা পাঠিয়ে দেবো তারপর মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাবো । ”

” বাহহ সত্যি বলছো তুমি ? ”

” হ্যাঁ সত্যি বলছি , আর আরেকটা কথা । ”

” বলো ! ”

” তুমি আমাদের এই গলিতে আর আসবে না কারণ হঠাৎ করে মামুন যদি তোমার গায়ে হাত তোলে ? ”

” আমার মনে হয় তেমন কিছু করবে না , কারণ তার কথাবার্তা স্বাভাবিক ছিল । তবে সে হয়তো তোমাকে রাজি করানোর চেষ্টা করবে । ”

” আমাদের বাসা থেকে বেরিয়ে তার সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি আলোচনা হলো ? ”

” তুমি কিভাবে জানলে ? ”

” তুমি মন খারাপ করে বেরিয়ে গেলে তাই আমি ছাঁদে গিয়ে নিচে তাকিয়ে ছিলাম । রাস্তায় দাঁড়িয়ে তোমরা যখন কথা বলছো তখন আমি ছাঁদে দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখেছি । ”

” তেমন খারাপ কিছু বলে নাই , তার বক্তব্য হচ্ছে সে তোমাকে জোর করে কিছু করবে না । বা আমাকে মেরে রক্তাক্ত জখম করে তোমার সামনে গুন্ডাও সাজবে না । তবে সে তার ভালবাসা দিয়ে তোমাকে আর তোমার মনকে জয় করে নেবে । ”

” হাহাহা এতই সোজা ? সে কি জানেনা যে বৃষ্টি আকাশ থেকে ঝড়বে শুধু সজীব এর জন্য ৷ ”

” মনে হয় জানে না । ”

” আচ্ছা বাদ দাও তার কথা তোমার এ গলিতে আর আসতে হবে না । এবার বলো কি করা যায় ? ”

” কোন বিষয় ? ”

” একদিন পর শবেবরাত আর তার পনের দিন পরে রমজান মাস । আমি ভাবছি রোজার ঈদের আগে আমরা বিয়ে করবো তারপর ঈদের ছুটিতে মা-বাবা সবাই কে নিয়ে গ্রামের বাড়ি বেড়াতে যাবো । আর ছুটি শেষে তাদেরকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আমরা শহরে চলে আসবো । ”

” এত তাড়াতাড়ি বিয়ে ? ”

” কাল রাতে তোমার সাথে কথা বলতে বলতে শরীর শিহরিত হয়ে গেছে গো , কতক্ষণ শুধু কোলবালিশ খামচে ধরে শুয়ে ছিলাম ৷ আমার পাশে মিষ্টি ঘুমিয়ে ছিল , ঘুমের মধ্যে তোমাকে স্বপ্নে দেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছি পরে দেখি ওটা মিষ্টি । চিন্তা করতে পারো তোমার অস্তিত্ব কতটা মিশে গেছে আমার ? ”

” আমি কি স্বপ্ন দেখছি ? ”

” কোনটা ? ”

” এইযে তোমার সাথে কথা বলছি । ”

” ধুর স্বপ্ন হবে কেন ? ”

” তাহলে কি মেঘ না চাইতে জল ? ”

” না মেঘ না চাইতে বৃষ্টি । ”

” তারপর ? ”

” চট্টগ্রামে তো তোমার ছোট খালা আছে তাকে সব বলবে এবং আমাদের বাসায় নিয়ে আসবে অবশ্য সেটা আমি বলার পরে ৷ তারপর তাদের নিয়ে কাজি অফিস থেকে বিয়ে করে রাখবো তবে গ্রামের বাড়ি শশুর শাশুড়ীকে জানানো হবে । তারা যদি সম্ভব হয় মা-বাবা আর মাহি তিনজনই আসবে । আর যদি একান্ত না পারে তাহলে মা অথবা বাবা মাহিকে নিয়ে চলে আসবে । ”

” এতকিছু ভাবলে কখন ? ”

” কালকে রাতে । ”

” বিয়ের পরে কতদিন আলাদা থাকতে হবে ? ”

” সঠিক বলা যাচ্ছে না তবে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে তুমি আমি একসাথে থাকতে পারবো ৷ শহরে বসে বিয়ে হবে ঠিকই কিন্তু একসাথে থাকা হবে না । ”

” কেন ? খাবার সামনে রেখে কেউ কি না ক্ষুধা সহ্য করতে চায় ? ”

” শোন সজীব সাহেব , রোজার মাসে রোজাদার ব্যক্তি যেমন চোখের সামনে অজস্র খাবার থাকার পরেও খেতে পারে না । ঠিক তেমনি তোমার সামনে তোমার খাবার থাকবে কিন্তু খেতে পারবে না , আর তাছাড়া আমাদের বিয়ে তো রোজার সময়ই হবে হাহাহা হাহাহা । ”

” উদাহরণ সবসময় রেডি থাকে তাই না ? ”

” ওই ছ্যাড়া ? আমরা মা-বাবা আর দুই বোন মিলে একটা রুমের মধ্যে থাকি সেখানে তোমার সাথে কিভাবে থাকবো ? আর আমরা যেহেতু নতুন বিয়ে করবো সেহেতু ওই সময় কি কোন খেয়াল থাকবে ?

” আমার বাসা তো আছে , রকিকে বলবো একটা দিন যেকোন বন্ধুর বাসায় বা তার মামার বাসায় যেন গিয়ে থাকে । ”

” তবুও তোমার লাগবেই ? এখনো বিয়ের নেই খবর উনি খাবার ব্যবস্থা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে । শোন বেশি কথা বললে খাবার তোমার মুখ দিয়ে ঢুকিয়ে আবার পেটের মধ্যে কেলিয়ে বমির মাধ্যমে মুখ দিয়ে বের করবো । ফাজিল কোথাকার । ”

” তুমিই তো বললে যে গতকাল রাতে কোলবালিশের অবস্থা ত্যানা ত্যানা বানিয়ে দিয়েছো তাহলে এখানে আমার দোষ কি ? ”

” তো তোমার কি ধারণা ? একদিন রকিকে বাসার বাইরে রেখে আমরা একদিনেই সব ফুরিয়ে যাবে ? এখন যেভাবে আছি বেশ আছি , পরে একদিন কাছে গিয়ে তারপর আবার আলাদা থাকতে পারবো না ৷ যেদিন প্রথম তোমার বুকে মাথা রেখে ঘুমাবো সেদিন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একটা রাতও ওই বুক ছাড়া থাকতে চাই না । ঝড় বৃষ্টি বন্যা যা কিছু হয়ে যাক দিন শেষে ক্লান্ত শরীর নিয়ে ওই বুকে মাথা রাখতে চাই । ”

” তাহলে তো কিছু করার নেই , অপেক্ষা করতে হবে শুধুই অপেক্ষা । ”

” গুড ভেরি গুড । ”

” তাহলে খালাকে নিয়ে তোমাদের বাসায় কবে যাবো ? ”

” আমি তোমাকে জানাবো কারন আপাতত আমার হাতে টাকা নেই তাই একটু ম্যানেজ করতে হবে । আর আজকে মা বেতন পেলে সেই টাকা দিয়ে কিছু কিছু টাকা শোধ করে কিছু রাখতে হবে । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে । ”

” বাসায় গিয়ে খেয়ে নিও তাড়াতাড়ি , রাখলাম ! ”

” আল্লাহ হাফেজ । ”

★★

মিতু যে অফিসে চাকরি করে সেই অফিসের নাম হচ্ছে ” রিজেন্সি গার্মেন্টস ” । সজীব এর চাকরি হয়ে গেছে কিন্তু ছোটখাট একটা সমস্যা হচ্ছে মিতু যার সাথে চাকরির কথা বলেছে তার সাথে বলেছিল যে মিতুর স্বামীর জন্য চাকরি দরকার । মিতু সজীব কে স্বামী বলার বিষয় প্রথমে তেমনটা ভেবে বলে নাই কারণ মিতু হচ্ছে দুষ্ট চঞ্চল একটা মেয়ে । কিন্তু সজীব কে মিতুর স্বামী হিসেবে তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল আর সজীব এর চাকরি হয়ে গেল জিএম স্যারের রিপোর্টার হিসেবে ৷ ইদানিং সবসময় সজীব এর মন থাকে ফুরফুরে মেজাজে কারণ বৃষ্টি আর তার সম্পর্ক এখন সবচেয়ে রোমান্টিক মুহূর্তে অবস্থান করছে ৷ অফিসের মধ্যে সজীব এর কাজের চাপ সত্যি সত্যি অনেক কম কিন্তু তবুও সে মিতুর সাথে অফিসে কথা কম বলে । কারণ সে ভালো করে জানে মিতু তাকে ভালবাসে আর সজীব যদি অফিসে বেশি সময় তার সাথে ব্যয় করে তাহলে সে অনেক কিছু ভাবতে পারে । তাছাড়া আশেপাশে অনেকে থাকে তারাও সবকিছু দেখে যেহেতু ঈদের পরে বৃষ্টি এই গার্মেন্টসে চাকরি করতে চায় । তাহলে তখন যদি সে এসে জানতে পারে সজীব এমন করে মিতুর সাথে সবসময় সঙ্গ দিয়েছে । তাহলে তখন এ নিয়ে একটা ভুলবোঝাবুঝি সৃষ্টি হতে পারে ।

পঞ্জিকা অনুযায়ী তিনদিন পর রোজা তবে নিশ্চিত না কারণ চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করবে । বিকেল পাঁচটা বাজতে বেশি বাকি নেই , একটু পরে বৃষ্টির ছুটি হবে । অন্যান্য দিন হলে বৃষ্টি এই সময় অনেক খুশি হতো কিন্তু আজকের সে খুশি হতে পারছে না । কারণ সজীব কল দিয়ে জানিয়েছে তার ছুটি হবে রাত আটটা বাজে অবশ্য প্রতিদিন এই টাইমে সজীব এর ছুটি হয় । বৃষ্টিরও এতদিন আটটা বাজে ছুটি হতো আর দুজনেই একসাথে দেখা করে তারপর বাসায় যেতো । এখন বৃষ্টির কাছে একটা দিন সজীব কে না দেখে থাকা কষ্ট হয়ে যায় ৷ কাজের মধ্যে মাঝে মাঝে মোবাইলে কল দিয়ে কানের কাছে রেখে ওড়না দিয়ে ঢেকে রাখে তারপর কাজ করতে করতে কথা বলে ৷ যখন খুব বেশি কথা বলতে ইচ্ছে করে তখন ওয়াশরুমে গিয়ে কথা বলে । কিন্তু আজকে তাদের লাইনে নতুন কাজ শুরু করেছে তাই সবাইকে আগে থেকে বলা হয়েছে যে পাঁচটা বাজে ছুটি হবে ।

হঠাৎ করে মরিয়ম এসে বললো , আজকে নাকি তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে বৃষ্টির দেখা করিয়ে দেবে । মরিয়ম প্রেম করে সেটা বৃষ্টি জানতো না কিন্তু সপ্তাহ খানিক আগে হঠাৎ করে মরিয়ম বললো যে তার একজনের সাথে প্রেম আছে । আজকে পাঁচটা বাজে ছুটি হবে তাই তার সাথে দেখা করতে যাবে এবং সঙ্গে নিয়ে যাবে বৃষ্টিকে ।

ছুটির পরে মরিয়ম আর বৃষ্টি ফ্রি পোর্ট এসে মরিয়ম এর বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করলো । মরিয়ম বললো একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসে বসে কথা বলবে কিন্তু বৃষ্টি প্রথমে আপত্তি করলো । কারণ সজীব এর সাথে দেখা হবে না ভেবে তার মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে গেছে । তবে মনে মনে ঠিক করে রেখেছে আটটা বাজে সজীব কে বলবে যে বাসায় যাওয়ার আগে যেন তার সাথে দেখা করে নাহলে সে রাতে ঘুমাতে পারবে না ।

মরিয়ম এর জোড়াজুড়িতে বৃষ্টি তাদের সাথে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসলো । তারপর তারা ফুচকার অর্ডার দিয়ে বসে রইলো কিন্তু ফুসকা আসতে সময় লাগলো প্রায় পনের মিনিট । কারণ অফিস ছুটির এই সময় প্রচুর ভিড় থাকে আর সবাইকে দিতে দিতে একটু সময় লাগে ৷ মিতু আর তার বয়ফ্রেন্ড কথা বলছে তবে মাঝে মাঝে বৃষ্টিকেও দু একটা কথা জিজ্ঞেস করছে । মরিয়মের বয়ফ্রেন্ডের নাম শিহাব ।

এদিকে বিকেল বেলায় বৃষ্টি যখন সজীবকে বললো যে তার পাঁচটা বাজে ছুটি হবে আর সেও যেন পাঁচটা বাজে ছুটি নিয়ে বের হয়ে আসে ৷ তখন সজীব বলেছিল যে সে আসতে পারবে না কিন্তু বৃষ্টি সে কথা না মেনে রাগ করে ফোন কেটে দেয় । সজীব এরপর অনেকবার কল করেছে কিন্তু বৃষ্টি রিসিভ করে নাই ৷ এরপর যখন দেখলো কল দেয়া থামছে না তখন মোবাইল সাইলেন্ট করে রেখে দেয় আর এখনো তার মোবাইল সাইলেন্ট করা আছে ।

বৃষ্টি রাগ করে কল কেটে দিয়েছে আর তারপর থেকে বারবার কল রিসিভ করে না তাই সজীব ভাবলো একবার স্যারকে বলে দেখি পাঁচটা বাজে ছুটি পাওয়া যায় কিনা । সজীব যখন তার স্যারকে ছুটির কথা বলে তখন স্যার সাথে সাথে মেনে নিল এবং ছুটি মঞ্জুর করে দিল । সজীব অফিস থেকে বেরিয়ে বারবার কল দিচ্ছে কিন্তু বৃষ্টির মোবাইল তো সাইলেন্ট করে ব্যাগের ভেতর রাখা তাই টের পাচ্ছে না ৷ সজীব যদি জানতো মোবাইল সাইলেন্ট করা তাহলে তো আর কল দিত না । কিন্তু সজীব যখন ফ্রি পোর্ট মোড় আসলো তখন হঠাৎ করে দেখলো বৃষ্টি একটা ছেলের সাথে হাঁটতে হাঁটতে রেস্টুরেন্টের দিকে যাচ্ছে । কিন্তু তাদের সামনে সামনে মিতু যে মোবাইল কথা বলে বলে হাঁটছে সেটা সজীব এর চোখে পরলো না । সজীব ভাবলো কে এই ছেলে ? আর বৃষ্টি তার সাথে রেস্টুরেন্টে কেন গেল ? তারা রেস্টুরেন্টে যাবার পরও সজীব কল দিল কিন্তু তবুও রিসিভ করলো না । মনে মনে ভাবলো যে নিশ্চয়ই এই ছেলের সাথে আছে তাই হয়তো ইচ্ছে করেই রিসিভ করে না । কিন্তু কে এই ছেলে ? তার সাথে বৃষ্টি কেন ? আর এই ছেলেকে সজীব কোথায় যেন দেখেছে মনে হয় কিন্তু সঠিক মনে আসে না । তখন ভাবলো নিশ্চয়ই বৃষ্টির অফিসে চাকরি করার সময় দেখা হয়েছিল তার ।

সজীব রেস্টুরেন্টে উঁকি দিয়ে দেখে অবাক হয়ে গেল কারণ তাদের সাথে মরিয়ম বসে আছে এবং এখন তিনজনে কথা বলছে । সজীব মোবাইলে মরিয়ম এর নাম্বার বের করে কল দিলো এবং মরিয়ম তাকিয়ে দেখে এটা সজীব এর নাম্বার । সে বৃষ্টির কাছে বললো ” সজীব ভাই কল করেছে । ” বৃষ্টি বললো , রিসিভ করে বলে দে বৃষ্টি বাসায় চলে গেছে । ”

” মরিয়ম রিসিভ করলো , আসসালামু আলাইকুম সজীব ভাই ? ”

” ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কেমন আছো তুমি ?”

” জ্বি ভাই আলহামদুলিল্লাহ আপনি কেমন আছেন ?

” ভালো আছি , আচ্ছা বৃষ্টি আমার কল রিসিভ করে না কেন ? ”

” তাতো জানিনা ভাই , আর বৃষ্টি তো অফিস ছুটি হবার সাথে সাথে বাসায় চলে গেছে । মনে হয় বাসায় গিয়ে কাজ করতে বিজি আছে । ”

” সজীব তখন মরিয়ম এর মিথ্যা কথা শুনে আকাশ থেকে পরলো কারণ সে নিজের চোখে বৃষ্টিকে দেখে আর মরিয়ম মিথ্যা বলে কেন ? সজীব বললো , আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমি রাখি ? ”

” ঠিক আছে আসসালামু আলাইকুম ভাই । ”

মরিয়ম এর নাম্বারে কল দিয়েছে দেখে বৃষ্টি তখন মরিয়ম এর কথার মধ্যেই মোবাইল বের করে দেখে ১৭৪ বার সজীব কল করেছে । তাই সে মরিয়ম এর কথার মধ্যেই কল দিল কারণ সজীব যেন বুঝতে পারে যে বৃষ্টি সত্যি সত্যি মরিয়ম এর সাথে নেই ৷

” মরিয়ম এর কল কাটার সাথে সাথে বৃষ্টির কল রিসিভ করলো সজীব আর বললো, বৃষ্টি কোই তুমি ?

” আমি তো বাসায় চলে আসছি , তুমি কি করো ? ”

” এবার সজীব মিথ্যা করে বললো , আমি অফিসে আছি এখনো ৷ ”

” বৃষ্টি অভিযোগের সুরে বললো , থাকো তোমার অফিস নিয়ে কল করার দরকার নেই । ”

” সজীব বললো , ঠিক আছে রাখছি তাহলে । ”

বৃষ্টি দ্বিতীয় কথা বলার আগেই সজীব কল কেটে দিল ।

কল কেটে দিয়ে সজীব ভাবছে কে ওই ছেলে ? আর তার সাথে দেখা করার জন্য বৃষ্টি তার সাথে মিথ্যা কথা কেন বলছে ? শুধু তাই না বরং মরিয়মও মিথ্যা কথা বলে ।

#_লেখকের_কথাঃ- আমি গল্প লিখে মাঝে মাঝে ভাবি যে আমার মাথায় এত প্যাঁচ কিভাবে আসে ? অনেক ভেবে ভেবে একটা উত্তর বের করেছি , আর তা হচ্ছে খুলনা থাকতে রবিউল নামে একটা ছেলে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিদিন খুব ভালো জিলাপি বানতো । আমি রকি শফিক প্রতিদিন সেখানে গিয়ে জিলাপি খেতাম আর সেই বেশি বেশি জিলাপির জন্য আজ হয়তো আমার মাথায় এত জিলাপির প্যাঁচ তৈরি হয়ে গেছে । তাই আমি বারবার চেষ্টা করেও সেই প্যাঁচ ছাড়াতে পারবো না ।

চলবে….

যদি আপনার কাছে গল্পটা ভালো লাগে তাহলে লাইক দিয়ে সুন্দর একটা মন্তব্য প্রকাশ করুন ।

ভালবাসা অবিরাম অন্তহীন ।

লেখাঃ
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here