_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি । #_পর্ব = ৩৪

0
191

#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ৩৪

” মোবাইল পকেটে রেখে সজীব রেস্টুরেন্টের প্রবেশ করলো , বাম হাত পকেটে রেখে ডান হাতের আঙ্গুল নাচাতে নাচাতে বৃষ্টিদের টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মরিয়ম এর দিকে তাকিয়ে বললো , তোমার বান্ধবী বাসা পরিবর্তন করে রেস্টুরেন্টে থাকে সেটা জানতাম না । আজকে হঠাৎ করে দেখলাম না জানি কতদিন ধরে বাসা পরিবর্তন করে এমন চলে ? ”

খুব সহজ ভঙ্গিতে অপমান , বৃষ্টি সজীবকে দেখা মাত্র বুকের মধ্যে ধুকধুক অনুভব করছে । সজীবের দিকে তাকিয়ে দেখতে সাহস হচ্ছে না তাই মাথা নিচু করে ফুচকার প্লেটের মধ্যে তাকিয়ে রইলো । খুব যত্ন করে শষা আর ডিমগুলি কুচিকুচি করে কাটা হয়েছে অবশ্য মেশিনের সাহায্য নিতে হয়েছে ।

” মরিয়ম আমতা আমতা করে বললো , আসলে ভাই বৃষ্টি একটু ভয় পাচ্ছে তাই মিথ্যা বলতে হয়েছে । ”

” ভয় কেন পাবে ? এসব করার সময় ভয় লাগে না ?
আমাকে পাঁচটা বাজে ছুটি নিতে বলে আর আমি বহুকষ্টে ছুটি নিয়ে আসলাম আর সে কল রিসিভ করার প্রয়োজন মনে করে না । ”

” বৃষ্টি মাথা নিচু করে আস্তে আস্তে বললো , মোবাইল সাইলেন্ট করা ছিল তাই বুঝতে পারিনি । ”

” সজীব চিৎকার করে বললো , চোপ ! ফাজলামো করো আমার সাথে ? আরে তোমার যখন আমার সাথে সমস্যা তাহলে বললেই পারতে তাহলে আমি সরে যেতাম ৷ এভাবে একসাথে দুই নৌকায় পা রেখে চলার অভ্যাস কিভাবে হলো ? ”

” বৃষ্টি এবার মাথা উপরে তুলে সজীব এর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো , মানে কি ? ”

” মানে হচ্ছে তোমার আর তোমার বান্ধবীর এমন মিথ্যা বলার দরকার কি ? ”

” বললাম তো ভয় লাগে অনেক , তোমাকে রেখে রেস্টুরেন্টে আসছি সেটা জানলে তুমি কষ্ট পাবে তাই বলতে চাই নাই । ”

” মিথ্যা কথা বলো কেন ? আসল কথা হচ্ছে তুমি তো এই ছেলের সাথে এসেছো আর তাই আমাকে জানাতে চাও নাই । আরে আমি কি তোমার পথের কাটা হবো ? বললেই সরে যেতাম । ”

” সজীব এর অতিরিক্ত রাগের কারণ বৃষ্টি মরিয়ম ও শিহাব এর কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল । সজীব শিহাব কে নিয়ে বৃষ্টিকে সন্দেহ করছে আে তাই এমন করে বেশি চেচামেচি করে এ কথা ভাবতেই বৃষ্টির চোখ ভর্তি পানি এলো । রেস্টুরেন্টের বাতিগুলো ঘোলাটে মনে হচ্ছে , আশেপাশের উৎসুক জনতা সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে । মরিয়ম নিজেই হতভম্ব হয়ে গেল , শিহাব একা লজ্জিত হয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে আছে । বৃষ্টি আর সহ্য করতে পারলো না তাই বললো , চুপ করো সজীব ! মুখে যা আসে তাই বলে এতগুলো মানুষের সামনে অপমান করছো ?
তোমার কি মনে হয় আমি শুধু বিভিন্ন ছেলের সাথে কথা বলি ? আরে এটা কি করে ভাবলে ? যেখানে আমি সারাদিন কাজের মধ্যেও তোমার সাথে কথা বলি , প্রতিদিন ছুটি হলে তোমার হাত ধরে রাস্তায় হাঁটতে থাকি । সেখানে কি করে আরেকজনের সাথে ঘুরবো ? আরে এটা মরিয়ম এর বয়ফ্রেন্ড , আর এরা আমাকে জোর করে নিয়ে আসছে । তোমার মতো নিচু মানসিকতার মানুষের সাথে কথা বলতে এখন লজ্জা করে আমার ৷ আর কোনদিন আমাকে কল দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবে না , এমন জঘন্য নিচু মানসিকতার কপালে থু । ”

বৃষ্টি নিজের হাতের ব্যাগ নিয়ে ডানেবামে না তকিয়ে বেরিয়ে গেল । সজীবও বৃষ্টি সরি গো আর হবে না গো ইত্যাদি বলতে বলতে বেরিয়ে গেলো ।

” রাস্তায় বেরিয়ে বৃষ্টি বললো , একদম আমার পিছু পিছু আসবে না তাহলে কিন্তু সবাই কে ডেকে আমি জড়ো করে দেবো । ”

” বললাম তো আমার ভুল হয়ে গেছে আমি বুঝতে পারিনি গো , বেশি ভালবাসি তাই হারানোর ভয় লাগে । এবারের মতো সবকিছু ভুলে যাও কথা দিচ্ছি আর কখনো এমন হবে না । ”

” বেশি ভালবাস ঠিক আছে কিন্তু তাই বলে আমাকে এতগুলো মানুষের সামনে অপমান করবে ? ”

” বুঝতে পারিনি , যদি বুঝতে পারতাম তাহলে তো এমন করে বলতাম না । ”

” তুমি এখন আমার সামনে থেকে চলে যাও । ”

” ক্ষমা করে দিয়েছ তো ? ”

” সেটা এখন বলতে পারছি না , তবে যদি ভালো মনে করো তাড়াতাড়ি সামনে থেকে সরে যাও । ”

” ঠিক আছে তোমার মাথা গরম তাই এখন বিরক্ত করবো না , তবে বাসায় গিয়ে তোমার কলের অপেক্ষা করবো । ”

” লাভ নেই । এ কথা বলে বৃষ্টি হাঁটতে শুরু করলো আর সজীব রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে । ”

★★

মরিয়ম আর শিহাব এমন একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনার জন্য লজ্জিত হয়ে বিল মিটিয়ে বের হলো । বাকি সকল মানুষ যে যার মতো খেতে ব্যস্ত হয়ে গেল যেন কিছু হয়নি এখানে । কিন্তু রাস্তায় দাঁড়িয়ে শিহাব মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে রইলো হা না কিছু বলে না তাই মরিয়ম ভাবলো যে শিহাব হয়তো বৃষ্টি আর সজীব এর ব্যবহার নিয়ে কষ্ট পেয়েছে । মরিয়ম এসব ভেবে নিজে লজ্জিত হয়ে প্রথম কিছু বললো না কিন্তু দুজনেই নীরব থাকলে সমস্যা সমাধান হবে না ।

” মরিয়ম বললো , এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে বুঝতে পারিনি আর তাছাড়া বৃষ্টি আমার সবচেয়ে ভালো বান্ধবী তাই ওকে কিছু বলতে পারবো না । তুমি প্লিজ কিন্তু কিছু মনে করো না , ওরা দুজন দুজনকে খুব ভালবাসে তাই একটু ভুলবোঝাবুঝি । ”

” শিহাব বললো , তোমার বান্ধবী এই ছেলের সাথে সম্পর্ক করে কতদিন ? সে কি ব্যাক্তিগত ভাবে এই ছেলেকে চেনে ? ”

” আমি যতটুকু জানি ওরা দুজন অনেক আগে থেকে পরিচিত , বৃষ্টির বাবা যখন খুলনা শহরে ছিল তখন থেকে মনে হয় তাদের পরিচয় । ”

” কিন্তু এই ছেলে তো বিবাহিত আর এই ছেলের তো স্ত্রী আছে । ”

” কি বলছো তুমি ? এটা কিভাবে সম্ভব ? আর তুমি কিভাবে জানলে ? ”

” এই ছেলে আর তার বউ আমার অফিসেই চাকরি করে , তবে ছেলেটা নতুন চাকরি নিয়েছে কিন্তু তার স্ত্রী অনেক দিন থেকে চাকরি করে । আমি তার স্ত্রীর সাথে একই ফ্লোরে ডিউটি করি আর তার সাথে আমার মোটামুটি ভালো কথা হয় । তবে ছেলেটা জিএম স্যারের রিপোর্টার তাই ফ্লোরে বেশি দেখা যায় না । ”

” তুমি কি শিওর হয়ে সবকিছু বলছো ? ”

” হ্যাঁ শতভাগ নিশ্চিত হয়ে বলছি আর তুমি চাইলে সেই মেয়েকে আগামীকাল ছুটির পরে তোমার সাথে দেখা করিয়ে দিতে পারি । তখন তুমি নাহয় সবকিছু নিজেই জিজ্ঞেস করে জেনে নেবে । ”

” সেটা হলে খুব ভালো হয় আর আমি আগামীকাল বৃষ্টিকে সাথে নিয়ে আসবো তাহলে বৃষ্টি নিজের মুখে প্রশ্ন করে জেনে নেবে । সত্যি সত্যি যদি সজীব ভাইর স্ত্রী থাকে তাহলে বৃষ্টি শুধু শুধু তার সাথে কথা বলে কষ্ট পাবে কেন ? তুমি কালকে তাহলে ওই মেয়ের সাথে দেখা করানোর ব্যবস্থা করো । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে তাই হবে । ”

★★★

বাসায় আসার পথে আজকে হঠাৎ করে মামুনের সাথে বৃষ্টির দেখা হয়ে গেল । অনেকদিন ধরে বৃষ্টি মামুনকে দেখতে পায়নি মনে হয় কোন যায়গা কোন কাজে গেছিলো ৷

” মামুন বৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে বললো , কেমন আছো বৃষ্টি ? অনেক দিন পরে দেখা হলো । ”

” জ্বি আলহামদুলিল্লাহ ভালো , আর হ্যাঁ অনেক দিন পরেই দেখলাম আপনাকে । ভালো আছেন ? ”

” আছি মোটামুটি , মায়ের শরীরটা ভালো না তাই তাকে ডাক্তার দেখাতে ঢাকা গেছিলাম । সেখানে বড় মামা থাকে তাই অনেকদিন থাকা হয়ে গেল । ”

” ওহহ আচ্ছা , আন্টি এখন কেমন আছেন ? ”

” তোমাদের দোয়ায় ভালোই আছে , কিন্তু ডাক্তার বলেছে মা’কে সবসময় বিশ্রাম করতে হবে । নাহলে আবার আস্তে আস্তে অসুস্থ হয়ে যাবে , কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সংসারে আর কেউ নাই তাই মা’কে সবকিছু সামলাতে হচ্ছে । ”

” তাহলে একটা বিয়ে করে বউ নিয়ে আসুন তাহলে আন্টির চাপটা কমে যাবে ৷ ”

” বাবা-মা দুজনেই গতকাল সেটাই বললো , কিন্তু আমি যাকে পছন্দ করি সে তো রাজি হবে না । এখন তাহলে কিভাবে কি করা যায় বলো তো ? ”

” বৃষ্টি পরলো মহা বিপদে কারণ সে নিজেই প্রসঙ্গ টেনে এনেছে এখন কি জবাব দেবে ? থতমত খেয়ে বললো , সে যদি রাজি নাহয় তাহলে মা-বাবার পছন্দ মতো কাউকে নিয়ে আসুন । ”

” সেটা তো সম্ভব না বৃষ্টি তাই কি করবো বুঝতে পারছি না । ”

” মামুন ভাই আজকে অনেকদিন পরে পাঁচটা বাজে ছুটি হয়েছে তাই ভাবছি বাসায় গিয়ে কিছু কাজ করবো তাছাড়া সামনে রমজান মাস । আমি এখন যাই তাহলে ? ”

” আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে , চট্টগ্রামে যখন এসেছি তখন আবার প্রতিদিন দেখা হবে । ”

মরিয়ম বাসায় যেতে যেতে ভাবছে , যদি সত্যি সত্যি সজীব এর স্ত্রী থাকে তাহলে বৃষ্টি কতটা কষ্ট পাবে ? বৃষ্টি এমনিতেই কত কষ্ট করে বেঁচে আছে আবার তার মধ্যে যদি সজীব বেঈমানী করে তাহলে বৃষ্টি বাঁচবে তো ? তবে মরিয়ম মিতুর বিষয় কিছু জানতো না , কারণ বৃষ্টি কখনো মিতুর বিষয় কিছু বলেনি । যদি বলতো তাহলে হয়তো এতটা চিন্তা হতো না ।

★★

বাসায় গিয়ে বৃষ্টি মোবাইল বন্ধ করে রেখে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে একটা বালিশ দিয়ে শুয়ে পরলো । একে তো মনটা খারাপ লাগে তার উপর আবার শরীর ক্লান্ত তাই ঘুমানোর চেষ্টা করছে । রাত নয়টার দিকে বৃষ্টির মা ডেকে তুলে রাতের খাবার খেতে ডাকলেন তারপর বৃষ্টি ঘুম থেকে উঠে সামান্য খেয়ে আবার ঘুমিয়ে গেল ।

সজীব রাতের বেলা যতক্ষণ জেগে ছিল ততক্ষণ কল দিয়ে দিয়ে হতাশ হয়ে ঘুমিয়ে গেল । সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আবারও চেষ্টা করলো কিন্তু নাম্বার বন্ধ । ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে তাড়াতাড়ি ফ্রি পোর্ট গিয়ে সেই চায়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে রইলো । কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেল তবুও বৃষ্টি আসলো না । কিন্তু সজীব দাঁড়িয়ে রইলো ভাবলো আজকে হয়তো দেরি হয়ে গেছে একটু পরে চলে আসবে । কিন্তু সময় পেরিয়ে যায় এক এক করে সবাই যার যার অফিসে চলে গিয়ে ইপিজেডের রাস্তা ফাঁকা হয়ে গেল কিন্তু বৃষ্টি আসলো না । সজীব মন খারাপ করে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো , এটা কি সত্যিই সম্ভব ? ”

হঠাৎ করে সজীব এর মোবাইলে বৃষ্টি নাম্বার থেকে একটা মেসেজ আসলো সেখানে লেখা ছিল ।
” তুমি কি এখনো আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছো ? যদি থাকো তাহলে তাড়াতাড়ি অফিসে চলে যাও কারণ আমি অফিসে চলে এসেছি । ”

সজীব সাথে সাথে নাম্বারে কল দিল কিন্তু নাম্বার বন্ধ করে দিয়েছে । মনে হয় মেসেজ দিয়ে সাথে সাথে আবার বন্ধ করে দিয়েছে । সজীব মন খারাপ করে একটা রিক্সা নিয়ে অফিসের দিকে রওনা দিল তবে সে নিশ্চিত আজকে তার লেট হবে । কিন্তু ভরসার কথা হচ্ছে সজীব এর কাজ শুরু হবে প্রথম ঘন্টা শেষে নয়টার দিকে ।

” মরিয়ম বৃষ্টির কাছে এসে বললো , আজকে ছুটির পরে একটা বিশেষ কাজ আছে । একটা মেয়ের সাথে জরুরি দেখা করতে হবে কিন্তু কি কারনে দেখা করবো সেটা তখন বলবো । ”

” বৃষ্টি বললো , আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নেই আমি তোর সাথে যাবো কিন্তু গতকাল সজীব এর ব্যবহার নিয়ে আমি লজ্জিত । সজীব যে তোর বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে আমাকে আমাকে সন্দেহ করবে সেটা আমি কল্পনা করতে পারি নাই । আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে । রাগ করে কাল থেকে সজীব এর সাথে কোন কথা বলিনি এখনো মোবাইল বন্ধ । ”

” মরিয়ম বললো , আমাকেও রাতের বেলা অনেক বার কল দিয়েছে কিন্তু রিসিভ করিনি । তারপর একটা মেসেজ দিয়ে সরি লিখে পাঠিয়েছে । ”

” ওহহ আচ্ছা , তবুও আমি সরি তার জন্য । ”

” আচ্ছা বাদ দে এসব কথা , সন্ধ্যা বেলা ছুটির পরে অবশ্যই কিন্তু দেখা করতে হবে । ”

” ঠিক আছে কথা দিচ্ছি । ”

|
|

লান্সের সময় মিতু সজীব কে খুঁজে বের করে তার সাথে ক্যান্টিনে খেতে বসলো । মিতু প্রতিদিন বাটিতে করে তরকারি নিয়ে আসে কারণ অফিসের তরকারি সে খেতে পারে না । আর সে মাঝে মাঝে সজীব এর সাথে খেতে বসে তার নিজের রান্না করা তরকারির বাটি সজীব এর দিকে এগিয়ে দেয় । সজীব প্রথম প্রথম না করে কিন্তু মিতুর জোরাজুরিতে চারিদিকে তাকিয়ে সে নিতে বাধ্য হয়ে যায় ৷ আজকে মিতু বাসা থেকে গরুর মাংস রান্না করে নিয়ে এসেছে তাই সে সজীব এর কাছে বসেছে । সজীব আে মিতু দুজনেই একসাথে বসে দুপুরের খাবার শেষ করলো আর তাদের একটু পাশেই বসে বসে মরিয়ম এর বয়ফ্রেন্ড শিহাব সবকিছু দেখছে । শিহাব মনে মনে ভাবছে ” শালা কতবড় বাটপার , নিজের বউয়ের সাথে এই অফিসে চাকরি করে আবার আরেকটা অফিসে গিয়ে প্রেম করে । ”

” শিহাব লান্সের পর মিতুকে বললো , আজকে ছুটির পরে আমার সাথে একটু ফ্রি পোর্ট যেতে হবে । ”

” মিতু বললো , কিন্তু কেন শিহাব ভাই ? কোন কাজ আছে নাকি ? ”

” হ্যাঁ আসলে আমি যার সাথে প্রেম করি তার সাথে মাঝে মাঝে তোমার কথা বলি তাই সে তোমাকে দেখতে চায় । আমিও তোমার কাছে জিজ্ঞেস না করে তাকে কথা দিয়ে ফেলেছি তাই আজকে ছুটির পরে যেতে হবে তোমাকে । ”

” ঠিক আছে শিহাব ভাই আমি অবশ্যই যাবো , আর আপনার ভালবাসার মানুষটাকে আমার দেখতে ইচ্ছে করছে । ”

” তোমার স্বামী কিছু বলবে না ? ”

” নাহহ সজীব আে আমি খুব ফ্রি তাই আমাদের মাঝে কখনো ভুলবোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়না । আমি যদি আপনার সাথে যাই তবুও সে কিছু মনে করবে না । ”

” আচ্ছা একটা ব্যাক্তিগত প্রশ্ন করবো ? ”

” করেন শিহাব ভাই । ”

” তোমাদের বিয়ে হয়েছে কতদিন আগে ? ”

” এই মাস খানিক আগে । ”

” ওহহ তাহলে তো এখনো ফ্রেশ ? বিয়ের মজা তো এখনো আছে তাই না ? ”

” ধুর শিহাব যান তো , কি সব বলেন ? লজ্জা করে ।

” আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু ছুটির পরে আমার সাথে যাবে কিন্তু ! ”

” ঠিক আছে মনে থাকবে । ”

শিহাব হচ্ছে মিতু যে লাইনে ডিউটি করে তার পাশের লাইনের সুপারভাইজার কিন্তু সে আগে মিতুদের এই লাইনে ডিউটি করতো তাই মিতুর সাথে তার আগে থেকে পরিচয় ছিল । শিহাব মিতুর সাথে কথা শেষ করে মরিয়ম এর কাছে কল দিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা জিজ্ঞেস করলো । আর মিতুর সাথে কি কি প্রশ্ন করতে হবে তাও শিখিয়ে দিল এমনকি ক্যান্টিনে বসে খাবার কথাও বলে দিল ।

★★★

বৃষ্টিদের লাইনে গতকাল নতুন কাজ ধরা হয়েছে তবুও আজকে সাতটা বাজে ছুটি হয়েছে । অফিস থেকে বেরিয়ে বৃষ্টি আর মরিয়ম হাঁটতে হাঁটতে ফ্রি পোর্ট যেতে লাগলো । মরিয়ম শিহাবের কাছে কল দিল , শিহাব বললো যে তাদেরও ছুটি হয়ে গেছে কিন্তু যেহেতু সে সুপারভাইজার তাই সবাই গেলে তারপর সবগুলো মেশিন চেক করে তারপর তাকে বের হতে হবে । মিতুও শিহাবের সাথে যাবার জন্য আইডি কার্ড পাঞ্চ করে দাঁড়িয়ে রইলো ।

শিহাব আর মিতু ফ্রি পোর্ট এসে দেখে বৃষ্টি আর মরিয়ম দাঁড়িয়ে আছে । সামনাসামনি দাঁড়িয়ে বৃষ্টি আর মিতু দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলো । এটাই হচ্ছে বৃষ্টি আর মিতুর প্রথম সাক্ষাৎ কিন্তু কেউ কাউকে এখনো চেনে না । তবে একজন আরেক জনের দিকে বারবার তাকাচ্ছে । মরিয়ম বৃষ্টির কানে কানে বললো ” মেয়েটাকে আমি কিছু প্রশ্ন করবো আর তুই আমার প্রশ্ন এবং মেয়েটার উত্তর দুটোই মনোযোগ দিয়ে শুনবি কারণ এর মধ্যে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে । ” বৃষ্টি তখন বললো ” আচ্ছা ! ”

” মিতু প্রথম কথা শুরু করলো বললো , শিহাব ভাই সবসময় দেখতাম লান্সের সময় মোবাইলে গভীর মনোযোগ দিয়ে কথা বলে । তখন থেকে ভাবতাম যে ওই মেয়েকে একবার দেখতে পারতাম ! কিন্তু আজকে সেটা পুরণ হয়ে গেছে । ”

” মরিয়ম বললো , আপনার কথাও শিহাব মাঝে মাঝে আমাকে বলতো । আর তাছাড়া শুনলাম যে আপনার নাকি মাস খানিক আগে বিয়ে হয়েছে আর আপনার স্বামীও আপনার সাথে চাকরি করে ? ”

” মিতু আমতা আমতা করে বললো , জ্বি ঠিকই শুনেছেন আমি আর আমার স্বামী একসাথে চাকরি করি তবে আমার স্বামী মাত্র পনের দিন হলো জয়েন করেছে । ( কথা গুলো বলতে গিয়ে মিতুর কণ্ঠ একটু কেঁপে উঠল কারণ একসাথে অনেকগুলো মিথ্যা বলা যায় না । ”

” ওহহহ আচ্ছা তা আপনার স্বামী নাকি খুব স্মার্ট ? কি নাম আপনার স্বামীর ? ”

” ওর নাম সজীব , তবে সুযোগ হলে একদিন আপনার সাথে দেখা করিয়ে দিতে পারি । ”

মিতু যখন বললো তার স্বামীর নাম সজীব তখনই বৃষ্টির কান খাড়া হয়ে গেল । সে এবার পুরোপুরি মিতুর দিকে তাকিয়ে রইল কিন্তু মিতু একনাগাড়ে বেশিক্ষণ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকতে পারে না । সে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে আবার চোখ নামিয়ে ফেলে ৷ এই মুহূর্তে মিতু একটু অস্বস্তি বোধ করছে কারণ একটার পর একটা মিথ্যা কথা বলতে হচ্ছে তাকে ৷

” মরিয়ম বললো , আপনার উপর আমার মাঝে মাঝে হিংসা লাগে কারণ যখন শিহাব আমাকে বলে যে আপনি নাকি রান্না করা নিয়ে এসে আপনার স্বামী কে সঙ্গে নিয়ে খান । কিন্তু আমি আর শিহাব দুজন দুই অফিসে চাকরি করি তাই খাওয়াতে পারি না । ”

” শিহাব বললো , ঠিক বলেছো তুমি কারণ আজও দেখলাম দুজন একসাথে ক্যান্টিনে বসে গরুর মাংস দিয়ে লান্স করছে । আহা কত্ত ভালবাসা , দেখে মনে হয় যেন যদি মুখে তুমি খাইয়ে দিতে পারতো তাহলে আরো বেশি খুশি হতো । তাই না মিতু ? ”

” এমন রসিকতার কারণে মিতু লজ্জা পেয়ে গেল । তাই নিচের দিকে তাকিয়ে রইল কিন্তু কিছু বলতে চেয়ে বলতে পারলো না । ”

” মরিয়ম বললো , আপনারা দুজনেই কি অপারেটর নাকি ভাই অন্য কোন পোস্টে ? ”

” মিতু বললো , আমি অপারেটর আর সজীব জিএম স্যারের রিপোর্টার । ”

” এবার বৃষ্টি আর চুপ করে থাকতে পারলো না , সে মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো , তার দেশের বাড়ি কি বাগেরহাট জেলা ? ”

” জ্বি ওর বাড়ি বাগেরহাট । ”

” আপনার নাম কি মুহতারিমাহ আক্তার মিতু ? ”

” জ্বি । ”

” আপনার দেশের বাড়ি নাযিরপুর , সজীব এর সাথে মাস দুয়েক আগে বাড়িতে যাবার সময় পরিচয় ? ”

” মিতু অবাক হয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বললো , জ্বি সবই ঠিক আছে কিন্তু আপনি এতকিছু জানলেন কীভাবে ? কে আপনি ? ”

” আমার নাম নাজমা আক্তার বৃষ্টি , আপনার স্বামীর কাছে জিজ্ঞেস করে দেখবেন সে বৃষ্টি নামের কোন মেয়েকে চেনে কিনা । ”

#_লেখকের_কথাঃ- ভাই সজীব ! তুমি তো এবার ঠ্যালা সামলাতে গিয়ে শেষ । চিন্তা করিও না আমি সপ্তাহ খানিক পরে চট্টগ্রাম আসতেছি । আর কিছু না পারলেও ফ্রি পোর্ট মোড়ে দাঁড়িয়ে জিলাপি খাওয়াতে পারবো । আমি আসার আগ পর্যন্ত ভালো থেকো সজীব ভাই আর মিতু ও বৃষ্টিকে সামলে রাখো । শুভ হোক তোমার ঠেলাঠেলি দিবস ।

চলবে….

যদি আপনার কাছে গল্পটা ভালো লাগে তাহলে লাইক দিয়ে সুন্দর একটা মন্তব্য প্রকাশ করুন ।

ভালবাসা অবিরাম অন্তহীন ।

লেখাঃ
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here