_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি । #_পর্ব = ৩৫

0
196

#_ল্যাম্পপোস্টের_ঘোলাটে_বাতি ।
#_পর্ব = ৩৫

” বৃষ্টির কথা শুনে মিতুর সমস্ত শরীর কেপে গেল সে কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না । সজীব এর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই এবং সজীব এর সমস্ত আত্মা জুড়ে শুধু বৃষ্টি সেটা মিতু জানে । কিন্তু আজকের এই মুহূর্তে মিতুর বলা কথার জন্য সজীব আর বৃষ্টির মধ্যে কেমন হবে সেটা কি ভাবা যায় ? মিতু তখন ভেবেছিল কিছু একটা বলে বৃষ্টির সাথে কথা বলা শুরু করবে কিন্তু তাকিয়ে দেখে বৃষ্টি সেখান থেকে চলে গেছে । তার সামনে মরিয়ম আর শিহাব দুজন দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তাদের কারো মুখে তেমন কোন কথা নেই । মিতু বললো ” শিহাব ভাই আমি তাহলে এখন আসি , পরে আবার কথা হবে আর আপু আপনিও ভালো থাকবেন সবসময় । ”

” মরিয়ম বললো , ঠিক আছে আপনার স্বামীকে আমাদের সালাম দিবেন , ভালো থাকবেন । ”

” জ্বি ধন্যবাদ আপু । ”

মরিয়ম আর শিহাবের সামনে থেকে বেরিয়ে সজীব কাছে কল দিল মিতু কারণ তার কাছে মনে হচ্ছে এখনই সবকিছু সজীব কে জানানো উচিত । তাহলে সজীব সবকিছু জেনে ভেবে কিছু একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে । কিন্তু এতকিছু জানার পরে সজীব তার সাথে আর কথা বলবে কিনা কে জানে ? এমন করে যে বৃষ্টির সাথে মিতুর দেখা হবে সেটা কি সে কখনো ভেবেছিল নাকি ?

সজীব এর কাছে কল দিয়ে মিতু মোটামুটি যা কিছু জানা ছিল তাই তাই আস্তে আস্তে বলে দিল । সজীব সবশেষে বললো ” ঠিক আছে সমস্যা নেই কারণ তুমি যে আমাকে মিথ্যে স্বামী পরিচয় দেবে সেটা আমি বৃষ্টির কাছে বলেছিলাম । ”

” তবুও আমার মনে হয় বৃষ্টি আপু অনেক কষ্ট পেয়ে রাগ করে চলে গেছে । তুমি যেভাবেই হোক আপুকে ম্যানেজ করে সবকিছু ঠিক করে নাও নাহলে আমি নিজেকে অপরাধ থেকে মুক্তি করবো কিভাবে ? ”

” রাগ সেটা গতকাল থেকে করে আছে কিন্তু তার মধ্যে নতুন করে তোমার ঝামেলা আরম্ভ হয়ে গেল । রাগের সময় তার সাথে পানি দিয়ে নেভানো উচিত ছিল কিন্তু তার পরবর্তীতে কেরোসিন দিয়ে দ্বিগুণ করে দিলে তুমি । ”

” আমি সত্যি সত্যি দুঃখিত সজীব । ”

” সমস্যা নেই বললাম তো । ”

” ছুটি হইছে তোমার ? ”

” নাহহ আজকে বের হতে নয়টা বেজে যাবে । ”

” আচ্ছা ঠিক আছে রাখলাম তাহলে ? ”

” হুম ঠিক আছে। ”

★★

বৃষ্টি বাসায় এসে মন খারাপ করে বসে আছে , কিন্তু আজকে তার ঘুমাতে ইচ্ছে করছে না। মিতুর কথা বারবার কানের মধ্যে বেজে উঠলো, কেমন বিশ্রী ভাবে বারবার স্বামী স্বামী বলছে। এটা একটা বিরক্ত হবার মতো বিষয় কিন্তু সজীব যেখানে মিতুকে এই সুযোগ দিয়েছে সেখানে তার কিছু বলার নেই৷

সজীব অফিস থেকে বেরিয়ে বৃষ্টির কাছে কল দিল কিন্তু বৃষ্টি রিসিভ করে নাই। তাই সে সরাসরি বৃষ্টির বাসায় চলে আসলো, বৃষ্টি তখন মাত্র গোসল করে বেরিয়ে ভেজা কাপড় মেলে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। বুকের উপর ওড়না নেই তবে তোয়ালে আছে সেটা আবার আধা ভেজা৷ সজীব কে আসতে দেখে সে মোটেই অবাক হলো না কারণ সে জানতো সজীব আসবে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আসবে ধারণা ছিল না নাহলে আরো আগে গোসল করে বসে থাকতো।

” সজীব কে বললো, বাবার সাথে কথা বলে তুমি ছাঁদে গিয়ে অপেক্ষা করো আমি আসছি। ”

সজীব তার স্যারের সাথে কথা বলতে পারলো না কারণ তিনি মনে হয় ঘুমাচ্ছেন। এই মানুষটা সারাদিন মনে হয় ঘুমিয়ে পার করে দেয় নাহলে রাত সাড়ে নয়টার মধ্যে ঘুমিয়ে গেল কেন?

” সজীব ছাঁদের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টি পিছন থেকে এসে বললো, ছুটি হলো কখন? ”

” সজীব পিছনে ফিরে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বললো, নয়টা বাজে ছুটি হলো তোমাকে কল দিয়ে না পেয়ে বাসায় এসেছি। ”

” খুব ভালো করছো আর আমি জানতাম তুমি আজ বাসায় আসবে যদিও আমি নিষেধ করেছি। কিন্তু তবু মনে হচ্ছিল তুমি আসবে তাই তোমাকে বলার জন্য কিছু কথা সাজিয়ে রেখেছি। ”

” আমি এসেছি আমার খালাকে নিয়ে কখন আসবো সেই কথা জিজ্ঞেস করতে। এছাড়া অন্য কোন বিষয় নিয়ে কিছু বলার জন্য আমি আসিনি তাই তুমি ভেবে বলো কবে নিয়ে আসবো ? ”

” তোমার আর আমার কথা বলার প্রসঙ্গ একই কিন্তু তবে সামান্য ভিন্ন আছে।”

” আমি মিতুর কোন কথা নিয়ে এখন আলোচনা করবো না কারণ ওই বিষয় নিয়ে কথা বলতে গেলে শুধু সমস্যা সৃষ্টি হয়। আবারও তোমাকে হারানোর আগে আমি তোমাকে ধর্মীয় বন্ধনে জড়িয়ে নিজের করে নিতে চাই। এরপর যত বাধা বিপত্তি আসবে সবকিছু তুমি আমি একসাথে মোকাবিলা করবো। ”

” মিতুর বিষয় নিয়ে আমিও তোমাকে কিছু বলতে চাই না তবে তার জন্য আমার মনের মধ্যে হিংসা হচ্ছে সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ?”

” হ্যাঁ তা পারছি। ”

” রমজান মাসের প্রথম শুক্রবার খালামুনিকে নিয়ে তুমি আমাদের বাসায় ইফতার করবে। তার আগে তোমার বাড়িতে কল দিয়ে সবকিছু জানাবে এবং আমার সাথে কথা বলাতে পারলে ভালো হতো। ”

” অবাক হলাম বৃষ্টি। ”

” কেন? ”

” ভেবেছিলাম মিতুর সাথে অমন কথাবার্তা হবার পরে তুমি আমাকে ভুল বুঝবে। আর আমাকে অনেক কষ্ট করে সেই ভুল ভাঙ্গাতে হবে কিন্তু আমার ধারণা মিলে নাই তাই খুব খুশি হলাম। ”

” বাসায় আসার পথে আমিও বারবার তোমাকে খুব বকাবকি করার ইচ্ছে করলাম। কিন্তু যতবারই চেষ্টা করছি ততবারই তোমার প্রতি রাগের চেয়ে ভালবাসা বেশি অনুভব করেছি। তখন বুঝতে পারছি যে শত অন্যায় করলেও তোমাকে আর মনের মধ্যে থেকে বের করতে পারবো না। তাই যাতে কষ্ট বেশি পেতে না হয় সেজন্য খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাই। ”

” ঠিক আছে তাই হবে। ”

” তুমি আমি ঈদ পর্যন্ত চাকরি করবো, ঈদের পরে মা-বাবাকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আমরা ঢাকা শহর গিয়ে চাকরি নেবো। এই চট্টগ্রামে আমাদের বিপদ আর বিপদ তাই এ শহর ছাড়তে হবে। ”

” আচ্ছা ঠিক আছে, আমি এখন যাই তাহলে? ”

” রাতে খেয়ে তারপর যাও, ”

” আচ্ছা । ”

★★★

বাসায় গিয়ে সজীব রকির কাছে সবকিছু বললো তারপর দুজন মিলে মহা খুশিতে ডগমগ। অবশেষে অনেক কিছু ত্যাগ স্বীকার করে সজীব বৃষ্টিকে নিজের করে পাবে এটা খুশিরই কথা। রকি বললো “শফিককে কল দিয়ে চট্টগ্রামে আসতে বললে কেমন হবে ? আমরা দুজন থাকি আমাদের সাথে ও থাকল তাহলে বিয়ের সময় তিন বন্ধু একসাথে থাকবো। ”
সজীব বললো “আইডি মন্দ না তাহলে তার কাছে কল দিয়ে কথা বলে দেখা যাক? ”

শফিক বাজার থেকে সিগারেট ধরিয়ে টানতে টানতে বাড়ির দিয়ে যাচ্ছে। আজকে হঠাৎ তার কেমন যেন ভয় লাগে তাই সে অলরেডি দুটো সিগারেট শেষ করেছে। পাশের বাড়ির পলাশকে বলেছিল বাড়ি ফেরার পথে তাকে ডাক দিতে কিন্তু শালা নাকি কার গাড়ি পেয়ে গাড়িতে চলে গেছে। পকেটে মোবাইল বেজে উঠলো তখন তার একটু সাহস হচ্ছে কারণ মোবাইলে কথা বলতে বলতে সময় পেরিয়ে যাবে। কিন্তু যদি এক মিনিট কথা বলার মতো কেউ থাকে তাহলে তো মাথা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে।

” মোবাইলে সজীব এর কল তাই রিসিভ করে বললো কিরে সজীব? কেমন আছো বন্ধু? ”

” আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুই কেমন আছো? ”

” আমিও ভালো আছি, তারপর বৃষ্টির কি খবর? ”

” খুব ভালো, আমাদের বিয়ে হবে খুব তাড়াতাড়ি তাই তুই দু একদিনের মধ্যে চট্টগ্রামে চলে আয়। তিন বন্ধু একসাথে থাকবো বিয়ে সাদী ব্যাপার বুঝতে পারছো তো? ”

” বলিস কি? তাহলে তো আসতে হবে আচ্ছা সেখানে থাকতে পারবো তো? ”

” আমি আর রকি একসাথে এক রুমে আছি, অন্য একটা ছেলে ছিল সে এ মাসে চলে গেছে। ”

” তাহলে কি কালকেই রওনা দেবো? ”

” হ্যাঁ খুব ভালো হয়, আগে থেকে শহরে থাকলি তাই কিছু কিছু পরিচিত হয়ে গেল। ”

” আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে আমি হাজার দশেক টাকা নিয়ে চলে আসি। ”

” টাকা আনলে ভালো না আনলেও ক্ষতি নেই। ”

” আরে সমস্যা নেই বড় ভাই সিঙ্গাপুর থেকে ভালো টাকা পয়সা দিচ্ছে তাই তো চাকরি করতে ইচ্ছে করে না বন্ধু। ”

” বুঝতে পারছি, আচ্ছা ঠিক আছে তাহলে শীগ্রই চলে আয় তুই। ”

★★

মামুন সন্ধ্যার আগে থেকেই মিতুর বাসার গলিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিল। মিতুর সাথে তার জরুরি কথা আছে, সে বহুকষ্টে মিতুর সন্ধান বের করেছে।

সজীব এর সাথে সেদিন দুপুরে কথা হবার পরে মামুন একটা পরিকল্পনা করে। সে তার নিজের কিছু বন্ধুদের সজীব এর প্রতি নজর রাখতে বলে। তার বন্ধুরা সজীব এর খালা , মিতু এবং রকির বিষয় সবকিছু মামুন ঢাকা থেকে আসার পরে বলে। মামুন তখন সজীব এর খালা এবং রকি এ দুজনের কথা বাদ দিয়ে মিতুকে চালের গুটি বানানোর পরিকল্পনা শুরু করলো। সজীব এর সাথে মিতু একই অফিসে চাকরি করে এবং অনেকে তাদের স্বামী স্ত্রী হিসাবে জানে সেটা মামুন জানতে পেরেছে। কিন্তু মামুন সত্যি টা জানে যে সজীব আর মিতুর বিয়ে হয়নি। কিন্তু তবুও সে মিতুকে ব্যবহার করতে চায় কারণ মামুন যে পরিকল্পনা করেছে সেটা মিতুর মাধ্যমে সফল হবার সম্ভবনা ১০০% ।

” মিতু যখন গলির ভিতর আসলো তখন মামুন তার সামনে দাঁড়িয়ে বললো, তোমার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে। ”

” মিতু বললো, কিন্তু আমি তো আপনাকে চিনিনা তাহলে আমার সাথে জরুরি কথা কিসের? ”

” আমিও তোমাকে চিনিনা তবুও তোমার সাথে জরুরি কথা বলতে হবে। তবে সেই কাজের জন্য তোমার আমার দুজনের লাভ হবে। ”

” আমি কিছু বুঝতে পারছি না কে আপনি? ”

” আমার নাম মামুন, তুমি যাকে ভালবেসো সেই সজীব আবার আমার পছন্দের বৃষ্টিকে ভালবাসে তাই আমি একটা পরিকল্পনা করেছি। এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী তোমাকে কাজ করতে হবে। যদি কাজটা সফল হয় তাহলে তুমি আমি দুজনেই দুজনের ভালবাসা পাবো। ”

” মানে আমার কথা মতো তোমাকে বৃষ্টির সাথে কিছু মিথ্যা অভিনয় করতে হবে। আর সেই অভিনয়ের ফলাফল যদি ভালো হয় তাহলে সজীব হবে তোমার আর বৃষ্টি হবে আমার। ”

” সেটা কিভাবে সম্ভব? আমাকে পরিষ্কার করে বলেন সজীব কে কীভাবে পাবো? ”

#চলবে….

যদি আপনার কাছে গল্পটা ভালো লাগে তাহলে লাইক দিয়ে সুন্দর একটা মন্তব্য প্রকাশ করুন ।

ভালবাসা অবিরাম অন্তহীন ।

লেখাঃ
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here